#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
৩.
আজ জানুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ,রবিবার।আজ কামরুল শেখ আসছেন বিলেত থেকে।বাড়ি জুড়ে হইহুল্লোড় লেগে আছে।নাবিল সকাল সকাল চাচার সাথে বাজারে গেছে বাজার করতে।সকালে নাস্তায় আজ ডিম ভুনা আর খিচুড়ি রান্না করা হয়েছে।এখন সকাল প্রায় ৮টা ছাড়িয়েছে।আফনান বাড়ি জুড়ে দাপাদাপি করছে চাচ্চু আসার খুশিতে।চাচ্চুর কাছে কত কিছু আবদার করেছে তার হিসেব নেই।সে রুহার ঘরের সামনে এসে দেখল রুহার ঘরের দরজা চাপানো।নক না করেই ঘরে ঢুকে দেখল পুরো ঘর অন্ধকারে তলিয়ে আছে।বিছানায় উপুড় হয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে।আফনান নাক মুখ কুঁচকে বারান্দার দরজা খুলে দিলো।জানালার পর্দা সরিয়ে বিছানার নিকট এগিয়ে গিয়ে বলল,
“ডার্লিং উঠো,এখনো ঘুমাচ্ছ কেন?আজ না আমার শ্বশুর আসবে?”
রুহা ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলল,
“ভাই আমার ঘুমাতে দে।”
“আফনান রুহার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“ভাইয়া আজ বাসায়।”
হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল রুহা।চোখ বড়ো করে শুধোয়,
“মুরসালীন ভাই আজ কলেজে যায়নি?”
“না!চাচা আসবে বলে যায়নি।”
রুহা তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে চুল হাত খোঁপা করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো।বিছানা গুছিয়ে ওড়না গায়ে না জড়িয়েই দৌঁড় লাগালো ঘরের বাইরে।আফনান চলে গেছে বেশ কিছুক্ষণ আগে।ঘরের দরজার কাছে আসতেই আবার দৌঁড়ে ঘরে এসে ওড়না গলায় পেঁচিয়ে ঘর থেকে বের হলো।
রুহা হেঁটে হেঁটে মুরসালীনের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজা হালকা খোলা। ভিতরে সাইলেন্ট।
রুহা দরজায় টোকা দিয়ে বলে,
“এই যে বই পড়ুয়া স্যার! ঘুমিয়ে কি গবেষণা করছেন? উঠে পড়েন, আজকে আপনার ক্লাস বাতিল!”
মুরসালীন সবে ঘুম থেকে উঠেছে তবে বিছানা থেকে নামেনি। সে কিছুটা বিরক্ত স্বরে ঘর থেকে বলে,
“তুই আবার কোন লাইসেন্সে আমার দরজার সামনে হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছিস?”
রুহা মুখে দুষ্টু হাসি এনে বলে,
“আমি তো ভেবেছিলাম আপনি ঘুমে মরেই গেছেন। ভাবলাম দরজায় মালা ঝুলিয়ে দেই!”
মুরসালীন গম্ভীর গলায় বলে,
“আর একবার বললেই তোর মাথায় মালা ঝুলাব আমি।”
রুহা থেমে না গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে ঢুকতে যায়,
“আপনার ঘরটা দেখলে তো বোঝাই যায় আপনি জীবনে প্রেম করতে পারেননি। এত গম্ভীর ঘর! রংটাও ছাই ছাই!”
মুরসালীন তখন বিছানায় বসে পড়ে, ঘুম চোখে রাগী মুখে বলে,
“ঘরের রং নিয়ে কথা বলার আগে তোকে নিজের পাগলামি রঙ চেক করতে হবে। প্রতিদিন সকালে পাগলের মতো আমার ঘরের সামনে হাজির হোস কেন?”
রুহা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
“কারণ আমি আপনাকে জ্বালাতে পছন্দ করি। আপনার মুখ দেখে আমার দিন শুরু হোক এইটাই চাওয়া।”
“তোর জন্য একদিন মিস্টার বিন বানিয়ে দেব নিজেকে। যত্তসব!”
রুহা তখন জিভ বের করে বলে,
“তাহলে চলেন, প্রথম অ্যাক্টিং প্র্যাকটিস করি – “গুড মর্নিং মুডি মুরসালীন ভাই!”
মুরসালীন উঠে দাঁড়ায়।রুহার একহাত ধরে ঠেলে ঘরের বাইরে বের করে দেয়,
“তোর জন্য দরজা বন্ধ করাটাই এখনকার বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়।”
রুহা ফিসফিসিয়ে বলে,
“দরজা বন্ধ, কিন্তু মন তো আমার জন্য খোলা! হুহু!”
একটু থেমে আবার দরজায় নক করতে করতে বলে,
“ওপেন দ্য ডোর মুরসালীন ভাই! আপনাকে শেষবারের মতো বলছি—না খুললে আমি এখানেই বসে পড়ব!”
ভিতর থেকে মুরসালীন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“তুই পাগল হয়ে গেছিস নাকি? এখন যদি কেউ দেখে তোকে এখানে দাঁড়িয়ে, মানুষ ভাববে কী!”
“তারা ভাববে আমি প্রেমিকা, আর আপনি গম্ভীর প্রেমিক… যিনি লজ্জায় ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।”
“তুই আসলেই একদিন নাটক করতে করতে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে দিবি আমার!”
“আমার বয়স কম। আমার ইনোসেন্ট প্রেমের আবদার আপনি বুঝবেন না। আমি এখানেই অনশন করব!”
মুরসালীন থেমে যায় এক মুহূর্ত। তারপর দরজার ভেতর থেকে বলে,
“তুই চুপচাপ উঠে যা, না হলে চাচিকে বলব তুই আমার ঘরের সামনে বসে নাটক করছিস।”
রুহা ফিক করে হেসে বলে,
“বলুন না! আপনার মা শুনলে বলবে, ‘বাহ! ছেলের প্রেমিকা এসে দরজার সামনে বসে আছে, একেই বলে ভাগ্যবান!’”
এই কথা শুনে মুরসালীন মুখে হাত দিয়ে রাগ সামলানোর চেষ্টা করে।তারপর দরজা খুলে বলে,
“তুই ভেতরে আয়। মাথা ব্যথা বানিয়ে দিচ্ছিস।”
রুহা তখন নাক উঁচু করে বলে,
“আগে বলুন, আপনি আমাকে মিস করেছেন!”
“হ্যাঁ, মিস করছিলাম— মাথা ব্যথা মিস করছিলাম।”
রুহা এক লাফে ঘরে ঢুকে পড়ে।
“ওহ মাই গড! Finally স্বীকার করেছেন যে আপনি আমার কথা ভাবেন!”
মুরসালীন টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
“ভেবেছি ঠিকই, ভাবছি কিভাবে তোর জন্য একটা সাইলেন্স রিমোট বানানো যায়!”
“ভালবাসার ভাষা বুঝেন না আপনি, মুরসালীন ভাই!”
মুরসালীন মৃদু হাসে, কিন্তু সেটা মুখে আনতে চায় না। সে সরে যায় টেবিলের দিকে। আর পিছন থেকে রুহা ফিসফিসিয়ে বলে,
“একদিন ঠিকই আপনাকে কনফেশন করাবো… ‘রুহা, তুই ছাড়া আমি বাঁচি না’ – এইটা মুখে বলাবো, লিখে রাখেন!”
মুরসালীন ঠোঁট কামড়ে বলে,
“সেদিন তুই জ্ঞান হারাবি, আর আমি শান্তি পাবো।”
রুহা মুখ বাঁকিয়ে পুরো ঘরে চোখ বুলালো।
“উঁহু, এই ঘরটা তো জাদুর ঘর। গন্ধেই বোঝা যায়, এখানে প্রেম পেকে পেকে নরম হয়ে আছে!”
মুরসালীন চশমা চোখে দিয়ে টেবিলের চেয়ার টেনে বসে।
“তুই ঘরে এসেছিস মানেই আমার ঘুম, শান্তি, বই সব শেষ।”
রুহা আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে একে একে জিনিসপত্র দেখতে থাকে। হঠাৎ এক টিউব ক্রিম তুলে নিয়ে বলে,
“এইটা কী? আপনি তো ছেলে! স্কিন কেয়ার করেন?”
মুরসালীন মাথা না তুলে বলে,
“তোর মতো দিনরাত রোদে পুড়ি না, তাও একটু আধটু মুখে লাগাই।”
রুহা ফিক করে হেসে বলে,
“মুরসালীন ভাই, আপনি কিউট! মানে… এক্সট্রা কিউট! কিন্তু এইটা কী—বেবি লোশন?”
বলেই চুপ করে তাকায়, হঠাৎ মুখ গম্ভীর করে বলে,
“এইটা কার জন্য? কার বেবি?”
“তুইই তো আমার জীবনের বেবি সমস্যা। ভাবলাম, তোকে সামলাতে বেবি লোশন দরকার পড়বে।”
রুহা জিভ কেটে হেসে বলে,
“আপনি না এক নম্বর চালাক! আমি একদিন এই ঘরের সব রহস্য ফাঁস করে দেবো।”
এরমধ্যে রুহা হঠাৎ মুরসালীনের বালিশটা তুলে নিয়ে বলে,
“এই যে বালিশ… কতদিন ধোয়া হয়নি, ঠিক বলছি না?”
মুরসালীন এবার একটু বিরক্ত হয়ে বলে,
“তুই কি আমার হাউসকিপার? নাকি বিয়ে করা বউ?”
“আমি তো প্রেমিকা। সব জিনিসে নজর রাখা লাগে, আপনি যদি কাউকে বালিশে শুইয়ে দেন?”
“তোর এই নাটক থামাবার জন্য দরকার এক কাপ চা।”
রুহা চটপট বলে,
“চা বানাবো! আপনার জন্য বানিয়ে দিই? তবে একটা শর্ত আছে… চা খেয়ে ‘রুহা তুমি ভালো বানাও’ বলতে হবে।”
মুরসালীন মুচকি হেসে বলে,
“তোকে দেখলেই আমার মুখে চিনি বেড়ে যায়, চা বানালেও আলাদা করে বলার দরকার পড়ে?”
রুহা থমকে যায়, চোখ বড় বড় করে তাকায়,
“এইটা… এইটা আপনি কি রকম মিষ্টি কথা বললেন? ওহ মাই গড! আমি রেকর্ড করিনি!”
মুরসালীন তখন নিজের চোখের চশমা খুলে, গম্ভীর স্বরে বলে,
“যা চা বানাতে যা, না হলে আবার প্রেমের নাটক শুরু করবি।”
রুহা চা বানাতে যাওয়ার ভান করে দরজা অবধি যায়, হঠাৎ ফিরে তাকিয়ে বলে,
“আপনি জানেন না… এই ঘরে ঢুকে পড়লে আর বেরোনোর রাস্তা থাকে না। আমি একদিন এখানেই থেকে যাবো, রোজ!”
মুরসালীন মুখ নিচু করে একটা পাতায় কলম চালায়, কিন্তু ঠোঁটের কোণে একটা লুকোনো হাসি খেলে যায়,
“তোর মতো ঝড় কেউ ঘরে রাখে না রুহা… তবুও যদি কোনোদিন রাখতেই হয়, তো দরজা বন্ধ করে রাখতে হবে।”
রুহা মিনিট দশেক পর দুই কাপ নিয়ে আসে।
একটা কাপ মুরসালীনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“এইটা আপনার জন্য। আমি আলাদা করে চিনি দিইনি।”
মুরসালীন কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দেয়। চুপচাপ এক সেকেন্ড… তারপর হঠাৎ মুখ কুঁচকে বলে,
“এটা চা? নাকি নিমপাতার জুস?”
“হ্যাঁ! আমি ভাবছিলাম আপনি এত গম্ভীর, আপনার শরীরেই বেশি কাজ দেবে এইটা!”
“তুই আমার জীবনে এসেছিস নিমপাতার মতোই তেতো হয়ে।”
রুহা মুচকি হেসে বলে,
“আর আপনি আমার জীবনে এসেছেন কাঠফাটা রোদ্দুর হয়ে—চোখ ঝলসে যায়, কিন্তু না তাকিয়ে থাকা যায় না।”
একটু নীরবতা।দুজনের মুখে কোনো কথা নেই।মুরসালীন তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে বলে,
“তুই একদিন আমার দুনিয়া পুড়িয়ে দিবি, জানিস?”
“পুড়াবো ঠিকই… তবে আগুনটা আমি নিজে নেবো। আপনার আঁচ কেউ পায়, সেটা তো আমি চাই না!”
মুরসালীন হেসে মাথা নাড়ে। বলার মতো কিছু খুঁজে পায় না।কিন্তু রুহা হঠাৎ তার পাশে এসে বসে, মাথা ঘাড়ে হেলিয়ে দিয়ে বলে,
“এই যে কথা বলেন না,কিন্তু আমি জানি, আপনি আমাকে ভালোবাসেন। চোখে তো লুকোতে পারেন, কিন্তু কাপে-কাপে চা খেয়ে যেভাবে ঠোঁট কুঁচকে রাগ দেখান—ওটাই আসল প্রেম!”
মুরসালীন এবার হালকা করে, একদম আস্তে… রুহার মাথায় হাত রাখে।
কিন্তু পরক্ষণেই বলে,
“ভালোবাসলে আগুনে পুড়তে হবে মেয়ে!আগুনের তাপ সহ্য করার ক্ষমতা আছে তোর?”
রুহা মুরসালীনের চোখে চোখ রাখে।লম্বা শ্বাস টেনে মুচকি হেসে বলে,
“একবার ভালোবাসি বলেই দেখুন,আপনি পাশে থাকলে আগুনে ঝাঁপ দিতেও রাজী।”
মুরসালীন মাথা নাড়ে।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দার দরজার সামনে গিয়ে বাইরে দৃষ্টি রাখে।কোলাহলের শব্দ কানে ভেসে আসছে বাইরে থেকে।মানুষ ব্যস্ত নিজেদের জীবন নিয়ে।বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা চলল ঘরে।রুহা তাকিয়ে রইলো তার মুরসালীন ভাইয়ের দিকে।হয়তো কাঙ্ক্ষিত উত্তরের আশায়।মুরসালীন খানিক্ষণ পর ধীর কণ্ঠে বলে,
“পাগলামি করিস না রুহা।ভালোবাসা এত সহজ নয়।তুই যেটাকে ভালোবাসা ভাবছিস সেটা আবেগ!আমি তো তোকে ভালোবাসি না রুহা।”
রুহা স্থির চোখে তবুও তাকিয়ে রইল।মুরসালীন ঘাড় ঘুরিয়ে রুহার দিকে তাকাতেই রুহা খিলখিল করে হেসে উঠে বলে,
“আপনার মতো ঝগড়ুটে লোককে কে ভালোবাসবে?আমি যে এত কিছু বলি,সেগুলো আপনি বিশ্বাস করেন মুরসালীন ভাই?”
“বিশ্বাস করি না,করতেও চাই না।এসব ভন্ডামি বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন দে।”
….
সন্ধ্যার আজান দিয়েছে খানিকক্ষণ আগে।এয়ারপোর্ট গেছে নাবিল,মুরসালীন ও নরুল শেখ।ইলমা বেগম নামাজ শেষ করে ড্রয়িংরুমে এলেন।শাশুড়ি মা সোফায় বসে পান চিবাচ্ছেন।আফনান দাদির পায়ের কাছে বসে কী যেন করছে।নাসরিন বেগম রান্না ঘরে চা বানাতে গেছেন।ইলমা বেগম ধীর পায়ে রান্না ঘরে ঢুকলেন।নাসরিন বেগমের শান্ত মুখ দেখে বললেন,
“কথা কেন বলছিস না নাসরিন?আমি কী এমন পাপ করেছি বল আমায়?”
নাসরিন বেগম ইলমা বেগমের দিকে না তাকিয়েই বললেন,
“তুমি আবার কী করবে?দোষ তো সব আমার।”
“এভাবে বলিস না।যা হয়েছে ভুলে যা।আজ তোর ভাই আসবে,এসে যদি দেখেন এই অবস্থা তাহলে ভীষণ রাগারাগি করবেন।”
এবার নাসরিন বেগম ফিরে তাকায় ইলমা বেগমের দিকে।
“ভাই আসছে বলে মিল দিতে এসেছ?”
“মোটেও না।তুই ছাড়া এবাড়িতে কথা বলার কে আছে আমার?”
নাসরিন বেগম হেসে ফেললেন।দুই কাপ চা বানিয়ে একটা ইলমা বেগমের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“বেশ,নাও মাফ করে দিয়েছি।”
ইলমা বেগম গাল ভরে হাসলেন।দোয়েল ও তার মেয়ে দোলা এসেছে।ভাই আসবে আর তারা দেখা করবে না?ড্রয়িংরুম থেকে তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে।তারা দুজন বের হলেন রান্না ঘর থেকে।রুহা আজ সুন্দর করে সেজেছে বাবাকে দেখানোর জন্য।গাঢ় নীল রঙের একটা থ্রি-পিস পড়ে চুল গুলো বেননি গেঁথে গলায় ওড়না ঝুলিয়েছে।হাতে কাঁচের রেশমি চুরি।নিজেকে ভালো করে দেখে দৌঁড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে দেখল ফুপি আর দোলাও চলে এসেছে।রুহা দোলার পাশে এসে বসে বলল,
“আপু দেখো তো কেমন লাগছে আমায়?”
দোলা মুচকি হাসল।
“কিরে তুই এত সেজেছিস কেন?”
“বাবা বলেছিল-‘আম্মু বাবা আজকে আসবে,আপনি সুন্দর করে সাজবেন কেমন?’”
“বাহ,পাপাকি পারি।”
রুহা খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।আফনান রুহার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“ডার্লিং তোমাকে আজ দারুণ লাগছে।চলো আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়েটা করে আসি।”
সবাই হেসে উঠল আফনানের কথা শুনে।রুহা ঠোঁট টিপে হেসে মনে মনে বলল-‘বিয়ে তো করবই,তবে তোকে নয় তোর গম্ভীর ভাইকে।’”
সদর দরজার বেল বেজে উঠল।রুহা লাফিয়ে উঠে দৌঁড়ে সদর দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই চোখের সামনে কামরুল শেখের হাস্যজ্বল মুখশ্রী ভেসে উঠল।রুহা ঝাঁপটে জড়িয়ে ধরল বাবাকে।খুশিতে মেয়েটা হুহু করে কেঁদে উঠল।কামরুল শেখ গাল ভরে হাসলেন মেয়ের পাগলামি দেখে।নরুল শেখ ও নাবিল বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন।মুরসালীন গম্ভীর মুখে চাচার পাশে দাঁড়িয়ে রুহার কান্না দেখতে ব্যস্ত।কামরুল শেখ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“কাঁদছিস কেন পাগল মেয়ে?এসেছি না আমি?”
“বাবা তুমি খুব পঁচা।কতদিন পর তুমি এসেছ।”
“আর যাব না মা।”
রুহার দাদি পাতলা গড়নের শরীর নিয়ে এগিয়ে এলেন।রুহা বাবাকে ছাড়তেই দাদি কামরুল শেখকে জড়িয়ে ধরলেন।কামরুল শেখ মায়ের মাথায় চুমু এঁকে বললেন,
“ভালো আছো মা?”
দাদি কানেই শুনলেন না ছেলের কথা।নরুল শেখ ভাইকে ভেতরে নিয়ে এলেন।সোফায় বসতেই একে একে সবার সাথে কথা বললেন।ইলমা বেগম শান্ত হয়ে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।এখনো তার কথা হয়নি স্বামীর সাথে।খানিকক্ষণ পর নরুল শেখ বললেন,
“ভাবি ভাইকে নিয়ে ঘরে যান।ভাই ফ্রেশ হয়ে একটু বিশ্রাম নাও,তারপর নাহয় কথা বলা যাবে।”
কামরুল শেখ উঠে দাঁড়ালেন।নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালে ইলমা বেগম স্বামীর পেছন পেছন যায়।বাবা প্রস্থান করতেই রুহা ফট করে পিছু ফিরে তাকায়।মুরসালীন চোখ ছোটো করে বলে,
“পেত্নী সেজেছিস কেন?”
রুহা ফ্লাইং কিস ছুড়ে বলে,
“জান, পেত্নী না জানেমান বলতে শেখুন।এত সুন্দর মেয়ে কোথায় দেখেছেন আপনি?একটু লাইন মারার চেষ্টা করে দেখুন,ঠিক পটে যাব।”
“পটে গেলে বিরাট সমস্যা।বেহুদা টাকা খরচ করার কোনো মানে হয় না।এমনিতেই আমি গরিব মানুষ।”
#চলবে…?