যে প্রেম হঠাৎ আসে পর্ব-০৬

0
132

#যে_প্রেম_হঠাৎ_আসে❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম.
– পর্ব:০৬

মধ্যরাতের বিষণ্ণরা আজ জ্বলেপুড়ে মরে। ইহানের বুকে আগুন ধরানো তীব্র অনুভূতিরা প্রতিশ্রুতি পাবার আশায় নির্ঘুম ঘোরে। ইহান বসে তার কক্ষের বেলকনি-ঘরে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। হৃদয় ছোঁয়া দীর্ঘশ্বাস। ঠোঁট ছুঁইয়ে উড়ায় কালো-ধোঁয়া কিছুক্ষণ পর পর। বুক জ্বালায় তাও থামে না। ফুঁকতেই থাকে। ইহান বাড়ি আসে কতক্ষণ আগে। বাড়ির ঢুকতেই মায়ের হাজারটা প্রশ্ন আবার বৃষ্টিতে ভিজলি কি করে?– ইহান থাকে নিরুত্তর। সে চুপচাপ নিজরুমে এসে পোশাক পাল্টে চলে আসে বেলকনিতে। বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও নেই তখন। রাস্তার কর্ণারে লম্ববেশে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যামপোস্টের মৃদুআলো দেখা যায় কেবল। ইহানের মনে প্রশ্ন জাগে, “প্রিয় মানুষটাকে নিজের করতে ঠিক কি করা উচিত?– কি করলে তাকে পুরোপুরি নিজের করা যায়?”

প্রশ্নগুলো মস্তিষ্কে জাগলেও উত্তর আসে না। হঠাৎ খটখট করে শব্দ হয়। কপাট খোলার শব্দ। অপরপাশের বেলকনি আসে। তবে কি অনুজা আসছে?–ইহান দ্রুত হাতের সিগারেট পায়ের কাছে ফেলে পিষে মারে। রুম জুড়ে অন্ধকার। ইহান লুকিয়ে পড়ে। আজ ইচ্ছে করছে না অনুজার সঙ্গে কথা বলতে। তবে আড়াল থেকে ঠিকই দেখে অনুজা এসেছে। ওই তো রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে প্রথমে তার বেলকনিকে দেখে। ইহান নেই মনে করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। এরপরই তাকায় থমকানো ওই আকাশ পথে। আচ্ছা! রোজ রাতে আকাশ দেখে কি মজা পায় অনুজা?– আকাশের বুকে আধোতেও কোনো মজার ব্যাপার আছে। সে তো রোজ রাতেই স্থির হয়ে থাকে। তবুও এই রাত্রীপ্রিয়া কি এত দেখে?– কি এত খোঁজে?– আকাশের বুকে খোঁজার মতো কি আছে? ইহান কল্পনায় সাজায়, কোনো এক মধ্যরাতে অনুজার ঘুম ভাঙিয়ে তাকে নিয়ে ছুটে যাবে বুড়িগঙ্গার নদীরঘাটে। তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বিশ্রী বুড়িগঙ্গার গন্ধ শুঁকবে। ইহান আনমনা হেঁসে ফেলে। কি অদ্ভুত কল্পনা? হঠাৎই অনুজার কণ্ঠ শোনা যায়। সে ইহানকে চমকে দিয়ে বলে,
“আমি জানি ইহান আপনি এখানেই আছেন। আর লুকিয়ে লুকিয়ে আমায় দেখছেন।”

ইহানের বিস্ময়ের শেষ রইল না অনুজার কথা শুনে। সে উঠে দাঁড়াল। অদ্ভুত স্বরে আওড়াল,
“আপনি আমায় সত্যি ভালোবাসেন না অনুজা?”

অনুজার থমথমে চেহারা। বিস্মিত মুখ। কণ্ঠে বিরক্তির ছোঁয়া। সে শুধায়,
“আশ্চর্য! এখানে ভালোবাসা আসলো কোথা থেকে?”
“আপনি বুঝলেন ক্যামন করে?– আমি এখানে আছি।”
“রোজ রাতের আপনার ওই সিগারেটের গন্ধে আমার মাথায় তীব্র জ্বালা ধরে। আমাকে ঘুমাতে দেয় না ইহান।”

ইহানের টনক নড়ে তক্ষৎণাৎ। থড়থড় করে বলে,
“আমার সিগারেট আপনায় কষ্ট দেয়– এ কথা আগে বলেননি কেন?”

অনুজার দ্রুত জবাব,
“বললে কি হত?– সিগারেট ছেড়ে দিতেন?”

অনুজার কথাটা বলতে দেরি হলো। ইহানের পকেটে থাকা নতুন সিগারেটের বাক্সটা ফেলতে দেরি হলো না। সে ফেলে দিল। অনুজা অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইল। মুখ ফসকে বলে উঠল,
“ফেলে দিলেন?”
“দিলাম।”
“কষ্ট লাগল না?”
“অনুজার কষ্টকে ইহান কখনোই সঙ্গে রাখবে না।”

অনুজা কিছু সময় চুপ করে রয়। তাকিয়ে রয় ইহানের মুখশ্রীর দিকে। ইহান তখন মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে। ইহান তাকাতেই অনুজা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। পিছে বদমাশ লোকটা কিছু ভাবে। সময় যায়। নীরবতারা জালের ন্যায় বিঁছে। তবুও শেষ করতে পারে না। তার আগেই ইহান বলে ওঠে, “মনে আছে তো অনু, পরশুর দিনটা আমায় দিবেন?”

অনুজার তক্ষৎণাৎ উত্তর আসে,
“আপনিও মনে রাখবেন, পছন্দ না হলে পিছুও ছাড়তে হবে।”

ইহান মিষ্টি হাসে। চমৎকার দেখায় সেই হাসি। অনুজা চেয়ে রয়। ইহান উৎফুল্লতা নিয়ে বলে,
“ধরার আগেই ছাড়ার প্রশ্নে কেমনে আসেন?”
“যেমনে আপনি হঠাৎ এসে অকারণেই প্রেমে ভাসেন।”
“শুনুন অবুঝ মেয়ে, প্রেমে পড়তে কারণ লাগে না– এতে প্রেমিকার আগমনী যথেষ্ট।”

অনুজা চোখ মুখ কুঁচকায়। অভিযোগী স্বরে আওড়ায়, “হুস, আমি আপনার প্রেমিকা নই।”

ইহান জবাব দেয় না। শুকনো হাসে।’


সূর্যের তীব্র আলোতে হকচকিয়ে উঠল অনুজা। কারণ সে তার বেলকনি-ঘরে দেয়াল এলিয়ে শুয়ে। অনুজা অবাক হয়। রাতে ইহানের সাথে কথা বলতে বলতে কখন ঘুমিয়ে গেল টের পেল না। অনুজা দ্রুত বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। ঘাড় নাড়ানো যাচ্ছে না। ব্যাথায় ‘আ’– জাতীয় শব্দ বের হলো মুখ দিয়ে। অনুজা ওপাশে থাকায়। ইহানের মাথার চুলের কিছু অংশ দেখা যায়। অনুজা হতভাগ। এমন কাণ্ড ঘটাল কি করে? অনুজা দ্রুত এলেমেলো হয়ে পড়ে থাকা ওড়নাটা উঠিয়ে ছুট লাগায় নিজ রুমে। শ্বাস ফেলে দম নেয়। বিছানায় তনুজাকে শুয়ে থাকতে দেখে আরোই শান্ত লাগে। ভাগ্যিস তনুজা টের পায় নি। সে সারারাত বেলকনিতে ছিল।’

তখন বেলা এগারোটা। আজকের ভার্সিটিতে ক্লাস না থাকায় অনুজা বাড়িতেই থাকে। দু’দিন হলো অনুজার বাবা বাড়ি নেই। কাজের সুবাদে চিটাগং গেছে। ফিরবেন আরো চারদিন পর। অনুজা দ্বিধায় আছে। কাল কি বলে বাড়ি থেকে বের হবে? তারওপর কাল শুক্রবার। প্রায় সব কাজকর্মই বন্ধ তার। অনুজা তাও ভেবেছে কাল সে যাবেই। ইহান আর যাইহোক বিশ্বস্ত মানুষ। এই সুযোগে যদি ইহানের পিছুটা ছাড়ানো যায় তবে ক্ষতি কি?”– অনুজার মায়ের কণ্ঠ শোনা যায়। তিনি রান্নাঘর থেকে বলেন,
“অনুজা দুটো পেঁয়াজ কাটতো?– আমি যা কেটে ছিলাম তাতে হয়নি। কম পড়েছে।”

অনুজা তক্ষৎণাৎ সোফা থেকে নামল। ঝাঁপি থেকে দুটো পেঁয়াজ নিয়ে কাটা শুরু করল। অনুজার মা ক্লান্ত হয়ে ফ্যানের নিচে বসেন। গায়ের ঘাম মুছতে মুছতে বলেন, “কাল বৃষ্টি নামল। তবুও গরম কমলো না। দেখছিস?”

অনুজা পেঁয়াজ কুচাতে কুচাতে জবাব দিল, “হুম।”
কিছুসময় চুপচাপ রইল সব। অনুজা তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ ডাকল, “মা, শোনো?”

অনুজার মা ঘুরে তাকালেন। সাথে সাথে জবাব দিলেন, “হুম বল।”

অনুজা মায়ের দিকে তাকিয়ে রয়। মিথ্যে বলতে খারাপ লাগছে। অনুজার মা বেশ আগ্রহ নিয়ে বলেন, “কি হলো?– কথা বলছিস না কেন?”

অনুজা পেয়াজ কুচিয়ে বাটিতে রাখে। শান্ত স্বরে বলে, “মা, আমরা বন্ধুরা কয়জন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি কাল কোথাও ঘুরতে যাব। ফিরব সন্ধ্যার সময়। তুমি প্লিজ বাবাকে বলো না। আমি যাব ঘুরেফুড়ে চলে আসব।”

সাহানা বেগম চুপ করে রইলেন। কি বলবেন বুঝতে পারছেন না?– অনুজা মাথা নুইয়ে বলে,
“মা, যাই?”

সাহানা বেগম আরো কিছু সময় পর চুপ থেকে বলেন, “ঠিক আছে।”

অনুজা সঙ্গে সঙ্গে খুশি হয়ে গেল। অনুজা সচরাচর কোথাও যায় না। গেলে যা একটু বন্ধুদের সাথে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফেতে যায়। তাও খুব কম। তাই তো মেয়ের আজকের আবদারে রাজি হলেন সাহানা বেগম। জীবনে একটু তো ঘোরাঘুরির দরকার আছে। তবুও ভয় লাগে। মেয়ে তো।”

অনুজা মাকে জড়িয়ে ধরে আচমকা। খুশি মনে জানায়, “তুমি খুব ভালো মা?”

অনুজার মাথায় হাত বুলান সাহানা বেগম। মিষ্টি হেঁসে বলেন, “কয়টায় যাবি?”

প্রশ্ন শুনে দ্বিধায় পড়ে অনুজা। এই প্রশ্নটা তো করা হয়নি ইহানকে। অনুজা কিছু ভেবে উত্তর দেয়,
“ঠিক হয়নি মা। তবে রাতের মধ্যে ঠিক হবে।”
“ওহ আচ্ছা।”


সেই সন্ধ্যা থেকে ব্যাগ গোছাচ্ছে ইহান। কি এত গোছাচ্ছে নিজেও জানে না। একবার ব্যাগে কিছু নিচ্ছে। আবার কিছু সময় পর বের করছে। অস্থির আর পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। এতটা এক্সাইটেড হওয়ার মতো কিছু কি ঘটছে?’ হঠাৎ কারো কাশির শব্দ শোনা যায়। ইহান বুঝতে পারে অনুজা এসেছে। ইহান দেরি করে না। দ্রুত ছুটে যায় বেলকনি-ঘরে। সত্যি সত্যিই অনুজাকে দাঁড়াতে দেখে খুশি হয়। অনুজাই আগে বলে,
“আমার কিছু জানার ছিল?”

ইহান তড়িৎ হাসিমুখে জবাব দেয়,
“জি বলুন।”
“কাল আমরা কয়টায় যাচ্ছি?”
“যে কয়টা থেকে আপনি আমায় সহ্য করতে চাইবেন।”
“তবে সকাল সাতটা।”
“ওটা খুব দেরি হচ্ছে না।”
“তাহলে সাড়ে ছ’টা।”

ইহান ‘না’ বোধক মাথা নাড়ায়। ঘোর অভিযোগ জানিয়ে শীতল স্বরে আওড়ায়,
“উহু, ভোর ছ’টা।”

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️.