রক্তিম পূর্ণিমা পর্ব-১৬

0
59

#রক্তিম_পূর্ণিমা
#পর্ব_১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

পলক আজ ফারিয়ার সাথে একটি শপিং মলে এসেছে ফারিয়ার বিয়ের শপিং করতে। আর এক সপ্তাহ পরে ফারিয়া ও রুশাদের বিয়ে। ফারিয়া তো কোন কাপড়ই পছন্দ করতে পারছিল না৷ একটু পর রুশাদ এলো সেখানে৷ আর পলক হয়ে গেল কাবাব মে হাড্ডি৷ তাই সেও ফারিয়া ও রুশাদকে একটু স্পেস দেয়ার জন্য দূরে সরে এলো। শপিং মলের তিন তলায় একটা রেস্টুরেন্ট ছিল৷ সেখানে গিয়ে বসে কফি অর্ডার দিল। কফি খাওয়া শেষ করে উঠতে যাবে এমন সময় কারো একটা সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলো কিন্তু সেই ব্যক্তিটা তাকে ধরে নিলো৷ পলক তো ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর একটা গম্ভীর পুরুষালি স্বর শুনতে পেল।

“এই মেয়ে, তুমি দেখে চলতে পারো না? আমি না ধরলে তো পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলতে।”

চেনা কন্ঠটা শুনেই তড়িঘড়ি করে চোখ খুলে নেয় পলক। কাঙ্ক্ষিত চেহারাটি দেখে স্মিত হেসে বলে,
“মেহরাজ ভাই…!”

মেহরাজ ইতস্তত বোধ করে বলে,
“এভাবেই কি ঝুলে থাকবে নাকি স্টুপিড? উঠে দাঁড়াও।”

পলক এবার লজ্জিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে মেহরাজের দিকে অপরাধের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“সরি।”

“সরি কিসের জন্য?”

“গত চার মাসে ঘটা সবকিছুর জন্য।”

মেহরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আচ্ছা, বাদ দাও সেসব কথা। তো ঐ ছেলেটা কি যে নাম…উম..মনে পড়েছে আরাফাত। তো ঐ উজবুকটা তোমায় আর বিরক্ত করে নি তো?”

“জ্বি, না।”

“এরপর যদি কখনো উজবুকটা তোমায় বিরক্ত কিন্তু তো আমায় বলবে। আমি ওর এমন ব্যবস্থা করব যে ও আর কখনো তোমার দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না।”

“আপনি আমার কথা এতটা ভাবেন মেহরাজ ভাই!”

মেহরাজ আবারো অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সবটা সামলানোর জন্য বলে,
“তোমার মতো গাঁধা মেয়ের কথা ভাবব না তো কার কথা ভাবব? কতটা গাঁধা হলে ঐ আরাফাতের মতো একটা ছেলের সাথে কেউ রিলেশনে যায়,”

পলক মলিন হাসি দিয়ে বলে,
“ঐটাই তো ছিল আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল। যার জন্য আমায় এখনো অব্দি পস্তাতে হচ্ছে।”

কথাটা বলেই চোখের অশ্রু বিসর্জন দেয় পলক। মেহরাজের কেন জানি পলকের চোখে এই জল দেখে একদম ভালো লাগে না। সে সযত্নে পলকের চোখের জল মুছে দিয়ে বলে,
“হুশ, এত বড় মেয়ে কান্না করলে ভালো দেখায় না।”

পলক মেহরাজের চোখের দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হয়। তারা যেন একে অপরের চোখের মাঝেই হারিয়ে যায়। মেহরাজ হঠাৎ করে বলে ওঠে,
“তা তুমি এখানে একা একা কি করছ?”

“আমি একা আসিনি। আমার সাথে তো..”

পলকের কথা শেষ হতে না হতেই সেখানে চলে এলো ফারিয়া ও রুশাদ। তাদের দেখে মেহরাজ বুঝল এরা সবাই একসাথে এসেছে। রুশাদ এগিয়ে এসে মেহরাজের সাথে সালাম বিনিময় করে কথাবার্তা বলায় ব্যস্ত হলো। এদিকে ফারিয়া পলককে একটু দূরে টেনে নিয়ে তার কানে কানে বলল,
“কি ব্যাপার! চোখে চোখে এত কিসের কথা?!”

পলক একদম লজ্জায় নুইয়ে যায়। মেহরাজ একপলক তাকায় পলকের দিকে। তার মুখে আপনাআপনিই হাসি ফুঁটে ওঠে। এদিকে রুশাদ কথায় কথায় মেহরাজকে বলে,
“ভাই, সামনে কিন্তু আমার আর ফারিয়ার বিয়ে। আপনাকে কিন্তু আমাদের বিয়েতে আসতেই হবে। অবশ্য খুব শীঘ্রই আপনি বিয়ের কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন। তবে আগে থেকেই বলে রাখলাম।”

মেহরাজ ভাবলেশহীন হয়ে বলল,
“আচ্ছা, যাওয়ার চেষ্টা করব।”

“চেষ্টা বললে শুনছি না, আপনাকে কিন্তু আসতেই হবে।”

ফারিয়া পলককে গুঁতো দিয়ে বলে,
“কিরে পলক! তুই কিছু বল।”

“আমি কি বলব? বিয়ে তোদের মেহমানও তোদের। আমি বললেই কি,,না বললেই বা কি?!”

মেহরাজ একটু মন খারাপ করে পলকের কথা শুনে। ফারিয়া ও রুশাদ কথাবার্তা শেষ করে আগে আগেই চলে যায়। তারা যাওয়ার পর পলক মেহরাজের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনাকে কিন্তু এই বিয়েতে আসতেই হবে। আমি অপেক্ষা করব আপনার আসার জন্য। আর শুনুন, একটা লাল পাঞ্জাবি পড়ে আসবেন, আমিও ঐদিন একটা লাল লেহেঙা পড়ব।”

বলেই পলক একদৌড়ে পালিয়ে যায়। মেহরাজ পলকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে চওড়া একটা হাসি দেয়।

★★★
আজ ফারিয়া ও রুশাদের বিয়ে। সেই উপলক্ষে ফারিয়াদের বাড়িতে চলছে জমজমাট আয়োজন। চারিদিকে কৃত্রিম আলোকসজ্জা ও বাহারি ফুলে ফুটে উঠেছে। ফারিয়াকে বউয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে। লাল বেনারসিতে মেয়েটাকে যেন অপূর্ব সুন্দর লাগছে। পলক ফারিয়াকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,
“আজ তো রুশাদ তোকে দেখে একদম পাগলই হয়ে যাবে!”

“ধ্যাত! তুইওনা।”

পলক হেসে ওঠে। একটু পর রব উঠে যায় বর এসেছে। সবাই ছুটে যায় বরকে দেখতে। ফারিয়াও যেতে উদ্যত হলে পলক তাকে টেনে ধরে বলে,
“এই তুই কোথায় যাচ্ছিস?”

“কেন? বর দেখতে?”

“পাগল হলি নাকি? নিজের বর কেউ নিজে দেখে?”

“সবাই তো দেখতে যাচ্ছে। আমি গেলে কি সমস্যা?”

“উফ তোকে নিয়ে আর পারি না! সবাই আর তুই কি এক হলি? ”

“আমার যে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে রুশাদকে বরের সাজে কেমন লাগছে।”

“আচ্ছা, তুই এখানে বসে থাক। আমি যাচ্ছি ওখানে। আমি নাহয় রুশাদের ছবি তুলে এনে দেখাচ্ছি তোকে। এমনিতেও আজকের পর থেকে সবসময় ওকে দেখতে পারবি। একটু তো লজ্জা রাখ মনে।”

বলেই পলক বেরিয়ে যায়। বের হতে হতে বলে,
“তোকে এরকমই হাসিখুশি দেখতে চাই সবসময়। তাই তো আমার এত চেষ্টা।”

বাইরে এসে পলক দেখে ফারিয়ার কিছু কাজিনেরা রুশাদদের গেটে আটক করে রেখেছে। পলক এই দৃশ্য দেখে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। যা বোঝা গেল দর কষাকষি নিয়ে বেশ ভালোই তর্ক লেগেছে। পলক সেদিক পানে গেল।

সামনে যেতেই এক ভরাট পুরুষালি কন্ঠ শুনতে পেল।

“১০ হাজার টাকা দিলাম, যদি নেবার হও তো নাও। নাহলে আমরা বরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”

এটা আর কেউ নয় মেহরাজ। মেহরাজের কথা শুনে তো রুশাদের মাথায় হাত। সে বলল,
“না, না ভাই। অনেক কষ্ট করে শ্বশুরকে মানিয়েছি। এখন আর ফিরে যেতে পারব না, ওরা যত চাইছে দিয়ে দেই বরং।”

পলক হেসে ওঠে রুশাদের কথা শুনে। অতঃপর গেট আটকে দাঁড়ানো ছেলে-মেয়ে গুলোর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“এই তোমরা সরে দাঁড়াও তো, আমার বন্ধুটার কত কষ্ট তোমরা চোখে দেখো না?”

বলেই রুশাদের দিকে কাচি এগিয়ে দিয়ে বলল,
“নাও, ফিতা কেটে ভেতরে প্রবেশ কর।”

রুশাদ তাই করে। এরপর সব বরযাত্রী ভেতরে প্রবেশ করে। সবাই চলে যাবার পর মেহরাজ ও পলক একা দাঁড়িয়ে ছিল। মেহরাজ পলকের কথামতো লাল পাঞ্জাবি পড়েছে। আর পলক লাল লেহেঙা। পলক মেহরাজের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আপনাকে দারুণ লাগছে।”

“আর তোমাকেও!”

দুজনেই একসাথে হেসে ওঠে।

★★★
একদিকে যখন উৎসবের আয়োজন চলছে অন্যদিকে তখন একজনের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। জুয়েল জুয়ার আসরে বসে মদ খাচ্ছিল আর পলকের একটা ছবি দেখে বলছিল,
“এই মেয়েটাই যত নষ্টের গোড়া! আমার আর ফারিয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো। একে তো আমি..”

একটু পর আশরাফ সেখানে এসে বলল,
“এত রাগ দেখানো ভালো না। রাগ গুলো জমিয়ে রাখ। ঐ মেয়ের উপর আমারো কম রাগ না। আগে তো তোর বোনকে আমার বিয়ের আসর থেকে ভাগিয়ে নিয়ে গেল আর এবার..সাথে ঐ মেহরাজও। মেহরাজকে তো আমি পরে দেখে নেব কিন্তু এই পলকের কিছু না করলেই নয়।”

জুয়েল আরেকবার মদে চুমুক দিয়ে বলে,
“ওই পলকের ব্যাপারটা আমার হাতে ছেড়ে দাও। ওর আমি এমন ব্যবস্থা করব যে কালকের পর আর সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না!”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨