ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-৪৫

0
4

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#৪৫

“সায়রা তূর্যর গলা জড়িয়ে ধরলো। তূর্যর চোখে চোখ রেখে আস্তে করে বললো ”

_বাচ্চার বাপ হয়ে যাচ্ছেন। একটু তো বুঝুন।

“তূর্য সায়রার গাল চেপে ধরলো। ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো ”

_কি বুঝবো হু। বাচ্চার বাপ হচ্ছি। আমার যৌবনে ভাটা পড়ে নাই। আর না কখনো পড়বে। নিজেকে ফিট রাখি কিসের জন্য ।

“সায়রা চেয়ে রইলো। তূর্য ফের বললো ”

_যতোদিন তুমি সইতে পারবে ততোদিন তো চলবেই। যেদিন সইতে না পারবে ওইদিন ও চলবে।

“সায়রা কিছু সময় তূর্যর মুখের দিকে চেয়ে থেকে হুট করে তূর্যর ঠোঁটে চুমু খেলো। তূর্য এই সুযোগ হাত,ছাড়া করবে কি করে। ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো সায়রার। সঙ্গে মিশিয়ে নিলো নিজের সঙ্গে। তূর্য অনেক সময় নিয়ে সায়রার ঠোঁটে নিজের রাজত্ব চালালো। পরপর মুখ তুলে বললো ”

_ভালোবাসি বউ। ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।

“সায়রা তূর্যর গালে চুমু খেয়ে তূর্যর চোখে চোখ রেখে বললো ”

_আমি ও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি।

“রাত তিনটা ছুইছুই। এক বন্ধ কক্ষে নাফিসের বুকের উপড় শুয়ে আছে জেরিন৷ শরীর তার ব্যথায় জর্জরিত৷ শুয়ে থাকলে ও জেরিনের চোখে ঘুম নেই। নাফিস মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তবুও যেনো ঘুম আসছে না। নাফিস বললো ”

_এবার একটু ঘুমাও জান। চোখ জ্বালা করবে তো।

“জেরিন এবার নাফিসের দিকে তাকালো একটু মাথা তুলে। চোখ দিয়ে বোধহয় ভস্ম করে দেবে নাফিসকে
বললো ”

_শরীর যে জ্বালা করছে। ওটার কি হবে। আপনি এমন রাক্ষস কেন ?

_চুপ মুসিবতের বেটি৷ শুকরিয়া করো অল্পতে ছেড়ে দিছি।

_আমি থাকবো না তো আপনার সাথে। মানুষ এর সাথে থাকা যায় রাক্ষস এর সাথে না।

_তোমার সব শেষ। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এবার আর চাইলে ও যেতে পারবা না।

“জেরিন গাল ফুলালো। নাফিস হেসে বললো ”

_থাক কেঁদো না জান। তোমাকে চকলেট কিনে দেবো।

“জোরিন এবার কয়েকটা কিল ঘুষি বসিয়ে দিলো নাফিসের বুকে। নাফিস বাঁধা দিলো না। কষ্ট তো হয়েছে ই। এখন কিছু পেতে হলে কিছু তো দিতেই হবে ”

_এখনো ঠাট্টা । ভালো হবেন না আর আপনি।

_যেদিন বাপ হবো সেদিন থেকে পাক্কা বলছি। ভালো হয়ে যাবো।

_বাপ হওয়ার এতো ইচ্ছে আপনার ?

_খুব ইচ্ছে।

“জেরিন কিছু বললো না। নাফিসের বুকে চুপ করে শুয়ে রইলো। নাফিস হুট করেই জেরিনকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। জেরিন চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করো ফেললো। পেটের মধ্যে হাত দিয়ে। নাফিস তাকালো জেরিনের দিকে। নাফিসের শার্ট পড়নে জেরিন। নাফিস সঙ্গে সঙ্গে জেরিনের দিকে ঝুকে গালে হাত রেখে বললো ”

_ব্যথা পেলে ? সরি জান।

_নাহ্ পাইনি।

“নাফিস চেয়ে রইলো। জেরিন এবার উঠে আধশোয়া হয়ে বসলো। পুরো শরীরে চাদর জড়িয়ে।
নাফিস উঠে গেলো। ওর মানিব্যাগটা খুজছে। জেরিন চেয়ে রইলো। নাফিসের পড়নে শুধু পেন্ট। বডি দেখা যাচ্ছে। পাতলা গড়নের দেহো। এতোটা ও নয়৷ হালকা পাতলা বডি। জেরিন চেয়ে থাকতে থাকতে ই নাফিস এলো। বিছানার উপড়ে উঠে বসলো। জেরিন চেয়ে রইলো। নাফিস জেরিনের পায়ের কাছে থেকে চাদর সরাতে নিলেই জেরিন লাফিয়ে উঠে বলতে লাগলো ”

_এই আমার কাছে এখন এলে মেরে ফেলবো আপনাকে।

“নাফিস ভ্রু কুঁচকে বললো ”

_আরেহ্ মুসিবতের বেটি রে। একবার নিয়েই নড়তে পারো না। আমি আবার যাই তোমার কাছে। পাগলে ধরেছে আমাকে। দেখি পা দাও।

“নাফিস নিজেই জেরিনের পা থেকে চাদর সরালো। ফর্সা পা। নাফিস চেয়ে রইলো। পরপর হাতের মুঠোয় থাকা পায়েল বের করলো। জেরিন দেখলো। সুন্দর একটা সোনার পায়েল। নাফিস সেটা পায়ে পড়ানোর আগে বললো ”

_মে আই।

“জেরিন শুধু হে সূচক মাথা নাড়ালো। নাফিস পায়েলটা জেরিনের পায়ে পড়িয়ে দিলো। ফর্সা পায়ে সোনালি রঙের পায়েল বেশ মানিয়েছে৷ নাফিস কিছু সময় চেয়ে থেকে বললো ”

_জীবনে চেয়েছিলাম আবার বউয়ের পা যেনো সুন্দর হয় মওলা। ময়দা সুন্দরী দিও না কপালে। এখন তো মনে হচ্ছে চাওয়ার থেকে বেশি পেয়েছি৷

“জেরিন চেয়ে রইলো৷ কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ নাফিস এগিয়ে এলো৷ জেরিনের কাছে এসে বললো ”

_দেনমোহর না দিয়ে ই ছুয়েছি। তবে দেনমোহর আছে কিন্তু। এক টাকা ও বাকি রাখবো না। ঢাকায় গিয়ে দিয়ে দিবো।

“জেরিন এবার লজ্জা পাচ্ছে। লোকটা তো ভীষণ রোমান্টিক। ইশ কেমন করে তাকায়। জেরিন মুখ ঘুরিয়ে নিলো। নাফিস এবার আচমকা জেরিনকে কোলে তুলে নিলো। জেরিন চেচিয়ে বললো ”

_এই আপনি কি করছেন। নাফিস। নামান আমাকে।

_চুপ থাকো। এভাবে থাকা যাচ্ছে না। সাওয়ার নিবো সুইটি।

“জেরিন চোখ বড় বড় করে বললো ”

_এই নাহ্। নামান আমাকে।

“নাফিস শুনলো ও না জেরিনের কথা। নিয়ে গেলো ওয়াসরুমে। জেরিন বুঝলো আজ থেলে আর তার কথা চলবে না বোধহয় আর ”

“সকাল নয়টায় ওদের বের হওয়ার কথা৷ নাস্তা করবে এরপর গাড়ি নিয়ে মেরিন ড্রাইভ ঘরবে৷ কিন্তু নাফিস ভাবছে তার মুসিবতের বেটি যেতে পারবে কিনা৷ কিন্তু না জেরওন সাওয়ার নেওয়ার পর দিব্বি চলছে৷
নয়টার দিকে ই তূর্য কল করলো। নাফিস আর জেরিন তখন বের হলো। রাস্তায় রোদ বেশি৷ কিন্তু গাড়ি থাকায় সমস্যা হবে না৷
আজ ও জেরিন আর সায়রা পেছনে বসলো। নাফিস আর তূর্য সামনে। গাড়ি চলছে। আগে নাস্তা করবে এরপর যাবে।
নাস্তা করতে একটা হোটেলের সামনে গাড়ি থামালো।
তূর্য আর নাফিস আগে এগিয়ে গেলো। জেরিন আর সায়রা পেছন পেছন যাচ্ছে। সায়রা বললো ”

_কাল রাতে কি হয়েছে রে ?

_তুই বিবাহিত মহিলা হয়ে এ কথা জিজ্ঞেস করিস আবার।

“সায়রা হেসে ফেললো৷ পরপর বললো ”

_কি দিয়েছে নাফিস ভাই তোকে ?

“জেরিন থেমে গেলো৷ পায়ের দিকে ইশারা করলো। সায়রা দেখলো সোনার পায়েল। সায়রা বললো ”

_এই নাফিস ভাইয়ের চয়েজ আছে বলতে হবে৷

“এই বলে ওরা গল্প করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে। ওদের এভাবে দেখে তূর্য আর নাফিস চেয়ে আছে। তূর্য বললো ”

_ওইভাবে ওরা কি দেখালো ?

_মেয়ে মানুষের কাজবাজ আমি বুঝি না স্যার। মাথায় ঢোকে না।

“তূর্য হাসলো। আসলেই। মেয়ে মানুষের কাজকর্ম বোঝা মুশকিল। পুরো দুনিয়া একদিকে ওরা আরেকদিকে। নিজের মতো৷
জেরিন সায়রা এলে খাবার অডার দেওয়া হলো। জেরিন আর নাফিস এক সাইডে৷ তূর্য আর সায়রা টেবিলের আরেক সাইডে। তূর্য সায়রার ঘারের পেছন দিয়ে হাত রেখেছে। একটু কাছে গিয়ে বসলো৷ জেরিন তূর্যর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো ”

_কাল মনে ওদের বাসর হয়েছে জানেন।

“তূর্য চোখ বড় বড় করে ফিসফিস করে বললো ”

_তুমি তো আমার সাথে ছিলে বউ। তুমি কি করে জানলে ?

_আরেহ্ নাফিস ভাইয়া জেরিনকে একটা পায়েল দিয়েছে। তাই।

_উপহার দিলেই বাসর হয় ?

“সায়রা এবার কুনোয় দিয়ে গুতো দিলে তূর্যর পেটে। বললো ”

_হয়।

_তাহলে আমি রোজ উপহার এনে দিবো বউ তোমাকে।

“জেরিন সরিয়ে দিলো তূর্যকে৷ অসভ্য লোককে কি বলতে গেছে সায়রা।
নাস্তা শেষ করে ওরা গেলো মেরিন ড্রাইভ রাস্তায়। সেখানে সমুদ্র আর পাহার এক সঙ্গে দেখা যায়। ওখাবে এসে পৌঁছে দেখলো হুহু করে বাতাস বইছে৷ নাফিস আর জেরিন এগিয়ে গেলো সামনের দিকে। তূর্য আর সায়রার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইলো। সায়রার ঘারে হাত রেখে। হুট করেই তূর্য সোজা হয়ে দাড়ালো সায়রার সামনে এসে। সায়রার পেটে হাত রাখলো। বললো ”

_এতো দেড়িতে বড় হচ্ছো কেন প্রিন্সেস। জলদি চলে এসে। পাপা মিসিং ইউ বেবি।

_শুধু পাপা ই মিস করছে না সোনা। মাম্মাম ও তোমায় মিস করছে।

“তূর্য আর সায়রা নিজেদের মতো কথা বলছে। ওদের কতার মধ্যে এখন হট টপিক ই বেবি। আর রাত হলেই তূর্যর একটা ই টপিক আদর।
জেরিন আর নাফিস ওদের দেখে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো৷ নাফিস আকাশের দিকে চেয়ে বলে উঠলো ”

_হে খোদা প্রথম ম্যাচেই যেনো ছক্কা হাকাতে পারি। একটা বাবু দিয়ে দাও আমার বউয়ের ছোট্ট পেটে।

“জেরিন হতবাক হয়ে চেয়ে আছে। বেবি হবে কিনা জেরিন জানেনা। তবুও সে মনে মনে চাইলো পরের মাসেই যেনো একটা খুশির খবর নাফিসকে দিতে পারে। দুনিয়া ভুলে যাবে জেরিন নাফিসকে খুশি করতে৷
এবার হুট নাফিস জেরিনের দিকে চেয়ে বললো ”

_আচ্ছা একবার বাসর করলে কি বেবি হতে পারে ?

“জেরিন অবাক হয়ে বললো ”

_এটা কি বলছেন ?

_হতে পারে নাকি না । না হলে ও সমস্যা নাই। এমনিই এখন থেকে তোমার ছাড় নাই।

_শুনুন। আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব।

“নাফিস শক্ত করে জেরিনের হাতটা চেপে ধরলো।
তূর্য আর সায়রা ও এগিয়ে এলো। সামনে উওাল সমুদ্র। সেখানে চারজন পাশাপাশি দাড়িয়ে। সায়রা তূর্যর হাতের বাহু চেপে ধরে সমুদ্র দেখতে লাগলো। সব ই ঠিক ছিলো। শুধু সামর্থ্য বেগম আর ওদের বেবিটা আজ এখানে থাকলে। বেবি তো আছে৷ কিন্তু সে তো তার মায়ের পেটে ”

_____________

“সময় চলে গেছে চার মাস মাঝে। ওরা সেবার সাতদিন কক্সবাজার থেকে এরপর বাড়ি ফিরেছে। একসঙ্গে ই এখন থাকছে ওরা সকলে বৃষ্টি বিলাশ বাড়িটাতে। তূর্য আর নাফিস নিয়ম করে অফিস করছে। সায়রার প্রেগন্যান্সির ছয় মাস শেষের দিকে। পেট বড় হয়েছে। সায়রা গুলুমুলু হয়ে গেছে অনেকটা। হাত পা ফুলেছে। তূর্য অফিসে যতক্ষন থাকে একটু পরপর ই কল করে। বাসায় থাকলে তো কোনো কথা ই নেই। পারে না কোলে নিয়ে ঘুরতে। মাসে মাসে চেকআপে তূর্য নিজে নিয়ে যায়।
কিন্তু জেরিনের এখনো কনসিভ হয়নি। এ নিয়ে জেরিনের মন খারাপ হয়। নাফিস বুঝায়। মাএ তো বিয়ের চার মাস। অনেক সময়,পড়ে আছে ওদের হাতে। তবুও জেরিন হতাশ হয়ে পড়ে। নিজের জন্য নয়। নাফিসের জন্য। লোকটা কি চেয়েছে। একটা বেবি ই তো।
কক্সবাজার থেকে আসার পর জেরিনের বাবা খবর পেয়ে তিনি হামতাম করে মেয়ের মুখ দেখবেন না বলেছেন। তাতে অবশ্য নাফিস মাথা ঘামায় না। তার বউ হলেই হলো।
এই যে আজ ও তূর্য আর নাফিস বাইক নিয়ে এক সঙ্গে অফিস থেকে বের হয়েছে৷ মাঝপথে থেকে দুজনেই বউয়ের পছন্দের ফুল কিনে নিয়েছে। এটা তূর্য করতো আগে। এখন নাফিস ও করে। পড়ে বউ তার রেগে যাবে।
বাড়ি এসে তূর্য সোজা উপড়ে চলে গেলো। নাফিস নিজের ঘরে। জেরিন তখন কাপড় গুছিয়ে রাখছিলো নাফিসের। নাফিস ধিরে ধিরে হেটে গিয়ে পেছন থেকে জেরিনকে জড়িয়ে ধরলো। জেরিন চমকে গেলো। নাফিস পেছন থেকে শক্ত জড়িয়ে ধরে জেরিনের ঘারে মুখ রেখে বললো ”

_ভয় পেয়েছো জান ?

_তো ভয় পাবো না। এভাবে কেউ আসে।

“নাফিস কিছু না বলে জেরিনের জন্য আনা ফুলের তোরাটা এগিয়ে দিলো জেরিনের দিকে। জেরিন সেটা দেখে খুশি হয়ে গেলো। নাফিসের দিকে ফিরে নাফিসের গলা জড়িয়ে ধরে দাড়ালো । নাফিস বেচারা লোভী মানুষ। বউয়ের ঠোঁটের দিকে তাকালেই তার লোভ লাগে। তাই নিজের ঠোঁট জেরিনের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিতেই জেরিন হাত দিয়ে বাঁধা দিলো ”

_ইশ এসেই শুরু হয়ে যায়। যান সাওয়ার নিয়ে আসুন৷

_সাওয়ার নিয়ে আসার পর কি তাহলে চুমু খেতে দিবা।

_নাহ্। ভাত খেতে দিবো। সায়রার শরীর ভালো নেই। ও তো নিচে আসতে পারবে না৷ আমি গিয়ে তূর্য ভাইয়ার খাবারটা গুছিয়ে দিয়ে আসি।

“নাফিস ভ্রু কুঁচকে বললো ”

_সায়রা খাতুনের কি হয়েছে আবার ?

_নতুন কিছু না৷ ওর তো শরীর ভার হয়ে যাচ্ছে। একটু কমপ্লিকেশন আছে।

_আর যাই হোক আল্লাহ যেনো আমার বোনটাকে আর ওর বাচ্চাটাকে সুস্থ রাখে।

_ইনশাআল্লাহ রাখবে। এবার যান।

“নাফিস সাওয়ার নিতে চলে গেলো। জেরিনের ও শরীরটা ভালো নেই। কিন্তু তা আর বললো না। সকালে একবার বমি হয়েছে। এদিকে সায়রার ও শরীর খারাপ। তবুও সায়রা জেরিনের সঙ্গ দিতে নিচে আসে। তূর্য আরো দুজন মানুষ রেখেছে যাতে জেরিনের উপর সব চাপ না পড়ে ”

“তূর্য রুমে ঢুকলো। দেখলো সায়রা বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। তূর্য বাইকের চাবিটা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে বিছানায় বসলো। সায়রা ঘুমে। তূর্য চেয়ে রইলো। মেয়েটা অনেক কষ্ট করছে। মা যে এতো সহজ নয়। রাতে ঘুমাতে পারে না। হুটহাট কান্না করে। মন নাকি খারাপ হয়৷ তূর্য ও তখন জেগে থাকে। পেট বড় হয়েছে অনেকটা। ডক্টর বলেছে বেবির গ্রোথ ভালো তবে সায়রার শরীরে রক্ত কম। পানও এসেছে শরীরে। তূর্য চোখে চোখে রাখে। না মা আছে না শ্বাশুড়ি। এইটুকু মেয়ে একা। প্রথম প্রেগন্যান্সি। তূর্য যতোটা পারে সঙ্গ দেয়। সায়রা বলার আগেই চেষ্টা করে ওর পছন্দের সব হাজির করার।
তূর্য সায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। সায়রার জন্য আনা ফুলের তোরাটা রাখলো পাশে। এরপর উঠে গিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
সাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখলো সায়রা উঠে গেছে। হাতে তূর্যর আনা ফুলগুলো। তূর্যকে দেখেই সায়রা হাসলো। তূর্যর পরান জুড়ায় এই হাসিতে। তূর্য এগিয়ে গিয়ে গেলো। সায়রার পাশে বসতেই সায়রা তূর্যকে জড়িয়ে ধরলো। বললো ”

_কখন এসেছেন ? ডাকেননি কেনো ?

_তুমি আড়াম করে ঘুমাচ্ছিলে তাই ডাকিনি।

_ভালোবাসি তূর্য ।

“তূর্য মুচকি হাসলো। সায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো ”

_আমিও ভালোবাসি।

“পরপর সায়রার উঁচু পেটে হাত রেখে বললো ”

_আমার প্রিন্সেসকে ও ভালোবাসি।

“সায়রা তূর্যর হাতের উপরে হাত রাখলো বললো ”

_আপনার প্রিন্সেস আমার পেটে ফুটবল খেলে। যখন ওর অস্তিত্ব জানান দিতে চায়।

“তূর্য এবার সায়রার পেটের কাছে গিয়ে বললো ”

_মাই লিটল প্রিন্সেস। পাপার ডাক শুনতে পাচ্ছো বেবি৷ একটু নড়। পাপা দেখতে চায়।

“কথাটা বলেই তূর্য দুই হাত সায়রার পেটের সাইডে রাখলো। ঠিক সেই মুহুর্তে সায়রার পেট নড়ে উঠলো। তূর্য তা অনুভব করতে পারলো। বেশ কয়েকদিন সে শুনেছে সায়রার কাছে কিন্তু এটা দেখেনি৷ তূর্যর প্রানভূমরা যে সায়রার গর্ভে। তূর্য সঙ্গে সঙ্গে সায়রার পেটে চুমু খেলো। বললো ”

_পাপা ওয়েটিং ফর ইউ বেবি৷ পাপা লাভ ইউ। জলদি চলে আসো। তোমাকে দেখার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে যে৷

“ওদের কথার মাঝেই দরজায় শব্দ হলো বাইরে থেকে চুমকি বললো ”

_ভাইজান ছোট ভাবী খাওয়ন পাঠায়ছে।

“তূর্য উঠে যাবে সায়রা বলে উঠলো ”

_প্লিজ নিচে যাবো। সবার সঙ্গে খাবো। একা খেতে ভালোলাগে না।

_কষ্ট হবে বউ।

_নাহ্। যাবো প্লিজ।

“তূর্য চুমকিকে খাবার নিচে ই নিয়ে যেতে বললো। এরপর সায়রাকো নিয়ে নিচে গেলো। তখন সামর্থ্য বেগম নাফিস খেতে বসেছে। জেরিন খাবার বেড়ে দিচ্ছে। সায়রা এসেছে দেখেই নাফিস বলে উঠলো ”

_আরেহ্ আমার বোন চলে আসছে।

“সায়রা গিয়ে বসলো। তূর্য ও পাশে বসলো। জেরিন সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজেও খেতে বসলো।
যদি খেতে ইচ্ছে করছিলো না। সায়রা কিছু খেলো না তেমন। তবুও খাবার টেবিলে পরিবার এর সবাই একসাথে বসলে পরিবেশ টা ই অন্যরকম হয় ”

“খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরো কিছু সময় ওরা গল্প করলো এক সঙ্গে বসে। এর মাঝে নাফিস বললো ”

_রুহানির খবর পেলাম আজ।

“এ কথা শোনা মাএ ই সায়রা বোধহয় একটু সিটিয়ে গেলো। তূর্য সায়রার হাতের উপর হাত রাখলো। নাফিস বিষয়টা বুঝতে পেরে আর কিছু বললো না। চুপ রইলো।
এরপর তূর্য সায়রাকে নিয়ে উপরে চলে গেলো। নাফিস ও রুমে চলে গেলো। জেরিন রইলো সব কিছু গোছগাছ করে এরপর রুমে গেলো। দেখলো নাফিস বসে বসে ভিডিও গেমস খেলছে। সব ছেড়ে দিলেও এটা ছাড়েনি। জেরিন গিয়ে হুট করেই হাতের রিমোটটা কেড়ে নিলো। নাফিস বললো ”

_আরেহ্ ইয়ার এটা তো খেলতে দাও। এখনি জিতে যেতাম।

“জেরিন কোমড়ে হাত রেখে রাগী চোখে চেয়ে বললো ”

_সারাদিন অফিসে থেকেছেন। এখন আবার এসে এসব শুরু করেছেন।

“নাফিস উঠে দাড়ালো। জেরিনের হাত থেকে রিমোটটা নিয়ে বিছানার উপর ছুড়ে ফেলে জেরিনের কোমর জরিয়ে ধরে জেরিনের দিকে দুষ্টু চোখে চেয়ে রইলো। জেরিন বললো ”

_এই, এই কি হচ্ছে এসব। সরুন। একদম এসব চলবে না।

_হয়তো গেম খেলতে দাও। নাহলে তোমাকে দাও।

“জেরিন ভ্রু কুচকে বললো ”

_এটা কেমন কথা হু।

_ইয়েস জানেমান। হয়তো গেম নাহলে তুমি। মনটা তোমার দিকে ই টানছে বেশি।

“জেরিন নাফিসের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ও পাড়লো না। নাফিস ছাড়লো না। কোলে তুলে নিলো জেরিনকে। এগুলো বিছানার দিকে ”

“ভোর ছয়টা বাজে। জেরিন উঠেছে একটু আগে। উঠে সাওয়ার নিয়ে ফজরের নামাজ পড়ে নিলো। রোজ একটা বাচ্চার জন্য জেরিন কান্নাকাটি করে রবের দরবারে। কিন্তু আজ নামাজ পরার পর পর জেরিন তারিখ দেখলো। এখনো ঋতুস্রাব হয়নি এ মাসে। অতচ ডেট আটদিন অভার৷ জেরিন আগের মাসে ও টেস্ট করেছে দেরি হওয়ার কারনে। তবে রেজাল্ট নেগেটিভ। নাফিসকে বলেনি। নাফিস এসব রোজ রোজ জিজ্ঞেস করে না জেরিনকে। নাফিসের এক কথা। আল্লাহ যেদিন চাইবে সেদিন ই নাফিস বাপ হওয়ার সংবাদ পাবে।
জেরিন একবার বিছানার দিকে তাকালো। নাফিস উপুর হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। জেরিন উঠে একটা কিট নিলো। নাফিস অনেকগুলো এনে দিয়েছে। একটা কিট নিয়ে ওয়াসরুমে গেলো।
জেরিন বের হলো একটু পড়ে। হাতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট। সেটার দিকে চেয়ে রয়েছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কিটের মধ্যে দুটো লাল রঙের দাগ। রেজাল্ট পজেটিভ। জেরিন আগে রবের কাছে শুকরিয়া করলো। এরপর বিছানায় গিয়ে বসলো। চোখে এখনো পানি। ফুপিয়ে কাঁদছে। নাফিসকে ডাকতে ও হয়নি নাফিস কান্নার শব্দ পেয়ে লাফিয়ে উঠলো। জেরিনকে কাঁদতে দেখে নাফিসের যেনো আত্মা উড়ে গেছে। জেরিনের দিকে চেয়ে বললো ”

_জান কাঁদছো কেন তুমি ? কি হয়েছে বলো আমায় ? শরীর খারাপ করেছে ? পেটে ব্যথা করছে ?

“জেরিন কিছু না বলে শুধু প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিটটা এগিয়ে দিলো নাফিসের দিকে। নাফিস ওটার দিকে চেয়ে হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো৷ এটা সত্যি। সে বাপ হবে। হে দুটো দাগ ই তো দেখা যাচ্ছে। নাফিস কিটটা হাতে নিয়ে একবার দেখলো৷ পরপর জেরিনের গালে দু হাত রেখে বললো ”

_এটা সত্যি ই জান। বাপ হচ্ছি আমি ? বলো বলো। জেরিন রে বল না। ইশ, বাপ হবো আমি।

“কথাটা বলেই নাফিস জেরিনকে জড়িয়ে ধরলো। সঙ্গে চেচিয়ে উঠলো। নাফিসের এই চেচানোর আওয়াজে তূর্য আর সায়রা বের হচ্ছিলো হাঁটতে। ডক্টর হাঁটতে বলেছে। তখনই নাফিসের রুম থেকে চেচামেচির আওয়াজ পেয়ে তূর্য ভয় পেয়ে দৌড়ে গেলো। দরজার সামনে এসে তূর্য বললো ”

_নাফিস কি হয়েছে ?

“নাফিস বোধহয় খুশিতে পাগল ই হয়ে গেছে। জেরিনকে ছেড়ে দৌড়ে এসে দরজা খুলেই তূর্যকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো”

_স্যার আমি বাপ হচ্ছি। বাপ হচ্ছি আমি।

“তূর্য ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। নাফিসের কথা শুনে নিজেই খুশিতে নাফিসকে জড়িয়ে ধরে রইলো। এদিকে সায়রা তো মহা খুশি এ খবর শুনে। সে ঘরে ঢুকে গেলো। জেরিনকে দেখে জেরিন এসেই সায়রাকে জড়িয়ে ধরলো। সায়রা জেরিনের মাথায় হাত রেখে বললো ”

_বলেছিলাম নাহ এতো জলদি আশা হারাস না৷ ওই খোদা সব পারেন। আমি খুব খুশি হয়েছি। খুব।

“নাফিস তূর্যকে ছাড়লো। জেরিন এগিয়ে এলে তূর্য ওর মাথায় হাত রেখে দোয়া করে দিলো।
ওরা গিয়ে সামর্থ্য বেগমকে এই খবর জানালো। সকাল সকাল যেনো বৃষ্টি বিলাশ বাড়ি খুশির বন্যা বইতে লাগলো। সায়রার বাবু এবার আবার জেরিনের বাবু। সায়রার সময়টা অন্য রকম ছিলো। তূর্য এ আনন্দটা করতে পারেনি। এই উল্লাস তার নসিবে হয়নি। রুহানির জন্য। সে আাপ হবে এ খবর সে হসপিটালের মতে জায়গায় বসে পেয়েছিলো। রুহানির কথা মাথায় এলেই তূর্যর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
তবু ও তূর্য সেসব মনে রাখলো না। যাকে সয়ং আল্লাহ সুখ দেয় তার সুখ কেড়ে নেওয়া ক্ষমতা কারো নেই। রুহানি তো কিছু ই না। আজ তূর্যর সব আছে। পরিবার হয়েছে। সব। অথচ রুহানি,,,, । মানুষের ক্ষতি চাইলে মানুষ বুঝি এভাবে শেষ হয় ”

চলবে,,,