#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_১৪
#Saji_Afroz
দিশার কাছে এই চরম সত্যটা শুনে থমকে যান দিলোরা খাতুনও। এমনটা হতে পারে তিনি ভাবেননি।
দিশা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল, আইরার গর্ভে রাদিনের সন্তান। বুঝতে পারছ মা তুমি! ওরা কতটা ক্লোজ ছিল। আমার শরীর ঘিনঘিন করছে এসব শুনে। আমি এখুনি রাদিনকে ফোন দিচ্ছি।
দিশাকে থামালেন তিনি। দিশা মা এর দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায়। তিনি ছোট্ট একটা দম ফেলে বললেন, জানানো যাবে না মেয়েটা প্রেগন্যান্ট।
-কেন?
-বংশধরের কথা শুনে রাদিনের পরিবার যদি ওকেই গ্রহণ করে! ডিভোর্সটা এখনো হয়নি দিশা।
-করলে করুক। এসব আমি আর নিতে পারছি না। অসহ্য লাগছে।
-নিতে তোকে হবেই। এখন একটু কষ্ট সহ্য করলে পরবর্তীতে সুখের দেখা পাবি।
-আইরা প্রেগন্যান্ট মা!
-একথা ওরা কেউ জানে না! আর যেন না জানে। বুঝেছিস?
দিশা নিশ্চুপ থাকলে ওকে একে একে রাদিনের দেওয়া উপহার গুলো দেখাতে থাকেন তিনি। আরও বললেন, রাদিন ছাড়া এসব সম্ভব ছিল কখনো?
দিশা খানিকক্ষণ ভেবে বলল, বুঝেছি। সব ভুলে যেতে হবে আমার। এগুতে হবে রাদিনকে নিয়ে নতুন এক পথের দিকে। ওর অতীত মনে করলে কষ্ট ছাড়া কিছু পাব না। তাই করব না মনে।
-আমি জানি তুই পারবি।
দিশা কার মাধ্যমে সত্যটা জেনেছে এখনো অজানা রাদিনের। তার নামটা জানলে বোধহয় এখুনিই মেরে ফেলতো। এতটাই রাগ হচ্ছে রাদিনের! কে জানে ওর মা বাবা কী সিদ্ধান্ত নেবে এখন? তবে ওর বিশ্বাস, ওরা রাজি হবেই।
ফুয়াদ রাগে ফোসফাস করছে। দিশা সবটা জেনেও কিভাবে রাদিনকে বিয়ে করতে চায়ছে ওর বোধগম্য হচ্ছে না। আইরা ওর পাশে রয়েছে। ফুয়াদের বিয়ের শপিং করতে বেরিয়েছিল ওরা। কিন্তু সারাটাক্ষণ ফুয়াদ দিশার কথাই বলে চলেছে। আইরা ওর কুচকানো ভ্রু দেখে বলল, আপনি এত রাগ করছেন কেন? ওর লাইফ ওর ডিসিশন!
-কিছু বুঝে নাকি! বয়সই বা কত ওর! তোমার মতো ওর জীবনটা নষ্ট হলে?
-কিন্তু ওদের বিয়ে সামাজিক ভাবেই হচ্ছে।
-যারা নোংরামো করে ওরা সমাজকে পরোয়া করে না। দিশার যোগ্য ওই রাদিন নয়। আগে থেকেই এই ছেলেকে সুবিধার মনে হত না আমার। দিশা কিভাবে সব জেনেও এই ভুল করতে চাচ্ছে!
-বাদ দিন না! থাকুক ওরা ওদের মতো।
-কীভাবে বাদ দেব? ওর লাইফটা এভাবে নষ্ট হতে আমি দেখতে পাচ্ছি না।
-কেন?
-কারণ…
থেমে যায় ফুয়াদ। অজান্তেই আইরার চোখ ছলছল করে উঠে। মনের মাঝে আসে নতুন এক ভাবনা। ও যা ভাবছে তাই নয় তো!
ও কিছু বলার আগে ফুয়াদ বলল, আমার ভালোবাসার মানুষটি হলো দিশা। আমি চাই না এভাবে ও ভুল সিদ্ধান্ত নিক।
যা ভেবেছে তাই! একথা শুনে বুকটা ধুক করে উঠে আইরার।
ফুয়াদ আরও বলল-
তবে হ্যাঁ! ওকে আমি পেতে চাই না। ভালোবাসাটা আমার এক তরফা ছিল। ও জানেই না! ওকে পাওয়ার লোভ সেদিনই ছেড়ে দিয়েছি, যেদিন জেনেছি ভালোবাসে ও রাদিনকে। তুমি আবার ভেবো না ওকে হাসিল করার জন্য এসব আমি করছি।
-কিন্তু ভালো তো আপনি ওকেই বাসেন এখনো?
আইরার কথা শুনে একটু থেমে ফুয়াদ বলল-
আমার জীবনের অংশ হতে চলেছ তুমি। ভুলে যাওয়ার চেষ্টাই আছি দিশাকে৷ আশাকরি পারব!
আইরা নিশ্চুপ হয়ে যায়। ফুয়াদ এসব মাথা থেকে ঝেড়ে বলল, তোমার গায়ে হলুদের শাড়িটা কী রঙের ছিল যেন? পাঞ্জাবি ম্যাচিং করে নেব তাই।
শপিং শেষে বাড়ি ফিরে এসে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয় আইরা। ফুয়াদের চোখেমুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো, আইরার প্রতি কতটা দূর্বল ও। ভীষণ ভালোবাসে মেয়েটাকে। আর তাই তো ওকে না পাওয়ার ক্ষোভে যেমন তেমন মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিতে চলেছে। আইরা যেমন তেমনই৷ কী আছে ওর! অন্যের বিবাহিতা স্ত্রী, অন্য কারো সন্তান ওর গর্ভে। এসব জেনে কোন পাগল ওকে বিয়ে করতো? ফুয়াদ করছে কারণ ওর নিজের জীবনের প্রতি মায়া নেই। দিশাকে হারিয়ে যেন সে নিজেও হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দর এই পৃথিবী থেকে! ফুয়াদ নিতান্তই ভালো মানুষ। আইরা ওকে সবটা লুকিয়েছে জেনেও কোনো অভিযোগ ও করেনি। বরং সাথে থাকার কথা ও দিয়েছে। আর এই কথা রাখার জন্য দিশার কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েও হাত ছাড়া করছে। হ্যাঁ দিশা রাদিনকে ছাড়তে রাজি নয়। কিন্তু ফুয়াদ আইরাকে বাধ্য করতে পারতো ওদের বিয়েটা আটকানোর জন্যে। এতে করে সবার বিয়েই ভেঙে যেত। এবং ফুয়াদ দিশাকে পেতে পারতো।
আইরার মনে তুফান বয়ে যাচ্ছে। ফুয়াদের মতো একটা মানুষ কেন কষ্ট পাবে? ও পৃথিবীর সমস্ত খুশির প্রাপ্য। আর সেই খুশিটা দিশাতেই। আইরা মুহুর্তেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। আর সেটা হলো দিশা ও ফুয়াদকে এক করার। অনেক ভেবেছে নিজের কথা। এইবার নাহয় ফুয়াদের কথাই একবার ভাবুক!
এই ভেবে দিশার ফোন নাম্বারে কল করে ও। ফুয়াদের কাছ থেকেই নাম্বারটা ও নেয়। বলেছিল রাদিন সম্পর্কে ওকে বিস্তারিত জানাবে।
কয়েকবার ফোন বাজার পর রিসিভ করে দিশা। ওপাশ থেকে আইরার নাম শুনে ও বলল, আপনি কেন ফোন করেছেন আমায়?
আইরা বুকে পাথর চেপে বলল, আমি রাদিনের সন্তানের মা হতে চলেছি। এই মুহুর্তে রাদিনকে আমি ছাড়তে পারি না। ওকে আমার প্রয়োজন। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের দু:খটা বুঝুন!
দিশা অবাক হয়ে বলল, আপনি হঠাৎ রাদিনকে এসব জানাতে চাচ্ছেন কেন?
-কারণ দুনিয়া এত সহজ নয়। এই বাচ্চার বাবা কে সবাই জানার জন্য আমাকে কিছুদিন পরেই পাগল করে তুলবে। তখন আমি কী করব! প্লিজ আপনি রাদিনের জীবন থেকে নিজ থেকেই সরে যান। এরপর ওর আমাকে গ্রহণ করাটা সহজতর হবে।
দিশা একটু নীরব থেকে বলল, সম্ভব না! কারণ আমি রাদিনকে ভালোবাসি। আপনাকে নাহয় কয়েক লাখ টাকা দিয়ে দেব। ওসব দিয়ে বাচ্চার খরচ ম্যানেজ করুন।
-কয়েক লাখ টাকা দিয়ে সারা জীবনের দাগ মোছা সম্ভব?
দিশা উত্তেজিত হয়ে পড়ে৷ চ্যাঁচিয়ে জানায়, রাদিনকে ছাড়া ওর পক্ষে সম্ভব না।
আইরাও জানায়, ওর সন্তানের প্রাপ্য অধিকার ও আদায় করে নেবে।
এই বলে ফোনের লাইন কাটে আইরা। দিশা ঘাবড়ে যায়। রাদিন যদি সত্যিটা জেনে আইরার কাছে ফিরে যায়? না, এটা হতে দিতে পারে না। রাদিনকে ও হারাতে পারে না।
আবার ফোন বাজলে দিশা বিরক্ত হয়৷ ও দেখলো, রাদিনের ফোন এসেছে। নিজেকে শান্ত করে রিসিভ করে বলল, বলো কী বলবে?
-মা বাবা বিয়ের জন্য রাজি হয়েছেন।
একথা শুনে দিশা বলল, তবে দ্রুত বিয়েটা সেরে নিই। তোমার তালাকের আগেই।
-তালাকের আগে এটা সম্ভব নয়। আইরার মত প্রয়োজন এতে।
আইরার মত যে ওরা পাবে না বুঝে দিশা বলল, গোপনে করি? দেখো কত ঝামেলা হচ্ছে বিয়েতে। তার চেয়ে বরং আমরা গোপনেই বিয়েটা সেরে নিই।
-আর তোমার মা এর শর্ত? কোটি টাকা আমার কাছে নেই।
– দলিল তো করতে পারবে যে বিয়ের এক মাসের মধ্যে সবটা শোধ করবে?
-তুমি আমায় ভালোবাসলে, গোপনে বিয়ে করতে চাইলে কেন কোটি টাকার ডিমান্ড টা ছাড়ছ না?
এই প্রশ্নের উত্তর দিশার কাছেও নেই। ও আমতাআমতা করে বলল, মা জানলে কষ্ট পাবে তাই। তুমি আমায় বলো যে বিয়েটা করবে কি না এভাবে?
-বেশ তাই হবে।
-তবে আগামী কয়েকদিনের মাঝেই ব্যবস্থা করো।
এদিকে আইরার কথা শুনে বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে চলে যায় ফুয়াদ। আইরা রাদিনের কাছে ফিরে যেতে চায়! আর এর জন্য সাহায্য চায়ছে ফুয়াদের কাছে!
ফুয়াদ বলল, কীসব বলছ তুমি! ওর মতো পাষাণের কাছে কেন যাবে?
-কারণ ও আমার বাচ্চার বাবা৷ আমার বাচ্চাকে আমি ঠকাতে চাই না। আপনি প্লিজ দিশাকে বুঝিয়ে বলুন রাদিনের জীবন থেকে সরে যেতে। আমি রাদিনের কাছে ফিরতে চাই।
-কিন্তু তুমি হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিলে?
-আমার অনাগত সন্তানের জন্য। রাগারাগি হতেই পারে। এখনো তালাক হয়নি। সব জেনে রাদিন যদি বদলে যায়! একটা সুযোগ আমি আমার জীবনকে দিতে চাই। এর আগে প্রয়োজন দিশাকে সামলানো। ও যদি রাদিনকে না ছাড়ে তবে রাদিন আমার দিকে কিভাবে মনোনিবেশ করবে!
-ভেবে করছ তো সব?
-একদম।
-আরও সময় নাও আইরা। ওই রাদিনের কাছে ওভাবে আমি তোমাকে ছাড়তে পারিনা। প্লিজ ভাবো আরও! আমি তো আছি তোমার পাশে।
-আমি ভেবেই বলছি। আমার এখন আমার বাচ্চার বাবাকেই প্রয়োজন!
ফোন রাখার পর কান্নায় ভেঙে পড়ে আইরা। নিজের জন্য নয়। ফুয়াদের জন্যই ও ফিরে যেতে চায় রাদিনের কাছে। ফিরিয়ে দিতে চায় দিশাকে ওর কাছে!
.
চলবে