রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-২০

0
624

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২০
দেখতে দেখতে কেটে গেলো সাত সাতটি দিন।এই সাতদিনে শুদ্ধতা যেন প্রতিটি ক্ষনে অনুভব করেছে নীবদ্ধ’র ওর প্রতি তীব্র ভালোবাসা।বুঝতে পেরেছে সবাই জাহিদ মানে ওর বুবুর স্বামির মতো নয়।হলে ওর বাবা,মা আর ওর শশুড়,শাশুড়ি এতো বছর সংসার করতে পারতো না।শুদ্ধতা যে ক্রমশই দূর্বল হয়ে পরেছে নীবদ্ধ’র প্রতি।কিন্তু শুদ্ধতা অনেক অবাক হয়।কই বিয়ের আগে তো নীবদ্ধ’কে নিয়ে এতোটা ভাবতো না ও।এতোটা অস্থির হতো না ওর হৃদয় নীবদ্ধ’র জন্যে।তবে কি এইটাকেই বলে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের জোড়।শুদ্ধতা নিজের পরিবর্তনগুলো দেখলে নিজেই ক্ষনে ক্ষনে অবাক হয়।শুদ্ধতার ভাবনার ফোঁড়ন কাটে নীবদ্ধ’র ডাকে।

-‘ কোথায় হারিয়ে গেলেন শুদ্ধতা? ডাকছি তো আপনায়।’

শুদ্ধতা ধীরে এগিয়ে যায় নীবদ্ধ’র দিকে।শুদ্ধতা নীবদ্ধ’র কাছে আসতেই নীবদ্ধ’র হাতে তোয়ালে ধরিয়ে দেয়।শুদ্ধতা আলতো হাসে।তারপর নীবদ্ধ’র মাথা মুছে দিতে লাগে। শুদ্ধতা বলে উঠে,
-‘ এখন দেখছি একা একা কিছুই পারেন না।আগে কিভাবে করতেন?’

নীবদ্ধ চোখজোড়া বন্ধ। সেইভাবেই উত্তর দেয়,
-‘ আগে তো আপনি ছিলেন না শুদ্ধতা।এখন আপনি আছেন!’

মাথা মুছা শেষ করে শুদ্ধতা তোয়ালে বারান্দায় নেড়ে দিয়ে এসে বলে,
-‘ আর কতো আপনি ডাকবেন? মা, বাবা কি করবেন? বিয়ের পরেও আপনি আমায় আপনি বলে সম্বোধন করছেন!’

নীবদ্ধ বিছানায় গুছিয়ে রাখা পাঞ্জাবিটা নিয়ে পরিধান করতে করতে বলে,
-‘ আগে এটা বলুন আমি আপনায় আপনি ডাকলে কি আপনার ভালো লাগে নাহ?’

শুদ্ধতা হকচকিয়ে গেলো এমন প্রশ্নে।শুদ্ধতা কিভাবে কি বলবে? ও তো নীবদ্ধ’র মুখ থেকে তুই তো দূরে থাক তুমি বলেও ওকে সম্বোধন করতে দেখিনি। সেখানে কিভাবে বলবে কোনটা বেশি ভালোলাগে আপনি নাকি তুমি।শুদ্ধতাকে চুপ করে থাকতে দেখে নীবদ্ধ আবার বলে,
-‘ কি হলো? বলছেন না কেন?’

-‘ আমি কিভাবে বলবো? আপনি আমাকে আপনি ছাড়া কোনদিন তুমি বলে ডেকেছেন? যে আমি বিবেচনা করবো কোনটা বেশি ভালো লাগে?’

-‘ আচ্ছা, তাহলে আপনায় তুমি ডাকলে বলতে পারবেন?’

-‘ সেটা ভেবে দেখা যাবে।’

-‘ আচ্ছা।’

নীবদ্ধ একপা একপা করে শুদ্ধতার কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো।শুদ্ধতাও পিছাতে পিছাতে একসময় দেয়ালে ঠেকে গেলো।শুদ্ধতা শুকনো ঢোগ গিললো।নীবদ্ধ অন্যরকম একটা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।নীবদ্ধ খুব কাছে আসলো শুদ্ধতার।তবে শুদ্ধতার গায়ে একটুও স্পর্শ করলো না।শুদ্ধতার মাথার উপরে একটা হাত রেখে মুখ নামিয়ে আনলো শুদ্ধতার কানের কাছে।শুদ্ধতা সাথে সাথে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।নীবদ্ধ শুদ্ধতার কানে ফিসফিস করে বলল,

-‘ তোমাকে তুমি ডাকলাম। এখন তোমার অনুভূতি কি শুদ্ধতা?’

শুদ্ধতার নিশ্বাসটা বোধহয় আটকে গেলো।হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে গেলো অস্বাভাবিকভাবে। কারো কন্ঠে তুমি ডাকটা শুনে এভাবে হৃদয়টা কেঁপে উঠে জানতো না শুদ্ধতা।যদি না নীবদ্ধ ওকে তুমি ডাকতো।ঠোঁট কামড়ে হেসে সরে আসলো নীবদ্ধ।নীবদ্ধ সরতেই যেন দমটা ফিরে পেলো শুদ্ধতা।লাজুক চোখে তাকালো।নীবদ্ধ সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
-‘ একবার তুমি ডাকাতেই এই অবস্থা আপনার? তাহলে সবসময় ডাকলে কি হবে?’

শুদ্ধতা আঁড়চোখে তাকালো। তারপর আস্তে-ধীরে বলল,

-‘ তুমিই ডাকুন নাহ।শুনতে ভালো লাগে।’

স্পষ্ট শুনলো নীবদ্ধ শুদ্ধতার বলা কথাগুলো।তবুও ওকে একটু জ্বালানোর জন্যে বলে,
-‘ কি বললেন শুনলাম নাহ।’

রাগ লাগলো শুদ্ধতার।লোকটা কথাটা শুনেছে ও জানে।এখন ওকে জ্বালানোর জন্যে এমন করছে।অস*ভ্য লোক।শুদ্ধতা রেগেমেগে বলল,
-‘ আপনি শুনেছেন আমি কি বলেছি।তাও এমন করছেন কেন? খারাপ লোক একটা।কথাই বলবো না আর আপনার সাথে।সরুন!’

শুদ্ধতা রুমের বাহিরে চলে আসলো।পিছন থেকে নীবদ্ধ’র প্রান খোলা হাসির আওয়াহ শোনা গেলো।সাথে কিছু বাক্য,

-‘ তোমাকে আজ থেকে তুমি’র অত্যাচারে অতিষ্ট করে ছাড়বো শুদ্ধতা।’

কথাটা শুনে মুচঁকি হাসলো শুদ্ধতা।তারপর রান্নাঘরে চলে গেলো।আয়েশা রহমানের সাথে সকালের নাস্তার আয়োজন সব করেছিলো শুদ্ধতা।এখন সব পরিবেশন করার পালা।সবাই খাবার টেবিলে আসলে নাস্তা দেয় শুদ্ধতা।তারপর নীবদ্ধ’র পাশে বসে পরলো।এদিকে নীবদ্ধ আজ শুদ্ধতাকে জ্বালিয়ে মারছে।’ শুদ্ধতা এটা দেও।ওটা দেও।এটা খাও।এভাবে কেন খাচ্ছো।ভালোভাবে খাও।’ শুদ্ধতা শুধু কটমট দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো।তবে লাভ হইনি কোন।নীবদ্ধ থামেনি।তার তুমির অত্যাচার চালিয়ে গিয়েছে লাগাতার।নীবদ্ধ আর শুদ্ধতার এসব কান্ড দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছিলো।লজ্জায় শুদ্ধতা ঠিকঠাক খেতেও পারিনি। মনে মনে নীবদ্ধকে প্রচুর বকাও দিয়েছে।খাবার পালা শেষ হলে। নীবদ্ধ শুদ্ধতাকে নিয়ে রওনা হয়।শুদ্ধতাকে ভার্সিটিতে পৌছে দিয়ে ও চলে যায় ওর কাজে।

_________________

বদ্ধ রুমে হাত পা বাধা অবস্থায় বসে আছে জাহিদ।মুখ থেকে শুধু গোঙ্গানির আওয়াজ বের হচ্ছে।কারন তার মুখটাও বাধা। সামনেই নীবদ্ধ হাতে চাকু নিয়ে বসে আছে।জাহিদের চোখে মুখে আতংক। নীবদ্ধ বাঁকা হাসলো ওই আতংকিত চাহনী দেখে।তারপর বলে,
-‘ কি? ভয় পাচ্ছিস?’

একটু থেমে আবার বলে,
-‘ উপ্স।ভুল হয়ে গেলো।আপনি তো আমার ভায়রা। আপনাকে তো সম্মান দিয়ে কথা বলা দরকার। কি বলেন ভায়রা?’

জাহিদ শুধু ভয়ে কাঁপছে।
-‘ তা বলেন কিভাবে আপনার সম্মান করতে পারি।এই চাকুটা কি ডিরেক্ট আপনার পেটে ঢুকিয়ে দিবো?না-কি আপনার হাতের সব আঙ্গুলগুলো আগে কাটবো? নাহ, আপনার তো আবার দেহের অনেক জ্বালা।এক কাজ করি আপনার গোপনাঙ্গ কেটে দেই।এইটাই পার্ফেক্ট।’

জাহিদ প্রানপণে মাথা এদিক সেদিক দুলাচ্ছে আর গোঙ্গাচ্ছে।নীবদ্ধকে না বলার চেষ্টা করছে।নীবদ্ধ উঠে দাড়ালো।রাগে ওর চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো।ধরাম করে জাহিদের বুকে লাথি দিয়ে ওকে নিচে ফেলে দিলো।জাহিদ নিচে পরে কুকিয়ে উঠলো।নীবদ্ধ জাহিদের মুখের কাছে বসে চাকুটা ওর সারামুখে ঘুরাতে লাগলো।দাঁতেদাঁত চেপে বলে,
-‘ তোকে সম্মান না দিয়ে রাস্তার কুকুরদের সম্মান দেওয়াও ভালো। বা****** তোকে তো মন চাচ্ছে এখুনি মেরে ফেলি। এই চাকুটানা সরাসরি তোর হৃদপিন্ড বরারবর ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্যে আমার হাতটা নিশপিশ করছে। কিন্তু আমি করবো না। কেন জানিস? কারন তোকে লাস্ট একটা চান্স দিতে চাই।ভালোই ভালোই বলে দে এসব ড্রা*গ্স স্মা*গলিং আর মেয়ে ও শিশু পাচার এসবের পেছনে কার হাত আছে।বলে দিলে তোর শাস্তিটা একটু কমাতে পারি আমি।কি বলবি?’

জাহিদ দ্রুত মাথা নাড়ালো।মানে সে রাজি।প্রাণ বাচাতে সে সব করতে রাজি। নীবদ্ধ দাঁড়িয়ে গেলো।ওর লোকের একজনকে বললো জাহিদকে সোজা করে বসিয়ে দিতে।লোকটা তাই করলো।

-‘ ওর মুখের বাধনটাও খুলে দেও!’

জাহিদের মুখটা খুলে দেওয়া হলো।জাহিদ বড়বড় নিশ্বাস নিতে লাগলো হা করে।তারপর ভাঙ্গা গলায় একটু পানি চাইলো।নীবদ্ধ তাই দিতে বললো ওর লোককে।পানি পান করে জাহিদ শান্ত হতেই নীবদ্ধ বলে,
-‘ শুরু কর।এভ্রি ডিটেইলস চাই আমার।’

জাহিদ বলা শুরু করলো,
-‘ ভাই আমি জানি না এসবের পেছনে আসলে কার হাত আছে।’

-‘ মিথ্যে বলছিস আবার? মরার ভয় নেই তোর?’

জাহিদ কান্না করে দিলো।
-‘ নাহ ভাই আমি মিথ্যে বলছি না।আমাকে তো শুধু ড্রা*গস আর স্মাগলিং এর কাজ দেওয়া হয়েছে।আর তা আমার কাছে পৌছে দেয় রকি।আপনি রকির সন্ধান করুন।ওই সব বলতে পারবে।আসলে এর পিছনে কে জড়িত আছে।আমি আর বেশি কিছু জানি না।’

নীবদ্ধ বন্ধুর তাক করলো জাহিদের দিকে,
-‘ পুরো ডিটেইলস দিতে বলেছি।’

জাহিদ ভয়ে সুরসুর করে সব বলে,
-‘ মেয়ে পাচার কাজে মেয়েদের ঘাটতি পরলে আমি তাদের মেয়েও জোগাড় করে দেই।যেই মেয়েরা ড্রা*গস সেবন করে তাদের ড্রা*গসের লোভ দেখিয়ে রকির কাছে হস্তান্তর করে দেই। আমি আর কিছু জানি না ভাই।সত্যি জানি নাহ।’

নীবদ্ধ বন্ধুর সরিয়ে নিলো।জাহিদের গায়ে একটা আঁচও আপাতত এখন করা যাবে না।কারন এখন ওই রকির কাছে পৌছানোর একমাত্র রাস্তা জাহিদ।আর রকিযে ভীষন চালাক হবে এটাও আন্দাজ করতে পারছে নীবদ্ধ। জাহিদের গায়ে একটা মারের দাগ দেখলোও ওরা সন্দেহ করবে আর তা নীবদ্ধ চায়না।নিজের পরিকল্পনাটা খুব স্মুথলি পরিচালনা করে যেতে হবে। তার আগে জুনায়িদ শেখের সাথে আর একবার কথা বলা দরকার ভাবলো নীবদ্ধ।

#চলবে___________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।