রক্তিম পূর্ণিমা পর্ব-১৩

0
113

#রক্তিম_পূর্ণিমা
#পর্ব_১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

পলক আজ তড়িঘড়ি করে ভার্সিটিতে চলে আসে। সেখানে এসেই ফারিয়াকে খুঁজতে থাকে। আসার সময় ফারিয়াকে কল করেছিল কিন্তু সে ফোনকলটা রিসিভ করেনি। ফারিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ করেই আরাফাতের মুখোমুখি হয়ে যায় পলক। আরাফাতকে দেখেই সে চোখমুখ কুচকে ফেলে। আরাফাতকে পাশ কাটিয়ে যেতে নেবে কি এমন সময় আরাফাত তার হাতটা ধরে ফেলে বলে,
“কোথায় ছিলে তুমি সুইটহার্ট? তোমাকেই তো খুঁজে চলেছিলাম এত সময় ধরে।”

পলক এক ঝটকায় নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে আরাফাতকে ঠাস করে একটা থা**প্পড় মে*রে বলে,
“তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে স্পর্শ করার?”

আরাফাত রাগ এবং বিস্ময় নিয়ে বলল,
“তুমি আমায় মারলে? আর সাহসের কথা বলছ, বিগত ৩ মাস থেকে আমরা একে অপরের সাথে রিলেশনে আছি। এই ৩ মাসে তো কতবার তোমার হাত ধরেছি। কই, আগে কখনো তো এভাবে রিয়্যাক্ট করোনি। তাহলে আজ কি হলো?”

আরাফাতের কথা শুনে পলক হতবাক হয়ে যায়। এরইমধ্যে সেখানে ফারিয়া চলে আসায় পলক ফারিয়ার কাছে যায়৷ আরাফাতও রেগেমেগে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিজের বন্ধু জাহিদের কাছে গিয়ে বলে,
“দেখলি, পলকের ব্যবহারটা দেখলি? ভেবেছিলাম এই মেয়েকে নিয়ে আমি সিরিয়াস হবো৷ কিন্তু এর যা ব্যবহার দেখছি,,”

“হয়তো কোন কারণে মুড অফ। তুই এত চিন্তা করিস না।”

“এর শোধ আমি তুলবোই। দেখিস, এমন ব্যবস্থা করব যে আমার পায়ে এসে পড়বে। আজকেই ওর সাথে ব্রেকাপ করে নেব। তারপর বুঝবে মজা।”

পলক এসে ফারিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
“ঐ আরাফাত এসব কি বলছ রে? আমি নাকি ওর সাথে রিলেশনে আছি।”

“হুম, আছিসই তো। কেন, তোর আবার কি হলো? স্মৃতি হারিয়ে ফেললি নাকি?!”

পলকের মনে পড়ে সে অতীতের সময়ে চার মাসে আগে চলে এসেছে। মানে এই চার মাসে যা কিছু হয়েছে সব কিছু অতীতের পলকের দ্বারা হয়েছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বর্তমানের পলক এসব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। পলক নিজের মাথা চাপড়ে বলে,
“অনেক বড় ব্লান্ডার হয়ে গেছে। এখন আমাকে আবার সব ঠিকঠাক করে নিতে হবে।”

এরইমধ্যে আরাফাত এগিয়ে এসে পলককে বলে,
“আমি আজ এই মুহুর্তে তোমার সাথে ব্রেকাপ করে নিচ্ছি। আজ থেকে তোমার সাথে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই।”

পলক হাসিতে ফেটে পড়ে।

“আরে তুমি আমার সাথে কি ব্রেকাপ করবে। তোমার উপর এমনিও আমার কোন আগ্রহ নেই। কোন কুক্ষণে যে তোমার সাথে রিলেশনে গেছিলাম আল্লাহই জানে। কাঁচকে হিরা ভেবে ভুল করেছিলাম। তুমি আমাকে ডিজার্ভই করো না। যাও তো আমার সামনে থেকে।”

আরাফাত ফুঁসতে ফুঁসতে স্থান ত্যাগ করে। আরাফাত চলে যেতেই ফারিয়া পলককে বলে,
“কি হয়েছে বল তো? তোদের এত লাভি ডাবি সম্পর্ক! তুই তো আরাফাতকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতি বলতি, তাহলে আজ হঠাৎ এভাবে বললি যে?”

“জানিস, ফারিয়া। আমরা জীবনে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেই সবসময় ভুল করি। যার জন্য আমাদের অনেক সাফার করতে হয়৷ তবে যদি আমরা জীবনে দ্বিতীয়বার কখনো সুযোগ পাই তো সেই সব ভুল শোধরাতে চাই। মনে কর, আমার সাথেও এখন তেমনই হয়েছে। আর এখন আমি শুধু নিজের না, নিজের প্রিয় মানুষদেরও ভুল শুধরে দেব।”

ফারিয়া পলকের কথার আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। পলক একটু সামনে তাকাতেই দেখতে পায় মেহরাজ এদিকেই আসছে। মেহরাজকে দেখে সে হাসিমুখে তার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছেন, মেহরাজ ভাই?”

কিন্তু মেহরাজ পলককে সম্পূর্ণ ইগ্নোর করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পলকের ভীষণ খারাপ লাগে এই ব্যাপারটা। সে ফারিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
“মেহরাজ ভাই আমায় এভাবে ইগ্নোর করলেন কেন?”

“ইগ্নোর করবে না তো কি? তুই কি করেছিলি ওনার সাথে মনে নেই? তোর সদ্য এক্স বয়ফ্রেন্ডের জন্য ক্যাম্পাস ভর্তি সবার সামনে সেদিন ওনাকে কি অপমানটাই না করলি। তোর চোখে তো আরাফাত একদম ফেরেস্তা ছিল যে কোন অন্যায় করতেই পারে না। মেহরাজ ভাই তোর জন্য, তোর পরিবারের জন্য কত কি করল, ঐ জুয়েল, আশরাফদের থেকে তোদের রক্ষা করল। তার বিনিময়ে তুই এই প্রতিদান দিলি। আমিও তো এজন্য সেদিন থেকে তোর উপর রেগে আছি৷ আজ তো তুই বুঝতে পারলি ঐ আরাফাত আসলে কেমন। এখন যা গিয়ে মেহরাজ ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চা।”

পলক ব্যথিত স্বরে বলে,
“ক্ষমা তো আমাকে চেতেই হবে ফারিয়া। ঐ লোকটার সাথে অতীতেও আমি অন্যায় করেছিলাম। সবকিছুর জন্য আমি ক্ষমা চাইবো। তবে তার আগে আমার তোর সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”

“হুম, বল।”

“তুই রুশাদকে কবে তোর মনের কথা জানাবি?”

ফারিয়া থতমত খেয়ে বলে,
“আমার মনের কথা মানে?”

“দেখ, বেশি নাটক করিস না আমার সামনে। আমি সবটাই জানি। তুই সেই কলেজ লাইফ থেকেই রুশাদকে ভালোবাসিস। তাহলে ওকে এখনো নিজের মনের কথা জানাচ্ছিস না কেন?”

ফারিয়া আর সত্যিটা অস্বীকার করে না। বলে,
‘হ্যাঁ, আমি ভালোবাসি রুশাদকে। কিন্তু ওকে এটা জানাতে ভয় হয়। যদি ও আমায় মুখের উপর না বলে দেয়, তাহলে আমি সেটা সহ্য করতে পারব না। আর আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্বটাও শেষ হয়ে যাবে।’

“তুই এত নেগেটিভ চিন্তাভাবনা করিস না ফারিয়া। এমনটাও তো হতে পারে যে, রুশাদও তোকে ভালোবাসে!”

“ওকে দেখে তো এমন মনে হয়না। দেখিস না৷ সবসময় কেমন আমার পেছনে লাগে। আমাকে অপমান করার বাহানা খুঁজে। যদি ভালোবাসত তাহলে কি এমন কর‍তো?”

“এমনো তো হতে পারে, ভালোবাসা থেকেই এসব করে। তুই একবার সাহস করে নিজের মনের কথাটা রুশাদকে জানা। যাতে খুব বেশি দেরি না হয়ে যায়। নাহলে দেখবি ভবিষ্যতে তোকে এরজন্য অনেক পস্তাতে হবে।”

ফারিয়া বলে,
“আমার কি সত্যিই রুশাদকে সবটা জানানো উচিৎ?”

‘হুম।’

“আচ্ছা,আমাকে একটু সাহস সঞ্চয় করতে দে।”

“ঠিক আছে৷ কর। তবে শুধু মনের কথা জানালেই হবে না। ভালোবাসলে সেই ভালোবাসাটা সঠিক ভাবে পালনও করতে হবে। যদি কখনো এমন পরিস্থিতি আসে যে, রুশাদ বেকার জন্য তোর পরিবার ওকে মেনে নিচ্ছে না এবং অন্য যায়গায় তোর বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে তখন তোকে তোর পরিবারকে বোঝাতে হবে, যদি তোর পরিবার না বোঝে তবুও তুই রুশাদের হাত ছাড়বি না। আমি জানি, রুশাদই তোকে সর্বোচ্চ সুখে রাখবে। তোরা একসাথে জীবনে অনেক সুখী হবি।”

ফারিয়া পলককে বলে,
“তোকে দেখে আমার কি মনে হচ্ছে জানিস, মনে হচ্ছে তুই আমার ভবিষ্যতটা দেখে নিয়েছিস। আর তাই আমাকে পরামর্শ দিচ্ছিস, যাতে করে আমি নিজের ভবিষ্যতটা বদলে দিতে পারি।”

“ধরে নে এমনই।”

কথাটা বলেই পলক অতীতের পাতায় হারিয়ে যায়। মনে করে, ফারিয়ার বাড়িতে জুয়েল সম্মন্ধ পাঠানোর একদিন আগেই রুশাদ ফারিয়াকে প্রপোজ করেছিল। ফারিয়া তখন তাৎক্ষণিক কোন উত্তর দেয়নি। এরপর জুয়েল সম্মন্ধ পাঠাতেই বড়লোক ঘর দেখে ফারিয়ার বাবা-মা সেখানে তার বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লাগে। ফারিয়া অনেক সাহস করে রুশাদের কথা তাদেরকে জানালেও রুশাদ তখন অব্দি বেকার এবং মধ্যবিত্ত জন্য ফারিয়ার পরিবার রুশাদকে প্রত্যাখ্যান করে। এরপর রুশাদ নিজের পরিবারকে মানিয়েও ফারিয়ার বাড়িতে গেছিল কিন্তু ফারিয়ার মা-বাবা বেকার ছেলের হাতে মেয়েকে দিতে চায়না।

ফারিয়াও নিজের মা-বাবার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে রুশাদকে ফিরিয়ে দেয়। কারণ তার মধ্যে এত সাহস ছিলনা যে সে নিজের পরিবারের বিপক্ষে যাবে। এসব মনে করেই পলক বলে,
“এবার তোকে সাহসী গড়ে তোলার দায়িত্ব আমার। সাথে আমি তোর মা-বাবাকেও বোঝানোর চেষ্টা করবো। কিন্তু ঐ শয়তানটার হাতে পড়ে তোর জীবন নষ্ট হতে দেব না।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨