#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
১১.
মাঝে কেটেছে দুদিন।এই দুইদিনে রুহা কম হলেও হাজার বার কল করেছে মুরসালীনকে।অযথা কল দিয়ে বিরক্ত করেছে।তার কথার কোনো আগা মাথা ছিল না।এই যেমন, মুরসালীন ভাই আমি বোধহয় বেশি দিন বাঁচব না,মুরসালীন ভাই বলুন তো আমাকে আপনার বউ হিসেবে কেমন লাগবে?,ও মুরসালীন ভাই আমি কী আপনাকে বিরক্ত করছি? আরও কত কী।মাঝে মধ্যে তো মাঝরাতে কল করে ঘুম ভাঙিয়ে বলে, আমি কী আপনাকে বিরক্ত করলাম?
তখন মুরসালীন চাইলেও কিছু বলতে পারে না।এমনিতেই মাথার তাড় সব গুলো জয়েন্ট ছেঁড়া তার উপর যদি কিছু বলে তাহলে তার খবর আছে।রাগ করে গাল ফুলিয়ে রাখবে দিনের পর দিন।ভেবেই মুরসালীন দীর্ঘশ্বাস ফেলল।কাল হয়তো তারা বাড়িতে ফিরে যাবে।বর্তমানে নানির ঘরে বসে আছেন নাসরিন বেগম,আয়শা,মামা এবং মামি।মুরসালীন সবে ঘরে ঢুকল।আফনান রুহার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে এগিয়ে এলো।নানি খানিক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“মুরসালীন,ভাই কাছে আয়।”
মুরসালীন নানির পাশে গিয়ে বসল।আয়শা তার মায়ের কাছে বসে আছে মাথা নিচু করে।নীরবতা ভেঙে আয়শার বাবা বললেন,
“মুরসালীন তোমার সাথে কিছু কথা ছিল।”
মুরসালীন শান্ত কণ্ঠে বলল,
“জি বলুন।”
নাসরিন বেগম ভাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“আমি বলছি।আমি অত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে পারি না।আমি তোর জন্য আয়শার হাত ছেয়েছি।আমি চাই আয়শা আমার ঘরের বউ হোক।”
মুরসালীনের চোখ এক মুহূর্তের জন্য বিস্ফোরিত হয়ে উঠল।যেন মায়ের কথা তার বিশ্বাস’ই হচ্ছে না।সে চোয়াল শক্ত করে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“মা,তুমি আসলেই সিরিয়াস? আমি এখনো কিছু বলিনি, কিছু ভাবিনি,অথচ তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে?”
নাসরিন বেগম কড়া স্বরে উত্তর দিলেন,
“তোর বলার কিছু নেই। মা-বাবা সন্তানের ভালো-মন্দ বোঝে। আয়শা ভদ্র, শিক্ষিতা,আমার বউমা হিসেবে একদম পারফেক্ট। কালই আংটি বদল হবে।”
মুরসালীন দাঁত চেপে বলল,
“মা, আমি কোনো আংটি বদল করতে পারব না। আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমি নেব।”
ঘরে থমথমে নীরবতা নেমে এলো। নানি বললেন,
“আয়শার সাথে তো তোমারে অনেক মানায় ভাই।তোমার কী আয়শারে পছন্দ না?”
আফনান ফোন ধরে রেখেছে এখনো।ফোনের ওপাশে রুহা শক্ত মূর্তির মতো থম মেরে বসে আছে।আফনান কল কাটার আগেই রুহা খট করে লাইন কেটে দিল।মুরসালীন বিরক্ত হয়ে বলল,
“আমি ওকে আমার বোনের নজরে দেখি নানি।আমি এই বিয়ে করতে পারব না।”
কথাটা শুনে নাসরিন বেগমের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে উঠল।গলা উঁচু করে উঠলেন,
“চুপ কর মুরসালীন! এত বড় হয়েছিস যে এখন মা-বাবার মুখের উপর কথা বলিস? আমি তোর জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানেই সেটা হবে। তুই না চাইলে কী হবে? মা-বাবার মান সম্মানের কি তোর কাছে কোনো দাম নেই?”
“মান-সম্মান রাখতে হলে নিজের ইচ্ছেকে পুড়িয়ে মারতে হবে?তুমি যা চাও, আমি সবই মেনে নেব।কিন্তু নিজের জীবনটা আমি তোমাদের সখের খেলায় নষ্ট করতে পারব না।”
নাসরিন বেগম ধমকে উঠলেন।
“একদম বেহায়া হয়ে গেছিস!তোকে আমি মানুষ করেছি, আর আজ তুই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে শিক্ষা দিচ্ছিস? এই পর্যন্তই ছিল মুরসালীন। কাল সকালেই আংটি বদল হবে। তুই যদি অমান্য করিস,তাহলে এই সংসারে তোর আর কোনো জায়গা থাকবে না।”
ঘরের সবাই থম মেরে বসে রইল। নানির চোখ ভিজে উঠল, আয়শা মুখ নিচু করে কাঁপছে।মামা মামি মুখ দেখাদেখি করছেন। মুরসালীন চোয়াল শক্ত করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“ঠিক আছে মা। তাহলে এই সংসারে আমার থাকার কোনো মানেই নেই।তুমি যখন বলেই দিয়েছ,তাহলে আমি ছাড়লাম এই সংসার।থাকো তুমি তোমার জেদ নিয়ে।”
কথাটা বলে সে ধপাস শব্দে দরজা ঠেলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।মামা নাসরিন বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ও যখন রাজী ছিলই না তাহলে আমাদের এভাবে ছোটো করার কী দরকার ছিল?তুই জোর করে ঘর বাঁধতে চেয়েছিলি?”
নাসরিন বেগম কোনো উত্তর দিতে পারলেন না।এই মুহূর্তে তিনি ভীষণ রেগে আছেন।তিনি হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।আয়শার চোখ ছলছল করছে।সে তো চাইত মুরসালীনের বউ হতে।সেই ইচ্ছে টুকু বোধহয় কখনো পূরণ হবে না।
…
মাঝরাতে মুরসালীন বাড়ি ফিরে এসেছে একাই।এই মুহূর্তে কেও জাগ্রত নেই।সে বাড়ির দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে নিজের ঘরে ফিরে এলো।প্রয়োজনীয় যা আছে সব গুছিয়ে রাখল।অনেক ভাবনা চিন্তা করে সে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।হয়তো এটাই ভালো হবে।ভোর সকালে রুহা নামাজ পড়ে একটু ছাদে এসেছিল।গায়ে মোটা শাল চাদর জড়িয়ে দোলনায় মাথা নিচু করে বসেছিল।হঠাৎ সামনে পুরুষালী একজোড়া পা দেখে মাথা উঁচিয়ে তাকাল।মুরসালীন গাঁয়ে কালো হুডি জড়িয়ে বুকে দুহাত গুঁজে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মুরসালীন দেখল রুহার চোখ দুটো ফুলে লাল টকটকে হয়ে আছে।নাকের ডগা লাল।
মুরসালীনকে দেখে রুহার চোখ ফের ঝাপসা হয়ে এলো।নাকের পাতা ফুলে এলো।ঠোঁট চেপে কান্না আটকাবার চেষ্টা করল বৃথা।মুরসালীনকে কিছু জিজ্ঞেস না করে পাশ কেটে চলে যেতে চাইলে মুরসালীন রুহার একহাত আঁকরে ধরে।টেনে নিজের সামনে এনে ধীর কণ্ঠে বলে,
“কী হয়েছে তোর?চোখ মুখের এই অবস্থা কেন?”
“হাত ছাড়ুন।”
“কী হয়েছে আগে বল?”
“আমি হাত ছাড়তে বলেছি মুরসালীন ভাই।”
রুহার কণ্ঠ শক্ত থাকলেও ভাঙা ছিল।মুরসালীন চোয়াল শক্ত করে হাত জোরে আঁকরে ধরল।অন্যহাত দিয়ে রুহার চিবুক উঁচিয়ে মুখোমুখি করে দাঁত চেপে বলল,
“জেদ দেখাবি না রুহা।আমার পছন্দ নয় এটা।”
রুহা মুরসালীনের চোখে চোখ রেখে নাক টেনে বলল,
“আপনার তো আমাকেও পছন্দ না মুরসালীন ভাই।তাহলে কেন বারে বারে আমাকে ভাঙতে আমার কাছে আসেন?”
“কে বলল তোকে আমার পছন্দ না?”
“আপনি তো বারে বারে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।বিয়ে করতে চলেছেন কয়েকদিন পরেই তাই না?”
মুরসালীন অবাক কণ্ঠে বলল,
“এসব তোকে কে বলেছে?”
“যেই বলুক।সত্যি তো?”
“না!”
“তাহলে সত্যিটা কী?”
“মা চাইছে আয়শার সাথে আমার বিয়েটা দিতে।আমি মানা করে দিয়েছি।”
রুহা যেন কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলল।সব কিছু কেমন বিষাদের মতো লাগছে।একদিকে ভালোবাসা তো অন্যদিকে পরিবার।না ভালোবাসার মানুষটাকে নিজের করে পাচ্ছে আর না পরিবারকে বুঝাতে পারছে।রুহা নিঃশব্দে দোলনায় গিয়ে বসল।
“আপনার কি একটুও মনে হয় না আমি আপনাকে ভালোবাসি?
এই ভালোবাসাটা আপনার চোখের সামনে দিনের পর দিন পড়ে থাকে, আর আপনি… আপনি দেখেও না দেখার ভান করেন।আমাকে কেন ভালোবাসা যায় না, মুরসালীন ভাই? আমি কি এতটাই অযোগ্য? এতটাই অবাঞ্চিত?”
মুরসালীন থেমে যায়। চোখ দুটো নরম হয়ে আসে। ধীরে ধীরে ওর পাশে বসে, রুহার কাঁধে হাত রাখে। কণ্ঠ ভারী, কষ্টে ভরা কণ্ঠে বলে,
“ভালোবাসা তো চোখে পড়ে না, রুহা।বুকের ভেতরে রক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়।
তুই অযোগ্য না,তুই আমার কপালে লেখা নেই শুধু।আর কপালে না-থাকা জিনিস ভালোবাসলেও ছোঁয়া যায় না,
শুধু খুব গভীরে গিয়ে পোড়ায়।”
“আমি যদি সাহস দেই,আমি আপনার সংসার করব তখন?”
মুরসালীন মৃদু হাসল।রুহার দিকে তাকিয়ে চোখের চশমা খুলে রুহার কোলের উপর রেখে বলল,
“তাহলে কোমর বেঁধে নেমেছিস আমার ঘরের বউ হয়েই ছাড়বি?”
রুহা উত্তর না দিয়ে মুরসালীনের চোখের চশমা পরিষ্কার করে মুরসালীনের চোখে পড়িয়ে দিয়ে বলল,
“একবার যখন ভালোবেসেছি তখন মৃত্যুর আগ অব্দি পিছু ছাড়ছি না।”
মুরসালীন হঠাৎ আলতো হাসল।রুহার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
“খুব বড়ো হও পাখি।জীবন সবে শুরু।আমি পাশে আছি,সব সময় থাকব।এখন এসব পাগলামি না করে মন দিয়ে একটু পড়ো।”
রুহার চোখে পানি।সে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“আপনি পাশে থাকলে আমি সব পারব।”
…
মুরসালীন বাড়ি ছেড়েছে আজ সপ্তা খানিক হতে চলল।কলেজের কাছেই একটা দু’তলা বাসায় একটা এক রুমের বাসা ভাড়া নিয়েছে সে।সেখানেই থাকছে বর্তমানে।বাড়ি ছেড়ে আসার দিন কামরুল শেখের সাথে মুরসালীন একা ঘণ্টা খানিক সময় কথা বলেছিল।রুহা সেইদিন চাইলেও মুরসালীনকে আঁটকাতে পারেনি।
মুরসালীন এখন একাই থাকে। ছোট্ট ঘরটা অগোছালো নয়, কিন্তু একা মানুষের মতো নিস্তব্ধ। বুকশেলফে বইয়ের স্তূপ, টেবিলে ল্যাম্প, এক কোণে গিটারটা পড়ে আছে। ভোরে উঠে নামাজ পড়ে, তারপর কলেজে যায়। ফিরে এসে নিজেই রান্না করে, পড়াশোনা করে, রাতে চুপচাপ জানালার পাশে বসে থাকে।
কিন্তু এই এক সপ্তাহে রুহার কল, টেক্সট, ভয়েস নোট-সব যেন আরও বাড়িয়েছে।
“মুরসালীন ভাই, আপনি আমার ওপর রাগ করেছেন?”
“খেয়েছেন তো?”
“আমি আজ সারাদিন আপনাকে মিস করেছি, আপনি জানেন?”
কখনও কল কেটে দেয়, কখনও ভয়েস নোট পাঠায় আবার ডিলিট করে ফেলে।
একদিন গভীর রাতে মুরসালীনের ঘুম আসছিল না। ফোনটা হাতে নিয়ে খেয়াল করল, রুহা ২৮টা মিসড কল দিয়ে রেখেছে। মৃদু হেসে মাথা নাড়ল। কল ব্যাক দিতেই ওপাশ থেকে কান্নার ভাঙা গলা শোনা গেল।
“মুরসালীন ভাই, আমি না খুব ভয় পাচ্ছি।আপনি তো একা আছেন, যদি অসুখ-বিসুখ হয়, কে দেখবে আপনাকে?”
মুরসালীন কণ্ঠ নরম করে বলল,
“আমার কিছু হবে না। আমি একা থাকতে শিখছি।”
“আপনি একা থাকছেন মানে আমাকেও একা থাকতে হবে, তাই না?”
ওর কথায় মুহূর্তের জন্য গলা আটকে গেল মুরসালীনের। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীরে ধীরে বলল,
“সবাইকে একা থাকার প্রস্তুতি নিতে হয় একদিন।”
রুহা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলল,
“আপনি আবার ঐসব কথা বলছেন! আমি আপনাকে হারাতে চাই না, মুরসালীন ভাই।”
মুরসালীন দীর্ঘশ্বাস ফেলল, জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল,
“তুই হারাবি না। তবে পাওয়ার সময়টা আসেনি এখনো।”
আজ শুক্রবার।নাবিল নিজের ঘরে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল।হঠাৎ জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখল রুহা একা একা বাগানে হাঁটতে।অদ্ভুত শান্ত হয়ে গেছে মেয়েটা।আগের মতো লাফালাফি করে না,কথা বলে না,ঝগড়া করে না।নাবিল ভাবল আজ বিকেল বেলা রুহা,আফনান এবং বাহারকে নিয়ে বের হবে।দুপুরের একটু আগ দিয়ে ইলমা বেগম মুরসালীনের জন্য খাবার প্যাক করলেন।আফনান ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল।রুহা টিফিন বক্স এনে আফনানের কাছে দিয়ে বলল,
“আফনান,এই খাবার’টা মুরসালীন ভাইকে দিয়ে আসবি।আর দেখে আসবি উনি কেমন আছে।”
আফনান উঠে দাঁড়াল।টিফিন বক্স নিয়ে বলল,
“তুমি কলেজে যাও না কেন?কলেজে গেলেই তো ভাইয়ার সাথে দেখা হয়।”
রুহা আড়চোখে বাবার ঘরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“যাব।তুই যা,তাড়াতাড়ি দিয়ে আয়।”
আফনান খাবার নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলো।
বেলি রোড পেরিয়ে একটা দু’তলা বাসার সিঁড়ি বেয়ে মুরসালীনের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়াল সে। কাঠের দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে বেরিয়ে এল মুরসালীনের মুখ। চোখে অবাক ভাব।
“তুই এখানে?”
আফনান হেসে টিফিন বক্সটা এগিয়ে দিল।
“চাচি খাবার পাঠিয়েছে। বলেছে দেখে আসতে তুমি কেমন আছো।”
মুরসালীনের চোখে একঝলক মমতা জ্বলে উঠল। খাবার হাতে নিয়ে বলল,
“চাচিকে ধন্যবাদ বলবি।”
আফনান ভেতরে ঢুকে চারপাশে তাকাল। ছোট্ট একটা ঘর, কোণে খাট, পাশে টেবিল, শেলফ ভর্তি বই, আর এক কোণে রাখা গিটারটা যেন চুপচাপ নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হয়ে আছে। আফনান নিঃশব্দে বলল,
“ভাইয়া তুমি এখানে একা একা কেমন করে থাকো? বাড়ির সবাই তোমাকে ভীষণ মিস করে।”
মুরসালীন হালকা হাসল, কণ্ঠে বিষাদের ছোঁয়া।
“কখনো কখনো দূরে থাকা-ই ভালো।”
আফনান গম্ভীর মুখে বসে পড়ল খাটে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ বলল,
“ভাইয়া, আপু কিন্তু মোটেই খুশি না। সারাদিন তোমার কথা বলে, আবার তোমার জন্য কাঁদে। তুমি বুঝতেই পারছ না আপু তোমাকে কতটা ভালোবাসে।”
মুরসালীন চোখ নামিয়ে নিল। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল, তবুও ঠোঁটের কোণে সামান্য শক্ত হাসি এনে বলল,
“ভালোবাসা দিয়ে তো সংসার হয় না।সংসার করতে লাগে সাহস, দায়িত্ব, ত্যাগ। ওর এখন পড়াশোনার বয়স, এসব নিয়ে ভাবার নয়।তা ছাড়া তুই এত পাকা পাকা কথা শিখেছিস কোত্থেকে?”
আফনান মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আমাকে কী তোমার ছোটো মনে হয় ভাইয়া?আমি এখন অনেক বড়ো হয়েছি।”
মুরসালীন টিফিন বক্স খুলে খাবারের গন্ধ নিয়ে মৃদু হাসল।
“চাচি তো আমার পছন্দেরই সব পাঠিয়েছে।”
আফনান চুপচাপ মুরসালীনের দিকে তাকিয়ে থাকল। ও বুঝতে পারছিল-ভাইয়া বাইরে শক্ত থাকলেও ভেতরে অনেকটা ভেঙে পড়েছে।সে ছোটো হলে কী হবে?এইটুকু বুঝ তার আছে।
কিছুক্ষণ পরে বিদায় নিতে দাঁড়াল আফনান। বেরোনোর আগে হঠাৎ ঘুরে তাকিয়ে বলল,
“ভাইয়া একটা কথা বলি?”
মুরসালীন ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে জুতা পায়ে দিয়ে ভাইয়ের সাথে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলল,
“বল।”
“জানো?আপু মাঝে মধ্যেই তোমাকে নিয়ে চাচার সাথে কথা কাটাকাটি করে।চাচা অনেকবার আপুকে থাপ্পড় মেরেছে।তুমি ঐ কলেজে চাকরি করো বলে আপুকে কলেজে যেতে দেয় না।আপু অনেক কাঁদে।কাল রাতে আপুর ফোন ভেঙে ফেলেছে চাচা।আমার সাথে আপু সব শেয়ার করে বলে উনার চোখের কাটা হয়ে গেছে আমি।”
মুরসালীন শ্বাস আঁটকে কথা গুলো শুনল।বুকের ভেতরটা কেমন ব্যথায় ছটফট করছে।একদিকে মায়ের জেদ তো অন্যদিকে কামরুল শেখ।মাঝখানে কষ্ট পাচ্ছে রুহা।
#চলবে..?