ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-৪+৫

0
2

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৪

“সন্ধায় টিউশনি শেষ করে বের হলো সায়রা। এখনো কিছুটা সময় বাকি বাস আসতে। সায়রা হাঁটতে লাগলো একা একা। এরপর গিয়ে দাড়ালো বাসের জন্য। আজ ও সেই ভিড়। তবুও কষ্ট করে উঠলো। আজ আর দাড়াতে হলো না। একটা মেয়ের পাশে সিট পেয়ে গেলো। সায়রা দেড়ি না করে বসে পড়লো। পাবলিক বাসে বড় একটা সমস্যা হলো সিট না থাকা সওে ও লোক উঠানো। এরপর দাড়িয়ে দাড়িয়ে যেতে যেতে ধাক্কাধাক্কি করা৷ সায়রা চুপ করে বসে রইলো।
সামনের স্টপে সায়রার পাশের মেয়েটা নেমে গেলো। তখনই একটা ছেলে এসে সেখানে বসে পড়লো। সায়রা একটু অবাক হলো বটে। একটু চেপে বসলো সে ”

_আরেহ, আপনি আবার ভয় পাচ্ছেন ? কাল আপনাকে কি বললাম বলুন তো।

“সায়রা চমকে তাকায়। পাশেই বসে আছে কালকের সেই ছেলেটা। চোখ দেখেই চিনতে পারলো সায়রা। ছেলেটা হাসলো সায়রা কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ”

_এই যে, মিস।

_জি।

_বললাম আবার ভয় পাচ্ছেন নাকি ?

_নাহ, ভয় পাবো কেনো?

_ভয় না পাওয়া ই ভালো। তারপর বলুন। কেমন আছেন মিস ?

_জি ভালো। আর মিস নয়। আমার সায়রা। আপনি ওটাই বলতে পারেন।

_সায়রা। খুব সুন্দর নাম তো। কে রেখেছে এতো ইউনিক নাম?

_আমার মা।

_আচ্ছা । কোথায় জান এভাবে প্রতিদিন। সন্ধা হয়।

_ টিউশনি করাতে। পরপর দুটো টিউশনি থাকে বিকেল থেকে তাই ফিরতে সন্ধা হয়ে যায়।

_ওহ।

_আর আপনি কোথায় জান?

_যাই কিছু একটা করতে।

_বলতে চাচ্ছেন না তাই তো।

“ছেলেটা এবার মুচকি হাসলো। সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_আপনাকে দেখেই বোঝা যায় আপনি বুদ্ধিমতি।

“সায়রা হেসে ফেললো। বাকিটা রাস্তা তারা কথা বলতে বলতে ই গেলো ”

“রাতে বাড়ি ফিরেই তূর্য মুখোমুখি হলো সামর্থ্য বেগমের। তিনি বোধহয় তূর্যর জন্য ই অপেক্ষা করছিলো। তূর্য এসে সামর্থ্য বেগমের সামনে দাড়ালো। সারাদিন অফিস শেষ করে সে ক্লান্ত। তা চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সামর্থ্য বেগম এক গাল হেসে তূর্য
দিকে চেয়ে বললেন ”

_আয় আয়৷ তোর আসায় ই বসে ছিলাম আমি।

_কেনো বুড়ি৷ মনে মনে আবার কোন মতলব করছো শুনি।

_ছি ছি। নিজের নাতিকে নিয়ে কেউ মতলব করে। সারাদিন তোকে পাই না। তুই কি করে বুঝবি আমার দুঃখ ।

“তূর্য হালকা হাসলো৷ হাতের ব্লেজারটা সোফায় রেখে হাঁটু গেড়ে বসে সামর্থ্য বেগমের হাতটা ধরলো। সামর্থ্য বেগম নাতির চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন ”

_সময় পাই না বুড়ি৷ অনেক কাজ। চিন্তা করো না কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।

_সত্যি ই তো?

_হুম সত্যি।

_সাথে নাত বউ থাকলে আরো ভালো হবে৷ শোন তোর রুমে কতোগুলো মেয়ের ছবি রাখা আছে একটু দেখে নিস।

“তূর্য সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাড়ালো ”

_এই তোমার মতলব। আর কতোবার বলবো বলো তো। আমার বিয়ের উপর কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি কাজের বাইরে অন্য কিছু চিন্তা করতে পারি না।

_চিন্তা করতে হবে না। তুই একটা মেয়ে পছন্দ কর। বিয়ে করিয়ে বউ আনি। এরপর তোকে আর বিরক্ত করবো না।

_আমার কোনো মেয়ে পছন্দ নেই। আর না হবে। তুমি চাইলে একশো মেয়ে এনে দিতে পারবো তোমার সেবার জন্য। কিন্তু বিয়ে করতে পারবো না। সরি।

“বলে তূর্য উপড়ে চলে গেলো। সামর্থ্য বেগম গাল ফুলিয়ে বসে রইলেন। তিনি মহা বিরক্ত। মনে মনে ভাবলেন এবার কিছু একটা করে তূর্যর বিয়েটা তিনি দিয়ে ই ছাড়বে। সামর্থ্য বেগমের শরীরটা ও ভালো যাচ্ছে না। বয়স হয়েছে তার৷ কিছু হলে। তূর্য সম্পুর্ন একা হয়ে যাবে। সে ছাড়া যে ওই হতভাগার আর কেউ নেই। সামর্থ্য বেগম একটু জোড়েই বলে উঠলেন ”

_এইবার আমি আর মানবো না এই আমি বলে দিলাম। বিয়ে তোকে করতেই হবে।

“তূর্য শুনলো কথাগুলো তবুও চলে গেলো নিজের ঘরে। সারাদিনের কাজ শেষে এখন একটু ফ্রি সময় তার। লম্বা সময় ধরে সাওয়ার নিয়ে তূর্য বের হলো। বিছানার উপর রাখা ফোনটা বাজছে৷ সেটা হাতে নিতেই দেখলো ইংল্যান্ড থেকে তার বন্ধুরা গ্রুপ কল করেছে। তূর্য নিজের পড়াশোনা সেখানেই শেষ করছে। তাই বাংলাদেশে তার তেমন বন্ধু নেই৷ সেখানেই কিছু বাঙালি বন্ধু হয়েছিলো।এখনো আছে৷ তূর্য কলটা ধরলো। কথা বলতে বলতে বিছানায় বসে পড়লো।
কথা শেষ করে উঠতে যাবে তখনই চোখে পরলো কতোগুলো ছবি রাখা। তূর্যর এসবের উপর কোনো ইন্টারেস্ট নেই। সে ছবিগুলো একটা ড্রইয়ারে নিয়ে রেখে দিলো। এরপর নিজের কাজে মন দিলো ”

“বাড়ি ফিরে আজ তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি সায়রাকে। কোকিলা বেগম অসুস্থ হয়ে পরেছে বিকেল থেকে। তাই এখন সে নিজের ঘর থেকে বের ও হতে পারবে না সায়রাকে চার কথা শোনাতে ও পারবে না।কিন্তু সায়রার কপালে সুখ বেশি সময় রইলো না। দিশা এসে হাজির। মেয়েটা একটু অন্য ধাঁচের। সায়রাকে দিশা পছন্দ করে না। সায়রার ও তাতে কিছু যায় আসে না। দিশা এসে কি যেনে নিয়ে আবার চলে গেছে”

“পরেরদিন সকাল সকাল সায়রা অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো। রাতেই মেসেজ এসেছে জয়েনিং এর। খুশিতে নিজে একা একাই নাচেছে সায়রা। অবশেষে হলো চাকরিটা তার ৷ সায়রা সকালের নাস্তা পর্যন্ত করলো না। কোকিলা বেগমের শরীর ভালো নেই সামনে পড়লে নানা কথা শোনাবে৷
রিকশা নিয়ে অফিসে এসে পৌছালো। অবশেষে একটা ভালো চাকরি পেলো সে। সায়রা ফোন বের করে দেখে
অলরেডি সে লেট। এক দৌড় দিলো সায়রা। লিফট এর সামনে আসতে আসতেই দেখলো লিফট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনো রকমো দৌড়ে গিয়ে দাড়াতেই কেউ একজন ভেতর থেকে হাত দিয়ে বাঁধা দিলো লিফট বন্ধ হওয়া। সায়রার যেনো বুকে থেকে পাথর নেমে গেলো। মুখে এক গাল হাসি নিয়ে লিফট এ ঢুকে দাঁড়াতে ই দেখলো সেদিনের সে লোকটা। কালো কমপ্লিট স্যুট পরনে। ভেতরে সাদা শার্ট। একবারে রোবটের মতো দাড়িয়ে আছে পকেটে দু হাত ঢুকিয়ে। সায়রা সৌজন্যের সাথেই বললো ”

_ধন্যবাদ আপনাকে।

“লোকটা হু হা কিছু ই করলো না। একবার তাকালো ও না। সায়রার ভারি বিরক্ত লাগলো বিষয়টাতে। এটা মানুষ নাকি রোবট। রিমোট কন্ট্রোল এ চলে নাকি কে জানে। এ নাকি আবার এতো বড় ফ্যাশন হাউজ এর মালিক। নবম তলায় এসে লিফট খুলে গেলো। লোকটা গটগট করে বেরিয়ে গেলো। পিছনে পিছনে সায়রা ও বের হলো।
সায়রা এসেই দেখলো তার মতো আরো অনেক মানুষ এসেছে। সবাই বসে আছে। সায়রা গিয়ে একটা মেয়ের পাশে বসলো। টুকটাক কথা হতেই জানলো মেয়েটা ও নতুন৷ নাম জেরিন। আরো কিছু কথা বলতেই ওদেরকে ডাকা হলো একটা রুমে। সবাই গেলো সেখানে। এলটা বড়সড় রুম। বড় একটা টেবিল সাথে চেয়ার। সামনেই মনিটরিং করা। এসব হাই ফাই জায়গায় এমন ই হয়৷ এগুলো সে টিভিতে দেখলো। একজন এসে সবাইকে বসতে বললো। সবাই সবার মতো বসলো। জেরিন আর সায়রা ও এক সাথে গিয়ে বসলো । তখনই রুমেটায় ঢুকলো কয়েকজন একসাথে। সবাই তাদের দেখে দাড়িয়ে গেলো। সায়রা চেয়ে রইলো শুধু কাঙ্ক্ষিত একজনের দিকে। মানুষটার আ্যটিটিউড ই ভিন্ন। কেমন গোমরা মুখো টাইপ৷ সবাইকে বসতে বলো লোকটা আগে নিজের পরিচয় দিলো,

_লেট মে ইন্ট্রোডিউস মাইসেলফ, বিফোর উই বিগিন।
আই অ্যাম সাদমান শাহারিয়ার তূর্য।
আই মে নট নো অল অব ইউ ইয়েট, বাট আই’ম শিউড় উইল গেট টু নো ইচ আদার অ্যাজ উই কন্টিনিউ ওয়ার্কিং টুগেদার।
সো, লেটস স্টার্ট টুডেজ সেমিনার।

“সায়রা দেখলো তূর্যকে। এখানে বসা সকলের নজর এখন তার দিকে। তূর্য নিজের মতো করে বলে যাচ্ছে।
সকলে মনোযোগ দিয়ে শুনছে। সায়রা তো একেবারে সিরিয়াস হয়ে বসেছে। অনেক কষ্টে এই চাকরি মিলেছে। আর যেই বস এদিক ওদিক হলেই কি করে বসে কে যানে।
সেমিনার শেষে তূর্য বেরিয়ে গেলো। নাফিস সবাইকে জয়েনিং লেটার জমা দিয়ে আইডি কার্ড নিয়ে যেতে বলে চলে যেতেই শুরু হলো কানাঘুষা। সায়রা একটএ অবাক ই হলো। এরা সবাই তূর্যকে নিয়ে গসিব করছে।
বিষয়গুলো এমন যে”

_ইস, বসকে দেখেছিস। এও কিউট।

“আরেকজন বলে উঠলো”

_আমি তো প্রেমেই পড়ে গেছি।

“সায়রা এসব শুনে হতবাক। এমন গোমরামুখো মানুষ দেখে কেউ প্রেমে পড়তে পারে. আর প্রেমে কি মানুষ এতো সহজে পড়ে যায় নাকি। আজকাল প্রেম ও সস্তা হয়ে গেছে । সায়রা আর জেরিন বের হলো এক সাথে কথা বলতে বলতে ”

_এই সায়রা শুনলে ওই মেয়েগুলোর কথা। স্যার কিন্তু আসলেই সুন্দর কি বলো ?

“সায়রা জেরিনের দিকে চেয়ে হতাশ কন্ঠে বললো”

_তুমি ও জেরিন। আর মানুষ পেলে না৷ ওই পেচার মতো মুখওয়ালা লোককে তোমাদের ভালো লাগছে।

_কোথায় ? তোমার চোখে কি সমস্যা সায়রা। এতো কিউট একটা ছেলেকে তুমি এভাবে বললে।

_আহারে। থাক আর বলবো না। এবার চলো অফিসটা ঘুরে দেখি একটু।

_চলো।

“তূর্য ভীষণ ব্যস্ত। দেশের বাহির থেকে লোক আসবে। নতুন ডিজাইন দরকার তার। নতুন যারা আছে তাদের উপর ভরসা করতে পারছে না পুরোপুরি। রেপুটেশন নষ্ট হওয়া যাবে না। তাই জুরুরি মিটিং শেষ করে আবার বের হলো আরেক মিটিং এর জন্য। সাথে রুহানি বের হতে গিয়ে গেটের সামনে এসেই ধাক্কা লাগলো কারো সাথে। কে কাকে ধাক্কা দিয়েছে বোঝা মুশকিল। থেমে গেলো তূর্য। ফ্লোরে পড়েছে মেয়েটা। তূর্য ফিরে এসে তাড়াহুড়ো করে হাঁটু গেড়ে বসে সায়রার যেসব জিনিস পরেছে তুলতে লাগলো ”

_আই এম সরি মিস,,,,,।

“তূর্য তাকালো মেয়েটার মুখের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে হার্ডবিট ফাস্ট হলো। থমকে গেলো সবকিছু। তখনই সায়রার কর্কশ গলায় বলে উঠলো ”

_আপনি,,,আমাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মেরেছেন তাই না। আমার সব কিছু ফেলে দিয়েছেন।

“তূর্য হুসে ফিরলো। এই মেয়ের গলার সর এতো উঁচু কেনো ? কানটা বোধহয় শেষ ”

_হুয়াট ননসেন্স। ইচ্ছে করে কেনো ধাক্কা মারবো। তুমি চোখে দেখতে পাও না। আমি তো হেঁটে যাচ্ছিলাম

“সায়রা নাক ফুলালো। সে চোখে দেখতে পায়না নাকি এই লোক আজ বুঝিয়ে ছাড়বে ”

_কিহ,আমি চোখে দেখতে পাই না। নাকি আপনি। শাষের মতো হেঁটে যাচ্ছেন। যেনো এসব কিছুর মালিক আপনি। আবার আমাকে বলে আমি ননসেন্স।

“তূর্য হা করে চেয়ে আছে। রুহানি গিয়েছিলো একটা ফাইল আনতে। মাএ ই এসেছে। তূর্যকে এভাবে দেকে দৌড়ে এসে বলোো”

_তূর্য তুই এভাবে বসে আছিস কেনো ? কি হয়েছে ? এই মেয়ে,,,,।

“রুহানিকে হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দিলো তূর্য শেষ একটা কাগজ সায়রার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো ”
_এই সবকিছুর মালিক আমি ই। বুঝতে তো অসুবিধা হওয়ার কথা না। তবে ননসেন্স হলে তো এমন ই হবে।

_আবার আপনি আমাকে ননসেন্স বললেন?

“তূর্য উঠে দাড়িয়ে সায়ার চোখের দিকে চেয়ে একেবারে শান্ত কন্ঠে বললো ”

_ননসেন্স।

“কথাটদ বলে আর দাঁড়ালো না সোজা হেঁটে চলে গেলো। সায়রা হা করে চেয়ে রইলো তূর্যর যাওয়ার দিকে। একে নাকি মানুষের পছন্দ হচ্ছে। কিউট লাগছে। চেহারা যেমন হনুমানের মতো। কথা ও তেমন নিমের মতো। শয়তান অসভ্য বলে গালি দিলো হাজার খানেক৷ এমন সময় নাফিস পড়লো সামনে। সায়রাকে এভাবে একা একা বিড়বিড় করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো”

_কি ব্যাপার৷ পাগল হয়ে গেছেন নাকি সায়রা আজমীর। একা একা কথা বলছেন ?

“সায়রা নাফিসের দিকে চেয়ে বিরক্ত মুখ নিয়ে বললো”

_আপনার ওই বস কি সবার মাথা কিনে নিয়েছি নাকি৷
আমাকে বলে আমি নাকি ননসেন্স। আপনি ই বলুন আমি কি ননসেন্স ?

“নাফিস হচকিয়ে গেলো হঠাৎ এমন কথা শুনে। না জামি এই মেয়ে আবার কি করেছে ”

_আপনি কি স্যারের সাথে,,,,,।

_রাখুন তো আপনার স্যার। আগে বলুন আমি কি ননসেন্স ?

_নাহ তো।

_তাহলে। ওই অসভ্য ইতর লোকটা কি নিজেকে রাজা বাদশাহ মনে করেন। আমার সাথে লাগতে এসেছে। হু।

“সায়রা চলে গেলো নাফিসকে পাশ কাটিয়ে। নাফিস কপাল চাপরালো। আবার কোন আপদ কপালে জুটলো। এমনিতেই তূর্যর মাথা গরম হয়ে থাকে। এই মেয়ের সাথে না জানি কোন প্যাচ লেগে যায়”

“মন মেজাজ দুটোই খারাপ সায়রার।টিউশনি পড়িয়ে একেবারে এসেছে। তার মধ্যে বাসের জন্য দাড়িয়ে থাকা,।বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। কাল থেকে আট ঘন্টা করে অফিস। এরপর টিউশন আবার নিজের পড়াশোনা। কিভাবে কি সামাল দেবে ভেবেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো সায়রার। মনে মনে ভাবলো আজ বেশি করে ঘুমিয়ে নেবে। তারপর কাল দেখা যাবে যা হবার হবে।
সায়রা মনে মনে খুশি৷ এবার যদি একটু সমস্যা দূর হয়। এর মধ্যে ই বাস,এলো। সায়রা উঠে ই একটা সিট পেলো। গিয়ে সেখানে বসে পড়লো। পাশে একজন মহিলা বসে। বাসে আজ তেমন মানুষ নেই । সায়রা জানালা দিয়ে বাইরে দেখতে লাগলো। হুট করেই কেউ একজন বলে উঠলো”

_সায়রা।

“সায়রা চমকে পাশে ফিরে তাকালো। সেই ছেলেটা,।আজ ও মুখে মাস্ক লাগানো৷ সায়রা ভয় পেয়েছে বুঝতে পেরে ছেলেটা আজ শব্দ করে হেসে ফেললো”

_এভাবে হাসছেন কেনো ?

_আপনি ভয় পাচ্ছেন৷ আমাকে দেখে ভয় কেন পান আপনি৷ আমি কি ভূত ?

“সায়রা ছেলেটার চোখের দিকে একটু চেয়ে রইলো। ছেলেটা হুট করেই মুখের মাস্কটা খুলে ফেললো। সায়রা চমকে গেলো হুট করে এমন হওয়াতে। তিন চারদিন ধরে দেখছে ছেলেটাকে। আজ সম্পূর্ণ মুখ দেখলো। ছেলেটা মুখে হাসি রেখেই বললো”

_কি হলো এভাবে চেয়ে আচেন কেনো ? এতো ভয় পাচ্ছেন তাই মুখটা দেখিয়ে দিলাম। তো আমি হচ্ছে অনিক এহসান। একজন সাইনটিস্ট।

_ওহ। সাইনটিস্ট। তাইতো বলি এমনভাবে থাকেন কেনো ?

“অনিক মুচকি হেসে বললো”

_আসলে রোজ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে রিসার্স করতে হয়। অনেককিছু থাকে এতে তাই। ফর সেইফটি।

“সায়রা মুচকি হাসলো শুধু। অনিক কথা বাড়াতে আবার বললো”

_আচ্ছা আপনি কি করছেন। শুধু টিউশনি?

_উহু। পড়াশোনা। সাথে একটা জব ও করছি।

_বাবহ্, অনেক কিছু করছেন দেখা যায়। তো কোথায় জব করছেন?

“সায়রা বলতে চায়লো না। তাই চুপ রইলো। একটু পরেই বাস থামকে সায়রা জলদি নেমে পড়লো। অনিক শুধু হাসলো সায়রার দিকে চেয়ে। এতো ভয় পায় মানুষ। বাস চলে যেতেই সায়রা হাঁটা ধরলো। একটু আগেই নেমে গেছে। সন্ধার সময় এখন৷ চারদিকে অন্ধকার ও নেমে এসেছে। সায়রা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো সাতটা তিন বাজে৷ রাস্তা পার হতে যাবে তখনি ট্রাফিকে লাল বাতি জ্বলে উঠলো। সায়রা রাস্তার ধারে দাড়িয়ে রইলো। একের পর একের গাড়ি এসে একটার পর একটা থামছে। পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে রাস্তা ফাঁকা হতেই সায়রা বাড়ির দিকে চলে যায়।
সায়রা জানলো না এই পাঁচ মিনিট এক জোড়া চোখ তার দিকে ছিলো। তাকে পরোখ করছে শুধু ”

চলবে,,,

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৫

“আজ থেকে সায়রার অফিস শুরু। সকাল সাতটার ঘুম থেকে উঠে আগে নিজের পড়া শেষ করে আটটায় গেলো রান্না ঘরে। এখনো কেউ উঠেনি ঘুম থেকে । সায়রা আগে চূ বসালো। দুধ শেষ হয়ে গেছে। তাই রং চা বানিয়ে এনে বিস্কুট দিয়ে খেয়ে নিয়ে রেডি হতে চলে গেলো। রেডি হয়ে বের হতেই কানে এলো দিশার গলা”

_আপা কোথায় তুই ?

“সায়রার রাগ হয় এই মেয়ের উপর। গুনে গুনে সায়রার থেকে চার বছরের ছোট। অথচ তুই বলে ডাকে। কোকিলা বেগম ও কিছু বলেন না এই নিয়ে। সায়রা গলায় ওরনা ঝুলিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। দিশার হাতে চায়ের কাপ। সায়রা বের হতেই কাপটা দেখিয়ে বললো”

_রং চা কেনো বানিয়েছিস ? জানিস তুই আমি রং চা না।

“সায়রা ইচ্ছে করলো কয়েকটা কথা বলতে৷ কিন্তু সেটা তার সাথে যায় না। সায়রার মা বলতো কুকুরের সাথে কখনো কুকুর হতে হয় না৷ সায়রা আস্তে করেই জবাব দিলো”

_দুধ শেষ। হাতে এখন টাকা ও নেই৷ টাকা হলে নিয়ে আসবো।

_মায়ের কাছে ও নেই নাকি।

_সেটা আমি কি করে জানবো। আমার দেরি হচ্ছে গেলাম আমি।

” সায়রা যেতে নিলেই দিশা কটাক্ষ্য করে বললো”

_এমন ভাব যেনো কোনো বিশ্ব উদ্ধার করে ফেলেছে। চাকরি তো হচ্ছে না একটা ও।

“সায়রা কিছু বললো না চলে গেলো ঘরের ভেতর। এতে সয্য ক্ষমতা কখনেই সায়রার ছিলো না। মা মারা যাওয়ার পর সে সব সয্য করে এসেছে। মেমে নিয়েছে নিয়তি। বাবার দুই নাম্বার বিয়ের বিষয়ে সায়রার মা ও জানতেন।কোকিকা বেগমের কাছেই বেশি থাকতেন তিনি। যেদিন সায়রার মা মারা গেলো তারপরের দিন ই দিশাকে নিয়ে এ বাড়িতে উঠলেন কোকিলা বেগম। সায়রা তখন দশম শ্রেণির ছাএী। দিশা ও খুব ছোটো। সায়রার বাবা সায়রাকে ডেকে নতুন মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সায়রা এই মহিলাকে চেনে। এই মহিলার জন্য বাবা মায়ের মধ্যে কতো অশান্তি হয়েছে৷ কতো কাদতে দেখেছে মাকে। সায়রা কিছুই ভুলেনি। আজও বাবার প্রপ্রতি সায়রার এক আকাশ সমান অভিযোগ।
সায়রা কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কিছু ফাইলপত্র নিয়ে বের হলো। গলায় একটা আইডি কার্ড। বসার ঘরে তখন কোকিকা বেগম আর দিশা চা খাচ্ছে। সায়রাকে এভাবে দেখে ভ্রু কুচকে এলো কোকিলা বেগমের ফোরন কেটে বলে বসলেন”

_এতো সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি ?

_চাকরি হয়েছে আমার। সেখানেই যাচ্ছি৷ ফিরতে দেড়ি হবে। আমার আসায় বসে থাকবেন না যেনো। রান্না করে বাবাকে সময় মতো খাবার দিবেন।

“কোকিলা বেগম কিছু বলার আগেই সায়রা বেরিয়ে গেলো। রাস্তায় এসে হাঁটতে লাগলো। কিছু পথ হেটেই গিয়ে রিকশায় উঠলো। এখন নয়টা একএিশ বাজে। হাতে সময় আছে।
অফিসে এসেই দেখলো বিশাক ঝামেলা লেগে গেছে। নতুন অনপক মানুষ যুক্ত হয়েছে। তাদের ডেস্ক কোথায় দেওয়া হবে তাই নিয়ে। অফিসের ম্যানেজার পরছপ মহা বিপদে। তবুও অনেক কষ্টে সমাধান হলো। সায়রা তৃতীয় সারিতে একটা ডেস্ক পেলো। কিন্তু সমস্যা হলো জেরিন কিছুটা দূরে । সায়রার এদিক ওদিক দুজনেই ছেলে কলিগ। সায়রা মনে মনে মহা খুশি। অবশেষে সে পেয়েছে একটা ভালো চাকরি। স্যালারি ও ভালো। সায়রা নতুন কম্পিউটার সহ যা যা আছে সব নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো। তখনি হুট করে ওর আসে পাশের সবাই দাড়িয়ে গেলো। সায়রা একটু অবাক হয়ে দাড়াতেই দেখলো তূর্য আসছে। সাথে কয়েকজন তাদের সাথে কথা বলতে বলতে। বরাবরের মতোই সাদা শার্ট এর উপর কালো সুট সাথে কালো পেন্ট। টাই টাও কালো। হাতে একটা রোলেক্সের ওয়াচ। চুলগুলো একেবারে সেট করা। যেনে নড়ছে ও না। হেটে এসে এক নজর সামনের দিকে তাকাতেই ঠিক সায়রার চোখে চোখ পড়লো। মুহুর্তে চোখ সরিয়ে নিয়ে কেবিনের ভেতরে চলে গেলো”
তূর্য যেতেই সকলে বসে পড়লো। আগে থেকেই সবার ডেস্ক এ কিছু ফাইল দেওয়া ছিলো সেগুলো সায়রা দেখতে লাগলো। কিছুই মাথায় ঢুকলো না । সায়রা এমন ভাবে চিন্তিত দেখে পাশের ডেস্ক এর আবির বললো”

_কি হয়েছে কোনো সমস্যা ?

_এগুলো কি ? কি করবো এসব দিয়ে।

“আবির ছেলেটা বুঝিয়ে দিলো সায়রাকে৷ কি করতে হবে। সায়রদ সে অনুযায়ী কাজ করতে লাগলো”

“তূর্য কতোগুলো ফাইল নিয়ে বসেছে আছে। সবগুলো নতুন ড্রেস এর ডিজাইন। মনোযোগ কাজের ভেতর। তখনই দরজায় আওয়াজ হলো। তূর্য ফাইলের দিকে চোখ রেখেই বললো”

_কাম ইন।

“রুহানি এলো। হাতে কফি মগ। এসেই তূর্যর চেয়ারের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে কফি মগটা টেবিলের উপর রাখলো। তূর্য তাকালো না। সে জানে কোনো কাজে রুহানি আসেনি। রুহানি নিজে থেকেই বললো”

_তোর জন্য নিজ হাতে কফি করে এনেছিন। খেয়ে বল কেমন হয়েছে।

“তূর্য শব্দ করে ফাইলটা বন্ধ করে তাকালো রুহানির দিকে। জিন্স সাথে শার্ট পরেছে। উপরের দুটো বোতাম খোলা। ঠোঁটে গাড়ো করে লাল রঙের লিপস্টিক দেওয়া। চুল গুলো ব্রাউন। তূর্য একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো। এরপর বললো”

_কাজ করতে এসেছি এখানে। তোর হাতের কফি টেস্ট করতে এসেছি ?

“রুহানির মুখের হাসি হাসি ভাবটা চলে গেলো। তূর্য সব সময় এমন করে কথা বলে”

_তোর সমস্যা কি বল তো তূর্য। কাজের জন্য এতো এতো মানুষ আছে। তোর ই কেন সব দিক দেখতে হয়। যে একটা কফি টেস্ট করতে পারবি না। তুই জানিস আমি নিজে হাতে কিছু করি না।তবুও তোর জন্য এটা বানিয়েছি।

“তূর্য শুনলো চুপচাপ। বিরক্ত লাগে তার এই মেয়েকে।
তবুও কফি মগটা তুলে একটা চুমুক দিলো ”

_অনেক মজা হয়েছে। এবার নিজের কাজে যা।

“রুহানির মুখে হাসি ফুটলো। তূর্য তার কথা শুনেছে। হাসি হাসি মুখে যেতে যেতে বললো”

_পুরোটা শেষ করবি কিন্তু। যাওয়ার সময় নিয়ে যাবি আমাকে দাদির সাথে দেখা করবো৷

“কথাটা বলে রুহানি বেরিয়ে গেলো। তূর্য চেয়ার থেলে উঠে দৌড়ে ওয়াসরুমে গেলো। এতো বাজে কফি সে তার বাপের জনমে খায়নি৷মুখটা নষ্ট হয়েছে। তূর্য বের হয়ে দেখলো নাফিস কেবিনে ঢুকেছে। তূর্যকে মুখ ওমন করে রাখতে দেখে বললো”

_কি হয়েছে স্যার কোনো সমস্যা ?

_নাহ, নাফিস তুমি সকাল থেকে কি কফি খেয়েছো?

_না স্যার। সময় হয়নি।

_ওহ,গ্রেড।

“কথাটা বলে টেবিলের উপর রাখা কফির মগটা নাফিসের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো”

_নাও এটা খাও। আমার জন্য আনিয়েছিলাম। খেতে ইচ্ছে করছে না।

_স্যার,,,।

_খাও নাফিস ।

“নাফিস কফি মগে চুমুক দিতেই নাক মুখ কুচকে ফেললো। কফি মগটা রেখেই দৌড়ে চলে গেলো ওয়াসরুমে। তূর্য হাসতে হাসতে চেয়ারে বসে পড়লো। সে একা কেন খাবে এই জঘন্য কফি৷ নাফিস ওয়াসরুম তেকে বের হয়ে তূর্যকে গম্ভীর হয়ে চেয়ারে বসে থাকতে দেখলো ”

_কি হলো ? কফি ভালো লাগেনি ?

_এই জঘন্য অখাদ্য কে বানিয়েছে। ওয়াক থু।

_রুহানি৷

“কথাটা বলেই তীব্র হেসে উঠলো। এমনিতে তূর্যকে খুব কম হাসতে দেখা যায়। হাসেই না বলতে গেলে। হাসছে তূর্য। নাফিসের দেখে ভারি ভাললাগলো৷ তার স্যার হাসি খুশি থাকুক এটা সে সব সময় চেয়ে এসেছে। ডকিন্তু এখন যে একটা নিউজ সে দিতে এসেছে। তাতে তূর্যর হাসি আর স্থায়ী হবে না। তূর্য হেসে এরপর আবার সুন্দর করে বসলো। নাফিস ও এসে সামনের চেয়ার টেনে বসলো”

_স্যার দাদি খবর পাঠিয়েছে ।

“তূর্য চমকে তাকালো নাফিসের দিকে ”

_দাদির আবার কি হলো। সব ঠিক আছে ?

_চিন্তা করবেন না স্যার দাদি ঠিক আছে৷ আসলে দাদি আপনাকে নাকি কিছু মেয়ের ছবি দিয়েছিলো। তাদের মধ্যে একজনের সাথে আজ আপনাকে দেখা করতে যেতে বলেছে।

_হুয়াট। দাদির মাথাটা একেবারে গেছে। কতোবার বলেছি আমি বিয়ে করবো না। কানেই নিচ্ছে না আমার কথা।

_কেনো বিয়ে করবেন না। আপনার সব আছে৷ তবুও কিসে বাঁধা ?

“তূর্য ল্যাবটপের দিকে চেয়েই বললো”

_অনেক কিছুতেই বাঁধা। দাদিকে বলো আমি কোথাও যাচ্ছি না।

_অলরেডি বলেছি৷ ওনি শুনেননি আমার কথা।

_এগুলো আমাকে দিয়ে হবে না। কাজের কোনো কথা থাকলে বলো ।

_নাহ এই ই। বাকি সব ঠিক আছে।

“সারাদিন কাজ করেছে সায়রা৷ অনেকটা ই বুঝতে পেরেছে কি করে কি করতে হয়। টিফিন টাইমে সমস্যা হয়েছিলো৷ এখানে টিফিন দেওয়া হয় না। খাবার হয়তো বাসা থেকে নিয়ে আসতে হয় নয়তো বাহিরে গিয়ে খেতে হয়। এমনি যা আছে তা অফিসের বসদের জন্য। তাই পুরো সময়টা পানি খেয়েই কাটালো। এটা ভিআইপি এড়িয়া। বাইরে খেতে গেলে ও টাকা লাগবে অনেক। রুটি কলা এখানে পাওয়া যায় না৷
পাঁচটা বাজতেই অফিস ছুটি হলো। সবাই সবার মতো চলে যাচ্ছে। জেরিন আর সায়রা এক সাথে নামলো নিচে৷ এসেই দেখলো তূর্য নাফিস আর রুহানি দাড়িয়ে।
তূর্য ফোনে কি যেনো করছে। ওর গা ঘেসে দাড়িয়ে রুহানি। জেরিন সায়রাকে দেখিয়ে বললো ”

_ওই মেয়েটাকে দেখেছো। কেমন যেনো। সব সময় দেখি স্যার এর গায়ে পড়ে। সাজটা কি দিয়ে আসে দেখছো।

“সায়রা একটু চেয়ে বললো ”

_হয়তো উনার কিছু হবে। না হলে কি কোনো মেয়ে এমন করে নাকি৷ আমাদের কি চলো আমার আবার টিউশনি আছে।

“তূর্য ওরা গাড়িতে এখনো উঠেনি। তিনজন ই দাড়িয়ে আছে। ওদের পাশদিয়ে যাওয়ার সময় নাফিস সায়রাকে হুট করেই ডাক দিলো”

_এই সায়রা খাতুন। কি খবর ?

“সায়রা দাঁড়িয়ে পড়লো সঙ্গে সঙ্গে ”

_আমার নাম সায়রা আজমীর। খাতুন বলবেন না একেবারে। তাহলে আমি ও বলবো কিন্তু।

“নাফিস দু কদম এগিয়ে এসে বললো ”

_কি বলবে শুনি শুনি।

_আবুল বলবো। আপনি একটা আবুল ।

“নাফিস কিছু বলতে যাবে রুহানি আগ বাড়িয়ে এসে সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_তুমি ওই মেয়েটা না। তূর্যকে ধাক্কা দিয়েছিলে।

“তূর্য ফোনে কথা বলছিলো একটএ সাইডে দাঁড়িয়ে। ফোনটা কানে থেকে নামাতেই কানে এলো”

_আমি দিয়েছি নাকি উনি আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। মিথ্যা বলছেন কেনো ?

“তূর্য তাকিয়ে দেখলো সায়রাকে। নীল রঙের ড্রেস পড়া। কাঁধে ব্যাগ । মুখ একেবারে নেচারাল। চোখে মুখে কেমন ক্লান্তি। তবুও অন্যরকম লাগছে দেখতে ”

_তুমি ওকে ধাক্কা দিয়েছো। আবার বলছো আমি মিথ্যা বলেছি। তূর্য তুই বল।

“তূর্য রুহানির দিকে চেয়ে আবার সায়রার দিকে তাকালো। সায়রা এমন ভাবে চেয়ে আছে। যেনো সে যদি হ্যূ বলে তাহলেই ওর মাথা ফাটিয়ে দিবে। সায়রা বললো”

_বলুন বলুন। কে কাকে ধাক্কা দিয়েছে। আবার আপনি আমাকে ননসেন্স ও বলেছেন। আমি তো কিছু ই বলিনি।

“নাফিস পেছন থেকে হুট করে বলে বসলো”

_কথা সত্য।

“তূর্য সহ সবাই নাফিসের দিকে তাকালো। বেচারির মুখটা ছোট হয়ে গেলো তূর্যর দিকে চেয়ে বললো”

_না, মানে, আসলে,,,,, ।

“তূর্য রুহানিকে সরিয়ে সায়রার,সামনে এসে দাড়ালো। মানুষটদ বেশ লম্বা। সায়রা তূর্যর বুক সমান। সায়রা তূর্যর দিকে চায়লো। তূর্য দুই পকেটে হাত রেখে একটু কাছে এসে দাড়াতেই একটা ঘ্রান এসে নাকে লাগলো সায়রার। ভীষণ সুন্দর ঘ্রান। তূর্য বললো”

_ঝগড়া করতে চাচ্ছো ?

_আমি কেন ঝগরা করতে চাইবো। আপনারা চাচ্ছেন।

_ধাক্কা আমি তোমাকে দিয়েছি হ্যা ?

“সায়রা নিজে এবার একটু এগিয়ে আসলো যাতে একটু পিছিয়ে যেতে হলো তূর্যকে। নাক ফুলিয়ে বললো”

_ধাক্কা আপনি দিয়েছেন। সরি না বলে আমাকে ননসেন্স বলেছেন। আবার বলছেন আমি ঝগরা করতে চাচ্ছি। এতো বড় কম্পানির মালিক পায়ে পারা দিয়ে ঝগরা করছেন কথায় জেতার জন্য। হু।

_এই মেয়ে কি বললে তুমি৷ কার সামনে দাড়িয়ে কথা বলছো জানো ? অসভ্য মেয়ে। (হুট করেই বললো রুহানি)

_রুহানি। গাড়িতে গিয়ে বস।

_তূর্য ,, ।

_যেতে বলেছি আমি তোকে।

“রুহানি গাড়িতে উঠে বসলো। তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে বললো ”

_বাড়িতে গিয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ো আর এক গ্লাস মাথায় ও ঢেলো। মাথা ঠান্ডা হবে সাথে গলা ও ভিজবে। ঝগড়া করতে করতে গলা শুখিয়ে গেছে নিশ্চয়ই। নাফিস চলো দেড়ি হচ্ছে ।

“তূর্য যেতে নিলে ই সায়রা পেছন থেকে বলে উঠলো ”

_আপনি ও এক গ্লাস পানি খাবেন স্যার। আর দু গ্লাস মাথায় ঢালবেন৷

“সায়রা জেরিনকে নিয়ে হেটে গেট দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। তূর্য সায়রার যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলো। কেউ তার মুখের উপরে কথা বলে না। এই মেয়ে রীতিমতো ঝগড়া করে চলে যাচ্ছে। তার তূর্য ও সাথে তাল মেলাচ্ছে। তূর্য গাড়িতে উঠতে উঠতে বললো,” সায়রা আজমীর। নামটা মনে থাকবে আমার”

“রুহানি সামর্থ্য বেগমের সাথে আসার ঘরে বসে কথা বলছে। নাফিস ও সাথে আছে। মোট কথা সামর্থ্য বেগমকে একটু সঙ্গ দেওয়া। তূর্য উপরে চলে গেছে। সার্ভেনট এসে কিছু নরমাল খাবার দিয়ে গেছে৷ সামর্থ্য বেগম বলেছে রাতে খেয়ে যেতে। একটু পরেই তূর্য সিড়ি দিয়ে নেমে এলো। একেবারে নরমাল লুক। রুহানি পারে না চোখ দিয়ে গিলে খায়। তূর্য এসে ই সামর্থ্য বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো”

_কি বুড়ি সব ঠিকঠাক তো ?

_তুই কথা বলবি না আমার সাথে। তুই জীবনে এসে বসিস আমার পাশে।

_দাদি স্যারকে গাছে একটা ঘর বানিয়ে দেই৷ স্যার গাছেই ঠিক থাকবে।

“নাফিস এর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো। তূর্য একজনকে ডেকে চা কফি দিতে বলতেই রুহানি বললো”

_আমি বানাই কফি। দাদি ও টেস্ট করে দেখবে।

“রুহানির কথা শুনে নাফিস আর তূর্য এক সাথে বলে উঠলো”

_নাহ।

“রুহানি চেয়ে আছে দেখে। তূর্য একটু শান্ত কন্ঠে বললো”

_তোকে বানাতে হবে না। আমি বানাচ্ছি। আর দাদি চা কফি খায় না ভুলে গেলি৷বোস।

“তূর্য তাড়াহুড়ো করে উঠে কিচেনের দিকে চলে গেলো।
রুহানি গাল ফুলিয়ে বসলো৷ নাফিস তাকাচ্ছে ই না।
কফি বানিয়ে আনার পর সবাই এক সাথে বসলে সামর্থ্য বেগম বলে উঠলো”

_তোর মেয়ে কেমন লাগলো বললি না তো তূর্য ?

_দাদি।

_তুই কি জাসনি মেয়ের সাথে দেখা করতে ?

“নাফিস কফি খাচ্ছিলো আড়াম করে। এবার ওর নাকে মুখে কফি উঠে যাওয়ার জোগার। এখন এই দাদি নাতিনের মাঝে ফাসবে সে। রুহানি তো আছেই। তূর্য আস্তে করে বললো”

_এই ব্যাপারে আমরা পড়ে কথা বলি দাদি ।

_নাহ এখনি৷ এই রুহানি তুমি ই বলো৷ ওর কি বিয়ের বয়স হয়নি৷ ও বিয়ে করতে চায় না কেনো ? তুমি ওকে কিছু বলতে পারো না৷

_দাদি আপনি তূর্যর জন্য মেয়ে দেখছেন ?

_আমি ই দেখছি। ও তো আর দেখে না ।

_দেখবে দাদি দেখবে। স্যার কি যেনতেন মেয়ে বিয়ে করবে নাকি। কোটিতে একটা হবে তূর্য স্যারের বউ। ( মাঝখান থেকে বলে উঠলো নাফিস )

“এ বিষয়ে আর কথা বাড়ালেন না সামর্থ্য বেগম। রাতে খেয়ে নাফিস আর রুহানি চলে গেলো। সামর্থ্য বেগম বসার ঘরে বসে। তূর্য নিজের রুমে যাবে তখনই সামর্থ্য বেগম বললো”

_তুই কি বিয়ে করবি না। বল আমাকে। তাহলে আর চেষ্টা করবো না। কাউকে পছন্দ হলে বিয়ে কর। সমস্যা কি তোর ? রুহানিকে,,,,

“কথা শেষ করার আগেই তূর্য ঘুরে তাকিয়ে বললো ”

_তুমি জানো আমার সমস্যা কি দাদি। তারপর ও বলছি এসব আমাকে দিয়ে হবে না।

_আর যদি কখনো হয়।

_হলে সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত। আমার মন তাতে সায় দেবে না দাদি।

_দেখবি একদিন তোর জীবনে এমন কেউ আসবে যে তোকে সব ভুলিয়ে দেবে৷তোর জীবনে হটাৎ কারো আগমন ঘটবে। আর জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে। মনে রাখিস এই সামর্থ্য বেগমের কথা ফলবে।

“তূর্য চলে গেলো নিজের ঘরে। সে এসবে বিশ্বাসী নয়৷
জীবনে কারো আগম ঘটলেই জীবন সুন্দর হয় না। মাঝে মাঝে তা হয় জীবনের ধংসের কারন। মানুষের সুন্দর জীবনের একটা কালো অধ্যায় হয়ে থেকে যায় ”

চলবে,,