রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে পর্ব-১৩

0
565

#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#১৩তম_পর্ব

অরীন ইন্সিয়ার কথা বুঝতে না পারলেও উষ্মী কথাটি শুনে হেসে দেয়।,আরাশ বুঝতে পেরেছে নিশ্চয় ইন্সিয়া আরাশকে দেখে কিছু একটা বলে ব্যাঙ্গ করছে

সবাই বল ডান্স করছে,অরীন, উষ্মী ও ইন্সিয়া বসে বসে তা দেখছে। ইহান ড্রিংক করছে আর আঁড়চোখে উষ্মীকে দেখছে। আরাশ ব্যপারটা খেয়াল করে মুচকি হেসে ডান্স করছিলো রীধীর সাথে। হঠাৎ রীধী ডান্স করার সময় নড়েচড়ে উঠে, রীধী এপাশ ওপাশ করছে। আরাশ রীধীকে কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলেই রীধী বলে উঠে “প্লিজ ওয়েট,আই’ল বি ব্যাক”

আরাশ রীধীকে বিদায় দিয়ে ইহানের পাশে এসে দাড়ালো। ইহান আরাশকে ইশারা দিয়ে উষ্মীকে দেখাচ্ছে আর বলছে
“মেয়েটা কি সুন্দর রে দোস্ত। একদম সাদামাটা,বাকি মেয়েদের মতো একগাদা আটা ময়দা মেখে জোকার সেজে আসে নি। সাজগোছ ছাড়াও মেয়ে পাওয়া যায় ভাই এটা ঐ মেয়েকে না দেখলে বিলিভ করতে পারতাম না। আমার ঐ মেয়েকে চাই। ঠিক করে দে দোস্ত। কোনো মজা করবো না।সিরিয়াসলি বিয়ে করতে চাই। প্লিজ দোস্ত”

আরাশ ইহানের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয় আর বলে “জীবনেও এই কথা মুখে আনিস না। ঐ মেয়ের পাশে সাথে সাত চুন্নি ভর করে আছে। তাই তোর জীবন ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে”

ইহান কথাগুলো সিরিয়াসলি ভেবে ঢোক গিলে,আরাশ ইহানের কান্ডে হো হো করে হেসে দেয়। উষ্মী আরাশের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে অরীনের সাথে আড্ডায় মেতে উঠে। ঐ দিকে অরীন রিধীকে দেখতে না পেয়ে চারপাশে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ইন্সিয়া অরীনের দিকে তাকিয়ে বলে “আপু কিছু খুঁজতেছেন?”

ইন্সু ঐ ঢংগী রানী রীধীটা কই? দেখেছো তুমি? অনেকক্ষণ ধরে দেখছিনা (অরীন)

হে আপু দেখছিনা আমিও। হয়তো আপনার ভাইয়ের সাথে বিজি (ইন্সিয়া)

না ইন্সু ঐ যে আমার ভাইয়া ঐদিকে ওর বন্ধু ইহানের সাথে আড্ডা দিচ্ছে,রীধী গেলো কই। এত সহজে ও আমার ভাইয়ের পিছু ছেড়ে দিবে বিশ্বাস হয় না (অরীন)

আরাশ অরীনের উঁকিঝুকি দেখে তাদের সামনে এসে দাড়ায়, আর বলে
“কি আপু কিছু লাগবে? কাকে খুঁজছিস?”

হ্যাঁ রে তোর এসিস্ট্যান্ট রীধী কই? তাকে দেখছিনা যে (অরীন)

ওহ রীধী? ও তাড়াহুড়ো করে আমাকে অপেক্ষা করতে বলে কই যেনো চলে গেলো। আমি জানি না আপু। ছাড় এসব। তোর কিছু লাগবে? (আরাশ)

অরীন কিছু বলতে যাবে আরাশকে তার আগেই ইন্সিয়া বলে উঠে, “ঐ যে রীধী মেডাম, ওদিকটা থেকে আসছে৷ ”

অরীন আরাশ উষ্মী সবাই রীধীর দিকে তাকিয়ে দেখে, রীধী পেটে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে ঢুলুঢুলু অবস্তাই হাটছে। রীধী পড়ে যাবে এমন সময় আরাশ দৌড়ে গিয়ে রীধীকে ধরে ফেলে, ইন্সিয়া এসব দেখে অরীনকে বলে “নায়ক গিয়ে নায়িকাকে আঁকড়ে ধরেছে।চিল আপু তাদেরকে তাদের মতো ছেড়ে দিন”

অরীন ইন্সিয়ার কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। এদিকে আরাশ রীধীকে বলে “আর ইউ ওকে রীধী? হঠাৎ আপনার কি হলো?”

রীধী কিছু বলার আগে পেটে হাত দিয়ে আরাশকে বলে “আসছি স্যার ওয়েট”

অরীনের এবার বুঝতে বাকি রইলো না এটা স্পেশাল লাল মরিচ ড্রিংকসের কামাল।অরীন রীধীর অবস্তা দেখে হাসছে। এদিকে ইন্সিয়া উষ্মী অরীনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আর বলছে “কি হয়েছে আপু? হাসছেন যে?”

অরীন কোনোভাবে হাসি থামিয়ে বলে “রীধী কো এল লাইজ্ঞায়া” বলার সাথে সাথে আবারো হাসা শুরু করে। এদিকে আরাশ কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।হঠাৎ রীধীর কি হলো।

আরাশের কিছু কথা মনে পরতেই আরাশ ইন্সিয়া উষ্মীর সামনে গিয়ে দাড়ায় আর বলে “উষ্মী আপু যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করে যাবেন আপনারা৷ আমি ড্রপ করে দেবো। একা বেরোবেন না”

অরীন ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে উষ্মীকে বলে “দেখেছো? আমার ভাই অনেক রেস্পন্সিবল একটা ছেলে। এমন ছেলে হাজারে একটাও পাবে না তোমরা”

ইন্সিয়া বিড়বিড় করে বলে “ওরে যে রেস্পন্সিবল আপু, খালি মানুষকে ঠুস ঠাস কোনো কথা ছাড়া মারতে জানে। কিছু হলে ধমক দিয়ে চুপ করাতে জানে। এখন শুনতেছি তার রেস্পন্সিবলের গল্প।হে আল্লাহ আর কি দিন দেখাবা তুমি?”

অরীন গাল টিপে টিপে হাসে আর আরাশের দিকে তাকায়। আরাশ ইন্সিয়ার বিড়বিড় করা ঠোঁট দেখেই বুঝে গেছে, ইন্সিয়া সেই কখন থেকে আরাশকে বাংলা ওয়াশ করছে।

অরীন মনে মনে বলে
“দুষ্টুমিষ্টি সম্পর্কের শুরুটা তো ঝগড়া দিয়েই হয়। তবে কি ইন্সিয়া আরাশের জীবনে? না না এত অগ্রীম বলা ঠিক হবে না। দুইটা দুই ধাঁচের, এদের আবার প্রেম? কি যে ভাবি আমি! কোনদিন দেখবো একজন আরেকজনের মাথা ফাটিয়ে দিয়ে হসপিটালে পাঠিয়েছে।এদের দ্বারা প্রেম হবে না। এদেরকে বাধঁতে হবে খুব শক্ত করে। যেনো কখনো ছুটে না যায়। শক্ত করে বাধাঁর জন্য একটা জিনিস’ই দরকার “বিয়ে”।”

আরাশ উষ্মীর কোলে থাকা অরীনের বাবুকে আদর করছিলো, ইন্সিয়া ওপাশে মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে আছে। ইন্সিয়া চাইছেনা আরাশের চোখে চোখ পড়ুক তাঁর।

ইন্সিয়ার কোলে থাকা অরীনের বাবু ঘুমিয়ে গেছে। ইন্সিয়া বাবুকে কোলে নিয়ে উঠে দাড়ায় আর বলে,
“আপু আপনার রুম কোনটা আমাকে বলুন,আমি বাবুকে শুয়ে দিয়ে আসি,

না না এত কষ্ট করা লাগবে না আমাকে দাও। আমি নিয়ে যাচ্ছি (অরীন)

আপু আপনি এখনো রিকোভার হন নি। এভাবে উপরে উঠানামা ঠিক হবে না,আমাকে বলুন আমি ঘুম পাড়িয়ে আসি (ইন্সিয়া)

আরাশ ইন্সুকে আমার রুমে নিয়ে যা। আমি একটু পর চলে আসবো রুমে। তুই ওকে নিয়ে যা (অরীন)

ইন্সিয়া রাগি চোখে আরাশের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করছে আর বলছে
“কেন যে কাবিল দেখিয়ে বললাম বাবুকে রাখবো,এ বার এই গুন্ডার সাথে আমাকে যেতে হবে। কে জানে আমার এসব শুনেছে কিনা। যদি শুনে থাকে তাহলে আজকে আমার মাথায় ড্রিংকসের গ্লাস ভাঙ্গবে নিশ্চিত”

আরাশ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “চলুন মিস ইন্সিয়া,এত বিড়বিড় করার সময় কি আছে?”

ইন্সিয়া ঢোক গিলে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আর বলছে মনে মনে “খোদা এই গুন্ডা তাহলে সব জানে। শেষ আমি গেছি”

আরাশের পিছু পিছু আল্লাহ ডাকতে ডাকতে ইন্সিয়া চলে গেলো, অরীনের রুমের দোলনায় অরীনের বাবু আরিয়াকে শুইয়ে দেয় ইন্সিয়া। ইন্সিয়া যেই না চলে যাবে, দরজার সামনে আরাশ দাড়িয়ে আছে, পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলছে
“এখন বকুন,গালি দিন। এত বিড় বিড় করে দাঁত চেপে গালি না দিয়ে সরাসরি দিন।সরাসরি কথা বলা মানুষকে গুলোকে আমি বেশ পছন্দ করি”

ইন্সিয়া ভয়ে ঢোক গিলতে লাগলো পা টিপে টিপে আস্তে আস্তে পেছনে যেতে লাগলো। এদিকে আরাশ ইন্সিয়ার সামনে এগোচ্ছে ধীরে ধীরে। ইন্সিয়া চোখ বন্ধ করে আমতা আমতা করছে আর বলছে
“আ আ আ আমি কিছু বলিনি।”

আরাশ ইন্সিয়ার মুখের উপর চলে আসা চুলগুলোকে ফু দিয়ে সরিয়ে দেয় সাইডে, ইন্সিয়া থর থর করে কাঁপছে, আরাশ আরিয়ার কাছে গিয়ে আরিয়ার কপালে চুমু দেয়। ইন্সিয়া ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে, আরাশ বাবুর কাছে গিয়ে বাবুর গায়ে কাথা ঠিক করে দিচ্ছে।

ইন্সিয়া স্বস্তির শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে এগোচ্ছে বেরোনোর জন্য। ঠিক এমন সময় আরিয়া কেঁদে উঠে। ইন্সিয়া চোখমুখ বন্ধ করে কাঁদো কাঁদো মুখ করে আরিয়ার দিকে ফিরে তাকায়।

ইন্সিয়া তাকিয়ে দেখে “আরাশ আরিয়াকে কোলে নিয়ে হাটছে আর আদর করছে।আরিয়া তাঁর মামার কোলে আরামে ঘুমিয়ে পড়ে”

ঐদিকে রীধী ওয়াশরুম থেকে এসে আরাশকে খুঁজছে, ইহানের কাছে আরাশের কথা রীধী জিজ্ঞেস করলে ইহান বলে
“আমি জানি না। নিজে গিয়ে দেখুন সে কোথায়”

রীধী রেগেমেগে আগুন ইহানের কথা শুনে,রীধী অরীনদের সামনে এসে বলে “আরাশ স্যার কোথায় তোমরা জানো?”
অরীন মিথ্যা বলার আগেই উষ্মী বলে
“আরাশ উপরে ইন্সিয়াকে অরীন আপুর ব্যাডরুম দেখাতে নিয়ে গেছে”

রীধী কথাটি শোনামাত্র রেগে ফুলে যেতে যেতে বলতে লাগলো “হাউ ডেয়ার ইউ ইন্সিয়া। ওয়েট আমি আসছি এক্ষুনি”

রীধী চলে গেলো উপরে, এদিকে অরীন উষ্মীকে বলে “কি দরকার ছিলো এটা বলার,সে গিয়ে সিনক্রিয়েট করবে”

উষ্মী অরীনের তাকিয়ে বলে “আপু হতে পারে আরাশ ভাইয়াকে আর্জেন্ট কোনো অফিসের কাজে খুঁজছে মেয়েটা”

অরীন চুপ হয়ে যায় আর মৃদুস্বরে বলে “তাও হতে পারে বলা যায় না। কিন্তু মেয়েটা বেশিই করে ফেলে”

এদিকে ইন্সিয়া আরাশের কোল থেকে বাবুকে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে চলতে আসতেই রীধী রুমের দরজার সামনে গিয়ে দাড়ায়। চিৎকার করে কিছু বলতে যাবে রীধী তার আগেই ইন্সিয়া বলে উঠে
“পিন সাইলেন্ট, বাবু ঘুমাচ্ছে। আপনার আরাশকে নিয়ে যা কথা রুমের বাহিরে গিয়ে বলুন”

রীধী দাঁতে কিড়মিড় করে ইন্সিয়ার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে “হাউ ডেয়ার ইউ?”

ইন্সিয়া রীধীর আঙ্গুল ধরে নামিয়ে দেয় আর বলে “আপনার আরাশের সাথে এসব করতে পারেন বলে আমার সাথে এসব করতে পারবেন ভাবলে ভুল করবেন।”
আরাশ ইন্সিয়ার কথা শুনে হা করে আছে,

ইন্সিয়া রীধীকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ইন্সিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রীধী রেগে কাঁপছে। আরাশ রীধীকে বলে “রীধী আপনি নিচে যান, আমি আসতেছি”
রীধী রেগে হনহন করে নিচে চলে গেলো,

অরীন ইন্সিয়াকে দেখে উঠে দাড়ায় আর বলে “কি হয়েছে ইন্সু?মুখটা এমন কেন?”

ইন্সিয়া অরীনের দিকে তাকিয়ে বলে “রীধীর সাহস হয় কি করে আপু আমার দিকে আঙ্গুল নাড়িয়ে কথা বলার,সে তার স্যারের সাথে এসব কর‍তে পারে বলে আমার সাথে করতে পারবে নাকি?আমি একদম হাত গুড়িয়ে দেবো। আজ শুধু ভদ্রতার খাতিরে আঙ্গুলটা ধরে নামিয়েছি। আরেকবার এমন করলে হাত ভেঙ্গে দেবো”

ইন্সিয়া রেগেমেগে অরীনকে এসব বলে,অরীন ইন্সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে “উচিৎ শিক্ষা তো দিয়েই এলে। এবার শান্ত হও ইন্সু।আমি দেখছি ব্যপারটা”

অরীন উপরে চলে যায়। রীধী অরীনের দিকে তাকিয়ে হনহন করে নিচে চলে যায়৷
আরাশ গিয়ে ইহানকে সব বলে। আরাশের কথা শুনে ইহান বলে
“আমি তো বলবো ইন্সিয়া মেয়েটা ঠিক করেছে। মেয়ে হয়ে ছেলের গায়ে কেমনে ঢলে পড়ে? আমার তো রীধীকে দেখলেই রাগ উঠে”

তুই ও এসব বলিস? রীধী একটু পাগল টাইপের। আর কিছুই না। (আরাশ)

আরে রাখ তোর পাগল। একসময় এই পাগলামিই তোর জীবন নস্ট করবে আরাশ (ইহান)

সবাই খাওয়াদাওয়া করছে, এদিকে অরীন উপর থেকে এসে ইন্সিয়া উষ্মীকে বলছে “চলো খেতে। এসব ভেবোনা। আর ইন্সিয়া তুমি তো আছো রীধীকে শায়েস্তা করার জন্য, আর কিসের সমস্যা আমার”

ইন্সিয়া অরীনের এই কথাটা না বুঝলেও উষ্মী ঠিকই বুঝে গেছে যে, অরীন ইন্ডাইরেক্টলি ইন্সিয়াকে আরাশের লাইফে আনতে চায়।

চলবে….

(গল্প শেষের দিকে এগোচ্ছে।ভুল ক্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)