#যে_থাকে_আঁখি_পল্লবে
#পর্ব-৩৭
প্রথম দিনের পর আর এ বাড়ি মুখ হয়নি ফজিলাতুন্নেছা। শামসুন্নাহারের মুখোমুখি হওয়ার কোন ইচ্ছে তার নেই। এই মানুষটাকে দেখলে ভয়াবহ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে যায়। সেসব বড় কষ্ট দেয় ফজিলাতুন্নেছাকে। তাই স্মৃতি থেকে পালিয়ে বাঁচতেই শামসুন্নাহারকে এড়িয়ে চলে সে। কিন্তু আজ ইচ্ছে করেই শামসুন্নাহারকে দেখতে চাইলো শুনে রুজাইফ অবাক হলো-“হঠাৎ! কি জন্য যাবে?”
“ওদের বাড়ির সবাইকে শুক্রবারের দাওয়াত দিতে হবে না?”
রুজাইফ মাথা নাড়ে-“সে আমি দিয়ে দেব দিদা। তুমি এই কারণে যেতে চাইছো না। তোমার কারণ ভিন্ন।”
ফজিলাতুন্নেছা হেসে দিলো-“ঠিক ধরেছিল। ওই মহিলার সাথে কথা বলবো একটু। এতোদিন তো বলার কোন উপায় ছিলো না। বড্ড মুখ চলে তার। এখন অন্তত পাল্টা জবাব দিতে পারবেনা। তাই শান্তিমতো কটা কথা বলবো।”
“কি দরকার দিদা? বাদ দাও না।”
ফজিলাতুন্নেছা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো-“বাদই তো দিয়েছি রুজাইফ। দীর্ঘ বিশ বছর ধরে কথাগুলো হৃদয় কুঠুরিতে বন্দী করে রেখেছি। আজও যদি বলতে না পারি তবে বেঁচে থাকাটা ভীষণ ঠুনকো মনে হবে। এবার অন্তত একটু মনের খায়েশ মিটাতে দে।”
রুজাইফ হার মেনে নিলো-“বেশ যাও তবে। ফুপুকে নিয়েই যাও।”
ফজিলাতুন্নেছা বললো-“উহু, তুইও চল৷ তোর ওখানে থাকার দরকার আছে।”
মেনে নিলো রুজাইফ। নুমাকে ডেকে নিয়ে একসাথে উঠনে এসে দাঁড়ায়। সেঁজুতিকে হাক দিয়ে ডাকলো৷ মাজেদ বেরিয়ে এলো। রুজাইফ তাকে বললো-“দিদা একটু আপনার মাকে দেখতে চায়। আপনাদের পরিবারের সবাইকে একটু খবর দিন। সবার থাকা জরুরি।”
মাজেদ অবাক হলেও দ্বিরুক্তি করলো না। সেঁজুতিকে দিয়ে সবাইকে ডেকে নিলো। সাজেদ লাকি মিরাজসহ মোটামোটি সবাই এখানে আছে। রুজাইফ দিদাকে ধরে নিয়ে এলো শামসুন্নাহারের কামরায়। একদিকে কাত করে শুইয়ে রাখা হয়েছে শামসুন্নাহারকে। শ্যামলী এসে তাকে ঘুরিয়ে দিলো বহুকষ্টে। সম্মুখে ফজিলাতুন্নেছাকে দেখে চমকে উঠলো শামসুন্নাহার। কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু মুখ বেঁকে যাবার কারনে সেটা বিশ্রি দেখালো। ফজিলাতুন্নেছা শান্ত গলায় বললো-“এতো অস্থির হয়েন না আপনে। এই শরীর নিয়ে অস্থির হলে বড় বিপদ হবে। আমি এইখানে আপনের সাথে গল্প করতে আসি নাই। কয়টা কথা বইলা চলে যাব।”
শামসুন্নাহার খানিকটা শান্ত হলো। ফজিলাতুন্নেছা বললো-“আগামী শুক্রবার আমার রুজাইফ একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। কিসের অনুষ্ঠান জানেন? আমার তৌফিক আর বউমার জন্য দোয়ার আয়োজন করে এই অনুষ্ঠান। আপনাদের সবার দাওয়াত সেই অনুষ্ঠানে।”
থামলো ফজিলাতুন্নেছা। তার গলা কাঁপছে মৃদু। সে বলতে শুরু করে-“তমিজউদদীন সাহেবের সবচেয়ে ভালো ছেলেটাকে আপনি আপনার সমাজের চোখে কালো বানিয়েছিলেন। যেই ছেলে অল্প বয়সে পড়ালেখা আর কাজ দিয়ে নামডাক কামালো সেই ছেলেকে আপনি হিংসা করতে লাগলেন। নিজের ছেলেদের উস্কে দিলেন তার বিরুদ্ধে। অথচ আমার তৌফিক কোনদিন ভাইদের অন্য চোখে দেখেনি৷ ভালোমন্দ যা কিছু চিন্তা করতো সবই ভাইয়ের সাথে নিয়ে।
বউকে বড্ড ভালোবাসতো আমার তৌফিক। বউ বাচ্চা তার জান ছিলো। আপনি তার চরিত্রে দাগ লাগালেন। স্কুলে শিক্ষকতা করতে আসা মেয়েটাকে আর তৌফিককে একঘরে আটকে রেখে চরিত্রহীন প্রমান করতে গ্রামের লোকেদের উস্কে দিলেন যেন ওকে জীবিত না ছাড়ে। এমনিতেই ছেলে আমার চরিত্রহীন ট্যাগ পেয়ে মুড়ষে ছিলো। লোকের আক্রমন থেকে বেঁচে থাকার কোন চেষ্টা করলো না। কি করুন মৃত্যু হলো তার। স্বামীর মৃত্যু দেখে বউমা আমার পাগল হলো। আমার যে স্বামী আমাকে চোখে হারাত আমার ছেলেকে ভালোবাসতো তার চোখে আমরা হলাম ঘৃণিত। ওই অসহায় পরিস্থিতিতে আমাদের এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন আপনি আর আপনার সন্তানেরা। তারপর এতোগুলা বছর কিভাবে চলেছি আমরা জানেন আপনি?
আমার উপর এতো ক্ষোভ এতো হিংসা কেন ছিলো আপনার? আমিও কি আপনার মতো ভিকটিম ছিলাম না? যদি জানতাম তমিজউদদীনের আরেকটা বউ আছে তাহলে কি আমি কোনদিন বিয়ে করতাম তাকে? আমার বাপের বাড়ির অবস্থা তো আপনি জানতেন। আমি নিজে তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। সতীনের ঘর করার মতো মেয়ে ছিলাম কি আমি? দোষ করলো তমিজউদদীন অথচ আপনি সব রাগ ঝাড়লেন আমার উপর। কেন? কারণ সে আমাকে পছন্দ করতো। আপনার বিয়ের চারবছরেও পেটে বাচ্চা এলো না। আর আমি এ বাড়িতে আসার পর পর বাচ্চা হলো। সেটাও আমার দোষ বুঝি? কি হিংসা আপনার? জীবনেও আপনি আমার তৌফিককে কোলে নেন নাই। অথচ আমি সবসময় আপনার জন্য দোয়া করে গেছি। চাইলে আমিও আপনাকে দোষ দিতে পারতাম বাড়ি ছাড়া করতে পারতাম কিন্তু করি নাই। কারণ আমি জানতাম আমার মতো আপনেও নির্দোষ। আমি সব মেনে নিয়ে মিলে মিশে সংসার করতে চাইছি। কিন্তু আপনার মন ভর্তি বিষের খবর জানতাম না। বিশ্বাস করেন জানলে পালায় যাইতাম। তাতে অন্তত আমার রুজাইফ বাবা মা হারা বড় হইতো না। যে কষ্ট ওরে জীবনে সহ্য করা লাগছে তা লাগতো না। আপনে বুকে হাত দিয়ে কন তো আমি কোনদিন আপনার সাথে উচ্চবাচ্য করছি কিনা? কোনদিন আপনাকে কষ্ট দিয়া কথা কইছি? কোনদিন আপনাকে অপমান করছি? তাইলে কেন এতো রাগ ছিলো আমার উপর? তমিজউদদীন আমাকে বিয়ে করে আনছিল এইটাই আমার দোষ? একটা বারও ভাবেননাই আমার মতো মেয়ে জেনেশুনে কোন বিবাহিত লোককে বিয়ে করবে না। স্বামী মানুষটা আমার সাথেও ধোঁকাবাজি করছে।
তমিজউদ্দিন আমাদের যত সম্পদ দিয়েছে সেসব সে দিয়েছে নিজের অপরাধবোধ থেকে। বিনা অপরাধে যে দুর্বিষহ জীবন আমরা পার করেছি এতোদিন এই সম্পদ তার সামান্য কিছু ভরপাই। আপনি ভাবতেছেন আবার আপনাকে ঠকাইল। একবারও ভাবতেছেন না এই বিশ বছর ধরে এই সম্পদের দানাপানি আমরা স্পর্শ করি নাই। অথচ সবকিছুতে আপনার মতো আমার আর আমার সন্তানদেরও হক ছিলো।
বলে যে যেমন কর্ম করবা তেমন ফল পাবা। আপনিও পেয়েছেন। আমার নির্দোষ ছেলেটাকে পিটিয়ে মেরেছিলেন, খুনের দাগ তো ছিলো আপনাদের হাতে। আজ সত্যিকার অর্থেই আপনার ছেলে তার বউকে মেরে খুনী হয়ে গেছে আর আপনি খুনীর মা। ছেলে এখখ সারাজীবন জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে বন্দী থাকবে আপনি মা হয়ে বাইরে আলোবাতাসে শ্বাস নিতে নিতে বুঝবেন কেমন লাগে। বিছানার সাথে মিশে যেতে যেতে টের পাবেন বেঁচে থাকাটা কতটা কঠিন।”
শামসুন্নাহার ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। তার মুখ দিয়ে সমানে লালা ঝরছে। রুজাইফ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। পুরো রুম জুড়ে পিনপতন নীরবতা। ফজিলাতুন্নেছা এবার ঘুরে বসলো। নজর সাজেদ মাজেদের উপর-“তোমরা জেনে না জেনে বুঝে ভুল বুঝে মায়ের কাজে সাহায্য করেছ। তোমরা শতভাগ দোষী না হলেও একেবারে নির্দোষ না। আজ এখানে সবার মাঝে কথাগুলো বলার কারণ একটাই এই হিংসা শেষ হোক। তোমাদের হিংসার আঁচ তোমাদের সন্তানদের মধ্যেও চলে আসছে যেটা একদমই ভালো ব্যাপার না। তাদের সত্যিটা জানিয়ে দাও যেন ভুল না বোঝে। তাদের সত্যের পথ দেখাও হিংসার পথ না। এই এতগুলো বছর আমার ছেলেটা এখানে শুয়ে আছে অবহেলায় অনাদরে। তোমরা সবাই চেয়েছ তার পরিচয় মুছে যাক কিন্তু আল্লাহ তা চায়নি। তাইতো তার ছেলেকে আল্লাহ যোগ্য বানিয়েছেন। আজ আবার তাকে সন্মান দিয়ে লোকের কাছে পরিচয় করিয়ে দেবে রুজাইফ। সেই অনুষ্ঠানে আপনজন হিসেবে তোমাদের সবার নিমন্ত্রণ রইলো। এসে দোয়া করে দিয় আমার ছেলেকে। এবার ইনশাআল্লাহ তার রুহ শান্তি পাবে।”
ফজিলাতুন্নেছা উঠে দাঁড়ায়। চলে যেতে যেতে থমকে গেলো। শ্যামলীর কাছে এসে দাঁড়াল-“একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি৷ আমার রুজাইফের বিয়ে দেব।”
রুজাইফ হতভম্ব হয়ে বললো-“দিদা, কি বলছো এসব? আমার বিয়ের প্রসঙ্গ আসছে কোত্থেকে?”
ফজিলাতুন্নেছা মৃদুস্বরে ধমকে উঠলো-“দিদা কথা বলছে এরমধ্যে তুমি কেন মুখ খুলছো?”
রুজাইফ চুপসে গেলো। ফজিলাতুন্নেছা বললো-“পাত্রী হিসেবে তোমাদের মেয়ে সেঁজুতিকে আমার পছন্দ হয়েছে। তোমাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে শুভ দিন দেখে ওদের বিয়েটা দিয়ে দেব।”
আচমকা এমন প্রস্তাবে ঘরের সবাই অবাক হলো বিশেষ করে মাজেদ আর শ্যামলী। সেঁজুতি হতবুদ্ধি হয়ে রুজাইফের দিকে তাকাতেই দু’জনার চোখাচোখি হলো। সেঁজুতি ভীষণ লজ্জা পেয়ে ভিতরের ঘরে পালিয়ে গেলো। রুজাইফ মাথা চুলকে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। শ্যামলী আর মাজেদ চোখাচোখি করলো। ওরা কিছু বলার আগেই সাজেদ বললো-“খুব ভালো প্রস্তাব। বাড়ির ছেলেমেয়ের বিয়ে হবে এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু নাই। রুজাইফ যোগ্য ছেলে। তার ব্যাপারে আপত্তি করার কিছু নাই।”
ফজিলাতুন্নেছা মাথা দুলায়-“বেশ তাহলে শুক্রবার রাতে কাজি ডেকে ওদের বিয়ে পড়িয়ে দেব। সেঁজুতির সামনে পরীক্ষা ওর পড়ালেখার ব্যাপারে রুজাইফ সাহায্য করতে পারবে। পরীক্ষা হয়ে গেলে পরে রুজাইফ চাইলে ঘটা করে অনুষ্ঠান করা যাবে।”
“জ্বি, আচ্ছা।” মাজেদ মিনমিন করলো।
নুমা বাড়ি ফিরে সেঁজুতি আর রুজাইফের বিয়ের কথা বলতেই নাদিরা নাহিয়ান খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। দাদা ভাইয়ের বউ হবে সেঁজুতি এর চাইতে আনন্দের আর কিছু হয় না। এরপর সারাদিন সেঁজুতি ওদের সাথেই থাকবে এটা ভেবেই আনন্দ লাগছে নাদিয়ার। বিয়েতে কি কি মজা করবে সে নিয়ে বিস্তর আলোচনা করলো
সেঁজুতির খুব মন চাইছিল একবার রুজাইফের মুখোমুখি হতে। বিয়ের কথা শুনে মানুষটার অনুভূতি কেমন জানার ইচ্ছে ছিল। দেখা করার তো কোন উপায় নাই। নিরুপায় হয়ে ফোন দিয়ে বসলো। রিং বেজে যাচ্ছে ফোনটা তুলছে না কেউ। সেঁজুতি আবার ফোন দিতেই গম্ভীর কন্ঠ শোনা গেলো-“এতো রাতে পড়াশোনা না করে ফোনে কি?”
সেঁজুতি ভয় পেয়ে ফোন কেটে দিলো। ওপাশের মানুষ ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো কেবল।
শুক্রবার সকাল থেকে দুই বাড়ির সকল আত্মীয় স্বজনে বাসা ভর্তি। সকাল সোহান রাতে চলে এসেছিল। উপলও এসেছে। রুজাইফের কাঁধে কাধ মিলিয়ে কাজ করেছে ওরা। রান্নার এলাহি আয়োজন ছিলো। শখানেক এতিমকে খাওয়ানো হয়েছে। কাছের দূরের আত্মীয়রাও তৃপ্তি নিয়ে খেয়েছে। সন্ধ্যা হতে হতে আত্মীয়ের ভীর কমলো। বাড়ির লোক বাদে তেমন কেউ নেই। ফজিলাতুন্নেছা রুজাইফকে ডেকে তৈরি হতে বললো। ওদিকে মাজেদকে বললো সেঁজুতিকে সাজিয়ে নিয়ে আসতে। আধাঘন্টা পরে দাদাবাড়ীর হলঘরে কাজির সামনে বসে কবুল বললো রুজাইফ। আর দিদার ঘরে বসে কবুল বললো সেঁজুতি। সবাই বেশ খুশি। সবচেয়ে খুশি সকাল। বিয়ে হতেই সে বোনের কানে ফিসফিস করলো-“আমি আগেই বুঝছিলাম রুজাইফ ভাই তোরে ভালা পায়।”
সেঁজুতি অবাক হলো-“কেমনে বুঝছিলা বুবু?”
সকাল মুচকি হাসে-“চাহুনি দেখলে বুঝা যায়।”
সেঁজুতি লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নেন। সত্যি বলতে সেও তো বুঝেছিল। কুংফু পান্ডা অকারণে তাকে আসকারা দিয়েছে, স্পর্শ করেছে অধিকার নিয়ে। সেও কি মনে মনে রুজাইফের প্রতি আকৃষ্ট ছিলো না? সেসব ভেবে গাল আরক্ত হলো সেঁজুতির।
রাত গভীর হতেই সেঁজুতিকে রুজাইফের ঘরে দেওয়া হলো। বিছানাটা ফুল দিয়ে হালকা করে সাজানো। সেঁজুতি ঘোমটা টেনে চুপচাপ বসে রইলো। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। রুজাইফ এলো খানিক বাদেই। দরজা লাগিয়ে দিয়ে এগিয়ে এলো পায়ে পায়ে। সেঁজুতির সামনে বসলো। লাল টকটকে বেনারসীতে সেঁজুতিকে মারাত্বক সুন্দর লাগছে। রুজাইফের তর সইলো না। সে ভনিতা না করে ঘোমটা তুললো দ্রুত। সেঁজুতি ভয় পেয়ে চোখ বুঁজে ফেলেছে। অজানা আশঙ্কায় তার সর্বাঙ্গে কাঁপন উঠেছে। সেই কাঁপন ঠোঁটে ছড়িয়েছে। রুজাইফ মুগ্ধ হয়ে দেখলো মেয়েটাকে। কোমল অথচ গমগমে স্বরে ডাকলো-“সেঁজুতি, চোখ মেলো।”
সেঁজুতি সাথে সাথে চোখ মেলে রুজাইফের দিকে তাকালো। মেরুন রঙা পাঞ্জাবি পরা শ্যামরঙা রুজাইফকে দারুণ হ্যান্ডসাম লাগছে। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে রুজাইফকে দেখতে লাগলো। বউয়ের মুগ্ধ দৃষ্টি বুঝে রুজাইফ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। সেঁজুতি লজ্জা পেয়ে সাথে সাথে মুখ নিচু করে ফেলে। রুজাইফ ওর চিবুক ধরে মুখ তুলে ধরে। নাকের নোলকটা যত্নে খুলে নিলো। গয়না খুলতে দেখে সেঁজুতি খানিকটা অবাক হলো। পরক্ষণেই মুখের উপর গরম নিঃশ্বাসের অস্তিত্ব টের পেয়ে শিউরে উঠলো। খামচে ধরলো রুজাইফের পান্জাবি-“কি করেন?”
“বউকে আদর করছি।” বলেই রুজাইফ আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো সেঁজুতির ঠোঁটে। চোখ বুঁজে স্পর্শের উষ্ণতা অনুভব করলো সেঁজুতি। টের পেলো আলতো স্পর্শটা ঠোঁট ছেড়ে চোখের উপর পড়লো। দুই চোখের পাতায় স্পর্শ দিয়ে ওকে বুকে টেনে নিলো রুজাইফ-“চোখের সামনে দেখতে দেখতে কবে যে তুমি এতো প্রিয় হয়ে উঠলে জানতে পারিনি। এখন না দেখলে অশান্তি হয় মেয়ে। কি জাদু করলে বলতো?”
সেঁজুতির ভীষণ ভালো লাগছিল রুজাইফের বুকে থাকতে। কেমন শান্তি শান্তি। সে আনমনা হয়ে বলে ফেললো-“আপনের বকা না খাইলে ভালো লাগে না আমার। কয়টা দিন বড় অশান্তিতে ছিলাম।”
রুজাইফ কাঁধ থেকে ওর মাথা তুলে ওকে দেখলো-“হ্যাহ, মানে কি?”
সেঁজুতি লাজুক হাসলো-“আপনের রাগের মধ্যে ভালোবাসা থাকে। আমি বুঝি। আমার আপনের রাগ করাই ভালোলাগে।”
রুজাইফ বিস্মিত হলো-“তুমি ভালোবাসা বোঝ?”
সেঁজুতি মাথা দুলিয়ে বললো-“এই যে আপনের চোখ দুইটা সবসময় আমাকে খুঁজে, আমাকেই দেখতে চায় এইটাই ভালোবাসা।”
সমাপ্ত।
©Farhana_Yesmin