ম্যারেজ প্রোপজাল পর্ব-৪৬ এবং শেষ পর্ব

0
1

#ম্যারেজ_প্রোপজাল
#অরিত্রা_অর্নি
#অন্তিম_পর্ব

“সময় বহমান নদীর মতো। কিভাবে বয়ে চলে যায় বোঝা মুশকিল। দেখতে দেখতে সময় চলে গেছে আরো তিন মাস।
সায়রা এখন নয় মাসের প্রেগন্যান্ট। পেট তার বড় আকৃতি ধারণ করেছে। পেটের মধ্যে একটা ছোট্ট প্রানের উপস্থিতি টের পায় রোজ। এক বেলা যদি বাবু নড়াচড়া না করে তাহলে সায়রার থেকে মনে তূর্য পাগল হয়ে উঠে। অফিসে গিয়ে ও সায়রাকে কলে রাখে। সায়রা কখন কি করছে না করছে সব তাকে জানতে হবে। সায়রা এখন নড়াচড়া করতে ও কষ্ট হয়। ডক্টর ডেট দিয়েছে আর দশদিন পর। তূর্য ওয়েট করে আছে। কিন্তু সায়রা মনে মনে চাচ্ছে এই দশদিনের মধ্যে ই যেনো তার ব্যথা উঠে। নরমাল ডেলিভারি হয়। তূর্যর আড়ালে ডক্টর এর সাথে ও যোগাযোগ করেছে সায়রা। তূর্য এ খবর জানেনা।তূর্য ভয় পায়। তাই সে চায় সি সেকশন হোক।
জেরিন একটু আসেই পকরা বানিয়ে সায়রার কাছে এসেছে। তূর্য সায়রাকে নিচে সিফট করিয়ে ছেড়েছে। এ অবস্থায় বারবার সিড়ি দিয়ে উঠা নামা করা যায় না৷
এখন বিকেলের শেষ প্রহর। একটু পড়েই সন্ধা নামবে। জেরিন এলে সায়রা শোয়া থেকে উঠে বসলো। পকরা দেখে জিভে জ্বল এসেছে। জেরিন আবার প্রেগ্ন্যাসি নিয়ে ও দিব্বি সব খেতে পারে। ওর ও তিন মাস শেষ চার মাস চলছে। জেরিন বললো ”

_তোর শরীর এখন কেমন রে ?

_কেমন আবার। দেখিস না আমি ছোট খাটো একটা হাতির বাচ্চা হয়ে গেছি।

_ধুর। বেবি মুভমেন্ট করলে কেমন লাগে রে ? আমার বেবিটা যে কবে মুভমেন্ট করবে ?

_এই অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না। বিশ্বাস কর ওর বাপের মতো আমি ও অপেক্ষায় ছটফট করছি। কবে ওর মুখটা দেখতে পাবো।

_আর মাএ দশদিন অপেক্ষা কর।

_তার আগেই যেনো হয়ে যায় দোয়া কর।

“ওদের কথার মাঝেই জেরিনের ফোন বেজে উঠলো। জেরিন দেখলো নাফিসের কল। জেরিন উঠে গেলো। কথা বলবে একটু। সায়রা পাকোড়াগুকো খাচ্ছে। তূর্য আজ এখনো কল করেনি। সায়রা হুট করেই অনুভব করলো ওর তলপেট কেমন চিনচিনে ব্যথা করছে। সায়রা পাকোড়া রেখে বেডের সঙ্গে ঢেলান দিয়ে রইলো। মাঝে মাঝে এমন হয়। সায়রা পাশে থেকে ফোন হাতে নিলো। তূর্যকে কল করবে। কল করলেও তূর্য কল ধরলো না। সায়রা ভেবে পেলো না রোজ তো লোকটা ই ফোন করে পাগল বানিয়ে ফেলে আজ কি হলো। সায়রা ফোন রাখতে যাবে তার আগেই তূর্যর কল এলো। ফোন ধরে কানে নিতেই তূর্য বলে উঠে ”

_সরি পাখি মিটিং এ আছি তো তাই কল করতে পারিনি। ঠিক আছো তুমি ?

_আমি ঠিক আছি। বাড়ি আসবেন কখন ?

_মিস করছো ?

_অনেক। জলদি আসুন।

_মিটিং টা শেষ করেই চলে আসবো পাখি। একটু ওয়েট ওকে হানি।

“সায়রা কল কাটলো। এরপর বসে রইলো। পেটের ব্যথার কথা আর বললো না। এদিকে সময় যাচ্ছে আর ব্যথা বাড়ছে একটু একটু করে।
কিছু সময়ের মধ্যে ই ব্যথা তীব্র হতে লাগলো। সায়রা এবার সয্য করতে পারছে না। শোয়া থেকে উঠে ও বসতে পারছে না। ফোনটা হাতে নিলো। তূর্যর ফোনে কল করলো। কিন্তু কল রিসিভ হলো না৷ সায়রা জেরিনকে ডাকলো। কিন্তু ব্যথার তীব্রতা এতো বাড়ছে সায়রা পেটে হাত দিয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে । জেরিন তখন চুমকির সঙ্গে কাজ করছিলো। ওর মনে হলো সায়রা ওকে ডেকেছে। কিন্তু স্পষ্ট শুনতে পায়নি। তবুও জেরিন কাজ রেখে দৌড়ে গেলো সায়রা রুমে গিয়ে দেখে সায়রা ফ্লোরে বসে আছে পেট চেপে ধরে বসে আছে। জেরিন দৌড়ে গিয়ে সায়রাকে ধরলো ”

_এই কি হয়েছে তোর ? ব্যথা উঠেছে ?

“সায়রা কথা ও বলতে পারছে না শুধু মাথা নাড়ালো। জেরিন ভেবে পাচ্ছে না এবার কি করবে৷ এমন সময় বিছানার উপর রাখা সায়রার ফোনটা বেজে উঠলো। জেরিন দেখলো তূর্যর কল। কলটা ধরলো জেরিন। ওপাশ থেকে তূর্য বলে উঠলো ”

_পাখি।

“জেরিন সঙ্গে সঙ্গে বললো ”

_ভাইয়া আমি জেরিন। সায়রার ব্যথা উঠেছে। ওর অবস্থা খারাপ মনে হচ্ছে। আপনি কোথায় আছেন ?

“তূর্য বাড়ির কাছাকাছি ই চলে এসেছিলো। হুট করে সায়রার কিছু হয়েছে শুনে তূর্য যেনো থমকে গেলো। বললো ”

_পাঁচ মিনিট। আমি আসছি। ওকে একটু দেখো।

“তূর্য অস্থির হয়ে উঠলো। নাফিস ও পাশে বসা গাড়িতে বললো ”

_কি হলো ? সায়রার কিছু হয়েছে ?

_ওর ব্যথা উঠেছে। কিন্তু ডক্টর তো আরো কদিন পর ডেট দিয়েছিলো।

“তূর্য গাড়ির স্পিড বাড়ালো। পাচ মিনিটের মাথায় বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামতেই তূর্য নেমে দৌড়ে গেলো যেতে যেতে নাফিসকে বললো ”

_গাড়িতে বসে থাকো। সায়রাকে নিয়ে আসছি আমি৷

“তূর্য দৌড়ে আগে রুমে গেলো। ততক্ষণে সামর্থ্য বেগম ও এসেছে। তূর্য দেখলো সায়রা পেট ধরে ব্যথায়,কাঁদছে। তূর্য এসে সায়রার পাশে বসে গালে রেখে বললো ”

_কেঁদো না পাখি। একটু সয্য করো।এখনি নিয়ে যাবো হসপিটালে।

“কথাটা বলেই তূর্য সায়রাকে পাজা কোলে তুলে নিলো। সায়রা ব্যথায় হুসে নেই৷ এতো ব্যথা সয্য করতে হয় মা। হতে গেলে। জেরিন ও ছুটলো পিছু। নাফিস আগে থেকেই ড্রাইভিং সিটে বসে অপেক্ষা করছিলো। তূর্য সায়রাকে পেছনের সিটে নিয়ে বসিয়ে দিয়ে নিজে ও বসলো সায়রার মাথাটা নিচের বুকের সাথে চেপে ধরে। জেরিন সামনে গিয়ে বসলো। গাড়ি ছুটে চলছে হসপিটালের দিকে। তূর্য বারবার বলছে ”

_কিচ্ছু হবে না পাখি। আর একটু। এইতো এসে পড়েছি। শক্ত থাকো পাখি। সয্য করো।

“আধা ঘন্টার রাস্তা বোধহয় নাফিস দশ মিনিটে এসেছে। এখান থেকে ও সায়রাকে কোলে নিয়ে ছুটলো হসপিটালের ভেতরে। সায়রা দেখা ডক্টর রিফাত সুলতানা তখন ও রোগী দেখছে। সায়রার অবস্থা খারাপ। ব্যথার তীব্রতা বেড়েই চলেছে। সায়রাকে ট্রলিতে শোয়ানো হলো। তূর্য পাশেই দাড়িয়ে। একজন নার্স গেলো ডক্টরকে ডাকতে। সায়রা তখনও তূর্যর হাত চেপে ধরে আস্তে করে বললো ”

_তূর্য ।

“তূর্য সায়রার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। সায়রা কেমন ব্যথা সয়ে নিচ্ছে। তূর্যর বুকটা ফেটে যাচ্ছে। সায়রার মুখ লালহয়ে গেছে। এসির মধ্যে ও মেয়েটা ঘামছে। তূর্য বললো ”

_এইযে পাখি। ডক্টর এখনি আসবে। সাহস রাখো। আমি আছি তো। কিচ্ছু হতে দেবো না তোমার৷

“ওদের কথার মাঝেই রিফাত সুলতানা ছুটে এলো। তূর্য ওনাকে দেখেই বলে উঠলো ”

_আমার বউয়ের এখনি কেন ব্যথা হচ্ছে। আপনি না বলেছিলেন ডেট আরো দশদিন পর।

_শান্ত হও তূর্য । ব্যথা,উঠা ভালো। নরমালে বেবি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷

“পরপর রিফাত সুলতানা বললো ”

_ওকে ইমারজেন্সি লেবার রুমে সিফট করতে হবে। মনে হচ্ছে বেবি নরমালেই হবে।

“কথাটা বলতে দেড়ি নার্সরা এসে সায়রাকে নিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু তূর্য হাত ছাড়লো না। সবার সামনে বলে উঠলো ”

_আমি আমার বউয়ের সঙ্গে যাবো।

“ডক্টর সহ নাফিস ওরা ও হা করে চেয়ে রইলো। লোকটার মাথা কি গেছে নাকি পুরোটা। বউ কি পার্ক এ ঘুরতে যাচ্ছে যে সঙ্গে যাবে। নাফিস এসে বললো ”

_স্যার নিয়ে যেতে দিন। সায়রার অবস্থা খারাপ।

_আমি গেলে কি সমস্যা। আমার ই তো বউ। আমি বাইরে থাকলে টেনশনে মরে যাবো। প্লিজ আমি যাই।

“রিফাত সুলতানা এবার বললো ”

_দেখো তূর্য আমাদের এখানে এমন নিয়ম নেই। ওয়েট করো।

“তূর্য কি করবে কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছে না,।তাকে সঙ্গে যেতে দিবে না। বউকে নিয়ে গেলে তূর্যর তো কলিজা শুখিয়ে যাবে। তূর্য সায়রার দিকে তাকালো। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। কিছু বলার ও হয়তো শক্তি নেই। তূর্য সায়রার হাতে চুমু খেয়ে বললো ”

_ওয়েট করছি বউ। আমার প্রিন্সেসকে নিয়ে এসো।

“সায়রার তাকানোর ও শক্তি নেই। তবে তূর্যর সব কথাই ওর কানে গেছে।
সায়রাকে নিয়ে যাওয়া হলো। তূর্যর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে কেউ ওর কলিজা ছিড়ে নিয়ে গেছে এখনি।
নাফিস এসে তূর্যর কাঁধে হাত রাখলো। তূর্য ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। নাফিস বললো ”

_চিন্তা করবেন না স্যার। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

“কিন্তু তূর্যর যে কি বলার মতো ভাষা নেই। ভেতর থেকে এবার সায়রার চিৎকার শোনা যাচ্ছে মৃদু ভাবে। তূর্য বসেছিলো একটু৷ এবার উঠে দাড়ালো। শুধু পায়চারি করছে। কি যেনো বিরবির করছে শুধু। নাফিস আর জেরিন বসে আছে। তূর্যর পড়নে এখনো অফিসের কাপড়। আর কতো সময়। তূর্য পাগল হয়ে যাবে। এতো কষ্ট কেন পাচ্ছে তার বউটা,।তূর্য মনে মনে ঠিক করে নিলো। এটাই লাস্ট। আর বাচ্চার নাম মুখে ও নিবে না। এতো কষ্ট সওয়া যায় নাকি। তূর্য পারবে না বারবার সায়রাকে এমন কষ্ট দিতে। শুধু একটা মেয়ে হোক তার। জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকবে না। সব পেয়ে যাবে তূর্য ”

“ঠিক এক থেকে দেড় ঘন্টা তূর্য ওয়েট করছে। ভেতর থেকে ঠিক সেই মুহুর্তে ই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ এলো। তূর্য মাথা চেপে ধরে বসে ছিলো। বাচ্চার কান্নার আওয়াজ কানে আসতেই তূর্য মাথা তুলে তাকালো। এটা তূর্যর বাচ্চার কান্না। নাফিস তূর্যর পাশে বসে ছিলো। তূর্যর দিকে চেয়ে দেখলো তূর্যর চোখে পানি টলমল করছে। এখনি বোধহয় গড়িয়ে পরবে। ঠিক ওমন সময় লেবার রুম থেকে বের হলেন ডক্টর। হাতে সাদা তোয়ালেতে পেঁচানো একটা ছোট্ট বাচ্চা। নাফিস আর জেরিন তো আগে দৌড়ে গেলো। কিন্তু বাচ্চার বাপ যে প্রপ্রথম কোলে নেবে। তূর্যর পা চলছে না। দাঁড়ালো তূর্য রিফাত সুলতানা নিজেই এগিয়ে এলেন। তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_মেয়ে হয়েছে তোমার। একেবারে চাঁদের মতো ফুটফুটে মেয়ে। নাও কোলে নাও।

“তূর্য তাকালো বাচ্চাটার দিকে। এইটুকু একটু মুখ। পিটপিট করে তাকাচ্ছে। তূর্য হাত পাতলো। বুকের ভেতর থরথর করে কাঁপছে তার। মেয়ে হয়েছে তূর্যর। তূর্য বাবুটাকে কোলে নিয়ে বললো ”

_আমার বউ।

“রিফাত সুলতানা হেসে বললো ”

_ভালো আছে তোমার বউ। একটু পড়েই কেবিনে দিয়ে দিবো। জামাই বউ দুটোই পাগল।

“ডক্টর চলে গেলো। তূর্য বাবুটার দিকে তাকালে দেখলো বাবুটা ও ওর দিকে চেয়ে আছে। তূর্যর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। মেয়ের কপালে চুমু খেলো তূর্য। ইশ,এই ছোট্ট মানুষটার আগমন নিয়ে তূর্য পাগল হয়ে উঠেছিলো। আজ এই ছোট্ট মানুষটা তূর্যর কোলে। তার মেয়ে। তার প্রিন্সেস।
তূর্য বাবুকে কোলে নিয়ে বসলো এবার। বনাফিস সামর্থ্য বেগমকে ভিডিও কল দিয়ে দেখাচ্ছে। তূর্য তার মেয়ের দিকে অপলক দৃষ্টি চেয়ে আছে। মেয়ে একবার এদিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ওদিকে। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু। মনে হচ্ছে অবাক হয়ে সব দেখছে। কোনো কান্নাকাটি নেই। একেবারে শান্ত মেয়ের মতো।
সামর্থ্য বেগম মন ভরে এই দৃশ্য দেখলো। তার নাতীর একটা সুন্দর জীবন তিনি সব সময় চেয়েছে। আজ তা নিজের চোখে দেখছে।
বাবুকে জেরিন কোলে নেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে আছে। জেরিন এবার কোলে নিলো। নাফিস ও নিলো একটু। তূর্য অপেক্ষা করছে কখন তার বউকে একটু দেখতে পাবে। এমন অমূল্য জিনিস তূর্যকে এতে কষ্ট করে এনে দিলো তার বউ। বউকে কি দিয়ে খুশি করবে তূর্য । এর মাঝে নাফিস বলপ উঠলো ”

_বাবুকে পেয়ে সবাই মিষ্টির কথা ভুলে গেছে।।আমি গিয়ে মিষ্টি নিয়ে আসি৷

“নাফিস বের হয়ে গেলো। জেরিনের কোলে বাবু। তূর্য অপেক্ষা করছে কখন ডাকবে তাকে সায়রাকে দেখার জন্য। একটু পরেই ডাকা হলো তূর্যকে। সায়রাকে কেবিনে দেওয়া হবে। জেরিন এসে বেবিকে তূর্যর কোলে দিলো। তূর্য দেখলো মেয়ে তার ঘুমিয়ে পড়েছে
তূর্য এগিয়ে গেলো কেবিনের দিকে। সায়রাকে আনা হলো। সায়রা চেয়ে আছে। যেহেতু নরমাল ডেলেভারি তাই তেমন একটা অসুস্থ সায়টা হয়নি। তূর্য দাড়িয়ে আছে কেবিনের সামনে। সায়রাকে যখন কেবিনে ঢোকানো হলো সায়রা দেখলো তূর্য বাবুকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কেবিনে শুধু তূর্যকেি ঢুকতে দিলো। সায়রা চেয়ে আছে। তূর্য বাবুকে কোলে নিয়ে গিয়ে বসলো সায়রাী পাশে। সায়রা আধশোয়া হয়ে বসে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। বাবুকে এখনো সে কোলে নেয়নি। তূর্য বললো ”

_কাঁদছো কেন পাখি ? অনেক কষ্ট হয়েছে ?

“সায়রা মাথা নাড়িয়ে বললো কষ্ট হয়নি৷ পরপর বলে উঠলো ”

_একটু কষ্ট হয়নি। যতোটুকু হয়েছিলো আপনার কোলে আপনার প্রিন্সেসকে দেখে সেটা ও চলে গেছে। আপনি খুশি তো তূর্য ।

“তূর্য এক হাতে সায়রাকে কাছে টেনে চুমু দিলো সায়রার কপালে। বললো ”

_এক অমূল্য উপহার তুমি আমায় দিয়েছো পাখি। আমি অনেক খুশি অনেক।

“তূর্য এবার সায়রার কোলে বাবুকে দিলো। সায়রা কোলে নিতেই নড়েচড়ে উঠলো বাবু। পরপর তাকালো সায়রার দিকে। এখনো কাদেনি এই মেয়ে। এবার কেমন ঠোঁট বাঁকিয়ে কেদে উঠলো। তূর্য ভয় পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে নার্সকে ডাকলো। সায়রা কিছু বলার আগেই নার্স এসে বললো ”

_কি হয়েছে স্যার ?

_আমার মেয়ে হুট করে কাঁদছে কেন ?

“নার্স ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। এবার তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_আপনার মেয়ের খিদে পেয়েছে না। এক ঘন্টা হতে চললো দুনিয়াতে এসেছে।

“পরপর সায়রার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো ”

_ওর খিদে পেয়েছে। খাওয়াতে তো পারবেন ?

_জি পারবো।

“নার্স বেরিয়ে গেলো। সায়রা বাবুকে কোলে নিয়ে বসে আছে। তূর্য বললো ”

_আমার প্রিন্সেসের খিদে পেয়েছে বউ। খাওয়াও ওকে।

_আগে আপনি বের হন ।

“তূর্য ভ্রু কুচকে বললো ”

_আমি কেন বের হবো ?

_আপনি বের হোন জেরিনকে পাঠান।

_কি সাহায্য লাগবে আমাকে বলো।

“এর মাঝে বেবি আবার কেঁদে উঠলো। সায়রা এবার বললো ”

_বের হবেন আপনি।

“তূর্য বললো ”

_তুমি কি আমার সামনে ফিডিং করাতে লজ্জা পাচ্ছেো বউ ?

“সায়রা কিছু বললো না। মাথা নিচু করে রইলো। তূর্য বুঝলো কাহিনী। বললো ”

_যে জিনিস আমি হাজারবার দেখেছি। ছুয়েছি। খেয়ে,,,,,,।

“তূর্য কথাটা শেষ করার আগে সায়রা বড় বড় চোখ করে তাকালো। তূর্য থেমে গেলো। বললো ”

_ওকে বের হচ্ছি। হয়ে গেলে আমাকে ডাকবে হু।

“তূর্য বেরিয়ে গেলো। জেরিনকে পাঠালো ভেতরে। এরমাঝে নাফিস মিষ্টি নিয়ে হাজির। এসে দেখলো তূর্য দাড়িয়ে আছে। নাফিস পাশে এসে
সে দাঁড়ালো । জেরিন নেই। হয়তো সায়রার সাথে। নাপিা মিষ্টির পেকেট খুলে একটা মিষ্টি নিয়ে তূর্যর দিকে এগিয়ে দিলো। বললো ”

_অভিনন্দন স্যার।

“তূর্য মিষ্টি খেয়ে নাফিসকে ও খাইয়ে দিলো ”

“একদিন পরই সায়রাকে রিলিজ করা হলো। নাফিস আী জেরিন ওই রাতেই বাড়ি ফিরে গিয়েছে। পরেরদিন সায়রা আর বেবিকে নিয়ে বাড়ি ফিরলো তূর্য। বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখলো বসার ঘরে জেরিন বেবির ওয়েলকামের জন্য বেলুন আরো অনেক কিছু দিয়ে সাজিয়েছে। কেক এনেছে। সায়রা তো খুশি হয়ে গেছে৷ মনে হচ্ছে ওকেই ওয়েলকাম করার জন্য এসব সাজিয়েছে। তূর্যর কোলে বেবি। সামর্থ্য বেগমের দিকে এগিয়ে গেলো তূর্য আর সায়রা। সামর্থ্য বেগম বসে ছিলেন৷ বেবিকে তার কোলে দেওয়া হলো। তিনি চেয়ে রইলেন। বাবুর মুখের দিকে। মুখ ফুটে বলে উঠলো ”

_এ তো একেবারে বৃষ্টির মতো দেখতে। নাক মুখ। সব। তূর্যরে তোর মা চলে এসেছে।

“তূর্য সত্যি ই এটা ফিল করছে। তার মা এসেছে। সায়রা বুঝলো এরজন্য ই তূর্য মেয়ে মেয়ে করেছে।
সামর্থ্য বেগম বললো ”

_মেয়ের নাম রাখবি না ?

“সায়রা আর তূর্য দুজনেই বললো ”

_তুমি ই ঠিক করে একটা নাম রেখে দাও।

“সামর্থ্য বেগম একটু ভাবলো। পরপর বললো ”

_আরাবী জাহান বৃষ্টি।

“সবাই পছন্দ করলো নামটা। সাতদিন পর আকিকা দিয়ে এই নাম ই রাখা হবে তূর্যর মেয়ের।
সবাই এক সঙ্গে কেক কেটে বাবুকে নিয়ে রুমে এলো সায়রা তূর্য । এসে দেখলো জেরিন রুম পুরো ক্লিন করেছে। সব গুছিয়ে রেখেছে। সাথে সাজিয়েছে। ও।
এদিকে ওদের ছোট্ট আরাবী ঘুমে বিভোর। তূর্য ছোট্ট বিছানা করলো বিছানার মাঝখানে। সায়রা শুইয়ে দিলো মেয়েকে।
দুজনেই চেয়ে রইলো মেয়ের দিকে। তূর্য সায়রার দিকে তাকালো। কেমন পরিপূর্ণ লাগছে আজ সব। যা তূর্য কখনো ভাবেনি। বিয়ে বাচ্চা। আজ তার বউ আছে। ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান আছে৷ সায়রা তূর্যর দিকে চেয়ে বললো ”

_কি ভাবছেন এতো মিঃ সাদমান শাহারিয়ার তূর্য ?

“তূর্য সায়রার দিকে চেয়ে থেকে সায়রার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। বললো ”

_ধন্যবাদ পাখি আমার জীবনে এসে আমার জীবনটা পরিপূর্ণ করে দেওয়ার জন্য ।

“সায়রা তূর্যর কাঁধে মাথা রাখলো। হাতটা চেপে ধরে বললো ”

_আপনাকে ও ধন্যবাদ মিঃ রাগী বস। আমাকো এতো ভালোবাসার জন্য। আমাকে রানী করে রাখার জন্য।

_রাজ্য,রাজা,রাজকন্যা। সবই তোমার আমার বউপাখি। আমৃত্যু তোমায় রানী করে রাখবো।

“কথাটা বলেই সায়রার দিকে ফিরে বললো ”

_ভালোবাসি বউপাখি।

_আমি ও ভালেবাসি আপনাকে আরাবীর দুষ্ট পাপা।

“তূর্য হাসলো। পরপর সায়রার কপালে চুমু খেলো। সত্যি ই তো। সেই রাগী একরোখা তূর্য আজ সংসারী হয়েছে। বাবা হয়ে গেছে। মিঃ রাগী বস আজ এই মা মেয়ের বসে চলে এসেছে। তূর্য এভাবে পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিতে চায়। সব এমনি থাকুক। কিছু পরিবর্তন না হোক। তূর্যর মতো একাকিত্বে ভেসে যাওয়া লোকেদের একজন করে সায়রা আজমীর হোক। যে এসে হাত ধরে পাশে দাঁড়াবে। জীবনটা সুন্দর করে তুলবে। আর তূর্যরা বাঁচাতে চাইবে যুগ যুগ ”

সমাপ্ত,,,,,