#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৪৫
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_____________________
ঘরের মাঝে পিনপতন নিরবতা। অর্ষা হতবিহ্বল হয়ে তখনো তাকিয়ে আছে। কানে বাজছে আহনাফের বলা কথাগুলো। স্বপ্ন নিশ্চয়ই এতটা বাস্তব হয় না।
আহনাফ তার উত্তরের জন্য কিছুক্ষণ অর্ষার মুখপানে তাকিয়ে থাকে। অবশেষে বিরক্ত হয়ে বলে,’অমন হা করে তাকিয়ে আছো কেন?’
অর্ষা ফাঁকা ঢোক গিলে। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁপান্বিত কণ্ঠে বলে,’এটা কীভাবে সম্ভব!’
‘অসম্ভবের কী আছে এখানে?’
‘আপনি এখানে কেন?’
‘আজব ধরণের প্রশ্ন তো! আমার ঘরে আমি থাকব না তো কে থাকবে?’
‘আমি বলতে চাইছি, আপনি বাংলাদেশে কেন?’
‘মনে চাইল তাই চলে এলাম। তোমার কোনো সমস্যা?’
তর্ক-বিতর্ক দ্বারা অর্ষা এতটুকু শিওর হলো যে, সামনে বসা থাকা আহনাফ স্বপ্নের নয় বরং বাস্তবের আহনাফ।
অর্ষা গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’হঠাৎ করে চলে এলেন?’
‘এসেছি আরো আগেই। বন্ধুদের সাথে ছিলাম। বাসায় এসেছি কিছুক্ষণ আগে। তোমার ঘুম এত ভারী কেন? কতক্ষণ রুমের ভেতর ঘুরঘুর করলাম উঠলে না। এখন যেই একটু ঘুমানোর জন্য শুয়েছি ওমনি উঠে গেলে।’
‘লাইট জ্বালিয়ে রেখেছেন তাই।’
‘ওহ! মনে ছিল না।’
‘বাড়ির কেউ জানে না আপনি এসেছেন?’
‘জানে। সবাই জানে। তোমার ঘুম ভাঙাতে আমিই নিষেধ করেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি আমায় একা পেলে আই মিন একা দেখলে কেমন করো সেটা দেখব। এখন তো নিজেকে আমার ভূত বলে মনে হচ্ছে।’
‘ভূত মনে হচ্ছে কেন?’
‘যেই রিয়াকশন দিয়েছ! দেখে তো মনে হচ্ছে এখনই হাউ মাউ খাও বলে তোমার ঘাড় মটকাব।’
‘এত আজেবাজে কথা কীভাবে বলেন? এটা কি আপনার নতুন রূপ?’
‘নতুন রূপ আবার কী? আমি কি গিরিগিটি যে ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলাব?’
অর্ষা বিড়বিড় করে বলল,’তারচেয়ে কম কী!’
‘কিছু বললে?’
‘না।’
‘অবশ্যই কিছু বলেছ। তোমার ঠোঁট নাড়ানো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আপাতত এসব নিয়ে কোনো কথা বাড়াতে চাচ্ছি না। আমার ঘুম প্রয়োজন। ঘুমাব।’ বলেই আহনাফ কাঁথা গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়ল।
অর্ষা সেভাবেই বসে থেকে কিছুক্ষণ আহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফট করে আহনাফ চোখ মেলে তাকানোতে থতমত খেয়ে যায় অর্ষা। এখন নিশ্চয়ই আবার উল্টাপাল্টা কিছু বলে লজ্জায় ফেলবে!
আহনাফ এমন কিছুই করল না। সে শান্তকণ্ঠে বলল,’লাইটটা নিভিয়ে দাও।’
অর্ষা লাইট নিভিয়ে দেওয়ার জন্য খাট থেকে নামছিল। তখন আহনাফ পেছন থেকে বলে,’আমায় যদি খুব দেখতে ইচ্ছে করে তাহলে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিও। অন্ধকারে তো আমায় দেখতে পারবে না।’
অর্ষা স্তব্ধ হয়ে যায়। লাইট নিভিয়ে দিলো। তবে ডিম লাইট জ্বালাল না। নিজের জায়গায় শুয়ে বলল,’এইযে মানুষ ভাবে আপনি অনেক গম্ভীর, রাগী, চাপা স্বভাবের। শান্তশিষ্ট। ভাজা মাছও উল্টে খেতে পারেন না এমন একটা ভাব। কিন্তু আসল সত্যটা হচ্ছে আপনি চরম লেভেলের ফাজিল। যেটা কেউ জানে না।’
অর্ষার কথা শুনে আহনাফ মুচকি মুচকি হাসে। অন্ধকারে অর্ষা অবশ্য হাসিটা দেখতে পায়নি। কথাগুলো বলে ভয়ও লাগছে। আবার ধমক না দিয়ে বসে!
আহনাফ স্বভাবসুলভ গম্ভীরকণ্ঠে বলল,’সবাই তো আর বউ নয়।’
অর্ষা বলার মতো এবার আর কিছুই খুঁজে পেল না।
.
.
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার জন্য ফোনে এলার্ম দিয়ে রেখেছিল অর্ষা। এলার্মের শব্দে অর্ষার ঘুম না ভাঙলেও আহনাফের ঘুম ভেঙে গেছে। কাচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বিরক্তও হলো কিছুটা। ঘুম ঘুম চোখে অর্ষার বালিশের পাশে থাকা ফোন নিয়ে এলার্ম অফ করল। কিছুক্ষণ এপাশ, ওপাশ করেও ঘুম এলো না। এর মাঝেই ঘরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। মেজাজই খারাপ হয়ে গেল আহনাফের।
ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে দরজা খুলে আমেনা বেগমকে দেখতে পেল। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বলল,
‘এত তাড়াতাড়ি কেন ডাকতে এসেছ মা? সেহরির জন্য তো এখনো অনেক সময় আছে।’
‘আরে অর্ষাকে ডাকতে এসেছি আমি। তাহাজ্জুদ পড়বে বলেছিল। ওঠেনি এখনো?’
আহনাফ একবার পেছনে তাকিয়ে বলল,’না। কুম্ভকর্ণের মতো এখনো ঘুমাচ্ছে।’
‘যা গিয়ে ডেকে তোল। নামাজ পড়তে আসতে বল।’
আমেনা বেগম কথা শেষ করে চলে গেলেন। আহনাফ বিছানায় কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকে। এরপর অর্ষাকে ঠেলে বলে,
‘এই মেয়ে! ওঠো।’
অর্ষার কোনো নড়চড় নেই। আহনাফ মৃদু ধাক্কা দিয়ে ডাকে। তবুও ঘুম থেকে ওঠার কোনো নামগন্ধ নেই। একটু নড়েচড়ে আবারও শুয়ে পড়ে। মেজাজ তুঙ্গে উঠে যায় আহনাফের। খিটমিট করতে থাকে একা একা। আর না পেরে অর্ষার দু’বাহু চেপে ধরে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসায়।
দু’গালে হালকা চাপড় দিয়ে বলে,’এই,এই ওঠো ওঠো। এখন আর কীসের ঘুম? নামাজ পড়বে না?’
অর্ষা নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,’সময় হয়ে গেছে? এলার্ম তো বাজেনি এখনো।’
‘এলার্ম বেজেছে। সময়ও হয়েছে। তোমার কী ঘুম! আমার তো ঘুম ভেঙে গেল।’
‘আচ্ছা আরেকটু ঘুমাই।’
‘পাগল নাকি? এরপর আর তাহাজ্জুদ পড়ার সময় থাকবে না। যাও ফ্রেশ হয়ে ওজু করে আসো।’
কথা বলে সে আর অপেক্ষা করল না। নিজেই অর্ষাকে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিল।
চোখে-মুখে পানি দেওয়ার পর অর্ষার ঘুম সম্পূর্ণ কাটে। সে ফ্রেশ হয়ে ওজু করে নামাজ পড়ার রুমে চলে যায়। আহনাফও আর ঘুমাল না। সেও ওজু করে নামাজ পড়ার জন্য। তাহাজ্জুদ শেষে সকলে একত্রে সেহরি খেতে বসেছে।
জহির চৌধুরী আমোদিত কণ্ঠে বলেন,’আজ পরিবারটা সম্পূর্ণ সম্পূর্ণ লাগছে।’
রেণু তরকারির বাটি টেবিলে রাখতে এসে বলল,’না খালুজান। সম্পূর্ণ তো হয় নাই।’
তিনি ভ্রুঁ কুঁচকে জানতে চাইলেন,’আফরিনের জন্য? ও তো এখন অন্য বাড়ির বউ, মেয়ে। ওর আলাদা পরিবার আছে। সংসার আছে।’
‘না, খালুজান। আমি আফামনির কথা কই নাই।’
‘তাহলে?’
‘আহিল ভাইজানের বউয়ের কথা বলছি।’
আহিল চমকে তাকায় রেণুর দিকে। জহির চৌধুরীর দিকে দৃষ্টি পড়ায় অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আমেনা বেগম মুচকি হেসে বলেন,’সময় হোক। তখন ওর বউও চলে আসবে।’
আহিল তার বিয়ের প্রসঙ্গটি বদলে ফেলার জন্য বলল,’এসব বাদ দাও। ভাইয়ার সারপ্রাইজটা কেমন ছিল বলো?’
আমেনা বেগম চেয়ার টেনে বসলেন। জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললেন,’সে কথা বলে আর কী হবে? আমার তো মনে হয়েছে চাঁদ রাতের আগেই আমি চাঁদ দেখে ফেলেছি।’
মায়ের কথা শুনে আহনাফ কিছুটা লজ্জা পেল। ওর লজ্জা পাওয়া মুখ দেখে অর্ষা মুখ টিপে হাসে। দৃষ্টি এড়ায় না আহনাফের। সে দু’ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।
অর্ষা তার মুখাবয়ব খেয়াল করে তরকারি দিতে উদ্যত হলো। চামচ হাতে নিয়ে বলল,’তরকারি দেই?’
আহনাফ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’লাগবে না।’
‘ওমা লাগবে না কেন? এখন পেট ভরে না খেলে সকালেই দেখবি ক্ষুধা লেগে যাবে। অর্ষা ও’কে তরকারি দাও।’ বললেন আমেনা বেগম।
অর্ষা তরকারি প্লেটে দিতেই আহনাফ বাচ্চাদের মতো করে বিরক্তমুখে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,’বললাম যে নেব না! তাও সবকিছুতে তোমার বাড়াবাড়ি।’
‘মায়েরা একটু বাড়াবাড়ি করবেই বাবু।’
আহিল হেসে বলল,’এটা তাদের মা-গত অধিকার। তাই না মা?’
আমেনা বেগম মুচকি হাসেন। আহনাফ মৃদু ধমক দিয়ে বলে,’হয়েছে। তোর আর পাকামো করতে হবে না। চুপচাপ খা।’
সেহরি শেষ করে সবাই ফজরের নামাজ আগে আদায় করে নেয়। ছেলেরা সবাই মসজিদে গেছে। নামাজ শেষ করে আসতে সময় লাগবে। নামাজ শেষ করে আমেনা বেগমকে জোর করে শুতে পাঠিয়ে দিয়েছে অর্ষা। আর সে রেণুর সাথে হাতে হাতে রান্নাঘরের টুকটাক কাজ, থালা-বাসন ধুয়ে দিচ্ছে। ওদের কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই জহির চৌধুরী, আহনাফ আর আহিল মসজিদ থেকে চলে এসেছে।
ঘরে যাওয়ার পূর্বে রেণু দাঁত-কপাটি বের করে হেসে বলল,’যান আপা এবার ঘরে যান। আরাম কইরা একটা ঘুম দেন।’
রেণুর হঠাৎ এমন কথার মানে সে কিছুই বুঝতে পারল না অর্ষা। তবে ঘরে গিয়ে তাকে অবাক হতে হয়েছে। শুধু অবাক নয়। বিরাট অবাক। একদম যাকে বলে পাহাড় সমান। না, ভুল হয়েছে। সমুদ্র সমান বলা যায়। বিছানার মাঝখানে কোলবালিশ রেখে একপাশে পায়ের ওপর পা রেখে শুয়ে আছে আহনাফ। দেখে মনে হচ্ছে অর্ষার জন্যই অপেক্ষা করছিল।
অর্ষা দরজা চাপিয়ে দিয়ে সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। আহনাফ উঠে বসল। ভাব নিয়ে বলল,
‘ওহ অবশেষে এলে তাহলে। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।’
অর্ষা কিছু বলল না। সে শুধু শুনবেই বোঝা যাচ্ছে। আহনাফ নিজ থেকেই বলল,’মাঝখানে কোলবালিশটা হচ্ছে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মাঝখানে থাকা বর্ডার।’
‘মানে?’
‘মানে খুব সিম্পল। রোজা-রমজানের মাস। সূতরাং দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তোমার ঘুম একদম ভালো না।’
‘আপনার ঘুম খুব ভালো?’
‘তুমি কি বলতে চাচ্ছ আইডিয়াটা খারাপ?’
‘আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না। আপনার কথা শেষ? লাইট নেভাব তাহলে। ঘুমাব।’
‘না। একটা কথা বাকি আছে। বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের বর্ডার বলা ঠিক হয়নি। পাকিস্তানিরা তো আমাদের শত্রু। কিন্তু তুমি বা আমি আমরা তো আমাদের দুজনের শত্রু নই তাই না? এজন্য কথাটাকে কারেকশন করা প্রয়োজন। কথাটা হবে বাংলাদেশ এবং ভারতের বর্ডার। ভারত হলো আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমাদের বন্ধু। যু’দ্ধের সময় সাহায্য করেছিল। জানো নিশ্চয়ই?’
‘ইয়া মাবুদ! আপনার কী হয়েছে? আপনি হঠাৎ করে এত পরিবর্তন কেন? আপনি কি সত্যিই আহনাফ?’
‘কেমন বোকা বোকা প্রশ্ন করছ এসব? তোমার কি মনে হচ্ছে আমি ঠাকুমার ঝুলির গেছো ভূত না কি জানি ঐযে নদীর পাড়ে যে একটা হাফ প্যান্ট পরা দুই দাঁত উঁচু একটা ভূত আছে? সেই ভূত ভাবছ আমাকে? প্লেন উল্টিয়ে সাগরে ফেলে আসল আহনাফকে নাকানিচুবানি খাইয়ে আমি আহনাফ সেজে এসেছি। এটা ভাবছ তুমি? তাহলে অপেক্ষা করো। সকাল হলেই আসল আহনাফ চলে আসবে। আর যদি না আসে, তাহলে তো বিশ্বাস করবে আমিই আসল আহনাফ!’
অর্ষার মাথা ধরে গেছে। ঝিমঝিম করছে। এখন সত্যিই তার সন্দেহ আছে। এটা কোন আহনাফ আল্লাহ্ ভালো জানে। সে চুপ করে গিয়ে শুয়ে পড়ল।
আহনাফ বলল,’কী হলো? লাইট নেভালে না?’
‘না। জ্বালানো থাকুক।’
আহনাফ ঠোঁট টিপে হেসে বলে,’বুঝেছি। তুমি ভয় পেয়েছ।’
‘এমন কিছু নয়। ঘুমান।’
এরপর সে নিজেই মুখের ওপর কাঁথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
______
সকালে একটু বেলা করেই ঘুম ভাঙে অর্ষার। আহনাফ তখনো ঘুমিয়ে ছিল। বিছানা ছেড়ে সে গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়। ড্রয়িংরুমে বসে আমেনা বেগম হাদিসের বই পড়ছিলেন। রেণু পাশে বসে মনোযোগী শ্রোতা হয়ে শুনছিল। অর্ষাও নিঃশব্দে গিয়ে পাশে বসে। পড়া শেষ হলে আমেনা বেগম বিস্মিত হয়ে বললেন,
‘ওমা! তুমি কখন এলে?’
অর্ষা মৃদু হেসে বলল,’অনেকক্ষণ।’
‘আচ্ছা শোনো, তুমি তোমার সব বন্ধুদের ফোন দাও আর তোমার ভাই-ভাবিকেও। সবাইকে বলবে আজ আমাদের এখানে ইফতার করতে। বাড়িতে বড়ো করে ইফতারের আয়োজন করা হবে আজ।’
‘ওরা কি আসবে?’
‘কেন আসবে না? শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী, ননোদ যারা যারা আছে সবাইকে নিয়েই আসতে বলবে। শুধু কষ্ট করে একটা লিস্ট করবে যে সর্বমোট কত’জন আসবে। তোমার বাবাকে সেই অনুযায়ী ইফতার আনতে বলব। এটলিস্ট ইফতার অপচয় করা যাবে না।’
‘আচ্ছা।’
‘যাও এখনই কল করে বলো। আহনাফ উঠেছে?’
‘না।’
‘ওকে গিয়ে উঠাও। রোজা রেখে এত কীসের ঘুম?’
‘আমি ডাকলে রাগ করবে।’
‘আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তুমি ওদের ফোন দিয়ে একটা লিস্ট করো। দুপুরের মধ্যে কিন্তু লিস্ট দিতে হবে।’
‘ঠিক আছে।’
অর্ষা রুম থেকে নোটপ্যাড, কলম আর ফোন নিয়ে ছাদে গেল। সাথে রেণুও রয়েছে। দুজনে চিলেকোঠার ঘরে বসে আছে। অর্ষা এক এক করে সবাইকে ফোন করছে আর লিস্ট করছে। জুঁই আর লামিয়া বাদে বাকিদের আসা হবে কনফার্ম জানিয়েছে। কিছুক্ষণ বাদে ওরা দুজনও ফোন করে জানায় সাথে শুধু হাজবেন্ড আসবে। শ্বশুর-শাশুড়িরা কেউ আসবে না। পরে এক সময় তারা আসবে জানিয়েছে।
লিস্ট করা শেষ হলে জহির চৌধুরীকে দিয়ে আসে অর্ষা। নিজের রুমে যাওয়ার সময় কেয়ার ফোন আসে। রুমে আহনাফ ছিল বলে সে আর ঢুকল না। ফোন নিয়ে আবার চলে গেল ছাদে। বিষয়টা ভালো লাগেনি আহনাফের। আবার ভেবে নিয়েছে, হয়তো জরুরী কেউ বা জরুরী কোনো কথা বলবে যেটা তার সামনে বলা যাবে না। মনকে এসব বলে বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করলেও মন বুঝতে নারাজ। মনের খচখচানি বন্ধ হয় না। আহিল তখন ডাকতে আসে। বাবার সাথে বাইরে যেতে হবে। দুই ভাই আর বাবা মিলে বাইরে যায় খাওয়ার বন্দোবস্ত করতে।
বাড়িতে আমেনা বেগম, অর্ষা আর রেণু টুকটাক ঘর গোছানোর কাজ শুরু করে দেয়। বিকেলের দিকে সবাই আসতে শুরু করেছে। রেশমি একা আসেনি। সাথে সকালও এসেছে।
সবাইকে চমকে দিয়ে সকাল অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বলে,’কেমন আছেন ভাবি?’
অর্ষা অপ্রস্তুতভাবে হেসে বলল,’আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।’
ওর এমন আচরণে রেশমিও বোকা বনে যায়। ওর রিয়াকশন বুঝতে পেরে সকাল বলল,’উফ স্যরি আপু! আসলে আপনার বান্ধবীকে ভাবি ডাকতে ডাকতে আপনাকেও ডেকে ফেলেছি।’
‘সমস্যা নেই। বসো।’
সকাল রেশমির সাথে সোফায় বসল। আশেপাশে তাকিয়ে সে আহিলকে খুঁজছে। রেশমি ফিসফিস করে বলে,’এভাবে চোখ ঘুরানো বন্ধ করো ননোদিনী! যাকে খুঁজছ, সে এখন বাসায় নেই।’
সকালও রেশমির মতো ফিসফিস করে বলল,’কখন আসবে?’
‘বলতে পারি না।’
সন্ধ্যার কিছু আগ দিয়ে জহির চৌধুরী, আহনাফ, আহিল সাথে আরো কয়েকজন লোক এসেছে ইফতার নিয়ে।
সকাল অর্ষার সাথে ওর রুমে এসেছে। সে নিজে থেকেই বায়না করেছে বাড়িটা দেখবে বলে। এবং অর্ষাকেই দেখাতে হবে সাথে থেকে।রেশমির হবু ননোদ বলে অর্ষা বারণও করতে পারল না। তাই সকালকে ঘুরে ঘুরে সব দেখিয়ে এখন নিজের রুম দেখাতে এনেছে।
সকাল পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বলল,’এই রুমে আপনি থাকেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘ভাইয়া থাকে না?’
অর্ষা অপ্রস্তুত হয়। এই মেয়ে দেখি তারচেয়েও বোকা বোকা প্রশ্ন করে।সে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,’যখন দেশে আসে তখন থাকে।’
‘যখন থাকে না তখন আপনার একা থাকতে ভয় করে না?’
‘ভয় করবে কেন?’
‘কত কারণেই তো ভয় করে।’
‘আমার ভয় করে না।’
‘আপনি খুব সাহসী।’
‘সবাই আমায় ভীতু বলে।’
‘ভুল বলে। যে রুমে একা থাকে সে আবার ভীতু হয় নাকি?’
‘তোমার সাথে কে থাকে?’
‘রাতে দাদী থাকে।’
একটু থেমে বলল,’আপু এবার চলেন ড্রয়িংরুমে যাই।’
‘আচ্ছা চলো।’
সকাল আগে বের হয় রুম থেকে। আহনাফ আর আহিল তখন তাদের রুমের দিকে যাচ্ছে। আহনাফের কিছুটা পিছে আহিল। অর্ষা রুম থেকে বের হওয়ার সময় দরজার পাপোশ সরে অর্ধেক আলমারির নিচে চলে গেছিল। তাই সে নিচে বসেছে পাপোশ ঠিক করার জন্য। সেই সময় আহনাফ ভেতরে ঢুকছিল আর অর্ষাও উঠে দাঁড়ায়। আচমকা সামনে আসায় আহনাফ ভয়ে চমকে উঠে বলে,’লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ।’
এদিকে সকালকে এখানে দেখে আহিলও চমকে যায়। মুখ থেকে অটোমেটিক বেরিয়ে আসে,’লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ।’
আহনাফ এবং আহিল একসাথে দোয়াটি বলে ফেলায় দুজনই দুজনই দুজনের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। অর্ষা এবং সকাল স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]