#যে_থাকে_আঁখি_পল্লবে
#পর্ব-৬
“আপনে আমার কাছে আসছেন আপনের বড় ভাবি রাগ করবে না?” ফজিলাতুন্নেছার কথার বিপরীতে ঠোঁট ওল্টায় রোমেলা-“সে রাগ করলেই কি না করলেই কি ভাবি। তার সাথে কি আমাদের কোন সম্পর্ক আছে? একটা সত্য কথা কই, তুমি যতদিন রত্নপুর ছিলা ততদিন এই বাড়িতে আসছি আমরা। তুমি চইলা গেলা এই বাড়িতে আসা বন্ধ হইলো আমাগো।”
ফজিলাতুন্নেছা বিস্মিত হলো-“কেন? উনি তো তোমাদের ভালোবাসতো রোমেলা বুবু।”
“ছাই ভালো বাসতো। আমাগো ভাগের জমি ঠিকঠাক বুঝায়া দেয় নাই মিয়া ভাই। সব দখল কইরা নিজের পোলাগো নামে দিছে। বুঝি তো, এইসবই বড় ভাবির কীর্তি। তার নিজের রক্তের মানুষ ছাড়া এই বাড়িতে কেউ আইতে পারে নাই।”
“কি বলো এইসব? উনি তোমাদের ভাগের জমিজমা দেয় নাই? কিন্তু আব্বা তো বহু আগেই তোমাদের জমি ভাগ করে দিছিল।”
“তা দিছিলো। আব্বা মারা যাওয়ার পর আমরা জমি বুইঝা নিতে গেলে মিয়া ভাই কইলো, জমি নিয়া কি করবি? আমি বরং কিছু টাকা দেই তোরা বাড়ি করা আর জমি আমার নামে লিখা দে। আমরা কেউ রাজি হই নাই। পরে ছোট অসুস্থ হইলে টাকার অভাবে মারা যাওয়ার দশা। তখন সে জমি বেঁচতে চাইলে ভাইজান শর্ত দিছিলো আমারটাও বেঁচা লাগবে। খুব অল্প টাকা দিয়া জমি কিনে নিছিল ভাইজান। ছোটর ক্যান্সার হইছিল, ওই টাকা দিয়া কিছু ই হয়না। পরে আমার ভাগের টাকাও দিয়া দিছিলাম। ছোট তো মারা গেলো। আজব কথা কি জানো ভাবি, আমার আপন মায়ের পেটের ভাই নিজের পকেট থিকা একটা টাকাও দেয় নাই ছোটরে।”
রোমেলার আঁখিদ্বয় ছলছল হলো। মুখের পেশীগুলো কাঁপছে তিরতির করে। ফজিলাতুন্নেছা উঠে রোমেলার পাশে দাঁড়াল। রোমেলা হাসলো মৃদু-“ছোট মারা যাওয়ার পর থিকা এই বাড়িতে আসি নাই আমি। ভাইও আসতে কয় নাই। তার মারা যাওয়ার খবর শুইনা দেখতে আইছিলাম। কাইল মিলাদে আমার পোলা আইছিলো। হেয় বাড়ি যাইয়া তোমার কতা কইলো।”
“কিন্তু সে তোমাদের বঞ্চিত করলো! কেন? এতো সম্পদ দিয়ে সে কি করবে? কবরে তো নিয়ে যাইতে পারে নাই তাইলে এত অন্যায় কেন করছে?” ক্ষোভ ঝাড়লো ফজিলাতুন্নেছা।
“বড় ভাবি সম্পদের ভুকা। হেয় সবসময় ভাবে তার পোলাগো মনেহয় কম পড়লো। আপনেরে তাড়াইলো, আমাগো ভাগ খাইলো তাও শান্তি হইলো না। ভাইজান অসুখে পড়লো। জলের মতো টাকা খরচ হওয়া শুরু হইলো। এই দেইখা বড় ভাবি সবসময় সম্পদ পোলাগো নামে লিখা দেওয়ার কথা কওয়া শুরু করলো। পোলারাও মার তালে তাল দিলো। তারাও বা কি করবে? জমিজাতির দেখাশোনা ছাড়া আর কিছু তো শেখেনাই জীবনে। ভাইজানের জীবন অতিস্ট হইলো। বউ পোলার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হইয়াই ভাইডা মরলো। তয় আমি খুব খুশি হইছি তোমাগো কথা শুইনা৷ মিয়া ভাই তোমার আর রুজাইফের নামে অর্ধেক সম্পদ লিখা দিছে। শেষ কালে মিয়া ভাইয়ের আক্কেল আইছিল শুইনা আল্লাহর শোকর আদায় করছি। যেই অবিচার ওরা করছিল তার কিছুটা হইলেও পূরণ হইলো ভাবি।”
ফজিলাতুন্নেছা হাফ ছাড়ে। মৃদুস্বরে বললো-“আমি তো কোনদিন সম্পদ চাই নাই আপা। মানুষটার সাথে সংসার করতে চাইছিলাম। কিন্তু সেইটাই হইলো না আর। সংসার সন্তান সব হারায়ে এই সম্পদ দিয়ে কি করবো? আমার রুজাইফ কতো কষ্ট করছে জীবনে সেই কষ্ট কি দূর করতে পারবো এই সম্পদ দিয়া? এই আলিশান বাড়ির কন্যা হইয়াও আমার বেটির জীবন কাটলো কাম করে। কম বয়সে বিয়া দেওয়া লাগছিল। মাইয়ার এতো কষ্ট কি কমবে আপা? এই সম্পদ তো আমি কোনদিন চাই নাই।”
“দুঃখ কইরো না ভাবি। আল্লাহ যাকরে চিন্তা কইরাই করে। নিশ্চয়ই এর পিছনে আল্লাহর কোন উদ্দেশ্য আছে। কয় যে পাপের ঘড়া পূর্ণ হইলে তখন আল্লাহর তরফ থিকা সাজা পাওনা হয়া যায়। আমার মনেহয় ওগো পাপের ঘড়া পূর্ণ হইছে। তাই আল্লাহ ওগো শায়েস্তা করতে তোমাগো পাঠাইছে।”
ফজিলাতুন্নেছা অবাক হলো-“এই কথা বলো কেন আপা?”
রোমেলা মাথা নাড়ে-“কমু না? তুমি তো কিছুই জানো না। এক মাজেদ ছাড়া মিয়া ভাইয়ের বাকি দুই পোলা বাদাইম্মা। সম্পদ না হইলে ওগো চলতো না। সম্পদের লাইগা ওরা সব করতে পারে। এই যে তোমরা আইসো ভাই বোনা ওরা সহজে মাইনা নিব। তোমাগো সরানোর লাইগা অবশ্যই কিছু না কিছু করবো দেইখো। আমি তো এগো রগে রগে চিনি। বড় ভাবি চুপচাপ সব মাইনা নেওনের লোক না। সাবধানে থাকতে হইবো ভাবি। রুজাইফরেও কইবা সাবধান থাকতে।”
★★★
“স্যার, সোহাগের সাথে সম্পর্কের খবর পেয়ে আব্বা আমাকে ঘরবন্দী করে রাখে। সোহাগ গরীব কৃষকের পোলা তাই বিয়া দিত না আব্বা। বিয়া ঠিক করে নাদেরের সাথে। বিয়ার দিন আমি সোহাগের লগে পালায়া যাই বিয়া করি নিজেরা। এই যে স্যার বিয়ার কাগজ।”
চেয়ারে হেলান দিলো রুজাইফ-“বিয়ে তো হয়েই গেছে তাহলে প্রবলেম কি?”
নাদেরকে একবার দেখলো সকাল। তার অসন্তোষ নিয়ে বললো-“দু’দিন পরে আব্বা কুয়াকাটা থিকা ধইরা আনে আমারে আর সোহাগরে৷ আমাকে কয়, সোহাগের সাথে বিয়া তারা মানে না। নাদেরকে বিয়া না করলে সোহাগকে মাইরা ফেলবে এই ডর দেখায়া আমাকে আবার বিয়া দেয় নাদেরের সাথে। আমি তারে হাজার বার কইছি আমি বিবাহিত কিন্তু সে শুনতে চায় না। আমি দুইদিন পর নাদেরের কাছ থিকা আবার পালায় যাই। নাদের আমাগো বিরুদ্ধে মামলা করে। সোহাগকে আসামি কইরা। আমরা জেলা জজ আদালতে বিচার চাই। তারা সমঝোতার কথা বললেও সে সমঝোতা করতে রাজি হয় না। তার আমাকেই লাগবে। কিন্তু স্যার আমি তারে চাই না। বিয়ে আমি সোহাগকে করছি তার সাথে সংসার করতে চাই।”
“আপনার বাবা কি বলে? সে আপনাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে একটা অন্যায় করছে। কারণ প্রথম বিয়ের পর মেয়েদের আরেকটা বিয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে জায়েজ না। সেক্ষেত্রে আপনার দ্বিতীয় বিয়ে ভ্যালিড না।”
নাদের নামের ছেলেটা বললো-“কিন্তু স্যার ধর্মে মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে বাপ মায়ের সম্মতির কথা বলা হইছে। সেক্ষেত্রে ওর প্রথম বিয়ে জায়েজ না।”
ছেলেটার অতিরিক্ত কথা বলায় রুজাইফ বিব্রত হলো। সকালের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো-“বিয়ের সময় আপনি কি প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন?”
“জ্বি স্যার। উনিশ বছর ছিলো আমার।”
নাদেরের দিকে তাকালো রুজাইফ-“প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া অপরাধ বটে। আপনি ওনার পরিবারের সাথে বসে বিবাদ মিটিয়ে নিচ্ছেন না কেন?”
“ওর পরিবার ওকে ত্যাজ্য করছে স্যার। কোন সম্পর্ক রাখে না।”
নাদের গর্বের সাথে এলান করে। সকালের চেহারা কাঁদো কাঁদো হলো। সোহাগ প্রথমবারের মতো মুখ খুললো-“স্যার, আমরা দুইজন দুইজনকে ভালোবাসি। বিয়ে করে সুখে সংসার করতেছি। এখন ওনার ভয়ে পলায় পলায় থাকি। এই লোক আমাদের খোঁজ পাইলেই আইসা জোর করে ওরে তুলে নিয়ে যায়। আটকায়া রাখে।”
“আশ্চর্য! উনি কি আপনাকে ফিজিক্যাল হতে ফোর্স করে?”
রুজাইফ অবাক হয়ে জানতে চাইলে সকাল ছলছল নয়নে মাথা নাড়ে-“করতে চায় স্যার। স্বামীর অধিকার দাবি করে। আমার ঘেন্না লাগে স্যার। মরে যাইতে মনচায়। নিজেরেই ঘেন্না লাগে এখন। আপনে আমাকে এই দোটানার জীবন থেকে মুক্তি দেন স্যার। আর পারতেছি না।”
সকাল হু হু করে কেঁদে দিলো। নাদের তেড়ে এলো-“ওর বাপে ওর লগে আমার বিয়া দিছে। বিয়ার পর বউ পালায়া যাওয়াতে আমার মান সন্মান নষ্ট হইছে। কেউ মাইয়া দিতে চায় না আমারে। ওরে এতো সহজে ছাড়ুম না আমি।”
রুজাইফ চেচিয়ে উঠলো-“স্টপ। এটা কোর্ট এইসব গুন্ডামীর জায়গা না এইটা।”
নাদের থমকালো। রাগত্ব দৃষ্টিতে সকালের দিকে তাকিয়ে থাকলো। রুজাইফ সকালকে স্থির হওয়ার সময় দিলো। ভাবছে কি সমাধান দেবে এই সমস্যার। এমন উইয়ার্ড সমস্যা আগে আসেনি তার কাছে। অনেকক্ষণ ভেবেও কোন সমাধান পেলো না সে। কিছুটা সময় নেবে ভাবলো। সকালের দিকে তাকিয়ে বললো-“আপনাদের মুখের কথা তো শুনলাম। আগের সালিশির কথা শুনতে হবে, লোকজনের সাথে কথা বলতে হবে। আপনাদের কথার সত্যতা যাচাই করতে হবে। এরজন্য কিছুটা সময় দরকার আমার। আজ মঙ্গলবার, আগামী রবিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেব আমি।”
নাদেরের দিকে তাকালো রুজাইফ-“আর হ্যা, এই চারদিন আপনি ওনাকে কোনভাবে বিরক্ত করবেন না। ওনার ধারে কাছে ভিরবেন না। যদি উল্টো পাল্টা কিছু শুনি তাহলে আপনাকে বিশেষ শাস্তি দেওয়া হবে।”
নাদের চুপ করে রইলো। ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না সে৷
★★★
ভর দুপুরে শামসুন্নাহার উঠোনে বসে আছেন। লাকি পাশেই চুলোতে দুপুরের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। শ্যামলি মাছ কুটছে বসে। খুকু এসে শাশুড়ীর পাশে বসলো-“আম্মা, রোমেলা ফুপু আইছে।”
“কই? দেখলাম নাতো?”
“ওই পক্ষের কাছে আইছে। সাতসকালে আইসা ওইঘরে গেছে সরাসরি। আমারে দেইখা কথাও কইলো না৷”
শামসুননাহারের মুখ তেতো হয়ে গেলো-“ওই হা*রামজাদি কি মতলব করতেছে কে জানে। আমাগো বিপদ দেইখা মা*গী খুশিতে লাফাইতেছে লাগে।”
লাকি আর শ্যামলি চোখাচোখি করলো। শাশুড়ীর গালাগালির স্বভাবটা তাদের একদম পছন্দ না কিন্তু অপছন্দ হলেও কিছু বলার উপায় নাই। খুকু ফিসফিস করলো-“আমাগোর সব কথা কয়া দিতেছে মনেহয়। বেলায় যায়া কাজের লোক নিয়া আসছে একটা। পিরীত দেখছেন আম্মা।”
“করুক পিরীত। কয়দিন এই পিরীত থাকে দেহি।”
সেই সময় খুকুর দুই সন্তান পলাশ শিমুল স্কুল থেকে বাড়ি ফিরলো।
“চাচী, আইজ কেয়া আর নীলা আপা স্কুলে যায় নাই। বড় চাচা খোঁজ করছিলো।”
শামসুন্নাহার মেঝ বউকে দেখলো-“কই তোমার মাইয়ারা? খোঁজ রাখো কোন? তোমাগো কি ভয়ডর নাই কোন? এইবার কেচ্ছা হইলে তোমাগোই আগে ধরুম।”
লাকি থতমত খেলো-“স্কুলে গেছে তো আম্মা। আমি যাইতে দেখছি।”
“তাইলে কি সেঁজুতির বাপ মিছা কতা কইছে?”
লাকির চেহারা ফ্যাকাশে হলো। নিচ থেকে গলা উঁচিয়ে ডাকলো-“কেয়া নীলা, কই তোরা? স্কুলে যাস নাই?”
কেয়া নীলার সাথে সেঁজুতিও পায়ে পায়ে নিচে নেমে এলো।
“তোরা স্কুলে যাস নাই কেন?” লাকি রেগে গেলো।
শ্যামলী অবাক হয়ে বললো-“সেঁজুতি, তুইও কলেজ যাস নাই? করছস কি তিনটা মিলা?”
সেঁজুতি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। কেয়া দাদীর কোল ঘেঁষে দাঁড়ালো-“একটা কাম করছি দাদী।”
“কি কাম?”
“তোমার সতীনের নাতীর গাড়ি নষ্ট করছি। বেডার মুখটা হইছিস দেখার মতো। কি রাগটাই না করলো।”
বলেই ফিক করে হাসলো কেয়া।
“ছিহ এসব কি কথা কেয়া?” শ্যামলী ধমকে উঠলো। নীলা বললো-“ভুল কি কইছে চাচী? ও দাদী কও তো দেখি ওই বেডি তোমার কি? হগ্গলে কইতো দাদাজান দুইডা বিয়া করছিল। এতদিন বিশ্বাস করি নাই। কিন্তু কাল দেখলাম ঘটনা সত্য।”
তিন বউ ভয়ে ভয়ে শাশুড়ীর মুখ পানে তাকায়। শামসুন্নাহারের মুখ অন্ধকার-“হহহ, তোর দাদা দুইটা বিয়া করছিল। ওই মুখপুড়ী আমার সতীন। শুনছোস? খুশি হইছোস তো?”
নীলা বললো-“তার মানে ওই বেডা আমগো সৎ চাচাতো ভাই লাগে?”
শামসুন্নাহার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো-“তোগো কিছুই লাগে না ওই ছেড়া। শুনছোস? ওই শয়তান মহিলারে কোনদিন কিছু ভাবি নাই। ওর পোলার পোলারেও ভাবুম না। ওরা আমাগোর কেউ না। কান খুইলা শোন, ওগোর সাথে কোন সম্পর্ক নাই আমাগো।”
★★★
অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে কিছু ফার্নিচারের দোকান ঘুরলো রুজাইফ। পছন্দ মতো কয়েকটা ফার্নিচার অর্ডার করে দিলো। তারপর ঠিক করলো স্কুলে যাবে৷ তমিজউদদীন যে স্কুলটা তাকে দিয়ে গেছে সেটা একটু দেখা দরকার। শুনেছে অত্র এলাকার বেশ নামকরা স্কুল এন্ড কলেজ ওটা। সরকারি সাহায্য কমবেশি ভালোই পায়। রুজাইফ তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো। ওই বাড়ির লোকের আরামের ইনকাম বন্ধ করার সময় এসেছে। কিন্তু সমস্যা আছে একটা। সরকারি চাকরি করে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে পদ দখল করা যাবে না। সেক্ষেত্রে কি করবে? হেড মাস্টারকে একটু জ্বালানো যেতে পারে। ভেবেই মনে মনে পুলকিত হলো রুজাইফ।
অসময়ে স্কুলে রুজাইফকে দেখে হতবাক হলো মাজেদুর। এই ছেলে এইখানে কি করে? সে কি এখন স্কুলে বসবে? নিজের চেয়ারে বসে ঢোক গিললো মাজেদুর। সামনের অতিথির চেয়ারে বসে রুজাইফ তখন চারপাশে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে। হেড স্যারের কামরার ডেকোরেশন বেশ চমৎকার। রুজাইফ তাকিয়ে হাসলো-“ভালোই চলছে সব? আপনে কত বছর ধরে হেডমাস্টার চাচাজান?”
মাজেদুর চুপ করে রইলো।
“মাসিক ইনকাম কেমন? সরকারি সাহায্য তো আসে ভালোই, তাই না?”
মাজেদুর এবারেও চুপ। রুজাইফ একটু ঝুঁকে এলো সামনের দিকে-“চাচাজান, আপনে একজন হেডমাস্টার হয়ে এমন কাজ করলেন কি করে? প্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহিত মেয়েকে দ্বিতীয় বার বিয়ে দেওয়ার মতো ঘোর অন্যায় কি করে করলেন চাচাজান?”
মাজেদুরের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখা। সে তুতলে জানতে চাইলো-“ককককি কও এইসব কিছুই বুঝতেছি না। কি চাও তুমি? স্কুলে কেন আইছো?”
“নতুন ফার্নিচার অর্ডার করে আসলাম। কিছু টাকা লাগবে আমার। এই ধরেন লাখ দুয়েক। আর শোনেন, আপনাদের যেইসব ফার্নিচার আছে ওইগুলা নামায় নিয়েন কালকের মধ্যে। নাইলে আমি ফালায় দিব।”
রুজাইফ উঠে দাঁড়ায়। কি ভেবে বললো-“স্কুলে মাঝে মাঝেই আসবো এখন থেকে। স্কুলের হিসাবপত্রের খাতাগুলে একটু গুছায় রাইখেন।”
“কেন? কি করবা হিসাব দিয়া?”
রুজাইফ মধুর করে হাসলো-“কি করবো তা সময়ে দেখবেন চাচাজান৷ কিন্তু এখন আপনার জন্য চিন্তা হইতেছে আমার। সামনে সমুহ বিপদ কেমনে যে সামলাবেন।”
“কিসের বিপদ?”
“এইটা একজন শিক্ষকের কাজ? কেমনে করলেন? বিবাহিত মেয়েকে জোর করে বিয়ে দেওয়া, জেল হইতে পারে। খুব সাবধান চাচাজান।”
হতভম্ব মাজেদুরকে পেছনে ফেলে বেরিয়ে এলো রুজাইফ। প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে তার। না চাইতেও এদের বড় বড় দূর্বলতা তার হাতে চলে আসছে। এ যেন মোঘ না চাইতে বৃষ্টি। এই ইব*লিশ গুলোর সাথে খেলাটা বেশ জমজমাট হবে বোঝা যাচ্ছে। রুজাইফ তৃপ্তির হাসি হেসে গাড়িতে উঠে বসলো।
চলবে—
©Farhana_Yesmin