রহস্যে ঘেরা ভালবাসা পর্ব-১৮

0
693

#রহস্যে_ঘেরা_ভালবাসা
#পর্ব_১৮
#M_Sonali

–” তুমি কোন সাধারণ মানুষ নও আব্রু। তুমি ইদ্রিস জ্বীন রাজ্যের রাজা আয়াজ এবং মানব কন্যা সোনালীর একমাত্র মেয়ে। তুমি একজন জ্বীন কন্যা।কোনো সাধারণ মানবী নও।”

উনার কথা শুনে যেন বিদ্যুৎ চমকালো আমার মাঝে। মাথার মধ্যে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যেতে লাগল। আমি ওনার থেকে দ্রুত সরে গিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। দু পা পিছিয়ে গিয়ে ওনার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বললাম,

–” দেখুন মীর ফাজলামির একটা লিমিট থাকে। যেটা আপনি হয়তো ভুলে গেছেন। তাই পাগলের মত তখন থেকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছেন। এখন তো আমার সন্দেহ হচ্ছে যে আপনি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন কি না! সেই কখন থেকে আমাকে পাগল করার জন্য এসব উল্টোপাল্টা কথা বলে যাচ্ছেন। আপনি হয়তো চাইছেন এভাবে আমি পাগল হয়ে আপনার জীবন থেকে সরে যাই। আর আপনি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারেন। ও হ্যাঁ আপনি তো অন্য কাউকে ভালোবাসেন তাহলে আমাকে ভালোবাসবেনই বা কেনো? আসলে আমি’ই বোকা তাই আপনার কথা বিশ্বাস করে এতক্ষণ আপনার কথা শুনছি। আমার প্রথমেই বুঝে নেওয়া উচিত ছিল যে সবকিছু আপনার নাটক।”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে হাঁপাতে লাগলাম। রাগে আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। উনি নিজেকে কি ভাবেন কি, কখন থেকে যা নয় তাই বলে যাবে আর সবকিছু আমার বিশ্বাস করতে হবে? শেষে কিনা উনি আমার বাবা মাকে পাল্টে ফেলতে চাইছেন। আমি কিভাবে কোন জ্বীনের সন্তান হবো।

কথাগুলো ভাবতেই যেন সারা শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে। আমি হাতের মুঠো শক্ত করে কাপতে শুরু করেছি। উনি আমাকে এত রাগ করতে দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। তারপর কিছু একটা ভেবে কাছে এগিয়ে এসে আলতো করে আমার হাতটা ধরে খাটের উপর নিয়ে বসালেন। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

–” শান্ত হও আব্রু, তোমার জায়গায় আমি থাকলে হয়তো আমিও এমন রিঅ্যাক্ট করতাম। কিন্তু সত্যিটা জানতে হলে তোমাকে এসব কিছু সহ্য করতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে। কারণ এখনো তোমার অনেক কিছু জানার বাকি। যেগুলো না জানা অব্দি তুমি কোন কিছুই করতে পারবেনা।যেটা করা তোমার দ্বায়ীত্ব।”

আমি ওনার কথার কোন উত্তর দিলাম না। চুপচাপ বসে থেকে রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলাম। আমার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তারপর আবারও আমার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন,

–” তুমি সেদিন যে মেয়েটিকে ছাদের উপর আমার সাথে দেখেছিলে, আসলে সেটা কোন মেয়ে ছিল না। সেটা ছিল ওই পাখি দুটির মাঝে একটি পাখি। আমার বিশ্বস্ত জ্বীন বন্ধু। যাকে মেয়ের রূপে দেখিয়ে তোমাকে আমার থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। যাতে করে তোমার রহস্য বাকি বদজ্বীনদের কাছে ফাস না হয়। কিন্তু তোমার ভালোর জন্য এটা করতে গিয়ে যে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে! এটা আমি ভাবতেও পারিনি কখনো।”

এতোটুকু বলে উনি আবারো চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমার থেকে উত্তর পাওয়ার জন্য। কিন্তু এখন আমি উত্তর দেওয়ার মুডে নেই। অসম্ভব রাগ হচ্ছে। ওনার কোন কথাই বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে উনি আবার বলতে শুরু করলেন,

–” আমি জানি আব্রু, তুমি হয়তো আমার কোন কথাই বিশ্বাস করতে চাইছো না। কিন্তু বিশ্বাস না করতে চাইলেও এগুলোই সত্যি। আরো অনেক সত্যি জানাতে চাই আমি তোমাকে। কিন্তু তুমি যদি এভাবে নারাজ হয়ে থাকো, তাহলে কোন কিছু বলে লাভ হবেনা। কারণ এসব কথা তোমার কাছে বলে দেওয়ার পরে আমি তোমার সামনে থেকে হারিয়ে যাব। শত চাইলেও আমাকে আর খুঁজে পাবেনা। শুধুমাত্র তোমার প্রয়োজনের সময় তোমায় সাহায্য করার জন্যে আমার আওয়াজ শুনতে পাবে। তাও সামনে থেকে দেখতে পারবেনা। তাই প্লিজ আব্রু অন্তত আমার জন্য হলেও, আমাকে ভালোবাসো এটা ভেবে ও আমার কথাগুলো বিশ্বাস করো। আর মনোযোগ দিয়ে শুনো। তা না হলে তোমার সাথে সাথে পুরো ইদ্রিস রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।”

ওনার কথায় চুপ করে রইলাম। মনে মনে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। ওনার কথা শুনতে হবে আমাকে। বোঝার চেষ্টা করতে হবে উনি সত্যি নাকি মিথ্যে বলছেন। নাহলে আমি হয়তো কোনো কিছুই বুঝতে পারব না। তাই নিজেকে শান্ত করে ওনার দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় প্রশ্ন করলাম,

–“আচ্ছা ঠিক আছে আমি আপনার কথা মেনে নিলাম। আপনি যা বলছেন সব সত্যি। কিন্তু আমি যদি কোন জ্বীন রাজার সন্তান হয়ে থাকি। তাহলে ছোটবেলা থেকে মানুষের মধ্যে বড় হলাম কেন? আর এরা যদি আমার আপন মা বাবা না’ই হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে তারা নিজের মেয়ের মত ভালবাসে কেনো? আর আমিও কেন ওনাদেরই নিজের মা-বাবা বলে জানি? তাহলে কি আমি আমার জ্বীন বাবা মায়ের কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম! যে আমাকে তারা এভাবে সরিয়ে দিয়েছে নিজেদের জীবন থেকে?”

–” না আব্রু, তুমি তাদের কাছে কেন বোঝা হতে যাবে। তুমি তো পুরো জ্বীন রাজ্যের সবার নয়নের মনি ছেলে। আর তাদের তো কলিজার টুকরা ছিলে। তারা কেনইবা তোমাকে এভাবে মানুষের মধ্যে রেখে যাবে বলো! শুধুমাত্র তোমার জীবন বাঁচাতে তোমাকে তাদের মত জ্বীন না বানিয়ে একজন মানবী বানাতেই তারা এই কাজটা করতে বাধ্য হয়েছিল। আর তোমাকে বাঁচাতে গিয়ে তাদের নিজেদের জীবনও হারাতে হয়েছে।”

ওনার কথাগুলো বিশ্বাস করতে না পারলেও শেষের কথাটা শুনে কেন জানি না বুকের মাঝে ব্যথা হতে শুরু করল। তারা আমার জন্য জীবন দিয়েছে! এই কথাটা যেন কল্পনা করতে পারছিনা। যদিও এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমার বাবা-মা আসলেই কোন জ্বীন ছিলো। আমি একজন জ্বীনের সন্তান। তবুও কেন জানি না ভীষণ কষ্ট হতে লাগল তাদের জন্য। মনটা হঠাৎ করেই একদম নরম হয়ে গেল। কান্না আসতে লাগল চোখে। আমি কাঁদো কাঁদো গলায় মীরের দিকে তাকিয়ে আবার প্রশ্ন করলাম,

–” উনারাতো জ্বীন ছিলেন। আর শুধু জ্বীন’ই নয়। বরং জ্বীন রাজ্যের রাজা ছিলেন। তাহলে ওনারা কেন আমাকে বাঁচাতে চাইবেন? কি এমন বিপদ ছিল আমার? আর তারাই বা কিভাবে মারা গেলেন এত শক্তিশালী হয়েও?আমাকে সব কিছু বলুন মীর। আমি জানতে চাই সব।”

উনি আমাকে এত উত্তেজিত হতে দেখে মুচকি হাসলেন। মনে মনে হয়তো খুশি হলেন আমি সব কিছু বিশ্বাস করতে শুরু করেছি ভেবে। তার পর একটি ছোট করে শ্বাস নিয়ে আবারও বলতে শুরু করলেন,

–“মানুষের মাঝে যেমন ভালো-মন্দ আছে। নানা রকমের জাত বংশ আছে। ঠিক একইভাবে জিনদের মাঝেও আছে। যেমন জিনদের মাঝে ইদ্রিস জিন জাতিরা খুবই ভালো জিন। তারা কখনো কারো ক্ষতি করে না। ঠিক একই ভাবে ইফ্রিত জিন জাতি হচ্ছে সবচাইতে খারাপ জিন। এবং শক্তিশালী জ্বীন। তারা সবসময়ই মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আর ইদ্রিস জিনদের হিংসে করে। তাদের শক্তি কেরে নিতে চায়।তারা কখনোই কারো ভালো চায়না। আরেকটা বংসের জিন হলো আশেক জিন।তারা মানুষের প্রেমে পরে। মানুষের সাথে খারাপ ভাবে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। তারা কখনই মানুষের ভাল করতে চায় না। আর তাই তাদেরও ইদ্রিস জিনদের সাথে শত্রুতা আছে।

তোমার বাবা আয়াজ ছিলেন ইদ্রিস রাজ্যের রাজা। আর মা ছিলেন মানব কন্যা সোনালী। ( মীর পুরো গুপ্তধন গল্পে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আব্রুকে খুলে বললো) পুরো ঘটনা বলার পর বললো, আয়াজ আর সোনালীর বিয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর, তারা জ্বীন রাজ্যে অনেক সুখে ছিল। কোনো অশান্তি ছিল না তাদের মাঝে।

আমার বাবা ছিলেন তোমার বাবা আয়াজের সব চাইতে কাছের ও প্রিয় বন্ধু ইদ্রিস জিন। আর আমার মা ছিলেন আশেক জিন জাতির মেয়ে। তারা দুই জাতির হলেও ভালবেসে বিয়ে করে এক হন। আর তাদের ঘরেই জন্ম হয় আমার। তাই আমার মাঝে আশেক জিন ও ইদ্রিস জিন দুই জিন জাতির শক্তি ও স্বভাবই রয়েছে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,