#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#২৫তম_পর্ব
অন্যদিকে ইন্সিয়ার এমন কথায় অরীন থ বনে গেছে, অরীন ভাবছে “বাব্বাহ ইন্সিয়ার কথাগুলো তীরের মত বিধেঁছে রীধীর বুকে। একদম বেশ হয়েছে”
ইন্সিয়া গোজগাজ করছে আজ উষ্মী বাপের বাড়ি যাবে দুপুরে, উষ্মী সকাল থেকে সব কাজ সেরে তৈরি হয়ে আছে। উষ্মী আজ অনেক খুশি সে আজ তার মা-বাবাকে দেখবে বহুদিন পর।
আরাশ নাস্তা সেড়ে বেরিয়েছে রীধীকে নিয়ে, ইন্সিয়া বিছানায় শুয়ে আছে, ইহানের আম্মু এসে ইন্সিয়াকে দেখে বলে “কি হয়েছে মা? এসেছো যাবত তুমি খুব দুর্বল মনমরা হয়ে আছো। তুমি থেকে যাও। উষ্মী বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসুক।তোমরা চলে গেলে ঘরটা আবার নিরব হয়ে পড়বে”
ইন্সিয়া ইহানের মায়ের কথায় বলে উঠে
“তা হয় না আন্টি, আম্মু আব্বু চিন্তা করছে।তার উপর আম্মু অসুস্থ একা। আপনিও আসুন না আমাদের সাথে ভালো লাগবে”
ইহানের আম্মুকে মিথ্যা কথা বলে পাশ কাটিয়ে যায় ইন্সিয়া। এদিকে আরাশ অফিসের সব কাজ সেড়ে বাসায় এসেছে।
দুপুর বেলা…
সবাই খাওয়াদাওয়া সেড়ে তৈরি হচ্ছে,উষ্মী তৈরি হয়ে আছে।ইন্সিয়া তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে অরীন এসে বলে উষ্মীকে ” ইন্সু তোমার সাথে বাড়ি যাবে না,সে আমার সাথে বাড়ি যাবে সেখানেই থাকবে”
ইন্সিয়া অরীনের কথায় তাকিয়ে আছে অরীনের দিকে,উষ্মী অরীনকে বলে
“কেন আপু? ইন্সু আমার সাথে বাড়ি যাবে,ওর বাবা-মা অপেক্ষা করছে। আমি খালামনিকে কি জবাব দেবো?”
অরীন উষ্মীকে একপাশে নিয়ে সবটা বলে, উষ্মী অরীনের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে আছে,উষ্মীর যেনো আর হাত পা চলছেনা।অরীন উষ্মীকে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করায়। ইন্সিয়া নির্বাক শুন্য চুপচাপ দেখে যাচ্ছে ইন্সিয়ার কিছু বলার নেই। ইন্সিয়া কি আর বলবে,কিছু বলতে গেলে আরাশ ইন্সিয়াকে আস্ত রাখবে না।তাই ইন্সিয়া ভয়ে চুপ করে আছে।
গেইটে দুটো গাড়ি এসেছে,আরাশ গাড়িতে অপেক্ষা করছে। উষ্মী ইন্সিয়া অরীন সবাইকে বিদায় দিয়ে নিচে চলে আসে, ইহান উষ্মী একটা গাড়িতে উঠে রওনা দেয় উষ্মীর বাড়ির দিকে,
অন্যদিকে আরাশ ড্রাইভিং সিটে বসে শিষ বাজিয়ে সুর তুলছে। অরীন বাচ্ছাদুটোকে নিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসে, ইন্সিয়া আরাশের পাশের সিটে বসে পড়ে। আরাশ আড়চোখে ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে। গাড়ি এক টান দিতেই ইন্সিয়া গাড়ির সামনে ঝুকে মাথায় ব্যথা পায়। আরাশ ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে “সিটবেল্ট পড়ুন।”
ইন্সিয়া কোনোভাবে সিটবেল্ট লাগাতে পারছে না, আরাশ ইন্সিয়াকে সিটবেল্ট পড়িয়ে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। গাড়ি চলছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ইন্সিয়া মলীন মুখে হেলান দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে। আরাশ একটু পর পর ইন্সিয়ার দিকে তাকাচ্ছে আর বলছে মনে মনে
” আমি আপনার মা-বাবাকে সুস্থভাবেই ফিরিয়ে দেবো। তাদের উপর কোনো আঁচ আসতে দেবো না। আপনার মুখের হাসি আবার ফিরিয়ে দেবো। আই প্রমিস”
গাড়ি এসে পৌছে গেলো গেইটের সামনে। অরীন বাচ্ছাকে মুনিয়া খালার কোলে দিয়ে ইন্সিয়াকে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। অরীন ইন্সিয়াকে রুমে বসিয়ে বলে
“আজ থেকে তুমি আমার সাথে থাকবে, যদি আলাদা রুমের প্রয়োজন হয় তবে আলাদা রুমেও থাকতে পারবে কোনো সমস্যা নেই। আমি তোমার বোনের মতোই। আংকেল আন্টি যতদিন ফিরবে না ততদিন আমাদের সাথে থাকবে”
ইন্সিয়া চুপচাপ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়। অরীন বাচ্ছার কথা ভেবে ইন্সিয়াকে আলাদা রুম পরিষ্কার করে দেয়। ইন্সিয়ার কাছে সেই রুমটা বেশ কম্ফোর্ট লাগছে। একপাশে রুম, রুমের ভেতর বড় বেলকনি আছে। ইন্সিয়া রুমে এসে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে, বেলকনি থেকে আরাশের রুমের বেলকনি ও জানালা দেখা যাচ্ছে।
রাজু এসে ইন্সিয়াকে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে আর বলছে সব।
ইন্সিয়া রুমে এসে ফ্রেস হয়ে বসে, রুমে বেশ কয়েকটা পুরোনো বই সাজানো। ইন্সিয়া মনোযোগ দিয়ে বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখছে। সন্ধ্যায় মুনিয়া খালার মেয়ে মিশু এসে নাস্তা দিয়ে যায়৷ ইন্সিয়া নাস্তা সেরে আবার বই পড়াতে মনোযোগ দেয়।
অরীন বাচ্ছাদেরকে রুমে ঘুম পাড়িয়ে ইন্সিয়ার রুমে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আস্তে আস্তে ইন্সিয়া স্বাভাবিক হচ্ছে সকলের সাথে। মুনিয়ার খালার মেয়ে মিশু,রাজু অরীন ও সবার সাথে ইন্সিয়ার বেশ ভাব জমে।
ইন্সিয়ার খারাপ লাগছে উষ্মীর জন্য।।এতদিন একসাথে থাকা, বান্ধবীর সাথে পথচলা।সবটাই মনে পড়ছে ইন্সিয়ার। ইন্সিয়া গম্ভীর হয়ে বসে আছে। উষ্মী ইন্সিয়াকে ফোন দেয়, ফোনে ইন্সিয়ার সাথে উষ্মী আড্ডা দেয় আর বুঝাতে থাকে।
এদিকে আরাশের কোনো খবর নেয়,আরাশ সেই দুপুরে এসে কাজ সেড়ে রুমে বেঘোরে ঘুম।
ইন্সিয়া ফোনে কথা সেড়ে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে এসেছে। রুমের ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়েছে হঠাৎ, ইন্সিয়া ভয়ে বেলকনিতে একপাশে দাড়িয়ে আছে। চাদের আলো রুমে এসে পড়েছে। আরাশ ফ্রেস হয়ে ইন্সিয়ার রুমে গিয়ে উঁকি দেয়। রুমে ইন্সিয়ার সাড়াশব্দ না পেয়ে বেলকনিতে আসে। ইন্সিয়া বেলকনিতে গাছের পাশে শক্ত হয়ে ভয়ে দাড়িয়ে আছে। আরাশ ইন্সিয়ার হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে। ইন্সিয়া কে বলে চিৎকার করতে যাবে অমনি আরাশ ইন্সিয়ার মুখ চেপে ধরে। ইন্সিয়ার হাত দুটো পেছনে চেপে ধরে আরাশ। ইন্সিয়া নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়ে শান্ত হয়ে যায়। ইন্সিয়া বুঝতে পেরেছে এটা মিস্টার আরাশের কাজ। ইন্সিয়া তাই কিছু না করে শান্ত হয়ে দাড়িয়ে পড়ে। আরাশ আস্তে করে ইন্সিয়ার হাতের বাঁধন আল্গা করে দিয়ে ইন্সিয়াকে ফিসফিসিয়ে বলে
“আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক? কোনটা বলুন তো? আমায় দেখলে দৌড়ে পালাতে যান কেন? স্থীর হয়ে দাড়ানো যায় না?”
ইন্সিয়া অস্ফুট স্বরে আরাশকে বলে ” জানি না। আপনার কাছে আমি থাকতে চাই না। আপনাকে আমার আশেপাশে দেখতে চাই না। তাই আমার পালানোর তাড়া”
আরাশ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ইন্সিয়াকে বলে “যতদিন না আপনার আম্মু আব্বু ফিরছে,ততদিন আমাকে সহ্য করতে হবে ইটস ফাইনাল।”
ইন্সিয়া আরাশ থেকে খানিকটা দুরে গিয়ে গলা ঝাড়ি দিয়ে বলে “এটা তো পোড়া কপাল। তাই আমার সাথেই সব ঘটছে। কেউ আমার সুযোগ নিচ্ছে৷ কেউ আমাকে কাঁদাচ্ছে। আমিও চুপ করে সব সহ্য করছি। অভিযোগ নেয়।”
আরাশ ইন্সিয়ার কথার মানে খুঁজতে ব্যস্ত। ইন্সিয়া আরাশের পাশ কাটিয়ে সরে যায়। ইন্সিয়া অস্ফুট স্বরে বলে উঠে “যখন যার ইচ্ছা হবে আমায় কাছে টেনে নিবে,যখন যার ইচ্ছা হবে,আমায় ব্যবহার করে ছেড়ে দিবে।”
আরাশ রাগে দাঁত কিড়মিড় করছে,আরাশ ইন্সিয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে
“মানে কি এসবের? কখন আপনাকে আমি ব্যবহার করেছি? কবে? আপনাকে ব্যবহার করার হলে আপনার সেফটি নিয়ে এত ভাবতাম না। আপনাকে ব্যবহার করার হলে আপনার জন্য ঘুম হারাম করতাম না।আপনাকে ব্যবহার করার হলে আপনাকে আমি”
কথাটুকু বলে থেমে যায় আরাশ। ইন্সিয়া আরাশের চোখের দিকে তাকিয়ে আরাশের হাতটুকু আলতোভাবে স্পর্শ করে, দু’জনেই মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে। একে অপরের দিকে তাকিয়ে চোখের ভাষা খুঁজছে। হৃদস্পন্দন বাড়ছে দু’জনের।
আরাশ “কিছু না” বলে সরে যেতেই ইন্সিয়া আরাশের হাত ধরে ফেলে, ইন্সিয়া আরাশকে তার দিকে ফিরিয়ে বলে
“বলুন আমাকে কি? কেন চুপ করে গেলেন? আর এক্সকিউজ পেলেন না মিস্টার আরাশ? আপনি আমায় দয়া করেছেন এটা বলতে এত কিসের সংকোচ? আমি তো জানি আপনি খুব মহৎ।সবাইকে আশ্রয় দেন।তাই আমাকেও দিচ্ছেন। এটা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন কেন? আমি শুনে কষ্ট পাবো বলে? ভয় পাবেন না এই সামান্য কথায় আমার কষ্ট হবে না কারণ এর চেয়ে বড় কষ্ট আপনি আমায় দিয়ে দিয়েছেন। যার উওর আপনি কখনো পাবেন না”
আরাশ রাগ দমিয়ে কোনোভাবে ধীর গলায় ইন্সিয়াকে বলে “আপনি যা ভাবছেন তা নয় ইন্সিয়া। আপনি ভুল ভাবছেন। আপনি ভায়োলেন্স হয়ে পড়ছেন। কোনো বিষয় হয়তো আপনাকে খুব ভাবাচ্ছে। আপনি আমার সাথে শেয়ার করুন আমি সব ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। নিজের মধ্যে এসব পুষে রেখে অযথা উল্টোপাল্টা ভাববেন না প্লিজ”
আমার কিছু ভাবার নেই মিস্টার আরাশ, দয়া করেছেন আমি কৃতজ্ঞ।চির কৃতজ্ঞ থাকবো। ধন্যবাদ আপনি আসতে পারেন (ইন্সিয়া)
আমি আমার উওর না নিয়ে এক পা ও পেছনে যাবো না। আগে বলুন আমি কোন কষ্ট টা আপনাকে দিয়েছি যার উওর আপনি আমায় দিতে চান না। একটা হিন্টস দিন। (আরাশ)
কিছু না। চলে যান (ইন্সিয়া)
কিছু জিজ্ঞেস করছি ভালোই ভালোই উওর দিন। নয়তো (আরাশ)
নয়তো কি? আঘাত করবেন? এটাই তো? এগুলা ছাড়া আর কি বা আশা করা যায় মিস্টার আরাশ বলুন তো? নিন করুন (ইন্সিয়া)
আরাশ ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে ইন্সিয়াকে দেয়ালে সাথে চেপে ধরে, আরাশের নিঃশ্বাস ইন্সিয়ার উপর পড়ছে। ইন্সিয়া আরাশের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ইন্সিয়ার হৃদস্পন্দন বেড়ে চলেছে। আরাশ ইন্সিয়াকে বলছে
“আপনি যা জানতে চান তাই আমি এক নিমিষেই উওর দিতে পারি। কিন্তু তা আমি দেবো না। যতক্ষন না আপনি বলবেন আমি কিসের কষ্ট দিয়েছি”
ইন্সিয়া মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আরাশকে বলে “আপনার এসিস্ট্যান্ট রীধী কই? আজ সে থাকবে না? বিয়ের ইনভাইটেশন কবে পাবো?”
আরাশ ইন্সিয়ার মুখে এই কথা শুনে পুরোপুরি শিউর হয়ে যায় যে ইন্সিয়া তাহলে রীধীর কথায় আরাশকে বুঝাতে চাইছিলো। আরাশের সাথে রীধিকে দেখলেই ইন্সিয়া কষ্ট পায়। ইন্সিয়া এই কষ্টের কথায় বলছিলো আরাশকে।
আরাশ মুচকি হেসে ইন্সিয়াকে বলে “আমাদের বিয়ের কেনাকাটার সময় আপনি থাকবেন ইন্সিয়া তখন নিজেই রীধীর জন্য চয়েস করবেন সব। দোয়া করবেন আমাদের জন্য”
ইন্সিয়া আরাশের মুখে কথাটা শোনামাত্র আরাশকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় বাহিরে। আরাশ অন্ধকার রুমে দাড়িয়ে হাসছে আর মনে মনে বলছে
“আমার উওর আমি পেয়ে গেছি হাহাহা। যতদিন না আপনি প্রকাশ করবেন ততদিন এইসব চলবে।”
আরাশের মনটা আজ খুব খুশি,আরাশ তার উওর পেয়ে গেছে।
এদিকে ইন্সিয়া কাঁদছে আর মনে মনে বলছে “সুখী হোন মিস্টার আরাশ। খুব সুখী হোন। আমার অনেক উপকার করেছেন আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমি না হয় সেক্রিফাইজ করলাম সবটা। তবুও আপনি ভালো থাকুন। আপনাকে সুখী দেখতে চাই,তবে হ্যাঁ আমি হয়তো বেশিদিন থাকবো না এখানে।আমার আম্মু আব্বু ফিরে আসলেই আমি চলে যাবো খুব দুরে, যেখানে আমি আমার ফ্যামিলি নিয়ে কাটাতে পারবো,থাকবেনা কোনো বিষাদ বেদনা।আমি পারবো।আমি পারবোই। আমি জানি আমি আপনার মায়াতে জড়িয়ে ফেলেছি নিজেকে,এটা কিভাবে হলো, কেন হলো? আমি কিছুই জানিনা। মায়া কাটিয়ে সরে যাবো।আপনি ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকবো। দোয়া রইলো মিস্টার আরাশ, আপনাদের জন্য।”
চলবে.