#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#৬ষ্ঠ_ও_৭ম_পর্ব
আরাশ কিভাবে ইন্সিয়া অব্দী পৌছাবে ভাবছে শুয়ে শুয়ে, আরাশ কারো কাছে ঋনি থাকতে চায় না। এতে তাঁর ইগোতে লাগে। তাই আরাশ তার বোনের উপকার করা ব্যক্তিটিকে যেকোনো মুল্য চুকিয়ে দিয়ে হিসাব বরাবর করতে চায় সে..
আরাশ রাজুকে বিছানায় বিশ্রাম করতে বলে, শোয়া থেকে উঠে তৈরি হতে লাগলো। রাজু আরাশকে তৈরি হতে দেখে জিজ্ঞেস করছে “কই যান সাব (সাহেব)?”
আমি একটু বেরোবো রে, তুই বিশ্রাম কর। আমি চলে আসবো বিকেলের মধ্যে,আর যদি আমার আসতে দেরী হয় তাহলে তোর মিশু আপু আছে সে তোকে যা যা লাগে এনে দিবে। এখন ঘুমা চুপচাপ (আরাশ)
আরাশের কথামতো রাজু বিছানায় শুয়ে পড়ে গুটিসুটি মেরে,আরাশ রাজুর গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে, নিজের কাজ করতে চলে গেলো। রাজু আরাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে
“সাবডা কত ভালা,আল্লাহ তারে বড় করুক মেলা(অনেক)”
আরাশ তাড়াহুড়ো করে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।
ইন্সিয়াকে দেখতে এসেছে উষ্মী। উষ্মী ইন্সিয়ার পাশে বসে আছে আর বলছে সেদিনের কথা
“কাল যেই মেয়েকে তুই ব্লাড দিয়েছিলি, তার অবস্তা কেমন ছিলো রে?”
কেমন বলতে!আগের চেয়ে কিছুটা ভালোই দেখেছিলাম।কিছুই বলতে পারেনি সে। শুধু আমার হাতটা ধরে রেখেছিলো।খুব ভয় ছিলো তার চোখ মুখে (ইন্সিয়া)
ইসস পরিবার থেকে কেউ আসে নি দেখলাম। কেমন আছে কে জানে (উষ্মী)
এগুলা আমাদের বিষয় না উষ্মী।তার পরিবার হয়তো রাতে আসবে,আমরা আন্দাজে এত কথা বলছি কেন? ওসব বাদ দে।চল আজ বেরোই একা একা দমবন্ধ হয়ে আসে ঘরের মধ্যে (ইন্সিয়া)
ইন্সিয়ার কথা শুনে উষ্মী চুপসে যায় আর ভাবে “ঠিকই তো,আমরা এত ভাবি কেন? আমরা তো সাহায্য করার ছিলো করেছি।আর কি দরকার?”
ইন্সিয়া উষ্মীকে ঝাঁকিয়ে ভাবনার ঘোর ভেঙ্গে দিলো আর বলতে লাগলো “কি ভাবিস? যাবি? একটু পর করে বের হবো। এখন বাহিরে কাট ফাটা রোদ”
উষ্মী ইন্সিয়ার কথায় সম্মতি দিয়ে দু’জনই নিজেদের মধ্যে আড্ডা দিচ্ছে। ইন্সিয়ার বাবা ইন্সিয়ার রুমে উঁকি দিয়ে দেখে, তারা হাসছে দু’জনই। ইন্সিয়ার বাবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে মনে মনে
“অনেকদিন পর আমার মেয়েটা হাসছে, সেই প্রানবন্ত চঞ্চল ইন্সিয়াকে দেখছি”
বিকেল তিনটার দিকে ইন্সিয়া উষ্মী খেয়ে বেরিয়ে পড়ে, ইন্সিয়া উষ্মী আজ ক্যাফেতে কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করবে। ইন্সিয়া উষ্মী সোজা ক্যাফে চলে গেলো। দুই বান্ধবী বাকি বান্ধবীদের জন্য ক্যাফে অপেক্ষা করছে।
একটু পর ইন্সিয়া উষ্মীকে বলে “আমরা বসে বসে কি অন্যদের রোমান্স দেখবো?চল কফি অর্ডার করি। এদের এখনো আসার সময় হলো না। বিয়ের সাজ সেজে আসবে মনে হয়। মনে হচ্ছে আমরা পাত্রী দেখতে আসছি”
উষ্মী ইন্সিয়ার কথায় হেসে বলে “তুই বরাবরের মত অধৈর্য বোন। দাড়া ওদের কল দিয়ে দেখি আর আসতে কতদুর”
ফোন বের করে উষ্মী কল দেয় তার বান্ধবীদের, একটু পর কথা শেষ করে ওয়েটারকে ডাকতে লাগলো উষ্মী। ওয়েটার আসামাত্র দুটো কফি অর্ডার করে তারা। বসে বসে দুই বান্ধবী কফি খাচ্ছে আর সেল্ফি নিচ্ছে নিজেদের।
ব্লাক শার্ট পড়া মুখে মাস্ক লাগানো একটা ভদ্রলোক তাদের টেবিলের সামনের চেয়ারটাতে বসে। ইন্সিয়া উষ্মীকে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বলে
“দেখ উষ্মী মনে হচ্ছে এক্ষুনি প্ল্যান থেকে সোজা এখানে ল্যান্ড করেছে,”
উষ্মী ইন্সিয়া দুজনেই মিট মিট করে হাসছে। ভদ্রলোকটির এদিকে কোনো খেয়াল নেই, ভদ্রলোকটির হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ। শপিং ব্যাগে এক এক করে কি যেনো চ্যাক করতে লাগলো। ওয়েটার এসে ভদ্রলোককে বলছে
“কি খাবেন চা/কফি/কোল্ড ড্রিংকস?”
ভদ্রলোক কোল্ড কফি অর্ডার করে পুণরায় নিজের কাজে মন দেয়।
এদিকে উষ্মী ইন্সিয়ার ফ্রেন্ডরা চলে এসেছে জমিয়ে আড্ডা হচ্ছে। হঠাৎ উষ্মীর চোখ পড়ে যায় ভদ্রলোকটির দিকে৷ ভদ্রলোকটি কোল্ড ড্রিংক্স খাচ্ছে স্ট্র দিয়ে, উষ্মীর চোখগুলো বড় বড় হয়ে আছে। উষ্মী বসা থেকে উঠে ভদ্রলোকটির সামনে গিয়ে দাড়ালো।
ইন্সিয়া ও তাঁর বাকি ফ্রেন্ডরা হতভম্ব উষ্মীর এমন কান্ডে, উষ্মী লোকটাকে বলতে লাগলো
“আমাকে চিনছেন?”
লোকটি উষ্মীর দিকে তাকিয়ে বলে “ওহ হাই আপু, কেমন আছেন? বসুন না”
উষ্মী লোকটার কথায় বসে পড়লো আর বলতে লাগলো “আসলে ভাইয়া কাল তো বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি।তাই আপনার আপুর কন্ডিশনটা শোনা হয়নি, আপু কেমন আছে?আপুর বেবি হয়েছে?”
লোকটা ফিক করে হেসে দিয়ে বলে
“ধন্যবাদ আপনি না থাকলে কি যে হতো সেদিন, আই কা’ন্ট এক্সপ্লেইন। আমার আপু সুস্থ আছে, আজ বাড়িতে নিয়ে গেছি ক্লিনিক থেকে। আমার টুইন ভাগ্নী হয়েছে দোয়া করবেন”
উষ্মী কংগ্রাচুলেশনস জানিয়ে বলে “আপনার নামটা ঠিক জানা হলো না ভাইয়া”
প্রতুত্তরে লোকটি বলে উঠে “আরাশ আহমেদ” আপনি আরাশ বলতে পারেন।
উষ্মী হেসে বলে
“সুন্দর নাম ভাইয়া।আমার নাম উষ্মী হাসান। সেদিন আপনাকে সাহায্য করাটা একদম’ই আন’এক্সপেক্টেড ছিলো। আসলে সেদিন আমরা ফাংশন শেষ করে ফুচকা খেতে গিয়েছিলাম। ঠিক তখন’ই আপনার গাড়ি আমাদের পাশ দিয়ে ক্রস করে। ক্রস করার সময় রাস্তায় জমানো নোংরা পানি আমার বেস্টফ্রেন্ডের ড্রেসে পড়ে। ড্রেস টা নোংরা হওয়াতে সে রেগেমেগে আগুন। আমি তখন’ই বুঝেছিলাম আপনাদের গাড়িটা ব্যালেন্স হারিয়েছে। তারপর ভাবলাম গাড়িটা আজ হয়তো এক্সিডেন্ট করবে।ঠিক তাই যেমন ভাবলাম তেমন’ই এসে দেখি আপনার গাড়ির সামনের পার্ট টা ক্র্যাশ করেছে।ভাগ্যিস বড় কিছু হয়নি। আপনি আপনার বোনকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে যাচ্ছিলেন ক্লিনিকে তখন গাড়ির চাবি সাথে নিতে ভুলে গেলেন,ঐ চাবিটা আমার বেস্টফ্রেন্ড নিজের কাছে রাখে। আপনাকে চাবি ফেরত দেওয়ার সুবাধে এসেই আপনার বোনকে রক্ত দিলো আমার বেস্টফ্রেন্ড”
আরাশ সবটা শুনে হা করে তাকিয়ে আছে উষ্মীর দিকে, উষ্মী আরাশের দিকে তাকিয়ে বলে “আসলে হায়াতের মালিক আল্লাহ ভাইয়া। তাই এখানে আমার কারো হাত নেই।ভালো থাকবেন ভাইয়া।আমার ফ্রেন্ডরা হয়তো রাগ করছে আমি এখানে তাদেরকে ফেলে আসাতে”
আরাশ উষ্মীর দিকে তাকিয়ে বলে
“আসলে আপু ব্যপারটা হলো। আমার বড় আপুর অবস্তা খারাপের দিকে ছিলো।একটু পর পর পেছন ফিরে তাকাতাম আপু কেমন ফিল করছে দেখতাম। হঠাৎ আপু সিরিয়াস হয়ে যায়। তখন আর মাথা কাজ করছিলো না,গাড়ির ব্র্যাক সামলাবো নাকি আপুকে। ঠিক তখন ধাক্কা লাগে গাড়িতে। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন বড় এক্সিডেন্ট হয় নি”
বুঝতে পেরেছি ভাইয়া। আপু আর বেবির খেয়াল রাখবেন। চলি আল্লাহ হাফেজ (উষ্মী)
আপনার বেস্টফ্রেন্ড কি এসেছে সাথে? তার সাথে কিছু কথা ছিলো আমার। আজ ভাগ্যক্রমে আপনাদের সাথে দেখা,আর কখনো দেখা না ও হতে পারে। তাই আজকেই একটু কথা বলতে পারলে ভালো হতো (আরাশ)
এসেছে, ঐ যে বসে আড্ডা দিচ্ছে ফ্রেন্ডদের সাথে (উষ্মী)
ওহহো আজ হয়তো হবে না,আমি আজ এসেছিলাম ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলতে এই ক্যাফে, সেই কারনে আপনাদের সাথে দেখা হয়ে গেলো। (আরাশ)
সমস্যা নেই ভাইয়া,পরে কোনো একদিন ক্যাফে আসলে আলাপ করবেন আমার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে।আজ একটু তাড়া আছে আমাদের (উষ্মী)
শিউর আপু। কাল বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে আপনার বেস্টফ্রেন্ডকে আসতে বলবেন ক্যাফে। এতে আমার একটু হেল্প হবে আপনি যদি বলেন আসতে। (আরাশ)
জ্বী,আচ্ছা ভাইয়া। (উষ্মী)
উষ্মী কথা শেষ করে ইন্সিয়ার পাশে গিয়ে বসলো,ইন্সিয়া উষ্মীর দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে। উষ্মী ক্যাবলা কান্তর লুক নিয়ে ইন্সিয়াকে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে এভাবে ফুলছিস কেন?”
তোরে আমি আনছি নাকি ঐ লোকটা আনছে বল (ইন্সিয়া)
আরে ভাই ঐ লোকটারে তো তুই ও চিনোস একদিনেই ভুইলা গেলি? (উষ্মী)
আমি চিনিনা, তোর মত নাকি সবার দিকে লুচুমি দৃষ্টিতে তাকাবো? সবার ফেইস মনে রাখবো? (ইন্সিয়া)
আস্তাগফিরুল্লাহ কি বলিস বোন, ছেলেটা আমাকে আপু ডাকে। আমি ভাইয়া বলে সম্মোধন করি। সবসময় উল্টাপাল্টা চিন্তা। সত্যিই কি তুই চিনোস না?(উষ্মী)
নাহ।চিনিনা।লোকটা ওপাশ করে বসছে দেখায় যায় না।নাহলে দেখে বুঝতাম তোর কোন ভাইয়ের কথা বলিস (ইন্সিয়া রাগী চোখে)
আরে কাল যাকে রক্ত দিলি তাঁর ভাই এটা। গরু কোথাকার। (উষ্মী)
ইন্সিয়া আমতা আমতা করে এড়িয়ে গেলো বিষয়টা। কারণ ইন্সিয়া এখন তর্ক করলেই উষ্মীর কাছ থেকে দুই একটা ঠাস করে খেয়ে নিবে। ইন্সিয়ার তর্কে জিততে হবে, এই কারণে ইন্সিয়া কথা বাড়ালো না।
স্যার! (ক্লাইন্ট)
বসুন। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি,সময়ের ব্যপারে কোনো খেয়াল আছে? ডার্ন ইট (আরাশ)
সরি স্যার জ্যাম ছিলো। আর হবে না। মাথা নিচু করে বসে পড়ে ক্লাইন্ট। হাতে অনেকগুলা ফাইল। আরাশ ফাইলগুলো চ্যাক করতে করতে বলতে লাগলো
“আমার আপু যদি অফিসে গিয়ে কখনো আজাদের কথা জিজ্ঞেস করে,সোজা বলবেন উনি কানাডায় এখনো ব্যাক করেন নি বাংলাদেশে৷ ঠিকাছে?”
আচ্ছা। কিন্তু স্যার, এভাবে আটকে রাখাটা কি ঠিক(ক্লাইন্ট)
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরাশ তাকিয়ে আছে ক্লাইন্টের দিকে, ক্লাইন্ট মাথা নিচু করে সরি বলে বসে আছে। আরাশ ক্লাইন্টের সামনে ঝুকে টেবিলে থাবা দিয়ে বলে
“নিজের চরকায় তেল দিন।নয়তো পস্তাতে হতে পারে”
ফাইলগুলো ক্লাইন্টের সামনে ছুড়ে দিয়ে আরাশ বেরিয়ে পড়ে।পেছন থেকে ক্লাইন্ট তড়িঘড়ি করে শপিংব্যাগ আর ফাইলগুলো নিয়ে ছুটছে আরাশের পিছু পিছু। আরাশ গাড়িতে বসতেই, ক্লাইন্ট শপিংব্যাগ গুলো পেছনের সিটে রেখে দেয়,শপিং ব্যাগের ভেতর একটা পেনড্রাইভ ডুকিয়ে দেয়। আরাশকে ক্লাইন্ট বিদায় দিয়ে ফোনে বলছে বাহিরে,
“স্যারকে আজাদ স্যারের কথা বলাতে এমনভাবে ক্ষেপেছে,মনে হচ্ছে আমাকে এক্ষুনি দাফন করে দিবে। ভয় হচ্ছে আজাদ স্যারকে না মেরে ফেলে। তখন সব ঝামেলা আমাদের উপর এসে পড়বে।”
কথাগুলো বলে এপাশ ওপাশ তাকাতে লাগলো ক্লাইন্ট, কেউ শুনে ফেলেছে কি না দেখছিলো।
ক্যাফের ভেতর আরাশের এমন কান্ড দেখে ইন্সিয়ার মনে ঘৃণার বাসা বাঁধতে লাগলো, ইন্সিয়া মনে মনে ভাবছে
“লোকটার স্বভাব অতন্ত্য বাজে,ক্যাফে এসে ঐ লোকটার সাথে যা বিহেভিয়ারটাই না করলো।ছিঃ
টাকা আছে বলে মানুষকে পশুর মত ব্যবহার করছে। লোকটার বোন তো এমন না, লোকটা কেন এমন? দুর এত ভাবছি কেন।বড়লোকদের কাজ’ই তো মানুষকে অপমান করা। টাকার গরম দেখানো”
উষ্মী আরাশের এমন কান্ডে থ বনে গেলো৷ক্যাফের ভেতরে থাকা লোকজন নিস্তব্ধ নিরব। ওয়েটার এসে উষ্মীকে বলতে লাগলো, “বিল টা”
উষ্মী ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে বলে “এখানে যে একঘন্টা আগে যে লোকটা এসেছিলো। আমি যার সাথে কথা বলেছিলাম,তাকে চেনেন?!
ওয়েটার উষ্মীর কথায় হেসে বলে ” ম্যাম উনি আমাদের পুরোনো কাস্টমার। আরাশ স্যার।”
আপনাদের এখানে এসে উনি যা করলো এগুলো কি ঠিক? আপনার মালিক এসবের জন্য কিছু বলে না কেন? ক্যাফে এসে যা তা,পাবলিক প্লেইসে। (ঊষ্মী)
ম্যাম আপনি বুঝবেন না। এসব নিয়ে ভাবিয়েন না,আরাশ স্যার এমনি এমনি কেউকে বকে না। নিশ্চয় কিছু একটা হয়ছে।
বিল টা দিন ম্যাম, মালিক আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমাকে জব থেকে বের করে দিবে, আপনার জন্য আমার জবটা যাবে (ওয়েটার)
ওহ সরি এই নাও। (উষ্মী)
ওয়েটার চলে গেলো। ইন্সিয়া আর উষ্মীর ফ্রেন্ডরা বলে উঠে
“অযথা ঐ লোকটারে খারাপ বলা যায় না। তুই তো কথা বলেছিস তোর সাথে এমন করেছে? করে নি। হয়তো একটু আগে যে লোকটা আসছে তিনি কিছু করেছে।তাই হয়ত মুহুর্তেই রাগ বেড়ে গেছে। আমরা এসব বিষয়ে কথা না বলি দোস্ত। তাদের টা তাদের বুঝতে দে”
ঠিক বলেছিস। চল এবার বেরোই সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। কথাটুকু বলে উষ্মী দাড়িয়ে পড়ে। ইন্সিয়া উষ্মী গাড়ি ঠিক করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।ইন্সিয়াকে গেইটের সামনে নামিয়ে দিয়ে উষ্মী বাড়ি চলে যায়। ইন্সিয়া বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে বসে। ইন্সিয়ার মা ইন্সিয়াকে দেখে বলে
“আজ আবার কই গিয়েছিলি হুম? হুট হাট না বলে বেরিয়ে যাচ্ছিস আবার সন্ধ্যা করে বাড়ি ফিরছিস। মানে টা কি? কি গো তুমি তোমার মেয়েকে কি ডাক দিবে না?”
ইন্সিয়ার বাবা রুম থেকে এসে বলতে লাগলো “আরেহ বাবা চেচাচ্ছো কেন? আমিই বলেছি যেতে। সব বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করলে হয় না? এসেছে বসুক ধীরে সুস্থে কথা বলা যায় তো নাকি!সারাদিন ঘ্যান ঘ্যান”
ইন্সিয়ার মা রেগেমেগে হন হন করে চলে গেলো। ইন্সিয়ার বাবা ইন্সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
“এত দেরী করে কেউ আসে? কোথায় গিয়েছিলি মা? কোনো অসুবিধা হয় নি তো?”
আব্বু আমি আমার বান্ধবীদের সাথে সামনে মোড়ের ঐদিকে ক্যাফ আছে ওটাতে দেখা করতে গিয়েছিলাম, জ্যামের কারণে আব্বু দেরী হয়েছে। এদিকের জায়গাটা নির্জন তাই আমি উষ্মী হেঁটে আসিনি। উষ্মী আমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে (ইন্সিয়া)
আচ্ছা ঠিকাছে। এবার থেকে রাত করে আসবি না। তোর মায়ের ভয় হয় তো,কারণ সে মা। সে তোকে বিশ্বাস করে কিন্তু অনেক ভয় পায় তোকে নিয়ে৷ মায়েরা সন্তানের খারাপ চায় না মা। মায়ের কথায় কষ্ট পাস না। বাবা বকে দিয়েছি তোর মাকে। ইন্সিয়ার আব্বু কথাগুলো বলে রুমে চলে গেলো।
ইন্সিয়া নাস্তা সেরে রুমে এসে আরাম করতে লাগলো।
আরাশ বাড়ি পৌছে ফ্রেশ হয়ে রাজুকে ডাকতে লাগলো রুমে। রাজু বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিচে ছেলেদের ব্যাডমিন্টন খেলা দেখছে। আরাশের ডাকে রাজু দৌড়ে আসে রুমে আর বলে “সাব মুই এনো,(এখানে)”
গুড এদিকে আই তোর জন্য কিছু ড্রেস এনেছি। এগুলা পড়ে দেখ তোর হয় কি না (আরাশ)
রাজুর চোখমুখে খুশির আভা রাজু নতুন কাপঁড়ের ঘ্রাণ নিতে লাগলো। আরাশ রাজুর এমন কান্ডে মুচকি হেসে দেয়। রাজুকে টি শার্ট আর থ্রী কোয়াটার কাপঁড় দিয়ে বলে “যা পড়ে আই এটা”
রাজু সানন্দে পড়তে চলে গেলো। আরাশ রাজুর অন্যান্য ড্রেস কাভার্ডে গুছিয়ে রাখছিলো ঠিক অমন সময় শপিং ব্যাগে সেই পেনড্রাইভ হাতে পায়। আরাশ তাড়াহুড়ো করে নিজের একান্ত ড্রয়ারে পেনড্রাইভ লুকিয়ে রাখে, আরাশ যাবতীয় কাজ সেরে বোনের রুমে যায় বোনকে দেখতে, অরীন শুয়ে শুয়ে বই পড়ছে পাশের দোলনাতে বাচ্ছারা ঘুমাচ্ছে। আরাশ অরীনের সাথে বসে বসে আড্ডা দেয়,সাথে সামিল হয় মিশু,মুনিয়া খালামণি ও রাজু। ফ্যামিলির সকলে বসে দারুণ আড্ডায় মেতে উঠে। অরীণ আরাশের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার বাড়িটা সেদিন পরিপূর্ণ হবে যেদিন একটা লাল টুকটুকে মিষ্টি ভাইয়ের বউ চলে আসবে। আরাশ অরীণের কথা শুনে বলে
“আপু আমার লাইফে কোনো মেয়ে আসবে না। এসব কথা আমার শুনতে ভালো লাগে না। প্লিজ বলিস না”
অরীন মিট মিট করে মুনিয়া খালার সাথে হাসছে আরাশের কান্ড দেখে।
রাতে সবাই খাওয়াদাওয়া সেরে রুমে চলে আসে সবাই। আরাশ রাজুকে পাশে ঘুমাতে বলে বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে আছে। আরাশ ভাবছে কি করে আজাদকে সরিয়ে দেওয়া যায়। আরাশের মনে একটাই চিন্তা তার আপুর মন থেকে ঐ হিংস্র জানোয়ারের নামটা কীভাবে মুছে ফেলা যায়। আরাশ রাতের আকাশটা দেখছে। চাঁদটা একা উজ্জ্বল আলোয় আকাশকে রাঙিয়ে রেখেছে। আরাশ বিড় বিড় করে বলছে
“সবাই তো আর কারো জীবন রাঙ্গাতে পারে না। কেউ কেউ বিষিয়ে দেয়।যার ক্ষতটা ভোলা খুব কঠিন। বিষাক্ত স্মৃতি গুলো সুস্থ মানুষকে তখন কুড়ে কুড়ে খায়”
আরাশ রুমে এসে ড্রয়ার থেকে পেনড্রাইভ বের করে ল্যাপটপে কানেক্ট করলো। এরপর যা দেখলো তাতে আরাশের শরীর থরথর করে কাঁপছে
চলবে…