#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#২৪তম_পর্ব
আচ্ছা আপু,রাতে একটু ইন্সিয়ার দিকে নজর রাখিস,আমার ঐ জায়গাতে পৌছাতে হবে ওর পিছু পিছু। (আরাশ)
ঠিক আছে, দেখছি ব্যপারটা (অরীন)
রাত হয়ে এলো,
সবাই রাতের খাবার খেয়ে যে যার রুমে, আরাশ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে, ইন্সিয়ার ঘুম আসছে না। ইন্সিয়া রুমে পায়চারি করছে সকলে ঘুমিয়ে গেলে সে বেরোবে এইজন্য, অরীন বুঝতে পেরে চুপচাপ ঘুমের নাটক করছে,
ইন্সিয়া বারান্দায় দাড়িয়ে আছে মেইন গেইট খোলা নাকি বন্ধ দেখার জন্য, যাতে ইন্সিয়ার বেরোতে সমস্যা না হয়।
রাত গভীর হচ্ছে সবাই ঘুমে বেঘোর, ইন্সিয়া হাতে ফোন নিয়ে আস্তে আস্তে নিচে চলে যায়, আরাশ ঠাঁই বারান্দায় দাড়িয়ে আছে, ইন্সিয়া টের’ই পায় নি।
ইন্সিয়া মুখে উড়না দিয়ে বেরিয়ে পড়ে গেইট থেকে,অমনি ইন্সিয়ার ফোনে ম্যাসেজ আসে,
“জলদি আয়,কোনো চালাকি করবি না।তুই একা আসবি,খবরদার”
ইন্সিয়া ম্যাসেজটুকু দেখে ফোন উড়না দিয়ে পেচিয়ে হাটতে শুরু করে,
একটু পর পর ইন্সিয়া পেছন ফিরে এদিক ওদিক করে তাকাচ্ছে,ইন্সিয়ার মনে হচ্ছে ইন্সিয়াকে কেউ যেনো অনুসরণ করছে। কিন্তু ইন্সিয়া আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।
ওদিকে আরাশ ইন্সিয়াকে ফলো করছে,আরাশ গাড়ি নিয়ে বের হয়নি যাতে ইন্সিয়ার সন্দেহ না হয়। ইন্সিয়া হেটে হেটে রাস্তা পার হচ্ছে, আরাশ ইন্সিয়ার পিছু পিছু রাস্তা পার হয়।
আশেপাশে কোনো মানুষ নেই,পুরো রাস্তা থমথমে জনমানবহীন অন্ধকার। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে সব।
ইন্সিয়া ঠিকানা অনুযায়ী যেতে লাগলো, বিভিন্ন গলি পার হয়ে ইন্সিয়া ভেতরে যেতে লাগলো, আরাশ মনে মনে ভাবছে
“ইন্সিয়া এত রাস্তা কিভাবে চেনে? আগেও কি ইন্সিয়া এখানে এসেছে? পুলিশকে জানাবো সবটা? না থাক পুলিশকে এখন জানানো ঠিক হবে না,আগে দেখি পুরো ব্যাপারটা। প্রথমে ইন্সিয়ার বাবা-মাকে উদ্দ্বার করি,এরপর ইনফর্ম করবো পুলিশকে”
ইন্সিয়া আশপাশ উঁকি দিয়ে দেখছে,ইন্সিয়ার বড্ড ভয় হচ্ছে, ইন্সিয়া এই প্রথম এসেছে এই জায়গায়। তাদের দেওয়া স্ট্রাকচার অনুযায়ী ইন্সিয়া পৌছে যায় গন্তব্যে।
আরাশ একপাশে আড়াল করে নেয় নিজেকে, ইন্সিয়া বড় একটা দোকানের পেছনে গিয়ে দাড়ায়, দুটো লোক এসে ইন্সিয়াকে নিয়ে যায়। ইন্সিয়া ভেতরে গিয়ে দেখে পুরোনো বাড়ি। ইন্সিয়া আশেপাশে থাকিয়ে তার বাবা-মাকে খুঁজছে। কোথাও দেখতে পায় না। ইন্সিয়া লোকদের বলে “আমার আম্মু আব্বু কোথায়? কোথায় রেখেছেন তাদের?”।
একটা লোক মুখে মাস্ক পড়া সামনে এসে দাড়ায় আর বলে
“হেহেহে কি ভেবেছিস এত সহজে মুক্তি দেবো তোকে? আগে আমাদের বসের কেইস তুলে নে। বসের আইটেম তুই। বসকে খুশি করবি তারপর তোর বাবা-মাকে পাবি”
ইন্সিয়া দু পা পিছিয়ে যায় আর বলে “আমার আম্মু আব্বু কই”
তোর মা – বাবাকে পাটিয়ে দিয়েছি অন্য জায়গায়, আগে তোর সাথে বসের চুক্তি মিটমাট হোক। এরপর তোর মা বাবাকে চোখে দেখবি। (অভিক রয়ের ভাড়া করা গুন্ডা)
মানে? (ইন্সিয়া)
মানে একটাই, তোকে এখানে আনা আমাদের উদ্দেশ্য, তুই তো সহজে ধরা দিবি না তা জানি।এই কারণে তোর বাবা-মাকে আটকে রেখে তোকে ধরতে চেয়েছি। এখন তুই একমাত্র সূত্র আমাদের বসকে জেইল থেকে মুক্তি দেওয়ার।কেইস উঠিয়ে নে তোর ভালোবাসা,আরাশ না বেরাশ ওকে বলে (ভাড়া করা গুন্ডা)
আমার আম্মু আব্বুকে ফিরিয়ে দিন,তাদের কোনো ক্ষতি করবেন না। তাদের ফিরিয়ে দিন।আমি।সব কথা শুনবো (ইন্সিয়া)
এই তো মামনি লাইনে এসেছো এবার। কিন্তু এত সহজে তোর মা-বাবাকে ছাড়ছি না। আগে তুই বসকে ছাড়িয়ে আনবি। বসকে সাথে আমাদেরকে খুশি করবি। এরপর তোর মা-বাবাকে নিয়ে এ শহর ছেড়ে দুরে চলে যাবি (ভাড়া করা গুন্ডা)
ইন্সিয়া বুঝতে পেরেছে তাদের ফন্দি, ইন্সিয়া ভাবছে “তার মানে আমি এখানে আসতে আসতে তারা আমার আব্বু আম্মুকে অন্যদিকে পাচার করে দিয়েছে। আমাকে আটকে রেখে তারা প্রতিশোধ নিতে চায়। এতসহজে আমার আম্মু, আব্বু এবং আমাকে অভিক রয় ছাড়বে না”
কি হলো মামনি কাছে এসো,আমাদেরকে খুশি করো। দিব্যি মাইরি বলছি বসকে কিছু বলবো না (ভাড়া করা গুন্ডা)
ইন্সিয়ার দিকে আস্তে আস্তে এগোতে লাগলো তারা। ইন্সিয়া ভয়ে পেছনে যেতে লাগলো। আরাশ সবকথা রেকর্ড করে চুপচাপ হাসছে আর বলছে
“যদি তুমি চলো ডালে ডালে, তাহলে আমি চলি পাতায় পাতায়। এই কারণে পুলিশ আনিনি,আমি জানতাম ইন্সিয়ার আব্বু আম্মুকে তারা এত সহজে ছাড়বে না। এখন যদি পুলিশ আনতাম তারা এলার্ট হয়ে যেতো ইন্সিয়ার আব্বু আম্মুর ক্ষতি করতো। এবার ধীরে সুস্থে গুটি চালতে হবে আমার।”
একটা গুন্ডা এসে ইন্সিয়ার উড়নায় হাত দিয়ে টান দেয়, অমনি আরাশ এসে ইন্সিয়াকে টান দিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়, ইন্সিয়ার গায়ে উড়না নেয়, আরাশ ইন্সিয়াকে জড়িয়ে নিয়েছে নিজের সাথে। ইন্সিয়ার চোখবন্ধ ভয়ে। ইন্সিয়া ভেবেই নিয়েছে সে আজ বেঁচে ফিরতে পারবে না সসম্মানে।
আবে সালা তুই কে বে? কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসলি? এটা আমাদের মাল। আমরা খাবো। তুই কে? সরে যা (গুন্ডা)
আমি তোর বাপ, এই বলে আরাশ গুন্ডার বুকে সজোরে লাথি মারে, আরাশের গলার আওয়াজ পেয়ে ইন্সিয়ার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, ইন্সিয়া আস্তে আস্তে চোখ মেলে দেখে, ইন্সিয়া আরাশের বুকে লেপ্টে আছে।
আরাশ নিজের বাহুতে জড়িয়ে ধরে আড়াল করে রেখেছে ইন্সিয়াকে। আরাশ এক হাতে ইন্সিয়াকে জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে একটা গুন্ডার গলা চেপে ধরে আর বলে
“কোন সাহসে স্পর্শ করতে গেলি। তোর হাত আমি গুড়িয়ে দেবো।”
ইন্সিয়া ভয়ার্ত চোখে আরাশে দিকে তাকিয়ে আছে, গুন্ডার হাতে থাকা ছুরি কেড়ে নিয়ে আরাশ ঐ গুন্ডার আঙুলে ছুড়ে দেয়, ইন্সিয়া দেখে ভয়ে কেঁপে উঠে। ইন্সিয়া সেন্সলেস হয়ে পড়ে রক্ত দেখে।
আরাশ ইন্সিয়ার গায়ে উড়না জড়িয়ে দিয়ে একপাশে বসিয়ে দিলো, ইন্সিয়ার সেন্স নেয়,ইন্সিয়া একপাশে ঢলে পড়ে।
আরাশ উঠে এক এক করে সবাইকে ইচ্ছামত মাইর দেয়, আরাশ রাগে থরথর করে কাঁপছে ইন্সিয়ার গায়ে গুন্ডাগুলো হাত দেওয়াতে। গুন্ডা গুলো ভয়ে আস্তানা ছেড়ে পালায়। আরাশ ইন্সিয়াকে কোলে নিয়ে আশেপাশে থাকা বোতল থেকে পানি ছিটিয়ে দেয়, ইন্সিয়ার সেন্স ফিরতেই ইন্সিয়া ঝাপসা চোখে দেখতে পায়, আরাশ ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ইন্সিয়া ভয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দুরে সরে যায়। আরাশ বুঝতে পেরেছে ইন্সিয়া ভয় পেয়েছে, আরাশ ধীর কন্ঠে ইন্সিয়াকে বলে “এভ্রিথিং ওকে,কিছুই হয়নি। সব দুঃস্বপ্ন ভুলে যান।”
ইন্সিয়া কিছু না বলে থরথর করে কাঁপছে,ইন্সিয়ার ভয়ে জ্বর চলে এসেছে ইতিমধ্যে। আরাশ ইন্সিয়ার শক্ত করে হাত ধরে, ইন্সিয়ার শক্তি নেই আরাশের হাত ছাড়ানো। ইন্সিয়া চুপচাপ হয়ে গেছে একেবারে। আরাশ ইন্সিয়াকে বলে
“চলুন, আমায় না বলে এক পা ও ঘর থেকে বেরোবেন না। আর যদি বের হোন খুন করবো আপনাকে।”
ইন্সিয়া ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আরাশের দিকে তাকিয়ে আছে,ইন্সিয়া এক প্রকার বোবা হয়ে গিয়েছে। ভয়ে কথা বেরোচ্ছেনা ইন্সিয়ার। বারবার ইন্সিয়ার চোখে ভাসছে আরাশের দৃশ্যগুলো।
আরাশ ইন্সিয়ার হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে, ইন্সিয়া হাটতে পারছেনা ঢুলছে। আরাশ ইন্সিয়াকে কোলে নিয়ে নেয়,ইন্সিয়া ঢুলুঢুলু চোখে আরাশকে দেখছে। আরাশের চোখ লাল রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। আরাশ ইন্সিয়াকে কোলে নিয়ে হাটছে। এরপর আর ইন্সিয়ার খবর নেই,ইন্সিয়া আবারো সেন্স হারায়।
ইন্সিয়ার সেন্স ফিরে আসার পর ইন্সিয়া নিজেকে আরাশের পাশে আবিষ্কার করে, চারদিকে অন্ধকার আরাশ ইন্সিয়ার পাশে বসে ল্যাপটপ টিপছে। ইন্সিয়া শোয়া থেকে উঠে বসে, আরাশ ইন্সিয়াকে দেখে বলে
“শরীরটা এখন কেমন লাগছে?”
ইন্সিয়া তোতলাতে তোতলাতে বলে “ভা ভা ভালো”।
হুম গুড,শুয়ে পড়ুন রাত মাত্র তিনটা এখন সবাই ঘুমাচ্ছে, ভোর ফুটলে রুমে চলে যাবেন (আরাশ)
ইন্সিয়া আরাশের অবাধ্য হয়ে উঠতে গেলেই,আরাশ ইন্সিয়াকে টান দিয়ে বসিয়ে দেয় আর বলে
“একটা কথা একবার বলতে পছন্দ করি, বারবার না”
ইন্সিয়া ভয়ে বিড়বিড় করে আরাশের পাশে শুয়ে পড়ে,আরাশ ইন্সিয়াকে শুইয়ে দিয়ে সে সোফায় গিয়ে ল্যাপটপে কাজ সারে, ভোর হওয়ার আগেই আরাশ ইন্সিয়াকে ডাকতে লাগলো “ইন্সু উঠুন ভোর ফুটে উঠছে,রুমে যান। নয়তো আমি দিয়ে আসবো? ”
ইন্সিয়া ধরফরিয়ে উঠে যায় আর বলে “না আমি পারবো”
ইন্সিয়া ঢুলতে ঢুলতে রুমে চলে যায়,অরীন রুমে বেঘোরে ঘুম। ইন্সিয়া অরীনের পাশে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল বেলা রীধী এসে ইন্সিয়ার সামনে দাড়ায় আর বলে “কাল রাতে আরাশ স্যারের রুমে তুমি কি করছিলে হে?”
ইন্সিয়া কিছু বলার আগেই অরীন বলে উঠে “তার কৈফিয়ত কি ইন্সিয়া তোমাকে দেবে রীধী? এত কৈফিয়ত নেওয়ার হলে আরাশের কাছ থেকে নাও”
অরীনকে থামিয়ে দিয়ে ইন্সিয়া রেগেমেগে রীধীকে বলে “আমার ইচ্ছা আমি মিস্টার আরাশে রুমে থাকবো কি থাকবো না,তার কৈফিয়ত আপনাকে দিতে ইচ্ছুক না আমি। গেট আউট”
অরীন ইন্সিয়ার কথায় চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে, রীধী ইন্সিয়ার কথার রেগে হনহন করে আরাশের রুমে গেলো। আরাশকে দেখে রীধী কিছু বলতে পারলো না। রীধী রাগে বিড়বিড় করছে কিন্তু আরাশকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
অন্যদিকে ইন্সিয়ার এমন কথায় অরীন থ বনে গেছে, অরীন ভাবছে “বাব্বাহ ইন্সিয়ার কথাগুলো তীরের মত বিধেঁছে রীধীর বুকে। একদম বেশ হয়েছে”
চলবে..
(ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। আসসালামু আলাইকুম সবাই ভালো থাকবেন)