#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৪
আয়নার সামনে নিজেকে দেখেই নিজেই লজ্জায় বুদ হয়ে যাচ্ছে শুদ্ধতা।কালকের রাতটা ওর কাছে বেস্ট একটা রাত ছিলো।নীবদ্ধ’র প্রতিটা মাতাল করা স্পর্শে তার গভীর ভালোবাসা উপলব্দি করতে পারছিলো শুদ্ধতা।কেমন পাগলাটে হয়ে গিয়েছিলো লোকটা।সারাটা রাত ওকে বুকে নিয়ে আদর সোহাগে নিমজ্জিত ছিলো।গলায় ঘাড়ে কালসিটে দাগগুলোই স্পষ্ট নীবদ্ধ কতোটা ডেস্পারেট হয়ে পরেছিলো ওকে কাছে পেয়ে।মুচকি হাসলো শুদ্ধতা।
-‘ এভাবে ব্লাশ করলে তো আরো কিছু করতে মন চাইবে আমার।’
চমকে উঠে শুদ্ধতা।পিছনে ফিরে দেখে নীবদ্ধ মাত্রই গোসল সেরে বের হয়ে এসেছে।উদোম গায়ে লোকটাকে অনেক সুদর্শন দেখাচ্ছে।লজ্জায় নীবদ্ধ’র দিকে তাকাতে পারছে না শুদ্ধতা।দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।নীবদ্ধ হেসে দিলো শুদ্ধতাকে এইভাবে লজ্জা পেতে দেখে।এগিয়ে গিয়ে শুদ্ধতাকে পিছন থেকে ঝাপ্টে ধরলো।শুদ্ধতার ঘাড়ে থুতনী ঠেকিয়ে বলে,
-‘ এতো লজ্জা পাওয়ার কি হলো?কাল না সব লজ্জা ভেঙে দিলাম।’
-‘ উফ আপনার লাগামহীন কথা বন্ধ করুন তো।ভালো লাগছে না।’
নীবদ্ধ’র কাছ থেকে সরে আসলো শুদ্ধতা।নীবদ্ধ হেসে বিছানায় গিয়ে বসলো।ইশারা করলো শুদ্ধতাকে ওর কাছে আসতে। শুদ্ধতা ধীরে হেটে নীবদ্ধ’র কাছে আসলো। তা দেখে নীবদ্ধ ভ্রু-কুচকে বলে,
-‘ ব্যাথার মেডিসিন দিয়েছিলাম তো।এখনও ব্যাথা আছে শরীরে?’
নীবদ্ধ’র এমন লাগামছাড়া কথায়। শুদ্ধতার মন চাচ্ছে একছুটে সে কোথায় চলে যাক। এমন বেহায়া লোক সে কোনদিন দেখেনি।দেখছে ও লজ্জা পাচ্ছে।তাও এসব বলছে।শুদ্ধতা মিনমিন গলায় বলে,
-‘ মাত্র নিয়েছি মেডিসিন।ব্যাথা সারতে তো একটু সময় লাগবে।দিন আমি মাথা মুছে দিচ্ছি।’
নীবদ্ধ শুদ্ধতার হাত ধরে শুদ্ধতাকে বিছানায় বসালো।তারপর ওর বাহু ধরে সুইয়ে দিলো।বলল,
-‘ আজ কোন কাজ করার দরকার নেই।সুয়ে থাকবে তুমি আজ সারাদিন।’
শুদ্ধতা অবাক হয়ে বলে,
-‘ আরে মানে কি?আপনি রেডি হবেন নাহ? পার্টি অফিসে যাবেন তো?’
নীবদ্ধ চট করে শুদ্ধতার পাশে সুয়ে পরলো।শুদ্ধতাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বলে,
-‘ নাহ আজ কোন কাজ টাজ নেই।সব বাদ।আজ পুরো দিনটা আমার বউয়ের নামে।আমি আজ সারাদিন আমার বউ নিয়ে এই ঘরের ভীতর এই বিছানাতেই সুয়ে থাকবো কোথাও যাবো না।’
নীবদ্ধ’র এমন পাগলামো দেখে খিলখিল করে হেসে দিলো শুদ্ধতা।নীবদ্ধ মুগ্ধ হয়ে ওই হাসি দেখলো।হাসলে কি সুন্দর লাগে মেয়েটাকে।নীবদ্ধ মুগ্ধ কন্ঠে বলে,
-‘ তুমি হাসবে শুদ্ধতা।সবসময় হাসবে।তুমি হাসলে তোমায় ভীষন সুন্দর লাগে শুদ্ধতা।’
শুদ্ধতা নীবদ্ধ’র বুকে মুখ লুকিয়ে নিলো।আস্তে করে বলে,
-‘ এভাবে বলবেন না।আমার লজ্জা করে।’
নীবদ্ধ সশব্দে হেসে দিলো।শুদ্ধতা দ্রুত নীবদ্ধ’র দিকে তাকালো।নীবদ্ধ’র ওই হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রী মন ভরে দেখলো।কাল তো চলেই যাবে।যদি আর না দেখতে পায় লোকটাকে? শুদ্ধতা মনে প্রাণে চায় তাদের মিশনটা সাকসেসফুল হোক।শুদ্ধতা আর নীবদ্ধ কারো যেন কিছু না হয়।তারা যেন সারাজীবন একে-অপরের পাশে থেকে।একে-অপরের হাত ধরে থাকে। মুচঁকি হেসে শুদ্ধতা বলে,
-‘ খাবেন নাহ? এইভাবে ধরে রাখলে হবে? ছাড়ুন নাহ।কাল রাতেও তো কিছু খেলেন নাহ?’
নীবদ্ধ শুদ্ধতাকে চোখ মেরে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
-‘ কোথায় না খেয়ে আছি? কাল রাতে তো আমার দিব্যি পেট ভরেছে।তোমার ভরেনি পেট?আমার ভালোবাসা খেয়ে?’
শুদ্ধতা এইবার লজ্জায় নীবদ্ধ’র বাহুতে কামড়ে দিলো।’উহ!’ করে উঠলো নীবদ্ধ।বলে,
-‘ উফ! রাক্ষসী মেয়ে এইভাবে কেউ কামড়ায়?’
মুখ ভেংচি মারে শুদ্ধতা,
-‘ আমি কামড়াই।এরকম অসভ্য মার্কা কথা বললে আরো জোড়ে কামড় দিবো।’
-‘ তাহলে তো আমি আরো বেশি বেশি অসভ্য কথা বলব!’
-‘ কেন?’
-‘ কেন আবার?তোমার ঠোঁটের ওই মিষ্টি ছোঁয়াগুলো যে পাবো আমি।’
-‘ ইস,প্রেম যেন উতলে পরছে।’
-‘ পরছেই তো দেখবে?’
-‘ নাহ দেখবো না।’
-” দেখতে তো তোমাকে হবেই।’
শুদ্ধতা আবার কিছু বলবে নীবদ্ধ ওকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।প্রথম একটু নড়াচড়া করলেও পরে নীবদ্ধ’র ভালোবাসার ডাকে সারা দেয় শুদ্ধতা।নীবদ্ধ’র মাঝে নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নেয়।নীবদ্ধ’র ভালোবাসার উষ্ণতায় নিজেকে মুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে।নীবদ্ধ বুঝতে পারে ব্যাপারটা তাই তো ওর ভালোবাসার প্রখরতা বাড়িয়ে দেয় আরো।উন্মনাদনায় মত্ত হয় দুজন।
————
দেখতে দেখতে গোটা একটাদিন কেটে গেলো।নীবদ্ধ শুদ্ধতা নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করে নিয়েছে।গাড়ি থেকে নেমেই জুনায়িদ শেখের কাছে এগিয়ে যায় ওরা।জুনায়িদ শেখ ওদের দেখেই কুশলাদি বিনিময় করলো।অতঃপর বলেন,
-‘ তুমি রেডি তো শুদ্ধতা?’
শুদ্ধতা কঠোরভাবে উত্তর দেয়,
-‘ জি! আমি তৈরি ভাইয়া।’
জুনায়িদ শেখ একজন জুনিয়র ইন্সপেক্টরকে ডাক দিলেন।ইন্সপেক্টর আসতেই তার হাত থেকে একটা জুয়েলারি বক্স নিলেন তিনি।বক্সটা শুদ্ধতার হাতে দিলো।শুদ্ধতা ভ্রুকুচকে বক্সটার দিকে তাকায়।তারপর বলে,
-‘ এটা কি ভাইয়া?’
-‘ এই লকেটটায় জিপিএস কানেক্ট করা আছে।এটা গলায় পরে নেও।’
ওদের কথার মাঝেই নীবদ্ধ বলে,
-‘ কিন্তু ভাইয়া।যদি সমস্যা হয়? আই মিন ওরা যদি এই লকেটটা খুলে রেখে দেয়?’
জুনায়িদ শেখ ভাবুক গলায় বলে,
-‘ ঠিক বলছো নীবদ্ধ। এটাও হতে পারে।’
জুনায়িদ শেখ এইবার লকেটটা খুলে ফেলবেন।ওখানে সেট-আপ করা ক্ষুদ্র জিপিএস মেশিনটা খুলে ফেললেন।সেটা হাতে নিয়ে নীবদ্ধকে দেখায়।নীবদ্ধ বলে,
-‘ এটা আসলেই খুব ছোট।’
শুদ্ধতা একধ্যানে সেটার দিকে তাকিয়ে ছিলো।এইবার বলে,
-‘ ভাইয়া আমার জামার সামনে ডিজাইনের মতো দুটো বোতাম আছে।এই ডিভাইসটা অনেক ছোট আমি বোতামের মাঝে এটাকে সেট করতে পারি।অলংকার খুলে নিতে পারে তারা।তবে গায়ের জামাতো আর নাহ।’
বেশ সন্তুষ্ট হলেন জুনায়িদ শেখ শুদ্ধতার বুদ্ধিতে।ওনার এক লেড়ি কন্সটেবলকে বললেন শুদ্ধতাকে নিয়ে গাড়িতে যেতে তারপর শুদ্ধতাকে সাহায্য করতে ডিভাইসটা সেট-আপ করতে।শুদ্ধতা চলে গেলো।নীবদ্ধ এইবার এগিয়ে যায় জাহিদের দিকে।জাহিদ ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে।ওর হাতে হাতকরা লাগানো।আর দুজন পুলিশ ধরে আছে ওকে।নীবদ্ধ চোয়াল শক্ত করে বলে,
-‘ আমার শুদ্ধতাকে এই মিশনে পাঠাচ্ছি।তোকে যা বলেছি ঠিক তাই করবি। কোন রকম চালাকি করবি না।আমরা কিন্তু সর্বদাই তোদের পিছনে থাকবো। কোনরকম চালাকি তোর ধরা পরা জায়গাতেই তোকে স্যু*ট করে দিবো।আর তুই মনে করিস না তুই রেহাই পাবি আমার শুদ্ধতার কিছু হলে পাতাল থেকে হলেও আমি তোকে খুঁজে বের করবো।তোকে অক্ষত রেখেছি কারন একটাই।রকির যেন কোনভাবেই সন্দেহ না হয়।’
নীবদ্ধ জাহিদের গাল চেপে ধরলো।দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
-‘ প্রাণের ভয় থাকলে যা যা শিখিয়েছি ঠিক তাই করবি।মনে থাকবে?’
জাহিদ ভয়ে ভয়ে বলে,
-‘ জি বস। মনে থাকবে।’
নীবদ্ধ ছেড়ে দিলো জাহিদকে।গাড়ির দিকে তাকালো যেখানে শুদ্ধতা গিয়েছে।নীবদ্ধ এগিয়ে গেলো সেখানে।লেডি কন্সটেবলটি নীবদ্ধকে দেখেই গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো।নীবদ্ধ এইবার নিজেই গাড়িতে উঠে বসলো।তারপর এক ঝটকায় শুদ্ধতাকে বুকে জড়িয়ে নিলো। শুদ্ধতাও মিশে রইলো স্বামির বুকে।নীবদ্ধ ধরা গলায় বলে,
-‘ আমার বুক কাঁপছে শুদ্ধতা।এখনও সময় আছে।আমি অন্য ব্যবস্থা করে নিবো।বিশ্বাস করো।’
শুদ্ধতা নীবদ্ধ’র গালে হাত রাখলো।বলল,
-‘ এতো ভয় কেন পাচ্ছেন? আমি তো এই ভীতু নীবদ্ধকে চিনি নাহ।’
নীবদ্ধ শুদ্ধতার হাতের উপর হাত রাখলো।নরম গলায় বলে,
-‘ আমি তোমাকে ভালোবাসি শুদ্ধতা।তোমার বিনিময়ে আমি পৃথিবীর সবকিছু কম্প্রোমাইজ করতে রাজি।তাও আমি তোমাকে চাই।’
শুদ্ধতা মলিন হেসে বলে,
-‘ চিন্তা করবেন না।আল্লাহ্ ভরসা রাখুন।কিছু হবে না।আমি সুস্থ্যভাবে ফিরে আসবো।আর আপনিই আসবেন আমাকে বাঁচাতে তাই নাহ?আমি জানি আমার নীবদ্ধ আমার কিছু হতে দিবে নাহ।’
নীবদ্ধ শুদ্ধতার কপালে পরম ভালোবাসা নিয়ে চুমু খেলো।শুদ্ধতা চোখ বন্ধ করে নিলো।চোখের কোণ ঘেসে গড়িয়ে পরলো একফোটা তপ্ত জলের ফোটা।
শুদ্ধতাকে নীবদ্ধ ছেড়ে দিতেই শুদ্ধতা এইবার নিজেও নীবদ্ধ’র কপালে চুমু খায়।তারপর নীবদ্ধকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,
-‘ মনে রাখবেন আপনার শুদ্ধতাকে আপনাকে অনেক ভালোবাসে নীবদ্ধ।’
#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।