রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে পর্ব-১৬

0
510

#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#১৬তম_পর্ব

ইন্সিয়ার জন্য চা নিয়ে আসে, উষ্মী ইন্সিয়া চা খেয়ে উষ্মীর রুমে যায় আর উষ্মীকে বলে “চল তোকে আজ একটু সাজিয়ে দি। আমার মন ভালো না। চল না”

ইন্সিয়ার জোরাজুরিতে উষ্মী শেষমেশ রাজি হলো সাজতে, উষ্মীর আব্বু রুমে এসে উষ্মীকে দেখে ইন্সিয়াকে ইশারা দিয়ে বলে “ভালো করে তৈরি করে দিতে” ইন্সিয়া উষ্মীর আব্বুর দিকে তাকিয়ে বুঝে ফেললো যে,ইন্সিয়ার বাবা-মা উষ্মীর বাবাকে সব জানিয়ে দিয়েছে।

ইন্সিয়া নিজের মতো করে উষ্মীকে তৈরি করতে লাগলো। উষ্মীর বাবা উষ্মীর মা’কে গিয়ে বলে
“ওগো শুনছো।আমাদের উষ্মীকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে,বাজার এনেছি ধরো। সুন্দর করে রান্না করো।কোনো ত্রুটি যেনো না থাকে।”

উষ্মীর মা হা করে তাকিয়ে আছে উষ্মীর বাবার দিকে,আর মনে মনে বলছে “এই লোক কি বলে এসব? হঠাৎ করে আজ কারা দেখতে আসবে উষ্মীকে?”

কি গো শুনেছো আমার কথা? দেখি রান্না শুরু করে দাও, ঊষ্মীর বাবার কথায় উষ্মীর মায়ের ভাবনার ধ্যান ভাঙ্গলো। উষ্মীর মা হাত চালিয়ে সব কাজ করতে লাগলো। এদিকে উষ্মীর বাবা ইন্সিয়ার বাবার সাথে ফোনে আড্ডা দিচ্ছে৷

দুপুর দেড়টা বাজে, সকল রান্নাবান্না করা শেষ। উষ্মীর আম্মু উষ্মীকে কিছু না জানিয়ে নিজের মতো সব গোজগাজ করছে ঘরের। ইন্সিয়া টুকটাক হেল্প করছে উষ্মীর মায়ের সাথে।

উষ্মী ভয়ে জড়সড় হয়ে আছে একপাশে আর ভাবছে “কে আসবে কার জন্য আমায় তৈরি করা হয়েছে। কেউ তো কিছুই বলছে না। হুটহাট রিয়েক্ট ও করতে পারছিনা। চুপচাপ ছাড়া আর কিছু তো উপায় দেখছি না।ধুর”

একটু পর ড্রয়িং রুম থেকে আওয়াজ আসছে উষ্মীর বাবার, ” ইন্সিয়া মা, কোথায় রে? এদিকে আয় তো মা”

ইন্সিয়া মাথায় উড়না দিয়ে উষ্মীর বাবার কাছে যেতেই দাড়িয়ে পড়ে, সামনে আরাশ ইহান ও তার ফ্যামিলি দাড়িয়ে আছে। আরাশকে দেখে ইন্সিয়ার মুহুর্তে রাগ বেড়ে গেলো। ইন্সিয়া চুপচাপ কেউকে কিছু না বলে,উষ্মীর বাবাকে জিজ্ঞেস করে “আংকেল বলেন কি লাগবে”

মা তোর আন্টিকে ডাক কারা এসেছে দেখতে বল, চা নাস্তার আয়োজন কর জলদি (উষ্মীর আব্বু)

ইন্সিয়া উষ্মীর আব্বুর কথামতো উষ্মীর মা’কে বলে “আংকেল ডাকছে খালামনি,পাত্রপক্ষ এসে গেছে,গিয়ে কথা বলো। লোকে নয়তো কি ভাববে? আমি নাস্তা বেড়ে দিচ্ছি। দিয়ে আসো”

আচ্ছা আচ্ছা মা।এদিকটা একটু সামলা মা।আমি ওদিকটা দেখে আসি (উষ্মীর আম্মু)

উষ্মীর আম্মু ইন্সিয়াকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে শাড়ির আচঁলে হাত মুছতে মুছতে চলে গেলো। ইন্সিয়া সবার জন্য নাস্তা বেড়ে দিলো। উষ্মীর আম্মু এসে নাস্তা নিয়ে গিয়ে সবাইকে সার্ভ করে বসলো কথা বলতে, ইহানের বোন উষ্মীকে খুঁজছে। ইন্সিয়া উষ্মীকে নিয়ে পাত্র পক্ষের সামনে গেলো। উষ্মী প্রথমে আরাশকে দেখে শক,উষ্মী মনে মনে রেগে ফুলছে আর বলছে “আরাশ আপনি আমার ভাইয়ের মতো।আপনি আমার জন্য এসব। মানে টা কি?”

ইহানের বোন উষ্মীকে পাশে বসালো,ইন্সিয়া বাকি যাবতীয় আপ্যায়ন করছে ঘরের মেয়ের মতো। আরাশ শুধু একটু পর পর ইন্সিয়ার কান্ডকারখানা দেখছে।

ইহানের পরিবার উষ্মীকে দেখেই পছন্দ করে আংটি পড়িয়ে দেয়, এদিকে ইহান খুশিতে আরাশের সাথে কথা বলছে। আরাশ ইহানের কথায় কোনো ভাবান্তর নেই।আরাশের নজর ইন্সিয়ার উপর।

আরাশকে উষ্মীর আব্বু বলে, “যাও বাবা পুরো বাড়ি ঘুরে দেখো,বোর লাগবে না। জামাই বাবা তুমিও ঘুরে এসো, ইন্সিয়া মা? এদের বাড়িটা একটু দেখা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, উষ্মী যা ওদের নিয়ে।”

আরাশ যেনো এই সুযোগের অপেক্ষাই ছিলো, উষ্মী অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাদের নিয়ে ইন্সিয়ার কাছে গেলো আর বললো “ইন্সু বাড়িটা ঘুরে দেখা, আর মিস্টার ইহান আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে, কথা বলা যাবে?”

ইহানের মনে উষ্মীর কথায় যেমন লাড্ডু ফুটছে,তেমনি ভয় ও হচ্ছে রিজেক্ট বা অমতের কারণে,
এদিকে ইন্সিয়া উষ্মীর কথা শুনে রেগেমেগে আগুন, আরাশ ইন্সিয়ার কান্ড দেখে হেসে বলে “মেহমানদের উপর নারাজ হতে নেই। আল্লাহ নারাজ হয়। নিয়ে যাবেন না ঘর দেখাতে?”

ইন্সিয়া কোনোভাবে মৃদ মলিন হেসে বলে “শিউর চলুন”

ইন্সিয়া আরাশকে নিয়ে বাড়ি দেখাতে চলে গেলো,অন্যদিকে উষ্মী আর ইহান আলাদা কথা বলতে একপাশে বারান্দায় গেলো।

উষ্মী ইহানের কথোপকথন…

আচ্ছা আপনি কি ভেবে আমার জন্য বিয়ের প্রপোজাল আনলেন বলুন তো? আপনি কি আমায় চেনেন? আমার সম্পর্কে জানেন? (উষ্মী)

এখন তো জেনেছি,আর বিয়ের আগে গভীর পরিচিত হওয়ার কি দরকার? হাল্কা পাতলা চেনাজানাই এনাফ, তারপর আপনার থার্ড প্রশ্নের উওর, মানুষ সারাজীবন পাশে থেকেও কেউ কাউকে চিনতে পারে না,আবার দেখা যায় অল্প সময়ে একটা মানুষকে পুরোপুরি চেনা যায়। তাহলে বুঝুন এসব ডিপেন্ড করে নিজের উপর। দু’দিনের সম্পর্ক বিয়েতে পরিনত হয়ে তারা সুখী। আবার অনেকে বছরের পর বছর সম্পর্ক বিয়েতে বদলায়না। তাইলে বলুন অগ্রীম পরিকল্পনা করা ঠিক। নাকি পজিটিভলি যা হবে তা হ্যান্ডেল করে জীবন মানিয়ে চলা ঠিক? (ইহান)

ইহানের কথায় উষ্মীর আর কিছু বলার নেই, উষ্মী তার বাবাকে ভীষণ ভয় পায়। তাই উষ্মী কিছু না বলে ইহানের কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। ইহানের কথার লজিকগুলোর সাথে উষ্মী পেরে উঠলো না৷
ইহান উষ্মীকে নিরবতা ভেঙ্গে বলে “আপনার কি সম্পর্ক আছে আদারস?”

উষ্মী না জবাব দেয়, ইহান স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে “বাঁচলাম, আপনি কি রাজি এই বিয়েতে?”

যা বলার লজিক সব তো আপনিই দিলেন।ভাগ্যে বিশ্বাসী। আর আব্বুর মত যেহেতু এই বিয়েতে সেহেতু আমি দ্বিমত করবো না (উষ্মী)

ইহান স্পষ্ট বুঝতে পারলো উষ্মী রাজি নেই,সে বাবার জন্য রাজি হয়েছে। কিন্তু ইহান ছাড়ার পাত্র নয়৷ সে উষ্মীকে তার লাইফে আনবেই আনবে। নিজের করে ছাড়বেই।

ইন্সিয়া হেটে হেটে আরাশকে পুরো বাড়ি দেখাচ্ছে, আরাশ দাড়িয়ে পড়ে আর ইন্সিয়াকে পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,”শুনুন ইন্সিয়া,”

ইন্সিয়া দাঁতে দাঁত খিচিয়ে দাড়িয়ে পড়ে, আরাশ সামনে এগিয়ে ইন্সিয়ার সামনে দাড়ায় আর বলে “আচ্ছা আপনি আমাকে এত ঘৃণা করেন কেন? কি করেছি আমি আপনার?”

ইন্সিয়া তোতলাতে তোতলাতে বলে “ক ক কই না তো”

আমি বুঝি মিস ইন্সিয়া,আপনি আমাকে এড়িয়ে চলতে চান। ঠিকাছে চলুন। তবে এর কারণটা আপনি আমাকে বলবেন। নয়তো (আরাশ)

নয়তো কি (ইন্সিয়া)

সময় বলবে চলুন সবাই অপেক্ষা করছে (আরাশ)

ইন্সিয়ার ভয়ে বুক মুচড়ে উঠে, কারণ ইন্সিয়া আরাশের সেই বাজে রুপ দেখেছে, ইন্সিয়া চাই না আরাশ ইন্সিয়ার আশেপাশে থাকুক। ইন্সিয়াকে ফেলে আরাশ চলে গেলো,
এদিকে উষ্মী ইহান ড্রয়িং রুমে এসে হাজির। পাকা কথা ও দিন তারিখ ঠিক হয়ে গেলো উষ্মীর বিয়ের।।

আরাশকে ইহান ধাক্কা দিয়ে বলে, “কিরে দোস্ত মুড এমন কেন”

আরাশ হাতের মুষ্টিবদ্ধ করে ইহানের দিকে তাকিয়ে বলে “এত সাহস হয় কি করে আমাকে ইগ্নোর করার? সব মেয়ে আমার এটেনশন পেতে চায়,আর ঐ মেয়ে? সে আমাকে এটিটিউড দেখায়,ইগ্নোর করে।এর এত সাহস হয় কি করে আরাশ আহমেদকে ইগ্নোর করার?কি এমন আছে ওর যে এত অহংকার,আমি দেখতে চাই।ওকে আমার লাগবে এনি হাউ, এনি কোস্ট”

ইহানের আর বুঝতে বাকি রইলো না,আরাশ ইন্সিয়ার কথা বলছে ইহানকে। ইহান মুখে হাত দিয়ে কোনোভাবে হাসি থামিয়ে বলে “কই আমার সাথে তো ইন্সিয়া এমন করে না, তাইলে তোর সাথে এসব করে এটা কীভাবে বিলিভ করবো আমি?”

আরাশ ইহানের কথায় রাগী চোখে তাকিয়ে আছে, ইহান আমতা আমতা করে আরাশের দিকে তাকিয়ে বলে “আরে দোস্ত তা না। তুই আমায় ভুল বুঝিস না। ইন্সিয়া ভালো মেয়ে। ও হয়তো ভুল করে এড়িয়ে গেছে। ও অহংকারী না”

আরাশ ইহানের দিকে তাকিয়ে দাঁতে কিড়মিড় করে বলে “দোস্ত তুই আমার না ওর? তুই ওর জন্য টানবি কেন?”

আরে না ধুর, তোর জন্যই টানি আমি। তুই আমার কলিজার টুকরা দোস্ত আরাশের কাধেঁ হাত রেখে (ইহান)

তাই? উষ্মীরে পেয়ে গেছিস ঐ ইন্সিয়া তোরে হেল্প করছে এইজন্য ইন্সিয়ার জন্য টানোস?শালীকার জন্য এত দরদ? এখনো তো বিয়েই হইলো না। তার আগেই পর হইয়া গেলি বউ পেয়ে। (আরাশ)

ইহান হাসবে না কাদবে ভেবে কুল পাইনা। ইহান বুঝতে পারছে ইন্সিয়ার ইগ্নোর আরাশ নিতে পারে নি। ইহান মুচকি হেসে আরাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর বলছে “সমস্যা নেই দুই বন্ধু দুই বান্ধবীকে তুলে নিয়ে আসবো”

ইহানের কথায় আরাশ কাঁশতে শুরু করে, ইন্সিয়া এসে আরাশকে পানি এগিয়ে দেয়। আরাশ ইন্সিয়ার দিকে না তাকিয়ে পানি খেয়ে থ্যাংক্স বলে। ইন্সিয়া পানির গ্লাস টেনে নিয়ে চলে যায়। হঠাৎ আরাশের মনে পড়ে “এভাবে টান কে দিলো? তার মানে একটু আগে ইন্সিয়া এসে পানি দিলো? মেয়েটা তো আচ্ছা বাড়াবাড়ি করছে আমার সাথে, একবার তাকে পাই এরপর ইগ্নোর কি বুঝাবো”

চলবে…