রঙ বেরঙে প্রণয় পর্ব-১২ এবং শেষ পর্ব

0
92

#রঙ_বেরঙে_প্রণয়
#অন্তিম_পর্ব
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)

” না তো। ”
চট করে উত্তর দিলো ফাইজা। তবে ওর হাবেভাবে তাহমির আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছু ।

” মনে হচ্ছে একেবারে ‘হ্যাঁ তো’ হবে উত্তরটা। ”

ফাইজা মুচকি হেসে তাহমির হাতদুটো চেপে ধরে কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলতে লাগলো,

” আসলে ভাবি আমাদের ভার্সিটির টিচার রওনক স্যার আমাকে পছন্দ করেন। তো উনি বাসায় বিয়ের কথা বলতে আসতে চাচ্ছেন। তুমি যদি বাবা-মাকে একটু বলতে…..”

তাহমি মুচকি হাসলো।

” আরে বাহ! ছেলে শিক্ষক, তাহলে তো দেরি করার কিছু নেই। শিওর বড়ো আব্বু, আম্মু রাজি হবে। তুই কোনো চিন্তা করিস না। আমি এখুনি গিয়ে বলবো আম্মুকে। ”
” কিন্তু মা যদি.. ”
” আমাকে নিয়ে কী বলছিস তোরা দু’জন? ”

ফাইজার কথা শেষ না হতেই দরজা ডিঙিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন আইমান। মায়ের উপস্থিতি টের পেয়ে চুপ করে গেলো ফাইজা। মোটামুটি ভয় ভয় লাগছে ওর। তাহমি বসা থেকে উঠে হাসি মুখে শ্বাশুড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।
” বড়ো আম্মু একটা ভালো নিউজ আছে। ”

” ভালো নিউজ? কী নিউজ বল তো শুনি। ”

” ফাইজার ভার্সিটির টিচার রওনক ওকে পছন্দ করে। তোমরা চাইলে বিয়ের জন্য বাসায় কথা বলতে আসবে। একটু ভেবে বলো তো!”

তাহমির কথা শেষ হতেই আইমান মেয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। ফাইজা মায়ের চোখে চোখ রাখতে পারলোনা। দৃষ্টি মাটিতে নিবদ্ধ করে বসে বসে হাত কচলে যাচ্ছে সে। আইমানের ভাবভঙ্গি দেখে তাহমিও চুপ হয়ে গেছে। বড়ো আম্মু কি রাগ করলেন? মনে মনে এসব ভাবছে ও।

” ফাইজা তাহমি কী বলছে? ”

মায়ের প্রশ্নে হাঁটুতে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে ফাইজার। গলা দিয়ে স্বরও বের হচ্ছে না। তবুও থেমে থেমে উত্তর দিলো মেয়েটা।

” ভাবি যা বলেছে সব সত্যি। ”

” তুই কি সেই ছেলেকে পছন্দ করিস? বা তোদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে? ”

” সম্পর্ক নেই মা। তবে পছন্দ করি। তোমরা যা বলবে, চাইবে সেটাই হবে। ”

আইমান মেয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাহমি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। ফাইজা আবারো দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো।

” বেশ। আমরা কথা বলবো রওনকের সাথে। যেহেতু তোর পছন্দ আশা করি আমাদেরও পছন্দ হবে। আমি রাতে তোর বাবার সাথে কথা বলবো। আগামীকাল আসতে বলিস ওকে। ”

ফাইজার মাথায় হাত রেখে মুচকি হেসে বললেন আইমান। ফাইজাও খুশিতে বসা অবস্থায় মায়ের কোমর ধরে জড়িয়ে ধরল। তাহমি হাসতে হাসতে এসে ফাইজার পাশে বসে অভিমানী সুরে বলে,

” হ্যাঁ মেয়ে তো তোমার একটাই! আমি তো পরের মেয়ে। সব আদর নিজের মেয়ের জন্য হুহ্। ”

আইমান তাহমির মাথায়ও হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
” ফাজিল মেয়ে একটা। তোকে কতবার বললাম না, এবার ঘরে একটা বাচ্চাকাচ্চা আনার ব্যবস্থা কর? তুই কথা শুনিস আমার? এজন্যই তো তোকে আদর করি না। ”

” বড়ো আম্মু! ”
তাহমিও আইমানকে জড়িয়ে ধরেছে। দুই মেয়েকে আপাতত আদর করছেন আইমান।

পরেরদিন ফাইজার কথামতো বিকেলবেলা রওনক এলো ওদের বাসায়। তিন রকমের মিষ্টি, পাঁচ রকমের ফলমূল নিয়ে বাসায় ঢুকতে একটু কষ্ট হয়েছে বেচারার। অবশ্য রওনকের সাথে ড্রাইভার ছিলো সাথে। খান পরিবারের লোকজন তো হবু জামাই এর উপহারসামগ্রী দেখে অবাক হয়েছে। এতকিছু নিয়ে কেউ আসে? তাহমি তো ফাইজাকে বারবার,
“ জিতেছ ননদী, জিতছ।” বলে ক্ষ্যাপানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আইমানও হবু মেয়ের জামাইকে আপ্যায়ন করার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা করে রেখেছে। তারিকুল ইতিমধ্যে রওনকের সাথে কথাবার্তা বলতে শুরু করেছে। সহনও পাশে আছে তবে কথা কম বলছে ও। কেনো জানি প্রথম দেখায়ই রওনককে বেশ ভালো লেগেছে সহনের। সেজন্য আর অতিরিক্ত কোনো প্রশ্ন করছে না।
” আচ্ছা একা একা থাকতে খারাপ লাগে না তোমার? ”
তারিকুলের প্রশ্নে মৃদু হেসে বললো রওনক,

” মানুষ অভ্যাসের দাস আঙ্কেল। অভ্যস্ত হয়ে গেছি। যার কেউ নেই তাকে তো একাই থাকতে হয়। ”

” থাক মন খারাপ করতে হবে না। আমরা আছি এখন। ফাইজা আমাদের খুব আদরের মেয়ে রওনক। মেয়ের পছন্দের উপর আমাদের কোনো সংশয় নেই। কারণ ছোটো থেকেই ভীষণ খুঁতখুঁতে স্বভাবের ও। কোনো কিছু ভালো করে না দেখে পছন্দ পর্যন্ত করতোনা। সেখানে জীবনসঙ্গী নির্বাচনে অবশ্যই বিচক্ষণতা দেখাবে বলেই আশাবাদী আমরা। ”

এরমধ্যে সামনের টি-টেবিলে হরেকরকমের নাস্তা এনে রেখেছে তাহমি ও ফাইজার মা।

” চিন্তা করবেন না আঙ্কেল, আমি আমার সাধ্যমতো ফাইজার সর্বোচ্চ খেয়াল রাখবো। কোনো আদরযত্নের কমতি হবে না। তাছাড়া আমার সবকিছুই ওর। একা মানুষ, ঝামেলা নেই কোনো। ”

” তা ঠিক। নাও খাওয়া শুরু করো। ”
” আপনিও নিন আঙ্কেল। ভাইয়া আপনিও!”
রওনক অল্পকিছু খেলো। সহন নিজের মতো খেতে ব্যস্ত। তাহমি কতবার ইশারায় কম কম খেতে বলছে তার হিসাব নেই। কথাবার্তা শেষে বিয়ের জন্য একটা তারিখ ঠিক করলো সবাই। যেহেতু রওনকের পরিবারের কেউ নেই তাই বিয়েতে আর দেরি করতে চাননা তারিকুল। রওনকও রাজি তাতে।

কলিংবেলের শব্দে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন জাহানারা। এ সময় কে এলো ভাবতে ভাবতে দরজার কাছে এগিয়ে গেলেন।
” মা! ”
” আরে তোরা! আয় ভেতরে আয়। ”
সহন আর তাহমি বাসার ভেতরে ঢুকল। বসার ঘরে সোফায় বসে টিভির দিকে দৃষ্টিপাত করলো সহন। তাহমি মায়ের পাশে বসেছে।
” আজকে এখানে থাকবো মা। ”
” তা থাকবি থাক। তোদেরই তো সব। কিন্তু বিকেলে বললি না কেন? বাজার থেকে কিছু আনাতাম! শুধু মাছ আর ডাল রেঁধেছি আজ। ”
” ছোটো মা তুমি সব সময় খাওয়ার চিন্তা কেন করো? মনে হয় আমি আরেক বাড়ির ছেলে! তা-ও যদি হতাম বাইরের কেউ তাহলে না হয় এমন ব্যস্ত হতে।”
জাহানারা খান বসা থেকে উঠে সহনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
” জামাই তো জামাই হয় রে সহন। আতিথেয়তা না করলে হয়? বিরিয়ানি খাবি তোরা? অল্প মাংস আছে ফ্রিজে। তোদের দুজনের জন্য রান্না করি গিয়ে। ”
তাহমি বসা থেকে উঠে এক লাফে মায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
” আবার জিজ্ঞেস করে! যাও যাও রান্না করো। কতদিন তোমার হাতের বিরিয়ানি খাইনি হুহ্। ”
জাহান্নামে সহাস্যমুখ করে বলেন,
” ঠিক আছে। তোরা বস আমি যাই। ”
” ওকে ছোটো মা। ”

রাতের খাবারের মেনুতে আজ বিরিয়ানি খেলো ওরা। মূলত তাহমির বাবা শহরের বাইরে আছে বলেই মায়ের কাছে থাকতে এসেছে ওরা। একা বাড়িতে রাতে থাকতে কার ভালো লাগে!

নিজের বেডরুমে ঘুমানোর শান্তিই অন্যরকম। বিছানায় শুয়ে পায়ের উপর পা রেখে গুনগুনিয়ে গান গাইছে তাহমি। সহন তাহমির চুলের ঘ্রাণ নিতে ব্যস্ত।

” এই তাহমি! ”
” হুম বলো।”
” ফোনটা রেখে এদিকে মনোযোগ দে একটু। ”
তাহমি সহনের দিকে দৃষ্টিপাত করলো। ঠোঁট কামড়ে মুচকি মুচকি হাসছে ও।
” নিজের ঠোঁট নিজে কামড়ে কী বোঝাতে চাচ্ছ?”
” বউয়ের ঠোঁট পাচ্ছি না সেটা। ”
সহন তাহমিকে নিজের বুকের উপর শোয়াল। তাহমি বুকে নাক ঘষতে শুরু করেছে।
” ভালো কথা, বড়ো আম্মু বলেছে একটা বাচ্চাকাচ্চার ব্যবস্থা করতে। ”
” তাই নাকি? আয় তাহলে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করি। ”
” আচ্ছা আমাদের বেবি কি কি তোমার মতো হবে না-কি আমার মতো?”
সহন তাহমির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,
” নিশ্চয়ই আমার মতো। তোর মতো চণ্ডালী হলে তো সমস্যা। ”
সহনের কথা শেষ হতেই তড়িৎ গতিতে উঠে বসল তাহমি। সরাসরি সহনের বুকের উপর বসে গলা টি*পে দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো,
” আমি চণ্ডাল? ”
” আমার ভুল হয়েছে রে। মাফ কর,দোয়া চাই। ”
” দোয়া! ”
” হ্যাঁ। গলা টিপে না দিয়ে অন্য কিছু কর। ”
তাহমি প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে সহনের দিকে তাকাতেই সহন তাহমির কোমরে হাত রেখে উল্টো ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। তাহমি মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ফেললো তৎক্ষণাৎ। ভালোবাসার চাদরে প্রিয়তমা স্ত্রী’কে জড়িয়ে নিলো সহন। এভাবেই ভালোবেসে ভালো থাকুক তাহমি ও সহন। সাথে আপনারাও ভালো থাকুন। শীঘ্রই ফিরবো নতুন কোনো গল্প নিয়ে।

সমাপ্ত