#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব: ৩৪
সোহানা মির্জা নাভান কে সকাল সকাল তার রুমে ডেকেছেন। সারারাত ইনায়া আর জায়ানের কথা ভেবে। ভোর রাতের দিকে শুয়েছিল নাভান। মায়ের ডাকে ঘুমঘুম চোখ মুখ নিয়েই সোহানা মির্জার রুমে আসলো। সেখানে আয়েশা মির্জাও ছিলো। সোহানা আদুরে ভঙ্গিতে ছেলেকে কাছে ডাকলেন। নাভানও চুপটি করে মায়ের পাশে বসে। সোহানা গতকালকের কোনো কথাই তুললো না। ইশানের থেকে সবটা শুনেছেন তারা সবাই। আর মনেমনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করেছেন, তার ছেলেকে অন্ধকার জগত থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য। নাভান শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সোহানা গলা খাকড়ি দিয়ে তার দিকে মনোনিবেশ করলেন।
-” ইনায়ার কি খবর? সেখানে কে আছে? ”
নাভান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মলিন মুখেই বলে ওঠলো,
-” আমার জানা নেই। ”
-” জানা নেই? এভাবে কতোদিন যাবে? তোমরা কিছু তো একটা সিদ্ধান্ত নাও। ”
-” আমি হয়তো তোমাকে সব জানিয়ে ছিলাম। ”
-” আর একটা বার ভেবে দেখো তোমরা? আমি ইনায়ার সাথে কথা বলবো। ”
নাভান আচমকাই হাসলো। তাচ্ছিল্যের হাসি সেটা। তারপর ম্লান মুখে মায়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় জবাব দেয়,
-” তাকে আর কি বলবে মা? তার মন কি আমাতে আছে? না। আমার কথা কি ভাববে? না। কারণ, সে তো আর আমার নেই। অনেক দেরি করে ফেলেছি আমি। বড্ড দেরি। ”
সোহানা মির্জা অবাক হলেন। মায়ের মন যেন আগের সবকিছু ভুলে যেতে চাইছে। মন বলছে এখন সব ঠিক হলে ক্ষতি কি? আয়েশা মির্জা নাভানের এমন হতাশ মন দেখে নিজেও নুইয়ে পরলেন। কি জানি? তার নাতি নাতনির উপর গহন লেগেছে হয়তো। তবে, ইনায়া কে নাভান আবার ফিরে পেতে চাইছে, সেটা যেন তার কাছে অবাক ঠেকলো। কানাডায় থাকা কালিন নাভান আগ্রহ করেও ইনায়ার কথা জানতে চায় নি তার কাছে। আছে নাকি গেছে সেটাও না। আর এখন? আয়েশার মনের একটা ছোট প্রশ্ন তিনি নাভান কে করেই বসলেন,
– ” তা ইনায়া কি নতুন করে কারো সাথে ঘর করবে নাকি? আমার তো এই করিম বাড়ির ছোট ছেলেটা কে সন্দেহ হচ্ছে। ”
নাভান জ্বলজ্বল চোখে মা আর দাদুর দিকে তাকালো। আর কিছু না বলে হন হন করে সেখান থেকে বেড়িয়ে গেলো। সোহানা আর আয়েশা মির্জা বুঝলেন। নাভানের সবটাই জানা হয়েছে। সোহানা মির্জা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তার ছেলেকে শেষ সুযোগ দেওয়া দরকার।
,
,
,
,
ইনায়ার কাটা জায়গা গুলো আজকে টানছে প্রচুর। ঔষধ খাওয়ার পর ব্যথাটা কম। সেলাইন চলছে সকাল থেকে। জায়ান এক মুহূর্তেও ইনায়া কে একা ছাড়ছে না। ডাক্তার অবশ্য ইনায়াকে বিকেলের দিকে ডিসচার্জ করতে বলেছে। বাড়িতে খেয়াল রাখলে ধীরে ধীরে সুস্থ হবে ইনায়া। জায়ান বাড়িতে ফোন দিয়ে বলেছে ইনায়া কে নিয়ে বাড়ি আসছে বিকেলে। এই নিয়েও ইনায়া অমত পোষণ করছে। তার কথা হলো, তাকে হোস্টেলেই ছেড়ে আসতে। জায়ান কিছু না বলে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গিয়েছিলো। আর ইনায়ার দুইপাশে রেখে গিয়েছিলো দুইজন নার্স। ঘন্টা সময়ের মধ্যেই জায়ান ফিরে আসে। হাতে ছিলো অনেক গুলো শপিং ব্যাগ। সাথে কিছু খাবার। জায়ান হাত মুখ ধুয়ে এসে ইনায়াকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয়। ইনায়া ও কোনো দ্বিমত পোষণ করে না। খাবার শেষে জায়ান ইনায়াকে শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-” এখন ঘুমাও। একটু পরেই বের হবো আমরা। ”
-” আমি করিম ভিলায় যেতে চাইছি না। আমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসুন প্লিজ। ”
-” কেনো? সমস্যা কি?
-” আমার প্রচুর কাজ। যেতেই হবে। ”
জায়ান ভ্রু কুঁচকালো। ইনায়ার ম্লান মুখটার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে উঠে,
-” মায়ের জন্য যেতে চাইছো না। তাই তো? ব্যাপার না আমি সামলে নিবো। ”
-” সেটাও আছে। আসলে,..। ”
ইনায়া জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ানও প্রশ্নবিদ্ধ মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইনায়া দীর্ঘশ্বাস ফেললো তারপর হাসি মুখে আবার বলে উঠলো,
-” এটা মাসের শেষ দিক। আমার এক ফ্রেন্ডের সাহায্যে একটা কোচিং-এ জব নিয়েছি। ওর নাম সানিয়া। সেলারি ভালোই। সানিয়া আর ওর একটা রুমমেট মিলে ভার্সিটির পাশেই তিন রুমের একটা ফ্লাট ভাড়া করেছে। আমিও সামনের মাসে ওদের সাথে জয়েন করবো। আমাকে ওদিকে থাকা দরকার আপাতত। ”
জায়ান শুনলো পুরো কথা। তারপর অত্যন্ত গম্ভীর মুখে বলে ওঠে,
-“এসবের কি দরকার? তুমি তিথির সাথেই থাকো। মাসে মাসে টাকা বাবা তো দিচ্ছেই। ”
-” আমি নিজে কিছু করতে চাইছি। ”
জায়ান আর কিছু বললো না। ঘড়ির কাটায় সময় দেখে শপিং ব্যাগ থেকে কালো রঙের সালোয়ার স্যুট বের করে ইনায়া কে দিলো। ইনায়া জিজ্ঞেস মুখে জায়ানের পানে তাকালে জায়ান তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে,
-” যতদিন না সুস্থ হচ্ছো আমাদের সাথেই থাকবে। আর এখন বাড়ি যাবার আগে তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো। তাড়াতাড়ি করো। ”
এই বলে ফাহাদের ফোনে কল দিয়ে বের হয় জায়ান। ইনায়াও ফ্রেশ হতে চলে যায়। আধঘন্টা হতেই ইনায়া বের হয়ে আসে। জায়ান আগে থেকেই রুমে বসা ছিলো। ইনায়া কে দেখে হাসলো। বসা থেকে উঠে ইনায়া নাক টান দিয়ে মিষ্টি করে বলে ওঠে,
-” মাই ব্লাক কুইন! চলো বিশাল বড়ো সারপ্রাইজ আছে। ”
ইনায়া চমকালো। কি জানি সারপ্রাইজ দেবে, কে জানে?
,
,
,
নিধি মন খারাপ করে বেলকেনিতে বসে আছে। এখানে তার দিন কাটছেই না। ফাঁদ পেতে আছে কি করে এখান থেকে বের হতে পারে। করিম ভিলাতে অনেক সিকিউরিটি আছে। এসব ডিঙিয়ে যাওয়া নিধির জন্য আপাতত কষ্টকর। আর যে করেই হোক তাকে মেইন ডোরের চাবি কালেক্ট করতে হবে আগে। তারপর ওই মেয়েরের আস্তানা থেকে পালাবে সে। তখনই কারো আসার শব্দে নিধির ভাবনারা গত হয়। পিছন ফিরে ফাহাদ কে দেখে মুখটা আরো অন্ধকার হয়ে যায় নিধির।
-” পালানোর জন্য কি কি প্ল্যান কষলে? বলো আমায়। প্রমিজ, কাউকে বলবো না। ”
নিধি ফাহাদের এমন কথায় রায়বাঘিনীর মতো তার দিকে তাকালো। ফাহাদ দাঁত বের করে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। নিধির প্রচুর রাগ হলো। সে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে,
-” ট্রাস্ট মি! একবার এই বাড়ি থেকে বের হলে। আপনি আমাকে এই পৃথিবীর কোনো জায়গাতে খুঁজে পাবেন না। ”
ফাহাদ হাসি থামিয়ে মুখ গম্ভীর করলো। অতঃপর নিধির সামনে দাড়িয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
-” অতিতটা ভুলে কেনো যাচ্ছো না তুমি? সামনে তাকিয়ে দেখো কতো সুন্দর জীবন তোমার। তোমার আমার সুন্দর একটা পৃথিবী। ”
-” আমি কিচ্ছু পারবো না ভুলে যেতে। না ভুলতে পারবো অতিত না আপনাকে মানতে পারবো। না আপনার কাছে করুনার পাত্রী হিসেবে থাকতে পারবো। আমার নিজের প্রতিই আমার ঘৃণা লাগে। আমার পুরো শরীর কলুষিত কলঙ্কিত। আমাকে আমার মতো ছেড়ে দিন। ”
ফাহাদ নিধির ঘনিষ্ঠ হলো অতপর ফিসফিস স্বরে বলে উঠলো,
-” হেই আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। সেই প্রথম থেকে। করুনা কেনো বলছো? আমাকে মেনে নাও। আমি তোমার কলুষিত কলঙ্কিত সব সয়ে নিবো। ”
নিধি ধাক্কা দিয়ে ফাহাদ কে সড়িয়ে দেয়। কোনো পুরুষের ছায়া সহ্য হয় না তার। নিজেকে গুটিয়ে নিলো ফাহাদ থেকে অনেকটা দূরে। ফাহাদ কিছুক্ষণ অবাকের দৃষ্টিতে তাকিয়ে তারপর যেতে-যেতে বলে ওঠে,
-” রেডি হয়ে নাও নিধি। ইনায়ার কাছে যাবো। ”
,
,
হাইওয়ে রাস্তা ধরে ফাহাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে। ডাইভিং সীটে ফাহাদ আর প্যাসেঞ্জার সিটে নিধি বসে আছে। দুজনেই চুপচাপ হয়ে আছে। প্রায় চল্লিশ মিনিটের মতো গাড়ি চলছে। নিরব পরিস্থিতি তে মুখ খুলছেনা কেউ। নিধি একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে বলে উঠে,
-” হসপিটালে যেতে এতোক্ষণ লাগে? সত্যি করে বলেন তো, আমায় শুনশান কোথাও নিয়ে মেরে ফেলবেন নাতো? ”
ফাহাদ চোরা চোখে একবার নিধি কে দেখে মিনমিন করে বলে ওঠে,
-” তোমাকে তো মারার জন্য আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট। শুনশান জায়গা কেন লাগবে? এনিওয়ে, তুমি এমন কোনো প্লেসে গিয়ে ভালোবাসায় মরতে চাও নাকি? ”
-” কি বললেন? ”
নিধি অনেক রেগে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলে না আর। এই লোক দারুণ ঠোঁট কাটা। ফাহাদও আর নিধিকে কিছু বলেনা দীর্ঘসময় পার করে পুরান ঢাকার কিছুটা দুরে একটা শুনশান পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে গাড়ি থামায় ফাহাদ। নিধি গাড়ি থেকে নেমে লক্ষ্য করে সামনে জায়ানের গাড়ি। নিধি অবাক হয়। ফাহাদ সিরিয়াসলি কোনো শুনশান জায়গায় নিয়ে এলো।
-” এটাতো হসপিটালের মতো লাগছে না। ”
ফাহাদ নিধির ভয় দেখে হাসলো।
-” ভেতরে চলো। ”
বলেই ফাহাদ হেঁটে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। নিধিও তাই করলো। ভেতরে যেতেই ইনায়া আর জায়ান কে দেখে তারা। নিধি ইনায়ার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে।
-” ঠিক আছো ভাবি? তোমাকে এমন ডাস্ট হসপিটালে ভর্তি কেনো করালো? কি বিশ্রী। ”
ইনায়া এতো টেনশনের মাঝেও হেসে উঠে। জায়ান ফাহাদ কে ইশারা করে ওদের দুজন কে বলে তাদের সাথে আসতে। নিধি আর ইনায়াও তাই করলো। ইনায়া বুঝতে পারছে না। ওরা কেন এখানে এনেছে। একটা রুমের মাঝে গিয়ে জায়ান দরজা খুলে। ফাহাদের ছেলেগুলোও এখানে সবকটার হাতে মোটা রট। ইনায়া খেয়াল করলো গতকালকের ছেলেগুলোকে আধমরা করে ফেলে রাখা হয়েছে। নিধি ছেলে গুলোকে দেখে কাঁপতে থাকে। আচমকা ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে সে। ইনায়ার কষ্ট হলেও সহ্য করলো। ফাহদ নিধির কাঁপতে থাকা বাহুতে হাত বুলিয়ে বোঝানোর স্বরে বলে উঠে,
-” লুক নিধি, এদের যা শাস্তি তুমি দিতে চাও দিতে পারো। একবার বলো কি করবো ওদের সাথে। ”
নিধি ফুপিয়ে কেঁদে দেয়। ফাহাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-” আপনি কি ওদের দিয়ে আমাকে রেপ করাবেন? ”
-” তা কেন করবো? ”
সবাই অবাক নিধির এমন বাচ্চা কথায়। ফাহাদ হতবাক হলো। নিধি উলটে বলে ওঠে,
-” তাহলে,,আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান। দেখছেন না ওরা কেমন লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ”
ফাহাদ জায়ান ছেলেগুলোর দিকে তাকায়। মার খেয়ে এদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এরা সবকটা চোখ খুলে তাকাবে কিনা তা সন্দেহ। জায়ান মুখ বাকিয়ে বলে,
-” তোমাকে যেতে দেবো নিধি। আগে বলো এদের কি ব্যবস্থা করবো? ”
-” যা খুশি তাই করেন। আমাকে এখান থেকে বের করেন। ”
ছেলেদের মধ্যে একটা বলে ওঠে,
-” ভাই আমাদের ছেড়ে দেন। আপনার কথা মতো ওই মেয়েকে আমরা রেপ করেছি। আমাদের ছেড়ে দেন। ”
-” ওটা কালকের হিসেব ছিলো। আজকে এর হিসেব হবে। ”
ইনায়া নিধি আতকে উঠলো যেন। ফাহাদ জায়ান নিরুত্তর। ইনায়া বুঝতে পারলো মেয়েটা কে। জায়ান এই রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। ইনায়া ও তাই করলো। জায়ানের সাথে উপর রুমে গিয়ে চোখ উলটে ফেললো যেন। অদিতি কে দেখে নিধি আর ইনায়ার চোখ কপালে। সারা শরীরে কামড়ের দাগ। পুরো নাজেহাল অবস্থা। ইনায়া রেগে জায়ানের দিকে তাকালো। নিধির যেন নিজের কথা মনে পরে গেলো অদিতি কে দেখে। সে জায়ানের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
-” আপনাদের মাঝে ওদের মাঝে পার্থক্য কি রইল? খারাপ হলেও সম্মানহানী তো একটা মেয়ের হয়েছে। তাইতো? ”
জায়ান আচমকা হাসলো। জায়ান বাঁকা হেসে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-” কেউ আমার বাগিচার এমন হাল করতে চেয়েছিল। আমি খারাপ এতটাও না। যার যার বুদ্ধির স্বাদ কেমন? তা তো বুঝাতে পারি কিছু। ”
তারপর নিধির দিকে তাকিয়েই জায়ান ব’লে,
-” তোমার ওকে দেখে খুশি হওয়া উচিত। তোমার এই হালের জন্য ওই দায়ী। ”
ইনায়া আর দেখতে পারলোনা বেড়িয়ে এলো। ছোট হলরুমে আসতেই ছেলেগুলোর রুম থেকে চিৎকার বেড়িয়ে আসে। ইনায়া ফিরে তাকালো জায়ানের দিকে।
-” ওদের পুলিশের হাতে তুলে দিন। আইন নিজের হাতে তুলছেন কেন? আমার আর সহ্য হচ্ছে না। ”
জায়ান মুচকি হেসে বলে উঠলো,
-” জায়ান নামক জগতের, শাস্তি এমনই হয় হরিনী। তুমি সহ্য করে নাও। কারণ, তুমি এই জগতের ঘরনি হবে খুব শীগ্রই।
ইনায়া কথা বলে না। নিধিও ম্লান মুখে তাকিয়ে থাকে তার কেমন জানি খারাপ লাগছে। ছেলেগুলোর চিৎকার এতোক্ষণে কমে এসেছে। হঠাৎ ফাহাদ দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো। রুমাল দিয়ে রক্তাক্ত হাত মুছছে। জায়ান জিজ্ঞেস করলো,
-” কাজ শেষ? ”
-” সবকটাকে হিজরা কমিটির সদস্য বানিয়ে দিয়েছি। এখন থেকে নিজেরাই মেয়ে হয়ে ঘুরবে। ”
কথাটা বলে হাসে ফাহাদ। ইনায়া আর নিধি চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হয়েছে। এই দু’ভাই সাঙ্ঘাতিক। এরা সন্ত্রাসীদেরও হার মানাবে। নিধি ভয়েভয়ে ফাহাদের দিকে তাকায়। এই লোকের হাসিখুশি মুখের আড়ালে এমন ব্যাক্তি লুকিয়ে আছে? তার জানা ছিলোনা।
,
,
,
চলবে…………..
#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব : ৩৫
সেদিনের পরে আজ পনেরোদিন পেরিয়ে গেছে। ইনায়া প্রথম কয়েক দিন করিম ভিলায় ছিলো। সেখানে থাকা কালিন তার সময় মুটামুটি ভালোই কেটেছে। মিনারা বেগম ইনায়াকে জায়ান প্রসঙ্গে কোনো কথা জিজ্ঞেস করেনি। ইনায়ার অনেক সেবা যত্ন করেছেন তিনি। জায়ানও তার সামনে খুব কম এসেছে। ইনায়া ও তাকে ইগনোর করেছে। কিছুটা রাগ কিছুটা অভিমান। তারপর সানিয়ার সাথে নতুন ফ্লাটে উঠেছে ইনায়া। ক্লাস কোচিং এইসব পার করে দিন কাটছে তার আপাতত। আজ অফ ডে, ইনায়া একটা ক্যাফেতে এসেছে সোহানা মির্জার সাথে কথা বলতে। হঠাৎ জরুরি তলব করায় ইনায়া একটু ভয়ে আছে। সাদা চুড়িদার পরা অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে ইনায়া। যার মুখে হালকা ঘামের রেশ। চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। সোহানা মির্জা হাসলেন। প্রথমেই সোহানা ইনায়ার পড়াশোনা চাকরি এইসব নিয়ে কথা তুললেও, হঠাৎ করেই কথার মোর ঘোরান তিনি। শান্ত গম্ভীর গলায় ইনায়া কে জিজ্ঞেস করলেন,
-” অতীত ভুলতে পেরেছো? না কি আরো একটা সুযোগের অপেক্ষা করছো? ”
ইনায়া গম্ভীর মুখে কফির কাপের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সোহানা মির্জার কথায় তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উঠে।
-” তুমি এই প্রশ্ন করছো মামনী? আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বুঝবে। তা তো দেখছি হলো না। ”
-” তোমাদের এই ছন্নছাড়া জীবনে কি আছে। তাকে মাফ করে আসন্ন ভবিষ্যৎ সুন্দর করলে দোষ কি? ”
ইনায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্যাফের জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। ভবিষ্যৎ? আসলেই সেটাতে কি লেখা আছে জানা নেই তার। হতে পারে ভালো আবার যাতনায় মুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে। সোহানা মির্জার দিকে ফিরে ইনায়া ম্লান কন্ঠে বলে উঠে,
-” স্বপ্ন কল্পনায় সুন্দর, জানো তো? নাভানের সাথে নয়টি মাসের সংসার কল্পনায় থাকুক। বাস্তবে তা আমায় দিয়ে সম্ভব নয়। ”
-” জানি সে পাপ করেছে মহা পাপ। এখন কি তাকে ক্ষমা করতে পারবি না? জীবনটা সুন্দর হতো। মায়ের মন তো? বারবার ক্ষমা করতে মনে চায়। ”
সোহানা কথাটা বলে ইনায়ার দিকে তাকালো। সে অন্য ভাবনায় মগ্ন যেন। কেটে গেলো কিছুক্ষণ। তারপর আচমকা ইনায়া শান্ত গলায় বলতে লাগলো,
-” উনার আমার প্রতি কোনো আগ্রহ ছিলোনা কখনো। বিয়ে করে যেদিন সে কানাডায় ফিরে গিয়েছিল, সেইদিন আমি নামক অচেনা মেয়েটাকে চিরদিনের জন্য স্মৃতি থেকে মুছে দিয়েছিলো। আর আমরা দুজনেই ঝুলে রয়েছিলাম বিবাহ নামক সম্পর্কে। যে সম্পর্কে কোনো প্রাণ ছিলোনা। যা ছিলো শুধু নামের। ছিলোনা কোনো স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা না কম্প্রোমাইজ, না ছিল মান অভিমান। বাবা-মা বেচে থাকলে হয়তো নাভান যাওয়ার পরেরদিনই তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত আমার। স্বামী ছাড়া এই নামের নয় মাসের সংসার হতো না হয়তো। ”
ইনায়া কথা গুলো বলে সোহানার দিকে তাকালো। তার চোখ জোড়া ছলছল করছে। ইনায়া হেসে উঠে বাকি কথায় গেলো,
-” কেমন লাগে? যখন একটা মেয়ে তার স্বামী কে অন্য মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে দেখে। যেটা তার প্রাপ্য সেটা অন্য মেয়েকে তার স্বামী দিয়ে দিবে, কি করে মানা যায় সেটা? আমি মানলাম সে পরিস্থিতির দায়ে পরে এমন হয়েছে। তবুও তাকে মাফ করে দিতাম। কিন্তু বিয়ের পরে সে আমার কোনো সম্মান রাখেনি। আমি তার কাছে অচেনার মতো ছিলাম। অদিতির সাথে ধোঁকার পরও তার আমার কথা মনে পরেনি। বিডি তে এসেছিলো আমাকে মুক্ত করতে। আমি তার কাছে সর্বদাই সেকেন্ড অপশন হিসেবে ছিলাম। যা আমার কাছে খুব জঘন্য ব্যাপার। মানতে পারবো না তাকে আর। পারবোনা মানতে। তাই তো মুক্তি দিয়ে দিয়েছি। তাকে বলো, সুন্দর ভাবে জীবন টা গুছিয়ে নিতে। আমি তার ভালোবাসায় নই, হয়তো মায়ায় জড়িয়ে আছি। যা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। ”
সোহানা মির্জা থমকালেন মাতৃত্বের টানে ইনায়ার কষ্ট কি করে ভুলতে পারলেন তিনি। স্ত্রী হিসেবে ইনায়ার অসম্মান, সবার কাছে লাঞ্চিত। এইসব কি ভোলা সম্ভব? ইনায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন। সে তো বলেছিলো ইনায়ার পাশে সবসময় থাকবেন। তাহলে? সোহানা হ্যান্ডব্যাগ হাতে নিয়ে দাঁড়ালেন। কান্নারত চোখে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
-” জায়ান ভালো ছেলে। তোমাকে ভালো রাখবে। ভালো থেকো তুমি। ”
বলেই সোহানা স্থান ত্যাগ করলেন। ইনায়া আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ পরে সেও বাইরে এসে রিকশায় উঠে। দুপুরের রোদ ঠিক মাথার উপরে। ইনায়া ঘেমে যাওয়া মুখটা মুছে নেয়। নাভানের কথা মাথায় আসতেই সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কবুলের জোরে তার প্রতি মায়া ভালোবাসা সে শেষ করে এসেছিলো মির্জা বাড়ি ছাড়ার সাথে সাথে। যে পথে পথভ্রষ্ট হয়েছিলো সে পথে আবার নতুন করে পরবেনা সে। ইনায়ার ভাবনার মাঝেই নিজের সেই জায়গায় এসে থামে রিকশা। ইনায়া নেমে ভাড়া মিটিয়ে চারতলা বাড়িটার দিকে এগিয়ে যায়। দুতালার তিন রুম বিশিষ্ট ছোট একটা ফ্ল্যাটে উঠেছে তারা। ইনায়া তিন বার ডোরবেল বাজাইতে রোগা-সোগা শরীরের একটা মেয়ে দরজা খুলে। ইনায়া কে দেখে সে হাসলো।
-” ইনু মাই জান, কেমন কাটলো দিন? ”
-” খুব মিষ্টি, তোমার দিন কেমন ছিলো রায়া ? ”
ইনায়ার কথায় মেয়েটা মুখ গোমড়া করে ছোট ড্রয়িংরুমে আসে। ইনায়া ও তার পিছনে এসে ছোট সোফাটিতে বসে পরে। রায়া সানিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। ওরা তিনজনই একসাথে থাকে। রায়া গোমড়া মুখেই ইনায়াকে বলে ওঠে,
-” খুব বোরিং ছিলো আমার আজকের দিন। জানোইতো, আমার কপালে কোনো লাকী ডে নাই। ”
ইনায়া ইশারায় বোঝালো সানিয়ার কথা। রায়া মুখটা দুঃখী ফেস করে ফিসফিস করে বলে,
-” তার প্রেমিক ধলার সাথে কথা বলছে। তুমি যাওয়ার সময় যেমন যে পজিশনে দেখে গিয়েছিলে? তেমনই আছে। ”
ইনায়া সামনের টেবিলে রাখা পানির গ্লাস নিতে নিতে জিজ্ঞেস করে,
-” সানিয়া কি জানে, তুমি তার আশিক কে ধলা বলো? ”
রায়া মুখ বাকিয়ে উঠে,
-” বলবো না তো কি? পুরাই চাইনিজ। এ ভুলবসত বাংলাদেশে ডাউনলোড হয়ে গেছে। ”
-” কে ডাউনলোড হয়েছে? ”
হঠাৎ সানিয়ার আগমনে রায়া চমকায়। ভোলানো হাসি দিয়ে কথা ঘোড়ায় সে,
-” তোর কথা শেষ? ব্রেকফাস্ট করবি তো। এখন অবশ্য লাঞ্চের সময়। তুই ব্রেকফাস্ট করে নে। ”
সানিয়া কুটিল দৃষ্টিতে রায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইনায়া হেসে উঠে। রায়ার মুখ আপাতত বন্ধ। সানিয়া
রায়া কে রেখে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে খোঁচা মেড়ে বলে,
-” বাহার যা কে দেখো। তোমহারা দিওয়ানা খারি হে। কাপতাক সে ইন্তেজার মে হে। ”
ইনায়া ভ্রুকুটি কুঞ্চিত করে। রায়া, সানিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়। তখনই তার নজর পরে, নিচে গাড়িতে হেলান দিয়ে থাকা জায়ানের দিকে। যে তার দিকেই শান্ত নজরে তাকিয়ে আছে। ইনায়া হকচকালো না। কারণ, এখানে আসার পর এটা নিত্যকার ঘটনা। ইনায়া দৃষ্টি জায়ানের দিকে রেখেই, ফোন বের করে জায়ান কে কল করে। জায়ানও রিসিভ করে। তার নজরও ইনায়ার দিকে।
-” কি চাই? আজ আবার নতুন বাহানা নিশ্চয়ই। ”
জায়ান বাকা হাসলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে মৃদু স্বরে বলে উঠে,
-” বোকা হরিণী, তোমাকে দেখার জন্য আমার বাহানার দরকার পরে না। নাম শুনলে তুমি নিজেই আমার সামনে চলে আসবে। ”
ইনায়া থমকালো। কথা সত্য, জায়ানের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
-” ফোন রাখছি আমি। আপনি যান এখান থেকে। ”
-” দাড়াও, ব্যাগ গুছিয়ে জলদি চলে আসো। ”
-” কেনো? ”
ইনায়া অবাকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো। জায়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠে,
-” সাপ্তাহ খানিক সময় আছে তিথির বিয়ের। সেটা কি ভুলে গেছো? ”
ইনায়া মুখ দিয়ে ‘চ’ উচ্চারণ করলো যেন। তার মনেই ছিলো না। তিথি গতকালকেও কল দিয়ে বলেছে তাড়াতাড়ি চলে আসতে। ইনায়া জায়ান কে সহসা বলে ওঠে,
-” আপনি চলে যান। আমি বিয়ের দুইদিন আগে ঠিক পৌঁছে যাবো। ”
উত্তরটা পছন্দ হলো না জায়ানের। সে অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বলে,
-” তুমি কি চাইছো, আমি নিজে এসে তোমাকে রেডি করে নিয়ে যাই? তাহলে ঠিক আছে আমি আসছি। ”
-” একদমই না, আমি আসছি। ”
কথাটা বলে ফোনটা ধপ করে কেটে দিলো ইনায়া। হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে পড়লো সে। জায়ান হাসলো, খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠে,
-” তোমার আমার দুরত্ব শীগ্রই ঘুচতে চলেছে। সেদিন বেশী দূরে নেই। ”
,
,
,
,
,
সকাল থেকেই নিধির মেজাজ তুঙ্গে। ফাহাদ কে সে নানা ভাবে বলছে, তাকে বাড়িতে দিয়ে আসতে। কিন্তু ফাহাদ তা নাকচ করে দিচ্ছে। নিধির কোনো বিশ্বাস নাই। বাড়িতে গেলে বদলে যেতে তার একটুও সময় নেবে না। তিথির বিয়ে নিয়ে বাড়ির সবার মধেই প্রচুর ব্যস্ততা। মিনারা বেগম নিশ্বাস ফেলবার সময় পাচ্ছেন না। তার মধ্যে আত্নীয় স্বজন সব বিয়ের চারদিন আগেই চলে আসবে। ফাহাদের এমন হুট করে বিয়ে করার বিষয়টা কি করে সামলাবেন তিনি? এটা নিয়েও দুকথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন নিধিকে। সে থেকেই পাগল নিধির পাগলামি আরো বেড়েছে। সে এখন বাড়ি যাবেই। নিধির পড়নে একটা জাম কালারের সেলোয়ার স্যুট। ফাহাদ তাকে জিন্স শার্ট পড়তে নিষেধ করে দিয়েছে। একগাদা শপিং করে এনেছে নিজের পছন্দ মতো। ফাহাদ দুদিনের জন্য শহরের বাইরে যাবে একটা ইম্পরট্যান্ট একটা কাজের জন্য। না গেলেই নয়। সাদা পাঞ্জাবি পরে প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে ফাহাদ। নিধি তার পেছনে এসে দাড়িয়ে বাজখাঁই গলায় জিজ্ঞেস করে,
-” আমাকে দিয়ে আসবেন না বাড়ি? ”
-” যেটা সম্ভব না সেটা নিয়ে বারবার কথা বলা পছন্দ করিনা আমি। ”
নিধি রেগে ফাহাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। রাগে লাল মুখটা আরো লাল হয়ে আছে।
-” আমাকে জোর করে কতোদিন বেধে রাখবেন? ”
-” যতোদিন নিঃশ্বাস চলবে, ততোদিন। ”
-” নিঃশ্বাস টা যদি বন্ধ করে দেই? ”
-” তবে ভুত হয়ে ফিরে আসবো। ”
-” খুবই জঘন্য। ”
নিধি রাগান্বিত হয়ে ফাহাদের বেস ভুস দেখে শুধালো,
-” আপনি কোথাও যাচ্ছেন? ”
-” হুম জরুরি কাজে দুইদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। ”
নিধি চমৎকার হাসলো। তারপর ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো,
-” আপনার আর জরুরি কাজ? নিশ্চয়ই কারো ক্ষতি করতে যাচ্ছেন? যাইহোক, দুইদিন আরামে থাকতে পারবো। ”
ফাহাদ সরু চোখে নিধির দিকে তাকিয়েই থাকলো। আলতো পায়ে হেঁটে নিধির নিকটস্থ গিয়ে দাঁড়াল। হাইটে ছোট বিধায় নিধি মাথা উঠিয়ে ফাহাদের দিকে তাকালো। ফাহাদ আস্তে করে বলে উঠে,
-” ট্রাস্ট মি? তোমাকে এই দুইদিন আরামে থাকতে দিচ্ছি না। ”
কথাটা বলে ফাহাদ নিধির কোমড় জড়িয়ে আরো কাছে আনলো। মিলিয়ে দিলো দু জোড়া ওষ্ঠদ্বয়। অনুভূতির সাগরে যখন ফাহাদ। নিধি তখন আশ্চর্যের পর্যায়ে। তিন মিনিট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে আবেশে চোখজোড়া বন্ধ করলেও, হঠাৎ করেই চোখ খুলে নিধি। চোখের কার্নিশ ঘেঁষে গড়িয়ে পরলো এক ফোটা পানি। নিধি জোরে সড়িয়ে দেয় ফাহাদকে। তাতেই শান্ত হয়নি নিধি। ফাহাদের বাম গালে ঠাস্ করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ফাহাদ হতবাক হয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে। নিধি রীতিমতো কাপছে। সে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকালো। কম্পিত গলায় হুংকার ছেড়ে বলে ওঠে,
-” আর কতো জোর করা হবে? আমি নিতে পারছি আর। আমাকে মুক্তি দিন। মুক্তি চাই আমার। ”
ফাহাদ কতক্ষণ স্তব্ধ থেকে হেসে উঠে। নিজের ব্যাগ হাতে নিয়ে যেতে যেতে বলে ওঠে,
-” আমি আর ফিরে না আসলে তোমার যাওয়া কনফার্ম। দেখো, দোয়া করো আল্লাহর কাছে। যেন না আসি। ”
কথাটা বলে ফাহাদ রুম থেকে বেড়িয়ে পরলো। নিধি অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শুধু।
,
,
,
,
,
রাস্তার পাশে জনমানবহীন জায়গায় দাঁড়িয়ে জায়ান ইনায়া। তীব্র গতিতে বাতাসের ঝাপটা এসে গায়ে লাগছে তাদের। গলায় পেচানো কালো উড়না টা বাতাসে ঝাপটিয়ে চলছে। গোধুলির বিকেলের শেষ দিক, পশ্চিম দিকে সূর্য লাল থালার ন্যায়। সেই উত্তাপ লাল আভা ফুটে উঠেছে জায়ানের মুখে। ইনায়া দূর দৃষ্টিতে এতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। পাশে জায়ানের দিকে ফিরে সে। অতঃপর শুকনো মুখে জিজ্ঞেস করে,
-” আমরা ফিরবো কখন? ”
-” আমাকে এতোদিন ইগনোর করার কারণ কি, জানতে পারি? ”
ইনায়ার গলা শুকাল। নিচু দৃষ্টি রাখলো জায়ানের দিকে। কথা এলো না আর। কি জবাব দেবে? এতো কিছু হঠাৎ করে হওয়াতে মানতে পারেনি। তবুও জায়ানের চোখে দৃষ্টি মিলিয়ে মিনমিন স্বরে বললো,
-” অদিতির সাথে কাজটা ঠিক করেননি আপনি। এটা আমার খুব খারাপ লেগেছে। ”
জায়ানের নজরের হেলদোল হলো না। তা ঠিক রেখেই গম্ভীর গলায় বলে,
-” এই খারাপটা তোমার সাথেও হতো। বুঝতে পারছো তো? ”
-” তাহলে তার সাথে আমাদের পার্থক্য কি রইলো? ”
জায়ান এবার ইনায়ার কাছে গিয়ে দাড়ালো। মুখটা কিঞ্চিত পরিমাণের বাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
-” অদিতি কতোটা চিফ মেন্টালিটির তোমার জানা নেই। এগুলো ওর কাছে দুধভাত। হ্যাঁ যা ওর মতে হয়। তা এখন অমতে হয়েছে। পার্থক্য এটাই। ”
ইনায়া চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। জায়ান ও দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধালো,
– ” খলিল, আমাদের বিরোধী দলের লোক। সে বিয়ে করেনি এখনো। কিছু মেয়েদের পছন্দের সুগার ড্যাডি। আর অদিতিও সেই মেয়েদের একজন। সেদিনের ছেলে গুলোও খলিলের লোক। খলিল কে ধরেই সে এইসব গেম খেলছিল। এইসব বিস্তারিত তোমাকে পরে বলবো আর একবার। কারণ, কিছু জিনিস এখনো আমার অজানা। ”
ইনায়া আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। একটা মেয়েকে আর কতো ভাবে ঘৃণা করা যায় জানা নেই তার। নিজেকে? নিজের শরীর কে এতোটা সস্তা কেনো করে এসব মেয়েরা? ইনায়ার ভাবনার মাঝেই জায়ান তার হাত ধরে। ইনায়া ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে জায়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করে। জায়ান এবার মৃদু স্বরে বলে উঠে,
-” সামনের সপ্তাহে অনেক বড়ো সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য। রেডি থেকো। ”
ইনায়া জিজ্ঞেস দৃষ্টিতে তাকালো। জায়ান হাসলো। ডুবে যাওয়া সুর্যের দিকে একবার তাকিয়ে বলে ওঠে,
-” দিন খুব নিকটে। যেদিন আমি তোমাকে পেয়ে যাবো। সেদিন পৃথিবীতে হয়তো একমাত্র আমিই হবো যে বুক ফুলিয়ে পৃথিবীকে জানান দিতে পারবে, আমিই সবচেয়ে সুখী মানুষ। ”
চলবে…………….
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)