রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে পর্ব-১৭

0
600

#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#১৭তম_পর্ব

তার মানে একটু আগে ইন্সিয়া এসে পানি দিলো? মেয়েটা তো আচ্ছা বাড়াবাড়ি করছে আমার সাথে, একবার তাকে পাই এরপর ইগ্নোর কি বুঝাবো”

সবাই খাওয়াদাওয়া করে, দিন তারিখ ঠিক করে চলে গেলো, আগামী সপ্তাহে উষ্মীর বিয়ে।

উষ্মীর বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় চলছে এখন থেকেই,এদিকে ইহানের বাড়িতে বিয়ের আমেজ শুরু।

উষ্মীর মা-বাবা ইন্সিয়ার আম্মুকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে আগামী সপ্তাহে বিয়ে উষ্মীর,সকল পরিবার যেনো কাল চলে আসে। উষ্মীর বাবা ও ইন্সিয়ার বাবা খুবই ভালো বন্ধুত্ব। সেই সুবাদে উষ্মীর আর ইন্সিয়ার পরিবার খুবই ঘনিষ্ঠ৷

ইন্সিয়ার পুরো পরিবার উষ্মীর বিয়ে উপলক্ষে চলে এসেছে, যাবতীয় কাজ উষ্মীর মা আর ইন্সিয়ার মা একসাথে করছে। দুই পরিবার যেনো যুগ যুগ ধরে চেনা। মিলেমিশে আছে দুই পরিবার। হৈচৈ বিয়ের আমেজ।

বিয়ের দিন আস্তে আস্তে এগোতে লাগলো। এদিকে আরাশ ইহান বিয়ের শপিংয়ে ব্যস্ত। ইহানের সাথে উষ্মীর সম্পর্কটা দিন দিন গাঢ় হচ্ছে, উষ্মী ইন্সিয়া বারান্দায় বসে আড্ডা দিচ্ছে এমন সময় ফোন আসে উষ্মীর নাম্বারে,ইহান উষ্মীকে ফোন দিয়েছে। উষ্মী ইন্সিয়াকে বসতে বলে ফেলে চলে গেলো ফোনে কথা বলতে, ইন্সিয়া মনে মনে উষ্মীর কান্ড দেখে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো

“ইহান জিজুর প্রেমে শেষমেশ পরলি,কিন্তু তোদের প্রেম লাগিয়ে দিয়ে তো আমি নিজেই একা হয়ে পড়লাম, এখন তো তুই ইহান জিজুর প্রেমে এতই ফিদা যে, তোর ইন্সুকে চোখেও দেখছিস না। ধ্যাত।আজ যদি আমার একটা ইহান জিজুর মতো স্বপ্নের নায়ক থাকতো,তাহলে আমিও দেখিয়ে দিতাম হুম”

ইন্সিয়া বিড় বিড় করে কথাগুলো বলে বারান্দার পাশে ফুলের টবের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পর উষ্মী এসে বলে “ইন্সু ইহান বলছিলো যে দেখা করতে। চল রেডি হো।”

ইন্সিয়া রাগান্বিত চোখে উষ্মীর দিকে তাকিয়ে আছে, উষ্মী বুঝতে পেরেছে ইন্সিয়া ফুলে আছে উষ্মীর উপর,তার কারণ হলো উষ্মী ইন্সিয়াকে বসিয়ে রেখে অনেকক্ষণ ফোনে ইহানের সাথে বিজি ছিলো।

উষ্মী সব বুঝতে পেরে ইন্সিয়ার গাল দুটো টেনে দিয়ে জড়িয়ে ধরে আর বলে “আমার ইন্সু রানী ষলী,রাগ করে না জান। তুই সবার আগে। কিন্তু ইহান আবার কি না কি ভাববে ঐ ভয়ে ফোনে এতক্ষন কথা বলছিলাম”

ইন্সিয়া ভেঙ্গচি দিয়ে বলে “ব্যাস হয়েছে রে, মানুষ জামাই পেলে বেস্টিকে ভুলে যায় সেটা আমি জানি।আর বলা লাগবে না”

উষ্মী ইন্সিয়াকে জড়িয়ে ধরে সরি বলতেই ইন্সিয়া ফিক করে হেসে দেয়, উষ্মী ইন্সিয়া দুজন’ই রেডি হয়ে বের হয়েছে৷ উষ্মী ইহানের সাথে দেখা করবে সেই কারণে।

এদিকে ইহান আরাশকে বহু কষ্টে টানতে টানতে দেখা করতে নিয়ে যায়। আরাশ প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে ইহানের জোরাজোরিতে রাজি হয়।

ইন্সিয়া উষ্মী সেই ক্যাফে বসে আছে। এদিকে আরাশ ইহান ক্যাফে ডুকে তাদের সামনে বসে। আরাশ ইন্সিয়াকে দেখে ইহানের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। ইন্সিয়া পারছেনা উষ্মীকে গলা টিপে মেরে ফেলতে,উষ্মী ইন্সিয়াকে বলেছিলো শুধু ইহান আসবে। কে জানতো ইহানের সাথে আরাশ নামক ভাইরাস চলে আসবে। উষ্মী মিট মিট করে ইন্সিয়া আরাশকে দেখে হাসছে। ইহান ইনোসেন্ট ফেইস করে আরাশকে বলে “দোস্ত রাগ করিস না,না মানে তুই একা বোর হবি এইজন্য আমার শালীকাকে এনেছি”

আরাশ টেবিলের নিচে ইহানের হাত চেপে ধরে কানে কানে ইহানকে বলে “শালা তোরে বলছি আমি বোর হবো? তোরে কে বলছে আমার জন্য এই ন্যাকাষষ্টিকে আনতে?”

ইন্সিয়া চোখ ছোট করে ইহান আর আরাশকে লক্ষ্য করছে। ইহান ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে
“হেহে ইন্সু কি খাবে?”

ইন্সিয়া চোখ রাঙ্গিয়ে ভ্রু উঁচু করে ইশারায় জিজ্ঞেস করে ইহানকে “কি বিড়বিড় করছো তোমরা হুম?”

ইহান চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলে বলে “কই কিছু না ইন্সু”

ইহান উষ্মী তাদের বিয়ের ব্যপারে কথা বলছে,কালার ম্যাচ করে কি কি নিয়েছে সেই বিষয়ে কথা বলছে। এদিকে ইন্সিয়া ফোনে গেইমস খেলছে, বেচারি একা বোর হচ্ছিলো তাই এই অবস্তা। আরাশ ক্লাইন্টদের সাথে ব্যবসায়িক আলাপ করছে।

ইহান আরাশ ও উষ্মী ইন্সিয়া হাটতে হাটতে পার্কের ভেতর ঢুকলো। ইহান উষ্মী একপাশে ফুলগাছের নিচে বসে কথা বলছে, এদিকে আরাশ ইন্সিয়া একপাশে দাড়িয়ে দুরে থাকা কাপলগুলোকে দেখছে।

দুজনেই নিরব দাড়িয়ে আছে,নিরবতা ভেঙ্গে আরাশ গলাঝাড়ি দিয়ে মনোযোগ পেতে চাইলো ইন্সিয়ার। ইন্সিয়া আড়চোখে আরাশের দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে, আরাশ ইন্সিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে
“আপনার হয়েছে টা কী বলবেন? কেন আমার সাথে এমন করছেন?”

ইন্সিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে
“যার সাথে সবার শত্রুতা,যার সাথে কারো মিল নেই। তাকে কিসের বিশ্বাস? তার সাথে কিসের সম্পর্ক? কিসের এত কথা”

আরাশ চুপচাপ মাথা নিচু মাটির দিকে তাকিয়ে আছে আর বলছে “ওহ আমি একা থাকতে ভালোবাসি,একাই পথ চলতে চাই। তবে এইখানে আপনার এত রিয়েক্ট করার কিছু দেখতে পাচ্ছিনা।আপনি কেন আমাকে এই বিষয়ে ইগ্নোর করবেন? আপনার সাথে আমার ঐরকম ব্যক্তিগত কানেকশন নেই সো আপনার এসব করা মানায় না”

ইকজেক্টলি আমার যেমন মানায় না। তেমন আমার ব্যক্তিগত ব্যপার, আমি কার সাথে কি করবো না করবো! এর কৈফিয়ত আমি কেউকে দিতে চাই না (ইন্সিয়া)

হুম, আচ্ছা। (আরাশ)

জ্বী, আপনি আমার সামনে না আসলেই খুশি হবো৷ আমি চাই না কোনো ক্রিমিনালের মুখ আমি দেখি, অবাক লাগে জানেন তো! যখন আপনার বোন অরীনকে দেখেছি, এক মুহুর্তে ভেবেই নিয়েছি আপনি তার ভাই নন। কারণ আপনাদের আকাশ পাতাল তফাৎ। সে ঠান্ডা অমায়িক,আর আপনি উগ্র বদমেজাজি ক্রিমিনাল টাইপ একটা লোক। এনিওয়ে সরি। কথাগুলো খারাপ লাগলেও সত্যি। কিছু মনে করবেন না। অরীন আপুকে আমার সালাম দিয়েন (ইন্সিয়া)

ইন্সিয়া আরাশকে কথাগুলো বলে সামনে হেটে চলে গেলো, আরাশ ইন্সিয়ার কথায় কিছু বলার জো পেলো না। হঠাৎ আরাশের চোখ থেকে পানি ঝড়তে লাগলো। আরাশ কোনোভাবে চোখের পানি আড়াল করে পার্ক থেকে বেরিয়ে গেলো।আর একমুহূর্ত ও দাড়ালো না সেখানে। আরাশ ভাবতে পারে নি ইন্সিয়ার মনে এসব ছিলো। আরাশ ইন্সিয়ার মুখে ক্রিমিনাল কথাটি শুনে যেনো আরাশের মাথায় বাজ পড়লো। আরাশ ইন্সিয়ার সামনে আর আসবে না বলে প্রমিস করলো।

ইহান ও উষ্মী, ইন্সিয়াকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো “আরাশ কোথায়?”

জানি না, আমি কি ঐ লোকের এসিস্ট্যান্ট? উনার খবর এসিস্ট্যান্ট রীধীকে আস্ক কর গিয়ে,আমাকে না বুঝলি? (ইন্সিয়া)

ইন্সিয়ার মেজাজ দেখে ইহান উষ্মীর দিকে তাকিয়ে আছে,উষ্মীর আর বুঝতে বাকি রইলো না কোনোকিছু। উষ্মী ইহানকে এক সাইডে নিয়ে গিয়ে বলতে লাগলো “আমার মনে হচ্ছে,ইন্সিয়া আর আরাশ ভাইয়া এদের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে আবার।”

ইহান উষ্মীকে “ব্যপারটা দেখছি” বলে আরাশকে ফোন দেয়। আরাশের ফোন সুইচ অফ। ইহান এবার পুরোপুরি শিউর যে আরাশ আর ইন্সিয়ার মধ্যে আবার কিছু একটা ঘটেছে।
ইহান উষ্মীকে বলছে “যতই এদেরকে এক করতে চাই,ততই এরা কিছু না কিছু বাধিয়ে আলাদা হয়ে যায়। কি করবো বলেন তো?”

উষ্মী ইহানকে আশ্বাস দিয়ে বলে “ইন্সু একটু অভিমানি। ঠিক হয়ে যাবে। চলুন বাড়ি যাওয়া যাক”

ইহান উষ্মী ও ইন্সিয়া একসাথে বাড়ি রওনা দেয়, ইন্সিয়া আর উষ্মীকে বাড়িতে পৌছে দিয়ে ইহান চলে গেলো।

উষ্মী বাড়ি এসে ইন্সিয়াকে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে ইন্সু? তুই কি আরাশকে কিছু বলেছিস?”

কেন রে? তোর এত ভেবে কি লাভ বল তো? আমি জানি না কিছু।(ইন্সিয়া)

এত রাগ দেখাচ্ছিস কেন? আমি তো এমনিই জিজ্ঞেস করেছি, হঠাৎ আরাশ চলে গেলো তাই (উষ্মী)

তুই এক কাজ কর রীধীকে জিজ্ঞেস কর ওর এসিস্ট্যান্টকে, সেই জানে তোদের আরাশ কোথায় গিয়েছে! (ইন্সিয়া)

আচ্ছা মুশকিল তো, তুই রীধীকে নিয়ে পরে আছিস কেন? রীধীর উপর তোর এত রাগ কেন? তুই তো রীধী আরাশ কেউকেই দেখতে পারছিস না দেখছি। (উষ্মী)

ইন্সিয়ার কাছে কোনো উওর নেই, ইন্সিয়া উষ্মীর কথায় ভাবতে লাগলো “আসলেই তো রীধীর উপর কেন ক্ষেপে আছি। আমার সাথে রীধীর কিসের সম্পর্ক?”

উষ্মী ইন্সিয়াকে ঝাকুনি দিয়ে জিজ্ঞেস করে “কিরে বলছিস না যে,রীধীর উপর তোর কিসের রাগ?”

ইন্সিয়া উওর দিতে পারছে না। ইন্সিয়া উষ্মীকে “আসছি” বলে রুম থেকে চলে গেলো।
উষ্মী ইন্সিয়ার কাছে কোনো উওর না পেয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পরে, উষ্মী ভাবছে
“ইন্সিয়া রীধী আর আরাশকে সহ্য করতে পারছে না। তার মানে আমার সন্দেহ কী সত্যি হতে চলেছে?”

চলবে….