#রক্তিম_পূর্ণিমা
#পর্ব_১৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
পলকের অনুপ্রেরণায় ফারিয়া ভয়ে ভয়ে রুশাদের সাথে কথা বলার জন্য তার মুখোমুখি হয়েছে। রুশাদ ক্যাম্পাসে তার কিছু বন্ধুদের সাথে গল্প করছিল। হঠাৎ ফারিয়াকে নিজের দিকে আসতে দেখে খানিক অবাক হয়। তবে রুশাদ সবথেকে বেশি অবাক তখন হয় যখন ফারিয়া তাকে বলে,
“আমার সাথে একটু ক্যান্টিনের দিকে চল৷ তোর সাথে অনেক জরুরি কথা আছে।”
“কি এমন জরুরি কথা, যা বলার জন্য ক্যান্টিনে যেতে হবে? এখানেই বল না।”
“এখানে সবার সামনে বলা সম্ভব না। প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর।”
“আচ্ছা, আচ্ছা। ঠিক আছে, চল ক্যান্টিনে যাই।”
ফারিয়া ও রুশাদ দুজনেই ক্যান্টিনে যায়। রুশাদ ক্যান্টিনে এসে বলে,
“কি বলবি বল?”
“দুটো সিঙারা অর্ডার দে।”
“লাইক সিরিয়াসলি! তুই আমাকে এখানে সিঙারা খাওয়ার জন্য টেনে আনলি!”
“উফ! রুশাদ, তুই একটু বেশি বুঝিস। যা বলছি তা কর।”
রুশাদ আর কি করবে। ক্যান্টিনের ওয়েটারের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“মামা, দুইটা সিঙারা দিন এদিকে।”
একটু পর ওয়েটার এসে সিঙারা দিয়ে যায়। ফারিয়া একটা সিঙারা হাতে নিয়ে বলে,
“তুই তো জানিস রুশাদ, আমি সিঙারা কতোটা ভালোবাসি!”
“বাহ, তাহলে তুই আমাকে এখানে তোর সিঙারার প্রতি ভালোবাসার কথা শোনাতে এসেছিস!”
“আরে বোকা! সেটা না। আমি তোকে এখানে এটাই বলতে এসেছি যে,,”
ফারিয়া নিজের দুচোখ বন্ধ করে নেয়। পলকের দেওয়া সাহসের কথা মনে করে বলে,
“এই সিঙারাকে আমি যতটা না ভালোবাসি তার থেকে কয়েকগুণ বেশি ভালোবাসি তোকে। তোর কাছে হয়তো আমি কেবলই তোর একজন ভালো বন্ধু কিন্তু আমার কাছে তুই বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু। আই হ্যাভ আ ডিপ ফিলিংস ফর ইউ এন্ড,,,”
এটুকু বলে ফারিয়া থেমে যায়। উত্তেজনায় তার পুরো শরীর কাপছে। ফারিয়া দ্রুত উঠে দাঁড়ায় এবং বলে,
“আমি তোর আন্সারের অপেক্ষায় থাকব। যদি না বলার থাকে তো ম্যাসেজে বলে দিস৷ সরাসরি তোর প্রত্যাখ্যান আমি মানতে পারব না।”
বলেই ফারিয়া চলে যেতে নিতেই রুশাদ তার হাত টেনে ধরে। ফারিয়া অবাক হয়ে যায়। রুশাদ ফারিয়াকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,
“আমার উত্তরটা শুনে যা। আমিও তোকে ভীষণ ভালোবাসি রে পাগলী! তোকে প্রথম যেদিন দেখেছি সেদিন থেকেই তোর প্রতি আমার মনে অন্যরকম অনুভূতি রয়েছে। তুই যদি আজ আমাকে তোর মনের কথা না জানাতি তাহলে আমি নিজেই দেখতি তোকে প্রপোজ করে নিতাম।”
রুশাদের কথা শুনে ফারিয়া ভীষণ অবাক হয়৷ মনে পড়ে যায় পলকের বলা কথাটা, “এমনো তো হতে পারে যে, রুশাদও তোকেই পছন্দ করে।”
ফারিয়ার ঠোঁটে বিজয়ীর হাসি। সে যেন আজ বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত কিছু হাতের নাগালে পেয়ে গেল। আনন্দে চোখে জল চলে এলো। রুশাদও ক্যান্টিনে সবার সামনে ফারিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে করল। ক্যান্টিনে উপস্থিত সবাই ক্লাপিং করে তাদের অভিনন্দন জানালো। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থেকে এই দৃশ্য দেখে পলকের দুচোখ জুড়িয়ে গেল। সে আনন্দিত হয়ে বললো,
“এখন অনেকটাই স্বস্তি বোধ হচ্ছে। তবে নিজেকে পুরোপুরি সফল আমি তখনই মনে করব যখন এদের সম্পূর্ণ মিলন ঘটাতে পারব।”
পলক আনন্দের সহিত সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে এমন সময় নিজের সামনে মেহরাজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হলো। মেহরাজকে কিছু বলবে তার আগেই মেহরাজ শক্ত কন্ঠে বলল,
“সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।”
পলক মলিন মুখে সরে দাঁড়ালো। মেহরাজ তার দিকে একবার ফিরেও তাকালো না। হনহন করে সামনে চলে গেলো। পলক বুঝল ব্যাপারটা। কিন্তু তারও যে কিছু করার নেই।
“গত চার মাস যে, আমি এখানে ছিলাম না। অতীতের পলক সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাই তো সে ঐ আরাফাতের প্রেমে পড়েছিল। আমি জানি,আপনি এখন আমার সাথে যা ব্যবহার করছেন তাতে আপনার কোন দোষ নেই৷ যাইহোক, আপনাকে আমি আর বেশিক্ষণ আমার উপর রাগ করে থাকতে দেব না। আপনার এই রাগ আমি যে করেই হোক না কেন ভাঙাবো।”
বলেই স্মিত হাসল পলক। তার মাথায় কিছু একটা চলছে।
★★
রুশাদের সাথে দুদিন থেকে চুটিয়ে প্রেম করছে ফারিয়া। অবস্থা এখন এমন দাড়িয়েছে যে, পলককেই ফারিয়া আর সময় দিচ্ছে না। তবে পলক এসব নিয়ে চিন্তিত নয়। সে তো চিন্তায় আছে কিভাবে মেহরাজের রাগ ভাঙাবে আর ঐ জুয়েলের বদনজর থেকে ফারিয়াকে বাঁচাবে। পলক ভার্সিটির ক্যাম্পাসেই ঘোরাঘুরি করছিল এমন সময় তার মুখোমুখি হয় আরাফাত। পলক এমনিতেই নানান চিন্তায় ছিল তার উপর আরাফাতকে দেখে তার মন মেজাজ আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়। সে আরাফাতকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরাফাত পলকের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“দুদিনেই খুব ভাব বেড়ে গেছে? নতুন কোন নাং পেয়েছিস নাকি?”
নিজের সম্পর্কে এমন অপমানজনক কথা শুনে পলকের মাথায় রাগ উঠে গেল। সে পেছন ফিরে আরাফাতের গালে চড় মেরে অতঃপর তার গালে থুথু ছিটিয়ে বলে,
“এই অপমানটা যদি মনে থাকে তাহলে আর জীবনেও আমার সম্পর্কে এহেন কথা বলবি না।”
আরাফাতের মাথায় রাগ উঠে যায়। ভরা ক্যাম্পাসে এই অপমান মেনে নিতে না পেরে সে সবার সামনে পলকের চুলের মুঠি টেনে ধরে বলে,
“খুব পাওয়ার বেড়েছে তাই না তোর? ক” দিন আগেই তো আমার জন্য ভালোবাসা উতলে পড়ছিল আর আজ এমন করছিস৷ তোকে আমি উচিৎ শিক্ষা দেব।””
বলেই পলকের হাত ধরে জোরপূর্বক টেনে নিয়ে তাকে যাওয়ার চেষ্টা করে। পলক ছাড়ানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। তবুও হাল ছাড়ে না। এরইমধ্যে একটি ভারী পুরুষালি কন্ঠ শোনা যায়,
“ওর হাত ছেড়ে দে!”
পলক চকিতে পিছন ফিরে তাকাতেই কাঙ্ক্ষিত চেহারাটি দেখতে পায়। একদম ঠিক ভেবেছেন আপনারা, মেহরাজ!
মেহরাজ এগিয়ে এসে আরাফাতকে বলে,
“ভালোয় ভালোয় বলছি ওর হাতটা ছেড়ে দে, নাহলে,,,”
“নাহলে কি করবে হ্যাঁ, সিনিয়র হয়েছ বলে বেশি পাওয়ার দেখাও? একদম আমাদের পার্সোনাল ব্যাপারে নাক গলাবে না।”
মেহরাজ এগিয়ে এসে জোরপূর্বক পলককে আরাফাতের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“কোন মেয়েকে এভাবে অপমান করা কারো পার্সোনাল ব্যাপার হতে পারে না।”
আরাফাত রেগে মেহরাজের কলার চেপে ধরে। মেহরাজের মাথায় রক্ত উঠে যায়৷ সে আরাফাতকে নির্দয়ের মতো মারতে শুরু করে। মারতে মারতে একদম খারাও অবস্থা করে ফেলে। আরাফাতের শরীর চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে কয়েকজন এগিয়ে এসে আরাফাতকে উদ্ধার করে। নাহলে সে মরেই যেত বোধহয় আজ!
পলক লক্ষ্য করে মেহরাজেরও হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে। সে তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এসে মেহরাজের হাত ধরে বলে,
“আপনার হাত থেকে তো রক্ত পড়ছে আমি এখনই,,,”
মেহরাজ একটা ঝটকা দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“স্টে এওয়ে ফ্রম মি।”
“মেহরাজ ভাই,,”
“আর একটা কথাও আমি শুনতে চাই না। নিজেই বিপদ মাথায় নিয়ে ঘুরো তারপর আবার তামাশা করো? তোমাকে আমি বলেছিলাম না ঐ আরাফাত ভালো ছেলে বা তাহলে কেন মিশেছিলে ওর সাথে? নিজেকে কি মনে করো তুমি? সেদিন তো ভরা ক্যাম্পাসে সবার সামনে আমায় যা নয় তাই বললে আজ ফলে গেল তো আমার কথাগুলো!”
“আপনি তো সবসময় আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন মেহরাজ ভাই। আমি আপনাকে কখনো বুঝতে পারিনি। তবে এবার আমি আর কোন ভুল করব না, সব ভুল শুধরে নেবার পালা। নিজের জীবনকে আমি এবার শুধরে নেব।”
মেহরাজ অবাক হয়ে পলকের মুখপানে চেয়ে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨