রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে পর্ব-২৭

0
571

#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#২৭তম_পর্ব

আরাশের মাথায় বিভিন্ন ছক কষে রেখেছে আরাশ। সেই ছক অনুযায়ী আরাশ এগোচ্ছে, আরাশ কপালে হাত দিয়ে শুয়ে শুয়ে মনে মনে বলছে “যেদিন আপনি আমার নেওয়া পরিক্ষায় সাক্সেস হবেন। সেদিন আমি নিজেই আপনাকে আপন করে নেবো।”

আরাশ ভাবতে ভাবতে কবে যে ঘুমিয়ে পড়লো তার কোনো খেয়াল নেয়, খুব ভোর বেলায় আরাশের ফোনে কল আসে,আরাশ ঘুম চোখে মোবাইল হাতড়ে কানে দিলো মোবাইল। অপাশ থেকে কে যেনো উদ্ধীগ্ন কন্ঠে বলছে আরাশকে

“স্যার খোঁজ পেয়েছি জলদি আসুন, আটকাতে হবে। আমি ম্যাসেজে ঠিকানা পাঠিয়ে দিচ্ছি”

আরাশ চোখ মেলে ধরফরিয়ে উঠে পড়ে কথাটা শোনামাত্র। আরাশ ফোন রেখে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়ে। ভোর ৬টা। আরাশের চোখে ঘুম ঘুম ভাব। আরাশ কোনোভাবে আলসে কাটিয়ে ঠিকানা অনুযায়ী রওনা দিলো।

ঘরে সবাই এখনো বেঘোরে ঘুম।
আরাশ ঠিকানা অনুযায়ী সেই জায়গায় পৌছে গেলো।
জঙ্গলের পেছনের দিকটা খোলা রাস্তা আরাশ সেখানে পৌঁছে গেলো।

চারপাঁচ জন গার্ড আরাশকে ঘিরে ধরে আর বলে “স্যার কাল রাতেই খবর পেয়েছি তারা এখানে আছে। বন্দি করে রেখেছে। কাল ঝড় বৃষ্টির কারণে এখানে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় নি তাই খবর দিতে পারিনি। আকাশ পরিষ্কার হতেই মেইন রাস্তায় এসে আপনাকে ফোন দিয়েছি। চলুন স্যার সময় হাতে নেয় উদ্ধার করতে হবে”
আরাশ গার্ডদের নিয়ে গলির ভেতর ঢুকে পড়লো। আরাশ গিয়ে দেখতে পেলো একটা লোককে মুখে কাঁপড় দিয়ে আটকে মেঝেতে শুইয়ে রেখেছে, লোকটির ঠোঁট বেয়ে রক্ত ঝড়াতে জায়গাটি শুকিয়ে গেছে।

অন্যদিকে একটি মহিলাকে দড়ি দিয়ে চেয়ারের সাথে বেধে রেখেছে, ঝিমিয়ে পড়ছে মহিলাটি। ক্লান্ত শরীর আর টানছে লড়াই করার মহিলাটির। আরাশ এবার শিউর হয়ে যায় যে, এরাই ইন্সিয়ার মা-বাবা৷ আরাশ চুপিসারে, লোকটির হাতের বাধন ও মুখের বাধন খুলে দেয়,লোকটি আরাশকে দেখে চিৎকার করে কিছু বলার আগেই আরাশ আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বলে “আমি আপনার ক্ষতি করতে আসি নি আংকেল, ভরসা করুন। আমি আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছি”

আরাশের মুখে কথাটি শুনে লোকটি শান্ত হয়ে যায়। আরাশ চারপাশে উঁকি দিয়ে দেখে গন্ডাগুলো নেই।
আরাশের গার্ড এসে বলে
“স্যার ওরা দল বেধে নাস্তা খেতে বেরিয়েছে। ওরা ভেবেছে এই জায়গার খোঁজ আমরা পাবো না। তাই ওরা নিশ্চিন্তে এদের রেখে খেতে গিয়েছে। স্যার ওরা আসার আগে আমাদের এদের নিয়ে পালাতে হবে”

আরাশ গার্ডকে ইশারা দিয়ে গাড়ি বের করে স্টার্ট করতে বলে, গার্ডরা আরাশের কথা অনুযায়ী গাড়ি মেইন রাস্তায় এনে স্টার্ট করে। ততক্ষনে আরাশ তাদের উদ্ধার করে নিজের সাথে নিয়ে এসেছে৷ আরাশকে ইন্সিয়ার মা-বাবাকে দুইপাশে হাত ধরে গাড়ির সামনে নিয়ে আসে,ইন্সিয়ার মা আরাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে “কে বাবা তুমি? আজ তুমি না থাকলে আমরা বেঁচে ফিরতাম না।”

আরাশ ইন্সিয়ার আম্মু আব্বুকে বলে “আংকেল আন্টি গাড়িতে বসুন। সময় হাতে নেয়। এই এরিয়া থেকে আমাদের বেরিয়ে যেতে হবে”

আরাশের কথামতো তারা গাড়িতে বসে পড়ে, আরাশ গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট করে চালাতে শুরু করে, আরাশ ফোন বের করে গার্ডদের বলছে, “পুলিশদের ইনফর্ম করো জলদি। চারদিকে ঘিরে ফেলো, কেউ যাতে পালাতে না পারে।”

আরাশ ফোন রেখে বাড়ির দিকে রওনা দেয়, আরাশের মন আজ খুব খুশি “আরাশ ইন্সিয়ার মা-বাবাকে ইন্সিয়ার কাছে ফিরিয়ে দেবে তা ভেবে, পরক্ষণে আরাশের মনে অজানা ভয় ঘিরে ধরে,”

আরাশ মনে মনে বলছে “ইন্সিয়া কি তবে আমায় ছেড়ে সত্যি সত্যি চলে যাবে? আমি কি ইন্সিয়াকে হারিয়ে ফেলবো একেবারে? না না তা হয় না। আমি যে করেই হোক ইন্সিয়াকে আমার করবো।”

ইন্সিয়ার বাবা-মা আরাশের আচার ব্যবহারে মুগ্ধ। ইন্সিয়ার মা ভাবছে
“এ কেমন আগুন্তক, কোথা থেকে এসে আমাদের বাঁচিয়ে দিলো। কে এই ছেলে। আমি তো চিনতে পারছিনা। আল্লাহ একে কেন পাঠিয়েছে আমাদের বাঁচানোর জন্য। কিসের লাভ আমাদের বাঁচিয়ে এই ছেলের? ”

আরাশ বাড়ি পৌঁছে যায় তাদের নিয়ে, বাড়ির সকলে বেঘোরে ঘুম। আরাশ ইন্সিয়ার মা-বাবাকে নিয়ে রুমে চলে যায়, আরাশ গেস্ট রুমের দরজা খুলে দিয়ে পরিষ্কার করে দেয় নিজ হাতে, আরাশ তাদের বলছে “আংকেল আন্টি ফ্রেস হয়ে নিন। আমি আসছি”

আরাশ এই বলে চলে যায়। ইন্সিয়ার বাবা-মা পুরো রুম ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করছে। দেখতে বেশ সুন্দর রুম। ইন্সিয়ার বাবা-মা ফ্রেস হয়ে রুমে বসতেই আরাশ হাতে করে দুই জোড়া কাঁপড় এনে দেয় তাদের, ইন্সিয়ার মা-বাবা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে ইন্সিয়ার মায়ের। আরাশ ইন্সিয়ার মায়ের হাতে শাড়ি দিয়ে বলে
“এটা আমার মায়ের শাড়ি, এই শাড়িতে আমার মাকে খুঁজে পায়, মায়ের আঁচলের গন্ধ এই শাড়িতে বিদ্যমান, আপনি এটা পড়বেন প্লিজ৷ খুব আশা নিয়ে এনেছি আন্টি। আপনি তো আমার মায়ের’ই মতন। নিন এটা পড়বেন”

ইন্সিয়ার মা আরাশের গাল ছুঁইয়ে চুমু দেয় নিজের হাতে, আরাশ মৃদু হাসি দেয়, ইন্সিয়ার বাবা আরাশকে পর্যবেক্ষণ করছে৷ আরাশের কথাগুলো ইন্সিয়ার বাবা ভাবছে, আরাশ লুঙ্গি ও একটা শার্ট এনে দিয়ে ইন্সিয়ার বাবাকে দেয়, ” বাবা এটা পড়বেন, সরি আংকেল।”

সমস্যা নেই বাবা, আমাকে বাবা বলতেই পারো (ইন্সিয়ার আব্বু)

আরাশ মুচকি হেসে কাঁপড় গুলো ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় খাবার আনতে। একটু পর খাবার এনে দেয়। ইন্সিয়ার বাবা – মা খেতে বসে, আরাশ একপাশে দাড়িয়ে তাদের দেখছে, ইন্সিয়ার মা ইশারা দিয়ে আরাশকে পাশে বসতে বলে। আরাশ যেনো এই মুহুর্তটার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আরাশ এসে ইন্সিয়ার মায়ের পাশে বসে এক হাটু গেড়ে,ইন্সিয়ার মা নিজ হাতে আরাশকে তুলে খাইয়ে দেয়।

আরাশের চোখ বেয়ে ঝড়ঝড় করে পানি ঝড়ছে, আরাশের মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে আজ। ইন্সিয়ার মা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখমুছে আরাশকে বলে “কাঁদছো কেন বাবা কি হয়েছে?তোমার মা-বাবা কই?”

আরাশ অস্ফুট স্বরে আওয়াজ গিলে বলে “নেই, মারা গিয়েছে”

ইন্সিয়ার বাবা আরাশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে “বোকা ছেলে এভাবে কাঁদলে তারা কষ্ট পাবে। কাঁদে না”

খাওয়াদাওয়া সেরে ইন্সিয়ার বাবা-মা রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে।

সবাই ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে। কেউ’ই জানে না ইন্সিয়ার মা-বাবা এসেছে। আরাশ অরীনের রুমে গিয়ে অরীনকে সব বলে দেয়, অরীন খুশিতে আরাশকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে
“বাহ
ভাই আমার কত দায়িত্ববান হয়ে গেলো রে, বেশ করেছিস নিয়ে এসেছিস, আমি ও যাবো দেখা করতে”

না আপু,এখন না, ভুলেও ইন্সিয়াকে বলিস না। ওর জন্য এটা সারপ্রাইজ থাকবে (আরাশ)

অরীন আরাশের কথামত মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সম্মতি দেয়। আরাশ ইন্সিয়ার রুমে গিয়ে ইন্সিয়ার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়, ইন্সিয়া ঘুম চোখে আরাশকে দেখে লাফিয়ে উঠে বসে পড়ে।

আরাশ হাসছে ইন্সিয়াকে দেখে, ইন্সিয়া কিছু বুঝতে না পেরে আরাশকে বলে “হাসছেন কেন? ভুত দেখছেন নাকি?”

না এমনি। ফ্রেস হয়ে নিন। একটু কাজ আছে (আরাশ)

কি কাজ? আম্মু আব্বুর সন্ধান পেয়েছেন? বেরোবেন? (ইন্সিয়া)

সময় হলে দেখবেন। কৈফিয়ত দেওয়া পছন্দ করি না।(আরাশ)

ইন্সিয়া আরাশের কথায় রেগে হনহন করে ফ্রেস হতে চলে গেলো, অরীন রুমে বাচ্ছাদের খাবার খাওয়াচ্ছে৷ ইন্সিয়া অরীনের রুমে উঁকি দেয়, অরীন তা দেখে ইন্সিয়াকে রুমে ডাকে, ইন্সিয়া রুমে আসামাত্র অরীনকে বলতে শুরু করে “আপু আপনার ভাই আমাকে পেয়েছে টা কি। কোনো কিছু জিজ্ঞেস করলে উল্টো জবাব দেয়। নিজের ইচ্ছামতো কথা শুনায়।একটু ডাক দিন।”

অরীন ফিক করে হেসে দেয় আর বলে “ঠিকাছে আরাশকে বকে দেবো। সকাল সকাল মন খারাপ করতে হবে না পাগলী। যাও খেয়ে নাও জলদি”

ইন্সিয়া বিড় বিড় করতে করতে খাবার টেবিলে চলে গেলো,খাবার টেবিলে বসে বিড় বিড় করছে “আমাকে দুর্বল পেয়ে আমায় কথা শোনানো? দেখাচ্ছি মজা।এবার আমার একদিন কি ঐ রীধীর একদিন। ঐ মেয়ের জন্য মিস্টার আরাশের এত বাড়াবাড়ি। দেখাচ্ছি মজা”

ইন্সিয়ার বিড়বিড়ানি দেখে রাজু বলে “আপা হইছে কি? কেডা সকাল সকাল খেপাইলো আন্নেরে?”

আর বলিস না ভাই। যত কিছু আমিই হজম করে যাচ্ছি। আমার কপালে সুখ নেই রে। সাত সকালে ভাইরাসের মুখ দেখে উঠেছি। সারাদিন খারাপ যাবে।মনে হচ্ছে ভাইরাস রীধীকে এনে আমাকে বড় সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা ভাবছে। তা আর হতে দেবো না।আমিও কম না বলে দিলাম (ইন্সিয়া)

ইন্সিয়া এক নিমিষে কথাগুলো বলে খাবার মুখে দেয়, আরাশ পেছন থেকে সব শুনে থ বনে গেলো৷ আরাশ মনে মনে বলছে
“আমার অবস্তা কেরোসিন করবেন আপনি? আপনাকে রীধীকে দিয়ে রাগাবো। ওয়েট।আমার সাথে পাঙ্গা নিয়ে ভুল করলেন মিস ইন্সু ডাইনি”

ইন্সিয়া খাবার সেরে উঠে দাড়ায়, আরাশ ইন্সিয়ার হাত ধরে বলে “চলুন রীধীর সাথে আপনার বন্ধুত্ব করিয়ে দি। ক’দিন বাদে রীধী আমার বউ হবে৷ তার সাথে মিস বিহেভ আমি মানবো না। চলুন”

ইন্সিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরাশ টেনে গেস্ট রুমে নিয়ে গেলো।

গেস্ট রুমে ইন্সিয়ার বাবা,মা বসে বসে গল্প করছে, ইন্সিয়া গেস্ট রুমে ইন্সিয়ার বাবা-মাকে দেখে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। ইন্সিয়া দৌড়ে গিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরে। আরাশ দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবটা দেখছে। অরীন এসে রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে “মেয়ে একটা বলে একটাকেই নিয়ে আছেন আপনারা। আমাকে কি মেয়ে বলে মনে হয় না?”

ইন্সিয়া অরীনের হাত ধরে মা-বাবার সামনে নিয়ে গিয়ে বলে “এটা অরীন আপু, ঐ ভাইরাস লোকটার বড় বোন। আমারো বড় আপু। তোমরা যখন ছিলেনা।আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ি। আপু আমাকে সাপোর্ট করতো বুঝাতো।”

ইন্সিয়ার মা অরীন ইন্সিয়াকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে।পুরো বাড়ির লোকজন খুশিতে আত্মহারা।

আরাশ রীধীকে ফোন দিয়ে বাড়ি আসতে বলে, রীধী আরাশের কথামতো বাড়িতে চলে আসে। আরাশ রীধীকে বলে “রীধী আপনার একটা হেল্প চাই,আপনাকে আমার বউ হতে হবে”

বউ হওয়ার কথা শুনে রীধী খুশিতে গদগদ করছে আর বলছে “সত্যি স্যার?”

আরে ঐ বউ না,ফেইক বউ। হেল্প করবেন আমায়? (আরাশ)

আচ্ছা স্যার৷ আমি তো আপনাকে সত্যি সত্যিই চায় (রীধী)

আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি রীধী। তাকে হারাতে পারবো না। আপনি না পারলে আমি অন্য একজনকে হায়ার করবো সমস্যা নেই। তবে আপনি ভালো হেল্প করতে পারবেন বলেই আপনার হেল্প চেয়েছি (আরাশ)

করবো না এই কথা তো বলিনি,সত্যিকারের বউ হতে না পারি ফেইক বউ তো হবোই হবো। ঠিকাছে স্যার। আপনি আপনার মনের মানুষকে পেয়ে যাবেন।বলুন আমায় কি করতে হবে (রীধী)

চলবে….