রহস্যে ঘেরা ভালবাসা পর্ব-১৬

0
675

#রহস্যে_ঘেরা_ভালবাসা
#পর্ব_১৬
#M_Sonali

মুখ এবং চোখের ওপর কয়েক ফোঁটা হালকা গরম পানি পরতেই চোখ মেলে তাকালাম। দেখলাম মীরের চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে আমার মুখে। সে আমার অনেকটা কাছে শুয়ে, আমায় জড়িয়ে ধরে একনজরে তাকিয়ে থেকে কান্না করছে। বেশ অবাক হলাম। আমি তো এখানে ছিলাম না। তাহলে এখানে এলাম কিভাবে? আমি তো কোনো অদ্ভুত জায়গায় ছিলাম। যার চারিপাশে ছিলো রঙবেরঙের ফুলের বাগান। আর সেখানে শুধু আমি একা ছিলাম। তাহলে এখানে আসলাম কিভাবে? নিজের রুমে নিজের বিছানায় তাও আবার মীরের পাশে! হঠাৎ মীরের কথায় ধ্যান ভাঙলো। সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

–“এখন কেমন লাগছে আব্রু? তুমি ঠিক আছো তো?”

ওনার করা প্রশ্নের কোন উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে উঠলাম,

–“আমি এখানে কিভাবে এলাম মীর? আমিতো একটি অদ্ভুত জায়গায় ছিলাম। যেখানে প্রথমে আমার সাথে খুবই ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেছিল। তারপর হঠাৎ একটি ফুলের বাগানে পৌছে যাই। কিন্তু তারপর কি হলো, আমি এখানেই বা কিভাবে এলাম।”

আমার প্রশ্নের উত্তরে উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসলেন। তারপর আয়নার দিকে একবার তাকিয়ে আবারও আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললেন,

–” তোমার সাথে অনেক কিছু ঘটে গেছে আব্রু। যার ধারণা ও তোমার নেই। আর এসব কিছুর জন্য দ্বায়ী শুধুমাত্র আমি। আমার নিজেকে কন্ট্রোল করা উচিত ছিল। তোমার থেকে দূরে থাকা উচিত ছিল। তোমাকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে তোমার জীবনটা বিপন্ন করে দিতে চলেছি আমি।”

ওনার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে শুয়ে রইলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম উনার কথাগুলোকে। কিন্তু কিছুই যেন মাথায় ঢুকলো না। তাই উঠে বসার জন্য চেষ্টা করতে লাগলাম। তখনই খেয়াল করলাম আমার হাত পেট এবং মাথায় প্রচন্ড রকমের ব্যথা করছে। আমি কোন ভাবেই উঠে বসতে পারছি না। আমাকে উঠে বসার চেষ্টা করতে দেখে উনি আমাকে আলতো করে আবারও শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

–” এভাবে ওঠার চেষ্টা করো না আব্রু। উঠতে তো পাড়বেই না, বরং এতে তোমার শরীর আরো খারাপ হবে। আজকের রাতটা চুপচাপ শুয়ে থাকো। সকালে উঠলে তুমি সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”

ওনার কথামতো আমিও চুপচাপ শুয়ে পড়লাম। তারপর প্রশ্ন করে উঠলাম,

–“কিন্তু আমার শরীর এত ব্যথা করছে কেন মীর? হাত পেট এবং মাথায় এতটা যন্ত্রণা কেন হচ্ছে?কেন উঠে বসতে পারছি না? কি হয়েছিল আমার সাথে? তবে কি এতক্ষণ যেসব ঘটেছে সেসব সত্যি ছিলো? ওগুলো কিছুই কি আমার দুঃস্বপ্ন নয়?”

–” তুমি এতক্ষণ যে সব দেখেছো সেসব তোমার স্বপ্ন নয় এবং বাস্তবও নয়। বরং সেসব ছিল তোমার জন্য একটা সংকেত মাত্র। যা হয়তো ভবিষ্যতে তোমার সাথে ঘটতে যাচ্ছে। বলতে গেলে তার চাইতেও ভয়ানক কিছু তোমার সাথে ঘটতে যাচ্ছে। সে জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে তোমায়।”

এতোটুকু বলে থামলেন উনি। ওনার কথায় যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কী বলল উনি? আমি এতক্ষণ যেসব দুঃস্বপ্ন ভেবেছিলাম সেসব আমার সাথে সত্যিই ঘটবে! তার চাইতেও ভয়ংকর কিছু ঘটবে? এটা কিভাবে মেনে নেব? ভাবতেই যেন শরীরের প্রতিটি লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে ভয়ে। ওনাকে আবারও প্রশ্ন করে বলে উঠলাম,

–” মীর এভাবে চুপ করে বসে থাকবেন না আপনি। আমাকে আর কোন ধাধায় ফেলে রাখবেন না প্লিজ। সব কিছু বলুন কি হচ্ছে এসব আমার সাথে? আর আপনি আসলে কে? কি চান আমার থেকে?”

আমার কথার উত্তরে উনি মাথা নিচু করে বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। কোন কথা বললেন না। আমিও আর কোন প্রশ্ন করছি না। শুধু এক নজরে উনার দিকে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করছি কি হচ্ছে বা কি হবে। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর উনি আবার বলতে শুরু করলেন,

–” আমি খুশি যে তুমি জেনে গেছ আমি একজন জিন। তারপরেও তুমি আমাকে আর ভয় পাচ্ছ না। আমাকে মেনে নিয়েছো। এ কারণে আমি অনেক খুশি। কিন্তু তুমি জানো না, আমাকে মেনে নেওয়ার কারণে নিজের জীবনে কত বড় বিপদ টেনে নিয়ে এসেছ তুমি। আমি জিন হলেও ততটা ও শক্তিশালী নয় যে তোমাকে সব বিপদ থেকে প্রটেক্ট করতে পারব। আজকে অল্প একটু সময়ের জন্য তোমাকে হারাতে বসেছিলাম। তোমার কিছু হয়ে গেলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেত। আমি বেঁচে থাকতে পারতাম না আব্রু। অনেক বেশি ভালোবাসি আমি তোমায়। এতটা ভালবাসি যে বলে বোঝাতে পারবো না। তোমার চাইতে হাজারগুণ বেশি ভালো আমি তোমায় বাসি।”

কথাটা বলতে বলতেই ওনার দু চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরল। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি। উনার কথাগুলো শুনে মনের মাঝে এক অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও কোথাও যেন একটা ভয় এবং নানা রকম প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। তাই ওনার কথায় কোন উত্তর না দিয়ে ধীরে ধীরে কষ্ট করে উঠে বসলাম। তারপর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

–” এটাই যদি হবে তাহলে ওই মেয়েটা কে ছিল? যাকে আমি ছাদের উপর আপনার সাথে দেখেছিলাম। যাকে আপনি কথা দিয়েছিলেন বিয়ে করবেন বলে! যার জন্য আপনি আমাকে অপমান করেছিলেন। সেই মেয়েটি তবে কে ছিল মীর? আর কেন করেছিলেন তখন এমনটা? এখনই বা কেন আমাকে ভালবাসার কথা বলছেন? আপনার কোন কথাটা বিশ্বাস করব আমি? সেদিনের সেই কথাগুলো, নাকি এখনকার বলা এই কথাগুলো।”

আমার কথার উত্তরে উনি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তারপর আমাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

–” এতটা উত্তেজিত হইওনা আব্রু। এখন তোমার শরীরের কন্ডিশন খুব একটা ভালো নয়। তোমাকে সুস্থ হতে হবে। সামনে তোমার অনেক বিপদ রয়েছে। আর সেগুলোর মোকাবেলা তোমাকে একাই করতে হবে। তাই নিজেকে প্রস্তুত করো। সবকিছু জানতে পারবে একে একে। যেহেতু তুমি অনেকটাই জেনে গেছ তাই বাকিগুলোও তোমার থেকে আর লুকোনোর কোন প্রশ্ন আসে না। তবে সেসব জানার জন্য তোমার যথেষ্ট শক্তি এবং সাহসের প্রয়োজন। তাই এখন চুপচাপ ঘুমাও। সকালে সুস্থ হলে কালকে আমি তোমাকে সব বলবো ইনশাআল্লাহ। এটা প্রমিস করছি তোমার কাছে।”

কথাগুলো বলেই আলতো করে কপালে চুমু একে দিলেন। তারপর আমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। ঘটনার আকর্ষিকতায় একদম চুপ হয়ে গেলাম। শান্ত মেয়ের মত ওনার বুকে মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে রইলাম। উনি ফিসফিস করে কানে কানে বললেন,

–“আব্রু, রাতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা ভুল করেও সকালে কাউকে বলবে না। তাহলে তোমার মত তোমার পরিবারেরও বিপদ হবে। সকালে সবার সাথে একদম স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবে। এখন ঘুমিয়ে পরো আমি এখানেই আছি। তোমার পাশে!”

ওনার কথায় ওনার আরেকটু কাছে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম। আর উনি আলতো করে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। সাথে একটু পর পর কপালে, গালে চুমু দিতে লাগলেন।

————————–

দরজায় টোকা দেওয়ার শব্দে ঘুম ভাঙলো আমার। তাকিয়ে দেখি চারিপাশে আলোকিত হয়ে গেছে। জানালার কোনা ভেদ করে রোদ এসে পড়েছে রুমে। বুঝতে পারলাম বেলা অনেকটা হয়ে গেছে। তখনই চিৎকার শুনলাম হায়ার। সে আমাকে ডেকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য বলছে। আমি দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে বসলাম। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে মীরকে খুঁজতে লাগলাম। না সে কোথাও নেই। সেই সাথে আমার শরীরের কোনো ব্যথাও নেই। সবকিছুই যেন একদম স্বাভাবিক। মনে হচ্ছে রাতে যা হয়েছে সব কিছুই স্বপ্ন ছিল। কিছুই বাস্তব নয়। একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নিচে নেমে পড়লাম। তার পরে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই হায়া ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

–” কিরে আব্রু, তোর কি এখনো কোনো আক্কেল হবেনা? কত বেলা হয়ে গেছে দেখেছিস। এত বেলা পর্যন্ত কেউ ঘুমায়? এখন আমাদের বিয়ে হয়েছে, তাই বুঝতে হবে এত বেলা পর্যন্ত ঘুমালে লোকে খারাপ বলবে। তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে আয় ব্রেকফাস্ট করবি।”

কথাগুলো বলেই আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল হায়া। আমিও আর পিছু ডাকলাম না তাকে। চুপচাপ দরজা লাগিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালাম। আর রাতের ঘটনা গুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম। কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে ওগুলো সব আমার স্বপ্ন ছিল। কারণ বাস্তব হলে তো মীর সকালে আমার পাশে থাকতো! রাতে তো আমি তাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। তাহলে এখন কেন নেই সে? কথাগুলো মনে মনে ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেল। মীরকে খুব বেশি মিস করতে লাগলাম। তখনই হঠাৎ কারও গরম হাতের স্পর্শ পেলাম। মীর পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে আমায়। আয়নায় তাকাতেই তার হাসিমাখা মুখটা দেখতে পেলাম। সে কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিস ফিস করে বলল,

–” কাকে খুঁজছিলে ঘুম থেকে উঠে? আমাকে নিশ্চয়ই! আর এতক্ষণ মনে মনে কার কথা ভাবছিলে আরু পাখি? এইতো আমি তোমার পাশে, বল কি বলতে চাও।”

ওনার কথায় বেশ লজ্জায় পড়ে গেলাম। কি বলব বুঝতে পারছি না। মাথা নিচু করে লুকানোর জায়গা খুঁজতে লাগলাম। তখনই উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। থুতনিতে আলতো করে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে ধরে কপালে চুমু একে দিয়ে বললেন,

–” এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে আরুপাখি? কালকে রাত্রে যা হয়েছে সব সত্য ছিল। কোন কিছুই তোমার স্বপ্ন নয়। আর সারারাত তুমি আমার বুকেই ঘুমিয়ে ছিলে। আমিও তোমার পাশেই ছিলাম। এখন হায়া ডাকতে এসেছে বলে ওখান থেকে চলে গিয়েছিলাম। তবে রুম থেকে যাইনি। এতক্ষণ আয়নার মাঝে ছিলাম আর তোমার অবস্থা দেখছিলাম।”

ওনার কথায় ওনার দিকে ফিরে তাকালাম। তারপর শান্ত গলায় বলে উঠলাম,

–” এত বেলা হয়ে গেছে আপনি আমাকে ডাকেননি কেন? আর এতক্ষণ আয়নার মাঝে লুকিয়ে ছিলেন তাহলে কেন কথা বললেন না আমার সাথে? আমি যে আপনাকে খুঁজছিলাম সেটা দেখে মজা নিচ্ছিলেন তাই না?”

আমার কথায় মুচকি হাসলেন উনি। আমাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,

–” তোমার কাছে যখন নিজের ভালবাসার প্রকাশ করেই ফেলেছি! তখন যে আর তোমার থেকে দূরে থাকতে পারছি না আরুপাখি। সব সময় তোমার পাশাপাশি থাকব। হয়তো অদৃশ্য হয়ে বা সামনা সামনি দৃশ্যমান হয়ে। কিন্তু তোমার ছায়া হয়ে থাকবো আমি। এটা জেনে রাখো। এখন যাও হাতমুখ ধুয়ে ব্রেকফাস্ট করে আসো। আমি তোমার জন্যে এখানেই আছি।”

–“আপনি নাস্তা করবেন না?”

আমার প্রশ্নে উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। তারপর আচমকাই আমার ঠোঁট তার ঠোঁট দিয়ে আঁকড়ে ধরলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বললেন,

–” এর চাইতে বেষ্ট নাস্তা আর কিছু হতে পারে না। তাই আমার নাস্তা করা হয়ে গেছে। এখন তুমি যাও নইলে কিন্তু,,,,!”

কথাগুলো বলেই দুষ্টু হেসে তাকালেন আমার দিকে। আমি ওনার চোখের ভাষা বুঝতে পেরে দ্রুত ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়লাম। তারপর হাত মুখ ধুয়ে এসে ওনাকে দেখেও না দেখার ভান করে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে বেরিয়ে গেলাম। বেরিয়ে গেলেও বুঝতে পারলাম উনি আমার সিন দেখে হাসছেন। আমি বেশ লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলাম। হায়া আমাকে লজ্জা পেতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তারপর প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলল,

–” কিরে আব্রু একটু আগে যখন তোর রুমে ডাকতে গিয়েছিলাম তখন মুখটা কেমন প্যাঁচার মতো বানিয়েছিলি। তাহলে এখন এইটুকু সময়ের মাঝে আবার কি হলো বলতো? যে এত লজ্জায় রাঙ্গা হয়ে যাচ্ছিস? মীর ভাইয়ের সাথে কথা বলেছিস তাই না?”

ওর কথায় হকচকিয়ে উঠলাম। কি বলব বুঝতে পারছি না। ওর পাশে বসে আছে সায়েম ভাই। ভাগ্যিস এখানে আব্বু-আম্মু কেউ নাই। নইলে তো লজ্জায় এতক্ষণ অবস্থা খারাপ হয়ে যেত আমার। আমি কিছু বলার আগেই সায়েম ভাই ওকে হাত দিয়ে জোরে একটা গুতা দিল। সাথে সাথে থেমে গেল হায়া। আমিও আর কোন উত্তর দিলাম না।

সবাই যার যার মতো খেতে শুরু করলাম। তখনই হঠাৎ সায়েম ভাইয়া প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,

–” আব্রু, তোমার শরীর এখন কেমন। সুস্থ আছো তো তুমি, কোন সমস্যা নেই তো?”

উনার কথায় মুচকি হেসে উত্তর দিলাম,

–“জ্বি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ এখন রাতের চাইতে অনেকটাই ভালো আছি।”

তখনই পাশ থেকে হায়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,

–“কেন কি হয়েছিল আব্রুর? আর আমি কোন কিছু জানিনা, তুমি কিভাবে জানলে সায়েম? কিরে আব্রু, আমি তো কিছু জানিনা। রাতে কি হয়েছিল তোর?”

হায়ার কথায় আমারও খেয়াল হলো। রাতে আমি অসুস্থ ছিলাম এটা সায়েম ভাই কিভাবে জানলো? সেটা তো ওনার জানার কথা নয়। তখনই মনে হলো, মীর যদি জ্বীন হয়ে থাকে, তাহলে মীরের ভাই সায়েম ভাইয়া সেও নিশ্চয়ই একজন জিন। তাই হয়তো সেও জানে। কিন্তু হায়ার প্রশ্নের কী উত্তর দেবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমায় চুপ দেখে হায়া আবারো কিছু বলতে যাবে। তখনই সায়েম ভাইয়া বলে উঠল,

–” আরে হায়া আর বলো না। কালকে রাত্রে তুমি ঘুমিয়ে পড়ার পর আব্রু এসেছিল তোমাকে ডাকার জন্য। ওর অনেক মাথা ব্যথা করছিল তাই ওষুধের জন্য এসেছিলো। তখন টেবিলের ড্রয়ারের মাঝে ওষুধ পেয়ে সেটা দিয়েছিলাম ওকে। তাই জিজ্ঞেস করলাম এখন কেমন আছে।”

ওনার কথা শুনে আমিও আর দেরী না করে ওনার সাথে হ্যা তে হ্যা মেলালাম। হায়াও আর কোন প্রশ্ন করল না। তারপর সবাই যার যার মত খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নিজেদের কাজে চলে গেলো। আমিও নিজের রুমে চলে এলাম। কিন্তু রুমে গিয়ে দেখি মীর কোথাও নেই। পুরো রুমটা খালি। বুঝতে পারলাম সে আবারও আমার সাথে লুকোচুরি খেলছে। তাই এদিক সেদিক খুঁজতে লাগলাম। কোথাও না পেয়ে দরজা লাগিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,

–“এই যে মিস্টার জ্বীন স্বামী। এখন আর লুকিয়ে থেকে কি হবে বলেন! আমি জানি আপনি এখানেই আছেন। তাই জলদি সামনে আসুন। আপনার থেকে আমার অনেক কিছু জানার আছে!”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,