#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_২৫
জাওয়াদ জামী জামী
” আপনার যে-কোন সমস্যায় খাদিজা আন্টিকে পাশে পাবেন। কোনকিছু প্রয়োজন হলে আন্টিকে বলবেন। এছাড়া ছোট মামীও আছে। আমি যাওয়ার পর মামী হয়তো সপ্তাহে চারদিনই এসে আপনাকে দেখে যাবে। আবারও বলছি, গাড়িতে করে কলেজে যাতায়াত করবেন। আলমারিতে টাকা আছে প্রয়োজনমত খরচ করবেন। আসছি আমি। ভালো থাকবেন। ” শাহেদ তিয়াসার থেকে প্রত্যুত্তরের আশা করলোনা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ নিরুত্তাপ থাকার পর কি মনে করে তিয়াসা বাহিরে এসে সিঁড়ির ওপরের ধাপে দাঁড়ালো৷ শাহেদ ততক্ষণে নিচে চলে গেছে। সে দাদু আর আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে।
” আন্টি, তুমি দাদু আর তোমাদের নতুন বউয়ের খেয়াল রেখ। ও যেসব খাবার খায়না, সেগুলো রান্না করোনা। যেসব খাবারে ওর এ্যালার্জি আছে, সেগুলোতো ওর জন্য রান্না করবেইনা। তোমরা খেলে আলাদাভাবে রান্না করবে অন্য হাঁড়িতে। আমি ওর জন্য টাকা রেখে গেলাম। হয়তো প্রয়োজনেও সে টাকাগুলো খরচ করতে চাইবেনা। তাই তুমি ওকে জিজ্ঞেস ওর কি প্রয়োজন। ওর মন খারাপ থাকলে বাবার বাড়িতে নিয়ে যাবে। আর হ্যাঁ, জুস ওর ভিষণ পছন্দের। বাসায় যে ফল থাকবে সেগুলো দিয়েই ওকে জুস তৈরী করে দিবে। ওর মাইগ্রেন আছে। মাঝেমধ্যেই মাথা ব্যথা করে। আলমারিতে ঔষধ রেখেছি। প্রয়োজনে সেগুলো ওকে দিও৷ আর ডক্টর আংকেলকে বলে রেখেছি , তিনি যে কোন দরকারে বাসায় আনবেন। দাদুকে ঔষধ ঠিকমত দিও। দাদু, আমি আসছি তাহলে। সাবধানে থেক তোমরা। ” শাহেদ অচঞ্চল গলায় বলল।
” তুমি কবে আসবা, বাবা? তারাতারি এস। ” খাদিজা আন্টি আঁচল দিয়ে ভেজা চোখ মুছলেন।
” দেরি হবে, আন্টি। ”
” দাদু ভাই, মাঝেমধ্যে আমাকে এসে দেখে যেও। তোমাকে কয়েকদিন না দেখলেই আমি অসুস্থ হয়ে যাই। ”
” আসব, দাদু। এখন আসছি আমি। ” শাহেদ পিছু ফিরে তাকালোনা। তাকালে দেখতে পেত তিয়াসা ওর দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। ওর আজও জানা হলোনা শাহেদ কিভাবে ওর সম্পর্কে এতকিছু জানলো!
” এসে গেছিস? বাইকে ওঠ। তোকে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেই। ” শাহেদ গেটের বাহিরে এসে দাঁড়াতেই পুলক আসল।
” তোমার কথাই মনে মনে ভাবছিলাম, ভাই। দাদু থাকল। তোমার ভরসায় দাদুকে রেখে যাচ্ছি। খোঁজ নিও দাদুর৷ ”
” না গেলেই পারতি, শাহেদ। তিয়াসা একা থাকবে এখানে। ও কি তোকে ছেড়ে থাকতে পারবে? তোদের পারিবারিক মার্কেটের দ্বায়িত্বও যদি নিতিস, তবে এখানে থাকতে পারতি। তিয়াসাকে একা রেখে ঢাকা যাওয়ার দরকার হতোনা। ”
শাহেদ বুঝতে পারছে কথার মোড় নিচ্ছে কোনদিকে। তাই পরিবেশকে হালকা করতে হেসে উঠে বলল,
” ভাই, আমার বউ কিন্তু ভাবীর বড় বোন। সে হিসেবে সে তোমার বউয়ের বড় বোন। একটু তো তাকে সম্মান কর। তাকে নাম ধরে না ডেকে আপু বল। আমি কিন্তু ভাবীকে শালিকা হিসেবে ট্রিট করছিনা। ”
” কি আর করব বল? বোকা বউকে বিয়ে করে, আমার কেমন অধঃপতন হয়েছে দেখছিস? জীবনেও বোধহয় তোর বউকে আপু বলে ডাকতে পারবনা। তবে দোষ কিন্তু আমার নয়। সব দোষ ঐ অধঃপতনের। ”
পুলকের কথা শুনে শাহেদ উচ্চস্বরে হেসে উঠল।
” সব দোষ আমার। ভাবীর বোনকে বিয়ে না করলে সবই ঠিক থাকত। ”
শাহেদের হাসির আড়ালে চাপা কষ্ট পুলক বুঝতে পারলনা। আর বুঝতে পারলনা শেষের কথাটা কিভাবে বলেছে সে। তবে পুলক কোন একটা বিষয়ে সন্দিহান হয়ে উঠেছে। ওর ভেতরে কিছু একটা খোঁচাচ্ছে কয়েকদিন থেকেই। শাহেদকে অতিমাত্রায় নিস্পৃহ মনে হচ্ছে ওর। কিন্তু কেন এমনটা মনে হচ্ছে সেটাই ধরতে পারছেনা।
***
পেরিয়ে গেছে সাতদিন। এই সাতদিনে শাহেদ প্রতিদিনই বাড়িতে কথা বলেছে। কিন্তু একবারও তিয়াসার সাথে কথা বলেনি। এজন্য তিয়াসার যে একটুআধটু খারাপ লাগেনি তা নয়। শাহেদ যখনই ফোন দিয়েছে প্রতিবারই সে দাদু কিংবা আন্টির সামনে উপস্থিত ছিল। তারা যখন শাহেদকে বলেছে, তিয়াসার সাথে কথা বলতে, তখন শাহেদ নানানভাবে কথা কাটিয়ে গেছে। তাই গত দুই দিন ধরে শাহেদের ফোন আসলে ও সেখান থেকে চলে যাচ্ছে।
এই কয়দিনে মল্লিকা মির্জা প্রতিদিন একবার করে এসে তিয়াসাকে দেখে গেছেন। একদিন সাথে করে আশফিকেও এনেছিলেন। আশফির চোখমুখে সেদিন সুখের আভাস টের পেয়েছিল তিয়াসা। ছোট থেকেই সুখ বঞ্চিত মেয়েটা অবশেষে সুখের নাগাল পেয়েছে দেখে তিয়াসা খুশি হয়। ও কথাচ্ছলে রিফাতের কথা আশফির কাছে জানতে চেয়েছিল। আশফি জানিয়েছিল, সে ভালোই আছে। প্রতিদিনই আশফির সাথে কথা হয় তার। আরও খুঁটিনাটি অনেক কিছুই বলেছিল। সব শুনে তিয়াসা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে। নিজের কষ্ট কাউকে দেখাতে চায়না ও।
***
” ম্যাম, একটু কাছে আসবেন? ” পুলকের স্থির, অবিচল কন্ঠস্বর শুনে কেঁপে উঠল আশফি। আজকাল এই কন্ঠস্বরে ও মাদকতা খুঁজে পায়। মানুষটার সান্যিধ্য ওকে লজ্জারাঙা রমনীতে পরিনত করে। খুঁজে যায় জীবনের মানে।
” ক..কেন? ডাকছেন কেন? ”
” প্রচন্ড গরম লেগেছে। তাই একটা ঠান্ডা চুমু খেতে চাচ্ছি আপনাকে। চলবে? ” মুখে যেন মধু ঢেলে কথা বলছে সে।
” নাহ্ চলবেনা। গরম চুমু দিতে পারবেন? পারলে বলুন? ”
আশফির কথা শুনে পুলকের সকল আশায় ভাটা পরল। ও ভালো করেই জানে ওর বোকা বউ অসময়ে উল্টোপাল্টা কথা বলে। তাই ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পরখ করছে আশফিকে। বোঝার চেষ্টা করছে আশফি কি সত্যিই বোকামি করছে নাকি সিরিয়াসলি ওর থেকে চুমু চাইছে। আশফিকে মিটিমিটি হাসতে দেখে পুলক বুঝল, আশফি ওকে নিয়ে খেলতে চাইছে। বউ খেলতে চাইলে যে পুরুষ বাঁধা দেয়, সে একটা আহাম্মক। আর পুলক মির্জা মোটেও আহাম্মক প্রমানিত হতে চায়না তার বউয়ের কাছে।
” মাই গড! আপনি গরম চুমু চাচ্ছেন, ম্যাম! আমি রাজি। বিয়ের একমাস পর আমার বউ গরম চুমু চাইছে, এটা নিয়ে আমি পারি? তো শুরু হয়ে যাক? ” পুলক চোখ টিপে সোৎসাহে এগিয়ে যায় আশফির দিকে।
পুলককে এগিয়ে আসতে দেখে দু কদম পিছিয়ে যায় আশফি। ভয়ার্ত চেহারায় বলল,
” ঠোঁট গরম না করেই গরম চুমু দিতে চাচ্ছেন! আচ্ছা বোকা তো আপনি। ”
আশফির কথা শুনে আবারও পুলকের উৎসাহে ভাটা পরল। এই মেয়ে কি বলছে!
” ঠোঁট গরম করব মানে? ” স্তিমিত গলায় বলল পুলক। ওর চোয়াল ঝুলে পরল।
” প্রথমে রান্নাঘরে যান, এরপর একটা ফ্রাইপ্যান গরম করুন। আর সেই গরম ফ্রাইপ্যানে ঠোঁট রেখে গরম করে নিন। এরপর রুমে এসে আমাকে চুমু দিন। ”
আশফির কথা শুনে হতাশায় নিমজ্জিত পুলক ধপ করে বিছানায় বসল। মেয়েটা আচ্ছামত জব্দ করল ওকে!
” আইসক্রিম খেয়ে ঠান্ডা চুমু দিলে হবেনা, ম্যাম? এতে আপনারও ভালো লাগবে, সেই সাথে আমারও। গরম ফ্রাইপ্যানে ঠোঁট রেখে, সেই ঠোঁটের চুমু কারও ভালো লাগার কথা নয়। এতটা নির্দয় হবেননা। আপনি চাইলে এখনই এক গাড়ি আইসক্রিম আপনার সামনে হাজির করব। ” পুলক গলায় যথাসম্ভব মাদকতা নিয়ে আসার চেষ্টা করল। আশফি মানুষটার গলা শুনে শিহরিত হলেও ধরা দিলনা।
” আমি আইসক্রিম খাইনা। ”
” ডাহা মিথ্যা। প্রতিদিন বিকেলে তিয়াসাদের ছাদে উঠে কে আইসক্রিম খেত? সে কি কোন পেত্নী ছিল? ”
ধরা পরে যায় আশফি। আড়চোখে তাকায় পুলকের দিকে। মানুষটা করুণ চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
” আগে খেতাম, এখন খাইনা। ” এক বাক্যে উত্তর দিল সে।
” আচ্ছা, ঠান্ডা, গরম সব বাদ। ভালোবাসার চুমু চলবে? নাকি অন্য চুমু লাগবে? আমার যেকোন একটা হলেই চলবে। ”
পুলকের অবস্থা দেখে আশফির হাসি পাচ্ছে। মানুষটা চুমু দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে। চুমুর এক অদম্য বাসনা পেয়ে বসেছে তাকে। আশফির মনের এক অংশ বলছে, পুলকের কাছে ধরা দিতে। কিন্তু আরেক অংশ ওকে সর্বদাই ভয় দেখায়। যেদিন থেকে ও মানুষটার ভালোবাসা বুঝতে পেরেছে, সেদিন থেকেই আশফি অন্য মানুষে পরিনত হয়েছে। এই মানুষটাকে কিছুক্ষণ না দেখলেই ওর দুনিয়াদারি অসহ্য লাগে। আবার সে যখনই ওর খুব কাছে আসে, তখন ভয়ে সেঁধিয়ে থাকে তারই বুকে। এক অসহ্য টানাপোড়েনে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হচ্ছে আশফির মনোবল। তার কাছে যেতে কেন এত ভয়, দ্বিধা সেটা বুঝতে পারেনা আশফি। তবে এটা বোঝে, তার ভালোবাসার অত্যাচার সহ্য করার মত সাহসী নারী এখনো সে হয়ে ওঠেনি। আচমকাই কোমড়ে ছোঁয়া পেতেই হুঁশ ফিরল ওর। পুলক কখন এসে ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে লক্ষ্যই করেনি।
” কি ভাবছ এত? কিসের এত দ্বিধা? ভালোবাসাই তো দিতে চাই, অন্য কিছু নয়। যেখানে কত মানুষ একটু ভালোবাসার জন্য হাহাকার করে, সেখানে তুমি কেন আমাকে দূরে ঠেলে দাও? এক সমুদ্র ভালোবাসা তোমার পায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে
একটু হাত বাড়িয়ে নিজের সাথে সেই ভালোবাসা মেখে নাও, দেখবে সকল দ্বিধা, জড়তা কেটে যাবে। পুলক মির্জার ভালোবাসা নিখাঁদ ভালোবাসা পেলে দুনিয়াকে তুচ্ছ মনে হবে তোমার। ” ফিসফিসিয়ে আশফির কানে বলল পুলক। ওর গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে আশফির ঘাড়ে। প্রতিবারেই কেঁপে উঠছে মেয়েটা। মনে হচ্ছে তার নিঃশ্বাস পুড়িয়ে দেবে ওর সর্বাঙ্গ। পায়ে কোন শক্তি পাচ্ছেনা। টলে পরে যাবে যেকোন মুহূর্তে। তবে তার আগেই পেছন ফিরে পুলককে জড়িয়ে ধরল। মাথা রাখল ওর প্রশস্ত বুকে। ওর বুক কাঁপছে। কাঁপছে সর্বাঙ্গ। পুলক ছোট ছোট চুমুতে ওকে অস্থির করে তুলেছে।
” ভয় হয়। ” কম্পমান গলায় বলল আশফি।
” কিসের ভয়! ”
” হারানোর। পাশের বাড়ির ভাবী বলত, কাউকে বেশি ভালোবাসলে তাকে নাকি ধরে রাখা যায়না। আমি তো সারাজীবন ভালোবাসার কাঙাল ছিলাম। তাই হারানোর ভয় সর্বদাই আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে৷ ” পুলকের বুকে মুখ গুঁজে রইল মেয়েটা।
” তোমাকে ভালোবাসা উজার করে দিলে আমি নিঃস্ব হয়ে যাব। তাই তোমার সব ভয় আমাকে দাও। দু’জনেই পরিপূর্ণ হব। কি দেবেনা? ” পুলকের ভরাট কন্ঠ সব সময়ই আশফিকে শিহরিত। এখনও তার ব্যতিক্রম হলোনা। ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তার মানুষটাকে।
এদিকে পুলকের তনু মনে ভালোবাসার বান ডেকেছে। চাইলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। মানসিক আর জৈবিক চাহিদা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তবুও সে আশফির অনুমতির অপেক্ষা করছে। আশফি সায় না দিলে ও পিছিয়ে যাবে। সে যতই কষ্ট হোকনা কেন। ও ধৈর্য্য ধরে আশফির উত্তরের অপেক্ষা করছে।
পুলকের শরীরের পুরুষালী গন্ধ আশফিকে মাতাল করে দিচ্ছে। গত একমাসে এই পুরুষালী গন্ধের সাথে সন্ধি করেছে ও। এই গন্ধ শরীরে না মাখলে ওর মন বড্ড উচাটন করে। পুলক কি জানে, তার অগোচরে তারই পোশাকে আবেশে নাক ডোবায় সে? মানুষটাকে যখন কাছে পায়না, তখন তার পোশাকেই নিজের আবেশ খোঁজে আশফি। পুলকের হাতদুটো বিচরণ করছে ওর শরীরের আনাচেকানাচে। আশফি জানে পুলক ওকে কায়মনে প্রার্থনা করছে। আজকে মানুষটাকে ফেরাতে ইচ্ছে করছেনা। অনেক তো হলো। কিন্তু কি করে সায় দেবে তার কথায়? ভেবে কুল পায়না মেয়েটা। তবে এই প্রথমবারের মত একটা দুঃসাহসিক কাজ করে বসল। পুলকের টি-শার্টের দুইটা বোতাম খুলে আলতোভাবে ঠোঁট ছোঁয়াল তার উন্মুক্ত বুকে। চমকে উঠল পুলক। আশফির নরম ঠোঁটের ছোঁয়ায় ওর শরীরে শিহরণ খেলে যায়। পুলক মির্জা সম্মতি পেয়ে গেছে। তাকে আর পায় কে? এক ঝটকায় আশফিকে কোলে তুলে নিল। এগিয়ে গেল বিছানার দিকে।
***
আরেকটা নির্ঘুম রাত পার করতে যাচ্ছে তিয়াসা। শাহেদ ঢাকা গেছে বিশদিনের বেশি হবে। এরমধ্যে একবারও সে তিয়াসাকে ফোন দেয়নি। খালা তার কথামত তিয়াসার সেবাযত্নের চেষ্টা করে। তিয়াসার অপছন্দের খাবার এই বাড়িতে আসেনা। প্রতিদিন নিয়ম করে খাদিজা আন্টি ওকে জুস দেয়। ওর পছন্দের খাবার রান্না করে। কিন্তু তবুও তিয়াসার কিছুই ভালো লাগেনা। গত একমাসে রিফাতের সাথে ওর কথা হয়নি। এক অসহ্য অনুভূতি সব সময় ঘিরে ধরে থাকে তিয়াসাকে। ওর জীবন কোনদিকে বহমান সেটা কিছুতেই ধরতে পারছেনা।
” নতুন বউ, খাইতে আস। আব্বা তোমার জন্য অপেক্ষা করতাছে। ” খাদিজা আন্টির ডাক শুনে তিয়াসা চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসল।
” আপনি যান আমি এখনই আসছি। ”
খাদিজা আন্টি চলে গেলে তিয়াসা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখেমুখে ঠান্ডা পানির ছিটা দেয়। এরপর নিচে যায়।
দাদুকে মাছের কাঁটা বেছে দিচ্ছে তিয়াসা। ইদানীং দাদুর সকল দ্বায়িত্ব সে-ই পালন করে। দাদুর মুখের দিকে তাকালে নিজের দাদুর কথা মনে হয় ওর। দাদুও ওদেরকে খুব ভালোবাসত। তবে বেশিদিন দাদুর আদর ওদের কপালে জোটেনি।
” দিদি ভাই, তুমি নিজের খাবার না খেয়ে আমার জন্য এগুলো কর কেন বলতো? খাদিজা মাছ বেছে দেয়তো। ”
” আমার ভালো লাগে, দাদু। মাছের কাঁটা বাছা শেষ। এবার আপনি খান। ”
দাদুর সকালে গরম ভাত আর মাছের ঝোল খাওয়ার অভ্যাস। তিনি সকাল আর দুপুরে অল্প পরিমানে ভাত খান। আর রাতে ফল অথবা রুটি খান।
ওদের খাওয়ার মাঝেই খাদিজা আন্টির ফোন বেজে উঠল। খাদিজা আন্টিও ওদের সাথেই খাচ্ছে।
” শাহেদ বাবায় ফোন দিছে। আব্বা, আপনে খান। আমি ফোন লাউডস্পিকারে দিতাছি। খাইতে খাইতে বাবার সাথে কথা কন। ” আন্টির কথা শুনে তিয়াসার বুক ধ্বক করে উঠল। আন্টি ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকারে দিলেন।
” কেমন আছো, দাদু ভাই? অফিসে গিয়েছ? ”
” ভালো আছি। তুমি কেমন আছো। আন্টি কেমন আছে? এখনো অফিসে পৌঁছাইনি। রাস্তায় আছি। কি করছ তোমরা? ”
” আমরা খাচ্ছি। জানো দাদু ভাই, দিদি ভাই আমাকে মাছের কাঁটা বেছে দেয়, ঔষধ দেয়। আমার সব কাজ দিদি ভাই করে দেয়। তুমি কি সকালে খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছ? ”
” বাহ্ তোমার দিদি ভাইতো দেখছি অনেক কাজের! তবে তাকে দিয়ে এত খাটিয়ে নিওনা। দেখবে কোনদিন অতিষ্ঠ হয়ে ঠুক করে নারী নির্যাতনের মামলা দিয়ে দিল। তখন কি করবে? শেষ বয়স কি জেলে কাটাবে? ” শাহেদের কথা শুনে তিয়াসা হতভম্ব হয়ে খাদিজা আন্টির দিকে তাকালো।
” শাহেদ বাবা, নতুন বউ কিন্তু তোমার কথা শুনতাছে। ফোন লাউডস্পিকারে দেয়া আছে। ”
খাদিজা আন্টির কথা শুনে অপর পাশে কয়েক মুহুর্ত নিরবতা বিরাজ করে। তিয়াসা ভাবলো, সে কি ফোন রেখে দিয়েছে?
” আন্টি, এখন আমি রাখছি। তোমরা খেয়ে নাও। ”
” দাদু ভাই, আমার প্রশ্নের উত্তর এখনও দাওনি কিন্তু। তুমি কি খেয়েছ? ”
‘ না দাদু, ক্যান্টিনে গিয়ে খাব। বুয়া কিসব রান্না করে, সেগুলো খাওয়া যায়না। তাই ক্যান্টিনেই খাই। ”
” বুয়া পাল্টাও তাহলে। ”
” সবাই এমন। আচ্ছা দাদু, আমি রাখছি। ভালো থেক তোমরা। ”
” শাহেদ বাবা, নতুন বউয়ের সাথে কথা কইবানা? ”
” আমি পরে তার সাথে কথা বলব, আন্টি। এখন রাখছি। ”
তিয়াসা বুঝতে পারছে শাহেদ ওর কথা শোনার পরই ফোন রাখার জন্য উদগ্রীব হয়ে গেছে। হয়তো সে অস্বস্তিতে পরে গেছে। তবে ঢাকা যাওয়ার পর আজকে প্রথমবার তিয়াসা তার গলা শুনল।
***
ঘুম ভাঙ্গলে আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসতে গেলেউ আশফি বুঝতে পারল ওর শরীর ব্যথায় পরিপূর্ণ। ব্যথার চোটে ককিয়ে উঠল মেয়েটা। সেই সাথে অনুভব করল জ্বরও এসেছে। পাশে তাকাতেই দেখল পুলক সটান হয়ে শুয়ে আছে। বরাবরের মতোই এক হাত কপালের ওপর রেখেছে। যারফলে অর্ধেক চোখ ঢেকে আছে। রাতের কথা মনে পরতেই লজ্জায় আশফির শ্যামলা মুখ লালাভ বর্ণ ধারন করল। ও কি স্বপ্নেও ভেবেছিল, এই মানুষটা ওকে এত ভালোবাসে! হৃদয়ের গহীনে ওর জন্য এত ভালোবাসা পুষে রেখেছিল সে! এতদিনের দেখা পুলক মির্জার সাথে গত রাতের পুলক মির্জার আকাশপাতাল তফাৎ। আশফি তাকে রাগী, অধৈর্য্য আর গুণ্ডা হিসেবেই জানে। কিন্তু গতরাতে ও মানুষটার ধৈর্য্য দেখে অবাক না হয়ে পারেনি। নিজের চাহিদা মেটাতে হামলে পরেনি ওর ওপর। বরং ধৈর্য্য নিয়ে ওর জড়তা কাটিয়েছে। তার পৌরুষের প্রখরতায় আশফিকে নিজের করে নিয়েছে। কষ্টের সামান্যতম আঁচও লাগতে দেয়নি সে। মানুষটার ওপর সম্মান বেড়েছে বহুগুণে। ভালোবাসা কি সেটা ওকে এই মানুষটাই শিখিয়েছে। এক সাধারণ মেয়ে থেকে ওকে নারীতে পরিনত করেছে সে।
” কি দেখছ এভাবে, ম্যাম? প্রেমে পরলে নাকি? ” চোখ বন্ধ রেখেই বলল পুলক।
আশফি চমকে তাকায় তার দিকে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকল তাকে৷ সে তো চোখ বন্ধ করেই আছে, তবে কিভাবে বুঝল আমি তাকে দেখছি!
” আমি চোখ বন্ধ করেও সব দেখতে পাই। কাছে এসো তো সকালের চুমু দিয়ে দেই। এক ঘন্টার বেশি হয়েছে চুমু দেইনি। ”
চুমুর কথা শুনেই আশফি তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নামতে যায়। ও ভালো করেই জানে, এই মুহুর্তে তাকে চুমু দিতে দেয়া মানে আরও এক ঘন্টা এই রুমে বন্দী থাকা। তবে নামতে গিয়েই টের পায় শরীর কি পরিমান ব্যথা হয়েছে। আরেকবার ককিয়ে উঠল শব্দ করে। পুলকের কানে শব্দটা যাওয়া মাত্রই ও তড়াক করে উঠে বসল।
” কি হয়েছে? শরীর খুব বেশি ব্যথা করছে? আজ আর বাহিরে যেওনা। তোমার খাবার আমি রুমে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি। নাস্তা সেড়ে পেইনকিলার খেয়ে নাও। তুমি ফ্রেশ হয়ে এস৷ আমি আম্মুকে বলছি খাবার দিতে। ” পুলকের উদগ্রীব চেহারা দেখে মনে মনে হাসল আশফি।
” আমি নিচে যেতে পারব। আপনি অযথাই মা’কে কষ্ট দেবেননা। ”
” আমি যা বলছি কর। যাও ফ্রেশ হয়ে এস। ” পুলকের ধমক শুনে আর কথা বললনা আশফি। আলমারি থেকে শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল।
চলবে…
#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_২৬
জাওয়াদ জামী জামী
” সম্মানিত সকল কাউন্সিলর, আমি আপনাদের এখানে ডেকেছি শুধু একটাই কারনে, সেটা হলো আমরা চাই আমাদের শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং একটা মডেল শহরে রুপান্তরিত করতে। সেজন্য আপনাদের সহযোগিতার প্রয়োজন। এবারেও আমরা বিশাল আকাশের বাজেট পেয়েছি সিটি করপোরেশনের উন্নয়নের জন্য। আমরা আশা করছি এই বাজেট দিয়েই আমরা কাজ এগিয়ে নিতে পারব। ” আতিক মির্জা সিটি করপোরেশনের প্রতিটা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে মিটিং করছেন।
পুলক মির্জা নিজ চেয়ারে বসে প্রত্যেক কাউন্সিলরদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সিটি করপোরেশনের একটা পদে আছে ও। আর সে কারনেই আজকের মিটিংয়ে উপস্থিত হয়েছে।
” এই বাজেট দিয়ে আমরা কাজ শেষ করতে পারব বলে আপনি মনে করেন? এত কম টাকায় কি হয়! ” একজন কাউন্সিলর বলে উঠল।
” ১০০ কোটি টাকা অবশ্যই কম নয়। আমরা সৎ থাকলে এই টাকা দিয়েই কাজ হয়ে যাবে। আমাদের ওপর নির্ভর করছে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন। তাই আমরা মন থেকে সৎ হই। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একতা। একতাই পারবে আমাদের শহর, দেশকে উন্নতির শেখরে নিয়ে যেতে। ” আতিক মির্জা হাসিমুখে বললেন।
পুলক এতক্ষণের আলোচনায় সবার মনোভাব বুঝে গেছে। এখানে উপস্থিত প্রায় সকলেই যে ওর বাবার কথা অপছন্দ করেছে, এবং বিরোধিতাও করবে এটা ওর জানা হয়ে গেছে।
” আমরা শুধু খেটেই মরব! বিনিময়ে কিছুই পাবোনা? এই যে জনমানুষের জন্য এত করছি আমরা এর কি কোনও মূল্য নেই? ” আরেকজন কাউন্সিলর রেগে উঠল। আতিক মির্জার কথা তার পছন্দ হয়নি, সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
” আমরা জনগণের কাছ থেকে শ্রদ্ধা,ভালোবাসা পাচ্ছি, এটাই কি সব নয়? ” আতিক মির্জা হাল ছাড়লেননা।
” শুধু শুধু শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ধুয়ে কি আমরা পানি খাব? বাজেটের সব টাকাই যদি খরচ করি, তবে আমরা চলব কিভাবে? গতবছরও আপনার জেদের কারনে আমাদের লস হয়েছে। এত জনগন জনগন করে কি পান? ঐ শ্রদ্ধা-ভালোবাসা কি পেট ভারায় আপনার? পেট ভরাতে টাকা লাগে, চাহিদা পূরন করতে টাকা লাগে। ঐসব শ্রদ্ধা – ভালোবাসা শুধু বই আর সিনেমার জন্য। বাস্তবতা অনেক কঠিন। ” সেই কাউন্সিলর আবারও চেঁচিয়ে বলল।
” এত রেগে যাচ্ছেন কেন! দল থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমানে সম্মানি পাই। এটা দিয়েই আমাদের পেট ভরানো সম্ভব এবং চাহিদা পূরনও সম্ভব। আমরা দেশের সেবক, জনগনের সেবক সেটা ভুলে গেলে চলবেনা। আমরা তখনই নিজেকে ভালোবাসতে পারব যখন আমরা মন থেকে দেশকে ভালোবাসব। ”
” রাখেন আপনার দেশপ্রেম। আপনার অনেক আছে তাই এমন সাধু সাজছেন। আপনার বাবা বিশ বছর ধরে মেয়র ছিল, আপনি মেয়র পনের বছর ধরে, এমপি আপনার ভাই। আর কি লাগে আপনার? যা কামানোর কামিয়ে নিয়েছেন। এবার আমরা যখন নিজেদের কথা চিন্তা করছি, তখন আপনি বাঁধা দিচ্ছেন কেন? ওয়ার্ড প্রতি আমরা যে বাজেট পাব, সেটার মুল্যায়ন আমরাই করব। আপনার এতে মাথা না ঘামালেও চলবে। ” সেই কাউন্সিলর কথা শেষ করতে পারলনা তার আগই পুলকের নাইন এম এম এর নল তার কপালে জায়গা করে নিয়েছে।
” অনেক বলেছেন আপনি। রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যে আপনি আমার পরিবারকে টানছেন কেন? আতিক মির্জা অহিংস হতে পারে। কিন্তু তার ছেলে সহিংস এটা মাথায় ভালোভাবে ঢুকিয়ে নিন। নয়তো ভবিষ্যতে চিন্তা করার জন্য এই মাথাই আর থাকবেনা। মেরে পুঁতে দেব। ” রাগে পুলকের মুখাবয়ব রক্তবর্ণ ধারন করেছে। ওর কথাগুলো যেন আস্ত নরক ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে। সেখানে কোন আবেগের ছিঁটেফোঁটা নেই। আছে শুধু হুংকার আর কর্তৃত্ব। পুলকের দিকে তাকিয়ে কনফারেন্স রুমে উপস্থিত সকলেই ঘাবড়ে গেছে। এসি থাকা স্বত্বেও কয়েকজন ঘামছে।
” মে..মেয়র স্যার, আপনি সাথে করে ছেলেকে এনেছেন আমাদের হুমকি দিতে! ” আরেক কাউন্সিলর তোতলিয়ে বলল। আর এই কাউন্সিলরের সাথে বাকি সবাই তাল মেলাল। সবাই আতিক মির্জার প্রস্তাবের বিপক্ষে কথা বলছে।
” হ্যালো কাউন্সিলর, আমি দলের সিটি করপোরেশনের একটা পদে আছি। আর সেজন্য এই মিটিংএ আসতে আমার কোন বাঁধা নেই, তাই এসেছি। আমি কোন সুযোগসন্ধানী শেয়াল নই। আর এখানে উপস্থিত সব কাউন্সিলর একটা কথা মাথায় ভালোভাবে ঢুকিয়ে নিন, আমার বাপ-দাদারা ফকির ছিলনা। যে রাজনীতিকে পুঁজি করে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করবে। আপনারা নিশ্চয়ই আমাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানেন? এরপর যদি আর কখনো আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে কেউ আজেবাজে কথা বলে, তবে সেদিনই তার দুনিয়ায় শেষ দিন হবে। হ্যালো মেয়র সাহেব, আপনার মিটিং কি আরও কিছুক্ষণ চালাবেন? তবে চালাতে পারেন। আমি বাহিরে বসছি। এসব লোভীদের সাথে পাশাপাশি চেয়ারে বসে আপনার লেকচার শোনার কোন ইচ্ছে আমার নেই। ” গমগম করে উঠল পুলক মির্জার কন্ঠস্বর। পুলক শেষের কথাগুলো আতিক মির্জার উদ্দেশ্যে বলে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আতিক মির্জা বুঝতে পারছেন তার মত দেশপ্রেম সবার মধ্যে নেই। এরা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা। কাউন্সিলদের এমন আচরনে তার মন খারাপ হলেও, তিনি পুলকের কাজে রেগে গেলেন। আজকে তিনি পুলককে কিছু কড়া ককথা শুনিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন৷ এরপর তিনি সংক্ষেপে কয়েকটা কথা বলে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। এরপর পুলকের সাথে চলে গেলেন বাসায়।
***
” তুমি কি সব জায়গায় আমাকে হেনস্তা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছ? আমার সম্মান নিয়ে খেলতে তোমার ভালো লাগে? কি আনন্দ পাও এমন করে? ” ড্রয়িং রুমে ঢোকা মাত্রই চিৎকার করে বললেন আতিক মির্জা৷
” কুল মেয়র সাহেব, কুল। এত রাগ শরীরের জন্য ভালো নয়। তোমার না হয় নিজের অপমানে কিছুই মনে হয়না। কিন্তু সন্তান হিসেবে আমার এসব ভালো লাগেনা। তাই বাবার অপমানে সন্তান হিসেবে তার হয়ে কথা বলতে পারি আমি। ” পুলক সোফায় আরাম করে বসল। আপাতত মাথা গরম করার কোন ইচ্ছেই নেই ওর।
” তুমি শুধু কথা বলোনি, সেইসাথে অস্ত্রও বের করেছিলে। মেয়র-কাউন্সিলরদের মিটিংয়ে তুমি অস্ত্র বহন করেছিলে, এটাই তোমার বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে যথেষ্ট। আর এজন্য তুমি দল থেকে বহিস্কৃতও হতে পার। তারচেয়েও বড় কথা, আমি সবার সামনে একজন সন্ত্রাসীর পিতা হিসেবে পরিচিত হলাম। আমার সামনে অস্ত্র বের করতে তোমার বুক একবারও কাঁপলনা? যাদের সাথে মিটিং করছিলাম, তুমি-আমি ভালো করেই জানি, তারা মানুষ হিসেবে মোটেও ভালো নয়। কিন্তু তুমিও কি ওদের থেকে ভালো? অবশ্যই না। যেখানে মুখের কথায় কাজ হতো, সেখানে তুমি অস্ত্র বের করেছ। আজ আমাকে সবার সামনে হেয় করেছ তুমি। ” আতিক মির্জা ছেলের এমন আচরণ মানতেই পারছেননা।
মল্লিকা মির্জা আর আশফি ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে বাবা-ছেলের কথপোকথন শুনছেন। তারা বাবা-ছেলের কথার মাঝখানে কথা বলার সাহস পাচ্ছেনা। মল্লিকা মির্জা জানেন, পুলককে যতই স্বাভাবিক দেখাক না কেন ভেতরে ভেতরে ও রেগে আছে। আর আতিক মির্জা তো রেগে আগুন হয়েই আছেন।
” আব্বু, প্লিজ একটু থাম। ছেলের সামনে অন্যেরা তার বাবাকে ইনসাল্ট করছে, আর আমি ছেলে হয়ে সেসব হজম করব! কখনোই নয়। এতে যদি আমি সমাজের চোখে খারাপ হই, তবে তাই হব। তবুও আমি তোমার অপমান মেনে নিবনা। যার যেটা প্রাপ্য আমি সেটাই করেছি। আমি যদি সেখানে নরম গলায় কথা বলতাম, তবে ওরা আমাকেও ছাড় দিতনা। একটা প্রবাদ আছে জানো? যে ঠাকুর যে ফুলে তুষ্ট। তাকে সেই ফুলেই পুজা করতে হয়। আমি শুধু সেই প্রবাদবাক্যই অনুসরণ করেছি। ”
” তোমার নীতিবাক্য শুনে অবাক না হয়ে পারছিনা। কতজনকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখবে? ভয় আর সম্মান একে-অপরের বিপরীত। তোমাকে মানুষ ভয় করতে পারে কিন্তু সম্মান করেনা। আর আমাকে যারা সম্মান করে তারা মন থেকেই করে। কিন্তু একমাত্র তোমার কারনে আমার এত বছরের অর্জিত সম্মান ধুলায় লুটানোর পথে। ”
” আম্মু, তুমি মেয়র সাহেবের জন্য জুস নিয়ে এস। ভদ্রলোকের মাথা কাজ করছেনা। অযথাই কথা পেঁচিয়ে বড় করছে। নয়তো সে বুঝত, আমি ছেলে হয়ে তার অপমান মানবনা কিছুতেই। আর সেজন্য আমি যত নিচেই নামতে হোকনা কেন নামতে পারি। কেউ তাকে অপমান করবে বিনিময়ে আমি তার দিকে ফুল ছুঁড়ে মারব এটা হতেই পারেনা। ” পুলক সোফা থেকে উঠে আশফির হাত ধরে ওপরে নিয়ে গেল।
পুলককে এভাবে চলে যেতে দেখে মল্লিকা মির্জা হাসলেন। আতিক মির্জা বিব্রত হয়ে তাকিয়ে থাকলেন।
***
” আপনি এভাবে বাবা-মা’র সামনে থেকে আমাকে নিয়ে আসলেন কেন? আপনার কি লজ্জাশরম কিছুই নেই! আপনার এমন কাজে আমি বারবার লজ্জা পাই। ” আশফি অভিযোগ জানাল।
আশফির অভিযোগ শুনে হেসে ওকে জড়িয়ে ধরল পুলক।
” আমার বোকা পাখিটার এত লজ্জা আগে তো বুঝিনি! এবার তাহলে আমার পাখিটাকে আরেকটু লজ্জা দেই। ” আশফিকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওর অধরে অধর ছোঁয়ায়। ধীরে ধীরে গভীর হয় সেই ছোঁয়া। আশফিও আবেশে চোখ বুজল।
***
তিয়াসা আজকাল টুকটাক রান্নাঘরে যায়। দাদুর জন্য মাঝেমধ্যে খাবার বানায়। কলেজ থেকে বাসায় ফিরে খাওয়াদাওয়া করে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে দাদুর জন্য নাস্তা বানায়। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত আড্ডা দেয় দাদুর সাথে। সন্ধ্যার পর বই নিয়ে বসে। এভাবেই চলছে ওর দিনকাল। এরমধ্যে আর বাবার বাড়িতে যায়নি। বাড়ি থেকে মা-বাবা এসেছিল। তারা গ্রামে নিয়ে যেতে চাইলেও তিয়াসা যায়নি। কেন যেন ঐ বাড়ির ওপর আকর্ষন কমে গেছে। হয়তো বাবা-মা’ র ওপর অভিমান থেকেই এমনটা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওর পরীক্ষা শুরু হয়েছে। মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে। আজকাল আর রিফাতের কথা ভাবতে চায়না। যে সুতো ছিঁড়ে গেছে, অনেক সময় চাইলেও আর সেই সুতো জোড়া লাগানো যায়না। গত আড়াইমাসে রিফাত ওকে একবারও ফোন দেয়নি। হয়তো রিফাত ওকে ভুলে যেতে চাইছে। তাই তিয়াসাও রিফাতকে ফোন দিয়ে নিজেকে ওর কাছে তুলে ধরতে চায়নি।
ফোনের শব্দে তিয়াসা বই থেকো মুখ তুলল। স্ক্রীনে আশফির নাম দেখে হেসে রিসিভ করল,
” বল পুলক মির্জার বোকা বউ। ”
” তিয়ু, তুইও আমাকে পঁচাচ্ছিস? এটা কিন্তু অন্যায়। ”
” বাব্বাহ্ মির্জা বাড়ির বউ দেখছি রাগ করাও শিখে গেছে! তুই আর কি কি শিখেছিস, বইন? পুলক মির্জা কি তোকে ফরোয়ার্ড বানিয়ে দিয়েছে? ”
” তোকে একটা খবর জানাতে ফোন দিলাম, আর তুই আমার সাথে মজা নিচ্ছিস? যাহ তোকে বলবইনা। ”
আশফির গলায় রাগের অস্তিত্ব টের পেয়ে হাসল তিয়াসা।
” আরা মজা করবনা। এবার বল কি বলবি? ”
” গ্রামে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছি। পরীক্ষা শেষ হলেই গ্রামে যাব বুঝলি? শাহেদ ভাইয়াকে ফোন করেছিল উনি। ভাইয়া তোকে পাঠাতে রাজি হয়েছে। কবে থেকে উনার পেছনে পরে আছি। অবশেষে উনি রাজি হয়েছেন। ”
” গ্রামে যাবি কার মুখ দেখতে? নাকি ছোট চাচির মুখ ঝামটা না খেলে তোর পেট ভরেনা? সুখে থাকতে ভূতে কিলাচ্ছে তোকে? এই আড়াই মাসে তোকে একবারও দেখতে এসেছে তারা? কোথাও যাবিনা তুই। তোকে দেখার ইচ্ছে হলে ওরা এসে দেখে যাবে। ” তিয়াসা রেগে গেছে।
” রাগ করিসনা। কতদিন আব্বা-আম্মা, পৃথা,পিয়াসকে দেখিনি। ওদের জন্য মন কেমন করছে। ” আশফি মৃদু গলায় বলল।
” ওদের জন্য তোর মন কেমন করছে। তোর জন্য কি ওদের মন কেমন করছে? ওরা কি ফোনে তোর সাথে একবারও কথা বলে? বাড়ি থেকে এসেছিস আড়াইমাসের বেশি হচ্ছে, এরমধ্যে কি ওরা একবারও তোকে দেখতে এসেছে? শোন আশফি, এত দরদ ভালো নয়। গ্রামে যাওয়ার চিন্তা বাদ দে। তারচেয়ে বরং ভাইয়ার সাথে অন্য কোথাও গিয়ে বেড়িয়ে আয়। ছোট মামী চাচ্ছেন তোরা হানিমুনে যা। এতদিন যখন বিভিন্ন ঝামেলায় ভাইয়া তোকে নিয়ে হানিমুনে যেতে পারেনি, এবার পরীক্ষা শেষ হলেই বেড়িয়ে পর। যেখানে তোর কোন মূল্য নেই, সেখানে কেনে যেচে আরেকবার মূল্যহীন হতে যাবি? ”
আশফি বুঝতে পারছে তিয়াসা কথাগুলো ভুল বলেনি। ও বাড়িতে ফোন না দিলে বাড়ি থেকে কেউই ওর খোঁজ নেয়না। আব্বা শুধু সপ্তাহে দুইদিন নিয়ম করে ফোন দেয়। তাও দুই মিনিটের বেশি কথা বলেনা। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আশফি বলল,
” আচ্ছা, আমি উনাকে বলব। এই তিয়ু, হানিমুনে কোথায় যাওয়া যায় বলতো? ”
আশফির প্রশ্নে তিয়াসা হাসল।
” এটাও আমিই বলে দেব? তোর পছন্দের যে-কোন একটা জায়গায় যাবি। তোর না পাহাড় পছন্দের? সিলেট, রাঙামাটি কত জায়গাই তো আছে। সেখানে যা। ”
” ভালো কথা বলেছিস। রাতে উনি বাসায় আসলেই, উনাকে বলব। ”
” আশফি, তোর উনি বুঝি তোকে অনেক ভালোবাসে? খুব তো উনি উনি করছিস। আগে তো তাকে পছন্দ করতিসনা। ”
” তাকে আগে যতটা বদ মনে করতাম। ততটা বদ সে নয়। আগে তো বুঝিনি সে আমাকে এত ভালোবাসে। ” আশফি কথাটা বলেই দাঁত দিয়ে জিব কাটল।
আরও কিছুক্ষণ দুই বোন কথা বলে ফোন রাখল।
***
” ও নতুন বউ, দেখো তোমার সাথে কে দেখা করবার আইছে। ”
আজ পরীক্ষা না থাকায় তিয়াসা সকালে নাস্তা করে রুমে এসেছে। বই হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। কিন্তু পড়ায় মন বসছেনা। এদিকে খাদিজা আন্টি এসে কথাটা বলতেই বই বন্ধ করে বিছানা থেকে নিচে নেমে আসল।
” কে এসেছে, আন্টি? ”
” তুমিই দেখ। তবে মনে হয় তাকে চিনতে পারবা। ”
খাদিজা আন্টি কথা শেষ করতেই তার পেছন থেকে একজন সামনে এগিয়ে আসল। মানুষটাকে দেখে তিয়াসা অবাক হয়ে চিৎকার দিয়ে বলল,
” মিম আপু, তুমি! তুমি কিভাবে জানলে আমি এখানে থাকি? ”
মিম নামের মেয়েটি এগিয়ে এসে তিয়াসাকে জড়িয়ে ধরল। ওরা একই গ্রামের মেয়ে এবং প্রতিবেশি। ছোটবেলা থেকে একসাথে হেসে-খেলে বড় হয়েছে।
” আমি না জানলে কে জানবে শুনি? তার আগে বল কেমন আছিস? খাদিজা আন্টি, আমি যে পিঠাগুলো এনেছি, সেখান থেকে কয়েকটা পিঠা আপনার নতুন বউয়ের জন্য নিয়ে আসেন। ”
মিমের কথা শুনে তিয়াসা আবারও অবাক হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। মিমের কথা শুনেই ও বুঝতে পেরেছে, এই বাড়ি এবং খাদিজা আন্টি তার চেনা।
” তুমি খুলনা থেকে কবে এসেছ? আর এই বাড়ির ঠিকানা কিভাবে জানলে? তুমি কি খাদিজা আন্টিকে চেন? ” একসাথে কয়েকটা প্রশ্ন করল তিয়াসা।
” গতরাতে এসেছি। সকাল থেকে তোর আর আশফির জন্য পিঠা বানিয়েছি। এজন্য তোর কাছে আসতে দেরি হলো। আর আমি শুধু খাদিজা আন্টিকে নয়, এই বাড়ির সবাইকে চিনি। ”
” তোমার শ্বশুর বাড়ি কোথায়? আমি শুধু জানতাম এই শহরেই কোথাও তোমার শ্বশুর বাড়ি। ”
” সামনের গলিতে একটা তিনতলা বাড়ি আছেনা? যার গেইটে বাগানবিলাশ আর মধুমঞ্জরী একে-অপরকে আলিঙ্গন করে আছে। সেটাই আমার শ্বশুর বাড়ি। এবার চিনেছিস? ”
” সত্যিই ঐটা তোমার শ্বশুর বাড়ি! ”
” কেন শাহেদ ভাই তোকে বলেনি? ”
মিমের প্রশ্ন শুনে মাথা নাড়িয়ে না বলল তিয়াসা।
” এবার বল সংসার জীবন কেমন যাচ্ছে? শাহেদ ভাই তোকে মাথায় তুলে রেখেছে এটা আমি জানি। কিন্তু সে তোকে এখানে রেখেই ঢাকা গেল কেন? এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। আমি জানতাম সে তোকে এক সেকেন্ডও চোখের আড়াল করবেনা। ”
আরও একবার অবাক হয় তিয়াসা। মিমের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছেনা।
” এসব কি বলছ তুমি! আমি তোমার কথা বুঝতে পারছিনা। একটু ক্লিয়ার করে বলবে? কতদিন পর তোমার সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু তুমি ঘুরিয়েপেঁচিয়ে কথা বলছ। ”
” কেন তোকে শাহেদ ভাই কিছুই বলেনি! ”
” কি বলবে? ”
” এটাই যে ভাই তোকে আরও চার বছর আগে থেকেই চেনে। চার বছর আগে থেকেই তোকে ভালোবাসে। ”
মিমের কথা শুনে তিয়াসা স্তব্ধ হয়ে যায়। ওর মুখে কোন কথা জোগাচ্ছেনা। মাথা ঘুরছে ওর। এটাও কি বিশ্বাসযোগ্য!
” ক..ক..কি বলছ এসব! অযথা আমাকে ব্লাফ দিওনা। ” অনেক কষ্টে কথাগুলো বলল তিয়াসা।
” ওহ্ তারমানে সেই আবেগের গ্যারাজ তোকে কিছুই বলেনি! আমার শ্বশুরের সাথে দাদুর বেশ ভালো সম্পর্ক। সেই সুবাদে এই দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কও ভালো। যেকোন অনুষ্ঠানে দুই বাড়ির লোকজন দাওয়াত পায়। আর তাই আমার বিয়েতেও গিয়েছিল শাহেদ ভাই । আর সেখানেই তোকে দেখে পছন্দ হয় তার। এরপর আমার কাছ থেকে তোর সম্পর্কে সব জেনে নেয় সে। এক কথায় তোর পছন্দ-অপছন্দ সব মুখস্থ করে নেয়। তখন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। যে ছেলে পড়াশোনা রেখে ছুটিতেও বাসায় আসতে চাইতোনা। সেই ছেলে প্রতিমাসে একবার বাসায় আসত। শুধু তোকে দেখার জন্য। তুই তখন গার্লস কলেজে পড়িস। তোর কলেজের সামনে গিয়ে দাঁড়াত। লুকিয়ে লুকিয়ে তোকে দেখত। গত চার বছর ধরে এটা করছে সে। আমি অনেকবার বলেছি, ওর মনের কথা তোকে বলতে। কিন্তু মুখচোরা ছেলেটা লজ্জায় বলতে পারেনি। ”
মিমের কথা শুনে স্তব্দ তিয়াসা পলকহীন চোখে তাকিয়ে থাকে মিমের দিকে। এসব কি শুনছে সে!
এদিকে মিম শাহেদের সম্পর্কে নানান কথা বলেই চলেছে। সব শুনে তিয়াসা মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পরে যাবে। ভেতরে ভেতরে এতকিছু ঘটে গেছে, অথচ ও জানতেও পারেনি!
” তুমি আমাকে এসব কথা আগে বলোনি কেন, আপু? ”
” বলেছি কিন্তু তুই শুনতে চাসনি। বোধহয় সেদিন আমার কথায় গুরুত্ব দিসনি। তোর মনে আছে, একদিন তোকে বলেছিলাম এক রাজপুত্র তোর অপেক্ষা করছে, তোকে পেতে সে ব্যাকুল হয়ে দিন গুণছে? কিন্তু তুই আমার কথা শুনে হেসেই খুন। তারপর শাহেদকে যখন বললাম, তোকে জানিয়ে দেব তার কথা। কি ও না করল। তারপর আর তোকে কিছু বলিনি। ”
একদিনে এতকিছু শুনে তিয়াসার কথা বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষটা ওকে চার বছর আগে থেকেই চেনে! ওর সম্পর্কে জানে! সেজন্যই সে ওকে চমকে দিয়ে ওর পছন্দের খাবার রান্না করতে বলে আন্টিকে! ওর যেগুলোতে এ্যালার্জি সেগুলো আনতে বারণ করেছে! এতকিছু সে জেনেছে তিয়াসার সম্পর্তে, অথচ সে জানতেই পারেনি তিয়াসার মন অন্য কারো সাথে জুড়ে আছে। অবশ্য জানবেই বা কেমন করে, তিয়াসা আর রিফাত ছাড়া ওদের সম্পর্কের কথা আর কেউ জানতনা। রিফাত ওর বন্ধুদেরও তিয়াসার কথা বলেনি। তিয়াসাও তাই। ওরা কখনো বাহিরে দেখা করেনি, ঘুরতে যায়নি। কিংবা মানুষজনের সামনে কখনোই এমনভাবে কথা বলেনি, যাতে কেউ কিছু সন্দেহ করবে।
” জানিস তিয়াসা, শাহেদ খুব ভালো ছেলে। ও নাকি কাউকে কখনোই আঘাত দিয়ে কথা বলেনি। এটা তোর ভাইয়া বলে। ছোটবেলা থেকেই ও নাকি ভিষণই চুপচাপ আর শান্ত। হাজার কষ্ট পেলেও কাউকে কিছু বলেনা। শুধু যে কষ্ট দেয়, তার কাছ থেকে নিরবে দূরে সরে যায়। একবার নাকি ওর স্কুলের কোন এক বন্ধু ওকে মিথ্যা বলে টিচারকে দিয়ে মার খাইয়েছিল। তারপর থেকে সে সেই বন্ধুর সাথে আর কখনোই কথা বলেনি আবার সেই স্যারের সাথেও নাকি কথা বলতনা। তোর ভাইয়া আর শাহেদ একই স্কুলে পড়ত। তাই তোর ভাইয়া এটা জানতে পেরেছিল। এরকম নাকি আরও অনেক ঘটনা আছে। ”
মিমের কথা শুনে তিয়াসার বুক কেঁপে উঠল। তবে কি সে তিয়াসার থেকে দূরে যেতেই ঢাকায় চাকরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে? সে নিরবে তিয়াসার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে?
চলবে…