#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#১৪তম_পর্ব
ইন্সিয়া অরীনের এই কথাটা না বুঝলেও উষ্মী ঠিকই বুঝে গেছে যে, অরীন ইন্ডাইরেক্টলি ইন্সিয়াকে আরাশের লাইফে আনতে চায়।
খাওয়াদাওয়া পর্ব শেষে ইন্সিয়া উষ্মী বের হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে,মেহমান আস্তে এক এক করে চলে যেতে লাগলো। ইহান আরাশ বসে বসে একে অপরের সাথে কথা বলছে, উষ্মী বেরিয়া যাওয়ার সময় আরাশ বলে উঠে “একা যাবেন না আপু আমি ড্রপ করে দিবো।আপনার সাথে একান্ত কিছু কথা বলার ছিলো”
উষ্মী দাড়িয়ে আছে, আরাশ গাড়ির চাবি নিয়ে গাড়ি পার্ক করতে চলে গেলো। ইহান ইন্সিয়ার পাশে দাড়িয়ে বলে “ইন্সিয়া আপু ঐ রীধী মেয়েটাকে আপনার কেমন লাগে?”
ইহানের মুখে রীধীর কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে আর বলে “উফফ এই রীধী রীধী। বিরক্তিকর। ভাল্লাগে না মেয়েটাকে অভার এটিটিউড”
ইহান ইন্সিয়ার কথায় সায় দিয়ে বলে
“একদম আপু আমারো। অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে ফেলে সব বিষয়ে। গায়ে পরা মেয়ে একটা”
আরাশ গাড়ি নিয়ে এসে উষ্মী আর ইন্সিয়াকে বলে “চলে আসুন। বাড়ি পৌছে দি”
ইন্সিয়া উষ্মী রাত হওয়ার কারণে অনিচ্ছাসত্ত্বে গাড়িতে উঠে পড়ে।
ড্রাইভিং সিটে আরাশ তার পাশে ইহান বসে আছে,পেছনে ইন্সিয়া ও উষ্মী বসে আছে। একটু পর পর ইহান উষ্মীকে দেখছে। উষ্মীর অস্বস্তি লাগছিলো, ইন্সিয়া লক্ষ্য করতে গলা ঝাড়ি দিয়ে নড়েচড়ে বসে, এতে ইহান সামনে ফিরে বাহিরে গ্লাসের দিকে তাকিয়ে আছে লজ্জায়।
ইন্সিয়া একটু পর পর উষ্মীকে বিরক্ত করে আর ফিসফিস করে বলে “ইহান কে জিজু হিসেবে ভালোই লাগছে। কি বলিস? পাকা কথা বলবো নাকি?”
উষ্মী ইন্সিয়ার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে “আমার চিন্তা করতেছিস ওদিকে আরাশের কপালে তুই আছিস, সেদিকে তোর খেয়াল আছে? দেখ আরাশের কপালে কিভাবে তোকে জুটোয়। তাইলে বুঝবি অন্যজন জিজু বলার মজা”
ইন্সিয়া উষ্মীকে ধাক্কা দিয়ে বলে “কি কখন থেকে বিড় বিড় করে যাচ্ছিস। কি বলছিস বল তো”
উষ্মী কথা এড়িয়ে দাঁতের পাটি খুলে বলে “হেহেহে কিছু না ইন্সু।”
গাড়ি এসে একটা গাছতলায় এসে থামে,এতে ইন্সিয়া উষ্মী ভয় পেয়ে যায়৷ আরাশ পেছনে ফিরে বলে “ভয় পাবেন না।গাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে হয়তো তাই গাড়ি পার্ক করেছি। চ্যাক করে আবারো স্টার্ট দিবো”
স্বস্তির শ্বাস নিয়ে দুই বান্ধবী চুপ করে আছে। ইহান গাড়ি চ্যাক করে বলে “তেল তো নেই মনে হচ্ছে দোস্ত,এখন কি উপায়?”
আরাশ গাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে ইহানকে বলে “এখানে কোথাও দোকান দেখতে পাস কি না দেখ আশেপাশে, ১১টা বাজার আগে উনাদের বাড়িতে পৌছে দিতে হবে। ”
নিরিবিলি সুনসান জায়গা আশেপাশে কোনো দোকান নেই। আরাশ ইহান গাড়ির উপরে বসে আছে। ইন্সিয়া উষ্মীকে ঠেলছে আর বলছে “আজ আমরা গেছি। বাবা মেরে ফেলবে আজ”
উষ্মী বলে উঠে “চিন্তা নেই,অরীন আপুকে ফোন করে বলি গাড়ির তেল ফুরিয়ে গেছে”
যেই বলা সেই কাজ অরীনকে ফোন করে উষ্মী সব বলে। অরীন গাড়ি পাঠিয়ে দেয় ড্রাইভারকে দিয়ে। আরাশ সেই গাড়ি ইন্সিয়া আর উষ্মীকে নিয়ে বাড়ির দিকে এগোচ্ছে।ইহান উষ্মীর উপস্থিত বুদ্ধি দেখে তারিফ করছে আর বলছে “এমন বুদ্ধি বউ পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যপার”
ইহানের কথায় আরাশ ইন্সিয়া হেসে দেয়, উষ্মী রাগি চোখে ইহানকে দেখছে। ইহান সামনে ফিরে তওবা তওবা বলে নিজের গালে হাত বুলোয় আর বলে “বউ মানুষের চোখ এতবড় হতে কখনো দেখিনি। এজ লাইক বন মানুষের মতো”
সবাই উষ্মীকে নিয়ে মজা করছে।গাড়ি এসে বাড়ির সামনে দাড়ায় ইন্সিয়ার। ইন্সিয়া সবাইকে বিদায় দিয়ে বাড়ি চলে আসে।
উষ্মী একা পেছনে বসে আছে,আরাশ বুঝতে পেরেছে উষ্মীর একা আনইজি ফিল হচ্ছে তাই আরাশ উষ্মীর সাথে আড্ডায় মেতে উঠে। ইহান গাড়ি ড্রাইভ করছে। আরাশ এবার উষ্মীকে বলে উঠে “আপু আপনার নাম্বারটা দিয়েন। বিপদে আপদে কাজে লাগবে”
উষ্মী আরাশকে ভাই মনে করে নির্দ্বিধায় নাম্বার দিয়ে দেয়, আরাশ উষ্মীর সাথে ফ্যামিলি বিষয় নিয়ে কথা বলছে, ইহান মাঝখানে বলে উঠে “বাড়ি পৌছে গেছি”
উষ্মী আরাশের সাথে কথা বলে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে আর বলে “ভালো থাকবেন আরাশ ভাইয়া। চলি।বাসা তো চিনেন একদিন সময় করে অরীন আপুকে নিয়ে আসবেন”
আরাশ উষ্মীর কথায় হেসে বলে “নিশ্চয় আপু খুব শীঘ্রই আসবো।আল্লাহ হাফেজ”
ইহান হাতে চাবি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে উষ্মীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলছে “আসবো আসবো একেবারে বউ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসবো উষ্মী ম্যাডাম।ওয়েট & সি”
আরাশ ইহানের কাঁধে হাত দিয়ে বলে “চল আর দেখতে হবে না সে চলে গেছে বাড়ি।”
ইহান আরাশ বাড়ির দিকে রওনা হয়।
ওদিকে ইন্সিয়ার বাবা ইন্সিয়াকে বলে
“কার সাথে এসেছিস?”
ইন্সিয়া তার বাবাকে নাম্বার দেয় অরীনের আর বলে “তুমি যে চেয়েছিলে নাম্বার? নিয়ে এসেছি সাথে করে। আমাকে অরীন আপুর বাড়ির লোক ড্রপ করে দিয়ে গেছে তাদের গাড়ি করে, আমি বাড়ির সামনে নেমে গিয়েছি। তারা উষ্মীকে বাড়ি পৌছে দিতে গেছে”
ইন্সিয়ার বাবা নাম্বারটি সযত্নে রেখে দেয়, ইন্সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে “ঠিকাছে মা ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়”
ইন্সিয়া তার বাবাকে বিদায় দিয়ে রুমে এসে চেঞ্জ করে ফ্রেস হতে চলে যায়। ইন্সিয়া ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় গা বিলিয়ে দেয়।
ইন্সিয়ার ফোনে রিং পড়ে, ইন্সিয়া ফোন হাতড়ে নিয়ে দেখে ওটা অরীনের ফোন এসেছে। ইন্সিয়া ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই অরীন বলে উ
ঠে “পৌছে গেছো ইন্সিয়া? কোনো অসুবিধা হয়েছে আর?”
ইন্সিয়া শোয়া থেকে উঠে বসে আর বলে “আরে না না আপু। পৌছালাম একটু আগে। ফ্রেস হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।”
আচ্ছা ঘুমিয়ে পড়ো,আমি উষ্মীকে ফোন দেই, সে পৌছেছে কি না দেখি (অরীন)
আচ্ছা আপু আসসালামু আলাইকুম শুভ রাত্রী (ইন্সিয়া)
ওয়ালাইকুম সালাম বলে ফোন কেটে দেয় অরীন,
ইন্সিয়া শুয়ে পড়ে।
উষ্মীকে ফোন দিয়ে অরীন জিজ্ঞেস করে, উষ্মী অরীনের সাথে কথা বলে ফোন রাখে৷ ঠিক অমন সময় উষ্মীর ফোনে ম্যাসেজ আসে আননোন নাম্বার থেকে,ম্যাসেজ চ্যাক করতেই উষ্মী দেখে কে যেনো তাকে দুটো হাসির ইমোজি সেন্ড করেছে। উষ্মী ততটা গুরুত্ব না দিয়ে ঘুমাতে চলে যায়। ঠিক কিছুক্ষণ পর
মোবাইলে আবারো ম্যাসেজের রিংটোন বেজে উঠে, উষ্মী বিরক্ত হয়ে ম্যাসেজ দেখতে উষ্মীর চোখ ছানাবড়া, উষ্মীকে আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে “পরশুদিন বিকেলে তৈরি থাকবেন, দেখতে আসবো”
উষ্মী বুঝে উঠতে পারলোনা কিছু। কিসের তৈরি, কে কাকে দেখতে আসবে? কিছু বুঝতে পারলো না।
উষ্মী ভেবে নিলো আরাশ হয়তো উষ্মীকে এমন ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। উষ্মী সকালে এই ব্যপারে আরাশের সাথে কথা বলবে ঠিক করে রেখেছে।
এদিকে ম্যাসের উপর ম্যাসেজ পাঠিয়েই যাচ্ছে উষ্মীকে কে যেনো।উষ্মী বিরক্ত হয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়। উষ্মীর খুব রাগ হচ্ছে আরাশের প্রতি। উষ্মী মনে মনে বলছে “আরাশ আপনাকে ভাইয়া ভেবেই নিঃসকোচে নাম্বার দিয়েছিলাম।আর আপনি আমাকে এভাবে ম্যাসেজ দিয়ে মজা নিচ্ছেন? এটা আশা করিনি আরাশ ভাইয়া। কি ভাবলাম কি হলো”
উষ্মী মনে মনে কথাগুলো বলে রাগে ফুলতে ফুলতে শুয়ে পড়লো,
ভোর হয়ে গেলো চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ হচ্ছে,
উষ্মী ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে বারান্দার দরজা খুলে দেয়। উষ্মীর মা হাতে একটা প্যাকেট ও চিঠির খাম উষ্মীকে দিয়ে বলে “তোর বান্ধবী ইন্সিয়ার কি হয়েছে? মোবাইলের যুগে চিঠি পাঠায় কেউ বান্ধবীকে?”
উষ্মী যেনো কথাগুলো শুনে আকাশ থেকে পড়েছে, উষ্মীর মাথা যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে, উষ্মী মনে মনে বলতে লাগলো “আজব তো কাল আননোন ম্যাসেজ,আজ ইন্সিয়ার চিঠি। তার মানে সবকিছুর পেছনে ইন্সিয়ার হাত?”
চলবে..