#যে_থাকে_আঁখি_পল্লবে
#পর্ব-২১
রুজাইফের হাতের মধ্যে সেঁজুতির হাত। ভয়ে মুখ চোখ খিঁচে বন্ধ করেছে মেয়েটা। রুজাইফ উবু হয়ে ঝুঁকে আছে মেয়েটার উপর। সেঁজুতি অসহায়ের মতো পড়ে আছে বিছানায়। আঁধারে চেহারা পরিস্কার বোঝা না গেলেও রুজাইফ বুঝতে পারছে মেয়েটা প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে। সে ওর কানে মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করলো-“বলো কি শাস্তি দেব তোমাকে?”
সেঁজুতি মরিয়া হয়ে বললো-“আমি কিছু করি নাই। সত্যি বলতেছি, এইসব আমি করতে চাই না।”
রুজাইফ বিরক্ত হলো-“তাহলে কি তোমার ভুত আমার ঘরে এসেছে? ধরা পড়ে কথা বানাবে না সেঁজুতি। চায়ের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিলিয়েছ তাই না? ভাগ্যিস চা আমি খাইনি।”
বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে গেছে সেঁজুতির। এই লোক সব কেমনে বুঝে যায়? এতো বুদ্ধি কেন লোকটার? সেঁজুতি ভেবে পেলো না কি বললে মুক্তি মিলবে রুজাইফের হাত থেকে। সে নিজের হাত দুই খানা মুক্ত করার চেষ্টা করলো। রুজাইফের হাতের নিচে পিষ্ট হওয়া হাত দু’টো এক ইঞ্চিও সরাতে পারলোনা। হাল ছেড়ে দিলো সেঁজুতি। অনেক ভেবে নিজেকে বাঁচাতে অন্য পদ্ধতির আশ্রয় নিলো। মোলায়েম গলায় রুজাইফকে ডাকলো-“শোনেন।”
রুজাইফ ভ্রু কুঁচকে ওর চোখে চোখ রাখলো-“কি?”
সেঁজুতি আচমকা মাথা উঁচু করে রুজাইফের গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। রুজাইফ ভ্যাবাচ্যাকা খেলো। তার শরীর জুড়ে অজানা শিহরন। এই প্রথম কোন মেয়ে চুমু দিলো তাকে। অবাক হয়ে সেঁজুতিকে দেখছে। মেয়েটার কি মাথা খারাপ না হলে এমন করবে কেন? মেয়েটা নড়াচড়া করতে টের পেলো তার কতোটা কাছে কোমল অবয়ব। অনুভব করতে পারছে নারী অস্তিত্ব। রুজাইফ হতবিহ্বল হয়ে বললো-“কি করলে এটা?”
সেঁজুতি বোকার মতো ভাব ধরে বললো-“আদর দিলাম আপনারে। ছেলে মানুষকে আদর দিলে তারা নাকি খুশি হয় তাই আপনারে দিলাম। খুশি হইছেন? হইলে আমার গায়ের উপর থিকা নামেন।”
সেঁজুতির গর্ধব মার্কা কথা শুনে রুজাইফের যেন মাথা কাজ করে না। শরীর ঝনঝন করে বিদ্রোহ করতে চাইছে। বুনো চাহিদা মাথা চারা দিচ্ছে। সে আহাম্মকের মতো মাথা নাড়ে-“খুশি হই নাই। আরও আদর দাও তারপর বিবেচনা করবো তোমার গায়ের উপর থেকে সরবো কিনা।”
সেঁজুতি পড়লো মহা বিপাকে। সে তো দাদীর কথামতো কাজ করতে গেছিল। এখন তো দেখা যাচ্ছে বড় বিপদ হলো? এই ভারী মানুষটার দেহের ওজনে শ্বাস নেওয়া দায় হয়েছে। রুজাইফ ধৈর্য্য হারা মানুষের মতো বললো-“কি হলো দাও আদর।”
সেঁজুতি ভয় পেলো। তখন না বুঝে ঝোঁকের বসে কাজটা করে ফেলেছে। এখন কেমন আড়ষ্ট হয়ে আসছে শরীর। তবুও অনিচ্ছায় মাথা তুলে রুজাইফের বাম গালে চুমু দিয়ে দ্রুত সরে এলো মেয়েটা। সেঁজুতির এবার লজ্জা লাগলো। কি থেকে কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। রুজাইফের শরীরের উত্তাপ টের পাচ্ছে সে। জড়ানো গলায় বললো-“সরেন না। কষ্ট হইতেছে আমার।”
রুজাইফ সরলো না। বরং অদ্ভুত একটা কাজ করে বসলো। সেঁজুতির ঠোঁটের আশেপাশে আঙুল ছুঁয়ে দিয়ে খুব ধীরে ধীরে তার অধর নামিয়ে আনলো সেঁজুতির অধর বরাবর। সেঁজুতি ভীত চোখে চেয়ে আছে। রুজাইফ যেন নিজের মধ্যে নেই। তার উতপ্ত শ্বাস আছড়ে পড়ছে সেঁজুতির মুখের উপর। দু’জনই দু’জনার মুখ পানে চেয়ে আছে অপলক। হুট করে সেঁজুতির কোমল ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল রুজাইফ। ওষ্ঠে হালকা স্পর্শ করতেই যেন মাতাল হয়ে হুশ হারালো ছেলেটা। হাত ছেড়ে সেঁজুতির কোমড় চেপে ধরলো একহাত দিয়ে। অপর হাত মাথার পেছনে নিয়ে চুলগুলো জাপ্টে ধরে গাঢ় চুম্বন আঁকলো মেয়েটার ওষ্ঠে। তীব্র আশ্লেষে পিষে দিতে লাগলো মেয়েটার অধর। হিতাহিতজ্ঞান লোপ পেলো রুজাইফের।
অনেকটা সময় পার হওয়ার পর মেয়েটার নড়াচড়া টের না পেয়ে হুশ এলো তার। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে দেখলো সেঁজুতি জ্ঞান হারিয়েছে। কেন যেন উদ্বেগ এর বদলে হাসি পেলো রুজাইফের। জীবনে প্রথমবার কোন মেয়ের এতোটা কাছে গেছে। সেজন্য হয়তো খানিকটা কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে নিজের। কিন্তু সারাদিন পকপক করা ডেয়ার গার্ল এতো অল্পতে ভয় পেলো কেন? নিজেকে খুব সাহসী দাবি করে। সাহস এখন কোথায় পালালো? রুজাইফ বাম হাতে ভয় দিয়ে সেঁজুতির দিকে কাত হলো। ওকে দেখতে লাগলো মন দিয়ে। উজ্জ্বল শ্যামা মুখটা খানিকটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। এরমধ্যে চুমু দেওয়া ঠোঁট দু’টো ঈষৎ লালচে হয়ে আছে। চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে। ভীষণ আকর্ষনীয় লাগছে সেঁজুতিকে। রুজাইফ ওর ঠোঁটের পাশটা আঙুলের পরশ দিলো। চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে তাকিয়ে রইলো নিস্পাপ মুখের দিকে। সেঁজুতির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হুট করে মনে হলো, এই মেয়েটাকে তার ভালো লাগে। মেয়েটার চঞ্চলতা, বাঁকা বাঁকা কথা সে মিস করে। মেয়েটা একটু চুপচাপ থাকলেই ওর কেন যেন কিছু ভালো লাগে না। মনেহয়, কি যেন নেই। সব ফাঁকা আর বেরঙ লাগে। বোধকরি সে এই মেয়েটার প্রেমে পড়েছে।
★★★
ঘুম ভেঙে চোখ মেলতেই রুজাইফকে নজরে পড়লো সেঁজুতির। ঘুমঘুম চোখে রুজাইফকে দেখলো সে। কাত হয়ে সেঁজুতির দিকে ফিরেই ঘুমিয়ে আছে। ছোট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে আছে ঘুমের মাঝে। সেঁজুতি অবাক হয়ে ভাবছে, কে বলবে এই লোক জেগে থাকলে বাঘের মতো গররর আওয়াজ করে। অথচ দেখো কেমন নেকুবাবু হয়ে ঘুমিয়ে আছে?? মুখ বাঁকালো সেঁজুতি।
এই লোকটাকে তার ভীষণ ভয় লাগে৷ আবার কেন যেন কথা শুনাতেও ভালো লাগে। বলা যায় রুজাইফের সাথে কথা কাটাকাটি উপভোগ করে সে। লোকটা উপরে উপরে কঠিন ভাব ধরে রাখলেও মনটা হয়তো নরমই। হঠাৎ হঠাৎ নিজের অজান্তেই সেই নরম মনের প্রকাশ ঘটিয়ে ফেলে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো সেঁজুতি। হুট করে রাতের কথা মনে পড়তেই শিউরে উঠলো। অজান্তেই হাত চলে গেলো নিজের অধরে। লোকটা তাকে চুমো দিয়েছে! তার সাথে কি করতে যাচ্ছিল লোকটা? যদি জ্ঞান না হারাতো তাহলে নিশ্চয়ই উল্টো পাল্টা কিছু করতো? লাজে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলো তনুমন। মাথাটা যেন খুললো এতোক্ষণে। লাফিয়ে বিছানা থেকে নামলো সে। দ্রুত এই ঘর থেকে যেতে হবে। কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হবে।
পা টিপে টিপে নাদিরার রুমে ফিরে এলো। নাদিরার পাশে শুয়ে টের পেলো মেয়েটা বেহুশ হয়ে ঘুমাচ্ছে। কাল সবার চায়ে ঘুমের ওষুধ দিয়েছে সে। এখন বড্ড অপরাধবোধ হচ্ছে। এরা তো খারাপ না সে কেন এদের সাথে খারাপ করছে? দাদীর কথা শুনে কেন নিজে পাপ কামাচ্ছে? কিন্তু আব্বা? আব্বার কি হবে? রুজাইফ যদি সব নিয়ে নেয় তাহলে তাদেরই বা কি হবে? আব্বা তো সহ্য করতে পারবে না। স্কুলটা আব্বার ধ্যান জ্ঞান। এই স্কুলটার উন্নতিতে আব্বার হাত আছে। এইটা কলেজ হইছে সেই কৃতিত্বও আব্বারই। আব্বা জীবনে আর কিছু করে নাই কোন দিকে তাকায় নাই। কোনদিন স্কুল মিস দেয় নাই আব্বা। কাজ না থাকলেও স্কুলে যেয়ে বসে থাকে। এমনকি নিজের অংশের জমিও স্কুলের জন্য দান করছে। সেই মানুষটার থেকে স্কুল কেড়ে নেওয়া মানে তাকে মৃতুদন্ড দেওয়া। সেঁজুতির কেন যেন কান্না পেয়ে গেলো। সে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।
★★★
শম্ভু নাথকে ডেকে এনেছে শামসুন্নাহার-“দাদা, এই সম্পদ হাতছাড়া হওয়া থেকে কেমনে বাঁচুম? কিছু একটা বুদ্ধি দেন।”
শম্ভু নাথ মাথা নাড়ে-“সাজেদ গেছিল বৌদি। আমি সব কাগজ খুটায় দেখছি। তমিজউদদীনের সিদ্ধান্ত না মাইনা উপায় নাই ভাবি। সে স্বজ্ঞানে তার সম্পদ লিখে দিছে। আমার মনেহয় ওই পোলার লগে বচসা না কইরা সন্ধি করা ভালো। তারে বুঝায় বললে সে এইসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। এছাড়া আর কোন উপায় দেখি না।”
শামসুন্নাহার মুখ গোমড়া করলো-“ওগরে সব দিলে আমার পোলাগো কি হইবো দাদা? আমার নাতিপুতিদের ভবিষ্যত আছে তো? সব যদি তাদের দেই তাইলে এরা কেমনে চলবে?”
শম্ভু নাথ খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললো-“বৌদি, যাইহোক তাইহোক আপনারা সবাই তো একটা পরিবার। যতটুকু ওই ছেলেকে দেখছি, সম্পদ বুঝায় দিলেই আপনাদের সেইসব থেকে উৎখাত করবে এমন না৷ তাই বলতেছি ওরে হাতে রাখলে এতো ঝামেলা হয় না। মিলেমিশে থাকলে সবার লাভ। আমার মনেহয়, তারে তার ভাগ বুঝায় দেন বৌদি। তাইলে দেখবেন এতো ঝামেলা হবে না। তাদের সাথে কথা কন। বলেন যা কিছু আছে তা দিলে আপনাদের চলা কষ্ট। তারা বুঝে কিনা দেখেন।”
শম্ভু নাথের পরামর্শ মোটেও পছন্দ হলো না শামসুন্নাহারের। সবকিছু এতো সহজ? ওই মাতারির সাথে কে যাবে পিরীত জমাইতে। আর পিরীত জমাইলেই কি সব ঠিক হবে? রুজাইফ বলছে তাদের সম্পদ তাদের বুঝয় দিতে। আজ দেই কাল দেই করে তিনচার মাস কেটে গেছে। ইদানীং সে বেশিই ক্ষেপে গেছে। এদিকে সেঁজুতিও তেমন কিছু করতে পারছে না। কোন কাগজই উদ্ধার করতে পারেনি। এমনকি কোন গোপন কথাও জানতে পারেনি। একটা আকাইম্মা মেয়ে। মুখ গোজ করে বসে রইলো।
রাতের বেলা সবাই মিলে মিটিংএ বসলো। মাজেদ প্রস্তাব দিলো-“রুজাইফের সাথে বসি আমরা। তার কাছে জানতে চাই সে সত্যিই সবকিছু চায় কিনা। তোরা কি কস?”
জাহাঙ্গীর বললো-“যদি কয় চাই তাই কি করবেন?”
“তাইলে ওর পাওনা ওরে বুঝায় দিব।”
সাজেদ প্রতিবাদ করলো-“শহরের বাড়ির ভাড়া আসে তিরিশ হাজার। আব্বা যে জমি ওরে দিছে ওইগুলাতে ফলন ভালো হয়। সব দিলে আমাগো থাকলো কি?”
মাজেদ বললো-“যা থাকবে তাই নিয়া সন্তুষ্ট থাকতে হবে। আব্বা যেহেতু দিয়া গেছে ওরে ওর ভাগ দিতেই হবে।”
জাহাঙ্গীর বলে বসলো-“আমি মানি না ভাইজান। ওরে সব দিয়া ফকির হইতে পারুম না।”
মাজেদ অসন্তুষ্ট হলো-“তো কি করতে চাস?”
“জানি না। তয় ওরে এইসব দিমু না এইটা জানি। আব্বা অন্যায় করছে সেই অন্যায় মাইনা নিমু কেন?”
মাজেদ চুপ করে রইলো। দিতে তো সেও চায় না। তবে বাবার কাজের বিপক্ষে কিছু করতেও চায় না। যার সম্পদ সে নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তেই দিয়ে গেছে।
★★★
এক বৃহস্পতিবার সকালে সোহাগ এলে রুজাইফের অফিসে। কাচুমাচু হয়ে বললো-“স্যার, আপনাকে দাওয়াত দিতে আইছি। আপনি আমাগো মেলা উপকার করছেন। সকাল বারবার আপনের কথা কয়। আইজ একটা বিশেষ দিন স্যার। আমাগো বাড়িতে আপনের যাওয়াই লাগবে। কোন কথা শুনবো না। আপনে না গেলে সকাল রাগ করবে। আমাকে ঘরে ঢুকতে দিবে না।”
রুজাইফ হেসে দিলো-“আমি না গেলে তোমাকে ঘরে ঢুকতে দেবে না?”
সোহাগ করুন মুখে বললো-“জ্বি স্যার।”
“আচ্ছা বেশ। যাব তোমার বাসায়।”
“স্যার, আপনে অফিস শেষ কইরা আসেন। রাইতের খাওন খাইবেন আমাগো লগে। আমি এখন বাড়ি যাইয়া ওরে কমু আপনে আসবেন।”
রুজাইফ আপত্তি করলো না। মাথা দুলিয়ে বললো-“আচ্ছা।”
কাজ শেষ করে বেরিয়ে সকাল আর সোহাগের জন্য গিফট কিনলো রুজাইফ। মনে করে সোহাগের মা আর বোনের জন্যও কিনলো। ওর গাড়িটা নাদিরা নাহিয়ানকে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সিএনজিতে করে সোহাগদের বাড়ি আসতে আসতে সন্ধ্যা। সেখানে এসে আরেক চমক পেলো সেঁজুতিকে দেখে। এই মেয়ে আজ এখানে কেন? মতলব কি এর?
সকাল সোহাগ রীতিমতো পাগলপারা। রুজাইফকে কোথায় বসতে দেবে কি খাওয়াবে বুঝতে পারছে না যেন। একবার এটা আনে তো আরেকবার ওটা আনে। শেষে রুজাইফ ধমক দিলো-“এমন করছো কেন? আমি কি খেতে এসেছি? তোমাদের দেখতে এলাম। ব্যস্ত হবে না।”
সকাল তবুও নিজের হাতে বানানো আমের শরবত নিয়ে এলো-“স্যার, এইটা খান আরাম পাবেন। আমাগোর গাছের আম।”
রুজাইফ হাতে শরবত নিয়ে বললো-“খাবো তবে একটা শর্ত আছে।”
সকাল সোহান দৃষ্টি বিনিময় করলো। সকাল বললো-“কি শর্ত স্যার?”
“স্যার বলা বাদ দিতে হবে। আমি তো তোমাদের বস না যে স্যার স্যার করবে। ভাইয়া বলতে পারো।”
সকাল খুশি হয়ে ছলছল নয়নে বললো-“ভাইয়া! আপনে তো আমার বড় ভাইই।”
রুজাইফ চমকে তাকাকেই সকাল ভরকে গেলো-“না মানে বড় ভাইয়ের মতে কাজই করছেন আপনে। তাই বলতেছিলাম আর কি।”
রুজাইফ জবাব না দিয়ে শরবতে চুমুক দিলো। আসলেও আরাম পেলো। টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের শরবত শরীর ঠান্ডা করে দিলো।
রাতে খেতে বসে এলাহি আয়োজন। রুজাইফ জানতে চাইলো-“কোন বিশেষ দিন আজ?”
সোহাগ হাত কচলায়-“জ্বি স্যার মানে ভাইজান। আইজ আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকী।”
“আরে বাহ! শুভ বিবাহ বার্ষিকি।”
সকাল বললো-“আরেকটা খুশির খবর আছে ভাইজান। সোহাগের একটা সরকারি চাকরি হইছে। আপনের মতো বড় অফিসার না হইলে একবারে খারাপ না। এই কও না কেন?”
সকাল সোহাগকে ঠেলা দিলো। সোহাগ আড়ষ্ট হয়ে জবাব দিলো-“ভাইজান, সিটি করপোরেশনে চাকরি হইছে।”
রুজাইফ আদতেই খুশি হলো। সোহাগকে অভিনন্দন বার্তা দিলো। কোন সাহায্য লাগলে তাকে যেন জানায় সেটাও বললো। সোহাগ মাথা নাড়ে-“কোন সাহায্য লাগবে না ভাইজান শুধু দোয়া কইরেন।”
রুজাইফ খুশি হলো সোহাগের কথায়। নিজে চেষ্টা করে জীবনে কিছু অর্জন করা হলো বড় পাওয়া। সোহাগ জীবনে উন্নতি করবে তার বিশ্বাস।
খাবার মুখে তুলতে গিয়ে থামলো রুজাইফ-“খাবারে আবার কিছু মিশিয়ে দেয়নি তো?”
সকালের মুখ অন্ধকার হলো-“কি বলেন ভাইজান? কে কি মিশাইব?”
রুজাইফ সেঁজুতিকে দেখলো-“তোমার বোনের এ ব্যাপারে ডিগ্রি আছে।”
সেঁজুতি ভাত মুখে তুলেছিল। এ কথা শুনে তার কাশি শুরু হলো। সকাল দ্রুত তাকে পানি দিলো। সে এক ঢোকে সব পানি খেয়ে ফেললো। সকাল বললো-“ভাইজান, রান্না আমি করছি। সেঁজুতি তো দুপুরে কলেজ শেষ কইরা আসলো।”
“এই সময়ে এলো কেন? রাস্তাঘাট কেমন সুনসান থাকে। বিপদ হতে পারে তো।”
সেঁজুতির মুখ থমথমে। সকাল বললো-“আপনে আসছেন আপনের সাথে চইলা যাবে। আর আপনে না আসলে ওরে রাইখা দিতাম। সকালে কলেজে দিয়া আসতো সোহাগ।”
“তবুও এরকম এলোমেলো সময়ে আসতে বারন করবে।”
“জ্বি আচ্ছা।”
সকাল সাথে সাথে সায় দিলো। রুজাইফ খাওয়ায় মন দিলো। সেঁজুতি অবাক হয়ে ভাবছে এই লোকের আবার কি হলো? সরাসরি তাকে না বলে এমন অচেনা সেজে তৃতীয় ব্যক্তির মতো কথা বলছে কেন লোকটা? এই তো সেদিন রাতে তাকে একা পেয়ে বেশ ফায়দা লুটলো আর আজ দেখো চিনতেই পারছে না।
চলবে—
#যে_থাকে_আঁখি_পল্লবে
#পর্ব-২২
সিএনজিতে উঠে একদম কোনায় কাচুমাচু হয়ে বসলো সেঁজুতি। রুজাইফ চুপচাপ দেখলো। মাঝে এক হাত ফাঁকা রেখে দু’জন দুইপাশে বসে আছে চুপচাপ। সিএনজি চলতে শুরু করতেই রুজাইফ সেঁজুতি টেনে নিজের দিকে নিয়ে এলো। এক হাতে ওর কোমড় চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বললো-“এতো দূরে বসে আছো কেন? আমি বাঘ না ভাল্লুক, তোমাকে খেয়ে ফেলবো?”
সেঁজুতির শরীর গুটিয়ে গেলো অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে। কান দু’টো অকারণে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। কোমড়ের কাছটা শিরশির করে। রুজাইফকে কিছু বলার সাহসও হচ্ছে না। সে চুপচাপ রুজাইফের গায়ের সাথে লেপ্টে বসে রইলো। রুজাইফ নত মুখে বসে থাকা সেঁজুতি কে দেখে মুচকি হাসে। মৃদুস্বরে জানতে চাইলো-“কি কথা নেই কেন?”
সেঁজুতি মিনমিন করলো-“এমনে ধরছেন কেন? ভাল্লাগে না আমার।”
“কি ভাল্লাগে না?”
“হাতটা সরান।”
“উহু, সরাব না। এটা তোমার সাজা। আজ একা একা বোনের বাড়ি গিয়েছ কেন?” বলে আরেকটু কাছে টানে সেঁজুতিকে। পরিনত পুরুষের স্পর্শে সেঁজুতির মাতাল মাতাল লাগে। হাসফাস করে উঠে বললো-“আর যাব না। আপনি যেমনে বলবেন তেমনে থাকবো তবুও হাতটা সরান দয়া করে।”
“এক শর্তে সরাব।”
সেঁজুতি কান্না কান্না মুখ করে তাকালো রুজাইফের দিকে। রুজাইফের মুখ জুড়ে দুষ্ট হাসি। সেঁজুতি অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। এই লোকটা এমন করে হাসতেও পারে? সেঁজুতি বিহ্বল হয়ে বললো-“কি শর্ত?”
“রাতে কাগজ খুঁজতে আসবে আমার রুমে।”
সেঁজুতি হা করে চেয়ে থেকে বললো-“হ্যহহহহ।”
রুজাইফ ফিক করে হাসলো-“রাতে আমার রুমে আসবে দলিল খুঁজতে তবে এখন ছাড় পাবে।”
সেঁজুতি তাকিয়ে রইলো বোকা দৃষ্টি মেলে। সে ভেবে পাচ্ছে না রুজাইফ তাকে চুরির নিমন্ত্রণ কেন দিচ্ছে?
“কাগজ ঘরে আছে? না থাকলে যাব কেন খামাখা?”
রুজাইফ বোকা সেঁজুতির নাক টেনে দিলো-“সেটা এখন বলবো কেন? চুরি করতে এলে বলবো।”
সেঁজুতি বেশ মজা পেলো রুজাইফের কথায়। সে কৌতুহলে বলে ফেললো-“আপনে চান আমি আপনার জিনিস চুরি করি? এমন আজব কথা কোনদিন শুনি নাই যে, মালিক চোরকে চুরি করার নিমন্ত্রণ দেয়।”
রুজাইফ হেসে দিলো-“আমি দেই। তবে সবাইকে না। বিশেষ জনকে দেই।”
“তাইলে আমি আপনার কাছে বিশেষ জন?”
উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলো সেঁজুতি। রুজাইফ চেহারায় খানিকটা গম্ভীরতা ঢেলে বললো-“তা তোমাকে বলবো কেন? চুরি করতে এলে চোরকে বলবো।”
সেঁজুতি অবাক নয়নে চেয়ে থেকে বললো-“আচ্ছা আসবো চুরি করতে। এখন ছাড়েন আমারে। বাড়ির সামনে আইসা পড়ছি কেউ দেখলে কি ভাববে?”
রুজাইফ চোখ দুটো ছোট ছোট করে চেয়ে থেকে জানতে চাইলো-“কি ভাববে?”
সেঁজুতি মুখ ঝামটা দিলো-“এতোকিছু বোঝেন আর এইটা বোঝেন না? আর কন খুব সেয়ানা হইছেন?”
রুজাইফ সেঁজুতির কোমড় থেকে হাত সরিয়ে বসলো। মাথা নেড়ে বিরবির করলো-“তোর কি দিন এলো রুজাইফ, এখন চোরের সাথে আঁতাত করে চলতে হচ্ছে।”
★★★
স্কুল ছুটির পর বাইরে বেরিয়ে নাদেরকে না দেখে আশেপাশে তাকাল নিলা। লোকটা প্রতিদিন এদিকেই তো দাঁড়িয়ে থাকে। আজ নেই কেন? আসেনি নাকি? নীলার খানিকটা মন খারাপ হলো। আজ তার মন ভীষণ ভালো ছিলো। অর্ধ বছরের পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। ভাবনার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে সে। ভেবেছিল নাদেরকে রেজাল্ট এর ব্যাপারটা বলবে। কিন্তু সে তো আসলোই না। নীলা আনমনা হয়ে এলোমেলো হাটতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরই কোত্থেকে নাদের দৌড়ে এলো৷ হাঁপাতে হাঁপাতে বললো-“আইজ আইতে দেরি হয়া গেছে। রাগ করছো তুমি?”
নীলা দাঁড়িয়ে গেলো। নাদেরকে দেখলো চুপচাপ। মানুষটা এখনো হাঁপাচ্ছে। নীলা ব্যাগ থেকে পানির পট বের করে নাদেরের দিকে বাড়িয়ে দিলো-“পানি খান আগে। এতো হাঁপাইতেছেন কেন?”
নাদের ঢকঢক করে বোতলের অর্ধেক পানি খেলো। অনেকটা পথ ছুটতে ছুটতে এসেছে বলে গলা শুকিয়ে গেছিলো। কিছুটা ধাতস্ত হয়ে পানির পট ফিরিয়ে দিতে দিতে বললো-“আইজ পুকুরের মাছ ধরতে জাল ফেলা হইছিল। সেই মাছ বাইছা আলাদা কইরা শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে করতে দেরি হয়া গেলো। একবার ভাবলাম আইজ না যাই পরে ভাবলাম তুমি অপেক্ষা কইরা থাকবা।”
নীলা মায়া ভরা চোখে নাদেরকে দেখলো। মানুষটা শুধু তার কথা ভেবে এতো কষ্ট করে আসছে, এটা ভেবেই এতোক্ষণের উদাস ভাবটা কেটে গেলো। কোমল গলায় বললো-“ফোন দিয়া বললেই হইতো। খামাখাই কষ্ট কইরা আসলেন।”
নাদের ভুবন ভোলানো হাসি দিলো-“আরে কি কও? খামাখা কষ্ট কেন হইবো? এই যে তুমি মায়া কইরা আমারে পানি দিলা, আইতে না করলা। না আইলে কি এইগুলা দেখার সৌভাগ্য হইতো?”
নাদেরের কথায় নীলা কিছুটা লজ্জা পেলো। সে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলো। নাদের সেই লাজুক মুখের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি দিলো। এগিয়ে এসে ওর কাছাকাছি দাঁড়াল। নীলা ঈষৎ লালচে গাল নিয়ে মৃদুস্বরে ফিসফিস করলো-“আইজ রেজাল্ট দিছে। আগের চাইতে মেলা ভালো করছি।”
নাদের উৎফুল্ল হলো-“তারমানে কইতে চাও আমার কারণে তুমি মন দিয়া পড়ালেখা করছো?”
নীলা অবাক চাহুনি দিলো-“এই কথা কখন কইলাম?”
“কও নাই তয় আমি বুইঝা গেছি। আমি তো চাই তুমি পড়ালেখায় ভালো করো। অনেক অনেক ভালো করো। বড় কিছু হও।”
নীলা মুগ্ধ হলো-“সত্যি! আপনে সত্যি চান আমি অনেক পড়ালেখা করি?”
নাদের মাথা দুলায়-“সত্য। আমি তো মেট্রিক দিয়া পড়া ছাড়ান দিছি। বাপের ব্যবসা আমি না দেখলে কেডা দেখবো কও? আব্বা একসাথে এতোদিক দেখতে পারে না। লতিফটা ছোট এহনো। তয় আমি চাই তুমি পড়ো, বড় পাশ দাও।”
নীলা খুশি হয়ে গেলো। এমনিতে পড়ালেখায় খুব একটা আগ্রহী না সে। তবে আজ নাদেরের কথা শুনে মনেহচ্ছে পড়ালেখা করলে মন্দ হয় না। ঠিক করলো আরও বেশি মনোযোগী হবে সে। হুট করে নাদেরকে বললো-“আমারে কি দিবেন?”
“কিসের জন্য?” নাদের না বুঝে জানতে চাইলো।
“আরে পরীক্ষায় ভালা করছি পুরস্কার দিবেন না?”
আজ প্রথমবারের মতো নীলা অধিকার নিয়ে কিছু চাইলো বলে নাদেরের ভালো লাগলো। সে খুশিতে দাঁত কেলিয়ে বললো-“কি চাও? যা চাইবা তাই দিমু।”
“মোহনকাঠি কলেজে মেলা বসছে। আমারে নিয়া যাবেন? আব্বারে কইলে যাইতে দিবে না।”
“আচ্ছা নিয়া যামু। কাইল তৈরি থাইকো আমি বিকালে আইসা নিয়া যাব তোমারে। কাইল আর স্কুলে আসমু না একবারে বিকালে আসুম। ঠিক আছে?”
একবার বলাতেই নাদের রাজি হয়ে গেলো দেখে নীলার চেহারা উজ্জ্বল হলো। সে খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো-“যা চাব কিনে দিতে হইবো কইলাম?”
নাদের হুট করে ওর চিবুক ধরে নেড়ে দিয়ে আদুরে গলায় বললো-“দশটা পাঁচটা না একটা মাত্র বউ। সে যা চাইব তাই না দিলে আমি কিসের স্বামী?”
নীলা হুট করে নাদেরকে জড়িয়ে ধরলো-“আপনে এতো ভালো কেন?”
অনাকাঙ্ক্ষিত পাওয়া নাদেরকে সুখের ভেলায় ভাসিয়ে নিলো যেন। সে নীলার পিঠে আলতোভাবে হাত বুলালো। নীলা হুট করে বুঝতে সে নাদেরকে জড়িয়ে ধরেছে। বুঝেই দ্রুত আলিঙ্গন থেকে সরে এলো। মাথা নিচু করে বললো-“আমি গেলাম। আপনে বাড়ি যান আইজ আসা লাগবে না।”
বলেই ছুটতে শুরু করলো বাড়ির দিকে। পেছনে নাদের প্রথমে হতবাক হয় পরে হেসে দেয়। নীলার দিকে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষ যতক্ষণ না মেয়েটা চোখের আড়ালে যায়।
★★★
সে রাতে রুজাইফ অপেক্ষা করে ছিলো কিন্তু সেঁজুতি এলো না। সেঁজুতির অপেক্ষায় ছাড়া ছাড়া ঘুম হলো তার। মেজাজ খারাপ হয়ে রইলো, অকারণে রাগারাগি করলো কয়েকদিন। সেঁজুতি চোখের সামনে এলেও ওকে ইগনোর করলো পুরোপুরি। এরমধ্যে নাদিরা নাহিয়ান নুমা আর হাশেম কদিনের জন্য হাশেমের বাড়িতে বেড়াতে গেলো বিশেষ প্রয়োজনে। নুমা নেই বলে দিদার কথা ভেবে রুজাইফ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে। সেদিনও ফিরতে চাইল কিন্তু কি কারণে যেন আসতে দেরি হলো। বাসায় এসে দেখে পরিস্থিতি জটিল। ফজিলাতুন্নেছা বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে কোমড়ে জোর চোট পেয়েছে। ব্যাথায় দাঁড়াতেও পারছে না। সেঁজুতি আর রোমেলা মিলে ব্যাথার ওষুধ দিয়েছে তবুও ব্যাথার বিন্দুমাত্র নিরসন হয়নি। ফজিলাতুন্নেছা সমানে কুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাথায় গায়ে জ্বর চলে এসেছে তার। দিদা রুজাইফের বড় দূর্বলতা। তাকে এরকম অবস্থায় দেখে রুজাইফ কি করবে ভেবে পেলো না৷ সেঁজুতি এগিয়ে এলো-“শোনেন, দাদীকে হাসপাতালে নেন। ওইখানে উপল ভাই আছে। আমি তারে ফোন দিয়া বইলা দিতেছি। বুড়া বয়সে পইড়া ব্যাথা পাওন ভালো বিষয় না। দাদাজানও শেষ কালে পইড়া গেছিল।”
রুজাইফ রক্ত চক্ষু নিয়ে সেঁজুতি কে দেখলো-“চুপ করো বেয়াদব। দিদাকে নিয়ে কোন বাজে কথা শুনতে চাই না।”
সেঁজুতি থতমত খেলো। সে বুঝে পেলো না বেয়াদবের মতো কি বলেছে। সে তো ভালোর জন্যই বললো। মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে রইলো। ফজিলাতুন্নেছা রুজাইফকে বলা দিলো-“ওকে বকছিস কেন? ও ভালো কথাই বলেছে। আমার ব্যাথা বাড়ছে রুজাইফ, হাসপাতালে নিয়ে চল আমাকে।”
দিদার কথা শুনে আর দেরি করে না। রুজাইফ ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে ডাকলো। ধরাধরি করে ফজিলাতুন্নেছাকে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে গেলো। হাসপাতালে পৌছানো মাত্রই উপলকে দেখা গেলো। রুজাইফকে দেখে এগিয়ে এলো। বিনা বাক্য ব্যায়ে সমস্ত কাজ করলো একের পর এক। ডাক্তার ডেকে প্রাথমিক সেবা নিশ্চিত করার পর কেবিনের ব্যবস্থা করে ওদের কেবিনে শিফট করালো। কাগজ কলমের কাজ শেষ করে উপল রুজাইফের সামনে দাঁড়ালো। ফজিলাতুন্নেছাকে দেখলো এক পলক। ব্যাথানাশক ইনজেকশন দিয়ে ফজিলাতুন্নেছাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উপল মৃদুস্বরে বললো-“আপাতত দাদী ঘুমাবে। কালকে টেস্টগুলো করানোর পর বাকি চিকিৎসা দিতে হবে।”
রুজাইফের ভীষণ অসস্তি হচ্ছে। এই ছেলেটাকে প্রথম দিন একটা কিক মেরেছিল আর কিনা তার কাছ থেকে সাহায্য নিতে হলো। বিরক্তি নিয়ে বললো-“অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। আমাদের জন্য কষ্ট করলে।”
উপলের বলতে মন চাইলো-“একই বাড়িতে থাকি। ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। এটা আমার দায়িত্ব কষ্টের কিছু নেই।” কিন্তু বলা হলো না। জড়তা ঘিরে ধরলো তাকে। রুজাইফ দিদার দিকে তাকিয়ে রইলো। উপল বললো-“আমি তাহলে যাই। কোন দরকার হলে ডাকবেন। এটা আমার নাম্বার। আর সকালে আমি চলে আসবো টেস্ট করাতে। আপনি চিন্তা করবেন না।”
রুজাইফ মাথা দুলায়। উপলে চলে যাচ্ছিল এমন সময় তার হঠাৎ মনে হলো, বাড়িটা একদম ফাঁকা রেখে এসেছে। কেউ নেই এক সেঁজুতি ছাড়া। বুকটা ধ্বক করে উঠলো। এই সুযোগে ওরা বাড়িতে ঢুকে যায় নিতো? ফাঁকা বাড়িতে সেঁজুতি সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে নাতো? চমকে উঠলো রুজাইফ। এ দিকটা নিয়ে তো ভাবেই নি। কাগজগুলো বাড়িতেই রাখা। যদি কোনভাবে সেঁজুতি গাধীটা খোঁজ পায় তাহলে কি হবে? অশুভ ভাবনায় রুজাইফের মাথা নষ্ট হয়। সে প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো-“উপল, তুমি কি কষ্ট করে দিদার সাথে থাকবে? রোমেলা ফুফু আছে শুধু তাদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখলেই হবে। আমার বাড়ি যাওয়া খুব জরুরি। আমি সকাল সকাল চলে আসবো।”
উপল ঘাবড়ে গেলো। রুজাইফকে নার্ভাস দেখায়। সে কিছু না ভেবেই বললো-“আপনি যান আমি আছি। কোন সমস্যা হবে না।”
রুজাইফ টাকা বের করলো-“টাকাটা রাখো যদি কোন প্রয়োজন হয়।”
উপল প্রবল আপত্তি করলো-“লাগবে না। আমার কাছে আছে। আপনি যান।”
রুজাইফ জোর করলো না কেন যেন। উপল বলা মাত্র সে প্রায় ছুটে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে উঠে বসলো, ড্রাইভারকে তাড়া দিলো। তার তাড়াতাড়ি বাড়িতে পৌঁছাতে হবে যে করেই হোক। না হলে অনর্থ হয়ে যাবে। অনর্থের রকম নিয়ে ভাবার শক্তি পাচ্ছে না সে।রুজাইফের হার্টবিট বেড়েই চলেছে ক্রমাগত।
চলবে—
©Farhana_Yesmin