#রঙ_বেরঙে_প্রণয়
#পর্ব_১০
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
( প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)
” ভালো হয়েছে। তোরা দুই ভাইবোন একেবারে সাধু। আর যত দোষ তাহমি ঘোষ, ওকে? ”
তাহমির কথায় সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
সারাদিনের কাজকর্মে বেশ ক্লান্ত জাহানারা। ছোটো করে আয়োজন হলেও বিয়ে তো বিয়েই! তাই খাওয়াদাওয়া শেষে নিজের ঘরে চলে এসেছেন জাহানারা। বিছানা গোছানো শেষ করে মশারী টাঙাচ্ছেন এখন। ফাহিম বারান্দায় বসে ফোনে কথা বলছেন। আগামীকাল ব্যাবসার কাজে শহরের বাইরে যেতে হবে উনাকে।
” হ্যাঁ গো এসো, বিছানা গোছানো শেষ। ”
” ফোনে কথা শেষ করে আসছি জাহানারা। ”
তাহমির মা নিজের বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে। আগে তা-ও মেয়েটা ঘরে ছিলো কিন্তু এখন তো সারাদিন একাই থাকতে হবে। এসব ভেবে মন খারাপ লাগছে জাহানারার। এরমধ্যে ফাহিম এসে শুয়ে পড়েছেন। স্ত্রী’র মন খারাপ বুঝতে পেরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শুধলেন,
” মন খারাপ জাহানারা? ”
” হুম, একটু। ”
” মন খারাপ করো না। এক বাড়ির মধ্যেই তো আছে তাহমি! কপাল ভালো বলেই সহনের সাথে বিয়েটা হয়েছে। যদি দূরে বিয়ে দিতাম তখন কী করতে বলো তো? ”
জাহানারা একটু ভাবুক হয়ে গেলেন। ভুল বলেননি তাহমির বাবা।
” ঠিক বলেছো তুমি। ”
” এখন ঘুমানোর চেষ্টা করো। সকালে আমার তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। ”
জাহানারা স্বামীর কথায় স্বায় দিলেন। চোখ বন্ধ করে ফেলে তাহমির মুখটা ভাবতে ভাবতে একটা সময় ঘুমিয়ে গেলেন।
” বাহ! খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে তো ঘরটা। ”
তাহমি ঘরে হেঁটে হেঁটে খাটে সাজানো ফুলগুলো ছুঁয়ে দিয়ে বললো। পাশাপাশি ফ্লোরে রাখা বেলুনগুলো পা দিয়ে এদিক-ওদিক সরিয়ে দিলো। সহন বিছানায় বসে ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাকিয়ে আছে হবে না, বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে হবে। কোথায় বিছানায় একটু শান্ত হয়ে বসে থাকবে তা না করে এভাবে হেঁটে হেঁটে ফুলগুলো দেখছে। আজকে যে ওর ফুলসজ্জা আর সামনে জলজ্যান্ত একটা স্বামী বসে আছে সে বিষয় একটুও হেলদোল নেই। অবশ্য ফুলসজ্জা নিয়ে সহনেরও মাথা ব্যথা নেই কিন্তু বসে তো দু’টো কথা বলবে?
” হ্যাঁ সুন্দর লাগছে। ফুলগুলো নষ্ট করিস না। ”
” এমনি তো সব নষ্ট হয়ে যাবে! ”
তাহমি হেলেদুলে এসে বিছানায় সহনের মুখোমুখি বসলো। চুলগুলো খোঁপা করা,কানে সোনার দুল, গলায় চেইন,পরনে গাঢ় গোলাপি রঙের শাড়ি। সহন ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো,
” কীভাবে নষ্ট হবে ? ”
” কেনো তুমি ফুলসজ্জা করবে না আমার সাথে? ”
তাহমির ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি। মেয়েটার এমন প্রশ্নে থতমত খেয়েছে সহন । কী বলা উচিত!
” একদম দুষ্টমি করবি না বললাম। ”
” আজব! ”
তাহমি মুচকি হেসে সহনের কোলে হুট করে শুয়ে পড়লো। সহন বরফের ন্যায় জমে গেছে একেবারে। এই মেয়ে কি জোরাজোরি করবে!
” তাহমি শোন।”
” হু বলো। তবে তার আগে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। ”
সহন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
” সবকিছু তো হুট করে হয়েছে তাই আমাদের উচিত একটু সময় নেওয়া। ”
” কীসের জন্য? ”
ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকাল তাহমি।
” না মানে…”
” শোনো ফুলসজ্জা বারবার আসে না। তাছাড়া তুমি আমার বর এখন। কীসের সময় লাগবে হ্যাঁ? এক্স আমার ছিলো তোমার না। আমার তো সময় লাগবে না। এসব বাদ দিয়ে কাছে এসো তো। ”
সহন শুকনো ঢোক গিলে তাকাল তাহমির চোখে। এমনিতে অন্য কোনো মেয়ে হলে ইতস্তত লাগতো না ওর। কিন্তু তাহমিকে দেখে এমন লাগছে। কীভাবে কাছাকাছি যাবে ও? দু’দিন আগেই তো ভাইয়া বলে ডাকতো মেয়েটা। বিরক্তিকর ব্যাপার স্যাপার ……
” তুই ঘুমা। কালকে হবে সব। আজ বাদ দে শুধু। ”
তাহমি শোয়া থেকে উঠে বসে সহনকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে বেচারা। বরের বুকের উপর শুয়ে ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে দিয়ে বললো তাহমি,
” জানো একদিন স্বপ্নে তোমাকে টসটসে একখানা চুমু খেয়েছিলাম। আজকে সেটা বাস্তবতার রূপ পাবে। ”
” স্বপ্নে? তুই স্বপ্নে এসব করেছিস আমাকে? তুই এত্তো নির্লজ্জ কেন ভাই! ”
” আমি তো এমনই! নতুন জানলে? এসব বাহানা রাখো তো। আসো চুমু খাই। ”
তাহমি সহনের বুকে ভর দিয়ে ঠোঁটের দিকে ঠোঁট এগিয়ে দিলো। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উঁচু করে চোখে ঘনঘন পলক ফেলছে ও।
” সর। ”
” উঁহু। একটা কিস করো না। ”
” কালকে করবো। ”
” আজকে কি ঠোঁটের উপোস চলছে তোর? সহনের বাচ্চা তুই কিস করবি কি-না ব….”
তাহমির কথা শেষ হওয়ার আগেই সহনের শক্ত ঠোঁটের স্পর্শে শিউরে উঠলো ওর কোমল ওষ্ঠ জোড়া। আবেশে দু’জনেই চোখ বন্ধ করে ফেললো তৎক্ষণাৎ। মিনিট পাঁচেক পরে সহনের স্পর্শ থেকে মুক্ত পেলো তাহমি। দু’জনেই ভারি নিঃশ্বাস ফেলছে। তাহমির পিঠে দু’হাত রেখে বক্ষে জড়িয়ে রেখেছে সহন। এতগুলো বসন্ত পেরিয়ে আজ ভরা যৌবনা এক নারী সহনের শরীরের সাথে আষ্টেপৃষ্টে আছে। তাও তার বিবাহিতা স্ত্রী! তাই স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে সঁপে দিয়েছে। নেশা ধরা কণ্ঠে শুধালো সহন,
” হয়েছে? না-কি আরো লাগবে? ”
” পারবে? ”
তাহমি মুচকি হেসে সহনের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো যেনো। সমস্ত ইতস্ততা ভুলে তাহমির প্রশ্নের জবাব দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সহন।
পুরনো সম্পর্কে পেছনে ফেলে নতুন করে জীবন শুরু করলো তাহমি। সব বিবাহিত সম্পর্কে শুরু থেকেই ভালোবাসা থাকে এমন নয়। ভালোবাসা ছাড়াও বৈবাহিক সম্পর্ক শুরু হয়। আর ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে পারস্পরিক বন্ধন, ভালোবাসা। তাহমি ও সহনের মধ্যেও সময়ের সাথে সাথে গভীর প্রেমের সূত্রপাত ঘটে। একসাথে থাকতে থাকতে আরো স্ট্রং বন্ডিং তৈরি হয় ওদের।
ভার্সিটিতে শেষবারের মতো এসেছে ফাইজা। গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়ায় এখানে আর আসা হবে না। সবার সাথে দেখা শেষে টিচার্স রুমে এসেছে ও। রওনক স্যার ডেকে পাঠিয়েছে ফাইজাকে। রওনক ওদের একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের টিচার। বছরখানেক হবে ভার্সিটিতে জয়েন হয়েছিল। এটাই প্রথম চাকরি উনার। তবে বেশ মিশুক আর ভালো মনের মানুষ সে।
” স্যার ডেকেছিলেন? ”
চেয়ারে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো রওনক। ফাইজার ডাকে ওর দিকে দৃষ্টিপাত করলো। ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটিয়ে বললো,
” হ্যাঁ, বসো। কিছু খাবে? চা বা কফি? ”
ফাইজার অস্বস্তি লাগছে। এমনিতেই কেউ নেই এখানে, তার উপর আবার এতো আতিথেয়তা! অন্য কেউ দেখলে কি-না কী ভাবে আবার।
” না স্যার। ”
ফাইজা সামনাসামনি একটা চেয়ারে বসে বললো।
” এটা নাও। আশা করি বিকেলে দেখা হবে, এসো এখন। ”
ফাইজার দিকে একটা হলদে রঙের খাম এগিয়ে দিলো রওনক। ফাইজা কিছুটা চমকাল। এরকম খামে করেই তো আগন্তুক চিঠি দেয়! খামটা হাতে নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো ফাইজা। ভার্সিটির বাইরে গিয়ে খুলবে বলে বেশ তাড়াহুড়ো করে বের হলো সেখান থেকে। বুকটা কেমন করছে। মনে হচ্ছে…. মনে হচ্ছে আগন্তুক বুঝি এবার ধরা দিবে।
পড়ন্ত বিকেল। পার্কের একপাশে বেঞ্চিতে বসে আছে ফাইজা। পরনে তার কালো রঙের গাউন। রওনক দূর থেকে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখে নিলো ওকে। তবে ফাইজা সেটা দেখেনি। ভার্সিটি থেকে বেরিয়েই হলদে রঙের খাম খুলে চিঠিটা পড়েছিল ফাইজা। সেখানে লেখা ছিলো আগন্তুককের আসল পরিচয়। হ্যাঁ রওনকই সঙ্গে আগন্তুক, ফাইজার ভালোবাসার মানুষ। এখন সময় হয়েছে বলেই রওনক নিজে থেকে ধরা দিলো ওর সামনে। তবে ফাইজা কখনোই ভাবেনি তার স্যারই আগন্তুক হতে পারে।
চলবে,