#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_১৩
#Saji_Afroz
রেস্টুরেন্টে বসে ফুয়াদের জন্য অপেক্ষা করছে দিশা। ফুয়াদের বলা সময়েই ও চলে এসেছে। প্রায় দশ মিনিট হয়ে যায়। কিন্তু ফুয়াদ এখনো আসলো না। দিশার কাছে এই দশ মিনিট দশ বছরের মতোন লাগছে। কী এমন প্রমাণ আছে ফুয়াদের কাছে তা জানার জন্য ছটফট করছে ও। অবশেষে
ফুয়াদের দেখা পায় ও। সাথে রয়েছে একটি মেয়ে। দু’জনকে দেখে বসতে বলল আইরা।
মেয়েটি কে এসব ও জানতে চাইলো না। সরাসরি বলল, প্রমাণ?
ফুয়ার আইরার দিকে তাকিয়ে বলল, ও প্রমাণ। ওর নাম আইরা।
-উনি কে? উনি প্রমাণ বলতে?
-আইরা হলো রাদিনের প্রথম স্ত্রী। যার সঙ্গে ওর এখনো ডিভোর্স হয়নি। কিন্তু প্রক্রিয়া চলছে।
দিশা এটা শুনে একেবারেই ভেঙে পড়ে। অন্যকিছু বলার আগে ওর সামনে আইরা ও রাদিনের কিছু ছবি ও বিয়ের কাবিননামার ফটোকপি রাখা হয়। একে একে সব দেখে দিশা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় যে, মেয়েটি ওর স্ত্রী।
দিশা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। ফুয়াদ ওর অবস্থা বুঝতে পেরে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয়। যা ঢকঢক করে পুরোটাই পান করে দিশা। এরপর লম্বা একটা দম ফেলে ওদের ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ফুয়াদ ওকে এগিয়ে দিতে চাইলেও রাজি হয় না ও। নিজেই বাসায় ফিরে আসে।
কিছুক্ষণ নিজেকে সময় দেয় দিশা। স্মৃতিচারণ করে রাদিনের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো। এতবড়ো ধোকাটা ওকে দিতে পারলো রাদিন! একবারের জন্যও মনে হয়নি, রাদিন ওকে ঠকাচ্ছে!
নিজেকে শক্ত করে নেয় দিশা। ফোন দেয় রাদিনকে।
রাদিন রিসিভ করে বলল, হ্যালো জান!
কিছু না বলে সরাসরি ওকে প্রশ্ন করলো, আইরা কে?
নামটা শুনে চমকায় রাদিন। দিশা আইরার নাম জিজ্ঞাসা করছে! ও কী সব জেনে গেছে?
রাদিন নিশ্চুপ দেখে দিশা বলল, আমি সব জেনে গেছি। তুমি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারলে!
রাদিন একটু থেমে বলল, দিশা! আমি তোমাকে ঠকাইনি দিশা।
-তাহলে? কী করেছ এতদিন? কী সাফাই দেবে তুমি?
-এটা ঠিক যে আমি বিবাহিত। কিন্তু আইরাকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি। আমাদের বিয়ের আগেই ডিভোর্স হয়ে যাবে।
-এসব লুকানোটা কী তোমার কাছে ঠকানো মনে হচ্ছে না?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি। তাই প্রাপ্য সম্মান দিয়েই নিয়ে আসব বাসায়। আইরার কথা কেউ জানে না! ওর সঙ্গে সব সম্পর্ক শেষ আমার। প্লিজ এসব নিয়ে ভেবো না।
কত সহজেই কথা গুলো বলে দিলো রাদিন! এভাবে নিশ্চয় আইরাকেও একদিন স্বপ্ন দেখিয়েছিল! রাদিন ও আইরাকে পাশাপাশি কল্পনা করতেই দিশার বুকটা কেপে উঠে। রাদিন শুধু ওর নয় ভাবতেই কেমন যেন লাগছে ওর। আইরার সঙ্গে সেসব রাদিন করেছে, যা দিশার সাথে করেছে। বরং আরও বেশি! আইরা যে ওর স্ত্রী!
দিশা ফোনের লাইন কেটে ফোনটা সুইচড অফ করে দেয়। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো ও। কান্নার শব্দ শুনে দিলোরা খাতুন উপস্থিত হোন। তিনি দিশাকে নিজের কাছে টেনে এনে বললেন, কী হয়েছে! বল আমাকে?
দিশা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল, রাদিন আমাকে ঠকিয়েছে মা! ওর আরেকটা বউ আছে।
-মানে?
সবটা শুনে দিলোরা খাতুন বললেন-
ধীরে বল! তোর বাবা যেন না জানে কিছু।
-জানলেও কী! সব শেষ।
-কিচ্ছু শেষ হয়নাই।
-মানে?
-রাদিন বললোই ও মেয়েটাকে ছেড়ে দিচ্ছে।
-কিন্তু মেয়েটা ওর বউ তো ছিল?
-ছিল। এখন নাই।
-এসব আমি মানতে পারছি না মা।
-মানতে তোকে হবেই। কেন জানিস?
-কেন?
-এই আরাম আয়েশের জীবনের জন্য। রাদিন ছাড়া যেটা অসম্ভব। অতীতকে ভুলে যা। রাদিনের কাছে যে সুখটা পাবি সেটা আর কোথাও পাবি না।
মা এর কথা শুনে কান্না থামালো দিশা। ও কাঁপা স্বরে বলল, এত সহজে ওকে ক্ষমা করতে বলছ?
-সহজে ক্ষমা করবি না। কিন্তু করবি।
-কী করব?
-ওর ভুলের মাশুল ওকে দিতে হবে। আমি যা যা বলছি শোন। আমার কথা মতো চলবি জীবনে রাজ রানী হয়ে থাকবি। নাহয় আমার মতো কষ্ট করে শখ অপূরণ করে পার করতে হবে জীবন।
রাহাত খান ও হাসিনার সামনে বসে রয়েছে দিশা ও ওর মা। তাদের সবটা জানিয়েছেন দিলোরা খাতুন। সব শুনে তারা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ছেলে এসব কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললো আর তারা কিছুই জানেই না!
রাদিন বাড়ির বাইরে ছিল।
হাসিনা খানের ফোন পেয়ে চলে আসে বাসায়। ও আসতেই রাহাত খান গালে একটা কষে থাপ্পড় বসিয়ে দেন। রাদিন অবাক হয়ে বলল, বাবা!
-কী বাবা! গোপনে একটা বিয়ে করে রেখেছ। এখন আবার নিজের পছন্দেই বিয়ে করতে চাইছ আরেকটা৷ এসব কী শুরু করেছ তুমি?
রাদিন নরমস্বরে বলল, আইরা আমার ভুল ছিল বাবা! আর দিশাকে আমি সত্যি ভালোবাসি।
দিলোরা খাতুন রাদিনের মা এর উদ্দেশ্যে বললেন, আমার মেয়ে নিয়ে সেদিন বাজে কথা বলেছিলেন না? দেখলেন এখন! নিজের ছেলে কেমন নিজেই দেখুন।
রাদিন ওদের পাশে এসে বলল, বিশ্বাস করুন আন্টি! আমি দিশাকেই ভালোবাসি।
-করতে পারছি না বিশ্বাস। কারণ এভাবে নিশ্চয় আইরাকেও পটিয়েছিলে।
-আন্টি আমি ক্ষমা চাইছি। প্লিজ বিয়েটা ভাঙবেন না। আমি আইরাকে ছেড়ে দিচ্ছি বিয়ের আগেই!
-তোমার কাছে কোন ভরসায় মেয়ে দেব?
-কী গ্যারান্টি দিতে হবে আমার?
-দিতে তো হবেই কিছু।
-বলুন আপনি।
-আমার মেয়ের একাউন্ট এ টাকা দিতে হবে। কোটি টাকা হবে ওর কাবিন। সেসব অগ্রীম পরিশোধ করতে হবে। যদি এই গ্যারান্টি দিতে পারো তবেই এসো।
হাসিনা খান বললেন, সুযোগের অসৎ ব্যবহারটা করেই নিলেন?
-ছেলে অসৎ কাজ করেছেন সেদিকে খেয়াল রাখতে পারেননি। অন্যকে কথা শোনাতে ভুলেন না।
এই বলে দিশাকে নিয়ে বেরুলেন তিনি। রাহাত খান রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে রইলো রাদিনের দিকে। রাদিন বলল, বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে।
-সেই ভুলের মাশুল আমাকে কোটি টাকা দিয়ে দিতে হবে এখন?
হাসিনা খান বললেন, আইরা মেয়েটা কেমন? কেন ওকে ছাড়ছিস! আমাকে বল সমস্যা কী!
-ও আমার জীবনের ভুল মা।
-দিশা সঠিক কিভাবে বুঝছিস? দেখেছিস মা মেয়ে কতটা লোভী!
রাহাত খান বললেন, আইরাকে যে ছাড়বি ওর কাবিন কত ছিল?
-দশ হাজার।
একথা শুনে তাদের চোখ কপালে উঠে যায়। হাসিনা খান বললেন, মাত্র দশ হাজার?
-হুম। ওর চাহিদা ছিল না।
হাসিনা খান বললেন, আর ওমন একটা মেয়েকেই তুই ছেড়ে দিচ্ছিস?
-তুমি ওসব বুঝবে না মা। প্লিজ আমাকে সাহায্য করো তোমরা। দিশাকে না পেলে আমি আত্মহত্যা করব।
এই বলে নিজের রুমে চলে যায় রাদিন। রাহাত খান বললেন, মান সম্মানের খাতিরে এই ছেলের সব দোষ আড়াল করতে হচ্ছে। দিশাকে বউ হিসেবে না পেলে ও তো আরও তামাশা করবে। কী করব এখন!
বাসায় এসে মা এর উদ্দেশ্যে দিশা বলল, কী মনেহয়? ওরা রাজি হবে তোমার শর্তে?
-অবশ্যই হবে! দেখলি না রাদিনের অবস্থা। ওর জন্যই ওরা রাজি হবে।
একথা শুনে হাসি ফোটে দিশার মুখে।
রাদিনের সত্যিটা জানার পর ওর প্রতি ঘৃণা কাজ করলেও মা এর কথা শুনে ওকেই বিয়ে করতে রাজি হয় দিশা। রাদিন নাহয় একটা ভুল করেছে। কিন্তু সমাজে সবাইকে সাক্ষী করে বউ বানিয়ে নিয়ে যেতে চায় দিশাকে। তবে কেন ও এই আরাম আয়েশের জীবন ছাড়বে! রাদিনকে বিয়ে করা মানে সারাজীবনের জন্য রাজরানি হয়ে যাওয়া। এটা থেকে নিজেকে কেন বঞ্চিত করবে ও!
ফুয়াদের ফোন আসে দিশার কাছে। ও রিসিভ করলে ফুয়াদ বলল, ঠিক আছ তুমি?
-হুম। আমি রাদিনকেই বিয়েটা করছি।
ফুয়াদ এমন কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। ও বলল, এতকিছু জানার পরেও!
-আমরা আমাদের মধ্যে সবটা মিটিয়ে নিয়েছি৷ আপনি এত ভাববেন না প্লিজ!
-ভুল সিদ্ধান্ত নিতে চলেছ দিশা। সে তোমাকেও ঠকাতে পারে!
-পারে না৷ কারণ আইরার মতো আমি গোপনে বিয়ে করছি না!
এই বলে ফোন রাখতে চাইলে ফুয়াদ বলল, আইরা প্রেগন্যান্ট।
দিশা থমকে যায়৷ ফুয়াদ বলল, এই কথাটা আইরা রাদিনকে জানায়নি। কতটা আঘাত পেলে এত বড়ো একটা কথা একজন মা সন্তানের বাবার কাছ থেকে এটা লুকায় বুঝতে পারছ? নিশ্চয় রাদিন এই খবর পাওয়ার যোগ্য নয়!
কী বলবে ভেবে পায় না দিশা। ফুয়াদই বলল, লাইফের এত বড়ো সিদ্ধান্ত তাড়াহুড়োতে নিও না। তোমার খারাপ চাই না বলেই এত চিন্তিত। রাখলাম।
দিশা বিছানার উপরে ধপাস করে বসে পড়লো। আবারও এই কোন সত্যের মুখোমুখি হলো ও!
.
চলবে