রঙ বেরঙের অনুভূতি পর্ব-১৪

0
271

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(১৪)

নোহান মেডের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে নোহা র ঘরে গিয়ে,দরজাটা ভেঙ্গে ঢুকে, চমকে উঠে চেঁচিয়ে উঠলোঃ দিদিয়া।

নোহা বিছানায় র’ক্তা’ক্ত হয়ে শুয়ে আছে। নোহান এত র’ক্ত দেখে শক খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক এমন ভাবেই দিয়াকে দেখেছিলো।

নোহান নোহাকে কোলে তুলে ডাকতে লাগলো। নোহা আর সাড়া দিলো না। নোহা’র নি’থ’র দেহ পড়ে আছে। নোহান চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ দিদিয়া কেন ছেড়ে গেলি তুই আমাকে, ছোটো বেলায় বাপি আর মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো আর এখন তুই। আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো তোদের ছেড়ে। বল না তোর এই অবস্থা কে এরকম করলো।

নোহা কে পুলিশ পোস্টমর্টেম করার জন্য নিয়ে গেছে। নোহানের মানসিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। একা চুপচাপ বসে আছে। সুহানিও কিছু না বলে চুপ করে বসে আছে।

নোহা র লা’শের পাশ থেকে একটা চিরকুট পাওয়া গেছে,তাতে লেখা ছিলো—

আমার মৃ’ত্যু’র জন্য কেউ দায়ী নয়। ভাই পারলে আমাকে মাফ করে দিস। আর আমার চোখ আর কিডনি গুলো যদি পারিস কোনো অসহায় মানুষকে দিয়ে দিস।

ইতি____
নোহা

পরেরদিন…

নোহার মৃ’ত দেহটাকে দাফন করা হয়েছে। নোহা ২টো চোখ আর ২ টো কিডনি দান করা হয়েছে ওর কথা মতোই। পুলিশ এটাকে সুইসাইড বলেই ধরে নিয়েছে। নোহান মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। নোহা র সু’ই’সাই’ড এর কারনটা এখনো রহস্যময়। সুহানি নোহানের দিকে তাকিয়ে আছে কাছের মানুষকে হারানোর কতটা কষ্ট সেটা নোহানকে না দেখলে বোঝা যায় না। জীবন থেকে সবকিছুই আসতে আসতে হারিয়ে গেছে।

সময় কেটে যায়, কিন্তু আঘাত গুলো শুকায় না। নোহানের মাঝে পরিবর্তন এসেছে। নোহান আর আগের মতো কোনো কিছুই ঠিক করে না। সারাদিন চুপচাপ বসে থাকে। কম কথা বলে।

রাহাত আজকে সুহানির বাড়িতে এসেছে। সুহানি একটু অবাক হয়েছে বটেই কিন্তু রাহাতকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে বললোঃ কেমন আছো।

রাহাতঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি।

সুহানিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

রাহাতঃ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে

সুহানিঃ কি?

রাহাতঃ আমাকে ঠকানোর কারনটা কি?

সুহানি মাথা নিচু করে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।

রাহাতঃ দ্যাখো সুহানি তুমি আমাকে নাই পছন্দ করবে তাহলে কেন আমার প্রোপজাল এক্সসেপ্ট করলে।

সুহানিঃ সরি,আমার সেদিন হ্যা বলা উচিত হয়নি। আমাদের হাতে সবসময় সবকিছু থাকে না। কিছু কিছু কাজ নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে হয়। আর সবকিছুকে মেনে নিতেও হয়।

রাহাতঃ তুমি কি খুশি?

সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ খুশি না হয়ে যাবো কোথায়। তোমাকে একটা কথায় বলবো নতুন করে নতুন জীবন শুরু করো। জীবন কখনোই কারোর জন্য থেমে থাকে না।

রাহাত মনে মনে বললোঃ আমি তো তোমাকে নিয়ে জীবন সাজাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আর সেটা হলো কোথায়।

রাহাত সুহানিকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। সুহানি নাজের চোখের পানি মুছে নিলো। নোহানকে নিয়ে নিজের জীবন সাজাতে চাইছে কিন্তু কিভাবে সাজাবে। যখনি মনে করৈ নতুন করে সবকিছু শুরু করবে তখনি পুরানো কথাগুলো মনে পড়ে যায়।

রাত্রিবেলা…

নোহান চুপ করে বসে আছে। সুহানি নোহানের সামনে বসে বললোঃ কি ব্যাপার আপনার মন খারাপ কেন?

নোহানঃ আমি হয়তো জীবনে অনেক অ’প’রা’ধ করেছি তার জন্য আমার কাছের মানুষ গুলো আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

সুহানিঃ অ’প’রা’ধ

নোহানঃ যখন বয়স ১২ তখন বাপি আর মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।‌সেদিন মৃ’ত্যু’র মুখ থেকে আমি ফিরে এসেছিলাম। একজনকে ভালোবেসে নতুন করে নিজেকে সাজাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেও আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলো। আর শেষে আমার দিদিয়াও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আমি বেঁ’চে থাকবো কিভাবে?

সুহানিঃ আমি কে হয় আপনার?

নোহানঃ জানো ভালোবাসাটা মন থেকে আসে চাইলেও কারোর প্রতি ভালোবাসা জন্মানো যায় না। চেষ্টা করেও আমি পারিনি তোমাকে দিয়ার জায়গায় বসাতে। আমি চেয়েছিলাম নতুন করে শুরু করতে কিন্তু পারিনি। জীবন,স্মৃতি আমাকে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে দেয়নি। আটকে পড়ছি দিয়ার মায়াজালে। হ্যা আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি অনেক অনেক অন্যায় করেছি। প্রথমে বিনা দোষে দোষী করেছি তারপরে নিজে ভালো থাকার জন্য তোমাকে নিজের কাছে বন্দি করেছি। আমি অপরাধি।

সুহানির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। নোহানের স্বীকারোক্তি সুহানিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।

সুহানিঃ আজ হঠাৎ সবকিছু স্বীকার করছেন কেন?

নোহানঃ আমার মনে হচ্ছে দিয়ার সাথে আমার দেখা খুব তাড়াতাড়ি হবে।

সুহানিঃ এসব কি বলছেন আপনি?

নোহানঃ হ্যা ঠিক বলছি।আমি তোমার অমতেই একটা কাজ করেছি।

সুহানিঃ কি কাজ।

নোহানঃ আমি লইয়ার কে দিয়ে ডির্ভোস পেপার রেডি করিয়েছি।

সুহানি চমকে উঠলো।

নোহানঃ তোমাকে মুক্ত করে দিলাম আর আমার সমস্ত সম্পত্তির অর্ধেক তোমার নামে আর অর্ধেক আমার তৈরি করা অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রমের নামে করে দিয়েছি।

সুহানিঃ আমার নামে কেন?

নোহানঃ দরকার ছিলো।

সুহানিঃ আমি নেবো না।

নোহানঃ না নিলে দান করে দিয়ো‌। ভালো থেকো তুমি আর নিজের খেয়াল রেখো। এখন নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

সুহানি কিছু আর না বলে নিরবে ঘরটা ত্যাগ করবে তখনি নোহান সুহানির হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।সুহানি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো নোহানের দিকে। নোহান আলতো করে সুহানির কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বললোঃ তোমাকে আমি বৈধ ভাবে প্রথম স্পর্শ এবং শেষ স্পর্শ করলাম।

নোহান কথাটা বলেই বেলকনিতে চলে গেলো।সুহানি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নোহানের এমন কাজের কোনো কারন কিছুই বুঝতে পারলো না। আর না বুঝতে পারলো নোহানের কোনো কথা।

১বছর পরে…..

— দিয়া সত্যি তুই খুব ভাগ্যবতী। নোহান সত্যি তোকে খুব ভালোবাসতো,তাই তো দ্যাখ না। সবকিছু থেকে কি সুন্দর ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো। একটা বার আমার কথা ভাবলো না।একটা বার বুঝলো না আমার কি হবে।‌আমি না মানলেও নোহান আমার স্বামী ছিলো‌।আর বাপির কথা সত্য ছিলো,বাপি বলেছিলো পবিত্র সম্পর্কের টানে একজন অপর জনের উপর দূর্বল হয়ে পড়ে। আমি আগে বুঝিনি কিন্তু তুমি চলে যাবার পরে বুঝে ছিলাম আমি তোমার প্রতি দূর্বল হয়ে গিয়েছি। আচ্ছা নোহান তুমি কি কখনোই আমার প্রতি দূর্বল হওনি।আমার প্রতি কোনো মায়া জন্মায়নি। না জন্মায়নি,জন্মালে হয়তো আমাকে একাকে রেখে চলে যেতে না। কারন তুমি তো সবসময়ই দিয়াতেই আসক্ত ছিলে,কখনোই দিয়ার থেকে বের হতে পারোনি। সত্যি বলতে কখনোই চাওনি, তোমার সবটা জুড়ে ছিলো শুধুমাত্র দিয়া। আমার রঙযুক্ত জীবনটা তুমিই রঙহীন করেদিলে,আমার তুমিই নতুন রঙের অনুভূতির জন্ম দিলে। কিন্তু কি হলো সেই তো আমাকে আবারো রঙহীন করে দিলে।

দিয়ার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে কথা গুলো বললো সুহানি।জীবন সুহানির সাথে বড্ড বেশি খেলছে। এই খেলার পরিনতিই বা কি?

#চলবে…
হ্যাপি রিডিং।