#যেখানে_দিগন্ত_হারায়
#পার্ট_৩৩
জাওয়াদ জামী জামী
ছায়ালোকে দ্বিজরাজ রুপোলি আলোর পসরা সাজিয়ে নিজেকে উজার করে ধরনীকে আলোকিত করেছে। ধরনী তার দেহে আলোর পরশ পেয়ে লাজুক রমনীর ন্যায় মুখ লুকিয়েছে উজ্জ্বল সেই রোশনীরই মাঝে। নিজের বুকে মেখে নিচ্ছে আলোর পরশ। অনন্তকাল ধরে চলে আসছে দ্বিজরাজ আর ধরীত্রির এহেন প্রনয়। ধরাধামে মাটির এক কুটিরে দু’জন প্রনয়ে মত্ত। নিজেদের প্রনয়ের মত্ত নারী-পুরুষের নজরেই আসলনা ভূলোক-দ্যুলোক আর দ্বিজরাজের মহাপ্রনয়।
মাশিয়ার শরীরে নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে ওর দু’হাতের আঙ্গুলের মাঝে নিজের হাতের আঙ্গুল রেখে টুকটাক কথা বলছে। মাশিয়া তাকিয়ে আছে আরমানের চোখের দিকে। ও কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছে।
” কি দেখছ, বউ? ”
আরমানের মুখে বউ ডাক শুনে মৃদু হাসল মাশিয়া।
” দেখছি না খুঁজছি। ”
” কি খুঁজছ! ”
” কতটা ভালোবাসেন সেই প্রশ্নের উত্তর। ”
” উত্তর পেয়েছ? ”
” মনে হয়। ”
” আপনি বোধহয় আমাকে অনেকটাই ভালোবাসেন। ”
” এখনও বোধহয় আর অনেকটাই ! তুমি ফেইল। শোন মেয়ে, তোমার সাথে রাগারাগি করতে গিয়ে, তোমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে মনের অজান্তে কখনযে তোমাকে ভালোবেসেছি তা আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। একটু একটু করে সেই ভালোবাসা আজ আকাশসম। দুনিয়ায় সেই ভালোবাসা মাপার কোন যন্ত্র নেই আর ভবিষ্যতেও তৈরী করতে পারবেনা কেউই। তুমি আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছ, মাশিয়া। তোমাকে ছাড়া আমি শূন্য হয়ে যাব। ”
” আচ্ছা! ”
” কোন সন্দেহ আছে? ”
” উঁহু। ”
” একটা সুখবর দেই, শুনবে? ” মাশিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল আরমান।
” বলুন। ”
” আগামী মাস থেকে আমি আর বেকার থাকছিনা। চিটাগংয়ের একটা ভার্সিটি থেকে ডাক এসেছে। সেখানে গিয়ে জয়েন করব এই মাসের শেষেই। ” মাশিয়ার গলায় মুখ ঘঁষছে আরমান।
” কনগ্রেচুলেশন। কিন্তু আপনার বিসিএস এর কি হবে? ” মাশিয়া আরমানের ছোট্ট ছোট্ট আদর উপভোগ করছে।
” বিসিএস ও দেব। তখন তুমি আর একজন শিক্ষকের বউ থাকবেনা। একজন পররাষ্ট্র ক্যাডারের বউ হবে। ” আরমানের চোখের তারায় ওর স্বপ্নেরা উঁকি দিচ্ছে। ঠিকরে পড়ছে আত্মবিশ্বাস। যা মাশিয়ার চোখে পড়ে যায়।
” বাব্বাহ্! অসভ্য মাস্টারের এত কনফিডেন্স! ” সত্যিই অবাক হয়েছে মাশিয়া।
” আত্মবিশ্বাস না থাকলে সামনে এগোবো কিভাবে। এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস আছে জন্যই তো স্বপ্ন দেখার সাহস পাই। আত্মবিশ্বাসই আমাকে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন দেখার সাহস জোগায়। ”
” ধন্য মাস্টার, আপনি ধন্য। এত ধৈর্য্য যে কোথায় পান! আমার বাপু এত ধৈর্য্য নেই। ” আরমানের ঘন চুলে আঙুল চালাচ্ছে মাশিয়া।
” তুমি হলে ফাঁকিবাজদের নেত্রী। তোমার যদি ধৈর্য্য থাকে তবে অন্যান্য ফাঁকিবাজদের কি দশা হবে ভাবতে পারছ? ”
” অপমান করবেননা বলে দিচ্ছি। একটু ভালো স্টুডেন্ট হয়েছে জন্য কত অহংকার! ফাঁকিবাজদের মানুষ বলে গন্যই করেনা! কিন্তু আমি ভাবছি, এত অহংকার নিয়ে ভালোবাসার কথা স্বীকার করল কিভাবে! ”
” আমিতো স্বীকার করেছি সে যেভাবেই হোক। কিন্তু তুমিতো একবারও বললেনা, আমাকে ভালোবাসো কিনা। অথচ আমি সেটা শুনতে ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছি। ”
” তাহলে আপনাকে আরও একশো বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারন আগামী একশো বছরের মধ্যে আমি আপনাকে ভালোবাসার কথা বলছিনা, এটা নিশ্চিত থাকেন। ”
” হাহ্ তাহলে আমাকে একবার ম’রে আবারও জন্মাতে হবে। আরমান এবার তুই ডাহা ফেইল। ভালোবাসার খেলায় তুই হেরে গেছিস। বউ পেলাম, সে কাছেও আসল তাকে আপনও করে নিলাম কিন্তু সে ‘ ভালোবাসি ‘ কথাটা একবারও বললনা! আরমান এই কষ্টে তুই ম’রে যা। ”
আরমানের কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল মাশিয়া। আরমান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে তার হাস্যোজ্জ্বল প্রানপ্রিয় রমনীর দিকে।
ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে আরমানের। ঘড়িতে সকাল সাড়ে আটটা বাজছে। আরমান হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছাড়ল। মাশিয়া তখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এলোমেলো শাড়ী হাঁটু ছুঁয়েছে, চুলগুলো অবিন্যস্তভাবে চারপাশে ছড়িয়ে আছে। আরমান এক নজর ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
” বাপ, বউমা এখনও ঘুমায় রইছে কেন? হের কি শরিলডা খারাপ? ” আরমানকে খেতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আয়েশা খানম। কোন একটা কাজে আরমান বাহিরে যাবে। তাই আয়েশা খানম তাড়াহুড়ো করে ওকে খেতে দিয়েছেন।
আম্মার প্রশ্নে আরমান একটু থতমত খেয়ে যায়। কথা এসে আটকে গেছে কণ্ঠায়। আম্মাকে কি বলবে এবার! অনেক চিন্তা করে ধীরে ধীরে বলল,
” ওর নাকি মাথা ব্যথা করছে, তাই এখনও ঘুমাচ্ছে। ”
আয়েশা খানম আর কিছু বললেননা। আরমানও দ্রুত খেয়ে উঠে যায়।
” মাগো, তুমি কাপড় গোছাইতাছ ক্য? কনে যাইবা? আরমানতো বাইত্তে নাই, হেয় কখন আইবো হেইডাও জানিনা। ” মাশিয়াকে ব্যাগে কাপড় রাখতে দেখে আয়েশা খানম অবাক হয়ে জানতে চাইলেন। তিনি মাশিয়ার পরিহিত পোশাক দেখেও অবাক হয়েছেন।
” আমি ঢাকা যাচ্ছি, আম্মা। নিজের বাসায় ফিরে যাচ্ছি। অনেকদিনতো থাকলাম এই অজপাড়াগাঁয়ে, আর কত? তাই যাচ্ছি আমার আপন ঠিকানায়। ” মাশিয়া রূঢ়ভাবে কথাগুলো বলল।
মাশিয়ার কথা শুনে আয়েশা খানম একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলেন। তিনি কি বলবেন বুঝতে পারছেননা। অনেক কষ্টে হাতড়ে কয়েকটা কথা জোগালেন।
” তোমার আপন ঠিকানা এখন এই বাড়ি। তুমি বাপের বাড়ি যাইয়া কয়দিন থাইকা আসো। এক বছরের বেশি হইল তুমি সেইখানে যাওনাই। তাই হয়তো তোমার খারাপ লাগতাছে। মাগো, একটা কতা মনে রাইখ, যতই অজপাড়াগাঁ হোক আর ভাঙ্গা কুটির হোক এইডাই তোমার আসল বাড়ি, তোমার আপন ঠিকানা। এই বাড়ির রানী তুমি। তোম্গোর মইধ্যে ঝগড়াঝাটি হইলে মিটাইয়া নেও, মা। তা-ও বাড়ি ছাড়নের কতা কইওনা। আমার পোলাডা কষ্ট পাইব, মা। আমার পোলার কষ্ট আমি দেখবার পারুমনা। ” আয়েশা খানম মাশিয়ার হাত ধরে আকুতিভরা গলায় বললেন। তার চোখে পানি।
” এসব আবেগের কথায় জীবন চলেনা, আম্মা। জীবনে চলার পথে দরকার টাকা, সম্পদ আর ক্ষমতা। টাকা থাকলেই ভালোবাসাও কিনতে পাওয়া যায়। এখানে ভালোবাসা বৈ কিছুই নেই। কিন্তু আমার এই ননসেন্স ভালোবাসার দরকার নেই। আমি জন্ম থেকেই আভিজাত্যের মধ্যে মানুষ হয়েছি। আর সেটাই আমার প্রয়োজন। আর আপনার ছেলে কষ্ট পেলো কিনা সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। সে তার কষ্টের কারন নিজেই। নিজেই কষ্টকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ” মাশিয়া ফিরে গেছে এক বছর আগের রূপে।
” কি হইছে তোম্গোর মইধ্যে? কাইল দিনেও তোম্গোর মইধ্যে ঝগড়াঝাটি হইতে দেখিনাই। এক রাইতের মইধ্যেই কি হইল, মা? আমারে কও, আমি আরমানকে শাস্তি দিমু, হেয় তোমার কাছে মাফ চাইব। তবুও তুমি যাইওনা মা। ” আয়েশা খানম মাশিয়ার হাত ধরে রেখেছেন।তিনি কাঁদছেন।
” এসব আপনি আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করবেন। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমাকে কাজ করতে দিন। ” মাশিয়া আয়েশা খানমের হাত ছাড়িয়ে কাপড় গোছাতে শুরু করল।
আয়েশা খানম দৌড়ে বাহিরে গেলেন। তিনি আরমানকে ফোন দিয়ে আসতে বলবেন। কিন্তু তাকে অপেক্ষা না করিয়ে আরমান বাড়িতে ঢুকল।
আরমানকে আসতে দেখে আয়েশা খানম দৌড়ে ছেলের কাছে গেলেন।
” ও বাপ, বউমা কাপড় গোছাইতাছে। হেয় নাকি ঢাকায় যাইব। তুমি তারে আটকাও। ”
আরমান আয়েশা খানমের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলনা। ও কপাল কুঁচকে তাকায় আম্মার দিকে। কিন্তু আম্মাকে কিছু না বলে পা বাড়ায় ঘরের দিকে। তবে কি তার আশংকাই সত্যি!
মাশিয়ার কাপড় গোছানো শেষ। ও আরমানের জন্য অপেক্ষা করছে। যাবার আগে আরমানকে না জানিয়ে যাবেনা, সেই পণই করেছে।
আরমান ঘরে এসে মাশিয়াকে সম্পূর্ণ তৈরী অবস্থায় দেখতে পায়। যেভাবে সে ঢাকায় চলাফেরা করত। সাথে সাথেই ওর বুক ধুকপুক করতে শুরু করল। ও মাথা ঠান্ডা রেখে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় মাশিয়ার দিকে। ভালোবেসে হাত রাখল মাশিয়ার কাঁধে। আর সাথে সাথেই মাশিয়া এক ঝটকায় আরমানেে হাত সরিয়ে দিল। কিন্তু আরমান কিছুই মনে করলনা। মৃদু হেসে বলল,
” আজ সকালেই বউয়ের রণরঙ্গিণী রূপ দেখছি যে? কি হয়েছে, হুম? এত সাজুগুজু কেন? ” আরমান কথা বলল ঠিকই, কিন্তু ওর বুক কাঁপছে।
” বউ! মাই ফুট। কে হতে চায় আপনার বউ? আমার পাশে দাঁড়ানোর যোগ্যতা আছে আপনার? আমি ঢাকা ফিরে যাচ্ছি। ” মাশিয়ার গলায় ব্যঙ্গ।
” আমাকেও নিয়ে যাও। বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি যাইনি। এই সুযোগে নাহয় একটু ঘুরে আসব। ”
” এক্সকিউজ মি, আমি চিরতরে এই বাড়ি ছাড়ছি। তাই আপনাকে সাথে নেয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। আর অযথাই ঢং করবেননাতো। এমন ভাব করছে যেন ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারেনা! ” মাশিয়ার বিরক্তিকর গলায় বলে উঠল।
” কিন্তু কেন? কেন যাচ্ছ? এটা জানার অধিকার আমার আছে। ”
” কি ভেবেছিলেন আপনি, আপনার বাড়িতে এসে মাশিয়া নিজেকে পাল্টে ফেলবে? প্রতিশোধ বোঝেন? প্রতিশোধ? আপনি আমার জীবন নষ্ট করেছেন, বিনিময়ে আমি আপনার থেকে আপনার ভালোবাসা কেড়ে নিলাম। আপনার বেঁচে থাকার কারণ কেড়ে নিলাম। দিস ইস কল্ড রিভেঞ্জ। ” মাশিয়ার চোখে আ’গু’ন। ওর গলায় ঝরছে রাগের অ’গ্নি’স্ফু’লি’ঙ্গ।
” তাহলে আগেই যেতে। এতদিন পর কেন? আর কেনইবা রাতে নিজেকে আমার সামনে মেলে ধরলে? লজ্জা করলনা একটুও! ”
” অনেকদিন আগে কি বলেছিলেন মনে আছে? আমাকে দেখলে নাকি আপনার কোন ফিল হয়না শুধু রাগ হয়? সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আপনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করব। আমাকে ফিল করতেই হবে আপনার, এটাই ছিল মিশন। সেদিন যেমন আমাকে চরম অপমান করেছিলেন, তাই নিজেকে আপনার কাছে সঁপে দিয়ে, আপনার ভালোবাসার কথা জেনে নিয়ে সেসব পায়ে মাড়িয়ে এখান থেকে চিরতরে চলে গিয়ে আপনাকে অপমান করব আমি। বোঝাতে পেরেছি? আজ আমি সফল। আজকের পর থেকে আপনি বুঝবেন কষ্ট কাকে বলে। মাশিয়াকে অপমান করার শাস্তি কি। কি করে ভাবতে পেরেছিলেন, আপনার মত সামান্য মাস্টার কিংবা গ্রামের চাষাকে আমি ভালোবাসব? স্ট্রেঞ্জ! আপনাদের সাথে একটু ভালো করে কথা বললেই মনে করেন, আপনাদের প্রেমে ডুবে গেছি। ডিজগাস্টিং। ”
” তবে কি সবই তোমার অভিনয় ছিল! এক বছরে যা যা করেছ, আমাদের ধোঁকা দিতেই করেছ! ” আরমান আজ স্তব্ধ। মাশিয়াকে চিনতে না পারার ব্যর্থতা ওকে পো’ড়া’চ্ছে।
” তো আর কি? কি মনে করেছিলেন, আপনার মত লো ক্লাস মানুষের প্রেমে পরেছি! আর সেজন্যই এই থার্ডক্লাস গ্রামে পরে আছি? হাস্যকর ব্যাপারস্যাপার। আমি তো এখানে প্রতিশোধ নিতেই থেকে গেছিলাম। ” মাশিয়া হো হো করে হেসে উঠল। উঠানে দাঁড়িয়ে আয়েশা খানম মাশিয়ার হাসি শুনে শিউরে উঠলেন।
” প্লিজ, যেওনা। আমি মানছি সেদিন তোমাকে ঐ কথাটা বলা ঠিক হয়নি। আমি ভুল স্বীকার করছি। এই থার্ডক্লাস গ্রামে তোমার আর থাকতে হবেনা। তোমাকে নিয়ে চিটাগং চলে যাব। অনেক ভালোবাসি তোমাকে, মাশিয়া। তুমি চলে গেলে আমি বেঁচে থেকেও ম’রে যাব। ” আরমান মাশিয়ার হাত ধরে অনুনয় করল। দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল চোখের কোন বেয়ে। কিন্তু মাশিয়া আরমানের হাত ঝাঁকি দিয়ে সরিয়ে দেয়। ওর এসবে কিছুই যায় আসেনা।
” আহ্ কি শান্তি। একদিন যে মেয়েকে ঘৃণা করত, আজ তারই হাত ধরে কুকুরের মত মিনতি করছে! যাকে দেখে সামান্যতম ফিলও হয়নি আজ তারই মাঝে নিজের বাঁচা, ম’রা’র শঙ্কা করছে। থ্যাংকস জানাই তোকে, মাশিয়াত বিনতে মোর্তাজা। এই শোনেন, আপনার কান্নায় আমার কিছুই যায় আসেনা। আপনার কান্না দেখে আমার পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। আপনি যত কাঁদবেন, আমার জয়ের আনন্দ ততই হবে। আরেকটু কাঁদুন আমি দেখি। অবশ্য এতে আমার ঢাকা পৌঁছাতে দেরি হবে। তবে তাতেও অসুবিধা নেই। ঢাকার পথঘাট আমি চিনি। নিন কান্না স্টার্ট করুন। আমি আরেকটু মজা নেই। ” মাশিয়ার চোখমুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেছে। আরমান মাশিয়ার দিকে বোধবুদ্ধিহীনের মত তাকিয়ে থাকল। এই মাশিয়াকে চিনতে ওর কষ্ট হচ্ছে। তবুও ও চেষ্টা করতেই থাকে।
” তোমার সব কথা আমি মেনে চলব। তবুও যেওনা। আমার আম্মা, শশী, সুধা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। ওরা কষ্ট পাবে তুমি চলে গেলে। ”
” সম্ভব নয় মিস্টার। আপনার চরম পরাজয় দেখতেই আমাকে এতদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। আজ আমি সফল হয়েছি। তাই থাকার কোন প্রশ্নই ওঠেনা। আর হ্যাঁ, আপনার আম্মা, সে অনেক ভালো মানুষ। তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা সব সময়ই থাকবে। শশী কিংবা সুধার কথাও ভুলবনা। কিন্তু ঐযে রিভেঞ্জ, আমি আপাতত সেটাতেই ফোকাস করছি। তাই অন্যদিকে মন ঘোরাতে চাইনা। আমার মিশন ছিল আপনাকে চরম আঘাত দেয়া, যেটা আমি অলরেডি করে ফেলেছি। ”
আরমান কিছু না বলে মাথা নিচু করে ধপ করে মেঝেতে বসে পরল। চোখ দিয়ে ঝরতে থাকে কষ্টের নোনাজল।
মাশিয়া আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকল আরমানের উত্তর শোনার। কিন্তু আরমান কিছুই বললনা। ও বুঝতে পেরেছে আজ মাশিয়াকে আটকানোর সাধ্য ওর নেই।
” গুড বাই, পরাজিত স্বামী। আশা করছি আজ থেকে প্রতিটা রাত আপনাকে চোখের জলে দুঃখ বিলাস করতে হবে। যে ব্যবস্থা আমি করে গেলাম। আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিনিয়ত চাইব, আপনার সাথে যেন কখনোই দেখা না হয়। আজ থেকে আপনার আমার চ্যাপ্টার ক্লোজ। আজ থেকে মাশিয়া স্বাধীন। আরমান নামক থার্ডক্লাস বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসেছে। আসছি। ”
গটগটিয়ে হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় মাশিয়া। ওর পরনে জিন্স আর টপস। যেগুলো এক বছর আগে ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছিল, আজকের দিনের জন্য।
চলবে…
#যেখানে_দিগন্ত_হারায়
#পার্ট_৩৪
জাওয়াদ জামী জামী
আয়েশা খানম অনেক চেষ্টা করেও মাশিয়াকে আটকাতে পারলেননা। আশেপাশের সবাই মাশিয়ার চলে যাওয়া দেখল। ওর পোশাক দেখে কানাঘুষো করতে ব্যস্ত সকলে।
আয়েশা খানম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলেন আরমানের কাছে। আরমান মেঝেতে উদভ্রান্ত হয়ে বসে আছে।
” বাপ, ও বাপ, তুমি বউমারে আটকাও। হেয় যাইতাছে গা। তুমি হেরে যাইতে দিওনা। ” আরমানের গালে হাত দিয়ে তাকে অনুরোধ করলেন আয়েশা খানম। কিন্তু আরমানের কোন হেলদোল নেই। কিন্তু আয়েশা খানম হাল ছাড়লেননা। তিনি আরমানকে ডাকতেই থাকলেন। অনেকক্ষণ পর আরমান আম্মার ডাকে সাড়া দেয়। ও চোখ মুছে বলল,
” ওকে যেতে দাও, আম্মা। যে থাকতে চায়না তাকে জোড় করে আটকে রাখে সাধ্য কার। সে চিরকালই মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে বেঁচেছে। আমি মিছেই তাকে ভালোবাসার পিঞ্জরে বাঁধতে চেয়েছিলাম। ভালোবাসায় অন্ধ আমি বুঝতে পারিনি, বন্য পাখি কখনোই পোষ মানেনা। ”
আয়েশা খানম ছেলের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পরলেন। যেখানে তিনি নিজেই কষ্ট পাচ্ছেন, সেখানে তিনি ছেলের ব্যথায় কিসের প্রলেপ লাগাবেন সেটা তার জানা নেই।
সন্ধ্যার পরে মোর্তাজা মহলের ড্রয়িংরুমে বসে গল্পে মত্ত হয়েছে পরিবারের সকলে। টেবিল জুড়ে নানান খাবারের সমাহার। কল্পনা মোর্তাজা পুত্রবধূর পছন্দের সব খাবার রান্না করেছেন। দোলন সেগুলো মহা করে খাচ্ছে। কিন্তু কল্পনা মোর্তাজার সেদিকে নজর নেই। তার মন পরে আছে মাশিয়ার কাছে। কতদিন হয়ে গেছে তিনি মেয়েকে মুখে তুলে খাওয়াননি। মেয়েকে কাছে বসিয়ে দুদণ্ড গল্প করেননি। মেয়ের সাথে আজ তার যোজন যোজন দূরত্ব। খুব সাবধানে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ মুছলেন তিনি।
কলিংবেলের শব্দে গল্পে ব্যাঘাত ঘটে। কল্পনা মোর্তাজা আনমনে তাকালেন দরজার দিকে। কে আসল এই সময়! ততক্ষণে একজন মেইড দরজার কাছে এগিয়ে গেছে।
হাই হিলে খটখট শব্দ করে ড্রয়িংরুমে আসল মাশিয়া। এই অসময়ে ওকে দেখে সবাই চমকে উঠল। কিন্তু মনের ভাব গোপন করে সবাই হাসিমুখে এগিয়ে যায় মাশিয়ার কাছে। কল্পনা মোর্তাজা ছুটে গেলেন মেয়ের কাছে। জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে। চুমু দিলেন মেয়ের চোখেমুখে।
” মাশিয়া, কেমন আছো সোনা? কতদিন পর তোমাকে দেখলাম। এভাবে না জানিয়ে আসলে যে? আরমান কোথায়? ও কি বাহিরেই আছে? ”
” এখানে আসতে গেলেও তাকে সাথে করে আনতে হবে! আমি কি একা আসতে পারবনা? নাকি আমার একা আসা বারণ আছে? ”
মাশিয়ার প্রত্যুত্তরে চমকে উঠল সকলে। কল্পনা মোর্তাজার মুখের হাসি নিমেষেই মিলিয়ে গেল। তার মন কু গাইছে। তবুও তিনি নিজেকে শান্ত রাখলেন। ভেবেচিন্তে মুখ খুললেন,
” অবশ্যই তুমি একা আসতে পারবে । তোমার বাড়িতে তুমি যখন খুশি তখনই আসতে পার। কিন্তু বিয়ের পর প্রথমবার আসলে, তাই জিজ্ঞেস করলাম। আরমান কোথায়, সোনা? ” কল্পনা মোর্তাজা আরেকবার দরজার দিকে তাকালেন।
” সে আসেনি। আই মিন, আমি তাকে নিয়ে আসার প্রয়োজনবোধ করিনি। আমি ঐ বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি। আর কখনোই সেখানে ফিরছিনা। এতে তোমাদের যদি কোন আপত্তি থাকে, তবে এখনই বলতে পার। আমি অন্য কোথায়ও নিজের জন্য একটা ব্যবস্থা করে নিতে পারব। ” মাশিয়া উত্তরের আশায় তাকায় বাবা-মা’ র দিকে। কিন্তু তারা কি উত্তর দেবেন! তারা স্তব্ধ হয়ে গেছেন। অসহায় চোখে তাকাচ্ছেন একে অপরের দিকে। তবে বিচক্ষণ মিরাজ মোর্তাজা বুঝলেন, এখন মাশিয়াকে কিছু বলা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারার সমান। তাই তিনি চুপ থেকে চিন্তা করলেন কিছুক্ষণ। এরপর মুখ খুললেন,
” নিজের রুমে যাও। অনেক পথ জার্নি করেছে। কিছুক্ষণ রেষ্ট নাও। এরপর আমরা একসাথে খাব। অনেকদিন হয়ে গেছে, আমরা ফুল ফ্যামিলি একসাথে খাইনা। ”
মাশিয়া ওর উত্তর পেয়ে গেছে। ও আর কোন কথা না বলে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সবার মুখে চিন্তার ছাপ। তারা মাশিয়ার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত। শুধু দোলনের কপালে ভাঁজ পড়ল, সেটা কেউই লক্ষ্য করলনা। লক্ষ্য করলে দেখতে পেত, এক মুহুর্তের জন্য দোলনের চোখেমুখে হিংস্রতা ফুটে উঠেছিল। সে কিছুক্ষণ হিংস্র চোখে গমনরত মাশিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল।
সেই রাতে মাশিয়া নিজের রুমেই খাবার খায়। দোলন শরীর খারাপের অযুহাতে নিজের রুমেই থাকল। মাহিনও স্ত্রীকেই সঙ্গ দিতে রুমেই খাবার নিয়ে যায়। সেজন্য কল্পনা মোর্তাজা মাশিয়ার রুমেই খাবার নিয়ে আসলেন। আর তারা তিনজন মিলে খেলেন। এরপর তারা বেশ কিছুক্ষণ একসাথে গল্পগুজব করলেন। পুরোটা সময় কল্পনা মোর্তাজা আর মিরাজ মোর্তাজা তীক্ষ্ণ চোখে মাশিয়াকে লক্ষ্য করলেন। মাশিয়া একবারের জন্যও ঐ বাড়ির কারও কথা মুখে আনেনি। মিরাজ মোর্তাজা বার দুয়েক আয়েশা খানমের কথা তুললেও মাশিয়া সেসব এড়িয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে তাকে চুপ থাকতে হলো।
রাত তিনটা বিশ। মাশিয়া বিছানায় ছটফট করছে। কতদিন পর ও নিজের আলিশান রুমের নরম বিছানায় শুয়েছে, আজ তার প্রচুর ঘুম হওয়ার কথা, কিন্তু এত রাত হয়ে গেছে তবুও ঘুমের দেখা নেই! অথচ গত রাতেও ঐ বাড়ির বিছানায় নির্বিঘ্নে ঘুমিয়েছে। বিরক্তি নিয়ে মাশিয়া বিছানা ছাড়ল। এক পা দু পা করে বেলকনিতে এসে দাঁড়াল। প্রায় সাথে সাথেই দখিনা মলয় আছড়ে পড়ল ওর শরীরে। শীতল মলয়ের পরশে নিমেষেই শীতল হয়ে গেল ওর তনু। চারপাশে তাকিয়ে দেখল পুরো শহরজুড়ে নিরবচ্ছিন্ন নিরবতা। নেই কোন কোলাহল। এই নিরবচ্ছিন্ন নিরবতা ভিষণ অসহ্য লাগছে মাশিয়ার কাছে। ওর মন কিছু একটা শুনতে চাচ্ছে। ও চাইছে হঠাৎ করেই ডেকে উঠুক রাতজাগা পাখিরা। ঝিঁঝিঁরা গুঞ্জন তুলুক শহরজুড়ে। এক পশলা বৃষ্টি এসে ছুঁয়ে দিক ইট-পাথরের এই রাজ্য। মাতাল হাওয়া ছুটে চলুক দ্বিকবিদিক।
” উফ্ বড্ড বেশি অসহ্য লাগছে এই নিরবতা। কেন এমন হচ্ছে আমার! আমিতো ভালো থাকতেই সব ছেড়েছুড়ে চলে এসেছি। এত ফাঁকা লাগছে কেন সবকিছু! মনে হচ্ছে কি যেন নেই। ” কপালের শিরা দপদপ করছে। দু’হাতে কপালের দুপাশ চেপে ধরে বেলকনির মেঝেতেই বসে পরল মাশিয়া। ঠিক তখনই ওর চাওয়া পূরণ করে ঝমঝমিয়ে নামল বৃষ্টি। বৃষ্টির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে বেলকনির মেঝে। ভিজে যাচ্ছে মাশিয়া। তবুও সেদিকে কোন খেয়াল নেই ওর। হাঁটুতে থুতুনি রেখে পলকহীন তাকিয়ে থাকল দূর অন্তরীক্ষ পানে। অন্ধকার যেখানে নিজের রাজত্ব করছে।
কল্পনা মোর্তাজা রান্নাঘরে স্বামীর জন্য কফি বানাচ্ছেন। এত সকালে মাহিল কিংবা দোলন কখনোই উঠেনা। তারা স্বামী-স্ত্রী প্রতিদিন সকালে কফি পান করতে করতে গল্প করেন। আজও তার ব্যাতিক্রম হবেনা। তিনি প্রতিদিন সকালে নিজ হাতে স্বামীর জন্য কফি তৈরী করেন।
” মম, আমাকেও কড়া করে একটা কফি দিও। মাথাটা বড্ড ধরেছে। ” সকাল সাতটায় মেয়েকে রান্নাঘরে দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছেন কল্পনা মোর্তাজা। নিজের নিজের অভিব্যক্তি লুকানোর চেষ্টা করলেননা মোটেও।
” মাশিয়া, তুমি এত সকালে! আমি কি স্বপ্ন দেখছি! যে মেয়ে কখনোই দশটার আগে ঘুম থেকে উঠতনা, সে সকাল সাতটায় রান্নাঘরে এসেছে! এটা কিভাবে সম্ভব? ”
মা’য়ের কথা শুনে হাসল মাশিয়া। এগিয়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর বলল,
” অভ্যাস হয়ে গেছে, মম। ঐ অসভ্য মাস্টার… ” এ কি বলল সে! যেন কিছু একটা মনে পরে গেছে এমন ভাব করে চলে যায় ওপরে।
কল্পনা মোর্তাজা নিনির্মেশ চেয়ে থাকলেন মাশিয়ার পানে।
আয়েশা খানম মাথায় হাত দিয়ে বারান্দায় বসে আছেন। যার সাথে এতবছরেও কেউ কখনো উঁচু গলায় কথা বলেনি, আজ এত বছর পর তাকে মানুষের কটু কথা শুনতে হচ্ছে। বাড়ি বইয়ে এসে অনেকেই তাকে দু-চার কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে উঠানে এক প্রতিবেশি মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। সে জানতে চাইল মাশিয়া কেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। আয়েশা খানম তার কথার উত্তর না দিয়ে বসে বসে চোখের জলে দুঃখবিলাস করছেন।
” আমি পয়লা দিনই কইছিলাম, ঐ মাইয়া সংসারী হইবনা। তারে পরথম দেইখাই আমার ভালো লাগে নাই। কিমুন অহংকারী মাইয়া। আপনারেও কই ভাবী, বড়লোকের বেটি দেইখা আপনারা ভুইলা গেছিলেন নিজেগোর অবস্থা। হেয় নাকি কত বড়লোক ঘরের মাইয়া! আপনেরা ভাবছিলেন রাজকন্যার সাথে সাথে রাজত্বও বুঝি পাইবেন। তাই লোভ সামলাবার পারেননি। লোভে পইরা ঐ অহংকারী মাইয়ার লগে পোলার বিয়া করাইলেন। এখন সেই মাইয়া দিলতো মুখে ঝামা ঘঁইষা? রাজত্ব আর পাইলেন কই! আপনাগো মত লোভী মানুষের সাথে এমনই হওয়া উচিত। ”
মহিলার বিষমাখা কথায় আয়েশা খানম ডুকরে কেঁদে উঠলেন। আজ-অব্দি তাকে কেউ এত অপমান করেনি। আজ সবাই বাড়ি বয়ে এসে তাকে অপমান করে যাচ্ছে। এতটাও অপমান তার ভাগ্যে লেখা ছিল! এদিকে সেই মহিলা বলেই চলেছে,
” আপনে নাকি পোলারে মানুষের মত মানুষ করছেন? হেয় ও দেখি আপনার মতই লোভী। হেয় নাকি বুদ্ধিমান! এত বুদ্ধিমান হইয়াও লোভ সামলাইতে পারে নাই? নাকি আপনার পোলার কুন সমস্যা আছে? সেই কারণেই বউ গেছে গা? ছুডুকালেই পোলারে ঢাকায় পড়বার পাঠাইছিলেন। সেইখানে যাইয়া হেয় মনে হয় খালি লুচ্চামি কইরা বেরাইছে। এখন সময় কালে বউরে মানাইতে পারেনি। কি দিন পরল! কালে কালে কত কি যে দেখন লাগব। ”
” আপনাকে কে দেখতে বলেছে! চোখকান বন্ধ করে থাকুন। আর যদি খুব বেশি দেখতে ইচ্ছে করে, তবে নিজের ছেলেকে দেখুন। প্রায় রাতেই সে বাড়ির বাহিরে থাকে। কোথায় থাকে সেটা জানেন? এখন থেকেই সাবধান হয়ে যান। নয়তো কিছুদিন পর সন্তানসহ মেয়েরা আপনার বাড়িতে এসে অনশন করবে। আমার আম্মা না হয় আমাকে মানুষ করতে পারেনি। আপনি কিভাবে সন্তানদের মানুষ করেছেন? আপনার ছেলে-মেয়েদের অবস্থাও খুব যে ভালো সেটাও কিন্তু নয়। যান বাড়িতে গিয়ে নিজের চরকায় তেল দিন। অযথা এখানে এসে ভাষণ দিচ্ছেন কেন? কে শুনতে চেয়েছে? ” আরমান আরও কিছু বলতে চেয়েছিল। কিন্তু শশী দৌড়ে এসে ওকে টেনে ঘরের ভেতরে নিয়ে যায়। সকাল থেকে এসব শুনতে শুনতে আরমান বিরক্ত হয়ে গেছে। সেই সাথে রেগেছেও প্রচন্ড। এখনই ওকে না থামালে ঘটনা অনেক দূর গড়াবে এটা শশী বুঝতে পারছে।
পরবর্তী কয়েকদিন এভাবেই নানান কথা শুনতে হয় আরমান আর ওর পরিবারকে। তবে মাসের শেষ দিন ও চিটাগং গেলে সকল কটু কথা থেকে মুক্তি পায়। সেখানের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করবে শীঘ্রই। এরপর সেখানে থিতু হয়েই মা-বোনকে নিয়ে যাবে নিজের কাছে। তবে তার আগে শশীর ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করতে হবে।
চলবে…