#রক্তিম_পূর্ণিমা
#পর্ব_১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
পলক মেহরাজের কবরের পাশে বসে কান্না করতে থাকে। মুমতা বলে ওঠে,
“এই মেয়ের কোন নাটক আর আমাদের দেখার ইচ্ছা নেই। মুসকান তুই চলে আয়।”
মুসকান মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যায়। পলক মেহরাজের কবরের সামনে বলে বলতে থাকে,
“আপনি কিভাবে আমাকে একা ছেড়ে চলে গেলেন মেহরাজ ভাই? আমার কথা কি একটা বারের জন্যেও ভাবলেন না? এতোটাই পর আমি আপনার কাছে?”
মেহরাজ এবার আকাশের পানে চেয়ে বলে,
“আমি কি আর একটা সুযোগ পাব না সবকিছু ঠিক করার? অন্তত একটা সুযোগ যে আমার বড্ড দরকার।”
এমন সময় হঠাৎ পৃথিবীর বুকে আঁধার নেমে আসে। আকাশে ভেসে ওঠে রক্তিম চাঁদ। পলক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এমন সময় তার সামনে সেই আগের বুড়ি মহিলাটা এসে দাঁড়ায়। পলক তাকে জিজ্ঞেস করে,
“আমি কি তাহলে আরো একটা সুযোগ পেতে চলেছি?”
“হুম কিন্তু এটাই তোমার শেষ সুযোগ৷ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যদি কিছু করতে পারো তো ভালো..নাহলে নিজের জীবনকে গোছানোর আর কোন সুযোগ পাবে না।”
“আমাকে এবার পারতেই হবে সবকিছু ঠিক করার। মেহরাজ ভাইকে আমায় বাঁচাতেই হবে যেকোন কিছুর মূল্যে হলেও।”
এমন সময় বুড়ি মহিলাটা বলে ওঠে,
“এটা তুমি অনেক বড় একটা অঘটন ঘটাতে চলেছ। কারো মৃত্যু আটকানোর অধিকার তোমার নেই!”
“কিন্তু মেহরাজ ভাইকে না বাঁচালে যে আমার জীবনটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। দয়া করে কোন একটা পথ বলে দিন, যাতে আমি ওনাকে বাঁচাতে পারি।”
“বেশ, তুমি চাইলে মেহরাজকে মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচাতে পারো। তবে এর বিনিময়ে তোমাকে কিছু স্যাক্রিফাইজ দিতে হবে।”
“কি?”
এরপর বুড়ি তাকে এমন কিছু কথা বলে যা তাকে ভেতর থেকে একদম ভেঙে রেখে দেয়। তবুও পলক মেহরাজের ভালোর কথা ভেবে বলে,
“যদি মেহরাজ ভাইকে বাঁচানোর জন্য আমাকে এমনটাই করতে হবে তো আমি সেটা করতে রাজি আছি। তাতে আমার যত কষ্টই হোক।”
“বেশ, তাহলে অতীতে গিয়ে নিজের জীবন শোধরানোর শেষ সুযোগটাকে কাজে লাগাও।”
এরমধেই রক্তিম আলোয় ছেয়ে যায় চারিদিক। পলক চোখ ঢেকে ফেলে। আবারো প্রবেশ করে সময়ের চক্রবুহ্যে।
★★
চোখ খুলতেই নিজেকে বিয়ের সাজে আবিষ্কার করে পলক। আর এটা দেখেই সে অবাক হয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে তার পাশে বসে থাকা একজন বিউটি পার্লারের লোককে জিজ্ঞেস করে,
“আজকে কত তারিখ?”
“আজ ৬ই জুন, ২০২২ কেন?”
পলক অবাক হয়ে যায়। কারণ এই দিনেই তো তার সাথে আরাফাতের বিয়ে হয়েছিল। পলকের আরো মনে পড়ে মুসকান তাকে বলেছিল আজকের দিনেই মেহরাজের মৃত্যু হয়। পলকের বিয়ের দিনই মেহরাজ ১০ তলা থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়। অনেকের কাছে এটা আ-*ত্ম**হত্যা তবে কেউ কেউ হ*-ত্যা বলেই সন্দেহ করে।
পলক আর থাকতে পারল না। মুসকান তো বলেছিল মেহরাজ টু টাওয়ার থেকে পড়ে গিয়েছিল আজকের দিনে। তাই সে আর সময় নষ্ট না করে উঠে দাঁড়ায় এবং জোরে দৌড় দেয়। বাইরে আসতেই পারভেজ ইসলাম আর পাভেল, জান্নাত সবাই পলকের দিকে এগিয়ে আসে। পারভেজ ইসলাম বলেন,
“তুই এত হন্তদন্ত করে কোথায় যাচ্ছিস? আজ না তোর বিয়ে!”
পলক হাফাতে হাফাতে বলে,
“এই বিয়ে আমি করতে পারব না।”
পারভেজ রেগে বলে,
“এসবের মানে কি পলক? আমরা তো তোর পছন্দের পাত্রের সাথেই তোর বিয়ে দিচ্ছি। তাহলে এখন তুই কেন এভাবে বলছিস?”
“সেসব অনেক কথা ভাইয়া। তোমাদের এখন সেটা বোঝাতে পারব না। আমার হাতে সময় খুবই সংক্ষিপ্ত।”
বলেই পলক বের হয়ে যেতে নেয় এমন সময় আরাফাত তার হাত ধরে তাকে আটকে দিয়ে বলে,
“এখান থেকে এক পাও বাইরে রাখবে না তুমি। আজ আমাদের বিয়ে। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তোমার কোথাও যাওয়া চলবে না।”
“তোমার মতো জঘন্য একটা মানুষকে আমি বিয়ে করবো এটা ভাবলে কি করে তুমি? জীবনে ভুল মানুষ একবারই করে। আমিও মানুষ চিনতে ভুল করেছিলাম অতীতে। কিন্তু সেই ভুল আর দ্বিতীয় বার তো আমি করবো না।”
বলেই পলক আরাফাতকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে যায়। আরাফাত তো ভীষণ রেগে পলকের পিছু নিতে চায়। কিন্তু এমন সময় পাভেল এসে আরাফাতকে আটকায়। কারণ পলকই তাকে এটা করতে বলেছে। আরাফাত বলে,
“ছাড়ুন আমায়। আপনার বোন আমাকে এভাবে বিয়ের আসরে রেখে পালাতে পারে না।”
“চুপ করো, তোমাকে এমনিতেই আমাদের কারো পছন্দ ছিল না। নেহাত পলক জোরাজোরি করছিল তাই আমরা এই বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। এখন যখন ও নিজেই এই বিয়েটা করতে চাইছে না তখন এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন না কোন কারণ আছে। তাই আমি তোমাকে আর নিজের বোনের কোন ক্ষতি করার সুযোগ দিব না।”
বলেই পাভেল আরো শক্ত করে আটকে রাখে আরাফাতকে।
★★
পলক ছুটতে ছুটতে টু টাওয়ারের শীর্ষ এলাকায় এসে পৌঁছায়। সেখানে এসেই দেখতে পায় মেহরাজ একদম ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। পলক এখানে এসেই তার নাম ধরে ডাক দিয়ে বলে,
“মেহরাজ ভাই!”
পলকের ডাক শুনে মেহরাজ পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলে,
“তুমি? তুমি কেন এসেছ এখানে? আমাকে কতটা ভাঙতে পেরেছ সেটা দেখতে?”
“না৷ মেহরাজ ভাই। আমার কথাটা শুনুন..”
“আর কি শুনব আমি..বারবার তুমি আমায় মিথ্যা আশ্বাস দাও তারপর সেই আশ্বাস ভঙ্গ করো। কিন্তু এবার আর তা হবে না। এবার আমি যা সিদ্ধান্ত নেব তাই করবো। তোমার কাছে এই ভালোবাসাটা একটা ছেলেখেলা মনে হতে পারে কিন্তু আমার কাছে না। আমি তোমায় মন থেকেই ভালোবাসি। তাই তোমাকে অন্য কারো হতে দেখতে পারবো না।”
“মেহরাজ ভাই প্লিজ কোন ভুল ডিশিসন নিবেন না। আমার হাতটা ধরুন। আমি আপনাকে সবটা বোঝাচ্ছি।”
“আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাইনা।”
“প্লিজ..”
এমন সময় হঠাৎ করেই কোথা থেকে আশরাফ সেখানে চলে আসে৷ সে এসেই বলে,
“তাহলে এখানে এসব ড্রামা চলছে! ভালো, আমার কাজও সহজ হয়ে গেল। তোরা দুজনে মিলে আমার যত ক্ষতি করেছিস সবকিছুর প্রতিশোধ আমি নিব। প্রথমে আমাকে আর জান্নাতকে এক হতে দিস নি তারপর জুয়েলকেও জেলে পাঠিয়েছিস। আমার পেছনেও পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছিস তুই মেহরাজ। আমার সব অপকর্মের প্রমাণ পুলিশকে দিয়েছিস। এখন আমার তো ফাঁ**সি হবেই তো আমি তোকেও শান্তিতে বাঁচতে দেব না।”
বলেই একটা বন্দুক বের করে মেহরাজের দিকে তাক করে। মেহরাজ অনুভূতিহীন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পলক বলে ওঠে,
“দয়া করে এটা করবেন না। প্লিজ..”
কিন্তু আশরাফ পলকের কথায় কোন গুরুত্ব না দিয়ে গু**লি চালিয়ে দেয়। মেহরাজকে বাঁচানোর জন্য পলক গুলির সামনে এসে পড়ে। গুলিটা পলকের বুক ভেদ করে যায়। তাল সামলাতে না পেরে পলক একদম ছাদের কিনারায় চলে যায় আর তারপর..
মেহরাজ পলককে এভাবে ছাদ থেকে পড়ে যেতে দেখে তার নাম ধরে চিৎকার করে ওঠে।
আর এদিকে পলক পড়ে যেতে যেতে বুড়ির বলা কথাগুলো ভাবে,
“যদি তুমি কারো জীবন বাঁচাতে চাও তো তার বিনিময়ে তোমার নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হবে।”
পলকের মুখে হাসি ফুটে ওঠে,
“যদি তোমাকে বাঁচাতে আমার নিজের জীবন সেক্রিফাইজ করতে হয় তো আমি সেটাতেও রাজি মেহরাজ ভাই….””
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨