#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#১৫তম_পর্ব
উষ্মী যেনো কথাগুলো শুনে আকাশ থেকে পড়েছে, উষ্মীর মাথা যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে, উষ্মী মনে মনে বলতে লাগলো “আজব তো কাল আননোন ম্যাসেজ,আজ ইন্সিয়ার চিঠি। তার মানে সবকিছুর পেছনে ইন্সিয়ার হাত?”
উষ্মী তার মায়ের হাত থেকে খাম আর প্যাকেট টা নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখছে। উষ্মীর মা রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর উষ্মী খামটা খুলে দেখে, খাম খুলে যা দেখতে পায় তা দেখে চোখ ছানাবড়া, খামের চিঠিতে বড় বড় করে লেখা “USHMI ❤”
উষ্মী উদ্ধীগ্ন হয়ে চিঠি খুললো আর পড়তে লাগলো
“কাল বিকেলে সুন্দর ভাবে তৈরি হয়ে থাকবেন, আমি আসবো আমার ফ্যামিলি নিয়ে। কাল কোথাও বেরোবেন না। আর হে এত উতলা হওয়ার দরকার নেই আমি কে দেখার জন্য, আমি সঠিক সময়ে আপনার বাড়িতে এসে আপনার সামনে দাড়াবো,”
উষ্মী এবার শিউর হয়, এটা ইন্সিয়ার কাজ না। ম্যাসেজটা ও ইন্সিয়ার না। উষ্মী প্যাকেটটা খুলে দেখে প্যাকেটের ভেতর অনেকগুলা কাচের চুড়ি, ঝুমকো ও একপাতা টিপ।
উষ্মী সব একপাশে রেখে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে নেয়।ইন্সিয়াকে ফোন দিয়ে সবটা জানায় উষ্মী। ইন্সিয়া বুঝতে পেরেছে কার কাজ, ইন্সিয়া উষ্মীকে বলছে “ঘাবড়ানোর তো কিছুই দেখছিনা আমি। আর যাকে তুই খুঁজে বের করতে চাইছিস,সে তো নিজেই তোর সামনে আসবে বললো।তাহলে চিন্তা কিসের! চুপচাপ তৈরি হয়ে থাক”
উষ্মী ইন্সিয়ার কাছে এটা আশা করে নি। উষ্মী রাগ করে ফোন কেটে দেয়। ইন্সিয়া উষ্মীর কান্ডে ফোন রেখে হাসতে থাকে আর মনে মনে বলে
“এবার মনে হয় বিয়েটা হয়েই যাবে বান্ধবী,উফফ খুব মজা করবো”
ইন্সিয়া ফ্রেস হয়ে নিজের ঘরের যাবতীয় কাজ করতে লাগলো।হঠাৎ ইন্সিয়ার ফোনে কল আসে, ইন্সিয়া ফোনের কাছে না থাকায় ইন্সিয়ার আম্মু ফোন রিসিভ করে, ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠে কে যেনো বলে উঠে “ইন্সিয়া কেমন আছো?”
ইন্সিয়ার আম্মু ইন্সিয়ার বান্ধবী মনে করে ইন্সিয়াকে ডেকে ফোন দেয়,ইন্সিয়া ফোন হাতে নেওয়ার পর ইন্সিয়ার মা চলে যায় রান্না ঘরে। ইন্সিয়া ফোন নাম্বার দেখে ঠিক চিনতে পারলো না। ইন্সিয়া ভেবে নিলো হয়তো উষ্মী আননোন নাম্বার ম্যাসেজের জ্বালায় সিম চেঞ্জ করেছে। ইন্সিয়া হ্যালো বলতেই পুরুষ কণ্ঠে বলে উঠে “হ্যালো আমি ইহান আপু, চিনতে পারছেন?”
ইন্সিয়া ইহান নাম শুনে ভয়ে আমতা আমতা করতে লাগলো, ইন্সিয়া নিজের রুমে গিয়ে ইহানকে বলতে লাগলো “হ্যাঁ ভাইয়া চিনেছি। আমার নাম্বার কোথায় পেলেন? আমার আম্মু আপনাকে আমার বান্ধবী বললো কেন?”
ইহান হেসে বলে “আমি মেয়েলি স্বরে প্রথমে হ্যালো বলেছি। জানতাম আপনার আম্মু খুব রাগী। এই কারণে এভাবে মেয়ের আওয়াজে কথা বলেছিলাম। যাক গে আপু। আমি একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছি। আমার আপনার হেল্প দরকার”
আয় হায় কি বলেন। ভাগ্যিস আম্মু বুঝে নি। হে ভাইয়া বলেন কি সাহায্য। (ইন্সিয়া)
আমি মানে বলতে চাইছিলাম যে, কিভাবে বলবো কথাটা। না মানে আমার আসলে (ইহান)
এত আমতা আমতা না করে বলেই ফেলুন যে আপনি আমার বান্ধবী উষ্মীর জন্য কল দিয়েছেন। (ইন্সিয়া)
হাহাহা। ধন্যবাদ আপু মনের কথা বুঝতে পারার জন্য। আপু ওকে একটু রাজি করান। আর কাল বের হতে দিয়েন না। আমার আম্মু, আব্বু আপু ও আমার বেস্টু আরাশ যাবে কাল ওকে দেখতে পাকা কথা বলতে। আপু প্লিজ সেখানে আপনিও থাকবেন। আপনি ছাড়া কিছু পসিবল না। আপনি একটু ম্যানেজ করেন না আপু প্লিজ। (ইহান)
আচ্ছা ভাইয়া দেখছি ব্যাপারটা। আমার ফ্রেন্ড কিন্তু খুব সরল একটা মেয়ে। ওকে ঠকাইয়েন না (ইন্সিয়া)
কখনোই না আপু। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই এইজন্য এতকিছু করছি। যেকোনো ভাবে ওকে আমার চাই আপু। আজ আপনি আমার হেল্প করলে ভবিষ্যতে আমিও কোনো না কোনোভাবে আপনার হেল্প করবো এজ এ ভাই হিসেবে (ইহান)
ইন্সিয়া ইহানের কথায় হেসে আচ্ছা বলে ফোন রেখে দেয়। ইন্সিয়া তার আম্মু আব্বুকে সব জানায় উষ্মীকে কেউ দেখতে আসবে,ইন্সিয়ার আব্বু আম্মু উষ্মীর কথা শুনে ইন্সিয়াকে যাওয়ার পারমিশন দেয়।
ওদিকে ইহান খুশি হয়ে আরাশকে জড়িয়ে ধরে আর বলে “ফাইনালি আমি সাক্সেস দোস্ত, ইন্সিয়াকে ম্যানেজ করে নিয়েছি। ইয়াহু দোস্ত সব তোর ক্রেডিট.ভালোবাসি দোস্ত”
আরাশ ইহানের খুশি দেখে সেও খুশি। আরাশ ইহানের কাঁধে হাত রেখে বলে “তাহলে বিয়ের পিড়িতে বসতে যাচ্ছিস৷ কংগ্রেস দোস্ত”
ইহান আরাশকে ট্রীট দিতে নিয়ে গেলো রেস্টরন্টে।
এদিকে উষ্মী অস্থীর ভাব সারাদিন।উষ্মী ভেবে নিয়েছে হয়তো সেই অভিক রয় উষ্মীর পিছু নিয়েছে। উষ্মী ভয়ে কেউকে কিছু না বলে চুপচাপ ভাবছে এসব। কারণ উষ্মীর স্পস্ট এখনো সেদিনের কথা কানে বাজছে, অভিক রয় যেতে যেতে বলছিলো ইন্সিয়া আর উষ্মীকে “তোদের আমি দেখে নিবো”
উষ্মীর ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। অভিক রয়ের ক্ষোভ উষ্মীর উপর আছে কারণ উষ্মী অভিক রয়ের সত্য ফাস করে দিয়েছিলো সেদিন।
ইহান বাসায় গিয়ে তার বাবা-মাকে সব বলে উষ্মীর সম্পর্কে, ইহান তাদের একটা মাত্র ছেলে,তাই ইহানের আবদার তারা কখনো ফেলে না। ইহানের কথায় তারা সবাই রাজি উষ্মীকে দেখতে যাওয়ার জন্য।
ইন্সিয়া উষ্মীকে ফোন দিয়ে বলে “শোন উষ্মী আমি কাল সকালে তোর বাসায় আসবো। আমিও দেখতে চাই কে তোর সামনে আসে। ভয় পাস না আমি আছি তো”
উষ্মী ইন্সিয়ার কথায় স্বস্তির শ্বাস নেয়।
উষ্মীর মা খাবার নিয়ে এসে উষ্মীকে খেতে দেয় আর বলে “সারাটাদিন অন্যমনস্ক হয়ে আছিস। সমস্যা কি বলতো আমায়। কি হয়েছে হে?”
উষ্মী তার মাকে কিছু বুঝতে না দিয়ে চুপচাপ খাবার খেয়ে নেয় আর বলে “আরে না মা পড়াশোনার চিন্তা, আর কিসের চিন্তা মা”
উষ্মীর মা কথা না বাড়িয়ে চলে যায়।
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো। সবাই যে যার কাজ করে ঘুমিয়ে পরেছে।
এদিকে ইহানের ঘুম আসছে না,সে খুশিতে এপাশ ওপাশ করছে।
উষ্মীর চোখে ঘুম নেই,উষ্মীর কাছে রাত যত পার হচ্ছে ততই উষ্মীর মনে ভয় ঘনিয়ে আসছে। উষ্মী ধরেই নিয়েছে হয়তো অভিক রয়ের’ই কাজ।
উষ্মী ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে, ভোর ফুটে উঠলো। উষ্মীর মা এসে উষ্মীকে ডেকে দেয় আর বলে “ইন্সিয়া এসেছে উঠ, কাল চিঠি দিলো আর আজ সে তোকে দেখতে এসেছে। বড় অদ্ভুত তোরা। মনে হচ্ছে যেনো তোরা প্রেমিক প্রেমিকা”
উষ্মী ইন্সিয়ার কথা শুনে ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে, উষ্মীর এমন কান্ডে উষ্মীর মায়ের খটকা লাগলেও উপযুক্ত কোনো প্রমাণ না থাকায় সে
চুপ করে আছে। ইন্সিয়া উষ্মীর মায়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে সোফায় লুটিয়ে পড়ে। উষ্মীর মা এসে ইন্সিয়াকে বলে “তোদের দুজনের কি হয়েছে বলতো? মোবাইলের যুগে চিঠি কে পাটায়”
আরে খালামণি আমার কি বফ আছে যে বফকে দেবো? দিলে নিজের বান্ধবীকে দিয়েছি এতে সমস্যা কই? অন্য ছেলেকে দেওয়ার চেয়ে বান্ধবী বান্ধবীকে দিলে ভালো নয় কি? (ইন্সিয়া)
উষ্মীর মা একগাল হেসে বলে “তা ঠিক, তোরা তোরাই তো। আর যা দিনকাল পড়েছে। ছেলের আশেপাশে না যাওয়াই ভালো। আচ্ছা বস আমি চা করে আনছি।”
কথাগুলো বলে উষ্মীর আম্মু চলে যায় কিচেনে, ওদিকে উষ্মী ফ্রেস হয়ে ইন্সিয়ার পাশে বসে আর বলে “কি বলেছিস আবার আম্মুকে? উল্টোপাল্টা কিছু বলিস না বোন।আম্মু এমনিতেও আমাকে সন্দেহ করছে অহেতুক। আমি যে কোন পাল্লায় পড়লাম আল্লাহ জানে”
ইন্সিয়া উষ্মীর মুখ দেখে গাল টিপে হেসে ভাবছে “ইহানের পাল্লায় পড়লি তুই। সময় হোক বুঝবি”
কি রে কি ভাবছিস কথা বল, ইন্সিয়াকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে উষ্মী,ইন্সিয়া ভাবনার ঘোর ভেঙ্গে “কিছুনা” বলে উঠে।
ইন্সিয়ার জন্য চা নিয়ে আসে, উষ্মী ইন্সিয়া চা খেয়ে উষ্মীর রুমে যায় আর উষ্মীকে বলে “চল তোকে আজ একটু সাজিয়ে দি। আমার মন ভালো না। চল না”
ইন্সিয়ার জোরাজুরিতে উষ্মী শেষমেশ রাজি হলো সাজতে
চলবে..