#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
৯.
“আপনার সাহস হয় কী করে আপুর গায়ে হাত তোলার?বউ করে ঘরে তুলেছেন তার মানে এই নয় যা ইচ্ছে তাই করবেন।”
রাইমা আতঙ্কিত হয়ে বলল,
“রুহা আস্তে কথা বল,বাড়িতে..”
রুহা রাইমাকে থামিয়ে দিয়ে কণ্ঠ শক্ত করে বলল,
“আস্তে কথা বলব কেন?এই লোক তোর গায়ে হাত তুলল কোন সাহসে?আমার মা বাপ তুলে গালি দিলো কোন সাহসে?”
“বোন প্লিজ চুপ কর।আব্বু বাড়িতে আছে,যদি এসব কানে যায়..”
রুহা ফের বোনকে থামিয়ে দিল।
“তোর বাপ যে ভুলটা করেছে সেটা নিজ চোখে দেখুক।”
রুহা দরজার সামনে গিয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করল।যে যার ঘর থেকে হুড়মুড়িয়ে বের হলেন রুহার চিৎকারে।ইলমা বেগম চোখে আতঙ্ক নিয়ে ছুটে এলেন মেয়র ঘরের কাছে।কামরুল শেখ পেছনে গম্ভীর মুখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে আসছেন।মুরসালীন নিজের ঘরের সামনে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।নাবিল মাকে সরিয়ে ঘরে প্রবেশ করল।রুহার রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখ দেখে চিন্তিত হলো।
সবাই জড়ো হতেই রুহা দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
“এখন সবাই সামনে দাঁড়িয়ে শুনুন। আমার বোনের গায়ে হাত উঠিয়েছে এই লোক। মা-বাপকে গালি দিয়েছে। আজকে বিচার করতে হবে, নইলে আমি এই লোককে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব।”
ইলমা বেগম রাইমার নত মাথার দিকে তাকিয়ে বাশারের দিকে তাকালেন।বাশার দোষ কাটার জন্য তড়িঘড়ি করে বলল,
“রুহানি ভুল বুঝছে আমায়।আমি..”
“আপনি চুপ করুন।”
রুহা থামিয়ে দিল বাশারকে।কামরুল শেখ ছোটো মেয়ের বেয়াদবির জন্য ঠাস করে গালে চড় মেরে বসলেন।রুহার চোয়াল হেলে পড়ল সেই থাপ্পড়ে।
“বেয়াদবি শিখেছিস কোথা থেকে?কিভাবে কার সাথে কথা বলতে হয় জানিস না?”
রুহা ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকাল।নাবিল বোনকে একহাতে জড়িয়ে ধরে বাবার চোখে চোখ রেখে শক্ত কণ্ঠে বলল,
“তার আগে আপনি সভ্যতা শিখুন আব্বু।রুহা এখন ছোটো নয় যে যখন তখন ওর গায়ে হাত তুলবেন।আগে কী হয়েছে সেটা শুনুন তারপর যা ইচ্ছা করবেন।”
নরুল শেখ রুহার মাথায় হাত রেখে বললেন,
“কী হয়েছে মা?”
রুহা শুকনো ঢোক গিলে চোখের পানি মুছে রাইমার দিকে একবার তাকাল।রাইমা যেন তাকে চোখের ইশারায় বলছে কাউকে কিছু বলিস না।রুহা লম্বা শ্বাস টানল।ভাইয়ের একহাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“দুলাভাই আপুকে অনেক নির্যাতন করে চাচ্চু।ওর গায়ে অব্দি হাত তোলে।ঊনিশ থেকে বিশ হলেই হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে মারধর করে।মুখের ভাষার যা তা অবস্থা।খানিকক্ষণ আগেও আপুকে থাপ্পড় মেরেছে,আব্বু আম্মুকে নিয়ে গালাগালি করেছে।”
ঘর জুড়ে নীরবতা।নাবিলের চোখের সাদা অংশ টুকু লাল বর্ণ ধারণ করল রাগে।কামরুল শেখ বাশারের দিকে তাকিয়ে ভারী কণ্ঠে বললেন,
“রুহা যা বলছে সব কিছু সত্য?”
বাশার আমতা আমতা করে বলল,
“রুহানির ভুল হচ্ছে আব্বু।”
রুহা এবার চিৎকার করে বলল,
“অমানুষের মতো কথা বলবেন না।এইটুকু বাচ্চার সামনে দিন রাত ঐ মেয়ের উপর অত্যাচার করে যাচ্ছেন তবুও একটুও লজ্জা হচ্ছে না আপনার?আমি নিজ চোখে দেখেছি আপনি আপুর গালে থাপ্পড় মেরেছেন।”
সবার চোখে এক অদৃশ্য আগুন, আর সেই আগুনের তাপ যেন প্রথমে গিয়ে লাগল নাবিলের বুকে।নাবিল হঠাৎ বাশারের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
এক মুহূর্তে তার মুষ্টিবদ্ধ হাত বাশারের মুখে গিয়ে আছড়ে পড়ল। তীব্র ঘুষির আঘাতে বাশার ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল। তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরে পড়তে লাগল, সাদা শার্ট লালচে রঙে ভিজে গেল মুহূর্তে।
“ভাই থামো!”
রাইমা ছুটে এসে নাবিলের হাত আঁকড়ে ধরল। চোখে জল ভরা।সে কান্নারত কণ্ঠে বলল,
“প্লিজ ভাই, থামো না হলে সব শেষ হয়ে যাবে!”
নাবিল থামল না। আবারও বাশারকে চুলের মুঠি ধরে উঠিয়ে আঘাত করল বুকের পাঁজরে।
“তোর সাহস কতবড়ো আমার বোনের গায়ে হাত তুলিস? তোর মতো নীচকে আমি আজ এখানেই পিষিয়ে ফেলব।”
রাইমা কাঁদতে কাঁদতে দুই হাতে ভাইয়ের বুকে ধাক্কা দিল,
“ভাই থামো, প্লিজ থামো। আমার সংসারটা ভেঙে যাক সেটা আমি চাই না!”
নাবিল দাঁত চেপে বোনের দিকে তাকাল, চোখ লালচে আর ক্রোধে কাঁপছে পুরো শরীর।
“সংসার? এটাকে সংসার বলে না বোন, এটা তোর জন্য জাহান্নম!তুই যদি চুপ থাকিস, তাহলে তুই শুধু নিজেকে না, তোর সন্তানের পুরো জীবন শেষ করে দিবি।”
ইলমা বেগম কাঁপা গলায় বললেন,
“নাবিল, থাম বাবা।”
মুরসালীন সেই সময় চুপচাপ ভিড় থেকে এগিয়ে এলো। গম্ভীর, ঠান্ডা কণ্ঠে বলল,
“নাবিল ভাই, শান্ত হও।”
নাবিল হাত থামাল ঠিকই, কিন্তু চোখে এখনও দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। বাহার বাবু বাবার মুখে রক্ত দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।রাইমা নিচে বসে গায়ের ওড়না দিয়ে বাশারের মুখের রক্ত মুছিয়ে দিচ্ছে।মুরসালীন বাহার বাবুকে কোলে নিয়ে দরজার নিকট এলো।ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে কামরুল শেখের দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে বলল,
“টাকা দেখে জানো’য়ারের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়ে জীবন নষ্ট করাকেই বোধহয় বড়োলোকি কারবার বলে।”
কথাটা কামরুল শেখের গায়ে বিঁধল বোধহয়।তিনি চোখ গরম করে মুরসালীনের দিকে তাকালেন।মুরসালীন ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো মুহুর্তেই।
ড্রয়িংরুমে সবাই জড়ো হয়ে বসেছেন।বাশার মাথা নিচু করে বসে আছে এক কোনায়।রাইমা ওড়নার আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছে।রুহার গাল ফুলে গেছে বাবার হাতের থাপ্পড়ে।পর পর দুটো থাপ্পড় এক পাশে লাগায় ব্যথায় জায়গাটা টনটন করছে।মুরসালীন রুহার পাশেই।সে রুহার গালের দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক চোখে।লোকটার কী বুকে ব্যথা হচ্ছে?যন্ত্রণা হচ্ছে রুহার ব্যথায়?
সে নিঃশব্দে হাত বাড়িয়ে গালের ফোলাভাবটা দেখতে চাইল, কিন্তু মাঝপথে হাত থেমে গেল।
খুব নিচু অথচ স্পষ্ট স্বরে বলল,
“ব্যথা করছে?”
রুহা তার দিকে তাকাল না। চোখ নামিয়ে ওড়নার আঁচল দিয়ে গাল চাপা দিল। ঠোঁট শক্ত করে চেপে ধরেছে কান্না আটকানোর জন্য।
ঠিক সেই সময় কামরুল শেখ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“আজকের ঘটনা বাড়ির জন্য লজ্জার। জামাই যদি মেয়ের গায়ে হাত তোলে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। বাশার, তুমি কি নিজেকে মানুষ বলে দাবি করো? “
বাশার মাথা নিচু করে বসে রইল। ঠোঁট ফেটে রক্ত শুকিয়ে গিয়েছে, নাক ফুলে আছে। কিন্তু দোষ স্বীকার করার সাহস নেই তার।মুরসালীন তাচ্ছিল্য হেসে কামরুল শেখের দিকে তাকাল।যে মানুষটা নিজেই কারণে অকারণে মেয়ের গায়ে হাত তোলে সেই লোক আবার গলা তুলে কথা বলছেন।
নাবিল গলা শক্ত করে বলে উঠল,
“আব্বু, এই লোককে যদি আজকে ক্ষমা করেন তবে মনে রাখবেন আপনার এই ছেলে কোনোদিন আপনাকে ক্ষমা করবে না। আমার বোনকে দিয়ে টাকা আর দাপটের লেনদেন করেছেন, সেই দোষের শাস্তি আমার বোন কেন ভোগ করবে?”
ইলমা বেগম আঁচল দিয়ে চোখ মুছে বললেন,
“শুনো,মেয়ের জীবনটা বাঁচাও। সংসার মানে শুধু চার দেওয়াল নয়, ভেতরের শান্তি। যদি সেই শান্তি না থাকে তবে সংসারকে জোর করে টেনে নেওয়ার মানে হয় না।”
কামরুল শেখ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। প্রথমবারের মতো তার গলা কেঁপে উঠল।
“তুমি যা করেছ বাশার, সেটা মাফ করার মতো না। আজ থেকে আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলার কথা চিন্তাও করবে না। নইলে নিজের হাতে পুলিশে সোপর্দ করব।”
রুহা চোখ ভরা জল,কণ্ঠে দমক অটল বজায় রেখে বলল,
“শুধু সতর্ক করলেই হবে না আব্বু।এই লোক যে এর পরেও কিছু করবে না সেটার গ্যারান্টি দিতে পারবে?আমার বোনের ওপর যদি আবার হাত ওঠে, তবে আমি নিজেই থানায় নিয়ে যাব।”
রাইমা কাঁপতে কাঁপতে বোনের হাত চেপে ধরল। তার চোখে অশ্রু, কিন্তু মুখে অদ্ভুত এক কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠল।রুহাও বোনের চোখে চোখ রাখলো।
মুরসালীন তখনও চুপচাপ রুহার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছিল, সে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না। চোখের গভীরে জমে থাকা অনুভূতিগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠল।
কামরুল শেখ চেয়ারে হ্যালান দিলেন। তার ভারী কণ্ঠ আবারও উঠল,
“বাশার,আমার মেয়ের কাছে ক্ষমা চাও।যেদিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে সেদিন এসে আমার মেয়েকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।”
বাশার এক অবাক কাণ্ড করে বসলো।ঠোঁটের কোণায় হাত বুলিয়ে উঠে দাঁড়াল।কামরুল শেখের দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলল,
“আপনার মেয়েকে আপনি’ই রাখুন।আমার দরকার নেই ওকে।”
বাশার হনহন করে সদর দরজা বেরিয়ে গেল।রাইমা মাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠল।নাবিল রাগের চটে হাতের ফোন ফ্লোরে ছুড়ে মেরে জায়গা ত্যাগ করল।রুহার গাল বেয়ে চোখের জল গুলো ঝর্ণার মতো নামছে।রাইমা শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।নরুল শেখ কী করবেন বুঝে উঠতে পারলেন না।তিনি নাসরিন বেগমকে বললেন,
“পানি নিয়ে এসো।”
রাইমা বলল,
“আম্মু তুমি বিশ্বাস করো আমি এই সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি নিজের সবটুকু দিয়ে।ঐ লোকটা প্রত্যেকদিন আমার গায়ে হাত তোলে।একটু কিছু হলেই মুখে যা আসে তাই বলে গালাগালি করে।ও মা তুমি বলো এভাবে সংসার হয়?বিয়ের ছয়টা বছর পাড় হলো,আর এই ছয়টা বছর’ই আমার জন্য জাহান্নামের মতো ছিল।আমি সবটা দিয়েও কিছু ধরে রাখতে পারিনি মা।ঐ লোকটা শুরু আমার শরীর চিনেছিল কিন্তু কখনো আমাকে বুঝতে চায়নি।”
লজ্জায় মুরসালীনের চোখ বন্ধ হয়ে এলো।কামরুল শেখ বাকরুদ্ধ হয়ে মেয়ের আহাজারি শুনলেন।বাহার বাবু পায়ের এক পা জড়িয়ে ধরে গুনগুন করছে।তিনি নাতির দিকে একবার তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।মেয়ের সামনে যেন আর এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না তিনি।তিনি নিঃশব্দে নিজের ঘরে চলে গেলেন।ইলমা বেগম মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।চোখের জল যে তারও ভাঙছে।রাইমা আবার বলল,
“জানো মা?ঐ অমানুষটা আমার ছেলেকে একটু ভালোবাসে না।কোলে নিয়ে একটু আদর করে না।আমার এই দুধের বাচ্চাটার কী দোষ বলো মা?আমার ছেলেটা কী কিছু বুঝে?”
রাইমার বুক ফাটা আর্তনাদ শুনে সবার চোখে পানি চলে এলো।নরুল শেখ রইমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
“আমরা আছি তোর সাথে।”
…
রাত তখন প্রায় ১২টা ছাড়িয়েছে। বাড়ির সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। দু’তলার ছাদে একা দাঁড়িয়ে রুহা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলো।কালো আকাশে আধখানা চাঁদ, চারপাশে নীরবতা। হঠাৎ মনে হলো বুকের ভেতরে কিছু একটা গুমরে উঠছে।
ঠিক তখনই ছাদের দরজা খোলার শব্দ হলো।
রুহা ঘুরে দেখল-মুরসালীন ভাই।
গম্ভীর মুখে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সে কিছু না বলে পাশে দাঁড়িয়ে রইল। হাওয়ায় দুজনের চুল উড়ে যাচ্ছে, কিন্তু কারও মুখে কোনো শব্দ নেই।
অবশেষে রুহাই নীরবতা ভাঙল।
“ঘুমাননি কেন?”
মুরসালীন রুহার দিকে ফিরে দাঁড়াল।সেই রক্তজমাট গালে চোখ রেখে বলল,
“আজ সকালে চাচা তোর গায়ে হাত তুলেছিল না?”
রুহা দূর আকাশে তাকিয়ে বলল,
“বাবা’ই তো।সমস্যা নেই।”
থেমে আবার বলল,
“মাস্টার মশাই,আমি একটা কথা বলব, রাগ করবেন না।”
মুরসালীন শান্ত চোখে তাকাল,তবে কিছু বলল না।
রুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ঠোঁট কাঁপছে।
“আপনার কাছে না বললেই পারতাম,কিন্তু বুকের ভেতরে আর ধরে রাখতে পারছি না। আপনি কি জানেন, আমি প্রতিদিন কী যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাই? আমি আপনাকে ঘৃণা করতে চাই, আপনাকে অপছন্দ করতে চাই,কিন্তু পারি না।”
তার কণ্ঠ কেঁপে উঠল।
“আপনি যখন আমার সামনে থাকেন, তখন মনে হয় পুরো পৃথিবী যেন থেমে গেছে। অথচ ঠিক সেই মুহূর্তেই মনে করিয়ে দেয়া হয়,আপনি আমার কাছে কিছুই না। শুধু একজন ভাই।আব্বুকে আমি আজ সাহস করে বলেছিলাম আপনার কথা।সে আমার গালে থাপ্পড় মেরে নিজের উত্তর দিয়ে দিয়েছেন।”
মুরসালীনের ভেতরটা ঝাঁকুনি খেলেও সে নির্বিকার দাঁড়িয়ে রইল। তার ঠোঁট শক্ত হয়ে আছে, চোখের দৃষ্টিতে কোনো অভিব্যক্তি নেই।
রুহা এবার চোখ ভিজিয়ে ফেলল।
“আমি জানি, আপনি আমাকে কখনোই নিজের করে নেবেন না। পরিবার, সমাজ, সব বাধা আমাদের আলাদা করে রেখেছে। কিন্তু বলুন তো, আপনি কীভাবে পারেন এভাবে চুপ করে থাকতে?”
একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল তার গালে।
“আমি যদি আপনাকে একটুও না চাইতাম, তাহলে এত কষ্ট হতো না। আপনি জানেন, এই ভালোবাসা একটা শাস্তির মতো,যার কোনো শেষ নেই।প্রত্যেকটা দিন নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আজ ভীষণ দুর্বল লাগছে নিজেকে।আমায় কী একটুও ভালোবাসা যায় না মুরসালীন ভাই?”
রুহা হাত দিয়ে চোখ মুছল।
“আপনি কিছু বলছেন না কেন? অন্তত একবার বলুন-আমাকে কখনো মনে হয়েছিল আপনার প্রিয়? নাকি আমি সবটাই কল্পনা করেছি?”
মুরসালীন দৃষ্টি সরিয়ে নিল। তার চোখে গভীর অন্ধকার জমে উঠল।নিঃশব্দে গিয়ে দোলনায় বসল।রুহার ব্যথাতুর চোখে চোখ রেখে বলল,
“তোর কখনো মনে হয়েছে আমি তোকে ভালোবাসি?কখনো আমার চোখে চোখ রেখে তোর প্রতি আমার অনুভূতি পড়েছিস?”
রুহা হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল।ওড়না মুখে চেপে হুহু করে কেঁদে উঠল।মুরসালীন দোলনা থেকে নেমে রুহার পাশে মেঝেতে বসে রুহার মাথায় হাত রাখল।কিছুক্ষণ পর রুহার চিবুক উঁচু করে তার চোখে চোখ রাখলো।চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলল,
“যেদিন সব ছেড়ে আমার হাত ধরার মতো সাহস হবে সেদিন বলবি-মুরসালীন ভাই,আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
#চলবে..?