#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
১৪.
মুরসালীন রুহার দিকে তাকিয়ে ভাবুক হয়ে বলল,
“তোর তো জামা কাপড়ও কিনতে হবে।আজ একটু কষ্ট করে নে,কালকেই সব এনে দিব।”
রুহা মাথা নাড়ল।মুরসালীন নিজের একটা ট্রাউজার আর একটা কালো রঙের হুডি এনে রুহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“আজ এগুলো দিয়েই কাজ সেরে নে।”
রুহা বিনাবাক্যে কাপড় গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে চেঞ্জ করে বাইরে বেরিয়ে এলো।মুরসালীন খাবার বেড়ে বিছানার উপর রাখছে।রুহা ট্রাউজার টেনে ধরে বাইরে বেরিয়ে এসে বলল,
“মুরসালীন ভাই,সব খুলে গেলো তো।”
মুরসালীন কপালে ভাঁজ ফেলে রুহার দিকে তাকাল।ট্রাউজার মাটিতে গড়াগড়ি করছে,কোমরেও লুস,আবার হুডিটাও অনেক বড়ো।মুরসালীনের হাসি পেল খুব।সে রুহার নিকট এগিয়ে এসে হুডি উঁচু করতেই রুহা চিৎকার দিয়ে উঠল।
“হায়হায় কী করছেন?”
মুরসালীন আর একটু কাছে এগিয়ে এসে হুডি উঁচু করে ট্রাউজারের ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলল,
“আজ না বাসররাত?বাসর করবি না?”
মুরসালীন হাঁটু মুড়ে বসল।ট্রাউজারের পা ভাঁজ করতে করতে বলল,
“হুম?”
লজ্জায় রুহার গাল গরম হয়ে এলো।মুরসালীন মাথা নিচু করেই ঠোঁট কামড়ে হাসল।সে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই রুহা দৃষ্টি লুকিয়ে তাড়াতাড়ি বিছানায় এসে বসল।এক প্লেটে খাবার দেখে বলল,
“এক প্লেটে খাবার কেন?”
মুরসালীন হাত ধুয়ে এসে রুহার পাশে বসল।প্লেট হাতে নিয়ে ভাত মাখাতে মাখাতে বলল,
“আমার ছোটো বাচ্চা বউ তুই।স্বামীর ঘরের প্রথম খাবার স্বামীর হাতেই খা।”
মুরসালীন ভাত রুহার মুখের সামনে ধরল।রুহা ভাত মুখে দিয়ে মুরসালীনের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল,
“এত ভালোবাসা বিয়ের আগে কই ছিল?কত কষ্ট দিয়েছেন আমায়।”
“ভালোবাসি কখন বললাম?”
“ভালোবাসেন না?”
“বুঝিস না?”
“আপনি আস্কারা না দিলে শুধু শুধু পাগল হয়েছি আমি?”
“তাহলে বাকি কথাটাও বুঝে নে।”
রুহা বিছানা থেকে নেমে রান্না ঘরে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে জোর করে মুরসালীনের হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে বলল,
“এতদিন একা একা থেকেছেন,নিশ্চই গলা দিয়ে খাবার নামেনি।আজ নতুন বউ খাইয়ে দিক?”
মুরসালীন রুহার চঞ্চল চোখের দিকে তাকাল।রুহা ভাত মাখিয়ে মুরসালীনের মুখের সামনে ধরে বলল,
“বড়ো করে হা করুন দেখি?”
মুরসালীন হেসে ফেলল।হা করতেই রুহা ভাতের লোকমা তুলে দিল।আর একটু মুরসালীনের শরীর ঘেঁষে বসে বলল,
“আজ থেকে আমি আপনাকে খাইয়ে দিব।”
মুরসালীন “হ্যা,না” কিছুই বলল না।মুরসালীনকে খাইয়ে দিতে দিতে রুহা নিজেও খেলো।রুহা মাছ খায় না বলে ডিম ভুনা করেছিল সে।খাবার শেষ হলে রুহা সব কিছু ধুয়ে পরিষ্কার ঘরে এলো।রুহার পায়ে মুরসালীনের ওভার সাইজ স্যান্ডেল।সেটা পড়েই গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে বিছানায় উঠে বসল।মুরসালীন আগে থেকেই বিছানায় বসে ছিল হাতে ফোন নিয়ে।রুহা ফিরতেই বলল,
“অনেক রাত হয়েছে ঘুমা।”
রুহা কণ্ঠে দ্বিধা নিয়ে বলল,
“আপনি ঘুমাবেন না?”
“হ্যা,কাল শনিবার! সকালে আমার পড়াতে যেতে হবে।”
“আমি বাসায় একা থাকব?”
মুরসালীন ঘুরে রুহার দিকে ফিরল।ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“সামনে সপ্তা থেকে কলেজে যাবি তুই।”
“কিন্তু সব কিছু তো ঐ বাড়ি।”
মুরসালীন তার ছোটো আলমারি খুলে ডয়ার খুলে দেখল তার কাছে কত টাকা আছে।বেশি নেই কিন্তু যা আছে তাতে রুহার সব কিছু হয়ে যাবে।সে আলমারি লাগিয়ে এসে রুহার পাশে বসে বলল,
“কালকে বিকালে সব কিনে দিব।এখন ঘুমা!”
রুহা আমতা আমতা করে বলল,
“এখানেই দুজন ঘুমাব?”
“তোর সমস্যা হবে?তাহলে আমি নিচে বিছানা করছি।”
“আরে না না,সমস্যা কেন হবে?এমনি জিজ্ঞেস করলাম।”
মুরসালীন চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল।ঘরের লাইট বন্ধ করে রুহার পাশে এসে শুয়ে পড়ল।মোটা কম্বল গায়ে জড়িয়ে মুরসালীন বলল,
“কাছে আয়।”
রুহা হতভম্ব হয়ে বলল,
“কাছে যাব কেন?”
“তোকে গিলে খাব বেয়াদব।কাছে আয়!”
রুহা গুটিয়ে মুরসালীনের শরীর ঘেঁষে শুলো।মুরসালীন দুহাত দিয়ে শক্ত করে রুহাকে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো চুমু এঁকে বলল,
“আজ বুকটা ভীষণ হালকা লাগছে।আমার ছোটো সোনার সংসার শুরু হয়েছে।”
রুহা আঙুল দিয়ে মুরসালীনের বুকে আঁকুবাঁকু করতে করতে বলল,
“আপনি খুব খারাপ।আপনার জন্য যে কত মার খেয়েছি তার হিসেব নেই।গালটা বাবা ব্যথা বানিয়ে ফেলেছে ঠাপড়ে।”
মুরসালীন হঠাৎ এক কাণ্ড করে বসল।রুহার বাম গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
“এখন থেকে স্বামীর ভালোবাসা খাবি।”
রুহার শ্বাস আঁটকে এলো।লজ্জায় চোখ মুখ খিঁচে আরও গুটিয়ে নিলো নিজেকে।বিড়বিড় করে বলল,
“আপনি আসলেই খারাপ।”
মুরসালীন শব্দ করে হেসে ফেলল।রুহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“ঘুমা বেয়াদব।”
••••
সকালের মৃদু আলোয় রুহার ঘুম ছুটে গেলো।পিটপিট করে চোখ খুলে দেখল সকাল হয়ে গেছে।বুকের উপর মুরসালীনের মাথা।দুহাত দিয়ে তাকেই আবদ্ধ করে রেখেছে।হঠাৎ রুহার ঠোঁটে লাজুক হাসি ফুটে উঠল।হাতের আঙুল গুলো মুরসালীনের চুলের ভাজে বিলি কেটে ফিসফিস করে বলল,
“আমাদের বিয়ের প্রথম সকাল আজ।দোয়া করি আজকের মতোই আগামী প্রত্যেকটা সকাল এমন মিষ্টিময় হোক।”
রুহা কষ্ট করে মুরসালীনকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে উঠে বসল।চুল খোঁপা করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল তার দিকে।গায়ের উপর থেকে কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে সময় দেখে নিলো আগে।৫:৩৭ মিনিট!সে হাত মুখ ধুয়ে রান্না ঘরে ঢুকল।কাঁচা কিছু সবজি আছে ফ্রিজে।মাছও আছে কিন্তু রুহা ভাবল সে মাছ রান্না করতে পারবে না।তাই চুলায় ভাত বসিয়ে দিয়ে সবজি কাঁটতে শুরু করল।আগে সকালের খাবার পেটে যাবে তারপর দুপুরের কথা ভাবা যাবে।
সকাল ৮টার দিকে মুরসালীন আড়মোড় ভেঙে উঠে বসল বিছানায়।ফোনে টাইম দেখে চোখ কপালে।আজ এত দেরি করে উঠেছে সে?হতভম্ব হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে রুহাকে খুঁজলো।তাকে না পেয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখল সেখানেও রুহা নেই।হঠাৎ পেছন থেকে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরালো।মুরসালীনকে দেখে রুহা মুচকি হেসে বলল,
“উঠেছেন?ফ্রেশ হয়ে আসুন,আমি রান্না করে ফেলেছি।”
মুরসালীন চাপা নিশ্বাস ফেলে রান্নাঘরের ভেতরে তাকিয়ে দেখল বউ তার কাজ কাম আগেই সেরে ফেলেছে।মুচকি হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,
“বেয়াদব আমায় ডাকিসনি কেন?কষ্ট করে আবার রান্না করতে কে বলেছে?”
“ওমাহ,কাউকে বলতে হবে কেন?আমি বউ না?জামাইকে রান্না করে খাওয়ানো আমার’ই তো কাজ।”
মুরসালীন কপাল চাপড়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।তার পড়াতে যেতে হবে একটু পর।সে ফ্রেশ হয়ে আসতেই রুহা খাবার দিল।মুরসালীন খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে বলল,
“অনেকদিন পর তোর হাতের রান্না খাব।”
“এখন থেকে প্রত্যেকদিন খাবেন।”
মুরসালীন মৃদু হেসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাসা থেকে বের হলো।সে বের হতেই রুহা ঘরের দরজা আঁটকে পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখল সব কিছুই পরিষ্কার।কাজ করার মতো কিছু নেই।বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ফোন হাতে নিয়ে বলল,
“কোনো কাজ নাইরে রুহা,নাটক দেখ শুয়ে শুয়ে।”
•••
শেখ বাড়ি সকাল বেলা নাবিল ভাংচুর করেছে একবার।শুধু কিছু সময় বাড়িতে ছিল না আর এতকিছু ঘটে গেছে।কামরুল শেখ গম্ভীর মুখে বসে আছেন নিজের ঘরে।রাইমা এবং নাবিল বাবার ঘরেই অবস্থান করছে।ইলমা বেগমের গায়ে জ্বর থাকায় তিনি শুয়ে আছেন বিছানায়।নাবিল হঠাৎ শুধোয়,
“আপনি আমার এক বোনের জীবন তো নষ্ট করেই ফেলেছেন,এটা নিয়ে কথা বলে আর লাভ নেই কিন্তু রুহা?মুরসালীন ছেলে হিসেবে খারাপ নাকি?সে আমার ভাই,আমার রক্ত,আমি জানি ও কেমন।ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে আগে জানলে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের বিয়ে দিতাম।আপনি ওদের বাড়ি থেকে বের করেছেন কেন?ভালোবাসা কি দোষের?”
কামরুল শেখ হাত দিয়ে নাবিলকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“তোকে আমি উকালতি করতে বলিনি।ঘর থেকে বের হো।”
নাবিল হনহন করে বাবার ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির বাইরে এলো।মুরসালীনের নাম্বারে কল করতেই ওপাশ থেকে খানিকক্ষণ পর রিসিভ হলো।সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“কোথায় তুই?”
মুরসালীন সবে একজনকে পড়িয়ে বের হয়েছে।আরেকটা রাতে পড়াবে।
“মাত্র স্টুডেন্ট পড়িয়ে বের হয়েছি ভাইয়া।”
“আমি আসছি তোর বাসায়।”
#চলবে..?
#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
১৫.
ব্যস্ত শহরের পথ পেরিয়ে মুরসালীন নিজের ভাড়া বাসায় প্রবেশ করতেই দেখল ঘরে নাবিল বোনের পাশে বসে আছে গম্ভীর মুখে।রুহা মাথা নিচু করে ভাইয়ের গম্ভীর কথা শুনছে।মুরসালীন আসতেই নাবিল শুধোয়,
“এত দেরি হলো কেন?”
মুরসালীন হাতের অল্প কিছু ফলের প্যাকেট রুহার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমার গরিব সংসারে তেমন কিছু নেই ভাইয়া।তুমি এসেছ খালি মুখে তো আর রাখতে পারব না।”
নাবিল মুরসালীনের চোখে চোখ রাখলো।রুহা বিছানা থেকে নেমে রান্না ঘরে যেতেই মুরসালীন নাবিলের পাশে বসে শুধোয়,
“আমাকে মাফ করে দিয়ো কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না।তোমার বাবা এই সম্পর্ক কখনোই মেনে নিত না।”
“একবার আমাকে তো বলতে পারতি?”
“ঐসময়ে এত কিছু মাথায় আসেনি।তা ছাড়া আমি তোমার বোনকে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে সুখে রাখার চেষ্টা করবো।”
“আমি জানি তুই সুখে রাখবি কিন্তু তবুও!”
মুরসালীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তোমার বোনকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চেয়েছি হাজারবার,কিন্তু নিজেকে ধরে রাখা বড্ড কঠিন।বয়স নিয়ে ভেবো না।সম্পর্কে একটু বয়সের ব্যবধান থাকা ভালো।”
নাবিল হঠাৎ হেসে ফেলল।মুরসালীনের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আমার বোন একটু পাগল টাইপ।দেখে শুনে রাখিস।আমি খুব তাড়াতাড়ি তোদের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব।”
“বাড়ি ফিরে গিয়ে কী করবো?যেখানে আমার স্ত্রীকে অপমান করা হয়েছে,সেখানে গিয়েও আদৌ আমি সুখে থাকতে পারব?যতদিন না তোমার বাবা এবং আমার মা নিজেদের ভুল বুঝতে পারছেন ততদিন ঐবাড়ি আমি পা রাখব না।”
রুহা তখন ফল কেটে এনে ভাইয়ের সামনে রেখে বলল,
“ভাইয়া খাও।”
নাবিল মাথা ঝাঁকাল।ঘড়িতে সময় দেখে বলল,
“আমার অফিসে যেতে হবে।”
“কিছু তো খেয়ে যাও?”
নাবিল কিছু ফল খেলো।সাথে দুজনের সাথে টুকটাক কথাও বলল।নাবিল চলে যেতেই রুহা ঘরের দরজা আঁটকে মুরসালীনের নিকট এগিয়ে এসে পাশে বসল।তার গম্ভীর বদন দেখে বলল,
“দুপুরে কী রান্না করব মুরসালীন ভাই?”
মুরসালীন ভীষণ বিরক্ত হলো।দাঁত চেপে বলল,
“ঠাপড়ে দাঁত ফেলে দিব বেয়াদব।বিয়ে করা জামাইকে বারে বারে ভাই ডাকছিস কেন?”
রুহা দ্বিধা নিয়ে শুধোয়,
“তাহলে কী বলে ডাকব?”
“নাম ধরে ডাকবি।”
“অসম্ভব,আমি নাম ধরে ডাকতে পারব না।”
মুরসালীন রুহার হাত টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো।পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের লতিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
“আমি তোর বিয়ে করা জামাই।আমাকে জান,প্রাণ কলিজা যা পারিস তাই বলে ডাকবি শুধু ভাই বলে ডাকবি না।”
মুরসালীনের এহেন অবাধ্য ছোঁয়ায় শরীর অবশ হয়ে এলো তার।আমতা আমতা করে বলল,
“ছাড়ুন আমায়।”
মুরসালীন ছাড়ল না।রুহার খোঁপা করা চুল ছেড়ে দিয়ে সেখানে নাক ডুবিয়ে বলল,
“পালাই পালাই করছিস কেন?”
“ভয় করছে?”
“কীসের ভয়?”
রুহা গুঁটিয়ে নিলো নিজেকে।মুরসালীন ঠোঁট কামড়ে হাসল বউয়ের লাজ দেখে।হঠাৎ রুহাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।এক মুহূর্তও সুযোগ না দিয়ে তার নরম ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।আচমকা এ আক্রমণে রুহা প্রথমে শিউরে উঠল,কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিজের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলল।
মুহূর্তটা যেন থমকে গেল।চারপাশের সব শব্দ,সব আলো যেন মিলিয়ে গেল।শুধু রইল দুইজনের উষ্ণ শ্বাস,উন্মত্ত স্পর্শ,আর অজানা কাঁপন।রুহা বুকে হাত দিয়ে ঠেলতে গিয়েও পারল না।মুরসালীন গভীরতায় ডুবে গিয়ে ওর ঠোঁট থেকে সমস্ত অভিমান, জেদ, ভয় নিজের করে নিলো।
বেশ কিছুক্ষণ বেসামাল হয়ে পড়ে রুহা চোখ বুজে রইল।শরীর কাঁপছিল,বুক ধড়ফড় করছিল,অথচ ঠোঁট সরাতে পারছিল না।অবশেষে মুরসালীন ধীরে ধীরে তাকে ছেড়ে দিলো।
রুহা হাপরের মতো শ্বাস নিতে নিতে চোখ নামিয়ে ফেলল।গাল দুটো গরম হয়ে উঠেছে।হাত দিয়ে মুরসালীনের পরণের শার্ট শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,
“খারাপ লোক।”
মুরসালীন হাসল।রুহাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“পারলে তোকে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতাম।”
রুহা মুচকি হাসল।মুরসালীন গোসলে গেলে রুহা চুলায় ভাত বাসায়।গোসল শেষে মুরসালীন নিজেই রান্নায় হাত লাগায়।বিকাল বেলা দুজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে মার্কেটে গিয়ে প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনে রাতে বাড়ি ফিরে।রুহার বই খাতা,জামা কাপড় আর প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস পত্র।তারপর মুরসালীন স্টুডেন্ট পড়াতে গেলে রুহা রান্না ঘরে যায় রাতের খাবার বানানোর জন্য।এখন এটাই তার কাজ।রান্না করো,খাও দাও আর ঘুমাও।
•••
অফিস শেষে নাবিল ঢলীপাড়ার মোড়ে একজন বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল।দেখা হয়েছে বলেই কথা বলা।হঠাৎ চোখে পড়ল রিফা তার ভাইকে নিয়ে কোত্থেকে যেন আসছে এই রাস্তা ধরেই।নাবিলকে দেখে রিফা দাঁড়ায়।পাশে তার ভাই শুধোয়,
“কী হলো?”
রিফা শুকনো ঢোক গিলে বলে,
“কিছু না।”
হাঁটা শুরু করতেই নাবিল সামনে এসে দাঁড়ায়।রিফা চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টেনে নাবিলের চোখে চোখ রাখে।বলে,
“কী সমস্যা?”
নাবিল পকেটে হাত গুঁজে শুধোয়,
“বিয়েটা ক্যান্সেল করেছ শুনলাম?”
“আমি যা ইচ্ছা তাই করব তাতে তোমার কী?”
“আমার কিছুই না কিন্তু কারণটা কী জানতে পারি?”
“কারণটা আমার পার্সোনাল।”
রিফার ভাই আগে থেকেই নাবিলকে অনেক সম্মান করে।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।নাবিল বলল,
“ছোটো ভাই,আমি তোমার আপুকে বাড়িতে দিয়ে আসবো তুমি যাও।”
সে মুখের উপর মানা করতে পারল না।রিফা আঁটকালেও নাবিল বলল,
“আমি তোমার আব্বু আম্মুর সাথে গিয়ে কথা বলব।”
রিফা চুপ করে গেলো।নাবিল রিফাকে নিয়ে খানিকটু দূরে এলো।আশেপাশে মানুষের ভিড়।রিফা চুপ করে চোখ বুলালো সেই দিকে।নাবিল নীরবতা ভেঙে বলল,
“তোমরা মেয়েরা এত নাটক করো কী করে?ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছ তবুও কেন মুখ ফুটে কিছু বলছো না?”
রিফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধোয়,
“সব সময় আবেগ দিয়ে জীবন চলে না।”
“এটা অন্তত আমাকে শেখাতে এসো না।”
রিফা দুপা এগিয়ে পিছু ঘুরে নাবিলের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল।তার চোখে চোখ রেখে বলল,
“আমার চোখে আজ কি দেখতে পাচ্ছ নাবিল?”
“ভালোবাসা!”
“কেন?”
নাবিল মাথা নত করে ফেলল।রিফা তাচ্ছিল্য হেসে শুধোয়,
“জীবনের অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলেছি শুধু তোমাকে ভালোবেসে।তোমাকে ভালোবাসাটাই কি ভুল ছিল?”
“ভুল ছিল!আমাকে ভালোবাসাটাই ভাল ছিল।হয়তো তুমি আসলেই বেটার কাউকে ডিজার্ভ করো।”
“আমি বেটার কাউকে কখনো চাইনি।আমি চেয়েছিলাম নাবিল নামক এক সাধারণ পুরুষকে।আমি চেয়েছিলাম সেই পুরুষকে,যে আমার চোখে চোখ রেখে বুক ফুলিয়ে বলত,—আমি তোমায় ভালোবাসি রিফা।আমি ভালোবাসি তোমার চঞ্চল ঠোঁটের সেই হাসিকে।”
নাবিল দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে রইলো।রিফার চোখ ভিজে উঠল।
“তুমি জানো নাবিল, আমি কত রাত জানালার পাশে দাঁড়িয়ে তোমার জন্য প্রার্থনা করেছি? আল্লাহর কাছে কেঁদেছি শুধু তুমি যেন আমার হও। তোমার নামটাই ছিল আমার একমাত্র দোয়া।অথচ তুমি সেই নামটাই আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলে।”
তার কণ্ঠ কেঁপে উঠল। চোখ মুছে আবার তাকিয়ে বলল,
“আমি কোনোদিন তোমার কাছে হীরের গয়না, বড় বাড়ি বা আকাশছোঁয়া স্বপ্ন চাইনি।আমি শুধু চেয়েছিলাম একটা হাত,যে হাতটা আমার চোখের জল মুছে দেবে।আমি শুধু চেয়েছিলাম একটা কণ্ঠস্বর,যে বলবে,—‘আমি আছি তোমার পাশে।’”
নাবিল স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। রিফা ভাঙা হাসি দিয়ে বলল,
“জীবনে যদি ভালোবাসা এত কঠিন হয়,তবে আমি কেন এখনো তোমার চোখে ডুবে যেতে চাই?কেনো এখনো তোমাকে দেখলেই বুকের ভেতরটা কাঁপে? নাবিল,আমি ক্লান্ত আমি সত্যিই ক্লান্ত।তবুও তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার মতো শক্তিটুকুও আমার নেই।”
#চলবে..?