রঙ বেরঙে প্রণয় পর্ব-০১

0
110

#রঙ_বেরঙে_প্রণয়
#সূচনা_পর্ব
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)
“ তোর কি মনে হয়? তুই আমাকে ছেড়ে গেলে আর মেয়ে জুটবে না? ”
রুদ্র দাঁতে দাঁত খিঁচিয়ে আঙুল নেড়ে বললো কথাটা। তাহমি মুচকি হেসে রুদ্রর আঙুল চেপে ধরে ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
” নাহ জুটবে না। ”
” তা কেনো? ”
কণ্ঠে রুদ্রর আকাশসম বিস্ময়। ছেলেটার বিস্ময় কাটার আগেই তাহমি ওর পেটে কনুই দিয়ে একটা জোরেসোরে গুঁতো মারলো।

” কারণ তোর আশেপাশেও কোনো মাইয়া আসলে তার ঠ্যাং ভেঙে হাতে বাটি ধরিয়ে দিবো। ”

রুদ্র গুঁতো খেয়ে ব্যথায় আরো রেগে গেলো।

” তোর সাথে আজ, এখন তৃতীয় বারের মতো এবং ফাইনাল ব্রেকআপ। এরপর যদি আমার বিষয় কথা বলিস তোকে থাপ্পড় মেরে সিধে করে দিবো। ঘাড়ত্যাড়া, টক্সিক একটা মেয়ে! ”

রুদ্র হনহনিয়ে স্থান ত্যাগ করতেই যাবে এমন সময় সুনয়না পেছন থেকে ডাকল। তাহমির দিকে দৃষ্টিপাত করে রুদ্র দ্রুত সুনয়নার সামনে দাঁড়াল। সুনয়না চমকাল রুদ্রর এমন আচরণে। তাহমি হেলেদুলে এগিয়ে আসছে ওদের দিকেই।
” কী হয়েছে রুদ্র? এভাবে আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ”
” সুনয়না তুমি এখান থেকে চলে যাও এখন৷ তুমি বরং ভার্সিটির বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করো। আমি বেরিয়ে কল দিচ্ছি। ”
রুদ্রর কথা শেষ হওয়ার আগেই তাহমি এসে রুদ্রকে একটা থাপ্পড় মেরে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে সুনয়নার চুল ধরে পিঠে ধুমধাম ঘুষি মারতে শুরু করেছে। রুদ্র টাল সামলাতে না পেরে পড়তে পড়তে উঠে দাঁড়ালো মাত্র। সুনয়না তো কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। সুনয়না রুদ্রর বড়ো ভাইয়ের শালিকা। আপাতত রুদ্রদের বাসায় বেড়াতে এসেছে।

” রুদ্র! এই মেয়ে কে? এই মেয়ে তুমি আমাকে অসভ্যের মতো মারছো কেনো? ”

সুনয়না তাহমির সাথে ঠিক পেরে উঠছে না। সুনয়নার থেকে তুলনামূলক তাহমি রোগা পাতলা গড়নের। সুনয়নার এরমধ্যেই নিঃশ্বাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে রুদ্র দৌড়ে এসে তাহমিকে ধরে ঠেলে সরিয়ে ফেললো। ফলশ্রুতিতে তাহমি রাস্তায় বসে পড়েছে। রুদ্র সুনয়নাকে সেইফ করার জন্য একহাতে কাঁধে হাত রেখে তাহমির দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
” অনেক হয়েছে তাহমি। এবার সত্যি সত্যি আমি তোর থেকে মুক্তি চাই। এতো টক্সিক মানুষ কীভাবে হয় আল্লাহ! যাইহোক, আমি সুনয়নাকে বিয়ে করবো। আমাদের দুই পরিবারের ইচ্ছে এটা। এমনিতেও তোর মতো মাথা খারাপ, টক্সিক মেয়ের সাথে আমার পোষাবে না। তাই আশা করি আজকের পর থেকে আর আমাকে বিরক্ত করবি না।”

রুদ্রর কথাগুলো রাস্তায় বসে থেকেই শুনলো তাহমি। ইচ্ছে করেই বসে আছে। সুনয়নার দিকে একবার তাকাল তাহমি৷ পরক্ষণেই উঠে দাঁড়িয়ে হেসে বললো,
” কংগ্রাচুলেশনস সুনয়না। এই আনরোমান্টিক, বলদ মার্কা ছেলের সঙ্গে বিয়ে করে অনেক সুখী হও। ”
” তাহমি!”
রুদ্র একটু ধমকে বললো। সুনয়না দু’জনের কথার মধ্যে ফেঁসে গেছে। বিয়ের কথা তো মাত্র শুনলো ও। পারিবারিকভাবে কখন ঠিক হলো? তাহমি রুদ্রর ধমকে একটু ভয়ডর পাওয়ার মেয়ে না। ঠোঁটের কোণের হাসির রেখা বজায় রেখেই ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সুনয়নার কাছাকাছি। সুনয়না ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে রুদ্রর দিকে চোখাচোখি করলো একবার। রুদ্রও শক্ত করে ধরে আছে সুনয়নাকে।

” একটা গোপন কথা বলি শোনো, রুদ্রর বেড পারফরম্যান্স কিন্তু খুব বাজে৷ ঠিকমতো স্যাটিসফাইড করতে পারে না। যাইহোক বাই। ”

তাহমি সুনয়নার কানের পাশে গিয়ে কথাগুলো ফিসফিস করে বলে সেখান থেকে চলে গেলো। সুনয়নারতো বিষম খেলো ওর কথা শুনে।
” কী বললো ও?”
” কিছু না রুদ্র। ”
সুনয়না মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ভাবলো, কী অসভ্য মেয়ে! রুদ্র সুনয়নাকে নিয়ে আর একমুহূর্ত অপেক্ষা না করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো। এই মেয়ের বিশ্বাস নেই। আবার যদি এসে ঝামেলা করে!

দুপুরের পর থেকে ঘরে ঢুকে দোর আঁটকে দিয়েছে খান বাড়ির একমাত্র মেয়ে তাহমি। মাস্টার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী সে। সুন্দরী, স্মার্ট, বুদ্ধিমতী মেয়ে তাহমি। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার সুবাদে একটু বেশি আহ্লাদী বলা যেতে পারে। প্রধান শহরের পাশের এক উপজেলায় খান পরিবারের বসবাস। এই যুগে এসেও তাহমির বাবা ও চাচা একসাথে একই বাড়িতে থাকে। তারিকুল খান ও ফাহিম খান দুই ভাই। বড়ো ভাই তারিকুলের দু’টি সন্তান, ছেলে বড়ো সহন খান আর মেয়ে ছোটো ফাইজা খান। ফাহিম খানের একটি মাত্র সন্তান, তাহমি খান। সহন স্থানীয় উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছে, ফাইজা এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

” তাহমি! তাহমি? কী হয়েছে রে? দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে যাচ্ছে তবুও তুই ঘরে দরজা আঁটকে বসে আছিস! ”
জাহানারা খানের কোনো কথাই তাহমির কর্ণকুহরে পৌঁছাচ্ছে না এখন। কানে হেডফোন গুঁজে সেই বিকেলে ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটা। কিন্তু আরো কয়েকবার মেয়েকে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন জাহানারা। ফাহিম খানও বাসায় নেই এখন। কীভাবে দরজা খুলবে! তাহমিদের তিনতলা বাড়ি, দোতলায় থাকে ওরা আর তিনতলায় সহনরা। নিচতলায় কেউ থাকে না। জাহানারা খান কী করবে বুঝতে না পেরে তড়িঘড়ি করে সহনের নম্বরে কল লাগালেন।

” হ্যালো ছোটো মো!”
” সহন তুই বাসায় ফিরেছিস?”
জাহানারা খানের চিন্তিত কণ্ঠস্বরে সহন কিছু একটা আঁচ করতে পেরে উন্মুক্ত শরীরে একটা টি-শার্ট পরে নিলো।
” হ্যাঁ। কিছু হয়েছে? আমি আসবো? ”
” হ্যাঁ। তাহমি দুপুর থেকে ঘরে ঢুকে দরজা আঁটকে আছে। কোনো সাড়াশব্দ নেই। ”
” দেখো তোমার মেয়ে হয়তো মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। ”
সহন আর তাহমির সম্পর্ক খুব একটা ভালো না। অবশ্য তাতে তাহমির অবদান বেশি। সব সময় সহনকে জ্বালাতন করতে না পারলে ওর শান্তি লাগে না। এই তাহমির জন্যই তো গত বছর সহনের রিলেশনশিপটা ভেঙে গেলো।
” উফ! বাবা তুই একবার আয়।”
” আমি দরজার বাইরে আছি। দরজা খুলে দাও।”
জাহানারা খান তড়িঘড়ি করে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। সহন ঘরে ঢুকেই সোজা তাহমির ঘরের দিকে এগোলো। মনে মনে তীব্র প্রতিজ্ঞা করে নিলো যদি আজ সত্যি, অসভ্য মেয়েটা ঘুমিয়ে থেকে সবাইকে টেনশনে ফেলে তাহলে ওর একদিন কি সহনের একদিন।
” তাহমি? এই তাহমি? দরজা খুলবি না-কি ভেঙে ঢুকবো? ”

তাহমির মা অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সহনের পাশে। এই মেয়েকে নিয়ে বড্ড চিন্তায় থাকতে হয় উনাকে। কোনো কথা শোনে না। বিয়ে দিয়ে দিবে তা-ও বিয়ে করবে না আর ঠিকমতো লেখাপড়াও না! সহন বারকয়েক ডাকাডাকির পর শেষমেশ দরজা ভেঙেই ঘরে ঢুকলো। দুটো মানুষ এতো চিল্লাচিল্লি করলো, দরজা ভেঙে ঘরে পর্যন্ত ঢুকলো! তবুও এই মেয়ে ঘুমিয়ে যাচ্ছে দেখে সহনের মেজাজ বিগড়ে গেলো। ঘনঘন পা ফেলে বিছানার দিকে এগোলো সহন। আর গিয়েই চুলগুলো ধরে দিলো একটান! ঘুমের ঘোরে এমন চুলে ব্যথা অনুভব করায় ব্যথায় “আহ” জাতীয় শব্দ করে উঠলো তাহমি। ঘুমঘুম চোখে উঠে বসে ভালো করে তাকাতেই দেখলো সামনে তার বিশিষ্ট কাজিন ব্রাদার বসে, আছে তা-ও ওর চুলের মুঠি ধরে! জাহানারা খান জানেন এখন এখানে কী হবে। তাই তিনি আগেভাগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছেন। মেয়েটা যে কেনো এমন করে!
” এই উজবুক! তুই আমার চুল টেনে ধরে আছিস কেন? ছাড় বলছি!”
সহনের নাকে একটা টোকা দিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো তাহমি৷ সহন ছাড়লো না। উল্টো আরেকটু জোরে ধরে বললো,
” তুই ঘুমাস আর আমাকে তিনতলা থেকে এসে তোর ঘরের দরজা খুলে ঢুকতে হয় কেন? মরার আগে বইলা মরতে পারিস না? শয়তানের খালাম্মা তুই। ”
তাহমি নিজের চুল ছাড়াতে সহনের নাকে একটা ঘুষি মারতেই সহন টালমাটাল হয়ে যায়। ব্যথায় নিজের নাক চেপে ধরতে গিয়ে তাহমির চুলগুলো ছেড়ে দেয়।
” তাহমি! বড়ো ভাই হই আমি তোর। এভাবে বেয়াদবি করলে কিন্তু তোর হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখবো বললাম । ”
” কচুর বড়ো তুই। সরর এখন এখান থেকে। আজকে রুদ্র আমার সাথে ব্রেকআপ করছে। ”
” আলহামদুলিল্লাহ! ইশ কী যে শান্তি! আল্লাহ মসজিদে মিলাদ দিবো কালই। ”
সহন বসা থেকে উঠে হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো। তাহমি ছলছল নয়নে বসা অবস্থায় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কোথায় তুই একটু সহানুভূতি দেখাবি, তা না করে মিলাদ?
” তোর মতো হারামি ঘরে থাকলে বাইরে আর হারামি থাকা লাগে না। ঘর থেকে বেরিয়ে যা সহনের বাচ্চা। ”

চলবে,