#ম্লান_সন্ধ্যায় (২১)
বিকেল চারটে নাগাদ ইন্সপেক্টর তমাল অনিকের সাথে দেখা করতে এলো।যদিও শীতকালের চারটে মানে সন্ধ্যা গড়াবার উপক্রম। তবে অন্ধকার সেলে বিকেল কিনা সন্ধ্যা তা বোঝার উপায় নেই। এখানে ঘড়ির সময়ই ভরসা। তমাল খুবই ক্লান্ত, গতরাতে চেয়ারে হেলান দিয়ে যা একটু ঘুমিয়েছিল । কিন্তু ওর ঘুমটা শান্তির ছিল না। মাথা জুড়ে চিন্তারা এলোমেলো হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাছাড়া আজ সারাটা দিন ওকে অনেক তথ্য যোগাড় করতে হয়েছে,যদিও এসআই লোকটা অনেক সাহায্য করেছে। কিন্তু বহুদিন বাদে আজকের দিনটায় প্রচুর ধকল গেছে। তাইতো ও ঠিক করেছে, আগামীকাল ঠান্ডা মাথায় আসল অপরাধীকে শনাক্ত করবে এবং আজ বাসায় ফিরে নাক ডেকে ঘুমাবে।অবশ্য ওর বৌ বলেছে ওর নাক ডাকার আওয়াজটা খুবই বাজে। এবং সেটাকে ব্যাঙের সাথে তুলনা করলে ভালো মিল হয়। যেরকম হয় হোক,ও আজ জোরে জোরে নাক ডাকবে। এতোই যদি গিন্নির বিরক্তি লাগে তবে অন্য রুমে ঘুমাবে। কিন্তু রাত আটটা বাজতে এতো দেরি হচ্ছে কেন?বাসায় ফিরে ও খাবার খাবে না, হাতমুখ ও ধোবে না, উর্দি খুলে লাফ দিয়ে বিছানার ওপর পড়বে এবং একেবারে সকালে উঠে খেয়েদেয়ে থানায় আসবে।হঠাৎ ওর মনে হলো,ওর কিছু প্রশ্ন জানতে বাকি আছে।যেই ভাবা সেই কাজ,ও অনিকের সাথে দেখা করতে নিজের ডেস্ক ছাড়লো।
অনিক সবকিছু নিয়ে খুবই বিরক্ত।ওর মাথাটা হ্যাং হয়ে আছে।অ্যালকোহলে আসক্তদের জীবনে এই এক সমস্যা, কিন্তু সেলের ভেতরে ওকে এর ব্যবস্থা কে করে দেবে! এমনিতেই প্যাকেটে আর মাত্র দুটো সিগারেট অবশিষ্ট আছে। এরমধ্যে তমালের উপস্থিতি ওর ভালো লাগলো না। লোকটা অহেতুক প্রশ্ন করতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু ওর ভালো লাগা বা না লাগায় তমালের কিছু যায় আসে না। পুলিশের কাছে অপরাধীদের রাগ বিরক্তির কোন মূল্য নেই।
তমাল ওর সামনে বসলো। বললো,
‘আপনি তো ব্রান্ডের সিগারেট খান।তাই অফার করলাম না।’
অনিকের চোখমুখ কঠিন।শেভ না করার দরূন মুখটা কালো দেখাচ্ছে। চোখদুটো লাল , চুলগুলো উস্কো খুস্কো। গতরাতের টিশার্ট গায়ে,কোটটা চেয়ারের ওপর রাখা।পরিপাটি লোকটা কয়েকঘণ্টায় কেমন বদলে গেছে। দুজনে প্রায় একসাথে সিগারেট ধরালো। মূহুর্তে মৃদু আলোয় কুন্ডলী পাকিয়ে উড়ে যাওয়া ধোঁয়া একত্রিত হয়ে সেলের ভেতরে কুয়াশার ন্যায় আবরণ সৃষ্টি করলো।
অনিক কথা বললো না।ও জানে তমাল নিজে থেকেই এখন কথা বলবে এবং ওর অনুমান সঠিকই হলো। তমাল বললো,
‘আপনি সুদর্শন,একসময় সফল বিজনেসম্যান ছিলেন, তবুও মিসেস বিভা আপনাকে ছেড়ে আপনার বন্ধুর সাথে পালিয়ে গেল কেন?’
‘আমার ব্যক্তিগত বিষয় আপনাকে বলতে ইচ্ছুক নই।’
তমাল অপমান বোধ করলেও মুখে প্রকাশ করলো না।তার অভিজ্ঞ চোখ প্রথমেই সামনের লোকটাকে দেখেই বুঝেছিল,এ লোকের ঘাড়ে একটা শিরা বেশি। সোজা বাংলায় ত্যাদড়।ও বললো,
‘মিস্টার অনিক,এটা ব্যক্তিগত ব্যাপার আমি জানি। কিন্তু কেসের জন্য এটা আপনাকে বলতেই হবে।’
‘আর যদি না বলি।যদি বলি আমি চাইনা জেলের বাইরে যেতে।’
‘আপনার ওয়াইফ কিন্তু আপনাকে জেল থেকে বের করার জন্য খুব চেষ্টা করছে।তার কথাও কি একবার ভাববেন না? এতকিছু করার পরও আপনি চান সে আপনার খামখেয়ালির জন্য সবার কাছে হেরে যাক?তার এমন দৃঢ় বিশ্বাস সবার সামনে ভুল প্রমাণিত হোক?’
অনিক জবাব দিতে পারলো না। চোখের সামনে কোয়েলিয়ার ক্লান্ত মুখশ্রী ভেসে উঠলো।আর ওই চোখদুটো যেগুলো অনিককে বারবার আশ্বাস দিচ্ছিল,সেই দ্যুতিটুকুও কি শুধুমাত্র ওর জন্য নিভে যাবে!এটা একদম সত্যি যে মেয়েটাকে ও একজন সাদামাটা গ্রাম্য মেয়ে ভেবেছিল,যে চুপচাপ সবকিছু মেনে নিতো। এর এমন মেনে নেওয়া স্বভাবের কারণে অনিকের মাঝেমাঝে রাগ ও হতো। কেননা ও চাইতো মেয়েটা প্রতিবাদ করুক, নিজের অবস্থান বুঝে নিক। কোয়েলিয়াকে ও এতদিন বোকা বলেই মনে করতো। কিন্তু আজ কঠিন সময়ে সেই সবথেকে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে।কজন স্ত্রী পারে, তার স্বামীর সামনে জোর গলায় পাশে থাকার কথা বলতে।সব প্রমাণ তো ওর বিরুদ্ধে, অথচো কতটা বিশ্বাস থাকলে,কতটা চিনলে একজন মানুষ এসব এভিডেন্সের তোয়াক্কা না করে জোরগলায় বলে, আপনাকে আর একদিন এখানে থাকতে হবে।যেখানে ওদের পরিচয় একমাসের কিছু বেশি।
‘কি মিস্টার অনিক, আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো দেবেন তো?’
তমালের ডাকে অনিকের ধ্যান ভাঙে। এবার ওর ভেতর আপত্তি আসেনা।যদিও একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা ওর কখনোই পছন্দের না।ও বলে,
‘বলুন কি বলতে হবে। তবে অতিরিক্ত কিছু বলতে পারবো না।’
‘ওইযে আপনি একজন সফল ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও মিসেস বিভা আপনাকে ছেড়ে কেন চলে গেল?মানে মেয়েরা তো সবসময় সফল ব্যক্তি পছন্দ করে। তাছাড়া আপনাদের তো লাভ ম্যারেজ ছিল। কিন্তু এরপরও এমন কেন হলো।’
‘তার রিফাতকে ভালো লেগেছিল তাই গিয়েছিল।’
‘কিন্তু আপনার ভেতরে ভালো লাইফ পার্টনারের সবরকম বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও মিস্টার রিফাত কে কিভাবে ভালো লাগে! তারপর আপনারা আগে থেকেই রিলেশনে ছিলেন।’
‘মানুষের মন সৃষ্টির সবথেকে অদ্ভুত জিনিস, সেই সাথে কন্ঠনালী ভেদ করা বাক্যগুলো অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে।’
‘ঠিক বুঝলাম না।’
‘বিষাদসিন্ধু পড়েছেন?’
‘আমার প্রশ্নের সাথে বিষাদ সিন্ধুর সম্পর্ক কি?’
‘না পড়লেও সমস্যা নেই। আমি ফিকশন কখনো পড়িনা, কিন্তু এই বইটা কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম,বিভা চলে যাওয়ার পর।জানেন যায়েদা কিন্তু তার স্বামী ইমাম হাসান (রা) কে প্রথমে বিষ দিতে চাননি।এক মহিলা প্রতিদিন এসে বিষ দেবার সপক্ষে তাকে বোঝাত। প্রথমদিন যায়েদা একথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়। দ্বিতীয় দিন সে চিন্তায় পড়ে এবং আস্তে আস্তে একসময় সে নিজের প্রাণাধিক স্বামীকে বিষ দ্বারা হত্যা করে। সেই নারী স্বামীকে ভালোবাসার পর শুধুমাত্র মন্ত্রণার জোরে একসময় সেই ভালোবাসার মানুষকে হ’ত্যার সামিল হয়। ঘটনার পুরোপুরি মিল না থাকলেও আংশিক মিল আমাদের সাথে রয়েছে।কি এখন ও বোঝেননি তাই তো?’
‘কিছুটা আন্দাজ করছি।’
‘তাহলে বলি,আমাদের ভালোবাসা ছিল অন্যদের কাছে ঈর্ষণীয়।বলতে পারেন পৃথিবীর কয়েকজন সুখী দম্পতির একজন ছিলাম আমরা।বিয়ের আগে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেমালাপ করতে পারলেও,বিয়ের পর আমার ভেতরে পরিবর্তন আসে। কারণ একজন প্রেমিক স্বামী হবার পর কিছুটা বদলে যায় এবং এটাই স্বাভাবিক। বিভাও এগুলো স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছিল। তবুও আমাদের ভালোবাসা টিকলো না কেন? কারণ আমাদের ভেতর তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকে গিয়েছিল,যে খুব সহজে মানুষকে নিজের কথার জালে আটকাতে পারতো। আমাদের সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু যেদিন রিফাতের সাথে ও অনেকক্ষণ ধরে কথা বললো, সেদিন হয়তো ওর মনে সামান্য হলেও পরিবর্তন এসেছিল। তখন আমি এগুলো আন্দাজ করিনি, মানুষের কন্ঠ দিয়ে বেরোনো বাক্যগুলোর জোর বুঝিনি, কিন্তু পরে বুঝেছি। আমার সবথেকে বড় ভুল কি ছিলো জানেন?’
তমাল উৎসুক হয়ে অনিকের দিকে তাকালো। ততক্ষনে অনিকের সিগারেট শেষ হয়ে গেছে।ও ফিল্টারটা ফেলে দিয়ে বললো,
‘আমার সবথেকে বড় ভুল বিভার সাথে রিফাতের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। সময়ে অসময়ে তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া,বিভাকে অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া, তার কোন কাজের কৈফিয়ত না চাওয়া।স্বামী হোক বা স্ত্রী,কিছুটা শাসনে না রাখলেই বিগড়ে যাবে।তবে আমিও নির্দোষ নই।ভুল আমারও ছিল।আমার উচিত ছিল,বিভাকে সময় দেওয়া।কিন্তু ব্যবসা বড় হলে দায়িত্ব বেড়ে যায়।ঘর অফিস একসাথে সবাই সামলাতে পারে না। কিন্তু তখন বিভাকে সময় দেওয়াটা খুব দরকার ছিল।প্রেগন্যান্সির পর মেয়েরা মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ থাকে। তখন যে তাকে মেন্টালি সাপোর্ট দেয় সে খুব কাছের হয়। অফিসের কাজে আমি ব্যস্ত থাকতাম,আর এই সাপোর্টটা তখন রিফাত বিভাকে দিয়েছিল। ফলস্বরূপ যা হবার হয়েছে।’
‘এতটুকু কারণেই মিস বিভা চলে গেলেন?’
‘আমার বলায় কারণটা ছোট মনে হলেও এতটাও ছোটখাটো ব্যাপার নয়। বহুদিন এগুলো আমার আড়ালে চলছিল। যখন ধরতে পারলাম, স্বাভাবিকভাবে ছোটখাটো ঝগড়া হলো, আমি এসব থেকে ফিরে আসার কথা বললাম। কিন্তু ততদিনে রিফাত ওর মন মস্তিষ্কজুড়ে এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছিল যে ও আমার কথা মানেনি। একদিন অনেক বড় ঝামেলা হলো, স্বীকার করছি ওইদিন আমি ওর গায়ে হাত তুলেছিলাম,যেটার জন্য আমি অনুতপ্ত ছিলাম।তবে এই কারণটা ওর চলে যাওয়ার জন্য সুবিধার হয়।’
‘আমি এটাই মেলাতে পারছি না,এত সামান্য কারণে কেউ কিভাবে চলে যেতে পারে?’
‘পৃথিবীর কতগুলো মানুষকে আপনি জানেন? তাদের মনের চাওয়া পাওয়া সম্বন্ধে?শুনুন অফিসার, আপনি গুছিয়ে কথা বলতে না পারলে আপনার সৌন্দর্য টাকা-পয়সা মূল্যহীন।সব মেয়েরা টাকার পাগল নয়, কেউ কেউ আছে যারা মানুষের কথায় ভুলে যায়।বিভার ছেড়ে যাবার প্রথম কারণ হলো আমার ব্যস্ততার জন্য বিভা হঠাৎ একা হয়ে পড়েছিল, নিজের একাকিত্ব ঘোচানোর জন্য হাতের কাছে রিফাত কে পেয়ে যায়। কারণ ওর একা থাকার অভ্যাস ছিল না।দ্বিতীয়ত আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা, সাহিত্যিকদের মতো স্ত্রীর প্রশংসা করতে পারিনা,যেটা রিফাত পারতো।এবং বিভার মনে আপনা আপনি যখন দুজনের কম্পেয়ার হলে, তখন রিফাতের প্রাধান্য বেশি থাকতো।’
‘মনে হচ্ছে পুরো ব্যাপারটা এখন বুঝতে পারছি।’
অনিক দুহাতে ঘাড় চেপে চেয়ারে হেলান দিলো। তারপর বললো,
‘মানুষের মন জয় করতে চাঁদ আনার প্রয়োজন নেই, কয়েকটা কথা বলেই তাকে ভোলানো যায়। দুঃখের সময় স্বল্পভাষী বন্ধুর থেকে মিষ্টভাষী সুযোগসন্ধানীকে ভালো লাগে।কারণ সে সান্ত্বনা দেয়,তার কথাগুলো মিথ্যে হলেও একটুতো মনকে হালকা করে ।তবে বিভার যাওয়া নিয়ে আমি আফসোস করিনা।যার থাকার সে থেকে যায়,যে থাকবে না তাকে হাজারটা কারণ দেখালেও থাকবে না।’
*
চারকোনা টেবিলে ছটা চেয়ার পাতা।মূলত ওদের জন্যই বাড়তি চারটে চেয়ার আনা হয়েছে।বিভা, সরফরাজ, আফসার শিকদার, কোয়েলিয়া এবং অনিক বসে আছে।।বাকি চেয়ারটা তমালের,যদিও ও দাঁড়িয়ে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করায় ব্যস্ত।
আফসার শিকদার বিরক্ত হয়ে বললেন,
‘এখানে এতক্ষন বসিয়ে রাখার মানে কি?’
‘আপনাদের ভেতর যেকোন একজন খু’নি।তাকেই খুঁজছি।’
‘মানে?’
‘অবাক হলেন মিসেস বিভা? আচ্ছা আপনাদের সবকিছু খোলসা করেই বলছি।তার আগে বলি,স্যার একজন প্রবীণ ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার ভেতর আরও ধৈর্য্য এবং উপস্থিত বুদ্ধি আনা প্রয়োজন।আর মিসেস রিফাত আপনাকেও।’
বিভা কঠোর গলায় বলল,
‘আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?’
‘তাহলে একজন একজন করেই শুরু করি।কি বলেন?’
‘এত হেঁয়ালি করার কি মানে হতে পারে?’
‘প্রথমেই বলেছি অধৈর্য হবেন না স্যার।পুরো ব্যাপারটা আমি কয়েকটি ধাপে শুরু করবো।যার প্রথমটি হচ্ছে খু’নের পেছনে কার কোন মোটিভ থাকতে পারে। আমি এই কেসের ইনভেস্টিগেশন করে বুঝতে পেরেছি,এই খুনের জন্য আপনাদের চারজনের কাছে সামান্য হলেও কারণ আছে। তাহলে প্রথমে আসি সরফরাজ চৌধুরীর কারণটা নিয়ে।’
এমন সন্দেহে সরফরাজ উত্তেজিত হবার পরিবর্তে হাসলো।যেন ও বুঝলো তমাল কোন কারণগুলো বলবে। তমাল বললো,
‘সরফরাজ চৌধুরীর ক্ষেত্রে একটামাত্র কারণ পাওয়া যায়,তা হলো মিস্টার অনিককে ফাঁসিয়ে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করা।প্রথম উদ্দেশ্য হলো, তিনি মিসেস আহসানকে পছন্দ করেন।’
তমাল পুরো কথা শেষ করার আগেই অনিক টেবিলে দুহাত দিয়ে আওয়াজ তুলে উঠে দাঁড়ায়। সরফরাজের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘সাহস কি করে হয়,ওর দিকে তাকানোর।খু’ন করে ফেলবো।’
সরফরাজের ভেতরে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, সবসময় ঠোঁটের কোণে হাসি লেগেই আছে,যা রহস্যময়। তমাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বললো,
‘রিল্যাক্স মিস্টার অনিক, পুরো কথা শেষ করতে দিন।’
অনিকের রাগ তবুও কমেনা। কোয়েলিয়া অনিকের হাত চেপে ধরে ইশারায় ওকে শান্ত থামতে বলে।
‘সরফরাজ চৌধুরীর ক্ষেত্রে রিফাত কে খু’ন করে মিস্টার অনিককে ফাঁসানোর ঝামেলায় যাবার কারণ দেখিনা। মিসেস আহসানকে পেতে হলে তিনি অন্য উপায় বের করতে পারতেন, কিন্তু মার্ডা’রের মতো রিস্ক তিনি কেন নেবেন? তাছাড়া রিফাতের সাথে তার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা ছিল না। এবং নিজের ভাইয়ের প্রতিও কোন প্রতিহিংসা ছিল না। তারপর আসি ব্যবসা এবং সম্পত্তি নিয়ে, কিন্তু খোঁজখবর নিয়ে জানলাম,এখানেও তার কোন স্বার্থ নেই। কেননা আফসার শিকদার সম্পত্তির যে উইল করেছেন,তাতে কোনোভাবেই স্বার্থসিদ্ধি লাভের উপায় নেই।আর সরফরাজ চৌধুরীর এসব নিয়ে কখনোই আগ্রহ ছিল না।বরঞ্চ এই কেসের ব্যাপারে হেল্প করা তিনজনের একজন হলো সরফরাজ চৌধুরী। মিস্টার অনিক, পুরুষ একজন নারীকে পছন্দ করতেই পারে। মানুষের মন তো জানেনই, পৃথিবীর সবথেকে অদ্ভুত জিনিস। এবং কারো মনকে গায়ের জোরে বেঁধে রাখা যায় না।জোর করা মানেই তাকে নিষিদ্ধ জিনিসটার দিকে আরও ঝুঁকতে সাহায্য করা।কিন্তু আপনার ভাইয়ের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না।’
তমাল একটু থামে। তারপর বললো,
‘এই খু’নের পেছনে সবথেকে বেশি জোরালো মোটিভ রয়েছে মিস্টার অনিকের। রিফাত প্রিয় বন্ধু হয়েও সে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল,তা ক্ষমার অযোগ্য। এক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে খু’ন করা অসম্ভব নয় এবং মিস্টার অনিকের যায়গায় অন্য কেউ হলেও সেটাই করতো। কিন্তু সারাদিন ধরে প্রত্যেকটা কারণ বারবার ভাবার পর মনে হলো,রিফাত কে মারতে হলে তিনি আগেই মারতেন। এতদিন অপেক্ষা করতেন না। তাছাড়া একজনের কাছে রিভলবার থাকতে তিনি কেন ছু’রি ব্যবহার করবেন? খু’ন করার ইচ্ছে থাকলে এতগুলো প্রমাণ কখনোই রেখে যেতেন না। ওনার মতো মানুষ তো স্বেচ্ছায় জেলে আসবেন না!মিস্টার অনিক একজন রাগী বদমেজাজি এবং মদ্যপ হলেও খু’ন করার মতো তার সাহস নেই।লয়ারের চেম্বারে তিনি মিসেস বিভাকে কে শ্যুট করতে গিয়েছিলেন রিফাত কে নয় এবং তাও রাগের বশে। সময়ের সাথে সাথে সে রাগ কমে গেছে আর এতদিনে তিনি আপনাদের দু’জনকেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে তাকে সন্দেহের তালিকায় রাখছি না।’
তমাল থেমে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আফসার শিকদার এবং বিভাকে পর্যবেক্ষণ করে।ও জানে আসল অপরাধী কে। তবুও এদের সাথে মাইন্ডগেম খেলতে ওর ভালো লাগছে। বহুদিন বাদে এমন একটা কেস ও হাতে পেয়েছে। পুরোটা এনজয় করে তবেই ও খু’নিকে শনাক্ত করবে।ও ওদের দুজনের মাঝখানে দাড়িয়ে বললো,
‘বাকি আছেন আপনারা দুজন। আপনাদের দুজনের ভেতরেও অনেকগুলো কারণ রয়েছে এই মার্ডা’রের পিছনে।’
আফসার শিকদার ক্ষেপে গেলেন। চড়চড়ে গলায় বললেন,
‘আপনি অহেতুক সন্দেহ করতে পারেন না। আমি খুন করলে আমার ছেলেকে কখনোই ফাসাতাম না।’
‘বিষয়টা একেবারে অসম্ভব তা কিন্তু নয়। আজকাল অনেক পিতা-মাতাই নিজেদের স্বার্থে সন্তানকে খু’ন পর্যন্ত করছে।’
‘কি বোঝাতে চাচ্ছেন?আপনি এমন অযৌক্তিক কথাবার্তা বলার অধিকার রাখেন না।’
‘মিস্টার অনিক এবং রিফাত দুজনে একত্রে ব্যবসা শুরু করেছিল।একসময় বন্ধুর ওয়াইফের সাথে সে আপনার নতুন প্রজেক্টের ডকুমেন্টগুলো অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। হতে পারে সেই রাগ এখন সুযোগ পেয়ে মিটিয়েছেন।’
আফসার শিকদার হাসলেন।কন্ঠে বিদ্রুপ নিয়ে বললেন,
‘ওরকম লস এর আগেও হয়েছে। দীর্ঘ জীবনে অনেক বেইমান পেয়েছি, কিন্তু কাওকে মেরে ফেলার কথা ভাবিনি।’
তমাল ওদের দুজনের পাশ দিয়ে পায়চারি করতে করতে বললো,
‘ কিন্তু খুনটা আপনি করেছেন।মিস বিভা, রিপোর্টে আপনার মানসিক সমস্যার বিষয়টা উল্লেখ থাকলেও অন্যকে ফাঁসানোর ভালোই বুদ্ধি রাখেন ।তো বাকিটা কি আপনি বলবেন,নাকি মুখ দিয়ে বের করিয়ে নিতে হবে।’
সবাই প্রথম কথাটায় ভেবে নিয়েছিল আফসার শিকদার এসবকিছুর মূলে। কিন্তু পরক্ষণেই বিভার নামটা উচ্চারিত হতেই আফসার শিকদার সহ সবাই বিস্ফোরিত নেত্রে বিভার দিকে তাকালো।বিভা তখন কাঁপছে।গত কয়েকটা দিন ধরে ও প্রত্যেকটা মূহুর্তে ভাবছিল এসব ব্যাপারে। একরকম আতঙ্কে ও দুটো রাত পার করেছে। অবশেষে কিনা স্বেচ্ছায় ধরা দিলো! তমাল ধমক দিয়ে বললো,
‘বলবেন নাকি, অন্যকোন ব্যবস্থা নেব।’
বিভার কাঁপুনি কমে গেলে ওর ভেতরে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়না। বরং কঠোর গলায় বলে,
‘ওকে মারার ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু রাগের মাথায় কিভাবে যেন ছু’রি বসিয়ে দিলাম।তবে তার জন্য মোটেও অনুতপ্ত নই আমি।’
‘আপনি জানেন আপনার এই কথা দ্বারা প্রমাণ হয় আপনি একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত নারী!’
‘কিসে কি প্রমাণ হয়, সেটা জানার প্রয়োজন মনে করিনা।’
‘আপনাদের ভেতর কি নিয়ে এতো ঝামেলা চলছিল?’
‘ইরাকে নিয়ে।ও কিছুতেই আমার মেয়েকে কে রাখতে চাচ্ছিল না।এ নিয়ে অনেক আগে থেকেই আমাদের ভেতর ঝামেলা চলছিল। এমনকি সুযোগ পেলেই ওইটুকু বাচ্চার গায়ে হাত তুলতো। আমার মেয়েটা সবসময় আতঙ্ক আর ভয় নিয়ে থাকতো।ওর টাকা-পয়সার অভাব না থাকা সত্ত্বেও ও আমার মেয়ের টাকার দিকে নজর দেয়।ওর ইচ্ছে ছিল,ইরার একাউন্টের টাকাগুলো ওর নামে ট্রান্সফার করে দিই। কিন্তু সেগুলো অনিক তার মেয়ের জন্য দিয়েছিল, আমি তাকে কেন দিতাম!তাই ওর হাত থেকে বাঁচাতে আমি ইরাকে একজনের দায়িত্বে দিয়ে দিই।’
‘এতো যখন সমস্যা ছিল, তাহলে ওর কাস্টাডি আপনি কেন নিয়েছিলেন?’
‘তখন রিফাত বলেছিল, মেয়ে আমাদের সাথে থাকলে কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া অনিকের বাবাও আমার মেয়েকে রাখতে চায়নি আর আমার ও দেবার ইচ্ছে ছিল না।কারণ উনি আমাকে কখনোই পছন্দ করতেন না,সুযোগ পেলে অপমান করতেন।’
‘এসব সত্যি আফসার সাহেব।’
আফসার শিকদার প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিলেন,তার আগে সরফরাজ বললো,
‘এগুলো সত্যি।মামা ওনাকে সত্যিই অপছন্দ করতো। কিন্তু অকারণে ওনাকে হেনস্থা কিংবা অপমান করার কথাটা বাড়িয়ে বললেন মিসেস বিভা।’
তমাল টেবিল রাখা গ্লাস থেকে পানি পান করলো। পায়চারি থামিয়ে চেয়ারে বসে পা দুটোকে সাময়িক সময়ের জন্য বিশ্রাম দিলো। তারপর বললো,
‘তাহলে আপনি বলছেন ঝামেলার সূত্রাপাত আপনার মেয়েকে নিয়ে। তাহলে ওকে দিয়ে দিলেই পারতেন।’
‘আমার মেয়েকে কেন আমি দেব। তাকে জন্ম দিয়েছি,সে আমার সাথেই থাকবে।আমার যথেষ্ট যোগ্যতা রয়েছে আমার মেয়েকে বড় করার।’
‘কিন্তু আপনার আরো দুজন জমজ বাচ্চা আছে। ওদের নিয়ে থাকতে পারতেন? মিস্টার অনিক তো তার মেয়েকে আদর যত্নে রাখতো।’
‘না পারতাম না।ইরা আমার সবকিছু, আমার প্রাণ। রিফাতের হাত ধরে পালিয়ে জীবনের যে সর্বোচ্চ ভুল করেছিলাম,তা আমার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ভোলার চেষ্টা করতাম।যে স্বপ্ন দেখে ওর হাত ধরে বেরিয়েছিলাম,সবটাই ছিল মরীচিকা।প্রথম কয়েকটা মাস ভালো কাটলেও,পরে বুঝতে পারি ও হিংসার বশবর্তী হয়ে অনিকের সাথে আমার বিচ্ছেদ ঘটায়।এই কয়েকটা বছরে মদ, পার্টি,নারীসঙ্গ এগুলো দেখতে দেখতে অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম, প্রতিবাদ করলেই গায়ে হাত তুলতো।ওর মানসিকতা এতোটা জঘন্য , আমি কখনও ধারণাও করতে পারিনি। সেদিন রাতে ঝগড়া হয়েছিল, আমি কেন পুনরায় ইরা কে ফেরত আনলাম। কারণ ও নিজেই অনিকের বাবার সাথে যোগাযোগ করে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল এবং ইরাকে পাঠিয়ে দিয়েছিল। একপর্যায়ে কি যে হলো বুঝলাম না,মনে হচ্ছিল হাজারটা নেকড়ের হিংস্রতা আমার ভেতরে চলে এসেছে।আর ওর একটা কথাও সহ্য হলো না। দিলাম হাতের ছু’রিটা বুক বরাবর বসিয়ে।’
‘এবার আমি বলি আপনি ঠিক কিভাবে অনিককে ফাঁসিয়েছেন।যখন আপনাদের ঝগড়া হয়,তখন আপনি সবজি কাটছিলেন,গাজর,ব্রোকলি রাইট?’
বিভা অবাক হয়ে তমালের দিকে তাকালো। তমাল বললো,
‘বাচ্চাদের যাতে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট না পড়ে,তাই আপনি ওদেরকে আলাদা রুমে নিয়ে টিভিতে লাউড ভলিউম দিয়ে কার্টুন ছেড়ে দিয়েছিলেন। দুজনের ভেতর কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রিফাত আপনার গায়ে হাত তোলে এবং আপনি রাগ সামলাতে না পেরে খু’নটা করে বসেন। রিফাত যখন যন্ত্রনায় চেঁচাতে লাগলো, তখন আপনি ওর মুখে আপনার গলায় থাকা ওড়না গুজে দিলেন।যখন আপনি স্বাভাবিক হলেন , বুঝতে পারলেন রাগের মাথায় কতবড় ভুল করেছেন।ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি মিস্টার অনিককে কল করে মিথ্যা বলে আপনার ফ্লাটে আসার কথা বললেন।’
আফসার শিকদার বললো,
‘তাহলে ছুরিতে অনিকের আঙুলের ছাপ কিভাবে আসলো?’
‘ভালো কথা বলেছেন। মিসেস রিফাত তখন গ্লাভস পরে সবজি কাটছিলেন। একারণেই ছুরিতে ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়নি।আর মিস্টার অনিক ওখানে গিয়েই একসময়কার বন্ধুর এমন অবস্থা দেখে তাড়াতাড়ি বুক থেকে ছু’রি বের করে,যে কারণে ছু’রিতে ওনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট পড়ে যায়। মিসেস বিভা গ্লাভস, সবজির টুকরো,এমনকি চপার বোর্ডটা ভেঙ্গে তিনি কিচেনের বিনে রেখেছিল।এটাই হয়তো ওনার দূর্ভাগ্য। বুদ্ধি করে যদি এগুলো বাইরে ফেলতেন, তাহলে কেসটা আরেকটু জটিল হতো।’
‘আরো একটা ঘটনা বলি, মিসেস বিভার মিসক্যারেজ হয় আজ থেকে আটমাস আগে। আগে থেকেই মানসিক অশান্তিতে ভুগতেন এবং মদ্যপানের কারণেই তার মিসক্যারেজটা হয়। সেইসাথে ওনার মানসিক সমস্যাটাও দেখা দেয়।যেখানে তিনি মেয়েকে নিয়ে বেশি অনিশ্চয়তায় ভুগতেন।তার মনে হতো রিফাত ওর মেয়েকে মেরে ফেলবে, একমাত্র মিস নাদিয়াকে ছাড়া কাওকে বিশ্বাস করতে পারতেন না। মানসিক সমস্যার ব্যাপারে রিফাত কোন এক সময় সরফরাজকে বলেছিল,এটা উনি জানাতেই আমি ওনার বেডরুম সার্চ করে রিপোর্টগুলো পেয়ে যাই। মিসেস বিভা রিপোর্টগুলো বাংলাদেশে আনা আপনার ভুল হয়েছিল।’
তমাল বিভার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘একটা মানুষের প্রাণ নেওয়া পৃথিবীর সবথেকে বড় অপরাধগুলোর একটি।মানছি রিফাত খারাপ ছিল, কিন্তু ভালো না লাগলে আপনি ওনাকে ডিভোর্স দিতে পারতেন!’
‘একটা মেয়ে হয়ে এতগুলো ডিভোর্সীর ট্যাগ কিভাবে লাগাতাম। অনিককে ছেড়ে যাওয়ার পর মা-বাবা, ভাইয়েরা আমার সাথে নিজেদের সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়,এটা কতো কষ্টের তা শুধুমাত্র আমি জানি।তাও অনেক চেষ্টা করে মা আর ভাইদের সাথে সম্পর্ক ভালো করেছি। আবার ডিভোর্স হলে ওনারা আমার সাথে চিরকালের মতো সম্পর্ক শেষ করে দিতেন।ছেলেমেয়েদের নিয়ে কিভাবে থাকতাম!তার থেকে এটাই ভালো সবাই আমাকে বিধবা হিসেবে জানবে।’
‘ভুল বললেন,সবাই আপনাকে খু’নি হিসেবে মনে রাখবে।এত চিন্তাভাবনা থাকার পরেও শুধুমাত্র রাগের বশে আপনি উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন। তবে মিস্টার অনিককে কেন ফাসালেন?’
বিভার কন্ঠে ক্ষোভ নিয়ে বললো,
‘কারণ আমি চাইনা ও ওই মেয়েটার সাথে থাকুক। আমার সহ্য হয়না অনিকের পাশে কাওকে দেখলে।আজ হোক কিংবা কয়েকবছর অনিককে বাবা ওকে ছাড়িয়ে নিতো। কিন্তু ততদিনে মেয়েটা তো আর ওর জন্য অপেক্ষা করতো না।’
তমাল হেসে বলল,
‘বড় অদ্ভুদ আপনারা। আপনাদের মতো মহিলাদের কাজ প্রাক্তন স্বামীর সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করা। আমার এখন কি মনে হচ্ছে জানেন,আপনি কাউকে ভালোবাসেননি, না কখনো ভালোবাসতে পারবেন।মাঝখান দিয়ে একজনের জীবন নষ্ট করলেন আরেকজনকে খু’ন করলেন। অথচো যাকে ফাসালেন সে কিন্তু একবারও আপনার নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেনি।এই কেসের তদন্ত না হলে তার জেল হতো, কিন্তু আপনার ভেতরে এতটুকু অপরাধবোধ কাজ করতো না। কখনো নিজের দোষ স্বীকারের কথা মনেও আসতো না।’
বিভা মাথা নিচু করে বসে ছিল।ও এবার চোখ তুললো।বললো,
‘শুনুন ,আমি আমার কাজের জন্য এতটুকু আফসোস করবো না।যেই আমার সন্তানের থেকে আমাকে দূরে সরানোর চেষ্টা করবে,তাকেই এভাবে সরিয়ে দেব।’
‘কিন্তু এসব করে লাভ কিছুই হলো না,এখন আপনি চাইলেও আপনার মেয়েকে পাবেন না। আপনার কতবছরের জেল হবে জানি না। ইরা ওর বাবার কাছে থাকবে,ওর সুন্দর জীবন নিয়ে শঙ্কা নেই। কিন্তু ওই ছোট্ট দুটি শিশু,যারা সবেমাত্র কথা বলতে শিখেছে, হাঁটতে শিখেছে ওদের কি হবে? মা-বাবা ছাড়া ওরা কিভাবে বেড়ে উঠবে?আপনার একটা ভুল সিদ্ধান্ত, আবেগকে প্রধান্য দেওয়া এতগুলো মানুষের জীবনে প্রভাব ফেললো। আপনার জন্য বাচ্চা দুটো তাদের শৈশব হারালো।’
সন্তানদের কথা মনে পড়তেই বিভা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। এতক্ষণের মানসিক বিকারগ্রস্ত মহিলাকে সন্তানের জন্য কাঁদতে দেখে উপস্থিত সবার মন খারাপ হলো।আর যাই হোক,বিভা খারাপ মা ছিলো না।
চলবে…
®️ সুমি খানম
#ম্লান_সন্ধ্যায় (২২)
পুলিশি ঝামেলায় সহজে কেউ জড়াতে চায় না, কেননা নিরাপরাধ হলেও থানা থেকে বেরোনোর ঝামেলায় বিরক্ত হবে না, এমন মানুষ কম।তাই সাধারণ জনতা পুলিশদের একরকম এড়িয়ে চলে। অনিকের জামিনের সব কাজ শেষ করতে করতে বিকেল গড়িয়ে গেল।অনিক শেষ কাগজটায় স্বাক্ষর করে তমালের দিকে এগিয়ে দিলে, তমাল পেপারগুলো উল্টে পাল্টে দেখে তারপর বললো,
‘আপনি খুব ভাগ্যবান,জানেন?’
অনিক ভ্রু কুঁচকে তমালের দিকে তাকায়। তমাল টেবিলের ওপর হাত দুটো রেখে অপেক্ষাকৃত নিচুস্বরে বললো,
‘এমন স্ত্রী পাওয়া ভাগ্য বৈকি!আমরা সবসময় মেয়েদের বলি অমুকের মতো স্বামী পেয়ে তুমি ভাগ্যবতী। কিন্তু কখনো কোন পুরুষকে এটা বলি না আপনি ভাগ্যবান তাই এমন স্ত্রী পেয়েছেন। গত দুদিনের ঘটনা দেখে স্বীকার করতে বাধ্য হলাম, আপনি ভাগ্যবান।’
অনিক কিছু বললো না, কিন্তু ওর মুখটা উজ্জ্বল দেখালো। তমালের মনে হলো এধরনের গোমড়া লোকের খুশি-আনন্দ বুঝতে চোখের দিকে তাকানোই যথেষ্ট। কেননা এরা না হাসলেও এদের চোখদুটো হাসে। তমাল ফের বলে,
‘স্ত্রীকে ভালোবাসেন?’
অনিক বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়।সে কি সত্যিই কোয়েলিয়াকে ভালোবাসে? কিন্তু হাতড়েও কোন সদুত্তর পায়না। বারবার শুধু একটা কথাই মনে পড়ে, কোয়েলিয়াকে ওর চাই।ওকে ছাড়া ও একটা সেকেন্ড ও থাকতে পারবে না।গত দুদিন ধরে একা একা বসে চিন্তা করেছে,ঠিক কিভাবে ও সবটা স্বাভাবিক করে নেবে। কিন্তু তেমন ভালো কিছু মাথায় আসেনি।তাই সবটা ও সময়ের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।
অনিক মৃদুস্বরে বললো,
‘জানি না। ভালোবাসার মানে কি, কিভাবে হয় এসব নিয়ে আগে নিজেকে সর্বজান্তা ভাবলেও এখন বিভ্রান্ত।’
‘আমি আপনার অগ্রজ হিসেবে একটি পরামর্শ দেব, এখন আর তাকে দূরে রাখবেন না। নিজের ইগোকে প্রাধান্য দেবার মতো ভুলটা কখনোই করবেন না। ভালোবাসার ক্ষেত্রে ইগো হলো বড় শত্রু।মেয়েরা সবসময় ভালোবাসার কথাটি ছেলেদের মুখ থেকে শুনতে চায়,তার দৃষ্টি দেখে বুঝে নেয়,স্পর্শে অনুভব করে। তাকে ভালোবাসার কথা বলতে হবে না, আপনার আচরণেই সে বুঝে নেবে। কিন্তু বেশি দেরি করবেন না,ওইযে কথায় আছে না,সময় গেলে সাধন হবে না।’
অনিক কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকালো।স্বল্পভাষী লোকের এই এক বড় সমস্যা,এরা সঠিক উপমা ব্যবহার করে কৃতজ্ঞতা জানাতেও বোঝেনা। তমালকে অবশ্য মনক্ষুণ্ণ দেখালো না।সে তো শুরুতেই ঘাড়ত্যাড়া লোকটাকে চিনেছিল।ও বললো,
‘মিস্টার অনিক,শুরুটা মন্দভাবে হলেও শেষটা সুন্দর হলে খারাপের গ্লানি আর থাকে না।’
ওরা উঠে দাঁড়ালো।অনিক তমালের সাথে করমর্দন করলো। মুখের ওপর থেকে কালো পর্দা সরিয়ে হেসে বলল,
‘অসংখ্য ধন্যবাদ অফিসার। কথাগুলো আজীবন স্মরণে রাখবো।’
‘আরো কয়েকজনের মতো আপনাদের কথাও আমার স্মৃতিতে থাকবে। হয়তো বৃদ্ধবয়সে কোন এক অবসরে গল্প করতে করতে বলেও ফেলবো আপনাদের অদ্ভুত প্রণয়ের কথা।’
অনিক হেসে তমালের কেবিন থেকে বেরোলো। বাইরে কোয়েলিয়া আর আফসার শিকদার অপেক্ষা করছিল। ওদের দেখে অনিক হাসলো। কিন্তু নিজের স্বভাবসুলভ জড়তার কারণে বাবা কিংবা স্ত্রীকে এতগুলো মানুষের সামনে জড়িয়ে ধরা হলো না।আগে আগে হেঁটে ও থানা থেকে বের হলো। নিন্দুকেরা থাকলে হয়তো বলতো, কেমন স্বার্থপর লোক!যারা দিনরাত দৌড়াদৌড়ি করে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ওকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে সাহায্য করেছে,তাদের সাথে কয়েকটা আবেগমাখা কথা বললো না!এতো অকৃতজ্ঞ মানুষ তো দেখিনি!
*
তমালের মনটা আজ খুব ভালো। পুলিশ হবার সুবাদে অনেকরকম মানুষ দেখেছে, বিভিন্নরকম ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। সবথেকে ওকে মুগ্ধ করে স্বামীর জন্য স্ত্রীর আকুলতার বিষয়টা।কেসের প্রথম দিন থেকে শেষ অব্দি সঙ্গীকে দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষমান স্ত্রীদের ও দেখেছে। ওর কাছে অনুরোধ করেছে,যেন বেশি মারা না হয়,একটু ভালো খাবারদাবারের ব্যবস্থা করে দেয়।কি সে আকুলতা,সে কি ভালোবাসা।স্বামী কয়েদি জেনেও দৃষ্টিতে আনেনি ঘৃণা, বরং প্রতিটা কথায় শুনিয়েছে আশার বাণী।
আবার এমনও হয়েছে স্বামীর জেল হয়েছে শুনে স্ত্রী খোঁজখবর নেয়নি, নতুন করে সংসার পেতেছে। বহুদিন আগের একজনের কথা ওর মনে পড়লো,নাম ছিল আসাদ মার্ডার কেসের আসামী। এলাকার মারামারিতে একজনের খু’নে ফেসে যায়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল।ও সেবার মানিকগঞ্জ থানায় ছিল। ছাড়ার দিন এলে কাগজপত্রে সাক্ষর করে আসাদ কতক্ষন ঠায় বসে ছিল। বহুদিন পর মুক্ত বাতাসের সংস্পর্শে এলেও ওর ভেতরে বাইরের জগতে মিশে যাবার আগ্রহ দেখা গেল না। তমালের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেই অনাগ্রহ ধরা পড়লে ও যখন জিজ্ঞেস করলো,তখন আসাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিল,
‘কার কাছে যাব,স্যার।বাপ মা বহু আগে চলে গেছে।খু’নি ভেবে বৌ বাচ্চারাও দূরে সরে গেছে। বছরখানেক খোঁজখবর নিয়েছিল, এরপর আর তাদের চোখের দেখা দেখিনি।আগে আমি সবার কাছে আসাদ ব্যাপারী ছিলাম, এখন আমাকে ডাকবে আসাদ খু’নি।সবাই আমার দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকাবে, সেই বাকা নজর কিভাবে উপেক্ষা করবো?এখান থেকে বেরিয়ে কোথায় যাব?এই পৃথিবীতে অনেক জায়গা আছে, কিন্তু কয়েদীদের জন্য তা ফাঁকা নেই।কেউ আমাকে কাজ দিতে চাইবে না? বরং খু’নি জেনে দূরদূর করে তাড়াবে। আমরা তো অপরাধের শাস্তি পেয়েই যাই, তবুও কেন সমাজ আমাদের শুধরাতে দেয়না?’
তমাল আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিল। একবার ইচ্ছে হলো আসাদকে একটি কাজ জোগাড় করে দেয়। কিন্তু মনের কথাটি মুখে বলার মতো সাহস ছিল না। শুধু বলেছিল,
‘সৃষ্টিকর্তা সবার জন্য কোন না কোন ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আপনি হতাশ হবেন না।’
‘খোদা কয়েদীদের জন্য অপমান ছাড়া আর কিছুই রাখেনি। আমি চলি স্যার, যখন কোন স্থান পাবো না, অনাহারে থাকবো তখন হয়তো আবার কোন অপরাধ করবো।আর যাই হোক সরকার জেলে মাথা গোঁজার ঠাঁই আর খাবারের ব্যবস্থা করতে কার্পণ্য করেনি। এমনিতেই তো আমি একজন দাগী আসামি।জেলে মরলে হয়তো অনেক মানুষ আমার জানাজা পড়বে। কিন্তু সভ্য সমাজে হয়তো সেটুকু পাবো না ।’
আসাদ ময়লা শার্টের ওপর চাদরখানা জড়িয়ে চলে যায়। তমাল সেদিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।ওর মানসপটে সেই দাড়ি গোঁফে পূর্ণ কোকড়াচুলে ঢাকা লোকটার করুন চোখদুটোকে মনে পড়ে।ও চাইলে হয়তো লোকটাকে কোন না কোন কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারতো। কিন্তু ওর সে সাহস নেই ।রোজ এমন অনেক আসামী ছাড়া পায়,এরা কেউ নীরিহ কেউ ভয়ঙ্কর।আবেগ দিয়ে পৃথিবী চলে না।আবেগী হওয়া একজন কিশোরীকে মানায়, কোন পুলিশ অফিসারকে নয়।
কে জানে আসাদ এখন কোথায় আছে। হয়তো আবার কোন অপরাধ করে জেলে ঢুকেছো, নয়তো কোথাও কাজ করছে। বহুদিন বাদে তমালের চোখের সামনে আসাদের মুখটা ভেসে এলো। তমালের মনটা খারাপ হয়ে যায়। নিজের মাথায় চাটি মেরে ও ভাবনার মোড় ঘোরায়।আজ গ্লানি জাগানিয়া কিছু ভাববে না, আজ ভাববে শুধু ভালোবাসা,প্রণয় নিয়ে।
বহুদিন বাদে ও একটা দুঃসাহসী কাজ করে বসলো।ওর গিন্নির নাম্বারে ফটাফট মেসেজ টাইপ করে মাথা গরম থাকতেই সেন্ড করলো।ওর গিন্নি হয়তো মেসেজ পড়ে অবাক হবে। হয়তো বিস্ময়ে আচ্ছন্ন হয়ে তরকারি পুড়িয়ে ফেলবে, নয়তো পানির ট্যাপ বন্ধ করতে ভুলে যাবে, কিংবা মেয়েকে ভাত খাওয়াতে ভুলে যাবে।যাক! সংসার, চাকরি জীবনে যে যান্ত্রিকতা এনে ভেতরের প্রেমিক সত্তাকে চেপে রেখেছে,আজ তা প্রকাশ পাবে। আবার হয়তো জীবনের চাপে সে সত্তা ঢাকা পড়বে, তারপর কোন একদিন এমন যুগলদের দেখে পুনরায় প্রেমিক মন জেগে উঠবে। এভাবেই তো জীবন চলে, জোয়ার ভাটার ন্যায়।
*
অনিক পুরো রাস্তায় কারো সাথে কথা বলেনি, পেছনের সিটে চুপচাপ বসেছিল। আফসার শিকদার দুএকটা কথা তুলে যখন দেখলো ছেলের কথা বলায় আগ্রহ নেই, তখন আর কথা বাড়ায়নি।অনিক বাড়িতে ফিরেই সোজা নিজের ঘরে ঢুকলো। জেলের পরিবেশের অস্বস্তি কাটাতে ওকে সবার আগে ফ্রেশ হতে হবে। দুদিনেই চেহারার হাল দেখার মতো হয়েছে,আর অ্যালকোহল ছাড়া শরীরটাও ঝিমিয়ে গেছে।
লম্বা শাওয়ার নিয়ে শরীরের ম্যাজম্যাজে ভাবটা কমলেও ঝিমুনিটা যায়নি। তালেবকে ফোনকলে দ্রুত বিয়ার আনার তাগিদ দিয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়ে। নিজের ঘরে দিনের পর দিন একা থাকা আর জেলে থাকার মধ্যে অনেক তফাৎ। স্বেচ্ছায় বন্দি থাকা আনন্দের, কিন্তু অন্যের হাতে বন্দী মানে পরাধীনতা। জেলের গুমোট অন্ধকার দুদিনেই ওর শরীরের সমস্ত শক্তি শুষে নিয়েছে।
কোয়েলিয়া ভেতরে ঢুকলো। অনিক এসময় ওকে আশা করেনি। কোয়েলিয়া টেবিলে বোতল গ্লাস রেখে জানালার পর্দা সরিয়ে বারান্দায় গেল। বাইরে হাড়কাঁপানো শীত।ও বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারলো না। ভেতরে এসে দেখলো,অনিক ততক্ষনে ছুরি চামচ চালিয়ে স্টেকের একাংশ মুখে পুরে নিয়েছে, কিছুক্ষণ পর লালচে তরলে একটা চুমুক দিলো।এ যেন জল দিয়ে ওষুধ খাওয়ার মতো। মদ্যপান যে একটা আর্ট সেটা অনিকের সাথে বিয়ে না হলে ও কখনোই জানতো না। তাছাড়া বিয়ার,হুইস্কি,টাকিলাসহ মদের এত যে প্রজাতি আছে তা অনিকের সুবাদে জেনেছে।এতে যতটুকু জ্ঞান হয়েছে,তাতে অনায়াসে বারে কাজ জোটাতে পারবে।
পূর্বে ধারণা ছিল ছ্যাকা খাওয়ার পর মানুষ অতিরিক্ত খেয়ে মাতাল হয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খায়।হাতে একটা বোতল,তাতে পানির মতো তরল,ঢকঢক করে গেলে। বিয়ের পর থেকে অবশ্য অ্যালকোহলটা ভালো করেই চিনতে পেরেছে,এও জানে কখন ওকে মদের সাথে সাইড ডিশ হিসেবে কি দিতে হবে। কোয়েলিয়ার মাঝেমাঝে নিজের ভাগ্যের ওপর অভিযোগ করতে ইচ্ছে করে। একজন মেয়ে তার বিপরীত মানুষটাকে যেখানে একটা সিগারেট ছুঁতে দিতে রাজি নয়, সেখানে ওর স্বামীকে মদ খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হয়। এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা দেখতেও হচ্ছে।
‘কোন সমস্যা?’
অনিকের ডাকে কোয়েলিয়া চমকে ওঠে।ও আনমনে কিসব ভেবে চলেছিল।ও মৃদুস্বরে বললো,
‘বেশি খাবেন না প্লিজ।’
অনিকের ভ্রুযুগল কুঞ্চিত দেখায়।কেউ ওর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা মানে ওর রাগ, বিরক্তির শিকার হওয়া।ও কঠোর গলায় বলল,
‘শুনুন, আমি কারোর মতামতের তোয়াক্কা করিনা। আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি নিই।কারো কথায় আমি মদ খাওয়া বন্ধ করতে পারবো না।’
কথাগুলো কোয়েলিয়া এড়াতে পারলো না। সোজা গিয়ে ওর আত্মসম্মানে আঘাত হানলো।ও মাথা উঁচু করে সোজা অনিকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমি নিজেও জানি আপনার জীবনে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো আমি কেউ না।আর কখনো আপনার ভালো মন্দে মাথা ঘামাতে অন্ততঃ আমাকে দেখবেন না।’
কোয়েলিয়া বড় বড় পা ফেলে অনিকের কক্ষ ত্যাগ করলো।সে যদি কোন রাজপুত্র হয়েও থাকে ও ও কোনো দাসী নয়।যেখানে খুশি,যা খুশি করুক, কখনো ওর মতামতের তোয়াক্কা করেনি, তাহলে ও কেন বিনা কারণে ওর কথা শুনবে,ওর ভালো হবার ব্রত গ্রহণ করবে!পারবে না সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে।
*
সাফিয়া কে সরফরাজ নিয়ে এসেছে।বাচ্চাদুটো ওদের নানীর কাছে আপাতত আছে। আগামীকাল আদালতের শুনানির পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, বাচ্চাদুটো কোথায় থাকবে। সাফিয়া ও বাড়িতে খুব কান্নাকাটি করেছে, কেননা ওরা একরকম ওর কাছে অচেনা। সরফরাজ যে কারো সাথেই খুব সহজেই ভাব জমিয়ে ফেলে। সাফিয়া ওকে পেয়েই বায়না ধরেছে মায়ের কাছে যাবে। সরফরাজ অনেক বুঝিয়ে অনিকের কাছে নিয়ে এসেছে। খাবার টেবিলে সারাহ অনুপস্থিত। কোয়েলিয়া সবকিছু গুছিয়ে চলেই আসছিল, নাজমা বললো,
‘কোয়েলিয়া আসো, একসাথে ডিনার করি।’
কোয়েলিয়া আপত্তি জানায়।পূর্বের কথা ও এখনও ভোলেনি। এদের সাথে এক টেবিলে বসে খাওয়াটা একরকম অসম্ভব হয়ে গেছে। আজকাল এ বাড়ি,এ বাড়ির মানুষজনকে আর ভালো লাগছে না। বারবার মনে একটা প্রশ্ন জেগে উঠছে,এ বাড়ির সাথে তার কি সম্পর্ক? কিসের রেশ ধরে এ বাড়িতে পড়ে আছে?কেন এদের উপেক্ষা সহ্য করছে?এক বাড়িতে থেকে নাজমা আফসার শিকদার ওর সাথে যেখানে ছাড়াছাড়া কথা বলে, সেখানে অন্যদের সাথে তার আচরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন।এমন পরিস্থিতিতে আর যেই সহ্য করে মাটি কামড়ে পড়ে থাকুক,ও থাকতে পারবে না।
ওর ঘরে যাওয়ার পথে ডোরবেল বেজে উঠলো। কোয়েলিয়া সদর দরজা খুলে অচেনা একজনকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তুহিন ইতস্তত করে বললো,
‘স্যার কি বাড়িতে আছে।’
কোয়েলিয়া জবাব না দিয়ে চলে গেল। তুহিন এতদিন পর মেয়েটাকে দেখতে পেল।দেখবেই বা কিভাবে আফসার শিকদারের পিএ হলেও যখন তখন এবাড়িতে আসার অনুমতি নেই।ও খুব অবাক হয়েছিল,যখন জানতে পারলো অনিকের এটা দ্বিতীয় বিয়ে,এমনকি একটা মেয়েও আছে। অথচও আফসার শিকদার কখনোই একথা বাইরে আসতে দেয়নি। শুধুমাত্র মাকসুদ জানতো এ ব্যাপারটা। তুহিনের খারাপ লাগে মেয়েটার কথা ভেবে, অনিক তো মেনেই নেয়নি। নিজের বস আর তার বোনকে ভালো করেই চেনে, মেয়েটার ধৈর্য্য না থাকলে এতগুলো দিন থাকতে পারতো না।
*
রাত প্রায় দেড়টা বাজে ,অনিক বিছানায় শুয়ে হাঁসফাঁস করছে। তখনকার কথাগুলো ও ওভাবে বলতে চায়নি। কিন্তু ওর মন আর মুখের ভেতর সবসময় দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। মনের কথা কিছুতেই মুখে আসে না আর মুখের কথাটাও পুরোপুরি মন থেকে বলে না।সারাদিনের ধকলে অনিক ক্লান্ত,গত দুরাত একরকম নির্ঘুম কাটিয়েছে,তবুও ওর ঘুম আসছে না। কোয়েলিয়ার পাংশুবর্ণ মুখখানা ওকে ঘুমুতে দিচ্ছে না।অনিক শোয়া থেকে উঠে বসে।ওর পাশেই সাফিয়া গুটিগুটি মেরে শুয়ে আছে। মেয়েটার অভ্যাস খুব ভালো,গায়ে হাত-পা তোলেনা। অনিক কিছুক্ষণ ঘরময় পায়চারী করে, তারপর সিদ্ধান্ত নেয়,এই রাতেই ও কোয়েলিয়ার সাথে সবকিছু ঠিকঠাক করে নেবে।
কোয়েলিয়া ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো। নয়তো অনিকের করাঘাতের তাড়নায় এতক্ষন দরজা খুলে যেত। দরজায় শব্দ তুলে,ডাকাডাকি করেও লাভ হলো না। কোয়েলিয়া দরজা খোলেনি। বাড়াবাড়ি করা অনিকের স্বভাবে নেই ও ওপরে চলে গেল। অপেক্ষা করতে লাগলো আগামীকাল কোয়েলিয়ার মুখোমুখি হবার।
কোয়েলিয়া পণ করেছে একটা বোঝাপড়া না হওয়া পর্যন্ত ও অনিকের সাথে কথা বলবে না। অনিককে হয়তো ও ভালোবাসে, কিন্তু তার মানে এই নয় , ভালোবাসার খাতিরে আত্মসম্মান খুইয়ে এ বাড়িতে থাকবে।
*
আদালতের প্রথম শুনানিতে খু’নের দায়ে বিভার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলো।যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে একটা খুনের জন্য ৩০ বছর কারাবাসের ব্যাপারটা নিতান্তই হাস্যকর। কেননা অনেকে চার-পাঁচটা খু’ন করেও নিশ্চিন্তে বাইরের হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেখানে বিভার ক্ষেত্রে এমন রায় হবার কারণ রিফাতের পরিবারের তৎপরতা। এছাড়া কোর্টে রিফাতের পক্ষে জাঁদরেল মার্কা উকিল থাকলেও বিভার কোন উকিল থাকাতো দূর বিভার পরিবারের কেউ উপস্থিত পর্যন্ত ছিল না।রায় শুনে বিভার ভাবান্তর হলো না। গতকাল থেকেই ও বোধহয় জানতো এমন কিছুই হবে। তাইতো আদালতে ও স্বেচ্ছায় সবটা স্বীকার করে নেয়।
আফসার শিকদার আর অনিক কোর্টে এসেছিল। আদালতের রায় ওদের মনঃপুত হয়নি।বিভাকে নিয়ে যাওয়ার পর ,অনিক একজন নামকরা উকিলের সাথে দেখা করে বিভার পক্ষে শাস্তি কমানোর আপিল করার সিদ্ধান্ত নিলো। সবরকম কথাবার্তা শেষ করে ওরা যখন গাড়িতে বসলো, তখন বিকেল নেমে এসেছে। শীতের বিকেল ক্ষণস্থায়ী, একটু পর সন্ধ্যা গড়াবে। শহরজুড়ে কাকেরা তারস্বরে চেঁচাচ্ছে, যানবাহন মানুষের আওয়াজে অনিকের মাথা ধরে গেল। আফসার শিকদার এতক্ষনে চেপে রাখা কথা বলার সুযোগ পেল। অনিকের সিদ্ধান্ত ওনার মোটেও পছন্দ হয়নি, প্রাক্তন স্ত্রীর প্রতি এতো মাথাব্যথা ভালো লাগার মতো বিষয় নয়।
ভদ্রলোক চড়া গলায় বলল,
‘তুমি কি চাচ্ছো বলো তো?যেখানে বিভার পরিবারের কোনো আগ্রহ নেই, সেখানে ওর শাস্তি কমানোর জন্য তোমার মাথাব্যাথার কারণ কি হতে পারে? তুমি কি ভুলে যাচ্ছ,সে শুধুমাত্র তোমার প্রাক্তন, তোমাদের ভেতর কোনোরূপ সম্পর্ক নেই এবং বর্তমানে তুমি বিবাহিত।’
‘আমি কিছুই ভুলিনি এবং বিভাকে পুনরায় আমার জীবনে আনাতো একেবারে অসম্ভব।মনে হলো এতবছর জেলে থাকার শাস্তিটা ওর জন্য বেশি তাই ওর পক্ষে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’
‘সবসময় মনের কথা শোনাটাও কি ঠিক! তুমি একজন সম্পর্কহীন মানুষের জন্য অযথা টাকা নষ্ট কেন করবে?’
‘ডিভোর্সের সময় বিভা তার প্রাপ্য টাকা নেয়নি। এখন সেই টাকাগুলোই ওর জন্য ব্যয় করবো।’
‘যা খুশি করো। তবে মেয়েটাকে ঠকানোর আগে অন্ততঃ দশবার ভাববে।’
‘অযথা চিন্তার কারণ নেই।বিভা স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিল,তাই তাকে পুনরায় জীবনে আনার প্রশ্নই আসে না।আর কাওকে ঠকানো আমার ধাতে নেই। খুব শীঘ্রই সবকিছু ঠিকঠাক করে নেব।’
*
সকালে আফসার শিকদার,নাজমা এবং সরফরাজ নাশতা করছিল। কোয়েলিয়া ওদের সামনে গিয়ে বললো,
‘আমি চলে যাচ্ছি।’
ভাইবোন খাওয়া থামিয়ে বিস্ফোরিত নেত্রে কোয়েলিয়ার দিকে তাকালো। সরফরাজকে অবশ্য কোন কিছুই বিব্রত করতে পারে না।ও নিজের মতো খাচ্ছে। নাজমা বললো,
‘কোথায় যাচ্ছো?’
‘জানি না কোথায়।এটা জানি এবাড়িতে আর ফিরবো না।’
‘হঠাৎ কি হলো! আমরা তো তোমার সাথে খারাপ আচরণ করিনি কিংবা কোন তিক্ত কথাও বলিনি।’
কোয়েলিয়া সে কথার জবাব না দিয়ে আফসার শিকদারকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘আমার বাবার সাথে আপনার যা বোঝাপড়া আছে করতে পারেন।যারা স্বেচ্ছায় আমাকে জলে ফেলে দিয়েছে, তাদের নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। কিন্তু এমন পরিচয়হীন হয়ে আপনাদের বাড়ি থাকতে পারবো না।’
‘কে বলেছে তোমার পরিচয় নেই, তুমি এবাড়ির একমাত্র ছেলের স্ত্রী।’
নাজমার কথার প্রতিত্তরে কোয়েলিয়া হাসলো।সে হাসি যে ওদের বিদ্রুপ করছে তা ওরা ভালোই বুঝলো। কোয়েলিয়া বললো,
‘আমার কখনো কিন্তু মনে হয়নি, আমি এ বাড়ির একজন সদস্য ।আর যে বাড়ির ছেলে আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানে না, সেখানে সম্পর্কটাকে আমার কাছে নিতান্তই প্রহসন মনে হয়।আপনাদের মতো স্বার্থপরদের সাথে থেকে আমার জীবন থেকে অনেককিছুই হারিয়ে যাচ্ছে। নিজেকে এর আগে কখনো এতো ছোট ভাবিনি ,যেটা আপনাদের সাথে থেকে মনে হয়েছে। আমার চামড়া মেঘের মতো অন্ধকার হলেও আমার সত্ত্বা সূর্যরশ্মির ন্যায় উজ্জ্বল। আমি দুঃখের ভেতরে বড় হলেও, সেই বিষাদের ভেতর থেকে আনন্দ খুঁজে বড় হয়েছি। কিন্তু এ বাড়িতে আসার পর আমার ভেতরে যান্ত্রিকতা চলে এসেছে। আমি ভালো রকমেরই বুঝেছি উঁচু শ্রেণীর সাথে কখনো নিন্ম মধ্যবিত্তের সম্পর্কটা মসৃণ হয়না। আমাকে আপনারা এতটাই খাটো চোখে দেখেন যে আমি এক পা সামনে এগোতেও বিব্রত হই।তাই যেখানে শান্তি পাবো,যেখানে গেলে কেউ ছোট করে দেখবে না, সেখানেই ঠাঁই গড়বো।’
কোয়েলিয়া নাজমা আর আফসার শিকদারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সামনের দিকে পা বাড়ালো। তবে কয়েক কদম ফেলার পর অনিক ওর হাত ধরে ফেললো। কঠোর গলায় বলল,
‘কোথায় যাচ্ছ?কি সমস্যা তোমার? সকাল সকাল ঝামেলা না করলে ভালো লাগছে না।’
কোয়েলিয়া ওর হাত ছাড়িয়ে নিলো।কন্ঠে বিরক্তি ঢেলে বললো,
‘এখানে কেন থাকবো আমি?এ বাড়ির সাথে কি সম্পর্ক আমার?’
‘তুমি আমার ওয়াইফ, এই সম্পর্ক কি থাকার জন্য যথেষ্ট নয়!’
‘হ্যাঁ, আমি তো আপনার নামমাত্র স্ত্রী। কখনো স্বামীর দায়িত্ব পালন করছেন। আপনি বা আপনারা কেউ আমাকে ততটুকু মূল্য দেন, যতটুকু আমার প্রাপ্য।’
‘তুমি ভুল বুঝছো।’
‘আমি ঠিকই বুঝেছি। আপনার সাথে বিয়ের পর আমি অপমান ছাড়া আর কিছুই পায়নি। আপনার বাবা নিজের স্বার্থের জন্য আমার সুন্দর জীবনে বিষ ঢেলে দিয়েছি।আর আপনি, ঠিকভাবে কটা দিন কথা বলেছেন আমার সাথে? বরঞ্চ বারবার অপমানের পরেও আমি আপনার কাছে বেহায়া সেজেছি। এখন আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। আমি আর একমূহুর্ত এখানে থাকতে পারবো না। না আপনাকে সহ্য করতে পারবো।’
‘বুঝতে পারছি তোমার মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। তোমাকে সাইকোআর্টিস্টের কাছে নিতে হবে।’
‘এখনো মানসিক রোগী হইনি,কিন্তু আপনাদের সাথে থাকলে হয়ে যাব।শুনে রাখুন,যদি কখনো মদ ছাড়তে পারেন, তখন আমি আসবো।অবশ্য আমি কে যে আমার জন্য আপনি মদ ছাড়বেন! তারথেকে ভালো,আপনি নিজের ক্লাসের একজনকে বিয়ে করে শেষে দুজনে একসাথে বসে মদ খাবেন। কেমন!’
কোয়েলিয়া বেরিয়ে যাবার উপক্রম করতেই পেছন থেকে রাশভারী গলার আওয়াজ আসে।
‘ওখানেই দাঁড়াও।এক পা এগোলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। তুমি কোথাও যাবে না।’
কোয়েলিয়া পেছন ফেলে,কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে,
‘আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি নেব,সে অধিকার আপনাকে দিইনি।’
অনিক হতবুদ্ধির ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো।ওর যে এখন কোয়েলিয়াকে থামানো উচিত, সেটা একবারও মাথায় এলো না। মেয়েটা কিনা ওর বলা কথা এভাবেই ফেরত দিলো।গতরাত থেকে একরকম উন্মুখ হয়ে ছিল, কোয়েলিয়ার সাথে কথা বলে সব ভুল শুধরে নেবে। কিন্তু মেয়েটা ওকে ধরা দেয়নি।আর আজ কিনা এভাবে চলে গেল।যেখানে খুশি যাক, মেয়েটা ওকে একরকম অপমান করেছে , তাকে ফিরিয়ে আনার কোন মানেই হয়না। কোয়েলিয়া ওকে অপমান করেছে ভেবেই ওর রাগ হলো।গো ধরে বসলো, ওকে ফেরত আনতে কোনোমতেই যাবে না ।
নাজমা বিরক্তি নিয়ে বললো,
‘তুমি এমন কেন,অনিক! ওকে আটকালে না কেন?’
‘সে আমাদের অপমান করেছে মণি।’
‘ও তো ভুল কিছু বলেনি।সে অন্যপরিবেশে বড় হয়েছে, তোমার মতো চুপচাপ ঘরকুনো স্বভাব তার না। তুমি এমনিতেও ওর সাথে ভালো আচরণ করোনি। এতদিন ও তোমাকে সহ্য করেছে এর জন্য তোমার ওকে মাথায় করে রাখা উচিত। অথচও তুমি ওকে থামালে না। জোর করে ঘরে আটকে রাখতে পারলে না।’
অনিকের রাগ পড়ে গেল।ও নাজমার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এখন আমি কি করবো মণি।’
‘তুমি কি দুধের শিশু!আগে একটা বিয়ে করেছ,মেয়েও আছে, তুমি হবে বৌপাগল। অথচও আমার তোমাকে গাধা ছাড়া অন্য কিছু মনে হচ্ছে না।এক কাজ করো, কোন মাঠে গিয়ে ঘাস খাও।’
আফসার শিকদার হেসে দিলো। অনিক গোমড়া মুখে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো?’
‘তাও ভদ্রভাবে করেছি। আমার উচিত ছিল, তোমার মুখে ঘাস ঢুকিয়ে দেওয়া।মদ খেয়ে মগজ পচিয়ে ফেলেছো তুমি।ও তোমার ওপর রাগ করে চলে গেছে, এতটুকু বোঝার মতো তোমার সেন্স নেই। এখন তুমিই ওকে ফিরিয়ে আনবে।ওর সামনে প্রতিজ্ঞা করবে,মদ না ছোঁয়ায়।তাও যদি না আসে তো পায়ে ধরবে।’
‘আমি পায়ে ধরতে যাবো কেন?’
‘তাহলে ওর আশা ছেড়ে তৃতীয় বিয়ের প্রস্তুতি নেও। এবার এক্সিডেন্ট কেন আইসিইউতে থাকলেও আমরা কোয়েলিয়াকে আনতে যাবো না।কি বলো দাদাভাই।’
আফসার শিকদার বোনের কথায় সম্মতি জানায়। অনিককে আর কিছু বলা লাগল না,ও গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
চলবে…
®️ সুমি খানম