রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে পর্ব-২২ + বোনাস পর্ব

0
539

#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#২২তম_পর্ব

আরাশ আর এক মুহুর্ত দাড়ালো না সেখানে,রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ইন্সিয়ার কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে,ইন্সিয়া বুঝতে পারছে না এই লোকটা আদো কি চায়!

ইন্সিয়া মনে মনে বলছে “আমি জানতে চাই আপনি কী চান, এভাবে আমি আপনাকে এত সহজে ছাড়ছি না”

ইন্সিয়া বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হতে চলে যায়,ইন্সিয়ার ফোনে রিং পড়ছে, উষ্মী উপর থেকে এসে রুমে কাপঁড় ভাজ করছিলো ইন্সিয়ার ফোনে রিং পরাতে উষ্মী ফোন রিসিভ করে,
“হ্যালো খালামনি কেমন আছেন?”

আমরা ভালোই আছি তুই কেমন আছিস? ইন্সু কই? সে কেমন আছে? কবে আসবে সে? (ইন্সিয়ার আম্মু)

আমি ভালো আছি খালা মণি, ইন্সিয়াও ভালো আছে। ইন্সিয়া ফ্রেস হচ্ছে বোধহয়,সে আমার সাথে পরশু আসবে। (উষ্মী)

আচ্ছা, ওকে একটু দেখিস,মনে বড্ড কু গাইছিলো তাই ভেবেছি ফোন দিয়ে দেখি তোদের কি খবর। (ইন্সিয়ার আম্মু)

বড্ড ভালো করেছেন খালামণি,সারাদিনের ব্যস্ততায় ফোন ও দিতে পারি না। ভালো করেছেন ফোন দিয়ে।মা – বাবা কেমন আছে? (উষ্মী)

তারা ভালো আছে,ঘুমাচ্ছে। কাল বাড়ি চলে যাবো, ওদিকে ঘরের কি হাল জানি না। তোর মায়ের জন্য আজ যেতে পারিনি (ইন্সিয়ার আম্মু)

আর ক’টা দিন থাকলে কি হয়,মা তো ঠিক কাজ’ই করেছে। বাড়িতে গিয়ে একা কি করবেন খালামনি।এদিকে ইন্সুও নেই (উষ্মী)

নারে মা বাড়িতে অনেক কাজ।আচ্ছা মা ভালো থাকিস।ইন্সুকে বলিস আমি ফোন দিয়েছি।ওকে একটু দেখে রাখিস। রাখছি (ইন্সিয়ার আম্মু)

ইন্সিয়ার আম্মু ফোন কেটে দেয়,ঠিক তখন’ই ইহান এসে বলে উষ্মীকে “কার সাথে কথা বললেন?”

উষ্মী হকচকিয়ে উঠে বলে “উফফ ভয় পাইয়ে দিলেন।খালামণি ফোন দিয়েছে,কেমন আছি জিজ্ঞেস করতে৷ আর ইন্সুর কথা জিজ্ঞেস করছিলো”

ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। (ইহান)

ইন্সু ফ্রেস হয়ে রুমে এসে বসে,উষ্মী ইন্সিয়াকে বলে “খালামনি ফোন করেছিলো,তুই এখানে ছিলি না।আমি কথা বললাম। সবার কথা জিজ্ঞেস করলো।”

ইন্সিয়া দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে “মা কেমন আছে?”

খালামণি ভালো আছে,আমি কথা বলে বুঝলাম (উষ্মী)

ভালো হলেই হলো। (ইন্সিয়া)

সবাইকে নিচে যেতে বলছে ইহান নাস্তা করার জন্য৷ সবাই নিচে নাস্তা করতে চলে গেলো। ইন্সিয়া রুমে বসে ফোন টিপছে,কারণ ইন্সিয়ার হাতে ব্যথা, সেএই হাত নিয়ে খেতে পারবে না। তাই ইন্সিয়া নিচে যায় নি। উষ্মী সার্ভেন্টকে দিয়ে নাস্তা পাঠিয়ে দিলো ইন্সিয়ার রুমে।

ইন্সিয়া আশেপাশে উঁকি দিয়ে দেখে কেউ আছে কি না। ইন্সিয়া খাবার গুলো টেবিলের একপাশে রেখে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়,ঠিক তখন’ই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়। পুরো রুম অন্ধকার হয়ে আছে। ইন্সিয়া ভয়ে ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করে চারপাশটা দেখছে রুমে কেউ এসেছে কি-না,

ইন্সিয়ার খুব ভয় হচ্ছে একা। হঠাৎ ইলেক্ট্রিসিটি যাওয়াতে সবাই নিচে বলাবলি করছে,নিচ থেকে আবছা আবছা কথার আওয়াজ ভেসে আসছে ইন্সিয়ার কানে।

একটু পর ইন্সিয়া উঁকি দিয়ে দেখে নিচে ড্রয়িংরুমে ইলেক্ট্রিসিটি আছে,কিন্তু ইন্সিয়ার রুমের লাইটটা ফিউজ। ইন্সিয়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভয়ে ঝেকে বসে আছে বিছানায়। হঠাৎ ইন্সিয়ার চোখ পড়ে রুমের দরজার উপর। ইন্সিয়ার মনে হচ্ছে কে যেনো রুমে এসে ইন্সিয়ার উপর নজর রাখছে। ইন্সিয়া মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। পুরো রুম অন্ধকার।বাহির থেকে একটু একটু আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে পর্দার আড়ালে।।বাহিরে মৃদু হাওয়া, পর্দা গুলো দোল খাচ্ছে।
পুরো রুমটাই যেনো ইন্সিয়ার কাছে হরর ফিল্মের মতো লাগছে। ইন্সিয়া বেলকনিতে গিয়ে নিচে উঁকি দেয়,বাহিরে পুরোপুরি আলো এসেছে কি না দেখতে। হঠাৎ ইন্সিয়াকে কে যেনো পেছন থেকে ইন্সিয়ার কাঁধে ফু দেয়,ইন্সিয়া ভয়ে শিউরে উঠে। ইন্সিয়ার কাঁধে গরম গরম কার যেনো নিঃশ্বাস পড়ছে। ইন্সিয়া চোখবন্ধ করে কাঁপতে কাঁপতে দোয়া দরুদ পড়তে শুরু করে।

ইন্সিয়ার সাহসে কুলোচ্ছে না সামনে ফিরে দেখার,ইন্সিয়া চোখ বন্ধ করে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে, ইন্সিয়ার কাঁধে আঙ্গুল দিয়ে কে যেনো স্পর্শ করছে,আঙ্গুলগুলো বরফের মতো ঠান্ডা। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। ইন্সিয়া চিৎকার করতে গিয়েও চিৎকার কর‍তে পারছে না। আওয়াজ বেরোচ্ছে না ভয়ে। ইন্সিয়া ভেবে নিয়েছে হয়তো কোনো আত্মার কাজ।
ইন্সিয়া মনে মনে বলছে “আমি হরর মুভিতে দেখেছি ভুতপ্রেত দের হাত বরফের মতো ঠান্ডা হয়।কিন্তু আমি কি দোষ করলাম মেরি মা। আমার পেছনে কেন জ্বীন পড়লো? আল্লাহ উদ্দ্বার করো আমায়,”

মুহুর্তেই ইন্সিয়ার রুমে লাইট অন হয়ে যায়, ইন্সিয়া এখনো সেই একই জায়গায় চোখ বন্ধ অবস্তায় বিড় বিড় করে যাচ্ছে, পেছন থেকে ইন্সিয়ার কাঁধে হাত দিয়ে উষ্মী বলে “কিরে ইন্সু তুই এখানে কেন? এখনো খাস নি?”

ইন্সিয়া উষ্মীর আওয়াজ শুনে বিড়বিড় করা অফ করে কাঁপতে কাঁপতে সামনে ফেরে আর বলে “ভু ভু ভুততত”

উষ্মী ইন্সিয়ার কথা শুনে ক্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে, উষ্মী নিজেও ভুত প্রেত বিশ্বাস করে, উষ্মী ইন্সিয়ার কথায় ঢোক গিলে বলে “কি বলিস এসব? ভয় লাগাচ্ছিস আমায় তাই না? এখানে কোনো ভুত নেই,চল এখান থেকে”

ইন্সিয়া ভয়ে উষ্মীর হাত আঁকড়ে ধরে বলে “সত্যি বলছি ভুত আছে এখানে, উষ্মীরে বাঁচা।”

উষ্মী ভয়ে ইন্সিয়াকে বলে “বোন এসব পাগলামি বন্ধ কর,তখন কিন্তু এই ভুতের চক্করে আমি শশুড়বাড়ি থেকে পালাবো”

অরীন রুমে আসা মাত্র ইন্সিয়া উষ্মী একে অপরের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে, অরীন কিছু জানতে চাইলেই ইন্সিয়া বলে “কি কি কিছু না আপু, খেয়েছেন?”

অরীন হেসে বলে, “হুম তুমি না খেয়ে এতক্ষণ কি করছিলে?”

উষ্মী অরীনের কথায় মাঝখান থেকে বলে উঠে “ওর হাতে ব্যথা আপু এইজন্য আমার’ই খাইয়ে দেওয়া লাগবে”

অরীন উষ্মীর গাল টেনে বলে “ইন্সিয়া অনেক ভাগ্যবতী তোমার মতো ফ্রেন্ড পেয়ে”

অরীন ইহানের আম্মুর সাথে নিচে আড্ডা দিচ্ছে, ইন্সিয়াকে উষ্মী খাইয়ে দিচ্ছে আর বলছে “বল তো সত্যিটা কি। শোন আমাকে ভয় দেখাবি না। সত্যটা বল”

ইন্সিয়া এক এক করে সবটা বলে উষ্মীকে,উষ্মী ইন্সিয়ার কথায় ভয়ে চুপসে যায়।
এদিকে আরাশ ও ইহান অন্যরুমে হাসাহাসি করছে,ইহান আরাশকে বলে
“বেচারি ইন্সু এত ভীতু।সে নাকি আবার রাগ দেখায়। ভাই তুই তো পুরোই হরর এন্ট্রি দিলি”

আরাশ মুখে হাত দিয়ে কোনোভাবে হাসি থামিয়ে চুল ঠিক করছে,

রাত হতে লাগলো।
ইহানের আম্মু অরীনকে বলে
“মা তুই থেকে যা, সবাই আছে ঘরটাই প্রান আছে। ”
জোর করে অরীন,আরাশদেরকে রেখে দেয় ইহানের আম্মু, রাতের খাওয়াদাওয়া করে সবাই যে যার রুমে, অরীন ইন্সিয়া এক রুমে শুয়েছে, উষ্মী ইহান অন্যরুমে।

আরাশ ইহানের ল্যাপটপ দিয়ে কাজ করছে অন্যরুমে।অরীন বাচ্ছাকে নিয়ে বেঘোরে ঘুম ইন্সিয়া রুমে এদিক ওদিক হাটছে। ইন্সিয়ার ভয়ে ঘুম আসছে না। ইন্সিয়ার মনে বারবার সেই সন্ধ্যাবেলার অন্ধকার ঘটনা গুলো মনে পড়ছে।

আরাশ কাজ সেরে বাহিরে বের হয়। রাত বাজে ১টা। এদিকে ইন্সিয়া রুমে পায়চারি করছে। ঠিক তখন’ই আবারো ইন্সিয়ার রুমের লাইট অটোমেটিক অফ হয়ে যায়। ইন্সিয়া ভয়ে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে আছে, জানালা দিয়ে চাঁদের আলোই রুমটা বেশ ফকফকা।
অরীন মেয়েদুটোকে নিয়ে ঘুম, ইন্সিয়া চাই না ইন্সিয়ার কারণে কারো ঘুমের ক্ষতি হোক,তাই ইন্সিয়া মনে মনে বলছে “আজ যা হবে হোক।আমি তাকে ধরবোই”
ইন্সিয়া প্রস্তুত নিয়ে বেলকনিতে সেই আগের মতো দাড়িয়ে আছে, অপেক্ষা করছে সেই স্পর্শের।

যদিও ইন্সিয়া ভেতরে ভেতরে ভয়ে কাবু হয়ে আছে,রাত ২টা বাজতেই ইন্সিয়ার রুমের দরজা খুলে গেছে অটোমেটিক, ভীষণ বাতাস বইছে। ইন্সিয়া বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে, কে যেনো সেই আগের মতো ইন্সিয়ার কাঁধে ফু দেয়, ইন্সিয়া ভয়ে শিউরে উঠলেও হাল ছাড়ে নি। ইন্সিয়া সাথে সাথে সামনে ফিরে দেখে কেউ নেই সামনে।

ইন্সিয়ার এবার আরো ভয় হতে শুরু করে,ইন্সিয়া এবার ভাবছে “তার মানে সত্যি সত্যি প্রেতাত্মা?”

ইন্সিয়া ভয়ে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে, কে যেনো ইন্সিয়ার কাঁধে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করছে, ইন্সিয়া খপ করে হাত ধরে ফেলে।

ইন্সিয়া হাত চেপে ধরে তাকে দেখতে গেলেই, ইন্সিয়ার হাত পেছনে চেপে ধরে ইন্সিয়াকে ঘুরিয়ে নেয় ওপাশে। ইন্সিয়া ব্যথায় আহ্ করে উঠে, ইন্সিয়ার হাতের বাঁধন আলগা করে দিয়ে ইন্সিয়াকে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় সে, কিন্তু ইন্সিয়া না গিয়ে ধাক্কা দিয়ে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। অন্ধকারে মুখ বোঝা যাচ্ছে না তার। ইন্সিয়া অনেক চেষ্টা করেও মুখ দেখতে পারলো না অন্ধকারের জন্য। ইন্সিয়া অস্ফুট স্বরে বলে উঠে “কে আপনি? কি চান? কেন বার বার এভাবে এসে আমাকে স্পর্শ করেন?”

ইন্সিয়াকে মুখ চেপে ধরে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে নেয়,ইন্সিয়ার চোখের উপর আসা চুলগুলা সরিয়ে দিতে হালকা ফু দেয় ইন্সিয়ার মুখে। ইন্সিয়ার উড়ন্ত চুলগুলো সরে যায়, ইন্সিয়ার এবার খটকা লাগে, ইন্সিয়া মনে মনে ভাবছে বিকেলে ঘটে যাওয়া সেই কান্ডগুলো “বিকেলে একইভাবে মিস্টার আরাশ এটা করেছিলো। তার মানে ইনি আরাশ? না না মিস্টার আরাশ তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ইনি কে?”

ইন্সিয়ার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয় সে, ইন্সিয়া ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠে, ইন্সিয়ার গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছে যেনো। ইন্সিয়া ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলেই ইন্সিয়াকে শক্ত করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরা হয়। গম্ভীর স্বরে ইন্সিয়াকে বলে “Be mine”

ইন্সিয়া কথাটুকু শুনে আৎকে উঠে, খুব চেনা স্বর,কিন্তু ইন্সিয়ার হাতে উপযুক্ত প্রমাণ নেই তাকে ধরার। ইন্সিয়াকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে গেলেই ইন্সিয়া তার নখ দিয়ে হাতে আঁচড় কেটে দেয়।

ইন্সিয়া মনে মনে বলছে “আপনি যেই হোন কালকেই আমি প্রুভ করবো আপনি আসলে কে? আমার দেওয়া নখের আঁচড়টা বলে দিবে সব কিছু। তৈরি থাকুন”

চলবে..

#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#বোনাস_পার্ট

ইন্সিয়া মনে মনে বলছে “আপনি যেই হোন কালকেই আমি প্রুভ করবো আপনি আসলে কে? আমার দেওয়া নখের আঁচড়টা বলে দিবে সব কিছু। তৈরি থাকুন”

ইন্সিয়া ধীর পায়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে অরীনের পাশে,
চারদিকে অন্ধকার,ইন্সিয়া মনে সাহস জুগিয়ে চুপ করে শুয়ে আছে।

অন্যদিকে উষ্মী ভয়ে একপাশে শুয়ে আছে,ইহান উষ্মীর দিকে তাকিয়ে বলে “কোনো সমস্যা? আমি কি সোফায় শুয়ে পড়বো?একটু পর পর খালি নড়েই চলেছেন।মনে হচ্ছে আপনি কম্ফোর্ট ফিল করছেন না”

উষ্মী রাগে বিড় বিড় করে বলছে “আরে হাদারাম আমার ভয় করছে এটাও বুঝেন নি? কেমন বর আপনি। কোথায় পাশে ঘুমিয়ে পড়বে তা না। উল্টো সোফায় ঘুমানোর চিন্তা করছে যাতে এদিকে আমি ভয়ে মরে শক্ত হয়ে থাকি”

কি হলো কিছু বলছেন না যে (ইহান)

না কিছু না। আমার কিসের সমস্যা,শুয়ে পড়ুন (উষ্মী)

ইহান উষ্মীর পাশে শুয়ে পড়ে, ইহান রুমের বাতি অফ করতে গেলেই উষ্মী চেচিয়ে বলে “আরে আরে করছেন টা কি? লাইট অফ করবেন না প্লিজ”

ইহান ক্যাবলার মতো উষ্মীর কথায় থ বনে যায়, ইহান উষ্মীকে বলে “লাইট অফ না করলে আমার ঘুম হবে না”

উষ্মী ইহানের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলে “আমারো লাইট অফ করলে ঘুম হয় না।ভয় হয়”

উষ্মীর কথায় ইহান কাঁশতে শুরু করে। উষ্মী শোয়া থেকে উঠে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দেয় ইহানের দিকে,আর ইশারায় বলে “নিন ধরুন”

ইহান পানি ঢোক গিলে খেয়ে শ্বাস নেয় আর উষ্মীকে বলে “আমি আছি কোনো ভয় নেই।”

উষ্মী কথা না বাড়িয়ে পানির গ্লাস টেবিলের উপর রাখতে চলে যায় অমনি ইহান লাইট অফ করে দেয়,উষ্মী আম্মু বলে এক দৌড়ে ভয়ে বিছানার উপর লাফ দেয়। ইহান উষ্মীর কান্ডে মুখে কাথা দিয়ে হাসছে। উষ্মী ভয়ে বিছানার উপর লাফাতে শুরু করে,চারদিকে অন্ধকার রাত প্রায় আড়াইটা। ইহান বুঝতে পেরেছে উষ্মী নিজে ঘুমাবে না ইহানকেও ঘুমাতে দেবে না। তাই যা করার ইহানকেই করা লাগবে। ইহান উষ্মীর হাত টান দেয়। অমনি উষ্মী স্লিপ করে ইহানের বুকে পড়ে। ইহান উষ্মীর দিকে তাকিয়ে আছে। উষ্মী ভয় ও লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছে। ইহান উষ্মীকে কাছে টেনে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে ফেলে আর বলে “পাগলি একটা।আমি আছি না? আমার বউকে আমার কাছ থেকে কেউ নিয়ে যেতে পারবে না”

উষ্মীকে শক্ত করে ইহানকে জড়িয়ে ধরে, ইহান নিজের করে নেয় উষ্মীকে। শেষ হয় রাত।

ভোর বেলা আরাশ শাওয়ার নিয়ে টেবিলে খেতে বসেছে। ইন্সিয়া আজ ইচ্ছে করে খাবার খেতে নিচে টেবিলে এসেছে। উষ্মী ইহানকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে টেবিলে। ইহান আরাশকে দেখে বলে
“কিরে আজ কি বেশি ঠান্ডা পড়ছে? হঠাৎ লম্বা হাতের শার্ট ফোল্ড করা ছাড়া এভাবে পড়েছিস। মনে হচ্ছে যেনো ঠান্ডায় তোকে কাবু করে রেখেছে”

আরাশ খাবার মুখে নিয়ে ইহানকে বলে “তোর মতো বিবাহিত বউ আছে নাকি যে আমার ঠান্ডা লাগবে না।সবসময় গরম থাকবো।”

আরাশের কথায় উষ্মী কাঁশতে শুরু করে,ইহান পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় উষ্মীর দিকে, ঘরের বাকিরা খাওয়াদাওয়া করে যে যার রুমে। খাবার টেবিলে শুধু ইহান, উষ্মী ইন্সিয়া আরাশ আছে।

ইন্সিয়া উষ্মীর কান্ড দেখছে, উষ্মীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে আছে, ইন্সিয়া উষ্মীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে “বুঝেছি ছক্কা দিয়ে দিয়েছে জিজু। উষ্মীর ব্লাশিং ফেইস বলে দিচ্ছে”

উষ্মী ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে “ঐ কি দেখিস,এদিকে আই খাইয়ে দি তোকে।হাতের জন্য কি একটা ঝামেলাই পড়লি তুই।”

ইন্সিয়া মিট মিট করে হাসছে উষ্মীকে দেখে, ইহান লজ্জায় খাবার দ্রুত শেষ করতে ব্যস্ত। এদিকে আরাশ আড়চোখে ইন্সিয়াকে দেখছে আর টেবিলে থাকা ফ্রুটগুলো এক এক করে স্পুন(চামচ) দিয়ে খাচ্ছে।

ইন্সিয়া দেখছে উষ্মীকে, আরাশ দেখছে ইন্সিয়াকে। ইহান খাবার খেতে ব্যস্ত।

আরাশ একটু পর পর তার বাম হাত টেবিলের নিচে নিয়ে গিয়ে শার্টের হাতা নামিয়ে দিচ্ছে। ইহান লক্ষ্য করে বলে “কি ব্যাপার। তুই হাতা ফোল্ড কর তাইলে,যেহেতু তোর প্রব্লেম হচ্ছে”

আরাশ মৃদু স্বরে বলে “ও কিছু না। খেতে থাক।আমায় নিয়ে তোর ভাবা লাগবে না।”

আরাশের কথায় ইন্সিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরাশকে দেখে মনে মনে বলছে “সত্যিই কিছু না? নাকি হাতের দাগ দেখবো বলে এই বদ ভাইরাস লুকোচ্ছে?”

আরাশের চোখ ইন্সিয়ার দিকে পড়তেই ইন্সিয়া অন্যদিকে তাকিয়ে আছে, আরাশ ইন্সিয়াকে দেখে বিড়বিড় করে বলছে
“আস্ত একটা পেত্নি,রক্ত বের করে দিয়েছে কাল রাতে,আবার এদিকে ড্যাব ড্যাব করে আমার উপর নজর রাখছে। সুযোগ পায় সব উশুল করবো।”

আরাশ গলা ঝাড়ি দিয়ে উষ্মীকে বলছে “ভাবি একজনের নাকি হাতের উপর বজ্রপাত ঘটেছিলো,সে নাকি নিজে নিয়ে খেতে পারে না, ইভেন কালকেও ড্রামা করে সে তার রুমে খেয়েছিলো খাবার। আজ সকাল সকাল টেবিলে একসাথে বসে খাবার খাওয়ার মানে কি ভাবি? এই সাইন্সটা বুঝলাম না ভাবি একটু বুঝিয়ে দিন”

উষ্মী ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়, ইন্সিয়া রেগেমেগে রুমে চলে যায় খাবার খেয়ে, ইন্সিয়া যাওয়ার পর ইহান আরাশকে বলে “কাল থেকেই তুই ওর পিছু লেগেছিস,বেচারি মরতে মরতে বেঁচে আছে। আচ্ছা তোর হাতে কি হয়েছে রে?”

আরাশ গম্ভীর গলায় বলে “আরে কিছু না”

উষ্মী আরাশের দিকে তাকিয়ে বলে “থাক আরাশ ভাইয়া বুঝেছি,ইন্সিয়া হয়তো হাতে ব্যথা দিয়েছে যেটা আপনি লুকোচ্ছেন”

আরাশ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “একটা দাগের বদলে যদি হাজারটা দাগ দেওয়া যায় তাতে একটা দাগ সহ্য করা তেমন ব্যপার না ভাবি”

উষ্মী আরাশের কথার আগামাথা কিছু বুঝলো না, উষ্মী ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইহান কাঁশতে শুরু করে আরাশের কথায়, আরাশ পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় ইহানের দিকে আর রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “ধীরে সুস্থে খেতে হয় বৎস,”

আরাশ পকেটে হাত দিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো। উষ্মী ইহানকে বলে “আরাশ ভাইয়া কোন দাগের কথা বললো? আমি কিছুই বুঝিনি। আরাশ ভাইয়া কি ইন্সিয়ার কাছ থেকে সেই প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবছে? এখনো কি কিছু ভুলতে পারে নি?”

আরে আপনি ভুল ভাবছেন আরাশ এমন না। আরাশ মজা করে বলেছে,এত সিরিয়াস নেওয়ার কিছু নেই।।সে যদি প্রতিশোধ নিতো তাহলে বাঁচাতো না বারবার (ইহান)

হুম তা ঠিক,তবুও আরাশ ভাইয়াকে আমি বুঝতে পারি না। তার মস্তিকে কখন কি চলে ধরা যায় না,রহস্য রহস্য লাগে আমার আরাশ ভাইয়াকে (উষ্মী)

আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভাবেন তাই এমন,আমার ছোটবেলার বন্ধু ও,এটা ঠিক ও প্রচন্ড রাগী। এবং গম্ভীর। ব্যাথা পেলে সে কখনো প্রকাশ করবে না।চুপচাপ সয়ে নিবে। কিন্তু পরবর্তীতে এর চেয়ে দ্বিগুণ ফেরত দিবে। (ইহান)

এইখানেই তো ভয় আমার,আরাশ ভাইয়া যদি ইন্সিয়াকে মন থেকে ক্ষমা করতে না পারে তখন?(উষ্মী)

তাদের টা তারা বুঝুক। এখন আমাদের এই বিষয়ে কথা বলা মানায় না,তারা নিজেরাই ডিসাইড করুক, কাকে কার প্রয়োজন (ইহান)

ইহানের কথায় উষ্মী দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিচেনে চলে যায়।

ইন্সিয়া রুমে এসে বসে বসে ভাবছে “আজ মিস্টার আরাশের গেট আপ চেঞ্জ,শার্টের হাতা ফোল্ড না করে নরমাল খোলা রেখেছে, যাতে আমি আমার দেওয়া সেই আচঁড়ের দাগটা না দেখতে পারি,তার মানে কাল রাতে মিস্টার আরাশ এসেছিলো। কিন্তু তিনি আমায় কি বলে গেলো এটা? সকাল বেলা উনার হাবভাবে মনে হলো উনি আমাকে সহ্যই করতে পারে না।সামান্য আজ নিচে যাওয়াতে তিনি দেখিয়ে দিলেন সব,কেন আমি নিচে গেলাম কেন তার সামনে খেতে বসেছি। তাহলে কাল রাতে কেন এসব আমায় বললেন? তিনি মুহুর্তেই নিজের রুপ বদল করছেন। তিনি আসলে চাইটা কি? ওহ বুঝেছি তিনি আমায় ব্যবহার করতে চাইছেন,এতদিন অফিসে এসিস্ট্যান্ট রীধীর সাথে দেখা হচ্ছে না তাই তার বদলে আমাকে ব্যবহার কর‍তে চাইছেন তিনি। ছিঃ মিস্টার আরাশ। ছিঃ মেয়ের নেশা কাটাতে শেষমেশ আমাকে ব্যবহার কর‍তে চাইছিলেন?”

ইন্সিয়ার ফোনে টুং টাং ম্যাসেজ আসে, সেই ম্যাসেজের আওয়াজে ইন্সিয়ার ভাবনার ঘোর ভাঙ্গে, ইন্সিয়া ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজ ফোল্ডার চ্যাক করতেই দেখে আননোন অনেক ম্যাসেজ, ইন্সিয়া ম্যাসেজ গুলো দেখতে থাকে। ম্যাসেজে লিখা

“তোর মা-বাবাকে বাঁচাতে চাইলে অভিক রয়ের কেইস তুলে ফেল। আর নিজেকে চুপচাপ আমাদের কাছে সমর্পণ কর,নয়তো তোর মা-বাবা দুজনকে মেরে, মেইন রাস্তায় ট্রাক চাপা দিয়ে থেতলে যাবো, এই কথাটা যদি তোর জান আরাশের কানে যায়,তাহলে বুঝে নিস তোর মা-বাবা শেষ। ঠিকানা অনুযায়ী আজ রাতে এই জায়গায় চলে আই জলদি”

ইন্সিয়া ম্যাসেজটুকু পড়ে ধপ করে বসে যায়,ইন্সিয়ার পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গিয়েছে। ইন্সিয়ার চোখ বেয়ে পানি অঝোরে ঝড়ছে, ইন্সিয়া কান্নারত অবস্তাই বলে যাচ্ছে আপনমনে “কেন করলেন মিস্টার আরাশ এসব? কেন? কেন আমার এতবড় ক্ষতিটা করলেন। কি দরকার ছিলো ঐ বদমাসকে জেলে দেওয়ার। আজ আমার জন্য আমার বাবা-মা মৃত্যুর পথে”

চলবে