#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
১০.
“মা,এসব শাড়ি পড়েই কেন তাদের সামনে যেতে হবে?”
সালেকা বেগম রিফার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“তোর বাবা এই শাড়ি এনেছেন কালকে।বলেছেন এটা পড়ে যেন পাত্র পক্ষের সামনে যাস।”
রিফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“মা,এখন বিয়েটা না দিলেই না?আমি এখনো এসবের জন্য প্রস্তুত নই।”
“নাবিলের জন্য অপেক্ষা করতে চাইছিস?”
রিফা মায়ের মুখ পানে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলল,
“সে যদি আমায় একটু হলেও চাইত,তাহলে নির্দিধায় আমি তার জন্যই অপেক্ষা করতাম মা।কিন্তু সে তো আমায় চাইল না।”
সালেকা বেগম মায়া মাখা হাতে মেয়ের গালে হাত বুলিয়ে বললেন,
“কোনো কিছু নিয়ে আফসোস করতে নেই মা।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।”
সালেকা বেগম কথাগুলো বলেই চোখ নামিয়ে নিলেন। রিফা চুপচাপ বসে রইল। মনে হচ্ছিল বুকের ভেতরটা ভারে চেপে আছে।হঠাৎ দরজার ওপাশ থেকে কাশি দেওয়ার শব্দ ভেসে এলো। সালেকা বেগম মুখ ঘুরিয়ে বললেন,
“আয় ,ভেতরে আয়।”
তামিম রিফার ছোট ভাই। সে ভেতরে ঢুকে হালকা হাসি দিয়ে বলল,
“আপা, পাত্রপক্ষ তো চলে আসবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। তাড়াতাড়ি রেডি হও।”
রিফা মুখ নামিয়ে নিল। উত্তর দেওয়ার মতো শব্দও খুঁজে পেল না।তামিম খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে নরম গলায় বলল,
“আপার মন না চাইলে আমাকে বলো?”
সালেকা বেগম দ্রুত তামিমের দিকে তাকালেন। চোখেমুখে হালকা ধমকও ছিল।
“বাচ্চা ছেলের মতো কথা বলিস না তামিম। মেয়ের বিয়ে হলে ঘর ভরে যায়। ওর জন্য যা ভালো, তাই তো চাই।”
রিফা আস্তে করে বলল,
“মা, ভালো কি সত্যিই শুধু বিয়ের ভেতরেই আছে?”
সালেকা বেগম কোনো উত্তর দিলেন না।সেই মুহূর্তেই বাইরে থেকে গাড়ির হর্ন শোনা গেল। পাত্রপক্ষ এসে গেছে।বুকের ভেতর অদ্ভুত কাঁপন নিয়ে রিফা জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকাল।
…
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে ঘণ্টা খানেক আগে।আদিব স্যার এসেছেন রুহাকে পড়াতে।রুহার ঘরে আদিব স্যার পড়াচ্ছে তাকে।বেশ কিছুক্ষণ ধরে আদিব রুহার অস্বাভাবিক আচরণ খেয়াল করছে।সে হালকা গলা কেঁশে শুধোয়,
“তোমার কী সমস্যা হচ্ছে রুহানি?”
রুহা চোখ তুলে তাকায় তার দিকে।তারপর মাথা নিচু করোর বলে,
“কিছু হয়নি স্যার।”
“তাহলে এমন অদ্ভুত লাগছে কেন তোমাকে?”
“তেমন কিছু নয়।”
“কয়েকদিন পর এক্সাম।এখন পড়ায় মনোযোগী হও বুঝলে?”
রুহা মাথা নাড়ায়।আদিব ঘণ্টা খানেক পড়িয়ে চলে যায়।সন্ধ্যা নাগাদ মুরসালীন সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে।পড়াতে যাবে সে।ড্রয়িংরুমে নাসরিন বেগম পাড়ার এক মহিলার সাথে কথা বলছিলেন।রুহা মায়ের সাথে রান্না ঘরে কী যেন করছিল।হঠাৎ নাসরিন বেগম মুরসালীনকে দেখে বললেন,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
মুরসালীন হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে আড়চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এই সময়ে আমি কোথায় যাই মা?”
“আচ্ছা শোন,কাল আমরা তোর নানিবাড়ি যাব।কলেজ থেকে কয়েকদিনের জন্য ছুটি নিয়ে নিস।”
মুরসালীনের কপালে ভাঁজ পড়ে।
“নানিবাড়ি যাব কেন?”
“তোর নানি অসুস্থ।আমাদের একবার দেখতে চাইছেন।”
মুরসালীন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“ঠিক আছে।”
পরের দিন সকালে রুহা কলেজে যাচ্ছিল একা একা।জান্নাত কিংবা মিথিলা কেও আজ যাবে না।হেঁটে যাচ্ছিল সে।মাথার উপর কুঁয়াশা।আশেপাশে ব্যস্ত মানুষের আনা গোনা।মনটা আজ একদম নীরব।মনে হচ্ছে বুকের ভেতর শক্ত একটা পাথর চেপে রাখা হয়েছে।রুহা দূর পথে তাকিয়ে গুনগুন করে স্বর তুলল,
“আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালা,
ভাঙা বেড়ার ফাঁকে অবাক জোস্না ঢুইকা পড়ে,
হাত বাড়াইয়া ডাকে!
হাত ইশারায় ডাকে কিন্তু মুখে বলে না..!
আমার কাছে আইলে বন্ধু আমারে পাইবা না।”
“কেন পাব না তোকে?”
হঠাৎ পরিচিত পুরুষালী কণ্ঠস্বর শুনতেই রুহা থমকে গেলো।চমকে পেছনে তাকাতেই দেখল মুরসালীনকে।মুরসালীন ভ্রু উঁচিয়ে ফের শুধোয়,
“কেন পাব না শুনি?”
রুহা দৃষ্টি ঘুরিয়ে সামনে তাকাল।সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“একা একা কখনো যুদ্ধ হয় না মুরসালীন ভাই।ভালো তো শুধু আমি একা বাসি না।আপনিও তো আমায় ভালোবাসেন।তাহলে আমি একা কেন লড়াই করবো?”
মুরসালীন রুহার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“বোকা পাখি,আমার হতে হলে সব হারাতে হবে তোকে।পারবি সব ছেড়ে আমার হাত ধরতে?”
রুহা পা থামিয়ে মুরসালীনের দিকে তাকাল।শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“কী কী ছাড়তে হবে মুরসালীন ভাই?”
“মা,বাবা,পরিবার আর তোর মনের ভয়।”
রুহা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল সামনের শক্ত মনের পুরুষটার দিকে।মুরসালীন আলতো হেসে বলল,
“আমার এত সাধ্য নেই তোকে তোর বাবার মতো রানী করে রাখার।হ্যা,হয়তো আমার চিলেকোঠার ঘরের রানী বানিয়ে রাখতে পারব।তোর সব সখ পূরণ করতে পারব না,কিন্তু আমার সাধ্যের মধ্যে যতটুকু আছে, সবটুকুই দিয়ে তোকে বুকে আগলে রাখতে পারব।”
মুরসালীন থেমে গেল। তার ঠোঁটের কোণে হালকা কষ্টের রেখা।রুহা একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল। চোখ ভরে উঠছে জলে। গলায় দলা পাকানো স্বরে বলল,
“ আমি কি কেবল টাকার ভরসায় আপনাকে চাই? আপনার চিলেকোঠার ঘর যদি হয় আমার পৃথিবী, আমি সেখানেই সুখ খুঁজে নিব।”
মুরসালীন ধীরে ধীরে দৃষ্টি নামিয়ে নিল।
“বুঝতে পারছিস না রুহা, জীবন শুধু আবেগে চলে না। পরিবার নামের দড়ি তোর পা বেঁধে রেখেছে। আমি যতই চাই, তোর হাত ধরতে, তোর বাবা-মা তোর হাত আমার হাতে তুলে দেবেন না।”
“তাহলে কি আমি সারাজীবন আমার মনের কথা বুকের ভেতরে লুকিয়ে রাখব?কখনোই আপনাকে পাওয়া হবে না আমার?”
এক মুহূর্ত নীরব থেকে মুরসালীন ধীরে বলে উঠল,
“কিছু ভালোবাসা বুকের ভেতরে পাথর হয়ে জমাট বেঁধে থাকে। ভাঙে না, ভাঙানো যায় না। তুই আর আমি হয়তো সেই ভালোবাসার মানুষ।”
রুহার চোখ থেকে টুপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। সে তাড়াতাড়ি মুখ ফিরিয়ে নিল যাতে মুরসালীন না দেখে। কিন্তু মুরসালীন দেখে ফেলেছে। তার চোখে যন্ত্রণা।
দূরে কলেজের ঘণ্টা বেজে উঠল। রুহা নিঃশব্দে হাঁটতে শুরু করল আবার। মুরসালীন তার পাশে কয়েক কদম এগিয়ে এসে নিচু স্বরে বলল,
“চল, একসাথে যাই।”
রুহা মাথা নাড়ল,
“না, আমি একাই যাব। আপনার সাথে হাঁটতে হাঁটতে হয়তো অনেক কিছু ভেঙে যাবে আমার ভেতরে। কিন্তু আমি ভাঙতে চাই না। আমাকে অটুট থাকতে হবে।”
মুরসালীন আর কিছু বলল না। শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল, যতক্ষণ না রুহার অবয়ব কুয়াশার ভেতরে মিলিয়ে গেল।কী হবে সামনে?আদৌ কি দুজনের ছোটো একটা সংসার হবে?নাকি সব নিয়মের বাঁধায় আঁটকে থাকবে দুজনের মন?
…
এদিকে দুপুর নাগাদ সালেকা বেগমের ঘরে রিফা একা বসে ছিল।আজও সে অফিসে যায়নি।জানালার ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেসে।সালেকা বেগম ভেতরে এসে মেয়ের পাশে বসে নরম স্বরে বললেন,
“কী রে, ছেলেটা তো ভালোই মনে হলো।”
রিফা মৃদু হেসে উত্তর দিল,
“ভালো-মন্দ দিয়ে মানুষকে মাপা যায় মা? মন তো চায় না।”
সালেকা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। রিফার কণ্ঠে জমে থাকা কষ্ট শুনেও তিনি নিরুপায়।
“সব সময় মন চাওয়ার মানুষ কাছে আসে না মা।”
রিফা চোখ নামিয়ে নিল, বুকের ভেতর চাপা দীর্ঘশ্বাসের ঢেউ বইল।সালেকা বেগম মৃদু হেসে বললেন,
“যদি তোর মনে হয় নাবিলকে একবার বলা উচিত তুই তার সাথে থাকতে চাস তাহলে যা!গিয়ে ওর সাথে কথা বল।”
রিফা অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকাল।সালেকা বেগম হাসলেন।মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
“যেখানে ভালোবাসা নামক অনুভূতি থাকে না,সেখানে হাজার বছর একসাথে থাকলেও সুখে থাকা যায় না।”
রিফার চোখ ভরে এলো।ওড়নার কোণা দিয়ে চোখ মুছে বলল,
“কিছু জিনিসে অপূর্ণতা দরকার দরকার মা।সব পেয়ে গেলে আফসোস করবো কী নিয়ে?যে আমায় বুঝল না আমি তার কাছে যাব কেন বলো?শুধু আমায় একটু সময় দাও।আমি নিজেকে একটু শক্ত করি তারপর নাহয় বিয়েটা দিয়ো?”
“তোর বাবার সাথে কথা বলে দেখি।”
রিফা আর কিছু বলল না।চুপচাপ দৃষ্টি ফেরাল জানালার বাইরে।যেখানে হালকা শীতল বাতাস বইছে।
…
বিকেল বেলা মুরসালীন মা আর ছোটো ভাইকে নিয়ে নানিবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো।বেশ রাত হলো তাদের নানিবাড়ি পৌঁছাতে।মুরসালীনের নানি আসলেই ভীষণ অসুস্থ।তিনি ঘরে শুয়ে ছিলেন কম্বলের নিচে।মুরসালীন ধীরে সুস্থে নানির ঘরে ঢুকল,মা আর ছোটো ভাই একটু আগেই নানির ঘর থেকে চলে গেছেন।বিছানার পাশে মুরসালীনের মামার মেয়ে আয়শা বসে আছে।মাথায় ওড়না দেয়া।মুরসালীন ঘরে ঢুকতেই সে তাকে সালাম দিলো।মুরসালীন সালামের উত্তর নিয়ে নানির পাশে উল্টো দিকে বসল।সে নানির হাত ধরে জিজ্ঞেস করল,
“কেমন আছেন?”
নানি হাসলেন।বললেন,
“ভালো আছি ভাই।তুই কেমন আছিস?”
“ভালো।ঔষুধ খাচ্ছেন ঠিক মতো?”
“হ্যা হ্যা খাই।তোর বাপ আসল না কেন?”
“বাবা বিজি,তা ছাড়া চাচা আসায় আরও ব্যস্ততা বেড়েছে।”
“আচ্ছা।কিছু খেয়েছিস?”
“জি,মামি রাতের খাবার খাইয়ে তবেই এই ঘরে আসতে দিল।”
আয়শা আড়চোখে মুরসালীনের দিকে তাকিয়ে দেখল লোকটা ধূসর রাঙা একটা শার্ট পড়েছে।শার্টের উপরের দুটো বোতাম খোলা।চোখে সব সময়ের মতো চশমা।চুল গুলো ভীষণ এলোমেলো।সে লাজুক দৃষ্টি নুইয়ে ফেলল।নানির সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ মুরসালীনের ফোন বেজে উঠল।সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল রুহা কল করেছে।মুরসালীন নানিকে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।বাড়ির বাইরে বেরিয়ে বাড়ির আঙিনায় এসে ব্রেঞ্চে বসল।কল কেটে সে নিজে ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হলো।মুরসালীন ঠোঁট কামড়ে চুপ করে রইল।রুহা ওপাশ থেকে ফিসফিস করে বলল,
“মুরসালীন ভাই?”
মুরসালীন মৃদু স্বরে বলে,
“বল।”
“কী করছেন?”
“বসে আছি।ফিসফিস করে কথা বলছিস কেন?”
“আমি বারান্দায়,আম্মু আজ আমার ঘরে।যাইহোক রাতে খেয়েছেন?”
“তুই খেয়েছিস?”
রুহা চাপা নিশ্বাস ফেলে বলে,
“আজকে খাওয়ার মুড নেই।”
“খেয়ে নে,নাহলে শরীর খারাপ হবে।”
“আপনি সামনে না থাকলে খেতেও ইচ্ছে করে না।এই দেখুন,আজ রাতে আপনি ডাইনিং টেবিলে ছিলেন না তাই তো শুধু এক প্লেট ভাত খেয়েছি।”
মুরসালীন ভ্রু কুঁচকে বলল,
“তুই না মাত্র বললি রাতে খাসনি।”
রুহা চর ধরা পড়ার মতো আমতা আমতা শুরু করল।মুরসালীন কপাল চাপড়ে হালকা বিরক্ত গলায় বলল,
“রুহা,তোর বাঁদরামি শেষ হবে না?”
ওপাশে নিঃশব্দ নীরবতা।বেচারি কী বলবে বুঝে উঠতে পারল না।হঠাৎ করেই পেছন থেকে নরম একটা মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে এলো,
“ভাইয়া,দাদি ডাকছে আপনাকে।”
মুরসালীন ঘুরে তাকাতেই দেখল আয়শা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে পানির গ্লাস। সে লাজুক ভঙ্গিতে আবার বলল,
“ভাইয়া, শুনছেন? দাদি কিছু বলছেন।”
ওপাশে ফোনে রুহা হঠাৎ থেমে গেল। গলার স্বর কাঁপছিল,
“মুরসালীন ভাই আপনার পাশে কে? কার গলা শুনলাম আমি? কোনো মেয়ের গলা ছিল এটা।”
মুরসালীন এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল। চশমার কাচের আড়ালে চোখ শক্ত হয়ে উঠল। ঠোঁট চেপে বলল,
“তোকে পরে ফোন দিচ্ছি রুহা।”
“না, আগে বলুন। আপনার পাশে কে? আমার কানে তো পরিষ্কার শোনা গেল। কোনো মেয়ের গলা।”
ওপাশে রুহার কণ্ঠ ক্রমশ ভাঙা ভাঙা হয়ে উঠছে। বুকের ভেতর শ্বাস নেয়ার শব্দও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল।আয়শা কিছু বুঝতে না পেয়ে প্রশ্ন করল,
“ভাইয়া, কী হলো? আমি কি ভুল সময়ে এসে পড়লাম?”
মুরসালীন ফোনটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে আয়শার দিকে তাকাল। চোখেমুখে বিরক্তি আর চাপা রাগ মিশে ছিল। ধীর গলায় বলল,
“ভেতরে যাও, আমি আসছি।”
আয়শা দ্বিধাগ্রস্ত ভঙ্গিতে ধীরে ধীরে সরে গেল।
ওপাশে রুহার গলায় ক্ষীণ কান্নার আভাস বুঝা যাচ্ছিল।
“মুরসালীন ভাই কে ওটা?”
মুরসালীন গভীর নিশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করল। ঠান্ডা কণ্ঠে বলল,
“আয়শা ছিল।নানি ডাকছে তাই আমাকে বলতে এসেছিল।”
“আয়শা আপু বাড়িতে কী করছে?উনার তো রাজশাহী থাকার কথা।”
“ভার্সিটি বন্ধ তাই এসেছে।”
ওপাশে রুহা থম মেরে গেল। কয়েক সেকেন্ড নিস্তব্ধতার পর বলল,
“আপনি জানেন মুরসালীন ভাই আমি কেমন মানুষ? আমি কোনো কিছুতেই ভাগ বসাতে পারি না। আপনার জীবনে যদি অন্য কাউকে জায়গা দেন, তবে আমি আপনাকে খু’ন করব।”
মুরসালীন ভ্রু কুঁচকালো, শান্ত স্বরে বলল,
“রুহা, তুই কীসব ভাবছিস? আয়শা আমার মামার মেয়ে। ছুটি পেয়েছে তাই এসেছে।”
রুহা তবুও অভিমানী গলায় বলল,
“আপনি যাকে ‘আপনার মামার মেয়ে’ বলছেন, সে-ই যদি একদিন আপনার জীবনের অংশ হয়ে যায়? তখন আমি কী করব?আমি কোনো সতীনের ঘর করতে পারব না।”
মুরসালীন ঠোঁট কামড়ে নিল। কীভাবে বোঝাবে এই পাগল মেয়েকে?সে ধীরে বলল,
“এসব অদ্ভুত চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল বেয়াদব।”
“আমি কিন্তু সত্যি সতীন নিয়ে ঘর করবো না।”
“তোকে ৩সতীনের ঘর করাবো ফাজিল।”
#চলবে…?