যেখানে_দিগন্ত_হারায় পর্ব-৩৯+৪০

0
251

#যেখানে_দিগন্ত_হারায়
#পার্ট_৩৯
জাওয়াদ জামী জামী

” কল্পনা, আরমানতো আমার ফোন রিসিভই করলনা। তুমি একবার সুধার কাছে যাবে? ওকে মাশিয়ার কথা জানালে কি খুব খারাপ হবে? ” মিরাজ মোর্তাজা কেবিনে বসে স্ত্রী’র সাথে আলোচনা করছেন।

” সুধা গ্রামে গেছে বেশ কয়েকদিন হলো। আমি ওদের বিল্ডিংয়ের একজনের কাছে ফোন দিয়েছিলাম। আরমান সুধাকে নিষেধ করার পর মেয়েটা আর আমার সাথে যোগাযোগ রাখেনি। তারপরও সুধা ঢাকা আসলে আমি একবার ওর কাছে যাব। ওকে অনুরোধ করব, আরমানকে মানাতে। আরমান যতই, আমাদের সাথে ওর বোনদের যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দিক, তার অনাগত সন্তানের কথা জানতে পারলে নিশ্চয়ই আর রাগ করে থাকবেনা। ” কল্পনা মোর্তাজার গলায় হতাশা। তবুও তিনি আশা ছাড়লেননা।

ঘন্টাদুয়েক আগে সুখের যে পরশ নিয়ে ঘুমিয়েছিল মাশিয়া, ঘুম ভাঙ্গতেই ওর সব সুখ, স্বপ্ন নিমেষেই মিলিয়ে যায়। আরমান ওর বোনদের মাশিয়ার পরিবারের সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করেছে, কথাটা কানে যেতেই কয়েক ফোঁটা অশ্রু মাশিয়ার চোখের কোন ভাসিয়ে নিল। তবে কি ওর শুরু করা বিদ্বেষ, রাগ আর অপমানের সমাপ্তি আরমান সব সম্পর্ক ঘুচিয়েই দিতে চায়! নিজের অজান্তেই পেটে হাত রাখল মাশিয়া। ওর প্রতিশোধেই আগুনে নিজের পুড়ে ছারখার হচ্ছে, সেটা প্রতিনিয়ত ও উপলব্ধি করতে পারে। তবে ও যে এখন নিঃস্ব, পরিত্যক্তা এক নারী সেটা এইমাত্র অনুধাবন করল।

” মম, তুমি কোথাও যাবেনা। আমার অনাগত সন্তানের কথা ঐ বাড়ির কাউকেই জানাবেনা তোমরা, এটা তোমাদের কাছে রিকুয়েষ্ট। যে সম্পর্ক পায়ে মাড়িয়ে আমি চলে এসেছি, সন্তানের দোহাই দিয়ে সেই সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মত ভুল আমি আর করবনা। ” মাশিয়ার গলা পেয়ে চমকে উঠল ওর বাবা-মা। তারা বুঝতে পারেনি মাশিয়ার ঘুম ভেঙেছে। তারা উঠে আসলেন মাশিয়ার বেডের কাছে।

” এসব তুমি কি বলছ, মাশিয়া! বাবা হিসেবে তার সন্তানের আগমনের কথা জানার অধিকার আরমানের আছে। তুমি পাগলামি করোনা। ওদের সাথে আমাদের যোগাযোগ করতে বাঁধা দিওনা। ” মাশিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম গলায় বললেন কল্পনা মোর্তাজা।

” প্লিজ মম, এই শেষবারের মত তোমরা আমার কথা রাখ। এখন যদি সন্তানের অযুহাত দিয়ে আমি তার কাছে ফিরে যাই, তবে সে আমাকে গ্রহন করবে ঠিকই কিন্তু স্ত্রী’র অধিকার সে কখনোই আমাকে দেবেনা। তার সন্তানকেও সে হাসিমুখে মেনে নিবে কিন্তু আমাকে ছুঁড়ে ফেলবে আস্তাকুঁড়ে। এতেও আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যখন সে ভাববে, তার কাছে ফিরে যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে আমি নিজের সন্তানকে ব্যবহার করেছি, তখন সে আমাকে উপহাস করবে। সে ভাববে, আমি নিরুপায় হয়েই তার কাছে গেছি। সারাজীবন তার কাছে ঘৃণার পাত্রী হয়ে থাকতে হবে আমাকে। যেটা আমি কখনোই চাইনা। ”

” এসব তোমার নিছকই কল্পনামাত্র। তুমি খুব বেশি ভয় পাচ্ছ, তাই এমন চিন্তা তোমার মনে আসছে। হয়তো প্রথমে আরমানের তোমাকে মানতে কষ্ট হবে, কিন্তু দেখবে একটা সময় ও তোমাকে ঠিক মেনে নিবে। জিদ করোনা, মা। আমাদের কথা মেনে নাও। ” মিরাজ মোর্তাজাও মাশিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।

” পাপা, প্লিজ। আমাকে এই শেষবারের মত নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দাও। যদি কখনো তার কাছে আমাকে যেতে হয়, তবে তার যোগ্য হয়েই তার সামনে গিয়ে দাঁড়াব। আমাকে নিয়ে কোনও অভিযোগ তার সেদিন থাকবেনা। আর রইল তার সন্তান। সে অবশ্যই জানবে তার অংশ দুনিয়ায় এসেছে। কিন্তু সেটা আরও পরে। যদি কখনো সে আমাকে ফিরিয়ে দেয়, সেদিন যেন আমার সন্তান ওর বাবাকেই বেছে নেয়। আমার অনুরোধ তোমাদের রাখতেই হবে, পাপা। নতুবা আমাকে আমার সন্তানকে নিয়ে দূরে কোথাও নিরুদ্দেশ হতে হবে। ” কান্নার দমকে ঠিকমত কথা বলতে পারছেনা মাশিয়া। চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে বালিশ।

কাঁদছেন মিরাজ মোর্তাজা আর কল্পনা মোর্তাজাও। মেয়ের অনুরোধের কাছে তাদের হার মানতে হলো। তাদের মন মাশিয়ার এই সিদ্ধান্ত না মানতে পারলেও বাধ্য হয়ে রাজি হতে হয় তাদের।

সাতদিন পর আরমান সুধা, শশীকে নিয়ে চিটাগং ফিরে যায়। সুধা চায়নি আরমান শুধু শশীকে নিয়ে চিটাগং যাক। আরমান ভেতর থেকে ভেঙ্গে পড়েছে। শশী একা ওকে সামলাতে পারবেনা। তাই পড়ার ক্ষতি হলেও সুধা ভাইয়ের সাথে চিটাগং যায়।

দশদিন পর মাশিয়াকে নিয়ে বাসায় আসলেন কল্পনা মোর্তাজা। মাশিয়াকে দেখে দোলন মোটেও খুশি হলোনা। ও মুখ গোমড়া করে নিজের রুমেই বসে থাকল।

কল্পনা মোর্তাজা মাশিয়াকে নিচের একটা রুমে নিয়ে গেলেন। মাশিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, ওর উপরনিচ করতে সমস্যা হবে জন্যই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মাশিয়ার সার্বক্ষনিক দেখভালের জন্য একজনকে নিয়োগ করেছেন।

আরও সাতদিন পর মাশিয়া ভার্সিটিতে যায়। ওর তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত মহিলাকে নিয়েই ভার্সিটিতে যায় মাশিয়া। তৃষা, মিতুল আর জয় ও মাশিয়াকে আগলে রাখছে। ওদের যত্নে মাশিয়ার মাঝেমধ্যে অস্বস্তি হচ্ছে। তবুও নিরবে ওদের যত্ন নামক অত্যাচার সহ্য করছে।

ক্লাসে গিয়ে ওরা জানতে পারল তুষার স্যার পিএইচডি করতে দেশের বাইরে চলে গেছে। তার বদলে নতুন শিক্ষক এসেছে। খবরটা শুনে ওদের মন খারাপ হয়ে যায়। শিক্ষক হিসেবে সে যথেষ্ট ভালো ছিল। নতুন শিক্ষকের প্রথমদিনের ক্লাস ওরা মন খারাপ নিয়েই করল।

আরমান বিসিএস দিয়েছে। ওর পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। আম্মার মৃ’ত্যু’র শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি ঠিকই, ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেছে কিন্তু ওর লক্ষ্য স্থির ছিল।

মাশিয়ার ফোর্থ সেমিস্টার শুরু হয়েছে। ও শারিরীকভাবে অসুস্থ থাকলেও দৃঢ় মনোবল থাকায় পরীক্ষা দিতে পারছে। ভার্সিটির সময়টুকু ওর ভালো কাটলেও বাসায় সব সময়ই দোলনের কথার আঘাতে জর্জরিত হতে হয়। দোলন বিভিন্নভাবে ওকে হেনস্তা করতেই থাকে। কল্পনা মোর্তাজা প্রতিবাদ করতে গেলেই দোলন তাকে উল্টো কথা শুনিয়ে দেয়। এ নিয়ে বাসায় মাঝেমধ্যেই তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায়। তাই ভার্সিটির সময়টুকু ও শান্তিতে কাটায়।

রাতের খাবার সময় হয়েছে। কল্পনা মোর্তাজা টেবিলে খাবার দিয়ে সবাইকে ডাকলেন। সিাই একে একে ডাইনিং এড়িয়ায় এসে যে যার চেয়ার টেনে বসল।

খাবারের গন্ধে ডাইনিং এড়িয়া ম ম করছে। সার্ভেন্ট সবার প্লেটে খাবার দিল।

” মম, আমাকে মাছের মাথাটা দেবে? তরকারির কালার দেখে মাথা খেতে ইচ্ছে করছে। ” মাশিয়ার আবদারে হাসলেন কল্পনা মোর্তাজা। কাঁটা বাছার ভয়ে যে মেয়ে মাছ খেতে চাইতনা, আজ সে মাছের মাথা খেতে চাচ্ছে!

” তোমার যেটা যেটা খেতে ইচ্ছে হবে, তুমি সেটাই খাবে। আমি কি বেছে দেব? ” কল্পনা মোর্তাজা মাশিয়ার প্লেটে মাছের মাথা তুলে দিলেন।

” আমি এভাবেই খেতে পারব, মম। ”

” খাও, পেট পুরে খাও। শ্বশুর বাড়িতে থাকলে তারা হয়ত তোমাকে এত খাবার খাওয়াতেই পারতনা। এই একটা মাছের টাকায় তাদের পনেরদিনের বাজার হত। এসব খাবার খাওয়ার জন্য মেয়েদের বাবার বাড়িই ভরস। ”

মাশিয়া মাথার একটু অংশ কেবল মুখে দিয়েছে, দোলনের এরূপ কথায় ওর মুখে অমাবস্যার আঁধার নামল। নিমেষেই হাসিমুখ বদলে কান্নায় রুপান্তরিত হয়। ও মুখের খাবার চিবাতে পারছেনা। আর না পারছে ফেলে দিতে। মাথা নিচু করে দোলনের অপমান হজম করার চেষ্টা করছে। কিন্তু ও ব্যর্থ হয়। টুপটুপ করে ঝরতে থাকে অশ্রুকনা। মাশিয়ার প্লেটে জায়গা করে নিচ্ছে তারা।

” বউমা, আজ তুমি সীমা পার করে ফেলেছ। তোমার সাহস হয় কি করে আমার মেয়েকে খাওয়ার খোঁটা দেয়ার? তুমি এত বেয়াদব সেটা আগে জানলে এই বাড়িতে তোমার ঠাঁই হতোনা। আমার মেয়ে আমার উপার্জনের খাবার খায়। এতে যদি তোমার কোন প্রবলেম থাকে, তবে তুমি এই বাড়ি ছাড়তে পার। মাহিন, তুমি তোমার স্ত্রী’ কে নিয়ে আমাদের অন্য যেকোন একটা এ্যাপার্টমেন্টে যেতে পার। তোমাকে আর তোমার স্ত্রী’কে এই বাড়িতে কোন প্রয়োজন নেই। ” মিরাজ মোর্তাজা আজ ভিষণ রেগে গেছেন।

” আব্বু, তুমি আমাদের এই বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলছ! কি অপরাধ আমাদের? মাশিয়ার অন্যায় তোমার চোখেই পরেনা? ও আরমানের বাড়ি থেকে চলে আসায় কতজন কত কথা বলে।
সম্মানের চিন্তা তোমার একটুও নেই দেখছি! ওকে নিয়ে সামনে তোমাকে আরও ঝক্কি পোহাতে হবে বলে দিলাম। আর এই বাড়ি থেকে আমরা যাব কেন? গেলে মাশিয়া যাবে। আইনত এই বাড়ির মালিক আমিই হব। ” মাহিনও জোড় গলায় বলল।

” মাহিন, তুমি কি মানুষ! প্রেগন্যান্ট বোনকে এই অবস্থায় তুমি বাড়ি ছাড়তে বলছ? এই তোমার বোনের প্রতি ভালোবাসা? তোমাকে সন্তান বলতে আমার ঘৃণা হচ্ছে। ” মিরাজ মোর্তাজা রাগে কাঁপছেন।

” সত্যি কথা বললেই মানুষ ঘৃণা করবে এটাই স্বাভাবিক, আব্বু। আপনি ছেলেকে দূরে ঠেলে দিয়ে মেয়েকে কাছে রাখতে চাইছেনতো? আপনার বিবেক থাকলে এটা করতে পারতেননা। ” দোলনও মাহিনের সাথে গলা মেলায়।

আজ কল্পনা মোর্তাজা নির্বাক হয়ে ছেলেকে দেখছেন। এমন ছেলেকে জন্ম দিয়েছেন বলে নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে তার।

” প্লিজ, তোমরা থাম। ভাইয়া, আমার জন্য তোমাকে আর লজ্জা পেতে হবেনা। আমি বাসা ছেড়ে চলে যাব আজ রাতেই। দাদু আমাকে যে ফ্ল্যাট দিয়েছিল, সেখানেই থাকব আজ থেকে। তবুও তোমরা নিজেদের মধ্যে মনমালিন্য করোনা। দাদু আমার নামে যে সেভিংস রেখেছিল, সেটা দিয়েই আমার দিব্যি চলে যাবে। তোমার, কিংবা পাপার কোন সাহায্য আমার প্রয়োজন হবেনা। জানোতো, স্বামীর সংসার ছেড়ে আসার সময় মনে হয়েছিল, দুনিয়ায় আমার ভাইয়াই সেরা। আমার শত বিপদে তাকে পাশে পাব। কিন্তু সেই ধারনা আমার ভুল ছিল। তুমিও ভাই, আরমানও ভাই। যে আরমানের তোমাদের মত অর্থ-বিত্ত নেই কিন্তু বোনদের জন্য আকাশসম ভালোবাসা আছে। বোনদেরকে সে বাবার অভাব বুঝতে দেয়না। তুমি সম্পদ, অর্থে তার থেকে এগিয়ে থাকলে মনুষ্যত্বে পিছিয়ে আছ। আর ভাবি, তুমিও কোন বাড়ির মেয়ে। একজন মেয়ে হয়ে তুমি আরেকজন মেয়েকে কিভাবে এত আঘাত করতে পার? তাও সেই মেয়ে তোমার ছোট বোনের বয়সী! সৃষ্টিকর্তার কাছে একটাই প্রার্থনা করি, আমার মত পরিস্থিতিতে তুমি যেন না পর। পাপা, আমাকে ঐ ফ্ল্যাটে নিয়ে চল। আর যাইহোক সম্মান খুইয়ে আমি এখানে পরে থাকবনা। ” মাশিয়া কারও উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজের রুমে গিয়ে গোছাতে শুরু করল কাপড়চোপড়।

চলবে…

#যেখানে_দিগন্ত_হারায়
#পার্ট_৪০
জাওয়াদ জামী জামী

” তোমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুরোটা হয়নি। তাই তোমার এতবড় সাফল্যেও আমি খুশি হতে পারছিনা, ভাইয়া। ” সুধা গোমড়ামুখে বলল। ওর পাশে শশীও মুখ গোমড়া করে বসে আছে।

সুধার এহেন কথায় কপাল কুঁচকে তাকায় আরমান। ওষ্ঠদ্বয় সামান্য প্রসারিত হয়। সুধার কথা ওর বোধগম্য হলোনা।

” কি বলছিস এসব! পাগল হয়েছিস নাকি! ”

” তুমি তো পররাষ্ট্র ক্যাডার হতে চেয়েছিলে। তবে শিক্ষা ক্যাডারে গেলে কেন? আমার ভাইয়া বিসিএসে টিকেছে। এটা আমার জন্য আমাদের জন্য গর্বের। কিন্তু সে তার স্বপ্নের পেশা ছেড়ে শিক্ষকতা কেন বেছে নিল, এই হিসাব মেলাতে পারছিনা। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন কেন করেছে, ভাইয়া? আর আমাদের সেটা জানতেও দাওনি। কেন? ”

” আম্মার মৃত্যু আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। আজ আমি যদি পররাষ্ট্র ক্যাডার হতাম, তবে তোদের রেখেই অন্য কোথাও চলে যেতে হত। কার কাছে রেখে যেতাম তোদের? আম্মা থাকলে সেই চিন্তা আমার করতে হতোনা। আর কিছু কিছু স্বপ্ন পুরোপুরি পূরণ না হলেও ক্ষতি নেই। আমার কাছে আমার স্বপ্নের থেকেও তোদের প্রায়োরিটি অধিক। ”

” চাচা, মামা, ফুফুরা ছিল ভাইয়া আমাদের জন্য। তারা আমাদের খোঁজ খবর রাখত। আর আমরাও যথেষ্ট বড় হয়েছি। আমরা নিজেদের রক্ষা করতে শিখে গেছি। তুমি আমাদের জন্য নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিলে এটা আমাকে পোড়াচ্ছে, আজীবন পোড়াবে। ” সুধার চোখে পানি।

” এই যে তোদের ভাইয়া প্রথম শ্রেণির একজন কর্মকর্তা হয়েছে এতে তোদের একটুও আনন্দ হচ্ছেনা! দিনশেষে কিছু একটা অর্জন করেছি, এটা ভেবেই খুশি থাকনা। সামনে তোরও পরীক্ষা আমাকে নিয়ে এত না ভেবে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর। তোকেও মেডিকেলে চান্স পেতে হবে। আব্বা-আম্মার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। আর মনে রাখিস, মামা, চাচা, ফুফু, খালারা যতই ভালোবাসুক না কেন বাবা-মা’ র ভালোবাসা তারা দিতে পারবেনা। তারা তোদের খোঁজ খবর রাখবে, বিপদে এগিয়ে আসবে কিন্তু সব সময় তোদের আগলে রাখতে পারবেনা। তাদেরও সংসার, সন্তান, ক্যারিয়ার আছে। আম্মা তোদের যেভাবে রাখত, সেভাবে হয়তো আমিও তোদের রাখতে পারবনা। কিন্তু চেষ্টা ঠিকই করব। এবার বুঝেছিস তোদের নিয়ে আমার চিন্তা কোথায়? ”

” তোমার পোস্টিং কোথায় দেবে, ভাইয়া? শশীও কি তোমার সাথে যাবে? তুমি করছ আমাদের নিয়ে চিন্তা। আর আমাদের হচ্ছে তোমাকে নিয়ে চিন্তা। শশী একটা নির্ভেজাল অপদার্থ একটা বোন। ভাইয়াকে রেঁধে খাওয়ানোর কোন ক্ষমতাই ওর নেই। শুধু টাকা খরচের বেলায় পারদর্শী। ” সুধার মুখে চিন্তার ছাপ। এদিকে নিজের নামে সুধার এমন কমপ্লিমেন্ট শুনে শশী নড়েচড়ে বসল। মনে মনে তৈরী হচ্ছে কঠিন একটা জবাব দিতে। কিন্তু সেই সুযোগ ওর হয়না। তার আগেই আরমান কথা বলে।

” আপাতত শশী তোর কাছেই থাকুক। আগে পোস্টিং হোক, সেখানে গিয়ে সব ঠিকঠাক করি। তারপর ওকে নিয়ে যাব। তার আগে ঢাকা গিয়ে তোদের নতুন ফ্ল্যাটে তুলে দিয়ে আসব। এবার থেকে মামার বাসার পাশেই থাকবি তোরা। আমার চিন্তা কমবে। ”

” বাসা বদলানো কি খুবই জরুরী? আগের বাসাও নিরাপদ ছিল। তাছাড়া সবাই পরিচিতও হয়ে গিয়েছিল। ”

” প্রথমত, বাসাটা ছোট। দ্বিতীয়ত, নতুন বাসার ঠিকানা মামা ছাড়া কেউ জানবেনা। আমাদের গ্রামের কোন আত্মীয় জানবেনা তোরা কোথায় থাকিস। এবং বর্তমান বিল্ডিংয়েরও কেউ জানবেনা। ”

আরমানের কথা শুনে সুধা, শশী বুঝতে পারছে ওদের ভাইয়া কেন সবার থেকে ওদের ঠিকানা গোপন করতে চাইছে। কিন্তু সুধা এটা ঘটতে দিতে চায়না। তাই ও সকল ভয় একপাশে রেখে বলল,

” ভাবিকে ফিরিয়ে নিয়ে এস, ভাইয়া। দেখবে তুমি ভাবির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেই সে সব রাগ ছুঁড়ে ফেলে তোমার সাথে চলে আসবে। তখন আর আমাদের নিয়ে তোমার এত লুকোচুরি করার প্রয়োজন পরবেনা। ”

” ঐ বিষয়ে কোন কথা আমি শুনতে চাইনা। একবার ছুঁড়ে ফেললে সেই জিনিস আমি কখনোই কুড়িয়ে নেইনা। আর কালো অতীত নিয়ে কথা বলতে আমি পছন্দ করিনা, এটা তুই ভালো করেই জানিস। এবার গিয়ে গোছগাছ করে নে। কাল রাতের গাড়িতে আমরা ঢাকা যাব। ” আরমানের কঠোর গলা শুনে সুধার ভয় হচ্ছে। তবুও ও হাল ছাড়লনা।

” আম্মাও চেয়েছিল ভাবি ফিরে আসুক। আম্মার চাওয়া তুমি পূরণ করবেনা, ভাইয়া! ”

এবার আরমান কড়া চোখে তাকায় সুধার দিকে। রাগে ওর কপালের একপাশের শিরা দপদপ করছে।

” আম্মার মৃত্যুর জন্য দায়ী ঐ মেয়ে। জানি একদিন সবাইকেই যেতে হবে। মৃত্যু সকল জীবের জন্যই অবধারিত। তারপরও আমি বলব, আম্মা আজ আমাদের সাথে নেই শুধু ঐ মেয়েটার জন্যই। ওর জন্য আম্মা দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছে। ওর দেয়া আঘাত সইতে পারেনি আমার আম্মা। তাই ঐ মেয়েকে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নই ওঠেনা। আমি তাকে আম্মার খু নি ছাড়া অন্য কিছুই মনে করিনা। আর কোন খু নি র জন্য কোন জায়গা আমার হৃদয়ে নেই। আজকে তোকে ওয়ার্ন করছি, এরপর কখনোই আমার সামনে ওর কথা ভুলেও বলবিনা। ” আরমান রেগে ফ্ল্যাটের বাহিরে চলে যায়।

ড্রয়িংরুমে হতাশ হয়ে বসে থাকে সুধা আর শশী। ওরা ভাবতেও পারছেনা আরমান মাশিয়াকে এতটা ঘৃণা করে।

নতুন ফ্ল্যাটে এসে মাশিয়া যেন আরও বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। কল্পনা মোর্তাজা দিনে নিজের বাসায় কাটালেও সন্ধ্যায় তিনি মাশিয়ার কাছে চলে আসেন। রাতটুকু মেয়ের সাথে কাটিয়ে সকালে ফিরে যান নিজের বাসায়। মিরাজ মোর্তাজাও প্রতিদিন মাশিয়াকে এসে দেখে যান। কল্পনা মোর্তাজা মাশিয়ার দেখভালের জন্য তিনজনকে রেখেছেন ওর বাসায়। মাশিয়া চলে যাওয়ার পর দোলন স্বাভাবিক আচরণ করছে ওর শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সাথে। যেন মাশিয়া যাওয়ায় ও স্বস্তি পেয়েছে।

মাশিয়ার ফোর্থ সেমিস্টার শেষ হয়েছে। ফিফথ সেমিস্টারে ক্লাস করছে। তবে ওর শরীরটা দিন দিন খারাপের দিকেই যাচ্ছে। পাঁচমাসের প্রেগনেন্সিতেই ওর শরীর ফুলে গেছে অনেকটাই। আগের সেই হ্যাংলাপাতলা মেয়েটা পরিপূর্ণ নারীতে রুপান্তরিত হয়েছে। হাঁটতেও ওর বেশ কষ্ট হয়। চিকিৎসা চলছে পুরোদমে। তবে ডক্টর বলেছে, ডেলিভারির আগ পর্যন্ত ওকে ভুগতে হবে।

ক্লাসে বসে টুকটাক কথা বলছে মাশিয়া আর তৃষা। মিতুল জয়ের সাথে ক্যান্টিনে গেছে মাশিয়ার জন্য খাবার আনতে।

” তৃষা, আজ আমার সাথে এক জায়গায় যাবি? প্লিজ না করবিনা। ” মাশিয়া তৃষাকে অনুরোধ করল।

” কোথায় যাবি! তা-ও এই শরীরে? ভার্সিটিতে আসতেই যে কষ্ট পাস। আবার অন্য কোথাও যাওয়ার চিন্তা করিস কিভাবে! ” তৃষা একটু রেগেই গেছে।

” প্লিজ, দোস্ত। না করিসনা। তোরা সবাই আমার সাথে যাবিতো। আমি শুধু একজনের খোঁজ নিয়েই চলে আসব। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। ”

” আগে বল কোথায় যাবি। তারপর সিদ্ধান্ত নেব তোকে নিয়ে যাব কি না। ”

” সুধার ফ্ল্যাটে যাব। না ভেতরে যাবোনা। বাহিরে থেকেই খোঁজ নিয়ে চলে আসব। ওর তো কয়দিন পর মেডিকেলে এডমিশন। মেয়েটা অনেকদিন যাবৎ ঢাকায় আছে। ওর খোঁজ নেয়া হয়নি একবারও। ” বেশ কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল মাশিয়া।

মাশিয়ার কথা শুনে তৃষা আর আপত্তি করলনা। জয়, মিতুল খাবার নিয়ে আসলে মাশিয়াকে খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দেয় তৃষা। এরপর ওরা সুধার ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

সুধুার বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটির কাছে জানতে পারল ওরা আরও পনের দিন আগেই বাসা ছেড়ে দিয়েছে। কোথায় গেছে বলে যায়নি। ভেজা চোখে মাশিয়া উঠে পরল গাড়িতে। সম্পর্কের শেষ সুতোটাও বোধহয় ছিঁড়ে গেছে।

নতুন ফ্ল্যাটে সুধাদের উঠিয়ে দিয়ে আরমান ওর কর্মস্থলে ফিরে যায়। ওর পোস্টিং হয়েছে কুড়িগ্রামের একটা কলেজে। সেখানে গিয়ে সব ঠিকঠাক করতে আরও সময় লাগবে। তাই এখন শশীকে সেখানে নিবেনা।

শশী, সুধা নতুন ফ্ল্যাটে বেশ আছে। তিন বিল্ডিং পরেই মামার বিল্ডিং। প্রতিদিন একবার করে মামা-মামী এসে খোঁজ নিয়ে যায়। মামাতো ভাইবোনেরাও আসে। ওরাও যায় তাদের বাসায়। সুধার এডমিশন আর পনের দিন পরই। ও কোমড় বেঁধে পড়াশোনা করছে।

মাশিয়া ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। তৃষা আর মিতুল ওকে দুই পাশ থেকে ধরে রেখেছে। জয়ের হাতে ওদের সবার ব্যাগ।

” হেই বেইবি, তোমাকে কি সুইট লাগছে! তোমাকে দেখার জন্য প্রতিদিনই ভার্সিটির বাহিরে এসে দাঁড়াই। দূর থেকে দেখে আবারও ফিরে যাই। কিন্তু আজ তোমাকে কাছে থেকে দেখার লোভ সামলাতে পারলামনা। ” রিশাদকে দেখেই সবাই ফুঁসে উঠল। মাশিয়া তৃষা, মিতুলকে ইশারা করল এগিয়ে যেতে। কিন্তু রিশাদ নাছোড়বান্দার মত ওদের পিছুপিছু যেতেই থাকল। ওকে এভাবে আসতে দেখে বাধ্য হয়ে দাঁড়াতে হয় মাশিয়াকে।

” তোমাকে এর আগেও নিষেধ করেছি আমার সামনে না আসতে। কিন্তু তুমি শুনছনা। এবার দেখছি পাপাকে বলতেই হবে। আর পাপার কানে কথাটা একবার গেলে তোমার কি হবে ভেবে দেখেছ? ” মাশিয়া হাঁপাচ্ছে।

” কি হবে! আমি বলব, আমার সন্তানের মা’কে দেখতে আসি, তার সাথে কথা বলি। ” রিশাদের ঠোঁটে শয়তানির হাসি।

” হোয়াট! হাউ ডোয়ার ইউ, রাবিশ? এই ধরনের কথা বলতে তোমার লজ্জা হচ্ছেনা? ” মাশিয়া রাগে কাঁপছে।

” রিশাদ, ঝামেলা করোনা। এটা ভার্সিটি। তোমার মত বখাটে ছেলের সম্মান না থাকতে পারে, মাশিয়ার আছে। আর তুমি এই মুহুর্তে যে কথাটা বলেছ, সেটা উইথড্র কর। ওয়ার্নিং দিচ্ছি তোমাকে। ” জয় এগিয়ে এসে রিশাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল।

রিশাদ জয়ের কথা পাত্তা না দিয়ে মাথাটা একটু কাৎ করে মাশিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

” সবাইকে যদি আমি বলি, আমার সাথে তোমার গোপন সম্পর্ক ছিল, সেটা জেনে যাওয়ায় তোমার সো কল্ড হাসবেন্ড তোমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আর এই সন্তান আমার। তবে কেমন হবে, বেইবি? ”

” কিছুই হবেনা। বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত এটাতো জানো? আমার বাচ্চার ডিএনএ তোমার ডিএনএ’র সাথে ম্যাচ করালেই তোমার জারিজুরি খতম। আর তখন তোমার কি হবে বুঝতে পারছ? পাপা তোমার এমন অবস্থা করবে, তোমার হাড্ডি তখন কুকুরও খাবেনা। আর যান সন্তান সে এই কথা জানতে পারলে, নির্ঘাত তোমাকে খু ন করবে। এমনিতেও সে তোমাকে অপছন্দই করত। অবশ্য ডিএনএ টেস্ট করানোর ঝামেলায় যেতেই হবেনা। চৌদ্দশিকের মধ্যে ঢুকিয়ে কয়েকটা ডিম থেরাপি দিলেই তুমি সোজা হয়ে যাবে। আমাকে ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই। দূরে যাও। তোমাকে দেখেই আমার বমি পাচ্ছে। ”

” মাশিয়া কি বলল শুনতে পাচ্ছনা, রাস্কেল? নাকি তুমি চাইছ ডিম থেরাপি এখানেই হয়ে যাক? জয় ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ভার্সিটি থেকে বের করে দে। ” তৃষার কথা শুনে জয় রিশাদের কলার ধরতে গেলেই রিশাদ সেখান থেকে সটকে পড়ে। তবে যাওয়ার আগে জয়কে শাসিয়ে যেতে ভুলেনা।

সুধার এডমিশন শেষ। ও রেজাল্ট নিয়ে চিন্তায় আছে। আরমান সেই যে গেছে আর ঢাকা আসেনি। কবে আসবে সেটাও বলতে পারেনা। আম্মার কথা মনে পরলে ওরা দুই বোন অঝোরে কাঁদে। সেদিন ওদের না খেয়েই কাটে। পরদিন আবারও স্বাভাবিক হয় দু’জন। ওদের এই নির্বাসিত জীবনে ওরা দুজনই দু’জনের সঙ্গী, সুখ-দুঃখের ভাগীদার ওরাই।

হুহু করে শীতল মলয় আছড়ে পড়ছে মাশিয়ার চোখেমুখে। ও বেলকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়ে আছে সুদূরে। এত রাতেও শহরটা জেগে আছে। আলোয় আলোকিত প্রতিটি ভবন। মাশিয়ার মাঝেমধ্যে মনে হয় এই শহরে কখনো রাত নামেনা। সারাদিন ধরিত্রীকে নিজের আগুনে পুড়িয়ে প্রভাকর গগনের কোলে মুখ লুকালেও অন্ধকার নামেনা এই শহরে। কৃত্রিম আলোকচ্ছটায় ঝলমল করে এই নগরী। আচ্ছা, এই শহরের কি মন খারাপ হয় কভুও? কখনোসখনো মন খারাপ হলে এই শহরও কি রাতেই বুকেই মুখ লুকায়? কিন্তু এই শহরে রাত কই! সবখানেই যে আলো ঝলমলে! তবে কি এই শহরও মাশিয়ার মতই একাকী, নিঃসঙ্গ? মাশিয়ার মত এই শহরেরও কি দুঃখ লুকানোর মত কোন বুক নেই! ওর নিজের এই দূর্দশার জন্য ও নিজেই দায়ী। চরম ভুল সিদ্ধান্তের মূল্য আজ ওকে দিতে হচ্ছে। ডুকরে কেঁদে উঠল মাশিয়া। মাঝেমধ্যে মন চায় সবকিছু ভুলে তার কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজের নিজের বিবেক আটকায় ওকে। ভেতর থেকে বারবার কেউ বলে উঠে ,’ আজ তার সন্তানের দোহাই দিয়ে তার কাছে ঠাঁই পেতে চাস? তুই ভালো করেই জানিস তোর ক্ষমা পাওয়ার হাতিয়ার এই সন্তান। ‘
আর তখনই সব ইচ্ছেকে জলাঞ্জলী দিয়ে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছেকে মাটি চাপা দেয়। এখন ও শুধু অনুশোচনার আ’গু’নে জ্ব’লে’পু’ড়ে খাক হয়ে যায়। তাকে ছেড়ে না আসলে আজ রিশাদ এমন নিকৃষ্ট কথা বলতে পারতনা। এত অপমানিত হতে হতোনা ওকে। ছোট ছোট অপমান থেকে বাঁচতে ও সংসার ছেড়েছিল। কিন্তু সেই ওকেই প্রতিনিয়ত অপমানের সাগরে নিমজ্জিত থাকতে হচ্ছে। এখন মাশিয়া বুঝতে পারে, আরমান কখনোই ওকে অপমান করেছি। সেগুলো ভালোবাসা মিশ্রিত শাসন।

হাতে থাকা ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে একটা ছবির দিকে অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকল মেয়েটা। একদিন কল্পনা মোর্তাজার ফোন ঘাটতে গিয়ে চোখে পরেছিল আরমানের ছবিটা। ওদের বিয়ে ছবি। ড্রয়িংরুমে মাশিয়া বউ সেজে বসে আছে । ওর পাশে বসে আছে আরমান। তার পরনে ফর্মাল ড্রেস। এই প্রথম মাশিয়ার নজরে আসল আরমান বিয়ের দিন ফর্মাল ড্রেস পরেছিল। বিষয়টা খেয়াল করেই মাশিয়া মৃদু হাসল। মানুষটা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। ছোট ছোট দাড়িতে তাকে ভিষণই সুপুরুষ লাগছে। আর মাশিয়া মাথা নিচু করে নিজের আঙুল দেখছে।
আরমানের ছবিতে পরপর কয়েকটা চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরল। এই ছবিটাই এখন ওর তৃষ্ণা মেটায়। এই ছবিই ওকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। আরও বেশি করে ভালোবাসতে বাধ্য করে তাকে।

চলবে…