ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-৪১+৪২

0
2

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৪১

“সকালে সায়রার ঘুম ভাঙলো দেড়ি করে। উঠে দেখলো তূর্য পাশেই বসে ল্যাবটপে কাজ করছে। সায়রাকে চাইতে দেখেই তূর্য মুচকি হেসে বললো ”

_গুড মর্নিং ওয়াইফি।

“সায়রার মনটা ভালো হয়ে গেলো ঘুম থেকে উঠেই তূর্যকে পাশে দেখে। ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো ”

_গুড মর্নিং। অফিসে জাননি আপনি ?

_উহু। তুমি একটু সুস্থ হও এরপর যাবো। এখন উঠো।

“তূর্য উঠেতে বললে কি হবে। সায়রা যে উঠতে পারছে না। শরীরে একটু ও শক্তি নেই তার। তূর্য নিজেই সায়রাকে সাহায্য করলো উঠতে। সায়রা বিছানায় বসলো। তূর্য বললো ”

_চলো সাওয়ার নেবে।

_আমি একা যাবো।

“তূর্য সামান্য হেসে বললো ”

_তা হচ্ছে না বউপাখি। তুমি একা সাওয়ার নিতে পারবে না। শো চলো আমার সঙ্গে।

“তূর্য সায়রাকে কোলে তুলে নিলো। সায়রা জানে বলে ও লাভ নেই। এই লোক শুনলে তো তার কথা।
তূর্য যথাসম্ভব নিজেকে সামলে নিয়ে সায়রাকে সাহায্য করলো সবটাতে। নিজেই শাড়ি পড়তিয়ে দিলো। সায়রার হাতের বেন্ডেজ খোলা হবে আর একদিন পড়ে। কিন্তু এই দুইদিনেই সায়রা অতিষ্ট হয়ে গেছে। সায়রার আর ঘরে থেকেও ভালো লাগছে না।
তাই আবদার করে বসলো ”

_দাদীর কাছে যাবো তূর্য। যাই ?

“তূর্য কেমন করে যেনো তাকালো সায়রার দিকে। বললো ”

_একা যাবে এই সিড়ি দিয়ে ?

_হে।

_পা ভেঙে রেখে দিবো।

_কেন ? পায়ে তো আমার কোনো ব্যথা নেই।

_তুমি ওভার ডোজ এর ঔষধ খাচ্ছো। মাথা ঘুরবে। পড়ে গেলে।

“সায়রা আর কিছু বললো না চুপ করে বসে রইলো। তূর্য নিজে নিচে গিয়ে নাস্তা নিয়ে এলো। কিন্তু নাস্তা দেখে সায়রা অবাক। তূর্য যেসব খায় সেসবই প্লেট ভর্তি করে নিয়ে এসেছে। সায়রা চুপ করে বসে আছে। তার খেতে ইচ্ছে করছে ঝাল ঝাল কিছু। এই লোক এসব সিদ্ধ জিনিস পএ কেন নিয়ে এসেছে। তূর্য খুশি মনে এসে সায়রার পাশে বসে। সিদ্ধ ডিমটা সায়রার মুখের দিকে এগিয়ে দিতেই সায়রার পেট গুলিয়ে আসে।মুখে হাত দিয়ে চেপে ধরে। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে ডিমটা সরিয়ে নিয়ে বলে ”

_ডিমে স্মেল লাগছে ?

_অনেক।

_আচ্ছা তাহলে অন্য কিছু খাও।

“সায়রা অসহায় দৃষ্টিতে তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_এখানের কিছু ই আমি খাবো না৷।

_এগুলো হেলদি বউ। তোমার শরীরে শক্তি দরকার৷

“সায়রা ভ্রু কুচকে বললো ”

_শক্তি কি শুধু ডিম আর এই সেদ্ধ খাবার খেলেই হয় ?

_তাহলে কি খেতে চাও বলো ?

“সায়রা একটু ভাবলো। কি খাওয়া যায়। কি খেলে পেটটা শান্তি হবে। পরপর সায়রা বলে উঠলো ”

_খিচুড়ি, বেগুন ভাজা সঙ্গে ডিম ভাজা৷

“সায়রার কথা শুনে তূর্য হতবাক। এই মেয়ে এমন অসুস্থ অবস্থায় এসব খেতে চায়। তূর্য বললো ”

_এইসব খেলে তোমার গ্যাস হবে ইডিয়েট। আরো কষ্ট হবে। এসব খাওয়া যাবে না।

_নাহ্ আমি এসব ই খাবো।

“তূর্য রাগি চোখে চেয়ে বললো ”

_বলেছি তো না।

“সায়রা গাল ফুলালো। অন্যদিকে ঘুরে বসে রইলো। তূর্য পড়েছে মহা বিপদে। কি করবে এবার। বউকে কি করে বুঝাবে। পরপর তূর্য বললো ”

_আচ্ছা অডার করে দিচ্ছি। ফ্রেশ খাবার।

“সায়রার মনটা নেচে উঠলো। বাসায় রান্না করলে ওতো টেস্ট হয় না। এখন ওর মুখে টেস্ট দরকার। তূর্য ফেসবুকে গিয়ে একটা ভালো পেজ থেকে খাবার অডার করলো। যদি ও মন সায় দিচ্ছে না। তবুও খেতে চেয়েছে। কিছু করার ও নেই ”

“সকালে বেলা ঘুম থেকে আজ জলদি উঠলো জেরিন। অফিস তো আছেই। জলদি উঠে সোজা চলে গেলো খাবার টেবিলে। আজ বাবাকে নাফিসের কথাটা বলতেই হবে। কিন্তু ভয় হচ্ছে। যদি না মানে। তবুও শান্ত মেয়ে হয়ে বাবার পাশের চেয়ারটাতে বসলো। জেরিনের বাবা রাগী মানুষ। খুব কম কথা বলেন। জেরিনের সাথে ও তার সম্পর্ক অতোটা ক্লোজ নয়।
জেরিনের বাবা আলু ভাজি দিয়ে রুটি খাচ্ছে। জেরিন একবার ওর মায়ের দিকে তাকালো। পাশেই ছোট ভাই৷ জেরিন অনেকটা সাহস নিয়ে বললো ”

_বা,,বাবা।

“জেরিনের বাবা মাথা তুলে তাকালো। জেরিনের গলা শুখিয়ে যাচ্ছে। কি করে বলবে এবার ”

_কি হয়েছে ?

_না মানে। একটা কথা ছিলো।

_কি কথা৷।

_আসলে। আমি একজনকে,,,,, ।

“জেরিনের বাবা ভ্রু কুচকে বললো ”

_একজনকে কি ?

_আমি একজনকে ভালোবাসি।

“জেরিনের বাবা তব্দা খেয়ে বসে রইলো মনে হলো।
জেরিনের মা জেরিনকে বললো ”

_কি বলস এইসব। ছেহ্।

_আরেহ্ পুরো কথাটা তো শুনবে।

“এবার সবাই চুপ রইলো। জেটিন বললো ”

_আমি একজনকে ভালোবাসি। ওর নাম নাফিস। আমার সাথেই জব করে। ভালো ছেলে খুব। আমাকে বিয়ে করতে চায়। বললো তোমার বাবাকে বলো। তাই।

“জেরিনের বাবা কিছু একটা ভাবলেন। পরপর বললেন

_ঠিক আছে। আজ আসতে বলো।

” জেরিন খুশি হয়ে গেলো। ভেবেছিলো সরাসরি না করে দেবে। কিন্তু না। আসতে বলেছে। আর নাফিসকে নিশ্চয়ই ই পছন্দ হবে। জেরিনের মনের বুঝা নেমে গেলো ”

“একটু আগেই অডার করা খাবার দিয়ে গেছে। তূর্য সেটা সায়রার কাছে এনে দিলে সায়রা সব প্লেটে তুলে নিয়ে খেতে শুরু করেছে। কয়েকবার খেতেই সায়রার কেমন যেনো লাগলো পেটের মধ্যে। তবুও মুখের স্বাদ তাই পুরোটা ই খেলো। তূর্য চেয়ে রইলো। এভাবে কে খায়। এতো তাড়াহুড়ো করে। সায়রা খাওয়া শেষ করে তৃপ্তির হাসি দিলো তূর্যর দিকে চেয়ে। তূর্য বললো ”

_এবার খুশি।

_হু।

“তূর্য সবটা ঠিকঠাক করে রাখতে প পারলো না। তার আগেই সায়রা বিছানার উপর গড়গড় করে বমি করে ভাসিয়ে দিলো। তূর্য এসে সায়রাকে ধরতে গেলে ওর টি শার্ট ও বমি লাগলো। তূর্য ভীষণ হাইজেন মেন্টেন করে। কিন্তু আজ রাগ ও হলো না। উল্টো সায়রার পিঠে হাত বুলাতে লাগলো ”

_জান। কষ্ট হচ্ছে। বলেছিলাম এসব খেয়ো না।

“সায়রার পেট পুরোপুরি ফাঁকা হলে সায়রার বমি থামলো। সায়রার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তূর্যর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। তূর্য নিশ্চিত এবার রেগে যাবে। তূর্যর বিছানা বমি করে ভাসিয়ে দিয়েছে। সায়রা কিছু বলার আগেই তূর্য বললো ”

_ইট’স ওকে। কিচ্ছু হয়নি পাখি। প্রেগন্যান্সির সময় এমন হয়। তুমি নামো আমি ঠিক করে দিচ্ছি সব।

“সায়রা বললো ”

_আমি ঠিক করি।

_চুপ। নামো এখনি। দাঁড়াও লক্ষি মেয়ের মতো।

“সায়রার শরীরে বমি লাগেনি। সায়রা বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো। তূর্য চাদর উঠিয়ে ফেললো। সব কিছু ঠিকঠাক করলো। ওর নিজের টি শার্ট এ ও বমি লেগেছে। তাই ওটা ও খুলে ফেললো। সাওয়ার নিতে ইচ্ছে করলে ও নিলো না। সায়রা সবটা দেখলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে। তূর্য ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে আরেকটা টি শার্ট পড়ে নিলো। এরপর সায়রার সামনে এসে দাড়ালো ”

_হয়ে গলো না পেট খালি। এবার একটু হেলদি কিছু খাও। প্লিজ ।

“সায়রা আর কি বলবে। অঘটন তো ঘটিয়েই ফেলেছে। এবার তূর্যর কথা ই শুনতে হবে। না চাইতে ও হালকা একটু খেলো সায়রা। তূর্য বললো আজ একটু হাটতে নিয়ে যাবে সঙ্গে করে। এতো বসে থাকলে সমস্যা হবে। সায়রা ও খুশি হলো। কয়দিন হলো একটএ হাটতে ও পারে না। এই খাটের উপর ই জীবন যাচ্ছে ”

“অফিসে তূর্য নেই। নাফিসের হাতে কাজ বেশি। জেরিন খুশি মনে অফিসে এসেছে। নাফিসকে বললে নাফিস ও নিশ্চয়ই খুশি হবে। নাফিস তূর্যর কেবিনে ছিলো। রুহানির জায়গায় অন্য একজনকে বসানো হয়েছে। জেরিন অফিসে ঢুকে নাফিসকে কোথাও না পেয়ে কল করে জানলো ও তূর্যর কেবিনে। জেরিন কেবিনে গেলো। দেখলো নাফিস ছাড়া ও আরো দু’জন আছে। জেরিন দাড়িয়ে রইলো। একটু পড়ে উনারা চলে গেলে নাফিস জেরিনকে কাছে ডাকলো।
জেরিন এগিয়ে যেতে যেতে নাফিস ই চেয়ার থেকে উঠে এগিয়ে এলো। জেরিনের মুখে হাসি লেগে আচে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো ”

_কি ম্যাডাম। এতো খুশি কেনো হু ?

_বলুন তো কি হতে পারে ?

“নাফিস একটু সময় নিয়ে বললো ”

_আমি বাবা হচ্ছি।

“কথাটা বলেই নাফিস ঠোঁট চেপে হেসে ফেললো। জানে এখনি জেরিন রেগে যাবে। হলো ও তাই। জেরিন রেগে গেলো। ধাক্কা দিয়ে নাফিসকে সরিয়ে দিয়ে বললো ”

_গেলাম আমি৷ কিচ্ছু বলবো না আপনাকে।

“জেরিন চলে যেতে নিলেই নাফিস হাত চেপে ধরলো। বললো ”

_আচ্ছা আর দুষ্টমি করছি না। বলো এবার কি হয়েছে।

_সকালে বাবাকে আমাদের সম্পর্কের কথা বলেছি।

_তারপর ?

_বাবা বলেছে আপনাকে আজ দেখা করতে ।

“নাফিস হা করে আছে। যেনো বিশ্বাস ই হচ্ছে না। খুশি হয়ে বললো ”

_কখন যেতে হবে ? এখনি যাবো।

_আরেহ্ না। সন্ধায়।

“নাফিস এবার খুশি হয়ে হুট করে জেরিনকে জড়িয়ে ধরলো। জেরিন অবাক। পরপর আবার ছেড়ে দিয়ে বললো ”

_ইস,মুসিবতের বেটি। পেয়ে যাবো তোমাকে। আহা এই খুশি আমি কই রাখবো।

“জেরিন বললো ”

_এতো খুশি হচ্ছেন যেনো আমাকে নিয়ে শোকেজে সাজিয়ে রাখবেন।

_উহু। রোজ তোমায় নিয়ে বিছানায় হাডুডু খেলবো।

“কথাটা বলেই নাফিস চোখ মারলো। জেরিন জানে এই লোক একটা অসভ্য। মুখে কিছু আটকায় না। জেরিন নাফিসের চুলগুলো টেনে দিলো। বললো ”

_আপনাকে আমি বিয়ে ই করবো না। আপনি আমাকে মেরে ফেলবেন।

_তূর্য স্যারকে দেখেছো। আমার থেকে বডি ফিটনেস কতো ভালো। রোজ জিম করে। সায়রা খাতুন কি মরে গেছে। উল্টো স্যার এর বাচ্চার মা হতে যাচ্ছে। তুমি ও মরবে না কটকটি।

“জেরিনের এবার এমন রাগ হলো। দুই চারটা কিল ঘুষি মেরে দিলো নাফিসকে। যেতে যেতে বললো ”

_মুখে লাগাম টানুন ইতর লোক।

“সায়রাকে নিয়ে তূর্য হাটতে বের হলো। শহরে তেমন একটা জায়গায় নেই যেখানে নিরিবিলি হাটা যায়। তবে সায়রা এখন একটু সুস্থ। মনটা ও ভালো। তূর্য সায়রাকে নিয়ে একটু দূরে একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে গেলো। রাস্তায় তেমন মানুষ নেই। তূর্যদের মতো আরো গুটিকয়েক মানুষ আছে যারা নিরিবিলি হাটছে। তূর্য সায়রার হাত ধরে রেখেছে। ধিরে ধিরে হাটছে দুজনে। সায়রা হাঁটছে আর বলছে ”

_আমার পেটটা কেনো এখনো বড় হচ্ছে না তূর্য ?

“তূর্য অবাক হয়ে তাকালো। সায়রা ফের বললো ”

_দেখুন। বাবু কি বড় হচ্ছে না।

_হচ্ছে বউ। মাএ তো কয়েকমাস। ধিরে ধিরে দেখবে পেট ও বড় হয়েছে।

“সায়রার খুব সখ তার পেটটা বড় হবে। সে একটু গুলুমুলু হবে। পেটে সায়রা হাত বুলাবে। যদি এখন ও সায়রা হাত বুলায়। তার থেকে বেশি আবার তূর্য। সে চুমু ও খায়। কথা ও বলে। তূর্য ধরেই নিয়েছে এটা তার মেয়ে। ছেলে হবেই না। মেয়েই হবে ”

_তূর্য ।

“হুট করে এভাবে সায়রা ডাকায় তূর্য একটু অবাক হয়ে বললো ”

_বলো পাখি।

_আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন ? সত্যি করে বলুন ?

“তূর্য দাড়িয়ে গেলো। এই মেয়ে কি পাগল হয়ে গেলো। কি বলছে। তূর্য বললো ”

_ভালোবাসি মনে হচ্ছে না ?

_তা না। আপনার মুখে শুনবো।

“তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো। মেয়েটা এতো কিউট কেন৷ তূর্য সায়রার গালে হাত রাখলো। বললো ”

_আমার বাচ্চা তোমার পেটে বউ। ভালোবাসার এর থেকে বড় কোনো প্রমান হয়।

_তারমানে আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন।

_নিজের থেকেউ বেশি তোমাকে ভালোবাসি আমার বউপাখি।

“সায়রা এবার রাস্তায় দাড়িয়ে ই তূর্যকে জড়িয়ে ধরলো। তূর্য আশেপাশে দেখলো। তেমন কোনো মানুষ নেই। পরপর সায়রা আবার ছেড়ে ও দিলো। তূর্য বুঝলো বউটার মাথা একেবারে গেছে। তবুও কিছু বললো না। এক সঙ্গে হাটতে লাগলো।
তূর্য এই কয়দিনে বেবির বিষয়ে সব ডিটেইল বপর করে ফেলেছে। প্রেগন্যান্সির সময় কিভাবে চলতে হয়। কি খেলে ভালো হয়। কি কি করতে হয়। তবে তূর্য থমকে গিয়েছিলো এক জায়গায় গিয়ে। সব বিষয় না হয় তূর্য নিজে করবে। কিন্তু এমন কঠিন কাজ কেন। তূর্য তবুও মেনে নিয়েছে। প্রথম তিন মাস বউয়ের কাছে না যাওয়া ই ভালো। কিন্তু তূর্য একদিন থাকতে ও কষ্ট হয়ে যায়। তবুও নিজেকে কনট্রোল করবে বলে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে। তার বউ আর বেবওর কিছু হলে তূর্য নিজেই মরে যাবে ”

“সন্ধায় নাফিস আর জেরিন অফিস থেকে বের হলো। এখন সোজা জেরিনদের বাসায় যাবে। নাফিসের একটু ভয় ভয়,ই লাগছে। আপাতত সে একাই যাচ্ছে। পরে তূর্য ওদের নিয়ে যাবে এই ভেবে।
বাইকে উঠে জেরিনদের বাসার গলির সামনে এসে নাফিস টুকটাক জিনিস কিনে নিলো।।যেহেতু জেরিনের ছোট ভাই আছে। এরপর বাসার দিকে গেলো। সিড়ি দিয়ে উঠছে দুজনে। নাফিস বললো ”

_মুসিবতের বেটি। তোমার বাপ আমারে বাইধা রাখবে না তো।

_রাখলে রাখবে। কেন আপনার থাকতে কি সমস্যা ?

_যদি তোমার লগে থাকতে দেয় তাইলে কোনো সমস্যা নাই।

“জেরিন থেমে গেলো। বললো ”

_আমার সাথে থাকতে দিবে মানে ?

_মানে তোমার ঘরে আরকি।

_ফাজিল।

“নাফিস আর জেরিন বাসায় ঢুকলো। জেরিনের মা দরজা খুলে দিলো। নফিস সালাম দিয়ে ভেতরে গেলো। জেরিনের বাবা তখন নিজের ঘরে ছিলো। নাফিসকে বসতে বলা হলো। নাফিস সোফায় বসলো গিয়ে। জেরিন নিজের ঘরে গেলো। জেরুনের ছোট ভাই নাফিসের পাশে বসে।
জেরিনের বাবা এলেন। নাফিস সালাম দিলে তিনি বসতে বললেন। এর মাঝে জেরিনের মা টুকটাক নাস্তার ব্যবস্থা করে আনলেন।
নাফিস ভয়ে আছে। তবুও হাতে শুধু চায়ের কাপটা ই নিলো। জেরিন ওর ঘরের দরজার সামনেই দাড়ানো।
জেরিনের বাবা বললো ”

_নাম কি তোমার ?

_জি আংকেল। নাফিস।

_বাসা কোথায় ?

_উওরাতে।

“জেরিনের বাবা এবার একটু নড়েচড়ে বসলে বললো ”

_আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও তো। নাকি,,,।

_না না আংকেল। অবশ্যই বিয়ে করবো।

_তাহলে বাবা মাকে নিয়ে এসো একদিন। বসি তাদের সাথে।

“নাফিস এবার চুপ হয়ে গেলো। আস্তে করে বললো ”

_আমার বাবা মা নেই।

_ওহ্। তাহলে আত্মীয় স্বজনরা।

_কেউ নেই আমার। আমি একা মানুষ আংকেল। তবে আমার একজন দাদী আছেন। আর ভাইয়ের মতো স্যার আছেন। আপনি চাইলে আমি তাদের নিয়ে আসতে পারি।

“জেরিনের বাবা চুপ করে কথাটা শুনলো। পরপর বললো ”

_চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। চা টা শেষ করো।

“কথাটা বলে তিনি উঠে গেলেন। বিষয়টা নাফিসের পছন্দ হলো না। চা না শেষ করেই জেরিন আর ওর মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে নাফিস বেরিয়ে গেলো। জেরিন বুঝলো ওর বাবার এভাবে উঠে যাওয়া নাফিসের ভালোলাগেনি।
জেরিন ওর বাবার ঘরে গিয়ে দেখলো তিনি খবরের কাগজ নিয়ে বসেছে সন্ধা বেলা। জেরিন গিয়ে দাঁড়াতে ই তিনি বললো ”

_এতিম ছেলের কাছে আমি তোমায় বিয়ে দেবো না।

_ও এতিন এটা কি ওর দোষ। ওর কোনো হাত আছে।

_ওর কেউ নেই। কেউ না। কার জিম্মায় তুলে দিবো তোমায়।

_বাবা। ও বললো তো দাদী আছে। যে অফিসে জব করি তূর্য স্যার। ওর ভাইয়ের মতো।

_আমি তোমাকে এখানে বিয়ে দিচ্ছি না কথা শেষ। এসব মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলো। এই ছেলের কিচ্ছু নেই।

“কথাটা বলে তিনি আবার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে খবরের কাগজ পড়তে লাগলেন। জেরিনের কান্না পাচ্ছে। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সোজা নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। নাফিসকে কল করলো। নাফিস কল তুলছে না। জেরিন বারবার কল করলো তবুও কল তুললো না নাফিস ”

“হাটাহাটি শেষ হলে তূর্য আর সায়রা বাড়ি ফিরে এলো। তূর্য সায়রার হাত ধরে যখন গাড়ি থেকে নামালো তখন সায়রার হাতের দিকে খেয়াল করে ওর আরেকটা বিষয় মনে পড়লো।
তূর্য সায়রাকে সামর্থ্য বেগম এর ঘরে দিয়ে এসে আবার কাজ আছে বলে বেরিয়ে পড়লো। সায়রা বুঝলো না তূর্য কেন আবার বের হলো। এখন ই তো বাইরে থেকে এলো।
তূর্য গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। সোজা শপিং মলে গেলো সে ”

“রাত দশটার কাছাকাছি। তূর্য এখনো ফেরেনি। সায়রা সামর্থ্য বেগম এর ঘরেই বসে আছে। সামর্থ্য বেগম তার বাচ্চা হওয়ার সময়কার গল্প বলছে সায়রাকে।
তূর্য এলো সাড়ে দশটার দিকে। সায়রা দেখলো তূর্যকে কেমন দেখাচ্ছে। এতো তাড়াহুড়া করে কোথায় থেকে এলো কে জানে।
রুমে এসে সায়রা আগে ই জিজ্ঞেস করলো ”

_তখন কোথায় গিয়েছিলেন ?

_বলতেই হবে?

_হু বলতেই হবে।

_যদি না বলি ?

_না বললে সোজা দাদীর ঘরে চলে যাবো। আর আসবো না।

_আমায় ছাড়া ঘুম হবে ?

_না হলে না হবে। কিসের জন্য এমন ছুটে গিয়েছিলেন বলুন আগে।

“সায়রা রেগে যাচ্ছে। তূর্য সামান্য হাসলো। পরপর সায়রার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। সায়রা হতবাক। তূর্য পকেট থেকে একটা রিং এর বক্স বের করলো। সায়রার সামনে বক্সটা খুলে তুলে ধরলো। সায়রা দেখলো রিংটা। ওর হাতে যেই রিংটা আছে সেইম রিং বক্সটাতে। তূর্য বললো ”

_বিয়ে করেছি। বাসর ও করে ফেলেছি। বাচ্চার মা ও হয়ে যাচ্ছো।আর কি বলবো। এখন শুধু এইটুকুই বলতে চাই। সায়রা আজমীর সব সময় আমার পাশে থেকো। আমৃত্যু আমার সঙ্গ দিও। তোমার সঙ্গ ছাড়া আমি বাঁচবো না। কসম মরে যাবো। বলো দেবো তো সঙ্গ আমায় ?

“সায়রা কি বলবে বুঝে উঠতে পাড়লো না। শুধু হাতটা বাড়িয়ে দিলো। যেই হাতে সেই ডায়মন্ড উঠে যাওয়া,রিংটা আছে। তূর্য ওই রিংটা খুলে নতুন রিংটা পড়িয়ে দিলো। হাতো আলতো করে একখানা চুমু খেলো। পরপর উঠে দাঁড়াতেই সায়রা তূর্যকে জড়িয়ে ধরলো। বুকে মাথা রেখে বললো ”

_ আপনি এি সেইম রিং কোথায় পেলেন ?

_অনেক খুজতে হয়েছে রে বউ। এর জন্য ই তো দেড়ি হলো।

_এটা আনার ই বা কি দরকার ছিলো ?

_ইশ, ওই রিংটার ডায়মন্ড পড়ে গিয়েছিলো। ওটা তোমার হাতে ভালো লাগছিলো না। তুমি আমার বউ। আমার।দরকার হলে ডায়মন্ড এ মুড়িয়ে রাখবো।

“সায়রা আরো শক্ত করে তূর্যকে জড়িয়ে ধরে বললো ”

_ডায়মন্ড লাগবে না। আপনাকে দিয়েই আমাকে মুড়িয়ে রাখুন তূর্য ।

“তূর্য এবার,সায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো ”

_তাহলে বিছানায় চলো। আমাকে দিয়ে ই মুড়িয়ে নিবো।

“সায়রা তূর্যর বুকে একটা কিক বসিয়ে দিয়ে বললো ”

_আপনি একটা পাগল তূর্য ।

_শুধু তোমার জন্য বউপাখি

চলবে,,,

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৪২

“রাতে সায়রার ঘুম হয় না। আজ ও ঘুম হচ্ছে না। একবার উঠছে একবার বসছে এমন অবস্থা। তূর্য কিছু সময় চেয়ে দেখলো। বউ টা তার অনেক কষ্ট সয্য করছে। খাবার খেতে পারছে না। ঘুমে সমস্যা। বমি। মাথা ঘোরে। তার মধ্যে ওই রুহানি এসব করেছে। তূর্য রুহানির নাম মাথায় আসতেই রাগে ফেটে পড়ে। মেরে তারপর পুলিশে দিয়েছে। তবুও মনে শান্তি লাগছে না। রুহানির বাবা দেশের বাহির থেকে তূর্যকে কল করেছিলো। তূর্য কল ধরেনি। ধরেই বা কি বলতো।
এদিকে সায়রা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না। তূর্য এবার পাচে এসে বসলো। সায়রা বললো ”

_ভালো লাগছে বা তূর্য । কেমন অস্থির অস্থির লাগছে।

_তাহলে একটু বারান্দায় গিয়ে বসি চলো। খোলা পরিবেশে ভালো লাগবে।

“সায়রা আর তূর্য বারান্দায় গিয়ে বসলো। তূর্য সায়রার একেবারে পাশ গেসে বসলো। সায়রা তূর্যর কাঁধে মাথা রাখলো। তূর্য সায়রার পেছন দিয়ে হাত দিয়ে সায়রাকে চেপে ধরে রাখলো। সায়রা মাঝে মাঝে এতো অবাক হয়। তূর্য তাকে কেন এতো ভালোবাসে সায়রা নিজেও ভেবে পায় না। যে সায়রা এক সময় কঠিন অবহেলায় বেড়ে উঠেছে সেই সায়রা আজ এই মানুষটার পুরো পৃথিবী। আর লোকটা এটা গর্ব করে বলে। আমার বউ আমার পুরো পৃথিবী। মাঝে মাঝে সায়রার ইচ্ছে করে চুমু খেয়ে খেয়ে তূর্যকে পাগল করে দিতে। তূর্য সায়রাকে চুপ থাকতে দেখে সায়রার দিকে তাকালো। দেখলো সায়রা,আগে থেকেই তাকিয়ে আছে। তূর্য সায়রার কপালো একটা চুমু খেলো। পরপর চেয়ে বললো ”

_এভাবে চেয়ে থেকো না বউ।

“সায়রা অবাক হয়ে বললো ”

_কেন ?

_আমার কিছু-মিছু হয়।

_কিছু মিছু আবার কি ?

_তোমাকে খেতে মন চায়। কিন্তু ওতে রিস্ক আছে। তাই একটু নরম করে তাকাও।

_আপনি একটা নষ্ট পুরুষ জানেন এটা।

‘তূর্য সামান্য হেসে বললো ”

_আগে জানতাম না। বিয়ের পর থেকে আমার ও মনে হচ্ছে আমি নষ্ট ।

“কথাটা বলেই তূর্য চোখ মারলো। সায়রা চেয়ে রইলো। কি সুন্দর অবলীলায় নিজের দোষ স্বীকার করে নিলো। সায়রা বললো ”

_বিয়ের আগে কি মানুষ জানে নাকি সে নষ্ট না কি ?

_অবশ্যই জানে। শোনো বউ পুরুষ মানুষর মাথায় কি চলে এটা তুমি কখনো ধরতে পারবে না।

_আপনার মাথায় আগে কি চলতো আর এখন কি চলে ?

_আগে চলতো শুধু কাজ। এখন চলে আদর।

_ইশ,। আবার মুখে বলে। লজ্জা ও নেই।

_তুমি বুঝবে না রে বউ। আদর ছাড়া,থাকা যে কি কষ্ট। আগে আমার মাথায় এসব আসতো ই না। এই তোমাকে বিয়ে করার পর মাথায় আদর আদর আর আদর।

“সায়রা এবার একটএ তূর্যকে বাজিয়ে দেখতে চাইলো। তাই একটা বুদ্ধি খাটালো। তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_আপনাকে কিছু প্রশ্ন করি। সত্যি উওর দেবেন হু ?

_আচ্ছা বলো।

_আপনি আমাকে কেনো বিয়ে করেছেন ?

“তূর্য একটু চেয়ে রইলো। পরপর বললো ”

_আদর করার জন্য ।

“সায়রা ফের বললো ”

_আপনি আমার কাছে কি চান ?

_আদর।

“সায়রা ভ্রু কুঁচকালো। বললো

_আপনি কি পেলে সব থেকে বেশি খুশি হন ?

” এবার ও তূর্যর সহজ উওর ”

_আদর।

“সায়রা এবার রেগে গিয়ে বললো ”

_মাথার ভেতর কি আদর ছাড়া আর কিছু নেই ?

_তুমি তো মনে আছে বউ। মাথায় শুধু আদর ই আছে।

“সায়রা এবার বলে বসলো ”

_যদি আমি আর আদর করতে না দেই আপনাকে।
আপনি কি ছেড়ে দেবেন আমাকে ?

“সাশরা কথা কেমন যেনো শুনালো। তূর্য বুঝলো সায়রা কি শুনতে চাচ্ছে তার মুখ থেকে। কিন্তু তূর্য কি করে সায়রাকে বোঝাবে। তূর্য সায়রার গালে হাত রাখলো। বললো ”

_প্রয়োজনে তোমাকে বেঁধে আদর করবো। তবুও ছেড়ে দিবো না বউ। তোমাকে কি ছেড়ে দোওয়ার জন্য বিয়ে করেছি নাকি।

_তাহলে কিসের জন্য বিয়ে করেছেন ?

“তূর্য এবার ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো ”

_নিজের কাছে রেখে রোজ খাওয়ার জন্য ।

“সায়রা ফের রেগে গেলো। তূর্যকে কিল ঘুষি মারলো কয়েকটা। বললো ”

_আপনি তো ভারি অভদ্র হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন।

“তূর্য এবার হেঁসে গান গেয়ে উঠলো ”

_অভদ্র হয়েছি আমি তোমারই প্রেমে। তাই কাছে আসো না। আরো কাছে আসো না।

“সায়রা আর তূর্যর কাথার মাঝেই সায়রার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা রুমে ছিলো। তূর্য গিয়ে নিয়ে এলো। দেখলো জেরিনের কল। তূর্য সায়রাকে দিলো। সায়রা কলটা ধরতেই আরেকপ্রান্ত থেকে জেরিনের কান্নার শব্দ এলো। সায়রা ভরকো গেলো। হুট করে জেরিনের কি হলো ”

_কি হয়েছে জেরিন। কান্না করছিস কেন? কোনো বিপদ হয়েছে ? কথা বল।

“জেরিন কান্নার জন্য কথা বলতে পারছে না। সায়রা একটু সময় দিলে জেরিন বললো ”

_সায়রা নাফিস আমার কল ধরছে না। ওর কি যেনো হয়েছে। আমি পাগল হয়ে যাবো। ওর কি হলো।

_একটু থাম। কি হয়েছে খুলে বল।

“তূর্য বুঝলো কিছু হয়েছে। তাই সায়রাকে লাউডস্পিকার এ দিতে বললো। জেরিন বললো ”

_আজ বাবা নাফিসের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো। ও খুশি মনেই এসেছিলো আমার বাসায়
কিন্তু বাবা ওর কেউ নেই শুনে ওর সাথে রুডলি ব্যবহার করে। ও বেরিয়ে যায় তখনি। তিন ঘন্টা হয়ে গেলো। আমার ফোম তুলছে না। এখন ফোন বন্ধ বলছে। ও বাইক নিয়ে গেছে। কোনো বিপদ যদি৷

“তূর্য এ কথা শোনা মাএ ওর হুস নেই। তূর্য বললো ”

_জেরিন।

_জি ভাইয়া।

_তোমার বাবা কি বলেছে ওকে ? ওর কেউ নেই কে বলেছে। তোমার বাবাকে বলো ওর পরিবার আছে। সব আছে। আগামীকাল ওর পরিবার যাবে তোমার বাসায়। তুমি টেনশন করো না। আমি দেখছি।

“তূর্য সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাড়ালো। রুমে গিয়ে নিজে বাইকের চাবি নিলো। সায়রা বললো ”

_এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন ?

“তূর্য এগিয়ে এলো। জেরিন তখন ও কলে। তূর্য সায়রার গালে হাত রেখে বললো ”

_নাফিসের কাছে। তুমি ঘুমিয়ে পরো বউ। আমি চলে আসবো হু। ভয় পেও না কিচ্ছু হবে না।

“পরপর সায়রার কপালে একটা চুমু খেয়ে তূর্য ছুটলো। সায়রা চেয়ে রইলো। নাফিস কোথায় আচে তা ও জানেনা এই লোক। অথচ ছুটে বেরিয়ে গেলো”

” তূর্য আগে সোজা নাফিসের বাসায় গেলো। দরজায় কলিং বেল চাপলো কয়েকবার৷ কিন্তু দরজা খুলছে না। তূর্য আবার ও কয়েকবার চাপলো। এরপর এসে দরজা খুললো। দরজা খুলতেই দেখলো নাফিস তোয়ালে হাতে দাড়িয়ে। সাওয়ার নিয়ে এসেছে। তূর্যকে এতো রাতে নাফিসের বাসায় দেখে নাফিস অবাক বললো ”

_কি হয়েছে স্যার ? কোনো বিপদ হয়েছে ?

“তূর্য রাগী দৃষ্টিতে চেয়ে বললো”

_ফোন কোথায় তোমার ? কোথায় গিয়েছিলে আজ ?

_ফোন তো চার্জ এ। আর আমি কোথায় যাবো ?

_হবু শ্বশুর বাড়ি যাওনি। একা। ছ্যাহ্ নাফিস। আমরা পর হয়ে গেছি। কেউ না আমরা।

“নাফিস যেনো আকাশ থেকে পড়লো। বললো ”

_এসব কি বলছেন স্যার। আমি তো,,, ।

_চুপ। একা কোন সাহসে গেলে জেরিনদের বাসায়। আমি নেই। দাদী ছিলো না,।তোমার বোন সায়রা নেই। কেউ নেই তোমার।

_স্যার।

“তূর্য এবার ও বলতে দিলো না কথা নাফিসকে। শুধু বললো ”

_কাল শুক্রবার। সবাই মিলে যাবো জেরিনদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। যদি হেরফের করো। খবর আছে তোমার।

“নাফিস চুপ রইলো। সে তো দেখা করতে গিয়েছিলো শুধু। তূর্য চলে আসবে। তাই বের হওয়ার আগে বললো ”

_ফোন অন করে জেরিনকে কল দাও।

_দিচ্ছি।

_এক্ষনি দাও। ভালোবাসার কদর না করলে ঠেং ভেঙে দেবো।

_চলে যাচ্ছেন যে। বসবেন না স্যার।

_বউ রেখে এসেছি। গেলাম।

“তূর্য বের হলো। মনের ভেতর খচখচ করছিলো। যদি নাফিস রাগের বসে কিছু করে ফেলতো। এখন শান্তি লাগছে। এবার শুধু জেরিনের সাথে বিয়ে দিতে পারলেই তূর্য খুশি”

“সায়রা এখনো ঘুমায়নি। তূর্যর জন্য অপেক্ষা করছে। একটু পর পর জেরিন কল দিচ্ছে। এর মাঝে দেখলো তূর্য ফিরে এসেছে। সায়রা এগিয়ে গেলো তূর্যর দিকে।
বললো ”

_কি হয়েছে? সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো ? নাফিস ভাইয়া ঠিক আছে?

_সবাই ঠিক আছে। জেরিনকে ও কল করবে। সমস্যা নেই।

“কথাটা বলে তূর্য ওয়াসরুমে চলে গেলো। সায়রা বিছানায় বসে রইলো। তূর্য বের হয়ে আসলো। দেখলো সায়রা ওভাবেই বসে আছে। অথচ রাত বারোটা বাজতে চললো। তূর্য এসে বিছানায় সায়রার পাশে বসে সায়রাকে বুকে টেনে নিলো। সায়রা বললো ”

_একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?

_করো।

_নাফিস ভাইয়া কি সত্যি ই এতিম ? উনি আপনার কি হয় ?

“তূর্য সায়রার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। কতো কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে তূর্যর। নাফিস তূর্যর জীবনে সব ভাবে জড়িত। নাফিস তূর্যর কাছে কি এটা শুধু তূর্য জানে। আর কেউ না। নাফিস নিজেও বোধহয় জানেনা৷ তূর্য কিছুটা সময় নিয়ে ই বললো ”

_নাফিস এতিম। আবার এতিম না। ওর কিছু নেই আবার সব আছে।

“সায়রা কথার মানেই বুঝলো না। বললো ”

_মনে হচ্ছে এর পেছনে কোনো গল্প আছে। বলুন না তূর্য। আমি নাফিস ভাইয়ার সম্পর্কে জানতে চাই।

“তূর্য সামান্য হাসলো। পরপর বতলে লাগলো ”

_আমি এই জীবনে এতো কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। অথচ দাদী ছাড়া কাউকে পাশে পাইনি। সবাই আমাকে শুধু নিচে নামাতে চেয়েছে৷ কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। যখন আমার সব ডুবে যাচ্ছে। ঠিক তখন আমি একটা হাত পাই। সেইটা নাফিস।
সেবার আমি একটা ফ্যাশন হাউজ খোলার জন্য উঠে পড়ে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই কোথাও সাহায্য পাচ্ছিলাম না। আমার লোক নেই। আমি একা কি করবো। ভাবলাম শেষ হেরে যাবো এবার। জীবনে সফল হতে পারবো না।
এর মাঝে দেশে ফিরে এলাম। মায়ের কবর দেখার জন্য একদিন মোহনগঞ্জ গিয়ে উঠলাম। তখন আমার কেউ নেই। কতো বয়স হবে আমার তখন। বাইশ। আমি মায়ের কবর জিয়ারত করে সেখানেই ঘুরছিলাম। পাশেই মোহনগঞ্জ এতিমখানা। দেখলাম রোগা পাতলা একটা ছেলে বসে বসে কি কি যেনো আর্ট করছে। আমার কৌতুহল হলো। এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলাম। অনুমতি ও নেইনি। ছেলেটা কিচ্ছু বললো না। শুধু আমার দিকে চেয়ে একবার হাসলো।
ফের মনোযোগ দিলো খাতায়। আমি দেখলাম ও কিছু একটা ডিজাইন করছে।

“তূর্য থামলো। সায়রা বলে উঠলো ”

_কি ডিজাইন করছিলো ?

_এই যে আজ যে এসএসটি এলিগেনস এর বিল্ডিং সকলে দেখে। সেইটা। যদিও তখন ও এটা ভেবে করেনি। মনে এসেছিলো করেছে।

_পড়ে কি হলো ?

_এরপর ও আর্ট করলো আমি ওর সাথে টুকটাক কথা বলতে লাগলাম। একটা উওর ও বিরক্তি নিয়ে দেয়নি। আমি জানলাম ও এতিমখানায় ই পড়াশোনা করেছে। এখন পড়ায় ও। বললাম বাসা কোথায়? ও চুপ করে গেলো। একটু সময় নিয়ে বলেছিলো। ওর নিজের কোনো ঠিকানা নেই। ছোট থেকে এখানেই আছে। এটাই ওর ঠিকানা৷। ওর কাউকেই ও চেনে না।
বুঝলাম ও এতিম। আমার মতো। আমি শুধু ওর দিকে চেয়ে ছিলাম জানো। মনে হচ্ছিলো আমার একটা ভাই হলে এমনি হতো। ও আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করেনি জানো। ওর মনোযোগ ছিলো আর্ট করায়। ওই সময়ের মধ্যে ও মোটামুটি একটা বিল্ডিং এর ডিজাইন করে ফেললো। ওটা আমার দিকে দিয়ে বললো এটা রাখেন। কোনোদিন যদি বাড়ি তৈরি করেন। এমনভাবে কইরেন। আমি ওকে বললাম।
কিন্তু আমার তো বাড়ি আছে। আমি একটা অফিস তৈরি করতে চাই।
ও একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো। তাতে ও হয়ে যাবে। একটু এদিক সেদিক করতে হবে আরকি।
আমার কেন যেনো মনে হলো ওর সঙ্গে আমার আইডিয়া খুলে বলা দরকার। এতে আমার লাভ না হলেও খারাপ কিছু হবে না।
আমি ওকে সবটা খুলে বললাম। ও আমার হাতের উপর হাত রেখে শুধু বললো।
উপরওয়ালার উপর ভরসা রাখুন। একদিন আপনি সফল হবেন ই দেখে নিয়েন। সেদিন এই নাফিসের কাছে এসে বইলেন কিন্তু।
আমার শুধু মনে হলো ওকে আমার সঙ্গে নেওয়া দরকার। কিন্তু ও কি যাবে। ওকে আমি জিজ্ঞেস করলাম। ও সোজা না করে দিলো।
হয়তো বিশ্বাস করতে পারেনি আমাকে। আমি ও জোড় করিনি। কেউ নেই আমার একাই চলতে হবে।
যখন উটে চলে আসবো। ও পেছন থেকে ডেকে বললো। কখন যাবেন ? কোথায় আসবো ?
বিশ্বাস করবে আমার এতো খুশি লেগেছিলো। এই ভেবে যে আমি একটা হাত পাবো। আমার সঙ্গে যে লড়বে।
ওইদিন সন্ধায় ও আমার সঙ্গে এলো। এই বাড়িতে। দাদী ওকে ঠিক আমার মতো করেই আপন করে নিলো। এক সঙ্গে সব করলাম। এর মধ্যে সব থেকে বড় বাঁধা কে হয়েছিলো জানো ?

“সায়রা বললো ”

_কে ?,

_রুহানি। ও দেশে চলে এলো। ও কোনোভাবেই চাইতো না আমি দেশে সেটেল হই। ও চাইতো ওদের সঙ্গে থাকি। ও নানাভাবে বাঁধা দিচ্ছিলো। এসব সামলেছে নাফিস। ও ওর সখ ভুলে নিজের চাওয়া ভুলে আমার সঙ্গে থেকেছে। আমার একটা বিপদ হলে যদি কেউ বিনা বাক্যে লড়াই করে আমার জন্য ও হলো নাফিস। আমার পেছনে যে মানুষটার হাত ছিলো। ও নাফিস। ও কখনো আমাকে ভাই বলেনি। সব সময় স্যার ডেকেছে। আজ ও। ও নিজেও জানেনা ওকে আমি কতোটা স্নেহ করি।

“সায়রা এবার বললো ”

_তাহলে ভাইয়া অন্য বাসায় চলে গেলো কেনো?

_একা থাকার ইচ্ছে ছিলো। আমি ই ওই বাসাটা কিনে দিয়েছি। ওর সব সখ আমি পূরন করেছি। আজীবন করবো। ও চেয়েছে জেরিনকে। আমি ওটা ও ওকে দেবো। সব দেবো ওকে।

“তূর্য ফের বললো ”

_ওর মন নরম। দুষ্টমিতে সেরা। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় বেশ দূর্বল। ওকে সেইদিনের পর আমি আর মোহনগঞ্জ নিতে পারিনি। আমি একদিনের জন্য গেলে ও যায় না। বলে গেলে কিন্তু আর আসবো না। আমার শেকড় আমার টেনে ধরবে। এই ভয়ে আমি ও নেই না।

_তাহলে এখন কি করবেন ? জেরিন এর বাবা তো বিয়ে দিবে না বলছে ?

_জেরওনের বাবা দিবে সঙ্গে দাদা থাকলে সে দিবে। নাফিসের সখের জিনিস। বুঝতে হবে।

“তূর্য কথা বলছে সায়রা চুপচাপ শুনছে। হুট করেই তূর্য সায়রাকে নিয়ে ই শুয়ে পড়লো। নিজের সঙ্গে একেবারে মিশিয়ে নিয়ে উপরে চাদর টেনে দিলো। সায়রা বুঝলো না কি হচ্ছে। এমন সিরিয়াস কথার মাঝে এই লোক এমন করছে কেন। মনে হচ্ছে সায়রার মধ্যে ঢুকে পড়বে। সায়রা তূর্যর বুকের মধ্যে শুয়ে রইলো চুপ করে। একটু পরেই অনুভব করলো তূর্যর হাত ধিরে ধিরে সায়রার জামা ভেদ করছে। হাত ধিরে ধিরে সায়রার পেটের মধ্যে বিচরণ করছে৷ তূর্যর মুখ সায়রার কানের কাছে নিয়ে বললো ”

_এতো সফট কেন তুমি বউ৷ এতো নরম। উফ।

_আপনার হুটহাট কি হয়ে বলুন তো ?

_আদর আদর পায়। এতো নরম তুলতুলে একটা বউ থাকলে কি করে নিজেকে ঠিক রাখি৷

“তূর্যর হাত ধিরে ধিরে সায়রার বক্ষদেশে গেলো। সায়রার শরীর কেঁপে উঠলো। তূর্য গভীর কন্ঠে বললো ”

_এখনো এতো কাঁপা-কাঁপি। আমার ছোয়া তো সয়ে যাওয়ার কথা বউ।

“সায়রা তূর্যকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুজে বললো ”

_সয় না তো।

_এতো কাছে আসলে লোভ লাগে বউ। তুমি যে অসুস্থ আমি ভুলে যাই। কি করে নিজেকে শান্ত করবো বলো তো।

“সায়রার হরমোন উঠা নামা করে খুব। নিজেও মাঝে মাঝেমধ্যে পাগল হয়ে উঠে তূর্যর ছোঁয়া পাওয়ার জন্য। তবুও ও মেয়ে। নুখ ফুটে বলে না। বলার দরকার ও হয়নি কখনো। তূর্য এতোটা আদর দিয়েছে। সায়রা তাতেই পাগল হয়ে উঠেছে। এই যে এখন তূর্যকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।
তূর্য সায়রার গলায় মুখ গুজে বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
পিঠে স্লাইড করছে। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা। কিন্তু পারলো না। সায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো ”

_একটু আদর করি বউপাখি। একটু। একবার।

“সায়রা চুপ করে রইলো। তূর্য এখন পাগল হয়েছে। আকুতি করবে। সায়রাকে বুঝাবে। সায়রা এই জিনিসটা ভীষণ উপভোগ করে। তাই চুপ রইলো। তূর্য সায়রাকে চুপ করে থাকতে দেখে বললো ”

_তোমার কি কষ্ট হয় আমি ছুঁয়ে দিলে। বলো না বউ।
আমার যে চাই তোমাকে।

“সায়রা আস্তে করে বললো ”

_যদি বলি কষ্ট হয়। তাহলে কি আর ছুঁয়ে দেবেন না ?

_তাও দেবো। কিন্তু নরম ভাবে। হার্ড হবো না। সব স্লোলি করবো।

_চুপ অসভ্য লোক ।

_উঁহু। চুপ করতে পারবো না৷

_তাহলে কি করতে পারবেন ?

_তোমায় আদর করতে।

“কথাটা বলেই তূর্য সায়রার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। সায়রা বাঁধা দিলো না। তূর্য এখন একটু নমনীয় থাকে। তূর্য নিজের মতো আদর করতে লাগলো তার বউপাখিকে। সায়রা ফের মও হলো স্বামীর আদরে। এভাবেই আদরে সোহাগে দিন কাটে তাদের। নেই কোনো মান অভিমানে। নেই অভিযোগের ঝুলি। শুধু আছে ভালোবাসা ”

“নাফিস ফোন অন করতেই শ-খানিক নোটিফিকেশন এলো ফোনে। সব জেরিনের কল আর মেসেজ। নাফিস তখন চলে এসেছিলো ঠিকই তবে রাগ করে নয়। যেখানে গুরুত্ব দেওয়া হলো না নাফিসের কাছে সেখানে থাকার মানে ও হয় না৷ নাফিস কল ব্যাক করলো। জেরিন বোধহয় ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো। সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করলো। নাফিস কিছু বলার আগেই কানে এলো জেরিনের ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ। নাফিস বললো ”

_ওই মুসিবতের বেটি। কানতাছো কে ?

_আপনি খুব খারাপ। তখন ওইভাবে চলে গেলেন কেন ? ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। আমাকে ছেড়ে দিতে চান এখন তাই তো।

_হ তাই। কান্না বন্ধ করো। পাগল। আমি বাসায় আসছি। তূর্য স্যার আসছিলো।

_আপনি কি আমার বাবার কথায় কষ্ট পেয়েছেন ?

_নাহ্।

_আমাকে বিয়ে দিবে না বলছে আপনার কাছে।

_না দিক। তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নাও।

“জেরিন যেনো আকাশ থেকে পড়লো। নাফিস এ কথা বলছে। জেরিনকে ছেড়ে দিবে। জেরিন বললো ”

_তূর্য ভাইয়া বলেছে কাল আসবে আমাদের বাসায়।

_যাক। আমি তো যাচ্ছি না। তোমার বাপ কে বলো ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিতে।

“জেরিন এমনেই কান্না করেছে। তার মধ্যে নাফিসে এমব কথা। রাগে দুঃখে শেষে বললো ”

_ঠিক আছে। রাখলাম। আমাদের সব এখানেই শেষ।

“কথাটা বলে জেরিন কল কেটে দিলো। নাফিস কল রেখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। জেরিন ভাবলো নাফিস হয়তো কল দিবে। কিন্তু নাফিস আর কল দিলো না। জেরিনের ঘুম হারাম হয়ে গেলো। এই বুঝি ভালোবাসা। এটাকে ভালোবাসা বলে। জেরিন থাকবে না আর নাফিসের সঙ্গে ”

“আজ শুক্রবার। সায়রার হাতের বেন্ডেজ খুলে ফেলা হলো। সায়রা মোটামুটি ভালো ই সুস্থ। সামর্থ্য বেগম কে ও বলা হলো সব ঘটনা। সামর্থ্য বেগম বললেন দরকার হলে আজই বিয়ে করিয়ে নাফিসের বউ নিয়ে আসবে।
বেলা এগারোটার সময় তূর্য নাফিসকে ধরে নিয়ে এলো ওর বাসা থেকে।
অনেকদিন পর সায়রা আজ একটু রান্না ঘরে গিয়েছিলো।মসলার গন্ধ ও সয্য হলো না৷ নাকে কাপড় দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলো। তূর্য আর নাফিস সোফায় বসে তখন। তূর্য ছুটে এলো সায়রকে দেখে। সায়রার কাছে এসে ধরলো সায়রাকে। সায়রা কাশছে। তূর্য বললো ”

_রান্না ঘরে কি কাজ তোমার। কিছুর স্মেল নিতে পারো না। তবুও কেন যাও পাখি।

_দেখতে গিয়েছিলাম।

_আর যাবে না। এতো গিন্নি হতে হবে না৷ আমার বাচ্চার মা হও সুস্থ ভাবে আগে। তারপর সব। যাও দাদীর কাছে যাও।

“সায়রা চলে গেলো সামর্থ্য বেগম এর ঘরে। তূর্য আর নাফিস বসলো আবার। নাফিস হুট করেই বললো ”

_শুনলাম রুহানির বাবা এসেছে স্যার।

“তূর্য তাকালো। বললো ”

_কবে ?

_কাল। খবর নিয়ে জানলাম রুহানির মানসিক অবস্থা ভালো নয়।

“তূর্য রাগি গিজগিজ করতে করতে বললো ”

_ও মরে যাক। তাতে কিছু যায় আসবে না।

“বিকেলের দিকে ওরা সবাই বের হলো। জেরিনদের বাসায় যাওয়ার জন্য। নাফিস গড়িমসি করছিলো যদিও। সারাদিন জেরিনের সঙ্গে কথা বলেনি৷ কেন বলেনি নিজেও জানেনা। নাফিসের একাকিত্ব নিয়ে কথা বলা ওর পছন্দ না। তবুও তূর্য জোড় করেছে। সায়রা ও গিয়েছে।।সামর্থ্য বেগম ও৷
জেরিন ওর পরিবারে জানায়নি৷ ভেবেছিলো আসবে না। হুট করে কলিং বেল বাজায় জেরিন নিজেই এসে দরজা খুলে দিলো। ওদের সকলকে দেখে জেরিন অবাক। কিন্তু আরো অবাক হলো যখন পেছনে নাফিসকে পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে। জেরিনের মা এগিয়ে এসে সবাইকে ভেতরে আসতে বললো। ভেতরে গিয়ে সবাই বসলো৷ জেরিনের পাশ দিয়ে তখন নাফিস গেলো। বিড়বিড় করে বললো ”

_মুসিবতের বেটি।

“জেরিন রাগে ফুলে আছে৷ কিছু বললো না। সবার সাথে ওর মাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নিজেই গেলো চা নাস্তা বানাতে।
জেরিনের মা জেরিনের বাবাকে ডেকে আনলেন। তিনি এসে বসলেন। নাফিস উনার দিকে তাকাচ্ছে না
তূর্য ই বললো ”

_পরিবার নিয়ে আসতে বলেছিলেন ওকে৷ ও পরিবার নিয়ে এসেছে। এবার নিশ্চয়ই আপওি নেই।

“জেরিনের বাবা একটু হাসলেন কেমন করে যেনো। বললো ”

_পরিবার। ও তো বলেছিলো ওর নিজের কেউ নেই।

_ও বুঝাতে চেয়ে ওর রক্তের কেউ নেই। আমি ওর ভাই। রক্তের থেকে ও বেশি। এবার বলুন।

_ও কি তোমার সঙ্গে এক বাসায় থাকে ?

“সকলে চুপ হয়ে গেলো। নাফিস রাগে গজগজ করছে। জেরিনের বাবার কথাবার্তা খুব ই খারাপ লাগছে সকলের কাছে। তবুও তূর্য মাথা ঠান্ডা করে বললো ”

_নাহ্ আলাদা থাকে।

_তাহলে তো ও কোনো কিছুই পাবে না৷ ওই একটা ভাড়া বাসার ভরসায় আমি মেয়ে দিবো।

_ওটা ভাড়া বাসা না। ওটা ওর নিজের বাসা৷

_মাএ একটা ফ্লাট। পুরো বাড়ি তো নেই। ওইটুকু দিয়ে জীবন চলবে।

“নাফিস পারছে না উঠে চলে যেতে। নেই নাফিসের কিছু। দরকার হলে বিয়ের নাম ই নেবে না মুখে। তবুও এমন লোকের কথা শুনতে পারবে না। এবার তূর্য বললো ”

_বিয়ে করে ও আমার বাসায় উঠবে। আমি অর্ধেকটা ওর নামে লিখে দিবো বাড়ি। কোম্পানির ও শেয়ার পাবে ও। এর থেকে বেশি কিছু আশা করি লাগবে না।
এবার রাজি হোন। ওর পছন্দ আপনার মেয়েকে। হয়তো নিজের দেবেন। নয়তো ও তুলে নিয়ে যাবে। সেটা ভালো দেখায় না।

_হুমকি দিচ্ছো নাকি ?

_ভাবুন দিচ্ছি।

“জেরিনের বাবা চুপ করে রইলো। তার মতিগতি বোঝা ভার। তিনি যে একজন লোভী মানুষ তা বুঝার বাকি নেই কারো। সামর্থ্য বেগম ও টুকটাক অনেক কিছু বললেন। তবুও তিনি কথা দিলেন না। তূর্য শেষে মহা বিরক্ত। এদিকে নাফিস তব্দা খেয়ে বসে আছে। তূর্যর কথা শুনে। তূর্য এতো কিছু বলছে। অথচ নাফিস তূর্যর রক্তের কেউ না।
জেরিনের বাবা কিছু না বলায় ওরা বেরিয়ে এলো। জেরিন আজ ওর বাবার উপর বেশ অভিমান করলো। এর থেকে বেশি আর কি করতো।
বাসা থেকে বের হয়ে সায়রা আর সামর্থ্য বেগম কে গাড়িতে তুলে দিলো তূর্য । আলাদা ড্রাইভার রেখেছে। বিপদআপদ বলা যায় না।
এবার নাফিসের বাইকের পেছনে তূর্য উঠে বসলো।
বললো ”

_নিরিবিলি কোথাও চলো নাফিস। চা খেয়ে আসি।

“নাফিসের মন মেজাজ খারাপ। জেরিন কে সব সময় মজা করে মুসিবতের বেটি বলতো। আজ দেখলো ভুল বলেনি। আসলেই একটা মুসিবত।
নাফিস আর তূর্য একটা চায়ের দোকানে এসে বসলো। নিরিবিলি জায়গা। দুটো চা অডার দিলো। নাফিস তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_এরপর আর কি করবো স্যার।

_আর কি করবে। কালই তুলে আনবে।

_সে না হয় আনবো৷ কিন্তু ।

_আমার বাসায় গিয়ে উঠবে। যদি না উঠো। তোমার ওই বালের বাড়ি আমি আগুন ধরিয়ে দিয়ে আসবো।

_কিনে তো দিয়েছিলেন আপনি ই।

_আর দেবো না। বাড়িতে এসে থাকবে। সবাই এক সাথে। অতোশত বুঝি না ।

_জেরিনের বাপ আমাকে পুলিশে ধরায় দিবে স্যার।

_আমি আছি কি করতে। বউ নিয়ে আসবা শুধু ।

“তূর্য আর নাফিস বসে বসে চা খেলো। আরো কিছু গল্প করলো। তূর্য মনে মনে খুশি। নাফিস চলে আসবে। বাড়িতে নতুন বউ। তার মধ্যে ওদের ও বেবি আসছে। বাড়িটা ভরা ভরা লাগবে। একটা ফ্যামিলি হবে এবার বৃষ্টি বিলাশ বাড়িতে ”

চলবে,,