#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#১৯তম_পর্ব
অরীন ইন্সিয়ার কান্ড দেখে হেসে বলে “ইন্সু রানি প্রেমের হাওয়া গায়ে লেগেছে। সামথিং সামথিং।তুমি নিজেই আরাশের জন্য উতলা হয়ে উঠবে,হি হি হি”
গায়ে হলুদ ছোয়ানো শেষ উষ্মীর। সবাই হৈচৈ করছে আশেপাশে, ইন্সিয়া দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিজের মেহেদী রাঙ্গা হাত দেখছে। নিচে উষ্মীর অনুষ্ঠান হচ্ছে। এদিকে ইন্সিয়ার কেন যেনো মনটা ভালো নেই। মনে অস্থির লাগছে।
উষ্মীর মা এসে ইন্সিয়াকে নিচে নিয়ে যায়, উষ্মী ইন্সিয়াকে ডেকে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করে “কি রে তোকে আমার আশেপাশে দেখছি না কেন? কি হয়েছে তোর? মন খারাপ?”
না রে মনটা কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে (ইন্সিয়া)
উষ্মী ইন্সিয়ার হাতটা ধরে ইন্সিয়াকে বলে “শোন তোর হয়তো আরাশের জন্য খারাপ লাগছে,যেটা তুই বুঝতে পারছিস না নিজেই। এক কাজ কর তুই ওকে সরি বলে দিস। দেখবি নিজের অস্থির ভাবটা কেটে গেছে”
উষ্মীর কথা শুনে ইন্সিয়া হাত সরিয়ে নেয়, ইন্সিয়া কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না। অরীন ইন্সিয়ার কান্ড লক্ষ্য করছে বসে বসে।
খাওয়াদাওয়া শেষে মেহমান সবাই চলে যেতে লাগলো। দুর থেকে আসা আত্মীয়রা থেকে গিয়েছে। অরীন,রাজু ইহানের পক্ষ থেকে আসা সবাই বিদায় জানিয়ে চলে যায়।
রাত বাজে তিনটা।
ইন্সিয়া ফ্রেস হয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়ে,উষ্মী ইন্সিয়াকে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে আর বলে “জানিস এভাবে আমাদের আর দেখা হবে না।একসাথে থাকা হবে না। দু’জন থাকবো দুই দিকে। আচ্ছা ইন্সু তুই আমাকে ভুলে যাবি না তো?”
ইন্সিয়া উষ্মীর দিকে ফিরে বলে “আরে বোকা মেয়ে ইহান জিজু তো আছেই, তাকে বললে ঠিকই তোকে নিয়ে আসবে। আমরা দেখা করবো ঘুরবো সেই আগেরমতো একসাথে”
কথা বলতে বলতে দু’জন কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো তার আয়ত্তা নেয়,
ভোর হয়ে এলো…
আজ উষ্মীর বিয়ে,পুরো বাড়িতে মেহমানের সমাগম, এদিকে ইহান গোসল সেরে আরাশকে ঘুম থেকে ডাকতে লাগলো
“আরাশ উঠে ফ্রেস হো। দেখ ক’টা বাজে,”
আরাশ নড়েচড়ে উঠে মাথায় বালিশ গুজে দিয়ে ইহানকে বলে ঘুমচোখে
“বিয়ে তোর আমার না।আমাকে কেন বিরক্ত করিস। ঘুমাতে দে সালা।”
আর ঘুমানো লাগবে না উঠ।উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে আই আমি আছি (ইহান)
ইহান কথাগুলো বলে পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে চলে গেলো নিচে।
দুপুর বারোটা,চারদিকে বিয়ের আমেজ। আশেপাশে অর্কিড দিয়ে সাজানো পুরো বাড়ি।
বাহিরে পারপল কালার ফুল দিয়ে সাজানো পুরো ফ্লাট। দেখতে অন্যরকম সুন্দর লাগছে।
সন্ধ্যা হতে হতে চারদিকে আলোকসজ্জা বাহারি লতাপাতায়, ইহান তৈরি হয়ে মোবাইল টিপছে, এদিকে আরাশ তৈরি হচ্ছে, ইহান আরাশের দিকে তাকিয়ে বলে
“জামাই আমি,কোথায় আমার তৈরি হতে লেট হবে, তা না।উল্টো তোর লেট হচ্ছে”
আমার যাওয়ার কোনো ইচ্ছায় নেই,বন্ধুত্বের খাতিরে কত কি যে করতে হবে আল্লাহ জানে (আরাশ)
ইহান আরাশকে জড়িয়ে ধরে বলে “মেরা ভাই হে তু,এটা তোর করাই লাগবে”
আরাশ ইহানকে পারফিউম স্প্রে করে দিয়ে নিজে স্প্রে করতে লাগলো।
দরজায় নক করছে অরীন “ইহান আরাশ জলদি বের হো। বউ আনতে যেতে হবে”
ইহান আরাশের দিকে তাকিয়ে বলে
“আজকে কেল্লাফতে, উষ্মী একেবারে আমার”
বরযাত্রী বেরিয়ে পড়েছে কনে আনার জন্য,
এদিকে উষ্মী তৈরি হয়ে রুমের ভেতর বসে আছে,ইন্সিয়া কালো লেহেঙ্গা পড়েছে,গলায় নীল লকেট। দু হাত ভরা মেহেদী। দেখতে অন্যরকম সুন্দর লাগছে ইন্সিয়াকে। একপাশে লম্বা বিনুনি করেছে ইন্সিয়া কোমর অব্দী ছুঁয়েছে চুলগুলো। সিল্কি চুলগুলো ক্রমানয়ে বাতাসে উড়ছে ইন্সিয়ার।
ইহানদের গাড়ি উষ্মীদের গেইটের ভেতর ঢুকতেই সবাই চিৎকার করে বলছে “বর এসেছে বর এসেছে।”
সবাই ঘিরে ধরেছে তাদের।
ইন্সিয়া দৌড়ে রুমে এসে উষ্মীকে বলে
“জিজু এসেছে উষ্মী,তুই তৈরি তো?”
ইন্সিয়া নিচে এসে ইহানকে মিষ্টি খাইয়ে দেয়,গাড়ির ভেতর থেকে আরাশ বের হয়। আরাশকে দেখে ইন্সিয়া হৃদ স্পন্দন বাড়তে লাগলো। ইন্সিয়ার হাতে থাকা মিষ্টির প্লেট কাঁপছে। আরাশ ইন্সিয়ার দিকে না তাকিয়ে পাশ কেটে যেতে চাইলেই ইহান আরাশের হাত ধরে ফেলে, আরাশ অনিচ্ছাসত্ত্বেও দাড়িয়ে পড়ে।
আরাশ একটিবারের জন্যেও ইন্সিয়ার দিকে তাকায় নি।ইন্সিয়া বুঝতে পেরেছে, আরাশ তাকে এড়িয়ে যেতে চাইছে। ইন্সিয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে,ইন্সিয়া বুঝতে পারছে না এর কারণ। আরাশ ইন্সিয়াকে এড়িয়ে ভেতরে চলে যায়, ইন্সিয়া আরাশের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
বাড়ির পাশে বড় বাগান আছে,আরাশ বাগানের দিকটাই দাড়িয়ে ফোন টিপছে। ইন্সিয়া সবার চোখ ফাকি দিয়ে আরাশের কাছে যেতেই, আরাশ ইন্সিয়াকে দেখে চলে যায়। এবার ইন্সিয়ার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে,ইন্সিয়া বিড়বিড় করে বলছে
“এত ইগোয়েস্টিক লোক কোথাও দেখিনি আর, সরি বলতে এসেছি পাত্তাই দিচ্ছে না হুহ। আমিও দেখবো আপনি কীভাবে আমায় এভয়ড করেন”
সবাই বিয়েতে ব্যস্ত। আরাশ বাগানের দোলনায় বসে বসে রাজুর সাথে কথা বলছে, ইন্সিয়া হাতে জুস নিয়ে এসে আরাশের সামনে দাড়ায়। আরাশ যেতে চাইলে ইন্সিয়া বাধা দেয়। আরাশকে যেতে দেয় না। রাজু আরাশ আর ইন্সিয়ার কান্ড দেখছে।
ইন্সিয়া রাজুকে জুস দিয়ে বলে “এই ছোটু এটা খেতে খেতে ওদিকটা ঘুরে আই”
রাজু আরাশের দিকে তাকালেই আরাশ রাজুকে ইশারা দিয়ে যেতে বলে। রাজু আরাশের কথায় উঠে চলে যায়, আরাশ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ইন্সিয়া সেইদিকে গিয়ে দাড়ায় যাতে আরাশ তাকে দেখে। আরাশ মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকায়,ইন্সিয়া এবার বুঝতে পেরেছে “আরাশ ইন্সিয়ার দিকে তাকাবে না”
ইন্সিয়া আরাশকে জুস এগিয়ে দিয়ে বলে “নিন এটা খান। কিছুই তো খান নি।আমার বেস্টির বিয়ে কিছু না খাইয়ে রাখলে আমার বেস্টির’ই বদনাম করবেন”
আরাশ টু শব্দ না করে জুসের গ্লাস নিয়ে চলে গেলো ইন্সিয়াকে পাশ কাটিয়ে৷ ইন্সিয়া রেগেমেগে মুষ্টিবদ্ধ করে বলে
“ধ্যাত আবারো ইগনোর করে চলে গেলো। আমি ইগনোর নিতে পারি না।তিনি আমাকে ইগনোর করেই যাচ্ছে ধুর”
উষ্মীর বিদায় বেলা চারদিকে থমথমে হয়ে আছে পরিবেশ, উষ্মী সমানে কেঁদেই যাচ্ছে। ইহান উষ্মীর হাত শক্ত করে ধরে আছে। এদিকে ইন্সিয়া মন খারাপ করে একপাশে দাড়িয়ে আছে উষ্মীর জন্য। উষ্মী দৌড়ে এসে ইন্সিয়াকে জড়িয়ে ধরে।
ইহান উষ্মীকে নিয়ে চলে যায়, ইন্সিয়া বাগানের দোলনায় বসে আছে মন খারাপ করে।
মেহমান সবাই আস্তে আস্তে যেতে লাগলো। ইন্সিয়ার মা উষ্মীর মায়ের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। আরাশ গাড়ি পার্ক করে অরীনকে বলছে “আপু আই রাত হয়েছে অনেক”
অরীন আরাশকে আরেকটু বসতে বলে ইন্সিয়ার কাছে যায় আর বলে “ইন্সু মন খারাপ করো না,সবাইকেই এই পরিস্থিতি ফেইস করতে হবে। আজ হয়তো উষ্মীর কাল হয়তো তোমার। এখানে বসে থেকো না জায়গাটা নিরব”
ইন্সিয়া চোখ মুছে অরীনকে জড়িয়ে ধরে, আরাশ গাড়ির ভেতর থেকে সব দেখছে। আরাশের কেন যেনো ইন্সিয়ার কান্না দেখে খারাপ লাগছে।তবুও আরাশ নিজেকে শক্ত করে চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে। অরীন ইন্সিয়াকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে বসে পড়ে।
এদিকে অরীন গাড়িতে এসে দেখে ,আরাশ নেই।
ইন্সিয়া দোলনায় চুপচাপ গুটিয়ে বসে আছে। গাড়িতে ড্রাইভার বসা মাত্র অরীন বলে উঠে “আরাশ কই?”
সাহেবের নাকি একটা কাজ আছে। আমারে কইলো আন্নেরে পৌছাইয়া দিতে বাড়িত, (ড্রাইভার)
রাজু, অরীন, মুনিয়া খালার মেয়ে মিশু বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
আরাশ মেইন গেইটে দাড়িয়ে ইন্সিয়াকে পাহারা দিচ্ছে,আরাশ চায়না ইন্সিয়ার সামনে আসতে,আরাশ একটা মেয়েকে একা ফেলে যাওয়াটা সেইফ মনে করছে না।তাই সে ইন্সিয়ার জন্য থেকে যায়। ইন্সিয়া জানেনা আরাশ তার আশেপাশে কোথাও আছে।
এদিকে আরাশ তার প্রমিস রাখে,ইন্সিয়ার সাথে কথা না বলেও ইন্সিয়ার উপর নজর রাখে। আরাশ মেইন গেইটে দাড়িয়ে ইহানকে ম্যাসেজ দিচ্ছে
“বেস্ট অফ লাক,বিড়ালটা ভালোভাবে মারিস”
হঠাৎ খেয়াল করে দেখে, পেছনের গেইট দিয়ে ইন্সিয়ার মতো একটা মেয়েকে বড় কালো কারের ভেতর জোর করে টেনে ঢুকিয়ে দেয়,মেয়েটিকে ঢোকানো মাত্র গাড়িটি আর দাড়ালো না সোজা চলে গেলো ঝড়ের গতিতে। আরাশের কেন যেনো মনে খটকা লাগে। আরাশ পেছন ফিরে ইন্সিয়াকে দেখতে গিয়ে ইন্সিয়াকে দেখতে পায় না।
আরাশের এবার মনে হলো “তার মানে ওটা ইন্সিয়া? এত রাতে কার সাথে কোথায় গেলো?”
আরাশ আর একমুহুর্ত দেরী না করে টেক্সি ঠিক করে উঠে গেলো। টেক্সিওয়ালাকে আরাশ গাড়ির নাম্বারগুলো বলতে লাগলো আর বললো “এই নাম্বারের গাড়ি একটু আগে গিয়েছে,আপনি মেইন রোডে গেলে পেয়ে যাবেন। এতদুর যায় নি এখনো গাড়ি আশা করি। প্লিজ গাড়িটাকে ফলো করুন”
টেক্সিওয়ালা আরাশের কথামতো গাড়ি চালাতে লাগলো। মাঝরাস্তায় মেইন রোডে গাড়ির চ্যাক করছে পুলিশ। গাড়িটা মেইনরোডের ঝোপের একপাশে দাড়িয়ে আছে, টেক্সিওয়ালা আরাশকে বলে “ভাইজান মমে হচ্ছে এই গাড়িটা দেখুন তো, নাম্বাগুলো মিল”
আরাশ ভালো করে মিলিয়ে দেখে হুবুহু মিল গাড়ির নম্বর। আরাশ গাড়ি থেকে নেমে ঐগাড়ির গ্লাসে গিয়ে টোকা দিতে থাকে,তখন এক পুলিশ কন্সটেবল এসে বলে “ব্যপার কি? এভাবে টোকা দিয়ে কি দেখছেন? চ্যাকিং করা আমাদের কাজ আপনার না। সরুন”
আরাশ পুলিশকে সবটা বলার পর পুলিশ গাড়ির ভেতর চ্যাক করে দেখে কোনো ড্রাইভার নেই।কোনো মানুষ নেই। এবার পুলিশের খটকা লাগে।পুলিশ আরাশকে বলে “কিডন্যাপ কেইস মনে হচ্ছে।”
আরাশ ঝোপের দিকে সরু রাস্তা দেখতে পেয়ে ওদিকটাতে দৌড়ে চলে যায়। পুলিশ বাকি কন্সটেবলকে আরাশের পেছন পেছন যেতে বলে।
আরাশ ভেতর ভয়ে বুক ধুরু ধুরু অবস্তা। আরাশের অস্থির লাগছে সব। ইন্সিয়ার জন্য আরাশের খারাপ লাগছে।
এদিকে ইন্সিয়ার মা-বাবা ভেবেছে উষ্মীর সাথে ইন্সিয়া চলে গিয়েছে। তাই তারা খোঁজ না নিয়ে নিশ্চিন্তে নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত।
আরাশ ঝোঁপ পেরিয়ে ট্রেনের রাস্তা দেখে, আরাশ মনে মনে ভাবছে “এত রাতে এখন ট্রেন আসার কথা না। তার মানে ট্রেনের রাস্তা পেরোলেই আবারো ঝোপঝাড় ”
আরাশ ট্রেনের রাস্তা পেরিয়ে ঝোপের ভেতর ঢুকে। ঝোপের ভেতরে ঘন অন্ধকার। আশেপাশে শেয়াল ডাকছে। আরাশ সাবধানের সাথে সামনে এগোতে লাগলো। দুর থেকে কুটির দেখা যাচ্ছে,কুটিরের ভেতর কুপি জ্বলছে স্পষ্ট বুঝায় যাচ্ছে। আরাশের আর বুঝতে বাকি রইলো না “ইন্সিয়া এখানেই আছে”
আরাশের মন বলছে ইন্সিয়া আশেপাশে আছে। আরাশ আস্তে আস্তে কুটিরের দিকে এগোতে লাগলো।পুলিশ কন্সটেবল চারদিকে কুটিরকে ঘিরে ফেললো।
আরাশ কুটিরের দরজা খুলতেই রাগে থর থর করে কাঁপছে। আরাশের চোখগুলো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে
চলবে….
(কে জানে ইন্সিয়ার জীবনের সুচণা কোনদিকে ঘটে🤧)