#রঙ_বেরঙে_প্রণয়
#পর্ব_২
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)
” আলহামদুলিল্লাহ! ইশ কী যে শান্তি! আল্লাহ মসজিদে মিলাদ দিবো কালই। ”
সহন বসা থেকে উঠে হাসতে হাসতে কথাগুলো বললো। তাহমি ছলছল নয়নে বসা অবস্থায় ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কোথায় তুই একটু সহানুভূতি দেখাবি, তা না করে মিলাদ?
” তোর মতো হারামি ঘরে থাকলে বাইরে আর হারামি থাকা লাগে না। ঘর থেকে বেরিয়ে যা সহনের বাচ্চা। ”
সহন তাহমিকে ধরে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসাতে চাইলে তাহমি সহনের হাতে একটা ছোটখাটো কামড় বসিয়ে দিলো। ব্যথায় কুঁকড়ে গেলো সহন। তবুও ছাড়লো না। যেনো ওকে বসাতপ না পারলে জীবন বৃথা যাবে সহনের।
” তুই কি কুকুর? সরি তুই কি কুত্তা?”
” তুই ছাড়। আমি শুয়েই থাকবো। বসে থাকলে ঠিকমতো বিরহ ফিল করতে পারি না।”
সহন হাসবে না-কি রাগ দেখাবে সে বিষয় সন্দিহান। তাহমিকে জোর করে বসাতে চাইলে নিজেই পড়লো ওর গায়ের উপর।
” আসছে আমাকে টেনে তুলতে! গায়ে নেই জোর হুহ্। ”
” তাই না? দেখবি জোর আছে কি-না! ”
সহন এ কথা বলে তাহমিকে একপ্রকার কোলে তুলে নিয়ে বসালো।
” আম্মু, আম্মু! এই ছেলেটাকে ঘরে কেন পাঠিয়েছ? অসভ্য একটা! আমাকে কোলে তুলে বসালো।”
মা’কে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বললো তাহমি। সহন কটমট করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
” বেয়াদব মেয়ে পয়দা করছে একটা! সব সময় অসম্মান করে। থাক তুই তোর সাইয়্যার শোকে পাগল হয়ে। ”
সহন কটমট করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। তাহমি আবারো ধপাস করে শুয়ে কানে হেডফোন গুঁজে গান প্লে করলো,
Mujhko iraade dey
Kasamein de, waade dey
Meri duaaon ke ishaaron ko sahaare de
Dil ko thikaane de
Naye bahaane de
Khaabon ki baarishon ko
Mausam ke paimane de
Apne karam ki kar adaayein
Kar de idhar bhi tu nigaahein
Sun raha hai naa tu
Ro raha hun main
Sun raha hai naa tu
Kyun ro raha hun main
” হ্যাঁ তুই কাঁদতে থাক আর রুদ্র না শুনুক। ”
আচমকা ফের সহনের কথায় টনক নড়ে উঠলো তাহমির। গান তো হেডফোনে বাজছে তাহলে বদ লোকটা শুনলো কীভাবে? বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য শোয়া থেকে উঠে বসলো। সহন ততক্ষণে হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে বিছানার একপাশে বসেছে। কান থেকে হেডফোন খোলার পরও গানের আওয়াজ শুনতে পেরে তাহমি বুঝতে পারলো ফোনের সাথে হেডফোনটা কানেক্ট হয়নি । এটা কোনো কথা!
” তুই আবার আসলি কেন ভাইয়া? ”
” তোরে গিলাইতে আসছি। আমার ঠ্যাকা পড়ছে তো সেজন্য। বুঝছস? ”
তরকারি দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে খোঁচা মেরে বললো সহন। এরমধ্যে তাহমির মা এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়েছেন।
” সহন ওরকম বলিস না মেয়েটাকে। ”
” তো কীভাবে বলবো বলো? তোমার মেয়ে কয়দিন পর পর এমন প্রেমটেম করে ডিপ্রেশনে পড়ে আর টেনেটুনে কাকে তুলতে হয়? এই আমি মার্কা বলদকে! ওরে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো না কেন ছোটো মা? ছোটো আব্বু আসুক আজ! ”
জাহানারা খান চুপ করে আছেন। কী বা বলবেন? এই ছেলেটাকে কম তো জ্বালায় না তাহমি। সহন ভাতের লোকমা তুলে তাহমিকে খাইয়ে দিচ্ছে। তাহমিও ভদ্র মেয়ের মতো চুপচাপ খাচ্ছে শুধু। আপাতত সহনের রাগের মাত্রাকে দ্বিগুণ করতে চাচ্ছে না ও।
তাহমির এই নিয়ে বেশ কয়েকটা রিলেশনশিপ ভেঙে গেছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে ওর অতিরিক্ত অধিকারবোধ, আগলে রাখা, সো কলড পাগলামি করা। ছেলেগুলো প্রথম প্রথম সবকিছু মেনে নিলেও একটা পর্যায়ে গিয়ে অতিষ্ট হয়ে যায়। যেমনটা এখন রুদ্র তাহমির উপর অতিষ্ট! রুদ্রর কতো মেয়ে বান্ধবী যে তাহমির হাতে মার খেয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। এসব বিষয় নিয়ে প্রায় বিরক্ত হতো রুদ্র। এসন নিয়ে আরো দু’বার ব্রেকআপ হলেও তাহমি শুধরে যাওয়ার মেয়ে না।
জাহানারা খান মেয়ের এইসব কাজকর্ম মোটেও পছন্দ করেন না। কাউকে পছন্দ হলে প্রেম না করে বিয়ে করে নিতে বলেছেন তিনি। লেখাপড়ার দিকে তাহমি অমনোযোগী বলে এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকেই বিয়ের কথা বলা হচ্ছে ওকে। কিন্তু সে নাছোড়বান্দা! দু’বছর প্রেম করে তারপর বিয়ে করবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। দুইমাসও কারো সাথে সম্পর্কে থাকা কষ্টকর ওর জন্য।
পড়ন্ত বিকেল। সূর্যের আলো ক্ষীণ হয়ে এসেছে। বাড়ির পেছনের নিরিবিলি রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটছে ফাইজা ও তাহমি। ওঁরা দুই বোন প্রতিদিন বিকেলে এখানে আসে। একটা ছোটো ব্রিজ পেরিয়ে সামনে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে। তার নিচে বসার মতো জায়গা করা। সেখানেই এসে বসলো দু’জন। তাহমির পরনে পার্পল কালারের ওয়ান পিস আর জিন্সের প্যান্ট পরা, চুলগুলো মেসি বান করা, চেহারায় কোনো কৃত্রিম প্রসাধনীর ছাপ নেই। ফাইজার বেলায় আবার ব্যাপারটা একেবারে উল্টো। ফাইজা সব সময় মেকআপ করে থাকে। সুন্দর ড্রেসআপ, অর্নামেন্টস পরে নিজেকে সাজিয়ে রাখতেই ভালোবাসে ও। যাকে বলে একেবারে টিপটপ হয়ে থাকা।
” আপু দেখো সামনের চায়ের দোকানে আজ অনেক লোকজন। ”
ফাইজা আঙুল উঁচিয়ে ইশারায় দেখিয়ে বললো। তাহমি একনজরে দেখে নিলো পুরো দোকানের হালচাল। আসলেই আজ অন্যান্য দিনের থেকে লোকসমাগম বেশি ।
” থাক সমস্যা কী? আজকে চা খেতেও ইচ্ছে করছে না। হাতের মধ্যে নিশপিশ করে রে। ”
” ওমা কেন?”
বিস্ময় নিয়ে শুধালো ফাইজা। তাহমি ফিচেল হাসলো। নড়েচড়ে বসে বললো,
” রুদ্র আর সুনয়নাকে মনমতো থাপড়াইতে পারলে শান্তি লাগতো। ”
ফিক করে হেসে দিলো ফাইজা।
” আল্লাহ জানে তুমি কার ঘরে বউ হয়ে যাবে। সেই ছেলের জীবন একেবারে তেজপাতা হবে সে বিষয় আমি শিওর। ”
” হুঁশ! ”
ফোনের রিংটোনের শব্দে নড়েচড়ে উঠলো তাহমি। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনে দৃষ্টিপাত করতেই দেখল রুদ্রর নম্বর। অবাক হলোনা তাহমি। ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরে চুপ করে রইলো রুদ্র কী বলে সেই অপেক্ষায়।
” এই তুই সেদিন কানে কানে কী বলছিস সুনয়নাকে? ও আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে না কেন?”
” আহা! ওটা কানে কানে না, কানে মুখে বলা হবে। আমি তো মুখ দিয়েই বললাম, তুই ঠিকঠাক মতো স্যাটিসফাই করতে পারিস না। ”
ফোনের অপরপ্রান্তে বসে চমকাল, থমকাল রুদ্র। কী বলছে এসব!
” এই তাহমি! কী বলতেছিস ভাই? ”
” বলছি, তুই বেডে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারিস না। মেয়ে কিন্তু যথেষ্ট সেক্সি। নইলে পারিস না শুনেই বিয়েতে না করে দিলো? ”
ফাইজা কানে আঙুল চেপে ধরে এদিকওদিক তাকাচ্ছে। কীসব নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথাবার্তা! ছিহ….
” তাহমি! অসভ্য, বেয়াদব মেয়ে একটা। তুই কী জানিস আমি পারি কি-না! ধরতে গেলে পিছলে যেতিস এখন আবার এসব অভিযোগ! ”
” সেসব তো আর কেউ বিশ্বাস করবে না। প্রেম করেছিস, রুম ডেট যে করিসনি সেটা কীভাবে প্রমাণ করবি তোর নয়না থুক্কু সুনয়নার কাছে? ”
” তুই আসলে সাইকো! আর প্রচন্ড নির্লজ্জ একটা মেয়ে। ধুর…”
রুদ্র রাগে-দুঃখে নিজের ফোনই ফ্লোরে ছুড়ে ফেললো। এদিকে তাহমিকে ফোন রাখতে দেখে কান থেকে আঙুল সরালো ফাইজা। তাহমি ফোনটা ব্যাগে রেখে আনন্দের সহিত গান ধরলো,
❝ আহা কী আনন্দ
আকাশে, বাতাসে। ❞
” আপু এসব কী বললে তুমি? তোমার কি একটুও লজ্জা নেই! ”
ফাইজা মুখ গোমড়া করেই বললো। তাহমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
” আমার নেই বলেই তো তোর আর তোর ভাইয়ের লজ্জা ষোলআনা। এক বংশের তিন ছেলেমেয়েকে লজ্জা দিলে ব্যাপারটা কেমন লাগে না? সেজন্য তোদেরকে দিছে আমাকে দেয়নি। কথা কি ক্লিয়ার না ভেজাল আছে? ”
ফাইজা চুপ করে রইলো। হতাশ! খুব হতাশ কাজিন সিস্টারের আচরণে।
চলবে,