রাগে অনুরাগে পর্ব-১৪ এবং শেষ পর্ব

0
744

#রাগে_অনুরাগে💚✨

#পর্ব_১৪(অন্তিম পর্ব)

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

মিহির সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপরে ব্রেকফাস্ট করে বললো,

“আরাধ্যা তুমি এই কয়দিন ছুটিতে থাকো।বিয়ের পরে একদম অফিসে যেও।”

রুশা পাশে থেকে বললো,

“যাক ভালো হয়েছে আধু।তোর বিয়ের শপিং করতে সুবিধা হবে তুই ছুটিতে থাকলে।”

আরাধ্যা কিছু একটা ভেবে বললো,

“আপনার সমস্যা হবে না মিহির বাবু?”

“না আমার কোনো সমস্যা নেই।আর নিলয় তো আছে।”

“আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।”

মিহির তার অফিসে রওয়ানা দিলো।মিহির অফিসে গিয়ে দেখলো টিনা বসে আছে।টিনাকে দেখেই মিহিরের রাগ উঠে গেলো।মিহির টিনার সামনে গিয়ে বললো,

“টিনা তুই এখানে কি করতেছিস?”

“আমি আজকে আমেরিকায় চলে যাবো মিহির।তাই তোর সাথে দেখা করতে আসলাম।আমি একটা জিনিস বুঝতে পেড়েছি।জোর করে কখনো ভালোবাসা হয় নাহ্।আর শুনলাম সামনে তোর নাকি বিয়ে!কংগ্রাচুলেশনস।”

টিনার কথাগুলো শুনে মিহির কিছুটা অবাক হলো।মিহির নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

“যাক এতোদিনে ভালো কথা বললি।তা তোর এই পরিবর্তনের কারণ কি?”

“আমি ভেবে দেখলাম তুই তো অন্য একজনকে ভালোবাসিস।আর তাকেই হয়তো বিয়ে করবি।তাহলে আমি কেনো শুধু শুধু ঝামেলা করবো!”

“তুই জানলি কিভাবে আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি?তোকে তো আমি কখনো এই বিষয়ে কিছু বলিনি।”

“আমি তোর চোখে আরাধ্যার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।তাতেই আমি সবটা বুঝে গেছি।মুখে বলার প্রয়োজন হয়নি।”

টিনা কথাগুলো বলে চলে গেলো।মিহির অফিসের কাজে মন দিলো।কাজ শেষ করে বাড়িতে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আরাধ্যাকে কল করলো।আরাধ্যা কলটা রিসিভ করলো।

“চাশমিশ কি খবর তোমার?”

“আমার খবর পরে শুনেন টিভিতে খবর দেখছেন আপনি?”

“কিসের খবর দেখবো?”

“একটু আগে আপনার বান্ধবী টিনাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।”

মিহির অবাক হয়ে বললো,

“কিন্তু কেনো?”

“উনি দেশে থাকা কালীন একটা ছেলের সাথে রিলেশন করতেন।পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করেন।তারপরে নাকি ওই ছেলের সব সম্পত্তি নিজের নামিয়ে লিখিয়ে নেন।তারপরে তার সব টাকা-পয়সা নিয়ে আমেরিকা চলে যান।”

“ওহ্ আচ্ছা এই কারণেই আজকে আমেরিকা পালাতে চেয়েছিলো।তাই তো বলি এমন অভদ্র মেয়ে আজকে এতো ভালো কথা কিভাবে বললো!”

আরাধ্যা অবাক হয়ে বললো,

“মানে কি বলছেন আপনি?”

“আজকে ও আমার অফিসে এসেছিলো।”

তারপরে অফিসের সব ঘটনা মিহির আরাধ্যাকে বললো।সবটা শুনে আরাধ্যা বললো,

“যাক আপনি আবার উনার প্রেমে পড়ে যাননি।নাহলে হয়তো আপনার সাথেও এমন করতো।”

“তোমার হবু বর এতো বোকা না বুঝলে!”

“বেশি চালাকও তো মনে হয় নাহ্।”

“আরাধ্যা তুমি কি আমাকে ইনসাল্ট করতেছো?”

“একদমই নাহ্।”

এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেলো।আজকে আরাধ্যা আর মিহিরের বিয়ে।

বউ বেশে বসে আছে আরাধ্যা।ফুলের গহনার সাজে সাজানো হয়েছে আরাধ্যাকে।এটা আরাধ্যার ইচ্ছা ছিলো।যে সে তার বিয়েতে ফুলের গহনার সাজে সাজবে।লাল বেনারসি আর বিভিন্ন ফুলের গহনার অপূর্ব লাগছে আরাধ্যাকে।

লাল শেরওয়ানি পড়ে,মাথায় পাগড়ি পড়ে আরাধ্যার পাশে বসে আছে মিহির।তার চোখ আরাধ্যার দিকে।আরাধ্যা কিছুটা লজ্জা পাচ্ছে মিহির এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণে।আরাধ্যা মিহিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন আপনি?”

“আমার জানা মতে তুমি ছাড়া এখানে আর কেউ নেই।সো তোমাকেই দেখছি।”

আরাধ্যা মিহিরের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মুচকি হাসলো।

একজন ক্যামেরাম্যান এসে বললো,

“ম্যাম আপনার চোখ থেকে চশমাটা খুললে ভালো হতো।তাহলে ছবি সুন্দর আসবে।”

আরাধ্যা চোখ থেকে চশমা খুলতে যাবে মিহির বাধা দিয়ে বললো,

“ওর চোখে চশমা থাকবে।আর ও চশমা সহ-ই ছবি তুলবে।”

ক্যামেরাম্যান আর কিছু বললো নাহ্।আরাধ্যা’ মিহিরকে বললো,

“চশমা খুললে সমস্যা কি?”

“চশমা পড়লে তোমায় বেশি কিউট লাগে চাশমিশ।আমিও ভাবছি একটা চশমা কিনে নিবো তাহলে আমাকে হয়তো তোমার মতো কিউট লাগবে!”

আরাধ্যা মিহিরের গাল টেনে বললো,

“আপনি দেখতে এমনিই মাশাআল্লাহ।আর কিউট হওয়া লাগবে নাহ্।পরে সব মেয়েরা আমার থেকে আপনাকে টেনে নিয়ে চলে যাবে।”

“এতো সহজ নাকি সবকিছু?আমাকে তোমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে নাহ্।”



ফিহা চুপচাপ একটা নিরিবিলি জায়গায় হাঁটতেছে।তার কিছুটা খারাপ লাগছে।কারণ তারও তো এমন একদিন বিয়ে হয়েছিলো।তবে আর্যর সাথে তার এখন ডিভোর্স হয়ে গেছে।সে আর্যর কথা ভেবে কষ্ট পেতে চায় নাহ্।তাও বারবার তার আর্যর কথা মনে পড়ে যায়।

হঠাৎ ফিহা কারো সাথে ধাক্কা খেলো।

মুহিত তাড়াতাড়ি করে ক্যামেরা নিয়ে মিহির আর আরাধ্যার ছবি তুলতে যাচ্ছিলো।এমন সময় এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলো।মেয়েটা পড়ে যেতে যাবে তার আগেই মুহিত ধরে ফেললো।মুহিত এই মেয়েটাকে চিনে।

মুহিত’ ফিহাকে দাঁড়া করিয়ে বললো,

“আপনার কোথাও লাগেনি তো?”

ফিহা চোখ রাঙিয়ে বললো,

“দেখে হাঁটতে পারেন নাহ্!”

“দেখেন ধাক্কাটা এক্সিডেন্টলি খেয়েছি আমরা দুজনে।এতে কারোর কোনো দোষ নেই।বাই দ্যা ওয়ে আপনি ভাবির কাছে যান।এখানে একা একা হাঁটছেন কেনো?”

ফিহা অবাক হয়ে বললো,

“আপনি আরাধ্যাকে ভাবি বলছেন কেনো?”

“আরে ভাবিকে তো ভাবিই বলবো।”

“আপনি কি মিহির ভাইয়ের ছোট ভাই নাকি?”

“হ্যাঁ।”

“ওহ্ আচ্ছা।”

“একটা কথা বলি।”

“হ্যাঁ বলো।তোমাকে তুমি করেই বলি।কারণ তুমি আমার অনেক ছোট।”

“সে যা ইচ্ছা বলুন।তবে আপনাকে কিন্তু শাড়িতে কিন্তু সুন্দর লাগছে ফিহা।”

ফিহা ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“এই যে আমি তোমার বড়।সো আমাকে আপু বলবে।”

“আরে কত আর বড় হবেন!বেশি করে ধরলে তিন-চার বছরের বড় হবেন।এতে আপু বলা লাগে নাকি?”

“তো নাম ধরে ডাকতে হয় নাকি?এরপরে যেন তোমার মুখে আমার নাম না শুনি পিচ্চি।”

ফিহা কথাটা বলে চলে গেলো।মুহিত মুচকি হেসে বললো,

“আপনাকে তো বোন বানালে চলবে নাহ্।বউ বানাতে হবে!”

///

আরাধ্যা আর মিহিরের বিয়েটা হয়ে গেলো।আরাধ্যাকে মিহিরের বাড়িতে নিয়ে আসা হলো।

বাসর ঘরে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে আরাধ্যা।মিহির এসে আরাধ্যার ঘোমটা মুচকি হাসলো।মিহির তার বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বললো,

“হায়!কি সুন্দর বউ আমার!আমি তো জাস্ট পাগল হয়ে যাবো।”

মিহিরের কথা শুনে আরাধ্যা খিলখিল করে হেসে দিলো।আরাধ্যা হাসি থামিয়ে বললো,

“পাগল তো আপনি না তুুমি অনেক আগেই হয়েছেন মিহির বাবু।”

“তা অবশ্য ঠিক বলেছো।তুমি ডাক শুনে ভালোই লাগলো তোমার মুখ থেকে।”

মিহির তার পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে আরাধ্যার হাতে দিয়ে বললো,

“তোমার নাকি তোমার অনেক পছন্দের ফুল!তাই ভাবলাম স্পেশাল দিনে স্পেশাল গিফটটা দিবো।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আরাধ্যা মানে আমার চাশমিশ।”

আরাধ্যা’ মিহিরের হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে বললো,

“আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি মিহির বাবু।”

মিহির আরাধ্যাকে জড়িয়ে ধরলো।আরাধ্যাও মিহিরকে জড়িয়ে ধরলো।

এক মাস পরে,

“ফিহা আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

মুহিতের কথা শুনে ফিহা কিছুটা বিরক্ত হলো।যতবার তাদের দেখা হয়েছে প্রতিবারই মুহিত এই কথাটা বলেছে।আজ সে রুশার সাথে মিহিরদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলো।তখন আবার মুহিত এই কথা বললো।ফিহা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললো,

“মুহিত মজা করা বাদ দেও।”

“আই এম সিরিয়াস ফিহা।আই রেলি লাভ ইউ।”

“জাস্ট স্টপ ইট মুহিত।তুমি যদি এমন করতে থাকো আমি আর তোমাদের বাড়িতে কখনো আসবো নাহ্।”

মুহিত বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

“আমাদের বাড়িতে তোমাকে পারমানেন্ট রাখার ব্যবস্থা আমি করতেছি।”

এই কথা বলে মুহিত উঠে দাঁড়ালো।তারপরে মুবিন সাহেবের রুমে গিয়ে বললো,

“বাবা আমি ভাবির বান্ধবী ফিহাকে ভালোবাসি।ও-কে বিয়ে করতে চাই।কিন্তু ও রাজি হচ্ছে নাহ্।”

মুবিন সাহেব অবাক হয়ে বললো,

“ওর বিষয়ে তুই সব জানার পরও এই কথা বলতেছিস?”

“হ্যাঁ বাবা।”

“আচ্ছা তোর যখন ইচ্ছা সেটাই হবে।আমি ওর সাথে কথা বলতেছি।”

মুবিন সাহেব মুহিতকে নিয়ে নিচে আসলো।তারপরে ফিহাকে বললো,

“মা আমার ছোট ছেলে তোমাকে ভালোবাসে।আমি জানি তুমি সবদিক ভেবে এই সম্পর্কটা এগিয়ে নিতে চাচ্ছো নাহ্।তাও যদি একটু ভেবে দেখতে।”

মিহির অফিস থেকে এসে মুবিন সাহেবের কথা শুনতে পেলো।মিহির মুহিতের কাছে এসে বললো,

“তুই ফিহাকে সত্যি ভালোবাসিস?”

“হ্যাঁ ভাইয়া।”

“সবটা জানার পরেও?”

“হ্যাঁ ভাইয়া।ওর সবটা জেনেই আমি ও-কে ভালোবাসি।”

আরাধ্যা এসে মিহিরের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

“মুহিত আর ইউ শিওর?”

“জ্বী ভাবি।জাস্ট তোমার বান্ধবীকে একটু বুঝাও।”

ফিহা চোখ রাঙিয়ে মুহিতের দিকে তাকিয়ে আছে।রুশা ফিহার কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

“ফিহু ভেবে দেখ একটু।”



তিন মাস কেটে গেলো।মুহিতকে আর ফিহার বিয়ে।অন্যদিকে নোমান আর রুশার বিয়ে একদিনে।মুহিত অনেক কষ্টে ফিহাকে বিয়েতে রাজি করিয়েছে।

মিহির আর আরাধ্যা দাঁড়িয়ে দুই জোড়া বিয়ে দেখছে।মিহির আরাধ্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

“চাশমিশ আমরাও কিন্তু চাইলে আরেকবার বিয়ে করতে পারতাম।তাহলে তিন জোড়া বিয়ে হয়ে যেতো।”

“বাহ্ কত বিয়ে করার শখ তোমার?”

“এইতো দশ বারোটা!তবে প্রত্যেক বার বউ বেশে তোমাকেই চাই।”

মিহিরের কথা শুনে আরাধ্যা হেসে দিলো।মিহিরও হাসলো।

/🍁/

দুই জোড়া বিয়ে হয়ে গেলো।মিহির আর আরাধ্যা তাদের রুমে বসে গল্প করছে।হঠাৎ বাইরে বৃষ্টি শুরু হতে আরাধ্যা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“মিহির বাবু চলো না আজ বৃষ্টিতে ভিজি!অনেকদিন একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা হয় নাহ্।”

“ওকে চলো।”

মিহির আর আরাধ্যা বাড়ির ছাদে গেলো।আরাধ্যা বৃষ্টিতে ভিজছে আর লাফাচ্ছে।মিহির দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আরাধ্যার কান্ড দেখে হাসছে।আরাধ্যা এসে মিহিরকে টেনে নিয়ে গেলো।

মিহির’ আরাধ্যাকে হেঁচকা টেনে তার কাছে নিয়ে আসলো।তার হাতের আঙুল দিয়ে আরাধ্যার মুখের উপর পড়া বৃষ্টির ফোঁটাগুলো মুছে দিচ্ছে।মিহির আরাধ্যার ঠোঁটের দিকে তার ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।আরাধ্যা মিহিরকে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে গেলে।মিহির পিছন থেকে আরাধ্যার হাত টেনে ধরলো।

তারপরে গাইতে শুরু করলো,

মন #রাগে_অনুরাগে💚✨
আজ আরও কাছে ডাকে
না যেও না-
তুমি ছাড়া যে শূন্য লাগে!🌻

আরাধ্যা মিহিরের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিলো।তারপরে মিহিরকে জড়িয়ে ধরে বললো,

“তোমাকে ছেড়ে আমি কখনোই যাবো নাহ্ মিহির বাবু।”

মিহির আরাধ্যাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

“আমিও আমার চাশমিশকে ছেড়ে কোথাও যাবো নাহ্।”

————-#সমাপ্ত—————-

(আল্লাহ হাফেজ।আশা করি গল্পটা সবার ভালো লেগেছে।)

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।]