#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
৭.
বিকেল বেলা বাহার বাবু ছাদের মেঝেতে পাটির উপর বসে খেলনা দিয়ে খেলছে।রাইমা আর রুহা পাশেই বসে আছে চুপটি করে।আফনান নিচে গেছে ওয়াশরুমে।রুহা একদম নীরব হয়ে বাহার বাবুর খেলা দেখছে।রাইমা বেশ কিছুক্ষণ ধরে খেয়াল করছে রুহাকে।এই মেয়ে এত শান্ত কখনোই থাকে আর আজ মনে হচ্ছে শান্ত সাগরের মতো নিস্তব্ধ।রাইমা হঠাৎ করেই বলল,
“মন খারাপের কারণ জানতে পারি?”
রুহা বোনের দিকে তাকাল।রাইমা ভ্রু উঁচিয়ে পলক ফেলল।রুহা বোনের কোলের উপর মাথা রেখে বলল,
“আপু আমি যদি কাউকে ভালোবাসি তাহলে কী বাবা মেনে নিবে?”
রাইমা বোনের মাথায় হাত রেখে বলল,
“বাবা মানবে না সেই সম্পর্ক।কিন্তু তুই যদি কাউকে ভালোবেসে থাকিস এবং মনে করিস তুই ঐ মানুষটার হাত ধরে সারাদিন কাটাতে পারবি তাহলে বাবার কথা ভাববি না।”
“বাবাকে কষ্ট দিবো কী করে?”
“আমিও তো বাবার কথা মতোই সংসার সাজিয়েছিলাম রুহা।”
রুহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“একটা কথা বলি আপু?কাউকে বলবি নাতো আবার?”
“বলব না।”
“আমি..আমি মুরসালীন ভাইকে ভালোবাসি।”
“জানি।”
রুহা হতভম্ব হয়ে অবাক চোখে রাইমার দিকে তাকাল।রাইমা বলল,
“তোর চোখ বলে দেয় ঐ দৃষ্টি সারাক্ষণ কাকে খুঁজে বেড়ায়।তোর চঞ্চল মন যে শুধু ওর কথা ভাবে, সেটা আমি জানি।”
রুহা গালে হালকা লালচে রঙ ভরিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। হাত দুটি কাঁপছিল, বুকটা কেমন অদ্ভুত করে ধড়ফড় করছিল। সে বোনের কোল আরও শক্ত করে ধরা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আপু… আমি ভীষণ ভালোবাসি… কিন্তু মনে হয় আমি একা। মুরসালীন ভাই… আমাকে হয়তো ভালোবাসেন না।”
রাইমা মৃদু হাসি দিয়ে তার কাঁধে হাত রাখল,
“শোন রুহা… কখনো কখনো মানুষ নিজের অনুভূতি বোঝায় না, কিন্তু তোর ভালোবাসা সত্যি। হারানো মনই একদিন তোর শক্তি হবে, আর তুমি দেখবি… যে মনটা এখন কাঁদছে, সেটাই তোর জন্য নতুন আশা নিয়ে আসবে।”
ছাদের নরম রোদ আর বাহার বাবুর হেসে ওঠা যেন সব মিলিয়ে রুহার কান্নাকে একটু শান্তি দিয়ে গেল। সে বোনের কোল থেকে চোখ সরিয়ে তাকাল দূরের আকাশের দিকে, মনে মনে ঠিক করল, ভালোবাসার জন্য সে হাল ছাড়বে না।হাল ছেড়ে দিলে ঐ ছন্নছাড়া মানুষটাকে সে কী করে পাবে?
…
সন্ধ্যা বেলায় গ্রীন রোডের এক কোণার ছোট টং-এ মুরসালীন চা খাচ্ছিল। হাতে চায়ের কাপ, আর বাইরে হালকা বাতাসে পাতা সারসার করছে। দূরে সিটি লাইটগুলো ঝিকমিক করছে, আর মানুষের হেঁটে চলার শব্দ এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতার সঙ্গে মিশে গেছে।তার পাশে ফারদিন বসে চায়ের কাপ হাতে কৌতূহল ভরা চোখে জিজ্ঞেস করল,
“রুহার ব্যাপারে তোর ফিলিংস কী?”
মুরসালীন চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া নাকের কাছে আসতে দেয়া স্বভাবসুলভ ধীরচেতা ভঙ্গিতে বলল,
“ফারদিন কিছু জিনিস হৃদয়ে যতই গেঁথে রাখতে ইচ্ছে করুক না কেন, সব কিছু নিজের করে রাখা যায় না। অনেক সময় ভালোবাসা থাকা মানেই যে নিজের করে পেতে হবে তা নয়।”
“বাঁধা কোথায়?তুই তো জানিস রুহানি নিজেও তোকে ভালোবাসে।”
মুরসালীন একটু থেমে, চায়ের ধোঁয়া চোখে ভেসে আসতে দিতে দিতে বলল,
“ঐযে বললাম,ভালোবাসা পেতেই হবে সেটা কোথাও লেখা নেই।হয়তো এটা ওর আবেগ,বয়স হওয়ার সাথে সাথে বুঝে যাবে।তা ছাড়া বয়সেরও তো একটা ব্যাপার আছে।”
ফারদিন একটু হেসে বলল,
“ কিন্তু চোখ তো সব বলে দেয়, ভাই। তুই ভীষণ ভালোবাসিস, তাই না?”
মুরসালীন চায়ের কাপ রেখে চুপচাপ তাকাল দূরের আলোয়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে বলল,
“অনেক ভেবেছি,এভাবে আর কতদিন?এবার নাহয় একটু স্বার্থপর হব।”
ফারদিন কিছু আন্দাজ করতে পেরে মুচকি হাসল।দুজনেই চায়ের কাপ ধরে চুপচাপ বসে থাকল।
রাত ৯টার পর মুরসালীন বাড়ি ফিরল স্টুডেন্ট পড়িয়ে।ড্রয়িংরুমে প্রীতম,দোলা,রুহা আর রাইমা বসে আছে।বাহার বাবু রুহার বুকের সাথে লেগে চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে।ওরা আড্ডা দিচ্ছিল।রুহা আড়চোখে সদর দরজার দিকে তাকাতেই মুরসালীনের ক্লান্ত মুখশ্রী দেখে বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল।সারাদিন ব্যস্ত থাকে মানুষটা।
মুরসালীন দরজার কাছে দাঁড়িয়ে এক মুহূর্ত রুহার দিকে তাকাল, তারপর খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বাড়িতে ঢুকল।
দোলা মজা করে বলল,
“আরে! আমাদের প্রফেসর সাহেব ফিরেছে। কতজনের জীবন আজ বদলে দিলে বলো তো?”
মুরসালীন হালকা হেসে উত্তর দিল,
“জীবন বদলানো আমার কাজ নয়, দোলা। আমি শুধু পড়াই।”
মুরসালীন শান্তভাবে রুহার পাশ দিয়ে গেল। রুহা বুকের সঙ্গে বাহার বাবুকে আঁকড়ে ধরে ছিল, মুরসালীন পাশ দিয়ে যেতে যেতে খুব আস্তে একবার বাহার বাবুর মাথায় হাত রাখল।
রুহা কিছু বলল না, শুধু অনুভব করল—যে মানুষটা সারাদিন বাইরে কাটিয়ে এইভাবে শান্ত স্বরে ফিরে আসে, তার ক্লান্ত চোখের ভেতর কত অজানা গল্প লুকিয়ে আছে।
রাইমা মজা করে বলল,
“মুরসালীন,তুমি না একদম বোরিং হয়ে যাচ্ছ। কোনোদিন হাসি-ঠাট্টা করো না। দেখো না প্রীতমকে, সারাদিন কেমন হাসিখুশি থাকে।”
মুরসালীন চেয়ারে বসে চশমাটা খুলে বলল,
“সবাই হাসি-ঠাট্টার পছন্দ করে না, কারও কারও হাসি ভিতরে চাপা পড়ে থাকে।”
তার এই কথায় ঘরের পরিবেশ মুহূর্তে চুপচাপ হয়ে গেল। রুহা আড়চোখে দেখল—লোকটার ঠোঁটে কোনো হাসি নেই, কিন্তু চোখে এক অদ্ভুত ক্লান্ত নীরবতা।দোলা বিষয় পাল্টানোর জন্য বলল,
“চলো, আজকেই আমার বানানো কেক খাই।”
রুহা কেক আনতে উঠল, কিন্তু কেকের প্লেট হাতে মুরসালীনের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ দ্বিধায় দাঁড়িয়ে রইল।
“আপনি…মানে চিনি দিব?”কণ্ঠে এক অদ্ভুত মৃদুতা।
মুরসালীন আড়চোখে রুহাকে দেখে বলল,
“লাগবে না।”
প্রীতম হঠাৎ হাসতে হাসতে বলল,
“আরে ভাই, আজ এত চুপ কেন? রুহা কিছু বলেছে নাকি?”
“ও আর কী বলবে?সারাদিন’ই বকবক করে মাথা খায়।”
রুহা মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“মুরসালীন ভাই কথায় কথায় আমাকে অপমান করবেন না।আমার সম্মান বলে একটা কথা আছে।”
“তোর আবার সম্মানও আছে?”
সবাই হেসে ফেলল।রুহা আড়চোখে চোখ পাকিয়ে মুরসালীনের দিকে তাকাতেই দু’জনের চোখাচোখি হলো।রাত বাড়ল। বাহার বাবুকে কোলে নিয়ে রুহা নিজ ঘরে ফিরল। রাইমা আগেই চলে এসেছিল। দরজাটা বন্ধ করে সে নিঃশব্দে জানালার পাশে দাঁড়াল। দূরের আলো ঝিকমিক করছে, হাওয়া বইছে। চোখ বন্ধ করল রুহা, মনে পড়ল বিকেলের কথা—আপুর কোলের উপর মাথা রেখে স্বীকারোক্তি, আর মুরসালীনের সেই নীরব মুখ।
হঠাৎ বাইরে করিডোরে পায়ের শব্দ। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মুরসালীনের স্বর,
“বাহার বাবুর মাথায় যেন রাতে ঠান্ডা না লাগে… ওর কাঁথা টেনে দিস।”
রুহা হকচকিয়ে গেল। দরজা খুলে তাকাতেই দেখল,মুরসালীন পেছন ফিরেই চলে যাচ্ছে। শুধু সেই চিরচেনা গম্ভীর ভঙ্গি, আর কোনো কথা নেই।
রুহা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
“কী করলে আপনাকে পাব আমি?”
…
দিন যাচ্ছে চোখের পলকে।আজ সপ্তা খানিক ধরে আদিব স্যার রুহাকে পড়াচ্ছে।রুহা সাহস করে বাবাকে বলেছিল সে আদিব স্যারের কাছে পড়তে চায় না।কামরুল শেখ ভীষণ রাগারাগি করেছেন এই নিয়ে।আজ শনিবার কলেজ বন্ধ।রুহা জান্নাতের বাসায় এসেছে বাহার বাবুকে নিয়ে। জান্নাতের চারতলা বাসার দোতলায় বড় বারান্দায় বসে রুহা বাহার বাবুর ছোট হাত ধরে খেলনা সাজাচ্ছে। জান্নাতের কোলে বাহার বাবু মাঝে মাঝে হেসে উঠছে। জান্নাতের বাড়ির সামনে রোদের ছাঁয়া একটু লম্বা হয়ে এসেছে। দূরে গলির শেষপ্রান্তে একটা ঠেলাগাড়ি ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে।
রুহা হঠাৎ চুপচাপ ফোন বের করল। কয়েক সেকেন্ড স্ক্রিনে নাম দেখে থেমে থাকল,মনে হচ্ছে কল দেবে কি না ভাবছে। শেষমেশ সাহস করে নম্বর টিপে দিল।
“হ্যালো।”
ওপাশে সেই পরিচিত গম্ভীর স্বর,শব্দে যেন নীরবতার ওজন,
“হুম, বল।”
“আপনি আছেন কোথায়?”
“রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি… কেন?”
“আসবেন? এখানে?”
“এখানে মানে?”
“জান্নাতের বাসায়!একটা দরকার আছে।”
“কী দরকার?”
রুহা ঠোঁট কামড়ে বলল,
“এখন বলব না,এসে শুনুন।”
ওপাশে কয়েক সেকেন্ড নীরবতা, তারপর সংক্ষিপ্ত উত্তর,
“আচ্ছা।”
কল কেটে গেল। রুহার বুকের ভেতর হালকা ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল,সে জানে মুরসালীন সহজে “আচ্ছা” বলে না।প্রায় পনেরো মিনিট পর নিচে বাইকের শব্দ ভেসে এলো। জান্নাত বারান্দা থেকে উঁকি দিয়ে বলল,
“আরে, তোর প্রফেসর ভাই এসে গেছে!”
রুহার বুক ধপ করে উঠল। সে দ্রুত বাহারকে কোলে নিয়ে বারান্দা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। নিচে গলির মোড়ে কালো শার্ট, হেলমেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে মুরসালীন। কপালে হালকা ঘাম, চোখে সেই চিরচেনা শান্ত দৃষ্টি।
“এত তাড়াতাড়ি এলেন?” রুহা সামান্য অবাক স্বরে বলল।
“ডাকলি তাই আমি এলাম।”
“কিন্তু আমি তো বলিনি কী দরকার…”
“তোর ডাক মানেই দরকার।”
রুহা এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল,লোকটা কেমন করে যেন কথার ভেতর আবেগ ঢেকে রাখে।একবার ভীষণ গম্ভীর আবার খুবই শান্ত।
“চলুন…”
“কোথায়?”
রুহা একটু দ্বিধা করল, তারপর একদম সরাসরি বলল,
“ঘুরতে নিয়ে যাবেন মুরসালীন ভাই?”
মুরসালীন ভ্রু তুলল,
“তুই আমায় ডেকে এনেছিস ঘুরতে যাওয়ার জন্য?”
“হ্যাঁ,যাবেন না?”
“তুই জানিস তো আমি ঘোরাঘুরি পছন্দ করি না।”
“জানি,তবু আজ যাবেন। আমার মন ভালো নেই।”
মুরসালীন এক মুহূর্ত চুপ করে রইল, তারপর হেলমেট বাড়িয়ে দিল,
“চল কিন্তু এটা পড়ে বস। গতি বাড়াব না।”
রুহা হেসে হেলমেট নিল।বাহার বাবুকে মুরসালীন সামনে বসিয়ে দিতেই রুহা পেছনে এসে বসলো। চুল উড়ে এলো মুখের সামনে। বাইক ধীরে ধীরে গলির ভেতর দিয়ে বেরিয়ে গেল।
শহরের রাস্তায় হালকা ট্রাফিক, রাস্তার পাশে পুরনো গাছ, কিছু দোকানের শাটার বন্ধ, কিছু খোলা। মুরসালীন বাইক চালাচ্ছে নির্ভুল ভঙ্গিতে,না বেশি কথা, না একদম নীরব। মাঝে মাঝে রুহা আড়চোখে তার মুখশ্রী দেখছে—নিঃশব্দ, কিন্তু উপস্থিতির মধ্যে একধরনের নিরাপত্তা।
“কোথায় যাব?”মুরসালীন জিজ্ঞেস করল।
“যেখানে মানুষ কম।”
“মানুষ কম,কিন্তু তোর গল্প বেশি?”
“আমি চুপও থাকতে পারি।”
“তুই আর চুপ? অসম্ভব।”
রুহা হালকা হেসে বলল,
“আজ পারব।”
বাইক থামল শহরের প্রান্তে একটি ছোট পার্কের পাশে। সূর্যাস্তের আগে হালকা সোনালি আলো ঘাসের উপর পড়ছে। দু’জনেই পার্কে ঢুকল। রুহা বেঞ্চে বসল, বাহার বাবু মুরসালীনের কোলে।মুরসালীন বাহারকে বলল,
“আব্বা আপনি কী খাবেন?”
মুরসালীন মামার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“চককেট দাউ?”
মুরসালীন মুচকি হাসলো।
আড়চোখে রুহার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি কী খাবেন?”
“পানি খাব।”
“শুধু পানি?”
“হুম।”
মুরসালীন বাহারকে নিয়ে এক বোতল পানি আর চকলেট কিনে নিয়ে এলো।সে রুহার পাশে বসতেই একটা ১৪-১৬বছর বয়সী মেয়ে, ফুল বিক্রেতা।সে মুরসালীনকে বলল,
“ভাই ভাবিরে একটা ফুল কিন্না দেন।”
রুহা হতবাক হয়ে মুরসালীনের দিকে তাকাল।মুরসালীন ঠোঁট কামড়ে আড়চোখে রুহার বিস্মিত বদন দেখে বলল,
“কত দিব?”
“একটা ৩০ টাকা।”
“৩টা দাও।”
মেয়েটা দুইটা লাল গোলাপ আর একটা সাদা গোলাপ মুরসালীনের হাতে দিয়ে বলল,
“আপনাগো বাচ্চাডা খুব সুন্দর।”
বাহার বাবু ড্যাবড্যাব করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।মুরসালীন বোধহয় ঠোঁট কামড়ে হাসল।লজ্জায় রুহার গাল গরম হয়ে এলো।সে কিছু বলার আগেই মেয়েটা চলে গেলো।
“মুরসালীন ভাই আপনি কিছু বললেন না কেন?”
“কী বলব?”
“আমি আপনার বউ?বাহার আমাদের বাচ্চা?”
মুরসালীন রুহার চোখে চোখ রেখে বলল,
“মনে মনে তো সেটাই ভাবিস।অন্য মানুষ বললে দোষ কোথায়?”
রুহা বলার মতো কোনো কথা খুঁজে পেল না।গলা শুঁকিয়ে কাঠকাঠ।
রুহা চুপচাপ বসে আছে, চোখে-মুখে গরম ভাব ছড়িয়ে আছে। বাহার বাবু চকলেট মুখে দিয়ে খুশি খুশি বসে আছে মুরসালীনের কোলে।
মুরসালীন ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি নিয়ে বলল,
“তোর ঐ ফুল বিক্রেতা বাচ্চাটার কথা মনে হচ্ছে বেশ লাগছে।”
রুহা ভ্রু কুঁচকাল।
“মানে?”
“মানে,তুই তো একটু আগেই মুখ লাল করলি। আমি তো কিছু বলিনি, কিন্তু তোর ভাব দেখেই মেয়েটা ঠিক ধরেছে।”
রুহা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল,
“আপনি ইচ্ছা করে ফুল নিলেন, তাই না?”
“হুম,ভাবলাম, যদি একদিন তুই সত্যি… মানে…” মুরসালীন ইচ্ছা করে বাকিটা না বলে থামল।
“মানে?”
মুরসালীন মজা পেয়ে বাহার বাবুর দিকে তাকিয়ে বলল,
“যদি একদিন তুই সত্যি ‘বউ’ হয়ে যাস, তখন তো ফুল কিনতেই হবে, তাই প্র্যাকটিস করলাম।”
রুহার গাল আরও লাল হয়ে গেল।
“আপনি…! আপনার কোনো কাজ নেই?কেমন কেমন কথা বলছেন।”
মুরসালীন গম্ভীর মুখে বলল,
“আছে তো!তোর মুখ লাল করার দায়িত্বও আমার কাজের লিস্টে আছে।”
রুহা ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করল।
“আমি কিন্তু এখনই চলে যাব..”
“যা, তোর বাহার বাবু আমার কাছেই থাকবে।”
“কী?! বাহার তো আমার!”
মুরসালীন হালকা ভ্রু তুলল।
“তাহলে আমিও..?”
রুহা এক মুহূর্ত চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর গম্ভীর ভান করে বলল,
“আপনি একদম বোরিং মানুষ!”
মুরসালীন হেসে ফেলল,
“তুই ঠিকই বলিস আমি বোরিং। আর তুই বোরিং-ই পছন্দ করিস।”
#চলবে..?