রক্তিম পূর্ণিমা পর্ব-০৯

0
62

#রক্তিম_পূর্ণিমা
#পর্ব_৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি

পলক সারা রাস্তায় এটা ভাবতে ভাবতে এসেছে যে কিভাবে সে জান্নাতের সাথে আশরাফের বিয়েটা ভাঙবে। যে ভাবেই হোক না কেন এবার সে তার ভাইকে আর কোন কষ্ট পেতে দিবে না। এজন্য এই বিয়েটা আটকানো খুব জরুরি। হাজারবার ভাবার পর পলকের মাথায় একটি নামই এসেছে। আর সেটা হলো মেহরাজ। আশরাফ ও মেহরাজের দা-কুমড়া সম্পর্ক নিয়ে তো সবাইকে আর নতুন করে কিছু জানানোর নেই। ক্যাম্পাসের সবাই জানে তারা একে অপরের কত বড় শত্রু। তাই পলকের কাছে মনে হলো, এই বিষয়ে তাকে কেবল মেহরাজ চৌধুরীই সাহায্য করতে পারে। তাই সে ভাবল যে করেই হোক মেহরাজ চৌধুরীর সাথে দেখা করতে যাবে। এদিকে ফারিয়া পলককে আনমনে কোন একটা চিন্তায় মগ্ন থাকতে দেখে বিরক্ত হয়ে বলল,
“তখন থেকে এত কি ভাবছিস রে? কোন বুদ্ধি বের হলো তোর মাথা থেকে? কিভাবে তোর ভাইয়ের সাথে ঐ মেডিকেল স্টুডেন্টকে মিলিয়ে দিবি?”

“এখনো কোন সলিড উপায় খুঁজে পাইনি। কিন্তু আমি যেকোন কিছুর বিনিময়ে হলেও ওদের মিলিয়ে দেবোই। আমি চাই, আমার ভাই তার ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখী হোক। আমি চাই না,ভালোবাসার ব্যর্থতা আমার ভালো মানুষ ভাইটাকে বদলে দিক। যার প্রভাবে সে নিজের জন্মদাতা মা-বাবা এমনকি বোনকেও পর করে দিক।”

ফারিয়া পলকের মুখে এহেন কথা শুনে বলে,
“তুই তো এমনভাবে কথা বলছিস যেন তুই আগেই দেখেছিস, তোর ভাইয়ের সাথে তার ভালোবাসার মানুষের বিয়েটা নাহলে কি কি হতে পারে!”

পলক চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। মনে করে, রুহানির করা অন্যায়ে পাভেল কিভাবে চুপ থেকে তাকে নীরবে সমর্থন করে। এসব ভেবেই পলক বলে,
“মনে কর, আমি ভবিষ্যতটা দেখেছি জন্যই বর্তমানটা পরিবর্তন করতে চাই। যাতে ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়।”

ফারিয়া পুরো হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। পলক বলে ওঠে,
“আমাদের এখন পরবর্তী স্টেপ নেয়া উচিৎ। আমাকে এখনই একজনের ঠিকানা লাগবে। তোর বাবা মনে হয় তার ঠিকানা জানে। তুই একটু জোগাড় করে দে তো।”

“কার ঠিকানা?”

“মেহরাজ চৌধুরী।”

“আমার বাবা কি করে তার ঠিকানা জানবে?”

“তুই কল করেই জেনে নে না।”

অগত্যা ফারিয়া তার বাবাকে ফোন করে। একটু আধটু কথা বলে ঠিকানা জিজ্ঞেস কর‍তেই তার বাবা গড়গড় করে বলে দেয়। ফারিয়া তো পুরোপুরি অবাক হয়ে যায়। সে তো জানতোও না তার ভার্সিটির সিনিয়র মেহরাজ চৌধুরীকে তার বাবা চেনে। কল রেখেই ফারিয়া পলককে জিজ্ঞেস করে,
“বাবা ওনাকে কিভাবে চেনে রে? আর তুইওবা এটা কিভাবে জানলি?”

পলক হেসে বলে,
“তোর বাবা তো মেহরাজ চৌধুরীর স্কুল টিচার ছিলেন। উনি তোর বাবার প্রিয় ছাত্র ছিলেন। আর আমি এসব কিভাবে জানলাম সেটা নাহয় সিক্রেটই থাক।”

ফারিয়া আর কিছু বলে না। অতঃপর ওরা দুজন ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছে যায় মেহরাজ চৌধুরীর আবাসে। “চৌধুরী ম্যানশন” এর সামনে যেতেই তো ফারিয়া আশ্চর্য হয়ে যায়। বাড়িটা সত্যিই অনেক সুন্দর। কি বিশাল ডুপ্লেক্স বাড়ি। পলক অবশ্য খুব একটা অবাক হয় না। কারণ সে অতীতে একবার এখানে এসেছিল। কেন এসেছিল সেই কথাটা মনে পড়তেই বুকের বাঁ-পাশে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভূত হয়।

এরইমধ্যে তারা দুজনে দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেল চাপে। কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়। মেয়েটির পরনে একটা হোয়াইট গেঞ্জি আর টাইট জিন্স। ফারিয়া তো মেয়েটাকে দেখেই অবাক হয়। সেদিন যেই মেয়েটাকে এত শালীন পোশাকে দেখেছিল আজ তার এ কি দশা! সে তো মুখ ফসকে বলেই দেয়,
“মুসকান তুমি এসব কি পড়েছ?”

মেয়েটি কিছু বলার আগেই পলক বলে,
“এটা মুসকান নয়, মুসকানের জমজ বোন মুমতা।”

মুমতা এবার আড়চোখে পলকের দিকে তাকায়। তার মনে পড়ে যায় এটাই তো সেই মেয়ে যে সেদিন তার ভাইয়ের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছিল। মুমতা বেশ উগ্রভাবেই বলে,
“কারা তোমরা? আর এখানে কি চাই?”

“আমি পলক, আর ও আমার ফ্রেন্ড ফারিয়া। আমরা এখানে এসেছি কিছু জরুরি কাজে। মেহরাজ চৌধুরীর সাথে একটু কথা ছিল।”

মুমতা বেশ অভদ্র‍তার সহিত বলে,
“আমার ভাইয়া এভাবে যারতার সাথে দেখা করে না। ইউ ক্যান গো।”

ফারিয়া ভীষণ অপমানিত বোধ করে। পলকের খারাপ লাগলেও সে শান্ত থাকে। কারণ সে মুমতার সম্পর্কে অবগত। এরইমধ্যে মুসকান সেখানে চলে এসে মুমতাকে বলে,
“ছি মুমতা! ঘরে আসা মেহমানের সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে? তোর মধ্যে কোন ম্যানার্স নেই। ওনাদের ভেতরে আসতে বল।”

“আমার তোর মতো এত নেকামো করার স্বভাব নেই মুসকান। তোর নেকামি করার ইচ্ছা হলে তুই ওদের ভেতরে নিয়ে গিয়ে নেকামি কর। আমার দ্বারা এসব হয় না।”

বলেই মুমতা পলক ও ফারিয়াকে পাশ কাটিয়ে বাড়ির বাইরে চলে যায়। মুমতা চলে যেতেই মুসকান বিনয়ী সুরে বলে ওঠে,
“তোমরা প্লিজ ওর কথায় কিছু মনে করো না। ও একটু অন্যরকম। ভেতরে এসো।”

ফারিয়া বলে,
“তুমি এত ভালো, তোমার যমজ বোনটা এত খারুচ কেন?”

মুসকান হেসে বলে,
“ও কিন্তু ওতোটা খারাপ নয়। মনের দিক দিয়ে যথেষ্ট ভালো। শুধু একটু উগ্রভাবে কথা বলে এই যা। নাহলে কেউ কোন বিপদে পড়লে ঐ সবার আগে এগিয়ে যায়। আমি তো ভীতু, তাই সবসময় বিপদ থেকে পালিয়ে বাঁচি।”

পলক ও ফারিয়া বাইরে আসতেই মুসকান তাদেরকে বলে,
“তোমরা এখানে কেন এসেছ? কোন কি প্রয়োজন?”

“আমরা একটু মেহরাজ চৌধুরীর সাথে জরুরি কথা বলব। তাকে সাথে কি একটু দেখা কএয়া যাবে?”

“ভাইয়ার সাথে? একটু দাঁড়াও, আমি ভাইয়াকে ডেকে দিচ্ছি।”

বলেই মুসকান সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়। একটু পরেই নিচে এসে বলে,
“ভাইয়া আসছে। একটু ওয়েট করো।”

তন্মধ্যে মেহরাজ চৌধুরীও ঢলতে ঢলতে নিচে চলে আসে। তার পরণে একটা কালো শার্ট ও প্যান্ট। পলক তো মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলে,
“কালো পোশাকে লোকটাকে কতই না সুন্দর লাগে!”

মেহরাজ এসেই তাদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“বলো, কি বলার আছে।”

পলক বলে,
“আমার আপনার সাহায্যের প্রয়োজন।”

“কি সাহায্য?”

“আপনাকে বিয়ে বাড়ি থেকে বউ পালিয়ে আনতে সাহায্য করতে হবে।”

“হোয়াট? আর ইউ ম্যাড? তোমার কি আমাকে কোন গুণ্ডা মনে হয় যে এসব করব?”

“কার বউ সেটা তো আগে শুনুন।”

“কার বউ?”

“আপনার শত্রু আশরাফের। বলুন রাজি তো?”

এবার মেহরাজ একটু আগ্রহ নিয়ে বলে,
“একটু বুঝিয়ে বলো।”

“আশরাফের সাথে তার চাচাতো বোন জান্নাতের বিয়ে ঠিক হয়েছে৷ কিন্তু জান্নাতকে আমার ভাই পাভেল ভালোবাসে। আর তাই,,”

“ওহ, বুঝেছি। আমাকে একটু ভাবতে দাও। ভেবে বলছি সাহায্য করব কিনা।”

“আমি জানি, আপনি সাহায্য করবেন। এটুকু বিশ্বাস আমার আপনার উপর আছে।”

মেহরাজ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে এ কথা শুনে পলকের দিকে। পলক আর না দাঁড়িয়ে ফারিয়াকে সাথে নিয়ে বিদায় নেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨