যেখানে মন হারায় পর্ব-১৮+১৯

0
13

#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
১৮.

মাঝে ৩মাস কেটেছে।রুহার বোর্ড পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুদিন হয়েছে।মুরসালীনের কাজের চাপ বেড়েছে বিয়ের পর থেকে।বউকে একটু ভালো রাখতেই তার এই কষ্ট।কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে আবার পড়াতে যায় সে।বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত ১০টা বাজে।আজও তাই হলো।মুরসালীন পড়াতে গেছে।তার সেই ছোটো পাখির বাসায় আজ তার শাশুড়ি আর বাবা এসেছেন।সাথে আফনানও আছে।রুহা ইলমা বেগমের শুকিয়ে যাওয়া মুখ খানা দেখে চাচার দিকে তাকাল।বলল,

“বাবা কী আপনার সাথে কথা বলে না চাচা?”

নরুল শেখ মুচকি হেসে বললেন,
“কথা কেন বলবে না মা?রাগ ছিল,কয়েকদিন মন মেজাজ ভালো না থাকায় কথা বলেনি কিন্তু এখন ঠিক আছে।”

রুহা শুকনো ঢোক গিলে মায়ের হাত খানা মুঠোয় নিয়ে বলল,
“বাবার সাথে তোমার সব ঠিক হয়েছে মা?”

ইলমা বেগমের চোখের নিচে গাঢ় কালির দাগ পড়েছে।ক্লান্ত মুখে দারুণ হাসি টানলেন তিনি।রুহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“সব আগের মতো হয়ে গেছে,শুধু তোরা নেই আমাদের মাঝে।তোর বাবা একটাবারও তোর কথা মুখে আনে না।”

রুহার দৃষ্টি নত হলো।কথা জড়িয়ে এলো গলায়।নরুল শেখ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
“ভাই আর নাসরিন দুজনই এখনো জেদ চেপে আছে।”

রুহা কথা এড়িয়ে বলল,
“বিয়ে কবে মা?”

ইলমা বেগম বললেন,
“এই শুক্রবারে বিয়ে।নাবিল আর দেরি করতে চাইছে না।”

“আমরা গেলে বাবা রেগে যাবে না?”

“সেটা আমি দেখে নিব।”

“কিন্তু মা,মুরসালীন ভাই তো ঐবাড়ি যেতে রাজি হবেন না।”

নরুল শেখ রুহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“চিন্তা করছিস কেন?আমরা এসেছি কিসের জন্য?আমি কথা বলব ওর সাথে।”

রাত ১০টার পর মুরসালীন বাসায় ফিরল ক্লান্ত শরীর নিয়ে।স্টুডেন্ট এর এক্সাম থাকায় একটু বেশি সময় পড়াচ্ছে সে।গায়ে হালকা জ্বর জ্বর ভাব।মুরসালীন বাড়ি ফিরতেই অবাক হলো বাবা আর চাচিকে তার বাসায় দেখে।রুহা তাড়াহুড় করে বিছানা থেকে নেমে মুরসালীনের সামনে এগিয়ে গেলো।মুরসালীন হাতের কাঁচা বাজারের ব্যাগ রুহার হাতে দিয়ে সালাম দিলো তাদের।নরুল শেখের ছেলেকে দেখেই বুকটা হুহু করে উঠল ব্যথায়।এই ছেলেকে দিয়ে তিনি কোনোদিন কোনো কাজ করাননি আর আজ পুরো একটা সংসার সামলাচ্ছে।মুরসালীন বলল ফ্রেশ হয়ে আসছে।খানিকক্ষণ পর হাত মুখ ধুয়ে তাদের কাছে এসে বসতেই ইলমা বেগম বললেন,

“কেমন আছিস বাবা?”

মুরসালীন ঠোঁটে এক ফালি হাসি টেনে বলল,
“যে উপহার আমাকে দিয়েছেন সেটা কাছে পেয়ে আর দুঃখ থাকে বুঝি?”

রুহা লজ্জা পেল স্বামীর কথা শুনে।ইলমা বেগম শব্দ করে হেসে উঠলেন।
“আমার পাগল মেয়ে তোকে জ্বালায় না?”

“জ্বালায় না,একটুও জ্বালায় না।বিয়ের পর আপনার মেয়ে ভীষণ বুঝদার হয়েছে।আমার এই গরিব ঘরে নিজেকে কী সুন্দর করে মানিয়ে নিয়েছে।”

“গরিব ঘর বলছিস কেন?দুজনের মধ্যে মোহাব্বত থাকলে টিনের ঘরেও সুখ আছে।”

মুরসালীন উত্তর না দিয়ে মৃদু হাসল।নরুল শেখ বললেন,
“শোনো,তুমি নিশ্চই জানো নাবিল বিয়ে করছে?”

“জি।”

“সামনে শুক্রবারে বিয়ে,অনুষ্ঠান করা হবে ছোটো করে।তুমি রুহাকে নিয়ে আসবে তো?”

রুহা ভীতু চোখে মুরসালীনের দিকে তাকাল।মুরসালীন আড়চোখে রুহার ভীতু আনন দেখে বলল,
“এটা সম্ভব না বাবা।ঐবাড়িতে আমার স্ত্রীকে অপমান করা হয়েছিল।”

“সব ভুলে আবার সব শুরু করা যায় না?”

“যায় না বাবা।চাচা একটাবারও তো নিজের মেয়ের খোঁজ খবর নিলেন না।তুমি জানো?এই মেয়ে কত রাত কেঁদে আমার বুক ভাসিয়েছে?যন্ত্রণায় কেমন ছটফট করেছে জানো?এই তিন মাসে কম হলেও হাজার বার চাচাকে ও কল করেছে,তবুও একটাবারের জন্য উনি কল রিসিভ করেননি।আমরা কী কোনো পাপ করেছি বাবা?ভালোবেসে দুজন জনকে বিয়ে করেছি বলে উনি সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছেন।”

ইলমা বেগম মুরসালীনের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অনুরোধ করে বললেন,
“এই মায়ের কথা রাখ বাবা।কতদিন বেঁচে থাকব জানি না,একবার সবাইকে একসাথে মন ভরে দেখার সুযোগ দিবি না তুই?”

মুরসালীন শুকনো ঢোক গিলল।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আপনি বুঝতে পারছেন না চাচি।”

“বুঝতে চাইছিও না।তুই আসবি কথা দে?”

রুহা বলল,
“চলুন না যাই?অনেকদিন ধরে কাউকে দেখি না।”

মুরসালীন পরাজিত হয়ে বলল,
“যাব,শেষবারের মতো যাব।”

ইলমা বেগম ও নরুল শেখ খানিক্ষণ থেকে আফনানকে নিয়ে চলে গেলেন।রুহা ঘরের দরজা আঁটকে বিছানায় মুরসালীনের পাশে বসে বলল,
“গায়ে হলুদের দিনই যাব আমরা।”

মুরসালীন বিরক্ত হয়ে বলল,
“এত জেদ ধরিস কেন তুই?তোর কথা আমি ফেলতে পারি না ভালো করেই জানিস।রাজি হলি কেন ঐবাড়ি যেতে?”

“আপনি শুধু শুধু চিৎকার করছেন।আমার তো একটাই ভাই,আর ওর বিয়েতে থাকব না?আমার কী ইচ্ছে করে না নিজের ভাইয়ের বিয়ে উপভোগ করার?”

মুরসালীন নরম হয়ে এলো।হাত বাড়িয়ে দিতেই রুহা এগিয়ে গিয়ে বুকে মাথা রাখল।মুরসালীন বলল,
“আচ্ছা সরি।কিন্তু তোর হিটলার বাপ যদি কিছু বলেছে তাহলে তোর খবর আছে।”

“আচ্ছা।”

রুহা মুরসালীনের বুকে মাথা রেখেই শান্তভাবে বসেছিল।শরীরের ক্লান্তি তার চোখেমুখে স্পষ্ট ধরা দিচ্ছে।মুরসালীন ওর মাথার চুলে হাত বুলিয়ে বলল,

“কাছে আয়।”

ভড়কালো মেয়েটা।রুহা চোখ তুলে তাকাল,বলল,
“আপনার শরীর খারাপ,একটু বিশ্রাম নিন আগে।”

মুরসালীন মৃদু হাসল,গলার স্বরটা ভারী।
“বিশ্রাম তোকে ছাড়া হবে না।তুই থাকলেই আমার সব ব্যথা কমে যাবে।”

“না,আজ না আপনার গায়ে জ্বর আছে।কাছে আসবেন না।”

মুরসালীন চোখ নামিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকাল।তার ভেতরে অদ্ভুত অস্থিরতা জমছে।হঠাৎই ওর হাত ধরে টেনে নিলো আরও কাছে।
“আমি শোনার মতো অবস্থায় নেই।”

“কিন্তু..”

রুহা কিছু বলতে চাইলে মুরসালীন তার ঠোঁটের ওপর আঙুল রাখল।

“চুপ।আজ আমাকে বাঁধা দিবি না।”

রুহা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।মুরসালীন এলোমেলোভাবে ছুঁতে লাগল তাকে।তার গরম নিঃশ্বাস রুহার গায়ে লাগতেই রুহার বুক ধকধক করে উঠল।

“আপনার জ্বর আছে, দয়া করে…”

রুহা হালকা ঠেলতে গেলো কিন্তু মুরসালীন স্ত্রীর হাত মুঠো করে ফিসফিস করল,
“আমার জ্বর যদি থাকে,তুই আমার ঔষুধ।”

রুহার মুখ লাল হয়ে উঠল।অস্থির,অনিয়ন্ত্রিত স্পর্শে মুরসালীন তাকে আরও কাছে টেনে নিলো।বুকে আঁকড়ে ধরে এলোমেলো ভালোবাসায় ভরে দিলো বউকে।
•••

শেখ বাড়ি আজ হলুদের আয়োজন শুরু হয়েছে।ভোর সকাল থেকেই মানুষের আনাগোনা বেড়েছে।গত কাল রাতে রুহা মুরসালীনকে নিয়ে এই বাড়ি এসেছে।বাবার সাথে এখনো দেখা হয়নি।রুহা মুরসালীনের ঘরে এই মুহূর্তে।মুরসালীন ঘুমাচ্ছে তার পাশে।রুহা বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো।গায়ে ওড়না জড়িয়ে মুরসালীনের দিকে ঝুঁকে মাথার চুলে বিলি কেটে বলল,

“শুনছেন?সকাল হয়েছে উঠুন।”

মুরসালীন পিটপিট করে চোখ খুলল।ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল,
“কয়টা বাজে?”

“৬:০৪।”

“আর একটু ঘুমাই।”

“না বাড়িতে অনেক কাজ আছে।আপনি না এই বাড়ির ছেলে?”

মুরসালীন উঠে বসলো।বেড সাইডের টেবিলের উপর থেকে চশমা নিয়ে চোখে পড়ে বউয়ের দুষ্টু বদন পানে তাকিয়ে বলল,
“তোর বাপ ভাইয়ের জন্য একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারব না।”

মুরসালীন ওর কোমর চেপে ধরে পেটে মুখ গুঁজে দিলো।রুহা খিলখিল করে হেসে উঠলো দাড়ির খোঁচা লাগায়।দুষ্টু স্বরে বলল,
“এই যে! গায়ে গা লাগিয়ে কী করছেন?আমার গা কুটকুট করছে।”

মুরসালীন মুখ না সরিয়েই গম্ভীর স্বরে বলল,
“তোর গা কুটকুট করলেই আমার শান্তি লাগে।”

“ছাড়ুন ছাড়ুন।”

মুরসালীন এবার মাথা তুলে বউয়ের মুখের দিকে তাকাল।চোখেমুখে হালকা ঘুমের ছাপ,কিন্তু তাতে যেন একরাশ মায়া জমে আছে।চোখ নামিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“চল তোকে একটু লজ্জা দেই।”

“সব সময় বাজে কথা।সরুন দেখি।মা কল দিয়ে বলেছে,আপনাকে তাড়াতাড়ি নিচে নামতে।আপনার নাকি আজ অনেক দায়িত্ব।”

“তোর হিটলার বাপ আমাকে এই সকাল সকাল বাড়িতে দেখে যুদ্ধ না শুরু করে দেয়।”

#চলবে…?

#যেখানে_মন_হারায়
#হামিদা_আক্তার_ইভা_Hayat
১৯.

মুরসালীন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো।রুহার ওড়না টেনে ভেজা মুখ মুছে বউয়ের গালে টুপ করে একটা চুমু এঁকে বলল,

“তোর বাপ এই সকাল সকাল আমার মুখ দেখে আবার হসপিটালে না ভর্তি হয়।”

রুহা চোখ পাকিয়ে তাকাল।
“বাবাকে নিয়ে ফালতু কথা বলবেন না একদম।”

“তোর বাপ যে আমাকে তিন বেলা সাবান ছাড়া ধুইয়ে দেয় তখন তো তোর জ্বলে না।বাপের নামে একটু কিছু বললেই কলিজা ছ্যাঁত করে ওঠে তাই না?হিটলার শ্বশুরের বজ্জাত মেয়ে একটা।”

মুরসালীন হনহন করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।রূহা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল সেদিকে।হঠাৎ মুরসালীন এমন রেগে গেল কেন?রাগার মতো কিছু বলেছে সে?সে বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বের হলো।সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই নাসরিন বেগমের মুখোমুখি হতেই রুহা হতভম্ব হয়ে গেলো।শুকনো ঢোক গিলে সালাম দিতেই নাসরিন বেগম তাকে না দেখার মতো জায়গা ছাড়লেন।দৃষ্টি ছলছল হয়ে এলো।সদর দরজার পাশ থেকে রাইমা এটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এগিয়ে এসে বোনকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বাগানে যেতেই দেখতে পেল বাগানে কাজ চলছে।প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে।অপর পাশে মুরসালীন,নাবিল,নরুল শেখ আর পিয়াস লোকজনের সাথে কাজ নিয়ে কথা বলছে।রাইমা বোনের উদাসীনতা দেখে বলল,

“সব ঠিক হয়ে যাবে।মন খারাপ করেছিস কেন?”

“আমি কী খুব বেশি অন্যায় করে ফেলেছি আপু?এখন তো উনার ছেলের বউ আমি।আমি তিন মাস ধরে তার ছেলের সংসার করছি।”

“তুই তো জানিস চাচি কেমন?”

“আমার জন্য মুরসালীন ভাইও উনার সাথে কথা বলে না।বদদোয়া লেগে যাবে আপু।”

“কিছু হবে না।সকালে খেয়েছিস কিছু?”

“উনি তো খায়নি এখনো।”

“বাবাহ,জামাইকে ছাড়া খাবারও খাবি না?”

রুহা বিরক্ত হয়ে বলল,
“উফফ তুই বেশি কথা বলিস।”

রুহা ভাইদের কাছে এগিয়ে গেলো গুটি গুটি পায়ে।মুরসালীন আড়চোখে রুহাকে দেখে চোখ সরিয়ে নিল।রুহা সে দৃশ্য দেখে ঠোঁট উল্টালো।নাবিল রুহাকে দেখে বলল,
“কী হয়েছে?”

রুহা মিনমিন করে বলল,
“মা খেতে ডাকছে।”

“আমরা তো খেয়েছি।”

“তোমাকে না,মুরসালীন ভাইকে।”

পিয়াস নাক ছিঁটকে বলল,
“তুই তো খুব বেয়াদব রুহা।জামাইকে ভাই ডাকিস কোন আক্কেলে?”

নরুল শেখ মাথা নাড়িয়ে বললেন,
“এখন বিয়ে হয়েছে না মা?জামাইকে ভাই ডাকা ঠিক নয়।আর ভাই ডাকবি না।”

রুহা মাথা নাড়লো।মুরসালীনের শার্টের হাতা টেনে ধরে বলল,
“চলুন।”

মুরসালীন চোখ ছোটো ছোটো করে বউয়ের দিকে তাকাল।ভ্রু উঁচিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“কোথায় যাব?”

“মা খেতে ডাকছে আপনাকে।”

“খাব না আমি।”

নাবিল হালকা কেঁশে চাচাদের নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো।রুহা মুরসালীনের শার্টের হাতা এখনো ধরে রেখেছে।
“চলুন না?”

“যাব না বললাম না?”

“এমন কেন করছেন?আমি এখনো খাইনি।”

“খাসনি কেন?”

“আপনাকে ছাড়া খাব?”

মুরসালীন চাপা শ্বাস ফেলে রুহার কাঁধ ধরে বাড়ির দিকে হাঁটা ধরল।ডান পাশের কোণার ঘরের জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখলেন কামরুল শেখ।মুখ খানা ভীষণ গম্ভীর।
মুরসালীন আর রুহা খেতে বসেছে।ইলমা বেগম দোয়েল,রুহা,মুরসালীন,আফনান এবং প্রীতমকে খেতে দিয়েছেন।মুরসালীন চুপচাপ খাচ্ছে।প্রীতম বেশ কিছুক্ষণ নীরব থেকে বিরক্ত হয়ে বলল,

“মুরসালীন ভাই একটা মেয়ে পটিয়ে দাও।সিনিয়র দেখে একটা মেয়েকে বিয়ে করব ভেবেছি।”

মুরসালীন খাওয়া থামিয়ে প্রীতমের দিকে তাকাল।আশ্চর্য ভাব নিয়ে বলল,
“দাড়ি উঠেছে তোর?”

“মানে?”

“দাড়ি গজাবাড় আগেই নারী চাচ্ছিস।”

“অপমান করবে না।আমার বয়স কী কম?২৭ পেরিয়েছি।”

“তো?আমি ৩০ পেরিয়েছি আর বিয়ে করেছি কয়েকদিন আগে।তোর ৪০ এর আগে বিয়ে হবে না দেখে নিস।”

“নাউযুবিল্লাহ মার্কা কথা বলবে না।যৌবন পেরিয়ে গেলে বিয়ে করে কী করবো?”

ইলমা বেগম ছেলে মেয়েদের লাগাম ছাড়া কথা শুনে ধমক দিয়ে বললেন,
“কী বেয়াদবি হচ্ছে?চুপচাপ খা,বিয়ে দিব তোকে।”

প্রীতম মুখ বাঁকিয়ে খাওয়া শুরু করল।রুহা মুরসালীনের দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল,
“আমি একটা বুড়ো জামাই বিয়ে করেছি।কপালটা পুড়লো গো।”

মুরসালীন কটমট করে তাকাল।রুহা মুচকি হাসল।বলল,
“ভেবেছিলাম একটা হ্যান্ডসাম কচি ছেলে দেখে বিয়ে করব কিন্তু কপালে যে একজন বুড়ো জামাই জুটবে এটা কে জানত?”

মুরসালীন নিজের প্লেটে মাখানো ভাত টুপ করে রুহার মুখে তুলে দিয়ে দাঁত চিবিয়ে বলল,
“দিনটা শুধু যেতে দে তারপর বুঝিয়ে দিব আমি বুড়ো নাকি অন্যকিছু।”

••

কামরুল শেখ রুহার সামনেই বসে আছেন এই মুহূর্তে।রুহার চোখ ভর্তি পানি।পাশে মুরসালীন বউয়ের ছোটো হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে।কামরুল শেখ অনেকক্ষণ নীরবতা পালন করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

“আমিরের পরিবারের কাছে কতটা অপমানিত হতে হয়েছে আমাকে তার কোনো ধারণা আছে তোমাদের?”

রুহা ভেজা গলায় বলল,
“বাবা আমি একজনকে ভালোবেসে অন্য আরেকজনকে কী করে বিয়ে করতাম বলো?আমি তো তোমাকে প্রথম থেকেই বারণ করেছি এই বিয়ে আমি করতে পারব না।”

“আমি কী তোর খারাপ চাইতাম?”

“আমার খুশি তো চাওনি বাবা।”

রুহা মুরসালীনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“এই মানুষটাকে দেখেছ?তার সংসার ভীষণ ছোটো কিন্তু গোছালো একটা সংসার।সে সাধারণ একটা কলেজের শিক্ষক,বেতনও খুব কম।আমাকে বিয়ে করার পর আমার অসুবিধা হবে বলে গাঁধার মতো সারাদিন খাটে জানো?বিকেলে কলেজ থেকে আসার পর একটা ঘণ্টা রেস্ট না নিয়ে আবার স্টুডেন্ট পড়াতে যায় সে।তুমি’ই বলো বাবা,যে মানুষটা নিজের কথা না ভেবে শুধু মাত্র আমার জন্য এত কষ্ট করে তাকে ভালো না বেসে থাকা যায়?”

মুরসালীন গম্ভীর হয়ে রুহার চোখের পানি মুছে বলল,
“চুপ কর।”

“চুপ কেন করবো মুরসালীন ভাই?বাবার তো জানা উচিত তার মেয়ে ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।”

রুহা বাবার দিকে ফিরল।শ্বাস টেনে বলল,
“সুন্দর একটা জীবনের জন্য টাকা প্রয়োজন বাবা কিন্তু টাকা দিয়ে সংসার ধরে রাখা যায় না।রাইমা আপুর জামাই তো তোমার থেকেও বড়োলোক,তাই বলে কী আপু সংসারও ধরে রাখতে পারল?শুধু টাকা থাকলেই হয় বাবা,সুন্দর একটা মনও থাকতে হয়।আমার স্বামী মুরসালীন শেখ আবেশ,তার হয়তো কোটি কোটি টাকা নেই কিন্তু আমাকে সুখে রেখেছে সে।

আমি তো কখনো তোমার অবাধ্য হতে চাইনি।তুমি যেদিন আমায় বললে বিয়েটা করবে,আমি সেদিনও কেঁদে বলেছিলাম আমার মন অন্য কোথাও পড়ে আছে।তুমি শোনোনি।তুমি শুধু সমাজের ভয়, মানুষের চোখ,বড়োলোক পরিবার এসব দেখেছ।কিন্তু বাবা, সংসার মানুষকে নিয়ে হয়, মানুষের ভালোবাসা আর ত্যাগ দিয়ে হয়।মানুষের কথায় সংসার চলে না।

তুমি বলেছিলে আমি সুখী হবো কিন্তু সুখ কি শুধু টাকা দিয়ে হয়?আমি তো দেখছি বাবা এই মানুষটা আমার জন্য কতটা বদলেছে।নিজেকে ভুলে শুধু আমাকে নিয়ে ভাবছে।তার চোখের দিকে তাকালেই আমার মনে হয়, আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়ে।সে আমার স্বামী, আমার অভিমান, আমার ভরসা, আমার আস্ত আশ্রয়।”

রুহার চোখ ভিজে উঠেছে,চোখ তুলে বাবার দিকে তাকাল সে,এবার কণ্ঠটা ভেঙে গেল,

“তুমি ভেবেছিলে আমি কষ্ট পাবো,কিন্তু আমি তো সুখী বাবা।এমন সুখ, যা কোনো টাকায় কেনা যায় না।তুমি যদি আজও আমাকে বুঝতে না পারো, তাহলে আমি কীভাবে তোমাকে বোঝাবো?আমার জীবনে প্রথমবার আমি নিঃশর্তে কাউকে ভালোবাসতে শিখেছি, আর সে হলো আমার স্বামী।তাকে নিয়ে আমি গর্ব করি বাবা, লজ্জা নয়।হয়তো আমার শরীর ভর্তি সোনার গয়না নেই,আমার সংসারে দামি আসবাপত্র নেই,দামি দামি জামা কাপড় নেই তবুও আমি সুখী।তোমার চোখে আমার স্বামী সাধারণ একজন শিক্ষক হলেও সে আমার কাছে অসাধারণ একজন পুরুষ।আমার গর্ব সে।”

মুরসালীন অবাক চোখে বউয়ের বদন পানে তাকিয়ে রইল।এইটুকু মেয়ে যে এত কথা বলতে পারে তার জানা ছিল না।কেমন করে স্বামীর সাপোর্ট নিচ্ছে।অজান্তেই ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল তার।

কামরুল শেখ তখনও চুপ ছিলেন।মুরসালীন চাচার কোনো উত্তর না পেয়ে বলল,

“চাচা বেয়াদবি মাফ করবেন।আমার বাবার হয়তো বড়ো একটা ব্যবসা আছে যেটায় আপনি আমাকে হাত লাগাতে বলেছিলেন।কিন্তু আমি চাই না বাবার গড়ে তোলা ব্যবসাতে হাত লাগাতে।আমি সব সময় চেয়েছি নিজের যোগ্যতা দিয়ে কিছু করতে।আমি যেই চাকরিটা করি সেটায় হয়তো লাখ লাখ টাকা নেই কিন্তু সুখ আছে।আমি আমার পেশা নিয়ে গর্ব করি।আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করবেন না,আমার সামর্থের মধ্যে যা সম্ভব সব দিব ওকে।সব টুকু দিয়ে ওকে সুখে রাখার চেষ্টা করব।”

কামরুল শেখ চোখ তুলে মুরসালীনের দিকে তাকালেন।গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“মেয়েকে নিয়ে আমার আর কিছুই বলার নেই।তোমরা বিয়ে যখন করেই ফেলেছ এখানে আমার আর কী বলার আছে?”

“কিছুই বলার নেই তবে আপনি আপনার মেয়েকে ক্ষমা করেননি এখনো।”

রুহার ছলছল চোখে বাবার দিকে তাকাল।কামরুল শেখ মেয়ের চোখে চোখ রাখতেই দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন।রুহা বিছানা থেকে নেমে কাঠের চেয়ারের সামনে গিয়ে বাবার পায়ের কাছে হাঁটু মুড়ে বসল।বাবার কোলে মাথা রেখে পা জড়িয়ে ধরে ধরা গলায় বলল,

“আমি আজও বলব না আমি ভুল করেছি।বাবা,আমি এমন একটা মানুষকে বিয়ে করেছি যে মানুষটা আমাকে তার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে।আমি কোনোদিন অস্বীকার করতে পারব না আমার স্বামীর ভালোবাসাকে।কোনোদিনও না।”

রুহা ফুঁপিয়ে উঠল।মুরসালীন ঠিক বুঝে উঠতে পারল না বাবা মেয়ের মাঝে কী বলা উচিত।কামরুল শেখ চেয়ারে পিঠ এলিয়ে দিয়ে হঠাৎ হাতটা চোখের উপর রাখলেন।এক লম্বা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো যেন।ঘরের নীরবতা ছিন্ন করে বললেন,

“আজীবন টাকার পেছনেই ছুটে গেছি আমি।টাকা না থাকলে কী হয় সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি।ঠিক এই কারণে আমি চাইনি আমার মেয়েরা কখনো অভাবের মুখ দেখুক।রাইমাকে আমি জন্ম দিয়েছি,আমার সন্তান সে।আমি কখনোই চাইব না আমার সন্তানরা খারাপ থাকুক।ভালো পরিবার দেখেই তো তার বিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু পরে যে এমন বের হবে তা তো জানা ছিল না আমার।মুরসালীনকে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই।সে ভালো ছেলে,জ্ঞান বুদ্ধিও ভালো তবে তার কাছে আমার একটা আবদারই ছিল।সে যেন ব্যবসায় হাত লাগায়।হ্যা এটা সত্য সে যখন কয়েক বছর আগে তোর হাত চেয়েছিল তখন আমি বয়স দেখছিলাম,যোগ্যতা দেখেছিলাম।তবে আজ সব কিছুই তুচ্ছ মনে হচ্ছে।

স্বামীর ভালোবাসাটা ধরে রাখিস মা।আজকে এই মুহূর্তে যেমন স্বামীর হাত ধরে রুখে দাঁড়ালি ঠিক এমন করেই আজীবন ধরে রাখিস।”

রুহার শ্বাস আঁটকে এলো।থেমে থেমে শ্বাস নিয়ে বলল,
“তুমি আমাদের মেনে নিয়েছো বাবা?”

“নিয়েছি।খুব সুখী হো তোরা।”

রুহা কান্নার মাঝেও হেসে ফেলল।উঠে দাঁড়িয়ে বাবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি জানতাম বাবা তুমি বেশিদিন রেগে থাকতে পারবে না।আমি জানতান।”

মুরসালীন মুখ কুঁচকে দূরে দাঁড়িয়ে রইল।এই শ্বশুরকে তার পছন্দ হচ্ছে না এখন।এতদিন নাটক করে এখন বলছে মেনে নিয়েছি।

কামরুল শেখ চেয়ার ছেড়ে উঠে মুরসালীনের সামনে এগিয়ে এলেন।গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
“মেনে নিয়েছি বলে আকাশে উড়াল দিয়ো না।তুমি অন্যায় করেছ আমার মেয়েকে আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করে।কোনোদিন যদি দেখেছি তোমার কারণে ওর চোখে পানি এসেছে তাহলে আমি ভুলে যাব তুমি কে।”

কামরুল শেখ ঘরের বাইরে বের হলেন।মুরসালীন হতভম্ব হয়ে রুহার দিকে তাকিয়ে রইল।শ্বশুর তাকে ওয়ার্নিং দিয়ে গেল?রুহা মুরসালীনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওড়নার কোণা দিয়ে নাক মুছে এগিয়ে এলো কাছে।বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,

“কী হলো আপনার?”

“তোর বাপ তোর সাথে নরম গলায় কথা বলে আমাকে ওয়ার্নিং দিয়ে গেল কেন?”

“দিবে না?আপনি যদি কখনো আমাকে কাঁদান,দুঃখ দেন তখন?”

“ঠাপড়ে দাঁত সব গুলো ভেঙে ফেলব বেয়াদব।”

“তুমি আমার মেয়েকে ধমকাচ্ছ কোন সাহসে?” কামরুল শেখ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন।
মুরসালীন পিছু ফিরে শ্বশুরকে দেখে বউকে বুকে টেনে নিয়ে বলল,

“ধমকাবো কেন?আমার একটা মাত্র সোনা বউ।”

রুহা আশ্চর্য হলো।একটু আগেই কেমন করে বকা দিচ্ছিল আর এখন ভালো মানুষ সাজছে।কামরুল শেখ ঠোঁট চেপে ধরে চুপ করে রইলেন।মুহূর্তে যেন তার চোখে জল চিকচিক করে উঠল।কিন্তু দ্রুতই সোজা হয়ে পেছন ফিরে হাঁটা দিলেন।

রুহা মৃদু স্বরে বলল,
“আপনি মিথ্যে কেন বললেন?”

মুরসালীন ভ্রু কুঁচকে বউয়ের কপালে আঙুল ঠেকিয়ে বলল,
“তুই জিহ্বা সামলাস।কাউকে যেন কখনো না শুনাতে পারিস এসব কথা।”

রুহা মুচকি হেসে হাতের আঙুল দিয়ে জামাইকে খোঁচা মারল।মুরসালীন আবার কটমট করে তাকাল, কিন্তু চোখের গভীরে দুষ্টু ভালোবাসার ঝিলিকটা স্পষ্ট।ঠিক তখনই বাইরে থেকে আফনান দৌড়ে এসে ডাক দিল,
“ভাইয়া! চাচা ডাকছে। অতিথিদের লিস্ট নিয়ে তাড়াতাড়ি যেতে বলছে।”

মুরসালীন চোখ পাকিয়ে বলল,
“যা,আসছি।”

আফনান চলে যেতেই রুহা মুচকি হেসে জামাইর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“বাবা ডাকছে,যাবেন তো? নাকি আমি হাত ধরে নিয়ে যাব?”

“একটা চড় খাবি নাকি?”

“খেতে রাজি,তবে শর্ত আছে।”

“কী শর্ত?”

“চড় মারলে গালে মারবেন না,ঠোঁটে মারবেন।”

মুরসালীন হকচকিয়ে গেল।চোখ বড়ো বড়ো করে বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুই একেবারে বেয়াদবের রাণী।”

“হ্যাঁ,কিন্তু আপনার বেয়াদব রাণী।”

মুরসালীন হেসে ফেলল।বউয়ের নাক টিপে দিয়ে বলল,
“পাগল মেয়ে একটা।”
••

বাগানের ভেতর প্যান্ডেল সাজানোর কাজ প্রায় শেষ।লোকজন ব্যস্ত।নাবিল দাঁড়িয়ে নির্দেশ দিচ্ছে।নিজের বিয়ের কাজ নিজেকেই করতে হচ্ছে।রুহা দূর থেকে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে।মুরসালীন কাছে গিয়ে কাজের খোঁজ নিতেই নাবিল হেসে বলল,

“তোর বউ কিন্তু চোরের মতো লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাচ্ছে।”

মুরসালীন আড়চোখে তাকিয়ে দেখল রুহা সত্যিই ওদের দিকে চোরা দৃষ্টি দিচ্ছে।দেখা মাত্রই রুহা মুখ ফিরিয়ে নিল।

নাবিল হেসে বলল,
“লাভ ম্যারেজের মজা তো এমনই।”

“চুপ করো ভাইয়া।”

পাশেই পিয়াস খিক খিক করে হাসতে হাসতে বলল,
“কী যে রোমান্টিক হয়েছো,দেখে তো কলেজের মেয়েরা কেঁদে ফেলবে।”

মুরসালীন কটমট করে তাকাতেই ওরা দু’জন পিছু হটল।চাচারা কাজ শেষ করে চলে গেলে রুহা আবার গুটিগুটি পায়ে মুরসালীনের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।শান্ত স্বরে বলল,
“শুনবেন? সন্ধ্যায় যদি সময় পান তাহলে একসাথে হাঁটতে যাবেন?অনেকদিন হলো শুধু ঝগড়া করছি।একটু প্রেম করা দরকার।”

মুরসালীন রুহার এক কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে চোয়াল আলতো করে চেপে ধরে বলল,
“তোকে নিয়ে বাইরে গেলে আমার মান সম্মান মাটিতে মিশে যাবে।পিচ্চি একটা মেয়েকে আমার পাশে দেখে মানুষ ভাববে আমার মেয়ে।”

রুহা কটমট করে তাকাল।ঝকটা মেরে মুরসালীনের হাত সরিয়ে বলল,
“একদম বাজে কথা বলবেন না।মোটেও আমাকে এত বাচ্চা বাচ্চা লাগে না।আমাদের দুজনকে একসাথে কত সুন্দর লাগে জানেন আপনি?”

“তুই’ই না সকালে বললি আমাকে বুড়ো লোকেদের মতো লাগে?”

“ওটা তো মজা করে বলেছিলাম।”

“তাও নিয়ে যাব না।”

রুহা গাল ফুলালো।বাহার বাবু দৌঁড়ে এসে রুহার পা আঁকড়ে ধরলো।সে নিচু হয়ে বাহারকে কোলে নিতেই বাহার মুরসালীনের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল,

“মামু মামু।”

মুরসালীন চারপাশে চোখ বুলিয়ে মুখ এগিয়ে বাহারের গালে আলতো করে চুমু এঁকে বউয়ের ঠোঁটে ওষ্ঠ ছোঁয়ালো।রুহা হতভম্ব হয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখল কেও দেখল কিনা।মুরসালীন রুহার কপালের সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলল,

“আজ ব্যস্ত বউ,রাতে সময় দিব তোমাকে সন্ধ্যায় নয়।”

#চলবে…?