যে প্রেম হঠাৎ আসে পর্ব-০৮

0
111

#যে_প্রেম_হঠাৎ_আসে❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম.
– পর্ব:০৮

মুখ ভাড় করে পা ঝুলিয়ে ভ্যানের সামনে বসে আছে অনুজা। ভ্যান ছুটছে তার আপন গতিতে। অনুজার পাশেই পা ঝুলিয়ে বসে আছে ইহান। মুখ জুড়ে তার রহস্যময়ী হাসি। যেন অনুজাকে দমাতে পেরে খুব ভালো লাগছে। অনুজা কিছুক্ষণ পর পর ইহানের দিকে তাকাচ্ছে। যা দেখে ইহান শুধু হাসে। অনুজা বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে,
“হাসাহাসি বন্ধ করুন ইহান, আপনার হাসিতে আমার অসহ্য লাগে।”

ইহান হাসি থামালো না। উল্টো বলল,
“আপনাকে অসহ্যকর অনুভূতি দেয়ার জন্য হলেও আমি বার বার হাসব অনু।”

অনুজা চোখ রাঙিয়ে তাকায়। কিছু বলে না। কিছু সময় পর বিরক্ত নিয়ে আবার রাস্তার দিকে তাকায়। সারি সারি গাছ পেরিয়ে তারা ছুটছে। একটু একটু করে প্রকৃতিতে রোদ্দুরের ছোঁয়া পড়ছে। বাতাস বইছে চারিপাশে। অনুজা বেশক্ষণ চুপ থেকে বুঝতে পারল তার বেশ লাগছে। ভ্যানে চড়তে তার দারুণ লাগছে। পিচঢালা রাস্তায় দ্বিধাহীন কি সুন্দর!– তারা যাচ্ছে। সারি সারি গাছের ছায়ারা তাদের আদর করছে। মাথার ওপর সাদা আকাশটা কেমন যেন খিলখিলিয়ে হাসছে। অনুজা হঠাৎ আনমনা হাসল। মাথায় ছোঁয়ানো ঘোমটাটা মৃদু নেমে পড়ল। বাতাস ছুঁইল চুল। অনুজা ঠাহরে আনলো না তা। তবুও মিষ্টি হাসল। সবুজের বুকে চোখ বুলালো বার বার। ইহান পুরোটা সময় অনুজার দিকে তাকিয়ে রইল। অবুঝ মেয়েটার কাণ্ড দেখল। কে বলবে– কতক্ষণ আগে ভয় পাব বলে ভ্যানে উঠতে বারণ করছিল? মুখ ভাড় করেছিল নিমিষেই। ইহান সটান হয়ে শুয়ে পড়ল ভ্যানে। চোখ বন্ধ করে বলল,
“ওহে শূন্য পৃথিবী, তুমি কেন দেও না তাকে? – যাকে আমি চাই। যার মায়ায় প্রতিক্ষণে নিজেকে হারাই।”

ভ্যানের যাত্রা চললো ত্রিশ মিনিট। এরপরই ইহান অনুজা নামল। তাও ফাঁকা রাস্তায়। দূরদূরান্তে কিছুর দেখা নাই। অনুজা বেশ অবাক হয়ে বলল,“আমরা এখানে নামলাম কেন?”

ইহান ভ্যান চালকের ভাড়া দিতে দিতে বলল,
“কারণ এখানে আমাদের কেউ নিতে আসবে।”

অনুজার বিস্ময়ের শেষ রইল না। ইহান তাদের মাঝে কাউকে ডাকবে এটা ভাবেনি অনুজা। অনুজা খুব একটা না ভেবেই বলল, “ওহ আচ্ছা।”

ভ্যানচালক চলে গেল। ইহান অনুজা দাড়িয়ে। তীব্র রোদের ঝলকানি ধীরে ধীরে বাড়ে। গরম লাগা শুরু করে মুহুর্তেই। অনুজা কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে,“কখন আসবে নিতে?”

ইহান আশপাশ দেখে বলে,“শীঘ্রই।”
অনুজা বিরক্তবোধ করে,
“একটা কল করছেন না কেন?”
“সে কি! আমার খালাতো ভাই লাগে যে কল করব। আর তাছাড়া তার ফোন নম্বর নেই আমার কাছে।”
“অদ্ভুত তো। যে আসবে সে নিশ্চয়ই আপনার পরিচিত কেউ। ফোন নাম্বার রাখবেন না?”

ইহানের তড়িৎ উত্তর,“প্রয়োজন মনে হয়নি।”
অনুজা কিছু বলতে পারল না। এই ইহানের কার্যকলাপ তার মাথায় ঢুকে না। আচমকাই গায়ে বাতাসের স্পর্শ লাগতেই অনুজার ভালো লাগা শুরু হয়। ক্লান্ত ভাবটা খানিক হলেও কমে। ঘড়িতে মাত্র সকাল আটটা। অথচ গরম কি পরিমাণ লাগছিল?” তারা গাছের ছাউনিতে থাকলেও বাতাস ছিল না আশপাশে। অনুজা ফিরে তাকায়। দেখতে পায় ইহান একটা ছোট্ট হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে। অনুজা বিব্রতবোধ হয়। মানা করতে গেলেও ইহান বাঁধা দেয়। শীতল স্বরে আওড়ায়, “আপনার কষ্ট হোক এ আমি চাই না অনু, তাই বারণ করবেন না প্লিজ।”

অনুজা মেনে নিলো। মিনিট পাঁচেক সময় আরো গেল। হঠাৎ বাসের শব্দ শোনা যায়। অনুজা তড়িৎ চমকে ওঠে। তার কেন যেন মনে হয় ইহান তাদের জন্য বাসের ব্যবস্থাই করেছে। তবুও বুঝ দেয় হবে না হয়তো।’

বাস এসে সোজা ইহানদের সামনে থামে। ইহান বলে,“এতক্ষণ দেরি করে কেউ?”

কনডাক্টর হেঁসে বলে,“যাত্রী নামাইতে উঠাইতে আছিলাম ভাই।”

ইহান আর অভিযোগ জানাল না। বলল,
“আমি যে সিট রেখেছিলাম রাখা হয়েছে তো?”
“জি ভাই।”
“ঠিক আছে। চলুন অনুজা।”

অনুজা হেঁটে যায়। কিন্তু ঘাপলাটা বাজল তখন যখন ইহান তাকে বলল,“অনু আমরা বাসের ছাঁদে করে যাব।”

অনুজার সে কি?– থমকানো চাহনি। এ ছেলে নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে। না হলে এমন ভয়ংকর কথা কেউ বলে। কনডাক্টর ইহানের কাঁধের ব্যাগটা ছাঁদে রেখে বলে, “যান ভাই।”

ইহান বলল, “আচ্ছা।”
অনুজা চোখ রাঙিয়ে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে। যার অর্থ হচ্ছে, ‘সে যাবে না।’ অনুজার চাহনি ইহান বেশ বুঝতে পেরেছে। তবুও বলল,
“কি হলো অনু? আসুন। আমাদের দেরি হচ্ছে।”
“আপনি কি আমাকে মারার পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন ইহান?”
“আপনাকে মারার আগে আমার মৃত্যু হোক অনু।”
“দেখুন কথার মায়ায় ফেলা বন্ধ করুন।”
“যে গোটা আমিটার মায়ায় পড়ল না, সে কি করে?– সামান্য কথার মায়ায় পড়ার ভয় পাচ্ছে।”
“আমি কোনো ভয় পাচ্ছি না ইহান।”
“তাহলে দাঁড়িয়ে কেন আছেন?– উঠুন জলদি।”
“আমি বাসের ছাঁদে কিছুতেই উঠব না ইহান।”
“আপনি কিন্তু আবার দেরি করছেন অনু?”
“দেরি করলে করছি– একটা দিন দিয়েছি বলে যা খুশি তাই করবেন নাকি।”
“আমি কিন্তু কিছুই করি নি অনু, খামোখা অভিযোগ দিবেন না।”

বাস কনডাক্টর তাড়া দিচ্ছেন। এভাবে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে তারা। বাসের যাত্রীরাও বিরক্তবোধ করছে এখন। ইহান আবার কপাল চুলকাল। বেশ ভাব নিয়ে বলল,“আজকের রাতটাও তবে আমি নিয়ে নিলাম অনু। কনডাক্টরকে বলছি, আমার ব্যাগটাকে নামিয়ে দিতে।

এইবলে উচ্চ আওয়াজে ডাকল ইহান,“কনডাক্টর!”

প্রায় মিনিট পাঁচেক সময় লাগল অনুজার বাসের ছাঁদে উঠতে। প্রতিটি পা উপরে ওঠার ক্ষেত্রে অনুজার ইচ্ছে করছিল ইহানের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। বার বার শুধু রাত নিয়ে নিবে বলে ভয় দেখাচ্ছে। আর অদ্ভুত বিষয় অনুজাও ভয় পাচ্ছে।’

ইহান উঠল তার আরো পাঁচমিনিট পর। সে যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে কনডাক্টরের হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিল। এবং বলল, “এটা এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার জন্য।”

কনডাক্টর নিতে চায়নি। তবুও ইহান জোড় করে দিল। বাস চলতে শুরু করল। অনুজার বুক কাঁপে। তার মনে হয় এই বুঝি বাস উল্টে পড়বে নিচে। অনুজার ভয়ার্ত লাগে। সে বলে,
“এমনটা কেন করলেন ইহান?– বাসের ভিতর দিয়ে গেলে কি হতো?”
“আজীবন তো বাসের ভিতর দিয়েই গেলেন। আজ না হয় একটু ভিন্নভাবে যান। কথা দিচ্ছি খারাপ লাগবে না।”

অনুজা চুপ হয়ে যায়। হঠাৎই কানে ইয়ারফুন দেয়ার অনুভূতি আসে। অনুজা ঘুরে তাকায়। ইহান সঙ্গে সঙ্গে বলে, “হুস, নড়ে না।”

অনুজা থেমে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই কানে বাজে কিছু সুন্দর প্রাকৃতিক শব্দ। টুংটাং টু। টুংটাং টুং। নিরিবিলি কিছু টোন। শব্দদের ঝলকানি।’

বাসের গতি ধীরে ধীরে বাড়ে। অনুজার ভয়ার্ত লাগে। তবুও সে থাকে শান্ত। নিরিবিলি। চুপচাপ। অনুজা অনুভব করে সুন্দর সময়। সুন্দর প্রকৃতি। নীল আকাশের বুকে উড়ে চলা একঝাক পাখির ছুঁটে চলার দৃশ্য। বাতাসে তার সমস্ত শরীর নাড়িয়ে দেয়ার অনুভূতি। সে বড় ভয় মিশ্রিত দারুণ অনুভূতি। ইহান তাকিয়ে থাকে অনুজার দিকে। হাত ধরতে ইচ্ছে হয়। তবুও হাত ধরার সাহস দেখানো যায় না। এ যে বিশ্বাসে ব্যঘাত দেয়ার বড় অস্ত্র। ইহান দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আচমকাই সামনের একগাছের ডাল সামনে আসতেই না চাইতেও অনুজার মাথা ধরে নুইয়ে দেয় ইহান। বিস্মিত কণ্ঠে আওড়ায়,“সাবধান।”

অনুজা অবাক হয়। বুঝতে পারে। চেয়ে রয় ইহানের মুখশ্রীর দেখে। সময় যায় কিছুক্ষণ। এরপরই দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে।’


টানা দেড় ঘন্টার বাসযাত্রা শেষ করে ইহান অনুজা নামে। ইহান বাসচালক ও কনডাক্টরকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজ গন্তব্যে ছোটে। অনুজা যায় তার পিছু পিছু। অজানা এক কারণে তার খুব ভালো লাগছে। খুব বেশিই ভালো লাগছে। ইহান হাঁটা পথে হঠাৎ বলে,“আপনি আমার সাথে অন্যায় করছেন অনু?”

অনুজার পা থেমে গেল। থমকে দাড়িয়ে পড়ল। চোখের পলক ফেলল বার কয়েক। বেশ বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন করল, “মানে?”

ইহানের তড়িৎ উত্তর,
“এই যে আপনি হাসছেন, আনমনা হাসছেন। আমার হৃদয় ভেঙেচুরে যাচ্ছে। যন্ত্রণায় সারা অঙ্গ থরথর করে কাঁপছে। অথচ আপনি টের পাচ্ছেন না। এ কি?– অন্যায় নয়।”

অনুজা চেয়ে রয়। কথার অর্থ বুঝতে পারে। তবুও নির্বিকার ভঙ্গিমায় তাকিয়ে থাকে। উত্তর দেয় না।”

#চলবে…

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️.